পান্তা ইলিশ

পান্তা ইলিশ

>কি রে এমন বাংলার পাঁচ করে রাখছিস ক্যা মুখ ঝুম।
.
ঝুম ; কিছুনা 😔 রনি ভাইজান।
.
রনি ; আইচ্ছা কইছ না। (রেগে মুখ ঘুড়িয়ে বসলো রনি)
.
ঝুম ; তোমার আবার কি হইলো রাগ দেহাও ক্যা।
,
রনি ; তোরে কতবার না করছি না আমারে ভাইজান কবি না খবরদার।
,
ঝুম ; হিহি হিহি হা হিহি হিহি হা।তয় কি কমু তুমি তো আমার চাইতে মেল্লা (অনেক) বড় ১,২,৩,৪,৫,৬, (আংঙুল গুনতে লাগলো ঝুম)৬ বছরের বড়।
,
রনি; তাই বলে ভাইজান কবি।😒
,
ঝুম ; বহুত প্যাঁচাল পারছো এহন যাও। বইয়া থাকলে আমাগো চলবে না।আমি ও যায়।
,
(বলেই ঝুম উঠে যাচ্ছিল।তখনি রনি উঠে ঝুমের সামনে দাঁড়ালো।)
,
রনি ; যাবি মানে। কই যাবি এইহানে খাড়া আমার কথার জবাব দিয়া তার পর যাবি।
,
ঝুম ; কিয়ের কথা, কোন কথার জবাব রনি ভাইজান।
,
রনি ; ইইইইই আবার ভাইজান।
,
ঝুম ; আইচ্ছা আইচ্ছা ভুল হই গেছে।এবার কও দেহি কি জবাব দিমু।
,
রনি ; তুই মন খারাপ কইরা বইয়া রইছিলি ক্যান।
,
ঝুম ; হিহি হিহি গরিবের আবার মন খারাপ। ও কিছু না।আইজ ফুল বেচবার পারি নাই তাই মন খারাপ। প্রতিদিন যেইন থাইকা ফুল নিয়া আসি সেইনকার দারোয়ান আইজ টের পাইছে।গেট বন্ধ কইরা দিছে ফুল তুলতে পারি নাই।
,
রনি; ও হেই কথা।আইচ্ছা আইজ তোর আর ফুল ব্যাচন লাগবো না।তুই গিয়া যাত্রী ছাওনির অইহানে বস আমি এই ফুলের লাঠি টা মহাজন রে দিয়া আইতাছি এহনি।
,
রনির কথা মত ঝুম যাত্রী ছাওনীতে গিয়ে বসে রইলো। রনি কাপড় আর কাগজের ফুল বিক্রি করে। সারাদিন বিক্রি করে যে টাকা প্রায় সব গুলা মহাজনের হাতে দেয়।হিসাবের টাকা।এক টাকাও এদিক সেদিক করলে বুঝে যাবে মহাজন। কারণ প্রতিটা ফুল ১০ টাকা পিস।আর মহাজন ফুল গুনে দেয়। রনিও কখনো টাকা পয়সা সরাইনি।তাই মহাজনের কাছে বাকিদের থেকে রনি বিশ্বস্ত বেশি। আজ সারা দিনে মাত্র ২০০ টাকার ফুল বিক্রি করেছে রনি। মহাজন আজ রনি শুধু ৫০ টাকা দিয়েছে।এতেই রনি অনেক খুশি।টাকা নিয়ে বেরিয়ে আসতেই কি যেন মনে পরতেই আবার ঘুরে মহাজনের কাছে গেলো।
,
মহাজন ; কি রে বেটা কিছু কবি।
,
রনি ; (মাথা নিচু করে)না মানে,,,
,
মহাজন ; কইয়া ফেল।টাকা আরো নিবি নাকি।
,
রনি ; হ মহাজন আমারে আর ২০ টাকা দেন। আমার খুব দরকার। না হয় কাইলকা ২০ টাকা কম দিয়েন।
,
মহাজন ; (একটু হাসি দিলো মহাজন)
আরে লাগবে তো নিয়া যা এতে লজ্জার কি আছে।
,
মহাজন রনিকে আরো ২০ টাকা বের করে দিলো। টাকা টা পেয়ে রনি খুব খুশি হয়ে হেসে ফেললো। দৌড়ে যাত্রী ছাওনীর দিকে গেলো রনি।
ঝুম রনির আপন কেউ না।কিন্তু আপনের চেয়েও অনেক বেশি।রনির কাছে ঝুম ওর পরিবার। ঠিক তেমনি ঝুমের কাছে রনি ওর পরিবার। রনির মা বাবা নেই বা আছে কি না সেটা রনি জানে না।কতটা ছোট বেলায় যে এই রাস্তায় এসে দাঁড়িয়েছে নাকি জন্মের পর পাষাণ মা বাবা রাস্তায় ফেলে চলে গেছে সেটাও জানে না রনি।সারাদিন এখানে সেখানে এ দোকানে ও দোকানে কাজ করে নিজের পেট চালায়।আর রাত এলে সেই বাংলা প্রবাদের মত,, যেখানেই রাত সেখানেই কাত,,ঠিক এমন হয়ে ঘুমিয়ে পরে।নিজেস্ব ঘর বাড়ি নেই রনির।রাত নামলে কখনো রাস্তার ফুটপাতে কখনো যাত্রী ছাওনীতে কখনো বা স্টেশনে ঘুমিয়ে পরে।(শুধু রনি একা নয় এমন হাজারো রনি রাতের পর রাতে ফুটপাতে ঘুমায়)
রনির যখন ১২ বছর বয়স তখন দেখা হয় ঝুমের সাথে।প্রতিদিনের মতো সেদিন ও কাজে বের হয়েছিল রনি।হাতে ছিলো কিছু গোলাপ আর গাদা ফুল।জ্যামে আটকে পরা প্রাইভেট গাড়ির দরজায় ঢাক্কা দিয়ে দিয়ে এর কাছে ওর কাছে ফুল বিক্রি করছিল রনি।কেউ দয়া করে ৫ -১০ টাকায় কিনে নিচ্ছিল আর কেউ ডাকার কারণে বিরক্ত হয়ে ঢাক্কা দিয়ে ফেলে দিচ্ছিল।
,
সারা দিন ফুল বেচে আর মাত্র ১ টা গোলাপ ফুল ছিল।সেইটা নিজের পকেটে রেখে ফুটপাতের দোকান থেকে একটা ৫ টাকার পাউরুটি কিনে নিয়ে খেতে খেতে হেটে যাচ্ছিল রনি।শহরের কোলাহল আর ব্যস্ততার মধ্যে থেকে বেরিয়ে রাস্তার পাশ দিয়ে পাউরুটি খেতে খেতে হেটে যাচ্ছিলো রনি।তখনি চোখ পরে সামনে একটা ছোট্ট মেয়ে চেঁচাতে চেঁচাতে দৌড়ে আসছিল রনির দিকেই।মেয়েটার দৌড়ানো দেখে প্রথমে রনি ঘাবড়ে যায়।তারপর হো হো করে হেসে উঠে। রাস্তার পাশে পরে থাকা কয়েকটা ইটের টুকরা তুলে রনি মেয়েটার দিকে ছুড়ে মারলো।রনির ছুড়া ঢিলের ভয়ে মেয়েটাকে তারা করা ২ টা কুকুর পালিয়ে গেলো। তাল সামলাতে না পেরে উবু হয়ে রাস্তার উপরে পরে গেলো।মেয়েটা।রনি ছুটে গিয়ে তুললো।গাল ফুলিয়ে কাঁদছে মেয়েটা।পরে গিয়ে হাতের কুনই ছিলে গিয়ে রক্ত বের হচ্ছে।রাস্তার পাশে একটা গাছের নিচে বসালো মেয়েটাকে রনি। এখনো কেঁদেই চলেছে।রনির হাতের হাফ পাউরুটি মেয়েটার দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো খাবে।একবার চোখ তুলে তাকিয়ে দেখলো পাউরুটি তার পর ঘাড় নারিয়ে বললো না পানি খাবো। রনি প্যান্টের পকেট থেকে ২৫০ মি.লি. জুসের বোতলে পানি বের করে মেয়েটার দিকে এগিয়ে দিলো। এতো ছোট মেয়ে যে কথা এখনো স্পষ্ট হয়নি।দেখে মনে হচ্ছে কোনো বড় ঘরের মেয়ে। হয়তো হারিয়ে গেছে।বোতল হাতে নিয়ে বোতলের কাক খুলতে পারলো না।রনির দিকে তাকিয়ে রইলো। রনি বুঝতে পেরে বোতলের মুখ খুলে দিলো। এতো কেঁদেছে যে এখনো ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে উঠছে পানিটাও খেতে পারছেনা।
,
তুমি কে, কোথা থেকে এসছো।নাম কি তোমার। তোমার মা বাবা কই,,?,,মেয়েটাকে প্রশ্ন করলো রনি
,
ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে উত্তর দিলো মেয়ে,দেখে মনে হচ্ছে ৫-৬ বছর বয়স হবে
,
আমি আমি আমি ঝুম,আম্মু হারিয়ে গেছে😭
,,,
বলেই আবার কান্না জুরে দিলো। রনি ঝুমকে নিয়ে আসে পাশে অনেক খুঁজাখুঁজি করলো ঝুমের মা বাবা কে কিন্তু খুঁজে পেলো না।নিজের নাম ছাড়া আর কিছুই বলতে পারছে ঝুম।এমনকি মা বাবা বা বাড়ি কোথায় তাও না।কোথা থেকে হারিয়ে গেছে সেটাও ঠিক করে বলতে পারছেনা। এতো টুকু মেয়ে কে একা রেখেও যেতে পারছে না রনি।তাই নিজের সাথে করেই নিয়ে গেলো যাত্রী ছাওনীতে।সারা দিন বাস থেকে নামে আর উঠে বলে মানুষের ভির জমে থাকে যাত্রী ছাওনীতে। কিন্তু রাতের আধারে নিরবতা চারিদিক।এখন আর কাঁদছে না ঝুম।সারাদিন ফুল বিক্রি করে যে টাকা হয়েছিল সেই টাকা দিয়েই কিছু খাবার কিনে এনে খেয়ে নিলো ঝুম কে সাথে করে রনি।কান্না না করলেও একটু পর পর ঝুম রনিকে বলতে লাগলো আমি আম্মু যাবো আমি আম্মু যাবো।কোনো রকম রনি ঝুমকে বুঝালো সকালে আম্মুর কাছে নিয়ে যাবে।যাত্রী ছাওনীর পাশে এক দোকানে শীতে পাওয়া কম্বল সকালে রেখে দেই রনি আর রাত হলে সেটা নিয়ে ঘুমিয়ে পরে যাত্রী ছাওনীর মেঝেতে।লাগেনা কোনো বালিশ লাগেনা কোনো মাদুর লাগেনা কোনো মশারি।আজও কম্বলটা এনে ঝুম কে নিয়ে শুতে লাগলো কিন্তু ঝুম কিছুতেই মাটিতে শুবেনা।অনেক বুঝিয়েও যখন লাভ হলো না তখন বাধ্য হয়ে কম্বলের এক পাশ মাটিতে বিছিয়ে দিয়ে আরেক পাশ গায়ে জড়িয়ে দিলো ঝুমের। কিন্তু বালিশ নেই বলে বালিশের বায়না ধরলো ঝুম।কি করবে এবার একটু ভেবে নিয়ে রনি নিচে বসে পরলো ঝুমের মাথার কাছে।ঝুমের মাথা নিজের হাটুর উপর রেখে ঝুমকে ঘুমাতে বললো। এবার আর কোনো কিছুর বায়না ধরলো না ঝুম।এতো ছোটো মেয়ের মাথায় এই টুকু বুদ্ধিও নেই যে রনিকে ঘুমতে বলবে।সারা রাত রনি এভাবেই বসে কাঁটালো। সকাল বেলা আবার কম্বলটা পাশের দোকানে রেখে ঝুমকে সাথে নিয়ে কিছু ফুল তুলে বিক্রি করে লাগলো। কিন্তু ঝুম বায়না ধরেছে মায়ের কাছে যাবে।রনিও ফুল বিক্রি করার সাথে সাথে ঝুমের মা বাবাকে খুঁজে চলেছে।এভাবেই দিনের পর দিন কেটে গেলো। দেখতে দেখতে ৬ বছর কেটে গেছে এখন ঝুমের বয়স ১২ বছর আর রনির ১৮। ঝুম ওর মা বাবার কথা এখন আর বলেনা।ভুলেই গেছে সব । পরিবার বলতে ঝুমের এখন রনিই সব।এখন রনি আর ঝুম রাস্তায় ঘুমায় না।রনি আগের থেকে একটু বেশি উপার্জন করে বলে বস্তিতে একটা ছোট ঘর নিয়েছে সেখানে ঝুম থাকে আর রনি মহাজনের দোকানে থাকে।রনিকে ভাইজান বলে ডাকে ঝুম কিন্তু এতে রনি খুব রেগে যায়।কারণ রনি ভাবে ঝুম ও একদিন তাকে ছেড়ে চলে যাবে মা বাবার কাছে।তাই চায়না ঝুম তাকে ভাই বলে ডাকুক।কিন্তু ঝুম ও নাছাড় বান্দা সেও ডেকেই যায় ভাইজান বলে।রনি এক দৌড়ে যাত্রী ছাওনীতে এসে দেখে ঝুম নেই।ভাবলো বস্তিতে চলে গেছে তাই সেও গেলো বস্তিতে।বাঁশের চাচারি দিয়ে বেড়া দেওয়া আর চাচারি দিয়েই দরজা। দরজা ভেড়ানো। রনি ঝুমকে ডাকতে ডাকতে দরজা খুলে ভিতরে গেলো। রনিকে ভিতরে যেতে দেখেই ঝুম তাড়াতাড়ি করে কি যেন বিছানার নিচে লুকিয়ে ফেললো।
,
রনি ; কি রে তুই কি লুকালি।
,
ঝুম ; কই কিছু না তো।
,
রনি ; তুই চলে এলি যে।
,
ঝুম ; তোমার দেরি দেখে চইলা আইছি।ভাইজান কাইল বৈশাখ তাইনা।(কথা বলার সময় চোখ মুখ চকচকে হাসিতে ভরে গেলো)
,
রনি ; হ কাইল পয়লা বৈশাখ।
,
ঝুম ; যহন আমি যাত্রী ছাওনীতে বইয়া রইছিলাম তহন দেহি অনেক মানুষ ইলশে(ইলিশ)মাছ নিয়া যাইতাছে। কাইল নাকি পান্তা ভাত আর ইলিশ মাছ খাইতে হয়।
,
রনি ; হিহি হিহি। কেডাই কইছে হু।আমরা পেট ভইরা খাওনের জন্য পান্তা ভাত পাইনা এত্ত বড় হইছি কোনো দিন ইলিশ মাছ খাওয়া তো দূর চোখেই দেহি নাই।আর কি না আমাগো হইব পান্তা ইলিশের বৈশাখ হিহিহিহি।এই নে (খাবার এগিয়ে দিলো ঝুমের দিকে)খাওন রাইতে খাইয়া ঘুমাইছ আমি গেলাম।
,
ঝুম রনির যাওয়ার পথের দিকে তাকিয়ে থাকলো।
,
আজ কাল বৈশাখ যেনো ঈদের মত মেতে উঠেছে। রনি সকালে ঘুম থেকে উঠে সকাল সকাল মহাজনের থেকে কাপড়ের আর কাগজের ফুল নিয়ে বিক্রি করতে বের হলো।আজ আর সকালে ঝুমের সাথে দেখা হয়নি তার।প্রতিদিন সারা দিনে যতো ফুল বিক্রি হয়নি তার চেয়ে আজ বৈশাখে হাফ বেলাতেই রনির ৮০০ টাকার বেশি ফুল বিক্রি হয়ে গেছে।রনি তবুও খুশি নয়।কারণ রনির মনের মধ্যে শুধু ঝুমের কথা গুলো ঘুরপাক খাচ্ছিল।