পরিবর্তন ৩

পরিবর্তন ৩

একটা বিশেষ প্র‍য়োজনে ঊর্মি কে ফোন দিয়েই চলেছি কিন্তু একই কথা বার বার ভেসে আসছে আর সেটা হলো নাম্বারটি এখন ওয়েটিংয়ে আছে।
আপনাদের সাথে পরিচয়ে হয়নি আমি রাকিব আর যাকে ফোন দিচ্ছে উনি হচ্ছে আমার দালিলিক সূত্রে বউ।
,
বেশ কিছুদিন থেকে ঊর্মির মধ্যে পরিবর্তন গুলো আমাকে কিছুটা হলেও ভাবাচ্ছে যদিও ওকে আমি অনেক বিশ্বাস করি এবং ভালোবাসি।
বিশ্বাস, ভালোবাসা দুটই একে অন্যকে ছাড়া অপুণ্য।
ভালোবাসা কখনো বিশ্বাস ছাড়া হয়না।
আর যে ভালোবাসায় বিশ্বাস নেই সে ভালোবাসা কখনো ভালোবাসা হতে পারেনা।
ঊর্মির যে পরিবর্তন গুলো আমাকে অবিশ্বাস নামের নিকষ কালো অন্ধকারের দিকে নিয়ে এগিয়ে দিচ্ছিলো সেগুলো হলো।
আগে ও আমাকে দিনে কয়েকবার ফোন দিয়ে আমার আবস্থান জানতো।
কিন্তু এখন ফোন তো দেয়না বরং আমি যখন ফোন তখন ওর ফোন ওয়েটিং পাই।
,
আগে যখন সারাদিন কাজ শেষে বাড়িতে ফিরতাম তখন দেখতাম ও না খেয়ে আমার জন্য বসে আছে।
আমি রাত্রে বাড়ি যেতাম তার পর ফ্রেস হতাম তারপর খেতে বসতাম তখন ও আমার সঙ্গে খেতে বসত।
কিন্তু এখন যখন সারাদিন কাজ শেষে বাড়িতে ফিরি তখন ও দরজা খুলে দিয়ে ডাইনিংয়ে খাবার খুলে রাখা আছে খেয়ে নিও বলে ঘরে গিয়ে শুয়ে পড়ে।
যদি জিজ্ঞেস করি তুমি খাবেনা তাহলে ও খেয়ে নিয়েছে বলে আমাকে ঘরে চলে যায়।
আগে বেশি রাত করে বাড়িতে ফিরলে ও আমার সাথে রিতি মতো ঝগড়া লাগিয়ে দিতো কিন্ত এখন আমি দেরি করে ফিরছি নাকি তাড়া তাড়ি ফিরছি এগুলোর প্রতি ওর কোন আগ্রহ নেই।
আমি খুব করে উপলব্ধি করতে পারছিলাম আমার ওর অনীহা গুলো।
আগে আমরা মাঝে মাঝে জোসনা স্নাত রাতে ঘুরতে বের হতাম সে সময় ওই আমাকে জোর করে নিয়ে যেতো।
যেতে না চাইলে ও অভিমান করতো কিন্তু এখন এ গুলো ওর মনেই থাকেনা যদিওবা আমি বলি তাহলে ও অনিহা প্রকাশ করে।
,
সেদিন রাতে ঘুমাচ্ছিলাম দেখলাম ওর ফোন বাজছে ওর ফোন বাজাতে আমার ঘুম ভেঙ্গে গেলো যেহেতু আমার ফোন বাজছে না তাই আমি ঘুম থেকে আর ওঠলাম না।
দেখলাম ঊর্মি ফোন হাতে নিয়ে দেখলো কে ফোন দিয়েছে তারপর আমার দিকে ঘুরে খুব ভালোভাবে দেখে নিলো যে আমি ঘুমাচ্ছি না কি জেগে আছি।
জানিনা কি বুঝলো তার পর ফোন রিসিভ করলো এবং বলা শুরু করলো এতো রাতে ফোন দিয়েছো কেনো ওদিক থেকে কি জেনো বলাতে ঊর্মি ফোনটা নিয়ে বিছানা থেকে ওঠে ঘরের বাইরে চলে গেলো।
এবং বেশ কিছুক্ষণ পর আবার ঘরে ফিরে আসলো।
হ্যা আমার আর বোঝার বাকি নেই ঊর্মি কোন এক ভুল পথে পাঁ বাড়িয়েছে।
,
খুব খারাপ লাগছিলো যে মানুষটাকে আমি এতো বিশ্বাস করলাম যে মানুষটাকে এতো ভালো বাসলাম শেষ পর্যন্ত সে আমার বিশ্বাস ভঙ্গ করলো আমার ভালোবাসায় তাকে তুষ্ট করতে পারলাম না।
ওর পাশে শুয়ে থাকতে কেমন জানি ইচ্ছে করছিলো না।
তাই ছাদে গিয়ে বসে থাকবো বলে যখন ওঠে যাচ্ছিলাম তখন ও জিজ্ঞেস করলো কোথায় যাচ্ছো কোন উত্তর না দিয়ে ওঠে চলে আসলাম।
,
যখন ঊর্মির সাথে বসে থাকতাম তখন এই জনমানবহীন শহর টাকে দেখতে খুব ভালো লাগতো কিন্তু আজ কেনো জানি আর ভালো লাগছেনা।
আগে দ্রুত বেগে ছুটে আসা বাস গুলোকে খুব আগ্রহ নিয়ে দেখতাম কিন্ত আজ আর দেখতে ইচ্ছে করছেনা।
আজ ঝিঝি পোকার ডাক গুলো আত্ননাদের মতো মনে হচ্ছে।
,
আজ সারাদিন কাজে তেমন মন বসাতে পারিনি। কেনো জানি সব কিছুই আমার কাছে তুচ্ছ মনে হচ্ছিলো।
আমাকে কেন জানি কোনএকটা শূন্যতা খুব করে তাড়া করছিলো।
বেশ রাত করে বাড়িতে ফিরলাম এর মধ্যে কয়েকবার ও ফোন দিয়েছে রিসিভ করিনি।
ওর সাথে থাকতে আমার খুব অসহ্য লাগছিলো আবার একা একা থাকতেও পারছিলাম না।
এভাবে কয়েটা দিন পার করলাম।
একয়েকটা দিন আমার কাছে কয়েক হাজার বছরের মতো মনে হয়েছে।
নিজেকে খুব অসহায় মনে হয়েছে।
নিজের জীবন টাকে অর্থহীন মনে হয়েছে।
ঊর্মি ও বুঝতে পারছিলো আমার কিছু একটা হয়েছে।
কারণ এ কয়েকদিন বাসায় ঠিক মতো খাইনি ঠিক মতো ঘুমই নি।
ও অবশ্য কয়েকবার জানতে চেয়েছিলো কি হয়েছে আমার কিন্তু আমি কোন উত্তর দিইনি।
,
কয়েকদিন পর আজ রাতে ওকে বললাম একটু ছাদে আসবে।
ও ছাদে এসে আমার দু ঘাড়ে হাত দিয়ে আমার দিক তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো রাকিব কি হয়েছে তোমার??
আমি কোন উওর না দিয়ে ওকে বললাম।
ঊর্মি একটা কথা কি জানো ভালোবাসেতে কোন জোর করতে নেই।
আবার কারো সঙ্গে প্রতারণা করতে নেই।
জানো ঊর্মি সব কিছুকে ভাগাভাগি করে নেয়া যায় শুধু ভালোবাসার মানুষ বাদ দিয়ে।
ঊর্মি তুমি তোমার জিবনের সাথে অন্য কাওকে জড়িয়ে নিয়েছো।
জানো ঊর্মি তুমি এখন অন্য কারো অভিমান ভাঙ্গাতে এতটাই ব্যস্ত থাকো যে আমার অভিমান গুলোর প্রতিনিয়ত অপমৃত্যু হয়।
দেখো আমি ইচ্ছে করলে এগুলো নিয়ে তোমার সাথে রাগারাগি এমন কি তোমার উপর চড়াও হওয়া এ সব কিছুই আমি কিরতে পারতাম।
কিন্তু ওইযে বললাম ভালোবাসাতে কোন জোর করতে নেই তাই করিনি।
ওই যে একটা কথা আছে না।
যে তুমি যাকে ভালোবাসো তাকে মুক্তি দাও যদি সে ফিরে আসে তাহলে সে তোমার আর যদি ফিরে না আসে তাহলে সে কখনোই তোমার ছিলোনা।
তোমাকে মুক্তি দেওয়ার জন্য সব ব্যবস্থা করে ফেলেছি শুধু তোমার একটা সাইন তাহলেই তুমি মুক্ত বলে ওর সামনে কাগজ গুলো এগিয়ে দিলাম।
ওর সামনে কাগজ গুলো যখন এগিয়ে দিলাম তখন ও হাতে নিয়ে অবাক হয়ে দিকে তাকিয়ে ছিলো।
আমি ওর থেকে চোখ ফিরিয়ে নিয়ে যখন ওর দিকে আবার তাকালাম দেখলাম ও অঝোর ধারায় কেঁদে চলেছে।
তার পর কাগজ টাকে ছুড়ে ফেলে দিয়ে আমার দু হাত ধরে বললো প্লিজ আর একটা বার সুযোগ দাও।

গল্পের বিষয়:
দু:খদায়ক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত