আমি যে বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে আছি সে বাড়ি থেকে প্রচন্ড হই-হুল্লোর আর গান-বাজনার আওয়াজ আসছে। আজ আমার মনেও এক ভিন্ন রঙের তীব্র মেঘ জমেছে, রঙের নাম বিষণ্ণতা। বিষণ্ণতার মেঘ গুলো এতো পরিমান জমেছে যে বৃষ্টি নামতে চাইছে। বৃষ্টি নামলেই চোখে ঝরবে জল। এ বৃষ্টি নামতে দেয়া যাবে না। এ বৃষ্টি আমার জন্য নিষিদ্ধ। আজ এই মহল্লায় এ বাড়িটি বিয়েবাড়ি নামে পরিচিতি পেয়েছে। যে মেয়েটি এ বাড়িতে লাল বেনারসি পড়ে বউ সেজে বরপক্ষের জন্য অপেক্ষায় আছে সে গতকালও আমার প্রেমিকা ছিলো। কিছুদিন আগেও এ মেয়েটির সাথে মিশে হরেক রংয়ের স্বপ্ন দেখতাম। কিন্তু আজকের পর আর এ স্বপ্ন দেখবোনা কেউ। দুজন হাটবো দু’পথে।
.
মেঘে বিকট শব্দে দুবার গর্জন করেই বৃষ্টি নেমে গেলো। টিপ টিপ বৃষ্টির ফোটা পড়তে লাগলো আমার হাতে থাকা এপয়েনমেন্ট লেটারে। আস্তে আস্তে ভিজে ছুপছুপ হয়ে গেলো পেপারটা। আজ এ এপয়েন্টমেন্ট লেটারটা আমার কাছে মুল্যহীন। দুদিন আগেও এই সাদা রংয়ের ইংরেজী অক্ষরে লেখা কাগজটার জন্য উন্মাদ হয়ে থাকতাম। এই কাগজটা পেলেই আজকের এই মেয়েটির লালশাড়ি পড়ার কারন হতাম আমি। বিধাতার কাছে প্রার্থনা করতাম প্রতিটি মুহুর্ত, তবে আজ এ নিয়ে কোনো আকাঙ্ক্ষা নেই আমার।
.
চোখ থেকে অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে। ধন্যবাদ বৃষ্টিকে চোখের পানিটাকে আড়াল করার জন্য। সবাই দেখছে কিন্তু কেউ বুঝতে পারছে না এই আনন্দপূর্ণ বাড়ির সামনেও কারো চোখের জল ঝরছে বিরহ যন্ত্রনায়। ছুড়ে ফেলে দিলাম হাতের এই মুল্যহীন সাদা কাগজটা। হাটতে লাগলাম আমার গন্তব্যে।
.
আজ প্রেয়সীকে হারানোর পড়েও আমাকে খুব আন্তরিকভাবে অভিনন্দন জানানো হচ্ছে। রাস্তায় পড়ে থাকা ওই সাদা কাগজটায় লেখা আছে “Congratulation! You are selected as a Head Desk Officer in our Institution.” এ অভিনন্দন আমাকে দ্রবীভূত করছেনা। তবে আকাশটা সমানতালে কাদঁছে আমার সাথে।
_
গল্পের বিষয়:
দু:খদায়ক