ছেলেটার নাম রোহান। খুব ছোটবেলা থেকেই সে নানার বাড়িতে থাকে।তবে নানার বাড়িতে থাকার একটা কারন আছে।
সে যখন খুব ছোট, তখন তার বাবা অন্য একজন মহিলাকে ভালোবেসে বিয়ে করে ফেলে।এরপর তার বাবা-মায়ের ডিভোর্স হয়ে যায়।
কয়েকবছর পরে তার মা ও অন্য একজন পুরুষের হাত ধরে সৌখিক জিবনে চলে যায়।
এরপর থেকেই সে নানার বাড়িতে থেকে যায়।তার নানা-নানি তাকে খুব আদর যত্ন করেই বড় করে তুলে।
তারা কখনো তাকে বাবা-মায়ের কষ্ট বুজতে দেয় নি।নিজের সন্তানের মত করে লালন-পালন করেছে ।
↓↓↓
গ্রামের অন্যান্য ছেলেদের থেকে রোহান একটু বেশিই দুষ্টু এবং সাহসী।
সারাদিন ঘুরাঘুরি, পুকুরে গিয়ে অযথা ডুবানো,গাছে গাছে চড়া, ছাড়া যেন তার কোনই কাজ নেই।পড়াশোনায় তো একদম ঘোড়ার ডিম।
ক্লাস ফাকি দিয়ে বন্ধুদের সাথে ঘুরলে কি আর পড়াশুনা হয়।এই তো আর চার মাস পরেই তো তার প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনি পরিক্ষা।
পরিক্ষার বিষয়ে যে তার একদমই ভাবনা নেই।
খেলাধুলা করতে সে একটু বেশিই ভালোবাসে।যেমন ক্রিকেট, লাডুম,মারবেল, আবার মাঝেমাঝে ফুটবল ও খেলে থাকে।
↓↓↓
গীস্মকাল টা তার কাছে একটু বেশিই পছন্দনীয়। কারন সে আম খেতে খুব পছন্দ করে।
এ সময় পাঠশালা বা মক্তব কোনটিতেই সে যেতে চায় না।সারাদিন টো টো করে এক গাছতলা থেকে আরেক গাছতলা।
কাচা আমের রসে তার সুন্দর মুখটিকে ক্ষত করা। এগুলোই তার নিয়মের মধ্যে পরে।সে কি আর কারো বারন মানে।
সে চলে তার নিজের নিয়মে।
↓↓↓
সে যেই স্কুলে পড়ে সেই স্কুলের পাশেই একটা বড় পুকুর আছে।
সেখানে অযথা ডুবানো, পুকুরের কিনারের গাছ গুলো থেকে পানিতে থুবরে পরাই তার কাজ।তাছাড়া সেই পুকুরে একটা সিড়ি ঘাটলা আছে।
প্রচন্ড দম নিয়ে সেই সিড়ি ঘাটলার পানির ভিতর দিয়ে পারাপার হওয়া যেন তার সাহসিকতার খেলা।
কখন যেন সেই সিড়ির ভেতর আটকে যায় সে ভাবনা কি আর সে করে।সে তো এক বীরপুরুষ।
↓↓↓
গ্রামের লোকেদের কাছে রোহানের নামটা একটু বেশিই পরিচিত।কারন যেই ছেলে সারাদিন গ্রামের এইপার থেকে ওইপার টই টই করে ঘুরে।
তাকে চিনবে না তো কাকে চিনবে।এছাড়া সবাই তাকে খুব আদর ও করে।
কারন সে তো এক এতিম, আজ তার বাবা-মা থাকা সত্তে ও না থাকার মতই।
তাছাড়া খুব চঞ্চল হওয়াতে সে খুব সহজেই সবার সাথে মিশে যায়।
↓↓↓
আজ রোজ শনিবার জুন মাসের নয় তারিখ।অন্যান্য দিনগুলো থেকে আজকের দিনটা অনেকটাই আলাদা। সময় বেজে প্রায় সাড়ে চারটা।
একটা বড় উঠানের মধ্যে একটা চার পা ওয়ালা সরু খাটের মধ্যে রোহানকে শুইয়ে রাখা হয়েছে।
একটা ছোট্ট চাদর দিয়ে তার শরির টা ডেকে রাখা হয়েছে।
মসজিদের মাইকে ময়াযযিন রোহানের নাম ধরে কি যেন বলতে লাগছে।খাটের চারপাশে মানুষ ভিড় করে ফেলেছে।
সবাই একটু পরপর রোহানের সুন্দর ঘুমন্ত মুখটা দেখে চোখের জল ফেলছে।
কারন কিছুক্ষন আগে রোহান তার জিবনের শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেছে।
সে স্কুল ঘাটের সেই সিড়ি ঘাটলার ভেতরে আটকে পড়ে মারা যায়।সে তার সাহসিকতার খেলায় হেরে যায়।
↓↓↓
তার মিত্যু টা একেবারেই সহ্য করার মত নয়।
সত্যিই পুরো এলাকাটা আজ স্তব্ধ হয়ে গিয়েছে।স্তব্ধ হয়ে গিয়েছে এলাকার মানুষ গুলো।
প্রায়শই কান্নায় জ্ঞ্যান হারিয়ে ফেলছে তার না-নানি। কান্নায় ভেঙে পড়েছে আত্নীয়-স্বজনরা ।
সবাই শুধু আজ তার মৃত লাশটার দিকে তাকিয়ে আছে।
এবং তার জন্য আল্লাহর দরবারে হাত উঠিয়ে দোয়া করছে, -আল্লাহ যেন তাকে জান্নাত দান করে;(আমিন)