রনি আবার মহাজনের থেকে ফুল নিয়ে বিক্রি করলো।কিন্তু এবার একটা ফুল ১০ টাকা পিস নয় ১০ টাকার ফুল রনি ১৫ টাকা পিস বিক্রি করলো।বিকেল ৩ টার দিকে মহাজনের দোকানে ফিরলো রনি।মহাজনকে ১০ টাকা পিস হিসাব করে ১০০ পিস ফুলের দাম ১০০০ দিলো আর বাকি ৫০০ টাকা দিলো না।মহাজন টের না পেলোও রনির খুব অস্থি হচ্ছিল কারণ সে কখনো মহাজন কে ঠকাইনি। এই প্রথম এমন করলো।মহাজন খুশি হয়ে ১৮০০ টাকার থেকে রনিকে ৩০০ টাকা দিলো। রনি এক দৌড়ে সেই টাকা নিয়ে রাস্তার পাশে একটা হোটেল থেকে এক পিচ ইলিশ মাছ আর মাটির সুরকি করে এক বাটি পান্তাভাত, একটা কাচা মরিচ আর পেয়াজ কিনলো ১০০ দিয়ে।খাবার গুলো নিয়ে ঝুমের কাছে বস্তিতে যাবার পথে চোকে পরে রাস্তার পাশে বড় দোকানে কাচের ভেতরে ঝুলানো মেয়েদের বৈশাখী শাড়ি। লাল পেড়ে সাদা শাড়ি। খুব সুন্দর লাগছে দেখতে বাইরে থেকে। রনি পকেটে হাত দিয়ে দেখলো আর কয় টাকা আছে।মনে পরে গেলো এখনো ৬০০ টাকা আছে। আগ পিছু কিছু না ভেবে রনি দোকানের ভেতরে ঢুকে শাড়িটা নামাতে বললো দোকানি কে।
,
রনি ; ভাই শাড়িটার দাম কত।
,
দোকানী ; ৮০০ টাকা ভাই,,
,
রনির মনটা খারাপ হয়ে গেলো ৮০০ টাকার কথা শুনে।
,
রনি ; এর কম হইবো না ভাই।
,
দোকানী ; না এর কম হবে না।
,
রনি মন খারাপ করে বেরিয়ে আসছিল দোকান থেকে। তখনি পিছে থেকে ডেকে উঠল দোকানী।
,
দোকানী ; আচ্ছা ঠিক আছে ৬৫০ টাকা হলে নিয়ে যাও।
,
রনি ; ভাই আমার কাছে তো ৬৫০ টাকা নাই ৬০০ টাকা আছে।যদি দেন তো দেন।আর যদি কন ৫০ টাকা বাকি রাইখবেন তাহলে আমি কাইলকা দিয়া যামু।
,
দোকানী ; আচ্ছা নিয়ে যাও দেওয়া লাগবে না ৫০ টাকা।
তা শাড়িটা কার জন্য কিনলা।
,
রনি ; ভাই শাড়িটা আমার বইনের জন্য কিনলাম।
,
শাড়ি প্যাকেট করে দিলো দোকানী। রনি খুব খুশি হয়ে প্যাকেট নিয়ে দোকান থেকে বের হচ্ছিল তখনি দেখে মহাজন আর নাজমুল রাগি মুখে দাড়িয়ে আছে দোকানের সামনে।রনি কিছুটা ঘাবড়ে গেলো। বাম পাশে তাকিয়ে দেখে ঝুম ও আসছে রনির কাছে।ঝুমের হাতে একটা ব্যাগ।হাসতে হাসতে আসছে ঝুম।কিছু বুঝে উঠার নাজমুল আর মহাজন রনিকে ধরে মারধোর করতে লাগলো আর অশ্লীল ভাষায় গালি দিতে লাগলো। দোকানের মধ্যের লোক জন মারামারি দেখে বেরিয়ে এলো। ঝুম দৌড়ে মহাজনের পা চেপে ধরলো।
,
ঝুম ; মাইরেন না মাইরেন না আমার ভাইজান রে।মইরা যাইবো আমার ভাইজান। কি করছে আমার ভাইজান। কেন মারছেন ওরে।
,
