কালো রাত

কালো রাত

ঘুমটা ভাঙ্গতেই নিজেই একটা অগোছালো রুমের মেঝেতে আবিষ্কার করলাম। ভোরের আলো রুমটায় এসে পৌছঁলো। আমি এখানে কিভাবে এসেছি মনে পড়ছে না। আমার সাথে তো রিজু আর দূর্জয়ও ছিল কিন্তু ওরা কোথায়? আমি উঠে বসলাম। রুমের টেবিলের উপর কিছু পুরাতন বই আর বইয়ের উপর একটা ভাঙ্গা আয়না রাখা। রুমের কোনা গুলোতে মাকরসারা বাসা বেধেছেঁ। আমার পাশে একটা পুরান দিনের খাট কিন্তু আমি খাটে না শুয়ে মেঝেতে কেন? খাটে ভার দিয়ে উঠে দাড়ালাম। গলা দিয়ে আওয়াজ বের হচ্ছে না তবুও জোর করে চিৎকার মেরে রিজু আর দূর্জয়কে ডাকতে লাগলাম।

ওদের ডাকতে ডাকতে আমি দরজার সামনে আসলাম। আমি এমন একটা বাসার ২য় তলায় দাড়িয়ে আছি যা আমার কল্পনার বাইরে। বাড়িটার বাইরে একটা মরা গাছ রয়েছে আর তাছাড়া বাড়িটার সীমানার মাঝে কোন জীবন্ত গাছ নেই। বাড়িটা অনেক বড় তবে পুরো বাড়িটাই শুকনো পাতায় ঘনীভূত। আমি বেলকনীতে দাড়িয়ে বাড়িটার চারপাশটা দেখছি আর তখনই আমার কাধেঁ কারো হাতের স্পর্শ পেলাম আর ভয়ে চিৎকার দিলাম। তখনই পাশ ফিরে দেখি রিজু আর দূর্জয়…

— কিরে এমন চিৎকার দিচ্ছিস কেন?(রিজু)

— আগে বল আমরা এই বাসায় আসলাম কেমন করে? দেখে তো মনে হয় এই বাসায় গত কয়েক বছর যাবত কোন জীবিত মানুষ থাকে নি।

— আরে আমরা তো সিলেট যাচ্ছিলাম কিন্তু গাড়ীতেই তুই অসুস্থ হয়ে পড়িস আর আমাদের গাড়ীও নষ্ট হয়ে যায়। গাড়ীটা বাড়ির বাইরেই আছে। ড্রাইভার মিস্ত্রি আনতে গেছে। যতটুকু আইডিয়া আছে এখান থেকে ৩০ কিলোমিটারের মাঝে কোন বাজার বা বসত বাড়ি নেই তাই বাধ্য হয়ে তোকে এখানে নিয়ে এসেছি।

— এখানে নিয়ে এসেছিস ঠিক আছে কিন্তু আমাকে খাটে না শুইয়ে মেঝেতে ফেলে রেখেছিস কেন?(রেগে)
— মানে কি? আমরা তো তোকে খাটেই রেখে ছিলাম। মনে হয় ঘুমের মাঝে পড়ে গিয়ে ছিলি।(একটু হেসেঁ)
— হতে পারে। কিন্তু রিজু এখানে কি আমাদের থাকাটা ঠিক হবে? বাড়ির পরিবেশ আর চারপাশটা দেখলে তো মনে হয় এটা পরিতক্ত্য বাড়ি।

রিজু আর দূর্জয় আমার কথায় হেসে উঠলো। আমার মনে একটা ভয় ডুকে গেছে। আমরা এখান থেকে ভালো ভাবে ফিরতে পারবো তো। আর এদিকে অনেক খিদে লেগেছে তাই বললাম..

