সন্ধ্যা মালতী
আমার চিত্রা আপু সন্ধ্যামালতী ফুল খুব
ভালবাসে। আমাদের বাসায় সে
সন্ধ্যামালতী ফুলের বাগান করেছে। লাল,
সাদা, রানী গোলাপী এ তিন রঙের
সন্ধ্যামালতী ফুল ফোটে আমাদের
বাগানে। সন্ধ্যার আযান দেয়ার কিছুক্ষণ
আগেই ফোটে ফুলগুলো। কী যে সুন্দর লাগে
দেখতে! তখন চিত্রা আপু গিয়ে ফুলগুলোর
সামনে বসে থেকে প্রকৃতির সৌন্দর্য
মন ভরে উপভোগ করে।।
ওহ,, আমার পরিচয়
বলি। আমার নাম চারু। সুমাইয়া আঞ্জুম
চারু। আপুর নাম আনিকা আঞ্জুম চিত্রা।
আমরা দুই বোন। আপু আমার
থেকে চার বছরের বড়। ছোটবেলা থেকেই
আপুর সন্ধ্যামালতী ফুল খুব পছন্দ।। আমি
বর্তমানে ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ছি। আর আপু
দশম শ্রেণিতে।
রমজান মাস চলছে। ঠিক ইফতারের আগে
আগে আমাদের বাগানের সন্ধ্যামালতী
ফুলগুলো ফোটে। আপুর ঘর থেকে বাগান
দেখা যায়। আপু ঘরে বসেই নিজের ইফতার
করে শুধুমাত্র ফুলগুলোর সৌন্দর্য্য দেখার
জন্য।
আসলে এই সন্ধ্যামালতী
বাগানটাকে চিত্রা আপু খুব ভালবাসে।
কেউ বাগানটাকে ঘুরে দেখতে চাইলে আপু
তার সাথে থেকে ঘুরে ঘুরে বাগান দেখায়,
যাতে সে অসাবধানতা বশত গাছগুলোকে
মারিয়ে না ফেলে। একবার আম্মুর
ছোটবোন, মানে আমার খালামনি তার
পাঁচ বছরের মেয়েটিকে নিয়ে আমাদের
বাসায় আসেন। মেয়েটি আপুর বাগানে
গিয়ে অনেক গুলো ফুল ছিঁড়ে নিয়ে আসে
আর অনেকগুলো গাছ মারিয়ে নষ্ট করে
দেয়। ঐ দিন আপু খুব কেঁদেছিল। রাগ করে দুই
দিন না খেয়ে ছিল। পরে বাবা আপুকে
বুঝিয়ে শুনিয়ে খাওয়ান, এবং আরো
সন্ধ্যামালতী ফুলের গাছ এনে দেবেন বলে
কথা দেন। এভাবে অনেক বোঝানোর পর আপু
খেয়ে নেয়।
যাই হোক, কদিন পরেই ঈদ।
আমাদের দুইবোনের মাঝে উত্তেজনার
সীমা নাই।
চিত্রা আপু বলে,
-“এবার আমি রানী গোলাপী রঙের জামা
কিনব, আর ঈদের দিন ঐ জামা পড়ে রানী
গোলাপী সন্ধ্যামালতীর সাথে ছবি তুলব।
তখন আমাকে রানীর মতো লাগবে। তাই না
চারু?’
আপুর কথায় আমি হেসে উঠলাম আর বললাম,
-“হ্যাঁ আপু, সত্যি তোকে রানীর মতই
লাগবে।”
আম্মু, আমি আর আপু বাজারে গেলাম ঈদের
কেনাকাটা করতে। আপু তার সন্ধ্যামালতী
ফুলগুলোর সাথে মিলিয়েই একটা রানী
গোলাপী রঙ এর জামা কিনল। ট্রায়াল রুমে
গেল জামাটি পড়তে। তারপর এসে আমায়
জিজ্ঞেস করল,
-চারু, বল তো আমায় কেমন লাগছে?”
আপুকে সত্যিই রাজকুমারীর মত লাগছিল।
আমি বললাম,
-“আপু, তোকে পুরো রানীর মতোই লাগছে।”
আমার কথা শুনে আপু অনেক খুশি হল।
তারপর আমার জন্য একটা জামা কেনা হল
আপুর পছন্দ তেই। আপুর পছন্দ সত্যি খুব সুন্দর।
জামাটি আমার অনেক পছন্দ হয়েছে।
তারপর আমরা মার্কেট থেকে বের হলাম।
চিত্রা আপু অনেক খুশি আর উত্তেজিত
ছিল। আনন্দে সে নাচতে নাচতে মার্কেট
থেকে বের হল। রাস্তার ঐ পাড়ে গিয়ে
আমরা সি. এন. জি ধরব আপু রাস্তার ঐ
পাড়ে একটা সি. এন. জি ফাঁকা দেখে, ধরার
জন্য এক দৌড় দিল। কিন্তু সে লক্ষ্য করেনি
যে, তার হাতের বাম পাশ থেকে একটি
ট্রাক আসছে। আম্মু বলছে,
-“চিত্রা, ট্রাক।”
আপু ট্রাক দেখে ভয় পেয়ে গেল। সরে
যাওয়ার চেষ্টা করতে লাগল। কিন্তু আপু
ঘোরার আগেই ট্রাকটি আপুকে পিষে
দিয়ে গেল। আপুর হাত থেকে ওর জামার
প্যাকেট টি ছিটকে রাস্তায় পরে যায়।
আমার চোখের সামনে যা হচ্ছে, তা কি
সত্যি, নাকি আমার চোখের ভুল। আমি আর
আম্মু দৌড়ে আপুর কাছে গেলাম। ততক্ষণে
ঐ খানে অনেক লোকের ভিড় জমে গিয়েছে।
আপু চোখ বন্ধ করে চুপচাপ শুয়ে
আছে। এই আপু চোখ খোল। দ্যাখ তোর রানী
গোলাপী রঙের নতুন জামা টা রাস্তায়
পরে আছে। ঐটাতে ময়লা লাগছে। তুই
জামাটা পড়ে ঈদের দিন তোর
সন্ধ্যামালতী ফুলগুলোর সাথে ছবি তুলবি
না? চোখ খুলছিস না কেন আপু? চোখ
খোল………
আজ চার বছর হতে চলল আপুকে হারিয়েছি।
এখনো রমজান মাস চলছে, আজ ১২ ই রমজান।
আপুর ঘরের জানালা দিয়ে আমি
সন্ধ্যামালতী বাগানের দিকে তাকিয়ে
আছি। আজও রানী গোলাপী ফুলগুলো সন্ধ্যা
হওয়ার আগে ফুটে উঠে। এই বাগানের
বাতাসের শব্দে আমি আপুর উপস্থিতি টের
পাই। আপু যেন আমাকে বলছে, ” চারু,
ফুলগুলোকে কষ্ট দিস না। ওদের যত্ন নিস
ঠিকমত।” সেই রানী গোলাপী রঙের
জামাটা আপুর ঈদেরদিন পড়া হয় নাই।
কিন্তু সে যেন এ ফুল
গুলোর মধ্যে ফুটে উঠে রোজ সন্ধ্যার
সন্ধ্যামালতী হয়ে।