মহাজন ; কি করছে তারেই জিগাও বেটা চোর।
,
চোর কথাটা শুনে ঝুম চমকে গেলো। রনি এবার বুঝতে পারছে কেন মারছে মহাজন আর মহাজনি বা কি করে জানলো বাকি ৫০০ টাকার কথা।আজ বিকেলে নাজমুল ও ১৫ টাকা পিস ফুল বিক্রি করেছে আর সেই বলেছে মহাজনকে।
,
ঝুম ; তুমি কি সত্যি টাকা চুরি কইরাছো ভাইজান।(ঝুম কাঁদতে কাঁদতে রনিকে প্রশ্ন করলো)
,
রনি মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে কিছু বলছিল না।
,
নাজমুল ; দ্যাহেন দ্যাহেন মহাজন মাথাখান কেমন নিচু কইরা আছে বেটা চোর।
,
রনি ; আ আ আমি টাকা চুরি করিনি মহাজন। আমি তো আপনারে ১০০ পিস ফুলের দাম দিয়া দিছি।আর বাড়তি এই টাকা দিয়া আ আ আমি আমার বইনের জন্য একটু পান্তাভাত আর ইলিশ মাছ কিনছি আর একখান শাড়ি কিনছি।আমার ভুল হই গেছ মহাজন সাব আমারে মাফ কইরা দেন।কাইলকা থ্যাইকা ফুল বেইচা ৫০০ টাকা আমি শোধ কইরা দিমু।
,
মহাজন ; তোর কোনো মাফ নাই আমি তোরে পুলিশে দিমু।বেটা ফহিন্নির পুত ভাত পাইনা খাইতে আবার পান্তা ইলিশ না।দাড়া দেখাইতেছি তোর পান্তা ইলিশ।
,
ঝুম ; আমি নিমু না তোমার চুরির টাকার শাড়ি। খামু না তোমার চুরির টাকার পান্তা ইলিশ। আমি যদি তোমার লাইগা রোজ কম খাইয়া ৫ টাকা জমায় জমায় ৬০ টাকা দিয়া তোমার লাইগা বৈশাখী গেঞ্জি কিনবার পারি তাহলে তুমি কেন চুরি করলা ভাইজান।তুমি যদি তোমার কামায়ের ২ টাকা দিয়াও আমারে একটা চুলের ফিতা কিন্না দিতা আমি তাও অনেক খুশী হইতাম।তাও তো আমার ভাইজানরে কেউ চোর কইবার পারতো না।
,
এক দমে কাঁদতে কাঁদতে কথা গুলো বলে গেঞ্জির ব্যাগটা মাটিতে ফেলে দিয়ে ঝুম চলে গেলো।
রনি পাথরের মতো দাড়িয়ে রইলো। রনির হাত থেকে পরে গেলো পান্তাভাত আর ইলিশ মাছের ব্যাগ আর শাড়ির ব্যাগ।রনির চোখের পানি গাল গড়িয়ে পরছিল মাটিতে।কিছু একটা বিড়বিড় করতে করতে এক দৌড়ে রনি রাস্তার মাঝখানে এসে দাঁড়ালো। রনি পালিয়ে যাচ্ছে ভেবে মহাজন আর নাজমুল ও রনির পিছু নিতে গেলো। রনির কাছে পৌছাবার আগেই একটা বড় ট্যাক এসে পিষে দিয়ে গেলো রনি কে।
.
.
.
…হয়তো মহাজন কে ঠকানোর জন্য, নয়তো নিজের সব চেয়ে কাছের মানুষের মুখে চোর কথা শুনেছে যার জন্য করা এই চুরি কিংবা মহাজনের মার খেয়ে লজ্জায় অপমান সয্য করতে না পেরে রনি নিজেকে শেষ করে দিলো।…
,
,
………………………………………………সমাপ্ত………………………………………

গল্পের বিষয়:
দু:খদায়ক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত