হাঁটার গতি আপাতত বিশ মিনিটে এক কিলোমিটার,আমি কী আদৌতেও হাঁটছি না দৌড়াচ্ছি তা রাস্তার পাশের লোকগুলোই ভালো বলতে পারবেন।পকেটের মধ্যে মোবাইল টা আপন সুরে চিৎকার করছে,এটা বাবার কল ধরলেই বিপদ।তার কোন এক বন্ধুর মেয়ে আসবে আমাদের বাসায়,ষ্টেশনে নাকি দাঁড়িয়ে আছে।কোন বিপদ থেকে যে উদ্ধার করতে আসছে তা আমিও জানি না।অতশত না ভেবে আমার উচিত হবে গতিতে চলা,আমি চাইনা বাড়িতে এ তুচ্ছ কারন নিয়ে আবার আমায় রেডিও শুনতে হোক . পৌছাতে পৌছাতে ঘামে ভিজে গেলাম,সামনেই দেখছি মাজায় হাত দিয়ে এক মহা সুন্দরী দাঁড়িয়ে আছেন।
হ্যা হ্যালো,আপনি কী নীলা?
-জ্বী আমি নীলা,আপনি নিশ্চই কাকুর সেই গুনোধর ছেলেটা।
জ্বী,জনাবা।আপনি রতন চিনতে ভুল করেন নি।অনুগ্রহ পূর্বক আপনার লাগেজগুলো আমাকে হস্তান্তর করিয়া আমায় মুক্ত করুন। মেয়েটা ভালোই,কপাল বড়।অবশ্য কপাল বড় মেয়েগুলো ভালো মনের হয়।পা বড় মেয়েগুলো একটু তাড়া।
নীলাকে বাড়িতে পৌছে দিয়ে আমি আমার গন্তব্যে চললাম,মানে মন্টু চাচার দোকানে।বাসায় আসতে আসতে প্রতিদিনের মত আজও দেরি হয়ে গেল।দেখলাম বাবা খাচ্ছেন,তাদের সবার মুখেই আজ অন্য রকম হাসি।নতুন অতিথি পেয়ে আমি তাদের কাছে নিতান্তই বাদ পড়ে যাওয়ার মত কেউ।আমার দিকে মুখ ঘুরিয়ে বাবা গোফ নাড়াতে নাড়াতে বললেন,ওই দ্যাখো মা,ও শুভ আমাদের গুনোধর ছেলে।সে মেট্রিক এ তিনবার ফেল করে আবার পরীক্ষা দিবে বলে ভাবছে।তবে গিটার শিল্পে তার দক্ষতা অনেক দুর। বাবা পুনরায় মুখ ঘুরিয়ে ভাতের প্লেটে পূর্ন মনোযোগ দিলেন।বাড়িতে যে কোন নতুন মানুষ আসলে, তার সামনে আমার বিবরন তিনি এভাবেই দেন।আমিও কনফিউজড, লোকটি কী আমার সুনাম করেন,না বদনাম করেন এটা নিয়ে।
পরদিন সকাল বেলায় ঘুম থেকে উঠে বারান্দায় হাত পা ছোড়াছুড়ি করছি আলসেমি কাটানোর জন্য। সামনে যেতেই দেখলাম মেয়েটি,নীল ড্রেস এ খুব একটা খারাপ লাগছে না।
এই যে মিস্টার শুভ!! ঘুম ভাংলো?
- জ্বী ভাঙলো বৈ কী।
আপনার রুম টা গোয়াল ঘরের মত কেন?
-আপনি আমার রুমের ভিতরে দেখলেন কীভাবে?
ওই জানালা দিয়ে।
-আপনি জানেন না? উকি মেরে কারও ঘরের ভিতরে দেখতে হয় না?
আমি আপনাকে দেখি নি,দেখছিলাম ঘরটাকে।
আর কথা না বাড়িয়ে চলে আসলাম,এরা প্যাচালো শ্রেনীর মেয়ে।এদের সাথে বেশী কথা বলা খুব খারাপ।প্রেমে পড়ে যেতে হয়।তাতে চুল বড় তো,আরও ঝামেলা।আমাকে ক্রাশ খাওয়ানোর জন্য এটুকুই যথেষ্ট।রাত বেশ হয়েছে,দিনটা বেশ গুমোট।গিটারটা বারান্দায় বের করে বাজাতে থাকলাম,অবশ্য সামনের দরজাটা বন্ধ করে।কারন,গিটারের শব্দ মেয়েদের কাছে অনেকটা হ্যামিলনের বাঁশির মত।এ যন্ত্রের শব্দ নীলার কানে গেলে ও উপরে চলে আসবে,আর আমি চাইনা কেউ উপরে এসে চুলগুলো এলিয়ে আমার যন্ত্র সাধনা শুনে ফেলুক।এটা আমার ঘুমের উপর প্রভাব ফেলবে।
হলোও তাই,মেয়েটা উপরে চলে আসলো।চেয়ারে বসে চুলগুলো এলিয়ে কোন এক বাকরুদ্ধ শ্রোতার মত আমার গিটার বাজানো শুনতে থাকলো।আমিও বাজাতে থাকলাম,হালকা বাতাস ওর চুলগুলো ছুয়ে দিচ্ছে।ওর চুলের ঘ্রান আর ছাদে লাগানে ফুলগুলোর সুবাস মিলেমিশে একাকার হয়ে যাচ্ছে।গিটারের শব্দ থেমে গেল,গম্ভীর কোন এক মৌনতা আমাদের অজানা আকর্ষনে কাছে ডাকছিলো প্রতিক্ষনে।আমি নির্বাক হয়ে চেয়ে রইলাম,আকাশে আলোর ছলকানি,টুপটাপ বৃষ্টির ছন্দোময়ী মাতাল সুর আর জলে ভেজা ওর মুখ।এ যেনো কোন নীল কল্পনা।ছুয়ে দিলাম ওর দুটি ঠোট,চুলগুলো আচড়ে পড়লো আমার গালে।পাগলি লজ্জায় দৌড়ে পালালো।
পরদিন থেকে আমার জ্বরের পর্ব আরম্ভ হলো।নীলা জ্বল পট্টি করে দিচ্ছে,খারাপ লাগছে না।ছোট বোন কানের এসে বলে গেলো,ভাইয়া তোদেরকে একসাথে জুড়ে দেওয়ার কথা আব্বুকে বলেছি।আব্বু বললো, আগে ও এস এস সি পাশ করুক।তারপর ব্যাবসা আর বউ দুটোই ওকে একসাথে দিবো।
নীলা মিটিমিটি হাসছে,এটাও ভালো লক্ষন।ভদ্র মেয়েদের হাসির শব্দ হয় না।তাই,নিঃসন্দেহে নীলাকে বিয়ে করা যায়।