অশ্রু কন্যা

অশ্রু কন্যা

নিহিন শক্ত করে আমার হাত ধরে রেখেছে । কিছুতেই যেন আমাকে যেতে দিবে না কোথাও ! আমি নিহিনের দিকে তাকিয়ে দেখি ওর চোখে পানি চলমল করছে । যে কোন সময় পানি গড়িয়ে পড়বে । আমার মাঝে মাঝে অবাক লাগে এই ভেবে যে এই চিকন শরীরে এতো পানি আসে কোথা থেকে !

কোন কথা নাই বার্তা নাই, কেমল নায়াগ্রার জলপ্রপাতের মত পানি পড়তেই থাকে । আমি যদি ওকে একটু ধমক দিয়ে কথা বলি তাহলে ওর চোখ দিয়ে পানি পড়ে! যদি একটু আদর করি তাহলে পানি পড়ে ! দেখা হলে পানি পড়ে ! আবার যখন ওকে রেখে আসতে যাই তখনও পানি পড়ে !

এতো পানি আসে কোথা থেকে কে জানে ? আমি একটু ভয়ে ভয়ে ওর দিকে তাকাই । মেয়েটা কি এখনই কেঁদে ফেলবে? নিহিন চোখে গাড় করে কাজল দিয়েছে । এখন যদি কেঁদে ফেলে তাহলে চোখের কাজল লেপ্টে একাকার হয়ে যাবে !

তার উপর আজ আবার সাদা সেলোয়ার কামিজ পরে এসেছে । মেয়েটাকে কত দিন বলেছি যেদিন তোমার কান্না কাটি করার মুড থাকবে সেদিন চোখে কাজল পরবে না । কিন্তু না ! আমার সাথে দেখা করতে আসতে হলে তার কাজল পরা চাই ই ।

আমিই ওকে একদিন বলেছিলাম চোখে কাজল দিলে অনেক সুন্দর লাগে ! আর যাবে কই ! নিহিন চোখের পানি আটকানোর আপ্রান চেষ্টা করে যাচ্ছে ! আমি খানিকটা বিরক্ত হয়ে বললাম

-এই জন্য আমি তোমাকে আসতে মানা করেছিলাম । মাত্র দুদিনের জন্য যাচ্ছি এর জন্য এতো কান্নাকাটি করার কি আছে ? নিহিন বলল

-কই কান্না কাটি করছি ? কাঁদছি না আমি ! এই কথা বলতে বলতে নিহিনের চোখ দিয়ে টুপ করে অশ্রু গড়িয়ে পড়ল । নিহিন ব্যস্ত হয়ে পড়ল পানি মোছার জন্য !

আমি ওকে বললাম

-এটা কি ? নিহিন চোখ মুছতে মুছতে আমার দিকে তাকালো ! তারপর বলল

-আমি কি করবো বল ! তুমি আমার কাছ থেকে দুরে যাচ্ছ এটা আমি মেনে পারছি না । এই কয় দিন আমি তোমার কাছ থেকে কিভাবে দুরে থাকবো !

আমি কিছু বলতে গিয়েও আটকে গেলাম । মেয়েটাকে জোরে কিছু বলতেও পারি না । কিভাবে বলি !! যেদিন থেকে শুনেছে আমি একটু ঢাকার বাইরে যাবো সেদিন থেকে ই ও এমন করছে ! বারবার বলছে

-এতোদিন আমি কিভাবে থাকবো ? আর কেন যাবা ? কি দরকার ?

-আরে কি দরকার মানে ? আমার ছোট বেলার বন্ধুর বিয়ে ! না গেলে হয় নাকি ? বন্ধু রাগ করবে না ? নিহিন চোখে পানি নিয়ে বলল

-বন্ধু রাগ করবে ঠিক আছে আর আমি ? আমার কথা ভাববে না ? আমি কষ্ট পাবো না ?

-আরে বাবা ! আমি তো আর চিরো দিনের জন্য যাচ্ছি না । মাত্র দুইদিনের জন্য!

-দুইদিনের জন্যই কেন যাবা ? আমি কিভাবে থাকবো? আমি টিস্যু দিয়ে নিহিনের চোখ মুছিয়ে দিলাম । একটু সাবধানে চেষ্টা করতে করলাম কিন্তু শেষ রক্ষা হল না । কাজল লেপ্টে কেমন একটা বিষ্ছিরি অবস্থা হল ! আমি বললাম

-আমি এই জন্য তোমাকে আস্তে মানা করে ছিলাম । এখন যাওয়ার সময় তোমার এমন কান্না ভেজা মুখ দেখতে ভাল লাগে !

নিহিন ফুপিয়ে কেঁদে উঠল ! হায় আল্লাহ !! আমি কই যাবো !!

-আমাকে ছেড়ে যাবে আমি একটু আসতেও পারবো না ? শেষ দেখা হবে না ? এই মেয়েকে নিয়ে আমি কোথায় যাবো ? শেষ দেখা মানে কি ? আমি বললাম

-আমি যুদ্ধে যাচ্ছি ? এমন ভাবে কথা বলছো যেন আমি আর আসবো না ! আমি আসবো না কি আর ? নিহিন চোখ মুছতে মুছতে বলল

-যেও না প্লিজ ! তুমি জানো না তোমাকে না দেখলে আমার কেমন হয় ?

আমি ঠিক মত নিঃশ্বাস নিতে পারি না ! নাহ !

এই মেয়েটার সাথে কথা বলে লাভ নাই । যত কথা বলবো তত আমার মনকে কনফিউজ করে দিবে ! তখন মনে হবে আমার বুঝি যাওয়া ঠিক হবে না !

আমি নিহিনের হাত থেকে নিজেকর ছাড়িয়ে নিলাম । বললাম

-আমার বাস ছাড়ার সময় হয়ে গেছে । আমি যাই !

নিহিন অনিচ্ছা সত্তেরও আমার হাত ছেড়ে দিল । আমি বাসের দরজায় উঠে পিছনে তাকালম ! নিহিনের চোখ দিয়ে আবার পানি পরছে !

এসব কি ভাল লাগে ? যাওয়ার সময় একটু হাসবে ! একটু হাসি মুখে বিদায় দিবে । কিন্তু না ! কেঁদেই চলেছে ……. আমি জানলা দিয়ে মুখ বের করে তাকালাম ! হাত নাড়লাম । নিহিন হাত নাড়ল না !

আমার দিকে তাকিয়েই রইলো ! চোখ দিয়ে তখনও পানি পড়ছে অনবরত ! চোখ থেকে পানি আর কাজলের মিশ্রনের একটা কালো পানি ধারা ওর গাল বেয়ে নিচে নামছে ! বাস চলতে শুরু করলো ! আমি আবার হাত নাড়লাম । ঠিক তখনই নিহিন একটা পাগলামো করা শুরু করলো ! বাসের সাথে সাথে হাটতে লাগলো !

যাসের গতি আস্তে আস্তে বাড়তে লাগলো আর নিহিনের হাটার গতিও বাড়তে লাগলো ! এক পর্যায় নিহিন দৌড়াতে লাগলো ! আমি চিৎকার করে থামতে কিন্তু নিহিন আমার কথা শুনো না ! ওর মুখ দেখে মনে হচ্ছে ওর প্রিয় কিছু ওর কাছ থেকে হারিয়ে যাচ্ছে । বাচ্চা মেয়ে যেমন আর হারিয়ে যাওয়া জিনিসের জন্য দৌড়ায় নিহিন ঠিক সেভাবেই দৌড়াতে লাগলো ! এই মেয়েটা আসলেই পাগল !

এমন পাগলামো কেন করছে ! এভাবে কেউ বাসের সাথে সাথে দৌড়া্ড় ? এক পর্যায়ে নিহিন বাসে আড়ালে চলে গেল । কিন্তু আমার কেন জানি মনে হল নিহিন এখনও দৌড়াচ্ছে !

আমি নিহিনকে ফোন দিলাম ! ও ধরছে না । কি করবো ? নাহ !! এই মেয়ে আমাকে শান্তি দিবে না । আমি বাসের ড্রাইভার কে বাস থামাতে বললাম । ড্রাইভার একটয় অবাক হলেও কিছু বলল না । আমি বাস থেকে নেমে পড়লাম !

আমি জানি না কেমন এমন মনে হচ্ছে কিন্তু আমি জানি নিহিন এদিকেই দৌড়ে আসছে ! আমি নিজেও হাটতে লাগলাম ওর দিকে ! এই তো নিহিনকে দেখা যাচ্ছে ! এখনও দৌড়েই যাচ্ছে !!

আমার কাছে এসে একটু থামলো ! তারপর আমাকে জড়িয়ে ধরলো ! এতো মানুষ চারি ধরে কিন্তু নিহিনের কোন ক্ষ্যাল নাই ! ওর বুকটা কেমন ধরফর করছে ! নিহিন কোন রকম বলল

-আর কখনও আমাকে ছেড়ে যাবে না ! আর কখনও না !!

আমি আর কখনও তোমাকে যেতে দিবো না ! দিবো না ! আমি আর কিছু বললাম না । বললাম পরতে পারলাম না ! এই মেয়ের ভালবাসার কাছে আমার আর কিছু বলারও নাই ! কিন্তু বন্ধুর বিয়েতে যেতে পারলাম না । না জানি ও কি বলবে !!!

আমার কথা: বাস্তবের নিহিন রা কখনও এমন হয় না ! বলতে পারন কাল্পনিক!যা শুধু মুভি বা নাটকেই সম্ভব!!

গল্পের বিষয়:
রোমান্টিক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত