– আশেপাশের সবাই নানা রকম বাহারি সাঁজে সেজে বেড়াচ্ছে ।
আমার নিজের দিকে একবার তাকালাম না সেই আগের মতোই আছি ।
আমার কাছে বৈশাখ ও যেমন এর আগের দিন গুলো ও ঠিক তেমন ।
সবাই হয়ত আজকের দিনটাই শুধু পান্তা ,কাঁচা মরিজ ,পেঁয়াজ খাবে বলে এতো আয়োজন ।
আর আমি তো সেই পৌষ ,মাঘ থেকে পান্তা কাঁচা মরিজ ,পেঁয়াজ খাচ্ছি ।
তাই হয়ত এমন আনন্দ নাই , ও হ্যা পান্তা এর সাথে তো সবাই আবার ইলিশ মাছ খাবে ।
আমার আবার মাছ ভালো লাগে না ।
ছোট বেলার কথা মনে পড়লে এখন ও আমার ভয় লাগে ।
ছোট বেলাই সবাই আমাকে পান্তা ভাত বলে ডাকত ।
আপনারাই বলেন এতো মানুষ এর মধ্যে যদি কেউ আমাকে পান্তা ভাত বলে ডাক’ত তাহলে
দশ মিনিট এর মধ্যে আমার অস্তিত্ব পাওয়া ও দুষকর হয়ে পড়বে ।
এতক্ষণে আমি সকল মানুষ এর পেটের মধ্যে চলে যেতাম ।
ভাগ্যিস স্কুল এ ভর্তি করার সময় ওইটা বাদ দিয়ে সাহরিয়া রাখা হয়েছিল ।
সবাই আমার সামনে দিয়ে সাজুগুজু করে হেঁটে যাচ্ছে ।
আর আমি আবুল এর মতো হা করে বসে আছি ।
আসলে কী ? আল্লাহ্ তালা কিছু ছেলে কে এমন হা করে তাকাই থাকার জন্য তৈরি করে ।
না দিছে বড়লোক বাপ আর না দিছে টাকা পয়সা ।
এমন সময় ফোনটা সাহরিয়া সাহরিয়া বলে চিৎকার করে উঠল, ফোনটা হাতে নিয়ে দেখলাম নীলা ফোন দিছে ।
আর কেউ আমারে মনে রাখুক বা না রাখুক এই মেয়ে আমাকে জিপি সিম এর মতো মনে রাখে ।
– হ্যালো …. ।
– কই আছিস এখন (নীলা) ।
– তেমন কোন দামি স্থানে না , কৃষ্ণচূড়া গাছটার নিচে যে বসার শানটা আছে ওখানে বসে আছি । আর সবাই কত্ত রকমে সাজুগুজু
করেছে তা বসে বসে দেখতেছি ।
– বাহ ভালো … এখন তাড়াতাড়ি রাস্তার মোড়ে চলে আয় ।
– কেন … আমি এত্ত সাজুগুজু করা মানুষরে ফেলে কেমনে যামু … সবাই কত্ত আসা নিয়ে সাজুগুজু করছে আমারে দেখানোর জন্য
আমি যামু না ।
– ওই হারামি কে বলছে তোরে দেখানোর জন্য সবাই সাজুগুজু করছে হুমমমমম ।
– কে আবার … সবাই তো আমার সামনে এসেই ঘুরাই ঘুরাই দেখাইতেছে ।
– তুই আসবি নাকি আমি যাবো ।
– না না থাক আমিই যাচ্ছি ।
দূর থেকে একটা রিক্সা দেখা যাচ্ছে বাহ বেশ সুন্দরী একটা মেয়ে বসে আছে তো ।
ভালো ভাবে দেখে বুঝলাম ওটাই নীলা, আজব মানুষ সব কী যে আছে এই দিনে সেটাই বুঝিনা ।
এত্ত সাজুগুজু কেন করা লাগবে ।
রিক্সার সামনে গেলাম … ।
– কী ম্যাডাম যেমনে সাজুগুজু করছেন আপনার বাপের সামনে দিয়া ও যদি আপনারে নিয়া যাওয়া হয় আপনার
বাপ ও চিনতে পারবো না ।
– চুপ করে থাক শয়তান , আর আজকে এই সব কী পরে আসছিস ।
– ক্যান কী আবার প্রতিদিন যা পড়ি তাই ।
– তোরে না হলুদ পাঞ্জাবী পরে আসতে বলছিলাম ।
– সবাই যদি এমনে সাজুগুজু করে ,
তাইলে তাঁদের দেখব কে সাজুগুজু করাই তো বৃথা যাবে ।
তাই আমি সবার সাজুগুজু দেখার জন্য আছি হি হি হি ।
– দাঁত গুলো এবার বন্ধ করে রিক্সাই উঠে পর ।
রিক্সাই করে দুই জন যাইতেছি … ।
– আজকে হেব্বি রোদ , না জানি
কতো পোলা মাইয়ার ব্রেকআপ হইব ।
– ওই ব্রেকআপ কেন হইব ।
– ক্যান আবার রোদ উঠছে মানে গরম লাগবে , আর গরম লাগলে ঘামতে শুরু হবে ,আর ঘামতে একবার শুরু করলে ।
বৃষ্টি হইলে যেমন সকল ধুলাবালাই অবসান
ঘটে তেমন ………….. ।
– ওই তেমন কী হুমমমমমম তেমন কী ?
– তেমন আবার কী সকল মেকআপ ঘামের সাথে বিলিন হয়ে যাবে আর পোলাটা যেই ফিরে তাকাবে ওমনি দৌড়ে পালাবে ।
এই দিক দিয়ে তোর কোন টেনশন নাই ,
কারণ হাজার হলে ও তোর কোন প্রেমিক নাই ।
বেঁচে গেছিসরে ভাই ।
– কী হারামি তাঁর মানে তুই আমাকে বুঝাইতে চাইতেছিস আমি মেকআপ করে সুন্দরী এমনি তে না তাই না ।
– আরে না মানে আমি সেটা বলি নাই ।
– কী বলছিস আমি বুঝে গেছি … এই মামা দাঁড়ান ।
– আরে বাবা কথার কথা বলছিতো আমি ।
– এটা কথার কথা না , এখানে বসে থাক আমি আসতেছি ।
– আরে আরে কই যাবি ।
– নিজেকে অনেক সুন্দর ভাবিস তাই না ।
– জীবনে ও না আমার মতো এমন কুচ্ছিত পোলা এই বাংলাই আর একটা ও নাই ।
– বেশি কথা না বলে বসে থাক ।
– বলেই চলে গেলো , নীলা রেগে গেলে যে এমন হয় আগে জানতাম না বাপ রে বাপ ।
হঠাৎ করে একটা পানির বোতল নিয়ে আসলো ।
– ওই নিচে নাম ।
– কেন ।
– নামতে বলছি না তাড়াতাড়ি নাম ।
– নামলাম এবার ।
– এই নে বোতল আর আমার হাতে পানি ঢালবি ।
– আমি পানি ঢালছি আর ও মুখে পানি দিচ্ছে ।
– আমার ব্যাগের মধ্যে তোয়ালে আছে নিয়ে আয় ।
এরপরে মুখ ভালো করে মুছল …
আমি আগেই জানতাম ও এমনিতেই সুন্দরী রাগানোর জন্য বলছিলাম, এমন রেগে যাবে আগে জানতাম না ।
– যা রিক্সাই ওঠ ।
– আবার রিক্সা যাচ্ছে ।
– এবার বল আমি কী মেকআপ সুন্দরী ।
– হি হি আরে দূর পাগলী আমি তো এমনি বলছি ।
আর যাই বল তোর এই রুপ দেখলে ও সকল পোলা দৌড়ে পালাবে ।
– কীইইইইইইইইইইইই বললি শয়তান ।
– উহহহহহহ লাগছে তো আর পুরা কথা
কইতে দিবি তো নাকি ।
– কী কথা শুনি ।
– আরে পোলারা মনে করবে নেহাত আসমান থেকে পরী নেমে আসছে তাই ভয়ে দৌড়ে পালাবে ।
– অনেক পাম মারা হইছে এবার চল একটু ঘুরি ।
– আচ্ছা ।
সন্ধ্যা পর্যন্ত ঘুরলাম ।।
– সাহরিয়া চল আজকে হেঁটে হেঁটে বাসাই যাবো ।
– ঠিকআছে আমার কোন কিছুতে না আছে নাকি ।
হেঁটে হেঁটে বাসাই আসছি, মাথার উপরে ইয়া বড় একটা চাঁদ ।
– আচ্ছা সাহরিয়া মনে কর তুই একটা কথা বলবি আর সেই কথা যদি চাঁদ সেই মানুষ টার কাছে পৌঁছে দেই তা হলে তুই কাকে কী বলবি ।
– আমি বলব …. হে চাঁদ তুমি আমার হবু বউকে বইল যে সে যেনো বিয়ের দিন মেকআপ না করে …
কারণ আজকাল আমাদের দেশ এ যেমন ভেজাল এর উৎপাত বেড়ে গেছে ।
পরে দেখা যাবে বাসর ঘরে বউকে পাপ্পি দিতে গিয়ে স্বামী আহত ।
– হা হা হা হা হা হা হা হা আসলেই তুই একটা ফাজিল ।
– আচ্ছা বাদদে সিগরেট খাবি ।
– ছি তুই সিগরেট খাস ।
– আরে নারে পাগলী কোন দিন খাই
নাই তাই ভাবলাম দুইজন এক সাথে খাই ।
– না আমি ওই সব খারাপ জিনিস খাবো না ।
– না খাইলে নাই …
কিন্তুু কবিরা বলেছেন জীবন থাকিতেই ভোগ করো সকল কিছুর স্বাদ ।
– ওই কোন কবি বলছে শুনি ।
– যে বলেছে সে কোন হালতু ফালতু কবি না রে পাগলী, তাঁর নাম জানার জন্য বহু সাধনার প্রয়োজন ।
– আর একটা বাঁদরামি করার মতো কথা বলছিস তো এই ব্রিজ থেকে ফেলে দিমু ।
– ঠিক আছে ঠিক আছে চল ।
এই যে তোর বাড়ি চলে আসছি এবার যা ।
তোর বাপ মা মরা , বাপটা আবার টেনশান করবে ।
– কীইইইইই বললি ফাজিল দাঁড়া একবার ।
না না বুলবুলি তুমি তো আমারে ধরতে পারবা না … বলেই দৌড় দিয়ে চলে আসলাম ।
ওহহহহহ কী হিসি চাপছে …
আমাদের এলাকার খাটাস মার্কা লোকের দরোজাই হিসি করছি … আহহহহহহহহা কী শান্তি ।
একটু পরে মনে হইল প্যান্টের মধ্যে চুলকাইতাছে চক্ষু দুইটা খুলতেই ।
ওহহহহহহহা নোা আজকে ও ।
দূর ভাল্লাগে না স্বপ্নে এই নীলার সাথে দেখা হইলেই একটা না একটা কেলেংকারি ঘটবেই ।
কে এইইইইইইই নীলা … আহহা রে এই মাইয়ার জন্য মনে হয় আবার কবিরাজের কাছে যাইতে হইব …।
হে আল্লাহ্ হয় এই নীলার দেখা মিলাও না হইলে কেলেংকারি থামাও ।।
আর সহ্য হচ্ছে না ।
কালকেই বৈশাখ তাঁর উপরে আবার প্যান্টটা ও ভিজাইলাম আহহা রে ।
আরে ভাই যান তো যান
আমি মরি আমার জ্বালাই … আর
এই সব পড়তেই আছেন কেমনডা লাগে ।।
হি হি হি হি হি … ।