এই অহনা,
-তোমার আপু কোই?
-আপুকে তো দেখলাম পুকুর পাড়ের দিকে যেতে।
-ও আচ্ছা।
অহনার কথায় আমি রুম থেকে বের হলাম।এই মেয়েটা এই রাতের বেলা পুকুর পাড়ে কি করছে।আমি বের হয়ে পুকুরের দিকে হাটা দিলাম।
”
শ্বশুরবাড়িটা একটু গ্রামের ভেতরে।দেখেই বোঝা যায় আগে হয়তো জমিদার ছিল।বিশাল জায়গার উপর দু তলা বাড়ি।চারপাশে অনেক গাছ আর সামনে সিড়ি দিয়ে বাঁধানো বেশ বড় একটা পুকুর।
‘
সুপ্তির চাচাতো বোনের বিয়ে।বাড়িটা এমন ভাবে সাজানো হয়েছে যে বাইরে থেকে যে কেও দেখলে বলে দেবে এটা বিয়ে বাড়ি।
আমি অবশ্য আসতে চাইনি।অফিস ছুটি নিতে আমার একদমই পছন্দ না।কিন্তু সুপ্তির কথায় আর না এসে পারলাম না।আমাকে ছাড়া ও নিজেও আসতো না।
‘
বিয়ে বাড়িতে এমনিতেই লোকজন বেশী থাকে।আমি বের হওয়ার সময় দেখলাম সবাই বেশ মজা করছে,গল্প করছে।কিন্তু সুপ্তি এসব রেখে এখন পুকুরপাড়ে কি করছে।আমি একটু এগুতেই দেখলাম মেয়েটা সিড়িতে চুপটি করে বসে আছে।আমি সুপ্তির পাশে গিয়ে বসে আস্তে করে ডাক দিলাম,
-সুপ্তি।
আমার কথায় সুপ্তি কিছু বললো না।মেয়েটা মাথাটা এমন ভাবে নিচু করেছে যে মুখটাও দেখতে পাচ্ছি না।আমি এবার সুপ্তির মাথাটা তুলতেই দেখি মেয়েটা চোখে পানি।
সুপ্তির চোখে পানি দেখে আমার ভেতরটা কেমন যেন কেপে উঠলো।মেয়েটাকে কখনও কাঁদতে দেই নি।
আমি সুপ্তির চোখের পানি মুছে দিয়ে বললাম,
-কি হইছে,কান্না করো কেন?
-ইতির সাথে তোমার কি সম্পর্ক?
সুপ্তির কথায় আমি একটুও অবাক হলাম না।জানতাম এই প্রশ্নটা সুপ্তি করবেই।তবে এখনি যে করবে এইটা ভাবিনি।
‘
ইতির সাথে আমার রিলেশন ছিল এক বছরের।তবে সেটা কিভাবে ব্রেকআপে পরিনত হলো এইটা আমিও বুঝতে পারিনি।সামান্য ঝগড়া থেকেই হয়তো।ইতি যে সুপ্তির ফুফাতো বোন এইটা জানতাম না।ইতিকে প্রায় ভুলেই গেছিলাম।কিন্তু এখানে এসে যখন ওকে দেখলাম তখন কেমন যেন ভালবাসাটা আর ছিল না।শুনেছিলাম আমাদের বিয়ের সময় নাকি ওর কি এক্সাম ছিল তাই আসতে পারেনি।
”
আজ যখন সন্ধায় ফ্রেশ হয়ে বের হলাম তখনি ইতি আমার সামনে এসে দাঁড়ালো। এই মেয়েটাকে দেখলে কেমন যেন এখন আএ রাগ কন্ট্রোল করতে পারিনা।তবে এখানে কিছু করা যাবে না।আমি ইতিকে বললাম,
-কিছু বলবেন?
-আসলে আমি সরি।সেদিন আমারই দোষটা বেশী ছিল।বুঝতে পারিনি।
-আমি সব ভুলে গেছি।আর তুমি হয়তো ভুলে গেছো যে আমি তোমার বোনের একমাত্র বর।
-আমি তোমাকে এখনও ভালবাসি।
-সরি আমি আমার বউকে অনেক ভালবাসি।আর সুপ্তিও আমাকে একটু বেশীই ভালবাসে।
আমি আর কিছু না বলে চলে আসলাম।ইতির সাথে এটুকুই কথা হয়েছিল।কিন্তু সুপ্তি কিভাবে জানলো।আমি সুপ্তিকে বললাম,
-তুমি কিভাবে জানলে?
-আমি তোমাদের সব কথা শুনেছি।
-ও আচ্ছা।তাহলে শেষ কথাটাও হয়তো শুনেছো।
-হুম।কিন্তু তুমি আমার থেকে সবকিছু লুকিয়েছ কেন?
-আমি চাইনি আমার বউটা অন্য কিছু নিয়ে ভাবুক।
আমি এবার সুপ্তিকে কাছে টেনে বললাম,
-ভালবাসি।
-একটুও না।
-একটু বেশীই ভালবাসি।
-উহু।যাও তোমার ইতির কাছে যাও।
আমি এবার উঠে সুপ্তিকে বললাম,
-আচ্ছা যাচ্ছি ইতির কাছে।
সুপ্তি এবার আমার কলার ধরে বললো,
-কি বললি তুই।আর একবার বললেএকদম খুন করে ফেলবো।
আমি সুপ্তির কথায় মুচকি হেসে ওকে জড়িয়ে ধরে বললাম,
-আমার সবটুকু জুড়ে তুমি।শুধুই তুমি।তুমিই আমার অক্সিজেন।
সুপ্তি আমার কথায় কিছু না বলে চোখের জলে আমার বুক ভেজাচ্ছে।ভিজুক একটু।ওর ভালবাসায় ভিজে থাকুক আমার বুকটা।
……………………………………………….. (সমাপ্ত) ………………………………………