— কিরে সাথে খাবারের কিছু আছে, নাকি এটা আনতেও ড্রাইভার গেছে।

— তুই যেই রুমে ছিলি এর পাশের রুমে গিয়ে দেখ আমাদের তিনজনের তিনটা ব্যাগ আছে। দূর্জয়ের ব্যাগে পাউরুটি আর জ্যাম রয়েছে। খেয়ে নে। (রিজু)

আমি আর থাকতে না পেরে তারাতারি চলে গেলাম। কিন্তু রুমে ডুকেই খাওয়া শুরু করে দিয়েছি। একবারও রুমটা দেখার প্রয়োজন বোধ করি নি। খাওয়া শেষ করে যখন রুমটার দিকে ভাল করে তাকালাম তখন কিছুক্ষণের জন্য মনে হলো আমি কোন লাশের সামনে দাড়িয়ে আছি। আমি দৌড়ে রুম থেকে বের হয়ে গেলাম। রিজু আর দূর্জয় আমায় দেখে ঘাবড়ে গেল। আমি ওদের গিয়ে বললাম এই রুমে লাশ। আর ওরাও তারাতারি রুমে আসলো কিন্তু কোথায় কিছু দেখতে পেল না বরং আমায় অবিশ্বাস করলো। তবে আমি কি ভুল দেখেছি।

দুপুরের দিকে তিন বন্ধু মিলে প্ল্যান করলাম বাড়িটার নিচ তলা ও ছাদটা ঘুরে দেখবো।তাই যা ভাবনা সেই কাজে লেগে গেলাম। প্রথমে নিচ তলায় গিয়ে একটা বসার রুম পেলাম। এখানে ভাঙ্গা চেয়ার আর পুরনো খাবারের থালা বাসন রাখা। সাথেই ছিল রান্না ঘর কিন্তু আগুন জ্বালানোর কোন ব্যবস্থা ছিল না আর এর পাশেই ওয়াশরুম। যতটুকু দেখে বুঝতে পারলাম এখানে আগে কাঠ দিয়ে রান্না করা হতো। নিচে দেখার মত তেমন কিছু চোখে পড়ে নি তাই দ্বিতীয় তলায় আসলাম।

আমি যে রুমে ছিলাম প্রথমে ওই রুমটায় গেলাম। রুমটায় ডুকেই কেমন যেন একটা মেয়ের আওয়াজ শুনতে পেলাম। কিন্তু মনের ভুল ভেবে রুমটা ভাল করে দেখতে লাগলাম। আমি প্রথমে লক্ষ্য না করলেও দেয়ালে একটা সুন্দর মেয়ের ছবি দেখতে পেলাম। চুল গুলো একদম হাটু পর্যন্ত নেমে এসেছে। ছবিটা দেখেই রিজু বলল…

— ওয়াও এটা মনে হয় কোন মেয়ের রুম ছিল। আর এই মেয়েটাই এই রুমে থাকতো। আমি তো দোস্ত ক্রাশ খেয়ে গেলাম।

— সেটা আর বলতে তুই সব মেয়ে দেখেই ক্রাশ খাস। এটা অন্তত আমার জন্য ছেড়ে দে। (আমি)
— ওকে যা ছেড়ে দিলাম। মেয়েটা জীবিত হলেও তোর আর মরে গেলও তোর। (রিজু)

মরা শব্দটা শুনেই গলার জল শুকিয়ে আসতে লাগলো। আর একটা ভয়ও করতে লাগলো। রুমে একটা আলমারি ছিল কিন্তু আলমারি টা একদমই খালি। তাই টেবিলে রাখা বই গুলো দেখতে লাগলাম। মনে তো হচ্ছে মেয়েটার গল্পের বই পড়ার অনেক শখ ছিল। তবে এখানে কয়েকটা ভূতের গল্পের বইও ছিল। আমি মোবাইল দিয়ে রুমের অনেক গুলো ছবি তুলে নিলাম।

এই রুমটা থেকে বের হয়ে রিজু আর দূর্জয়ের রুমটায় গেলাম। এই রুমে সব থেকে আশ্চর্যের বিষয় হলো রুমটার উপরে দুইটা কাপড় দুলছে। তখন দূর্জয় বলল..

— দোস্ত দেখে তো মনে হচ্ছে এক সাথে দুইজন ফাসিঁ নিয়েছে এমন কিছু।

তখন আমি বললাম…

— মরা, ফাসিঁ বাদে তোরা আর কিছু বলতে পারিস না। এই দিকে আমার অবস্থা যে যায় যায়।
— রাজ তুই না ভূতকে ভয় পাস না আর ভূত দেখারও তোর অনেক শখ।
— ভাই আমার শখ মিটে গেছে। আমি আর এখানে থাকবো না চল এখনই পালাই।

— দেখ রাজ আকাশের অবস্থাও ভাল না আর এখান থেকে যাওয়ার মত অবস্থাও নেই। এমনিতে এখন বিকাল হতে

চলল। যদিও তুই এখন হাটতে শুরু করোস তাহলে এই শূন্য এলাকাতেই রাত নেমে আসবে আর থাকার জায়গাও পাবি না। এরপর কি হতে পারে বুঝতে পারছিস তো। এর থেকে ভাল আজ রাতটা ড্রাইভারের জন্য অপেক্ষা করি। যদি না আসে তো কাল সকালে আমরা রওনা দিয়ে দিবো।

আমি আর কিছু বলতে পারলাম না। কারন দূর্জয়ের কথায় লজিক আছে। আমরা রুমটা থেকে বের হয়ে ছাদে গেলাম। ছাদে অনেক গুলো গাছের টব কিন্তু একটা গাছও জীবিত না। যে এই বাসায় ছিল তার হয় গাছ লাগানোর অনেক শখ ছিল। ছাদ থেকে আশে পাশের প্রকৃতিটা বেশ লাগছে। কিন্তু চার পাশের কোথাও জন মানবের চিহ্ন টুকু নেই।

বিকালটা তিন বন্ধু মিলে ছাদেই কাটিয়ে দিলাম। এদিকে মোবাইলের চার্জও সূচনীয়। আর এদিকে নেটওয়ার্ক পাচ্ছি না বাসায় ফোন করবো। ড্রাইভারও আসছে না আর পেটের অবস্থাও খারাপ। তাই আবার প্রথম তলায় আসলাম আর রান্না ঘরের পাশেই ওয়াশরুমে গেলাম। সবাই ফ্রেশ হয়ে নিলাম। খালি পেটে কি আর গল্প করা যায় তাই তিন জনেই ঠান্ডা হয়ে বসে আছি। এদিকে সন্ধ্যা হয়ে গেছে আর সূর্যমামাও গুড নাইট জানিয়ে চলে গেল। রিজু আর দূর্জয়ের মনে কি চলছে আমি জানি না তবে আমার মনে শুধু ভূতের মুভি গুলো মনে পরছে। এমনে ফেসেঁছি এমন একটা জায়গায়, তারপর ভূতের কথা। হঠাৎ রান্না ঘর থেকে একটা আওয়াজ আসলো…

— বাবুরা এসে গেছেন?

আওয়াজ শুনেই তিনজনে চমকে উঠলাম আর আমি তো রিজুর হাতটা শক্ত করে ধরলাম। দরজা তো লাগানো আর গেটও বন্ধ তাহলে রান্না ঘরে কে? তখন রিজু উঠে দাড়ালো আর বলল…

— রান্না ঘরে কে?

— আমি গো বাবু। এই বাড়ির দেখাশোনা করি। আমাকে বড় বাবু পাঠিয়েছে আপনাদের দেখাশোনা করতে ।

চাদর গায়ে একটা লোক আমাদের সামনে আসলো। মনে তো হয় গত দশ বছরের মাঝে চুল দাড়ি কাটে নি আর বয়সও অনেক। ওনি আমাদের কি দেখাশোনা করবেন আর এই বড় বাবুটাই বা কে?মনের মাঝে অনেক গুলো প্রশ্নের জন্ম নিলো। তাই আমি বললাম…

— বাড়ির গেট,দরজা তো লাগানো তাহলে আপনি বাসার ভিতরে আসলেন কেমন করে? আর এই বড় বাবুটাই কে?
— আমি তো বাড়ির পিছনের দরজা দিয়ে এসেছি । আর বড় বাবু হলো এই বাড়ির মালিক।

— কিন্তু আমরা এসেছি আপনেরা জানেন কেমন করে?

— এতো প্রশ্ন করবেন নে তো বাবুরা। আমি মূখোশোখো মানুষ এতো কিছু জানি না। রাত বাড়লে বড় বাবু আর তার মেয়েও আসবে। আপনেরা একটা কাজ করুন তো, তারাতারি একটু হাত মুখে জল দিয়ে নেন। আমি আপনাদের খাবারের ব্যবস্থা করছি।

— হুমম

আমাদের তিনজনের মনেই এখন হাজার একটা প্রশ্ন। একবার ইচ্ছা করছে দৌড়ে পালাই কিন্তু এই রাতের বেলায় তো পারছি না। আরেকবার ইচ্ছা করছে ওই লোকটাকে বিশ্বাস করি ।

তিনজনেই হাত মুখে জল দিয়ে নিলাম। মনের মাঝে হাজারও প্রশ্ন নিয়ে খাবারের অপেক্ষা করছি। তখন দূর্জয় বলল..

— যাক বাবা খিদে নিয়ে থাকার চেয়ে তো কিছু খাবার মিলবে।

দূর্জয়ের কথায় আমি আর রিজু ওর দিকে তাকালাম আর দূর্জয় আবার বলল…

— আমি একা নয়, তোরা তো খাবি।

গাধা তো গাধাই, এই দিকে হাজারটা প্রশ্ন মাথায় ঘুরছে আর এই হাতির এখন খুদা লেগেছে। একটু পরই আমাদের সামনে ভাত,মাংস, মাছ আরো অনেক তরকারি এসে হাজির। কিন্তু রান্না ঘরে কোন রান্নার আওয়াজ পেলাম না আর রান্না হয়ে গেল। তাও এতো কম সময়ে। লোকটি আমাদের পাশে দাড়িয়ে আছে। তখন দূর্জয় লোকটার দিকে তাকিয়ে বলল…

— দাদু এতো তারাতারি মাংস কেমন করে রান্না করলেন একটু রেসিপি টা বলবেন? মানে বেশি খুদা লাগলে তারাতারি রান্না করে খাবো।

আমাদের এই দিকে ভয়ের জন্য প্যান্ট হালকা হয়ে যাচ্ছে আর এই খাদক রেসিপি নিয়ে পড়েছে। মনের জোর নিয়ে অল্প অল কিছু প্রথমে মুখে দিলাম। কিন্তু এত্তো স্বাদ রান্না আমি কখনো খাই নি। তাই আর মনে ভয় না রেখে খাওয়া চালিয়ে গেলাম। খাওয়া শেষ এখন মনটাও অনেক ফ্রেশ লাগছে।

বৃদ্ধ লোকটা আমাদের থেকে থালা বাসন গুলো নিয়ে গেল আর বলল..

— বাবুরা আপনেরা উপরে গিয়ে বিশ্রাম নেন। একটু পরই বড় বাবু আর তার মেয়ে নিরু মামনি আসবে।

আমরা কথার কোন জবাব না দিয়ে উপরে উঠে গেলাম। তাহলে কি রুমে যেই মেয়েটার ছবি দেখেছি এটাই নিরু। যাক আজ তো দর্শন হবে। যেহেতু আসবে বলেছে মানে জীবিতই হবে। ছবিতেই এতো সুন্দর, সামনা সামনি যেন কেমন হবে?

আমরা ঠিক করলাম তিন জন এক সাথেই ঘুমাবো। আর মেয়ের রুমের খাট টা বড় ছিল তাই আমরা এই রুমেই আসলাম। কিন্তু আশ্চর্যের ব্যাপার হলো রুমে একদম ময়লা নেই। রুমে লাইট জ্বলছে কিন্তু কারেন্টের লাইন তো সকালে মনে হলো নষ্ট। রুমে একটুও ময়লা নেই। খাটে নতুন চাদর বিছানো। এতো তারাতারি এতো কিছু আয়োজন হয়েছে তাও একটা বৃদ্ধের হাতে। এটা কি সম্ভব নাকি কোন রহস্য। তিন জনেই তো অবাক কিন্তু আশে পাশে কোন বাড়ি ঘর নেই কিন্তু বড় বাবু আর মেয়েটা আসবে কোথা থেকে?

বড়বাবু আর তার মেয়ের জন্য অপেক্ষা করতে করতে তিনজনেই খাটে শুয়ে রয়েছি। অবশ্য আমি একটু বেশি সাহসী বলেই মাঝে শুয়েছি। দূর্জয় হঠাৎ উঠে গিয়ে লাইট অফ করে দিলো আর বলল ওর নাকি ঘুমাতে ডিস্টার্ব হচ্ছে আর রিজুর ওর কথায় তাল মিলিয়েছে। আমি তো ভয়েই চোখ বন্ধ করে রেখেছি। কখন যে চোখটা লেগে এসেছে বুঝতে পারি নি।

রাতে তখন কয়টা বাজে মনে পড়ছে না কিন্তু আমার ঘুমটা ভেঙ্গে গেল আর আমার শরীরের উপর ঠান্ডা হাতের ছোয়া লাগছে। মনে হচ্ছে কোন ঠান্ডা হাত গলার চার পাশে ঘুরছে আর অনেক গুলো চুল আমার মুখে পড়ে আছে। আমি ছটফট করেই চলেছি কিন্তু কাউকে ডাকতে পারছি না। আমার দম বন্ধ হয়ে যাচ্ছে এমন সময় রুমের লাইট জ্বলে উঠলো আর কারো ধাক্কায় আমায় চোখ খোলে গেল। আমি উঠে বসলাম। তখন রিজু বলল…

— কিরে তুই ছটফট করছিস কেন?
— দোস্ত আমার গলায় কে যেন ঠান্ডা হাতে চেপে ধরতে চলে ছিল?
— ধুর বোকা মনে হয় তুই স্বপ্ন দেখছিলি।

আমার হাত পা তখনও কাপছেঁ। মোবাইল হাতে নিতেই দেখি চালু হচ্ছে না। কি হচ্ছে আমার সাথে? শুধু কি আমার সাথেই হচ্ছে কিন্তু রিজু আর দূর্জয় কিছু বুঝছে না। নাকি এইসব আমার মনের ভুল। তখনই লাইট অফ হয়ে গেল আর সব চুপ চাপ। ভয়ে একেকটার অবস্থা খারাপ। তখনই একটা আওয়াজ আসলো ” উপরে কি করছো, নিচে এসো। তোমাদের জন্য রান্না বসিয়েছি তো ”

আওয়াজটা শুনেই রিজু আর দূর্জয় আমার দিকে তাকালো। তাহলে এখন ওরাও শুনতে পারছে । তিনজনেই তিনজনের হাত ধরে রেখেছি। এদিকে ভয়ে মনে হয় মরেই যাচ্ছি। প্রথমে চুপচাপ বসে থাকলেও আওয়াজটা আবার আসলো তাই বাধ্য হয়ে নিচে নামলাম। রান্না ঘরের দিকে এগিয়ে যেতেই দেখি একটা মেয়ে বসে বসে রান্না করছে। পিছনে থেকে যেন আলোকরশ্মি ছড়িয়ে পড়ছে। আমরা চুপচাপ দাড়িয়ে আছি। তখন মেয়েটি আবার বলল…

— ও এসে পড়েছো তোমরা? কোন কষ্ট হচ্ছে না তোমাদের।
–( সব ঠান্ডা হয়ে গেছি)
— ও ভয় পাচ্ছো কেন? তোমাদের সমস্যা হলে বলো। আমি সমস্যা দূরে করে দিচ্ছি।
— না একদম শান্তিতে আছি। (দূর্জয়)
— যাও বসার রুমে গিয়ে বসো আমি খাবার নিয়ে আসছি।
— আমাদের খিদে নেই। ( আমি)
— যেতে বললাম তো নাকি…(জোরে জোরে)
— যাচ্ছি তো ।

অন্ধকারে চুপচাপ তিনজনেই বসে রইলাম। এই কি তাহলে বড় বাবুর মেয়ে নিরু। রাত এখন কয়টা হবে বুঝতে পারছি না। আর বাসায় কি আর কেউ নেই নাকি? ওই বৃদ্ধ লোকটা কোথায়?

অন্ধকারেই মেয়েটা কিছু নেয়ে এসেছে। মেয়েটার মুখও বুঝতে পারছি না। তিন জনেই না খেয়ে চুপচাপ বসে আছি। তখনই মেয়েটার আবার চিৎকার।

— খাচ্ছো না কেন?

তখনই হালকা আলোয় মুখটা একটু বুঝতে পারলাম। চোখ দিয়ে জল নয় বরং রক্ত পড়ছে আর মুখে কতগুলো নখের দাগ লাগলো। চুল গুলো এলোমেলো হয়ে গেছে । আমরা ভয়ে ভয়ে প্লেট হাত নিলাম আর তখনই লাইট জ্বলে উঠলো কিন্তু আমাদের সামনে তো কেউ নেই।আর আমাদের হাতের প্লেটে রক্ত মাখা তিনটা হৃদপিন্ড। ভয়েই হাত থেকে প্লেট গুলো পড়ে গেল। এখনই আমাদেরকে এখান থেকে বের হতে হবে কিন্তু আমাদের ব্যাগ তো ২য় তলায়।
তাই তিনজন আবার গেলাম ২য় তলায়। অন্ধকারে নিজেরকেই নিজেরা বুঝতে পারছি না। বার বার মনে হচ্ছে পিছনে কেউ দাড়িয়ে আছে কিন্তু পিছনে তাকালেই সব হাওয়া।

কোন রকমে ব্যাগ গুলো খুজেঁ দৌড়ে বাড়িটা থেকে বের হতেই সেই মরা গাছ আমাদের উপর পরতে লাগলো আর আমরাও দৌড়ে সরে যাওয়ায় বেচেঁ গেলাম। গেটের কাছে এসে দেখি গেটে তালা ঝুলছে তাই দেয়াল টপকেই নিচে পড়লাম। আমরা আসার সময় গেটে কোন তালা ছিল না।

তখন মনে হচ্ছে ভোরের আলো এই বুঝি ফুটতে চললো। আমরা দৌড়ে আমাদের গাড়ীর কাছে গেলাম। এখানে গাড়ী রেখেই চলে যাবো কি না বুঝতে পারছি না। তখনই সামনে একটা বাইক আসতে দেখলাম। আর বাইকটা আমাদের সামনে এসেই থামলো। দেখি আমাদের ড্রাইভার পিছনে বসা। মানে ড্রাইভার মিস্ত্রি নিয়ে এসেছে।
এরপর মিস্ত্রি এসে গাড়ী চালু করতেই আপনাআপনি গাড়ী চালু হয়ে গেল। কিছুই বুঝতে পারলাম না। তখন মিস্ত্রী বলল…

— আপনেরা কি এই সামনের বাসায় ছিলেন ?
— হুমম
— আপনেরা জানেন নি জানি না মাঝে মাঝে এই বাড়ির বাইরে ছেলেদের লাশ পাওয়া যায়।
— মানে?

— আমি আরেকজনের থেকে শুনেছি অনেক বছর আগে এই বাসায় নাকি একটা বৃদ্ধ লোক তার মেয়েকে নিয়ে থাকতো। তাদের একটা কাজের লোকও ছিল। একবার বৃষ্টির রাতে তিনটা ছেলে এই বাসায় আশ্রয় নিয়ে ছিল। পরে নাকি ছেলে গুলো বৃদ্ধলোক আর কাজের লোকটাকে মেরে ২য় তলার একটা রুমে গলায় কাপড় বেধেঁ ঝুলিয়ে দেয়। আর মেয়েটাকে রান্না ঘরে ধর্ষন করে। এরপর নাকি অনেক বার এই বাসায় রাতে আলো জ্বলতে দেখা গেছে। তবে আবার সকালে লাশও দেখা গেছে। কথা গুলো সত্য কি না জানি না তবে শুনেছি মেয়েটাকে মাঝে মাঝে দেখা গেলেও যাদের নিয়ত ভালো তারা নাকি বেচেঁ ফিরে। আপনাদের কপাল খুব ভাল ছিল হয়ত।

বাড়িতে থেকে যতটা ভয় পেয়েছি এখন ততটা কষ্ট হচ্ছে। নিরুর সাথে হয়ত অবিচার হয়েছে তবে যারা এমন করেছে তাদের মৃত্যু টা যেন এমন ভাবেই হয়।

এরপর আমরা আমাদের গন্তব্যের দিকে রওনা দিলান। কিন্তু ২য় তলায় যা ছবি তুলেছি একটাও মোবাইলে নেই। বাইরে আসতেই মোবাইল কাজ করেছে তবে এখানের ঘটনা যত তারাতারি ভুলতে পারবো ততই ভালো। নয়ত মনে দাগ কেটে যাবো। আর রাত তো ভয়ংকর রূপ এইসব আত্নাদের জন্য।

গল্পের বিষয়:
দু:খদায়ক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত