কিছুদিন ধরে মাথায় একটা চিন্তা নিয়ে সময় কাটাচ্ছি। চিন্তাটা তুলিকে নিয়ে। আমার কাছে তুলির দাম নেই! একটু ও নেই! আমি কি সেরকম কিছু করেছি যে তুলির ওরকমটা মনে হল। কদিন ধরে খুব করে ভেবেছি। ভাববার পর একটা রেজাল্ট আসলো। সেটা হল সাথী!
সাথীকে নিয়ে বললে বলতে হয়, শান্তশিষ্ট আবেগপ্রবণ একটা মেয়ে। নিজের মতো করে চলে, নিজের মতো করে সবাইকে ভাবে। তার আচার আচরণ দেখে অন্যকেউ কি ভাবলো না ভাবলো তাতে কিছু যায় আসে না। সে যা বলবে, করবে তাইই সঠিক। আমার কাছে মেয়েটিকে বড় অদ্ভুত লাগে। মাঝেমধ্যে সাথীর সাথে সময় কাটাতে বোর লাগে। তবে আমি তা প্রকাশ করি না। ভালই সময় কাটছে, এরকমটা অঙ্গভঙ্গির মাধ্যমে প্রকাশ করি।
তুলির তাহলে সাথীকে নিয়েই মাথাব্যথা! তুলি কি জানে না আমরা যেহেতু ভাল বন্ধু সুতরাং একসাথে সময় কাটাতে পারি। ওকে ডান! আর সাথীর সাথে ঘুর ঘুর করবো না, অপ্রয়োজনে কথা ও বলবো না। এই জিনিসগুলা তুলিকে জানিয়ে দিতে হবে। তাহলে হয়তো আমাকে নিয়ে আর নেগেটিভ ধারণা জন্মাবে না।
তুলিকে আমার ভাল লাগে। কলেজের মাঝে দু’টা সুন্দরী মেয়ে যদি থাকে তাহলে একটা তুলি আরেকটা সাথী। দু’টাই আমার ভাল বন্ধু। সাথী আমার সাথে গণিত ডিপার্টমেন্টে পড়ে আর তুলি হিসাববিজ্ঞান ডিপার্টমেন্টে পড়ে। আমার সাথে পড়ে বলে সাথীর সাথে বন্ধুত্ব হওয়া অটোমেটিক বিষয়। কিন্তু তুলির সাথে বন্ধুত্ব হওয়া একটু অন্যরকম। ফেসবুকে গল্প লিখি সেটা সাথী জানে ভাল করে। আমার প্রতিটা গল্প খুব মনোযোগ দিয়ে পড়ে। আমার কোনো গল্প কখনো সাথীর ভাল লাগে নি। একেকটা গল্প লিখার পর কলেজে গেলে সাথী সেই গল্পের মাঝে অসংগতিগুলো আমাকে ধরিয়ে দেয়। সেইটা খুব ভাল ব্যাপার। অসংগতি ধরিয়ে দেওয়া খারাপ কিছু না। কিন্তু তারপরই শুরু হবে তিরস্কার। খুব বাজে গল্প, ছিঃ ছিঃ এগুলা গল্পে কেউ দেয়! লুতুপুতু, নিজেকে দিয়ে আর কতো প্রেমের রচনা – এই হচ্ছে সাথীর তিরস্কারের কয়েকটা উদাহরণ। আমার খুব রাগ হয়। এমন ও হয়েছে গল্প লিখার পর পরেরদিন যথাসম্ভব সাথীকে এড়িয়ে চলতাম। পাছে আমাকে ধরে ফেলে, আর শুরু হবে লেকচার। ডাকলে না শুনার ভাণ করি। কিন্তু ঠিকই সাথী ধরে ফেলে। রাগ করে গল্প লিখা বাদ দিয়ে দেই, তখন শুরু হয় ক্লাসে সবার সাথে সাথীর খুঁচিয়ে কথাবার্তা। সেগুলা আমার গায়ে তীরের মত বিঁধে। আবার বাধ্য হয়ে লিখি।
সেইরকম করে একদিন সাথীর সাথে কলেজ থেকে ফিরছি। সেদিন পাশে ছিল সাথীর উচ্চ মাধ্যমিক লাইফের ফ্রেন্ড তুলি। ভিন্ন ভিন্ন ডিপার্টমেন্টে ভর্তি হয়েছে দু’জন। আমি তুলিকে আগেও দেখেছি সাথীর সাথে কলেজে কথা বলতে। কিন্তু একসাথে যাচ্ছে এই প্রথম। দুই বান্ধবীর রূপে পার্থক্য পাই না। দু’টা সুন্দরী মানবীর সাথে আমি একা। আর সুন্দর করে বললে, দুই রূপসীর সাথে শালা নিঃসঙ্গ একটা ক্ষ্যাত পড়ে আছি! নতুন কিছুর উপর আমার আগ্রহ বেশি। ধীরেধীরে পুরাতন হওয়ার সাথে সাথে আগ্রহটাও সমানুপাতিক হারে কমে। সাথীকে প্রথম দেখার পর যেই আগ্রহ ছিল। এখন আর নেই। সাথীকে নিত্য দেখতে দেখতে এখন আর প্রথম কিছুদিন দেখার সময় যেরকম অনুভূতি কাজ করেছিল এখন আর সেইরকম অনুভূতি পাই না। কেন এরকম হয় জানি না।
আমি জানি সাথী দেখতে ভাল। কিন্তু তুলির কাছে কেন যেন বড্ড বেমানান লাগছে। তুলিকে নিয়ে আগ্রহ এখন আকাশচুম্বী। সাথী পরিচয় করিয়ে দিল। প্রথমেই বলল, “ফেসবুক লেখক! ভালুপাসার!”
সাথী নিন্দার্থে বললেও তুলি বেশ আগ্রহ নিয়ে তাকালো। বলল, ” তাই নাকি! আমি লাভ স্টোরি খুব পছন্দ করি। আপনার ফ্রেন্ডলিস্টে জায়গা হবে?”
আমি একটু হেসে সম্মতি দিলাম। কিন্তু আমার মানটা বেশি সময় থাকলো না। সাথী সাথে সাথে বলে দিল, ” হা হা হা। আরে লুচু মার্কার লেখক নিজেই মানুষকে রিকু দিয়ে শত শত মানুষের ফলোয়ার হয়ে পড়ে আছে। দেখ ফলোয়িং লিস্ট। অনুরোধ করার প্রয়োজন নেই জায়গা হবে কি বলে।”
সাথী, তুলি হাসলেও আমার মন খারাপ হয়ে গেল।
রাতে ” দীপান্বিতা তুলি” নামের আইডি থেকে রিকুয়েস্ট পেলাম। এক্সেপ্ট করার পর ম্যাসেজ দিল, ” গল্প ভাল না লাগলে কিন্তু সাথীর মত আমিও বলবো। ”
আমি বললাম, ” আচ্ছা। বলিয়েন।”
পরেরদিন কলেজে ঢুকতেই তুলির সাথে দেখা। আমার কথা বলার ইচ্ছা হল। জানতে ইচ্ছে হল কেমন লাগলো গল্প। তুলিই আসলো । এসে বলল, ” বাহ! আমার ভাল লাগছে। সত্যি দারুণ ছিল!
আমার মন ভাল হয়ে গেল। সাথীর মতো তো বাঁশ দেয় না! কতো সুন্দর করে কথা বলে! কতো সুন্দর করে নিজের এক্সপ্রেশনটা তুলে ধরে! তুলিকে নিয়ে আগ্রহ বাড়লো এভাবে।
আস্তে আস্তে ভাল বন্ধু হয়ে গেলাম। একেকটা গল্প লিখার পর সাথীর মন্তব্য ভুলে যাবার চেষ্টা করে তুলির মন্তব্যগুলো নিয়ে ভাবি। খুব করে ভাবি। ভেবে ভেবে ভাবনাগুলো জড়ো করে একটা রেজাল্ট আসলো। রেজাল্টটা হল, সারাজীবন তুলির মন্তব্য শুনতে চাই! তুলির জন্য লিখতে চাই বাকিটা কাল!
দু’দিন ভাবলাম। আমি কি বেশি আশাকরি ফেলছি! সাথীকে বললে কেমন হয়! ইতোমধ্যে সাথী ও তুলির কি এক বিষয় নিয়ে যেন তর্কাতর্কি হয়েছে তাই একজন আরেকজনের সাথে আর কথা বলে না। এই সময়ে যদি তুলিকে নিয়ে সাথীর কাছে কিছু বলি সাথী সেটা পছন্দ করবে না। আমি বড় সংকটে পড়লাম।
কাউকে কিছু না বলে দু’জনের সাথেই বন্ধুত্ব চালিয়ে যেতে লাগলাম। তুলিকে একটু বেশিই সময় দেই। সাথী রাগে কি না বুঝি না, কিছু বলে না। তুলির সাথে খুব আবেগ, ভাব নিয়ে যেখানে কথা বলি সেখানে সাথীর সাথে রুক্ষ, বিদ্বেষ নিয়ে কথা বলি।
.
তবুও তুলির মন ভরে নি। বলল, ” আমার কাছে তার দাম নেই! একটু ও নেই। সব দাম অন্যের জন্য। আমি অভিনয় করছি। ”
এই কথাগুলো নিয়েই গতকিছুদিন ধরে ভেবেছিলাম। আর ভাবনার ফলাফল “সাথী! ”
.
তুলিকে বলে দিতে চাই, “বিশ্বাস করো তুলি তোমার দাম আছে আমার কাছে। তোমাকে যে আমার খুব ভাল লাগে! তুমি কি জানো সেটা? আমি অভিনয় করছি না। সত্যি বলছি!
.
কয়েকদিন তুলির বলা কথাগুলো ভাববার পর আজ কলেজ আসলাম। এসে দেখলাম তুলি ওর বন্ধুদের সাথে ক্যাম্পাসে বসে আড্ডা দিচ্ছে। আমাদের ডিপার্টমেন্টের দিকে চেয়ে দেখলাম সাথী খুব হাসতে হাসতে ফোনে কথা বলছে। তুলির কাছে গেলাম। বললাম, ” তুলি শুন কথা আছে। ”
” বলো।”
” সাথে আসো।”
তুলি বিরক্তি নিয়ে উঠলো। বলল,” কি হল?”
বললাম, ” তুমি যা বলছো তা ঠিক নয়।”
” ঠিক কি তাহলে? সবার মন যুগিয়ে চলবে, তাই না? ”
” সবার মানে?”
” বাদ দেও। বুঝাতে পারবো না।”
” বুঝেছি!”
” কি? ”
” সাথী! ”
তুলি আমার কথা শুনে চুপ হয়ে গেল। আমি যা ভাবছিলাম তাহলে সেটা নিয়েই তুলির সমস্যা। সাথীর সাথে চলাফেরা তুলি পছন্দ করছে না। কি আজব ঘটনা! দু’জন ভাল বন্ধু ছিল। এখন একজন আরেকজনকে সহ্য করতে পারে না।
” কিন্তু তুলি, সাথী তো আমার ক্লাসমেট পাশাপাশি ভাল বন্ধু। তার সাথে তো চলাফেরা করতে হবে। ”
” হুম। আমি আসি তাইলে। বাই।”
” দাঁড়াও।”
” ওকে আর সাথীর সাথে চলাফেরা করবো না। খুশি?”
তুলি আমার কথা শুনে মৃদু হাসলো। তারপর বলল, ” চলো ঘুরতে যাই। ”
.
এভাবে কয়েকদিন কেটে গেল। সাথী ইদানীং আমার সাথে আর কথাই বলে না। অবশ্য আমি তেমন আগ্রহ দেখাইনি। তুলির কড়া মানা যেন বেশি মেশামিশি না করি। আজ সকালে যখন ক্লাসে সাথীর কাছে গিয়ে বললাম , ” তোর নোট খাতাটা দিবি? আমার কয়েক চ্যাপ্টারের অংক নাই। ”
সাথী একটু রাগলো। বলল,” আমার খাতা অজায়গায় দিয়ে খাতার অপব্যবহার করতে চাই না। ”
আমি তখন বুঝতে পারিনি সাথী হঠাৎ এভাবে রাগলো কেন। এতো রাগার কি আছে। আমি কি এমন করেছি যে যার জন্য আমার উপর এতো রাগ দেখাবে। এমন আচরণে আর কিছু না বলে চুপচাপ ওর কাছ থেকে চলে আসি।
কিন্তু, এখন বুঝতে পারছি কারনটা আসলে তুলি। তুলির সাথে সাথীর মিল নাই তাই সাথী চায় তার সবচে’ প্রিয় বন্ধুটিও যেন তুলির সাথে না মেশে। এরকমটাই হবে হয়তো। আর কিছু তো ভেবে পাইনা। সাথীর সাথে তো খারাপ কোনো ব্যবহার করিনি। দারুণ কাণ্ড! তুলি চায় না সাথীর সাথে মিশি, সাথী চায় না তুলির সাথে মিশি। দুই দিক থেকে দুই নেত্রী, মধ্যখানে চিপায় আমি পড়ে আছি। অবশ্য সাথীর সাথে তেমন কথা না বললেও হবে। বোরিং টাইপের যুক্তি কথাবার্তা নিয়ে হাজির হয়। তুলির সাথে কথা না বললে চলবে না।
.
সাথীর এমন আচরণের পর আর ক্লাস করিনি। রাগ করে চলে আসি। ফ্রেশ হয়ে খাওয়ার পর ফেসবুকে ঢুকি। নিউজফিডে ঢুকতেই দেখি তুলি একটা পোস্ট দিছে আর সেটায় সাথীর রিপ্লাইয়ের নোটিফিকেশন আসছে। আগ্রহ নিয়ে পোস্টটা পড়লাম। লিখা ছিল, “feeling happy with Sathi sr ”
“সরি রে ভুল বুঝায়। ক্ষমা করে দে। ”
এইটুকু লিখে অনেকগুলো স্টিকার দেওয়া। সাথী কমেন্ট করল ” জুতা মেরে গরু দান। ”
একটু হাসি হাসলেও সাথীর উপরে রাগের জন্য তুলি যাতে ভাল করে খোঁচা দেয় সেটা দেখার জন্য রিপ্লাইগুলো পড়লাম। রিপ্লাইয়ে একে অপরকে বন্ধুত্বের গালি গালাজ। একটু হিংসা হল। তুলির ইনবক্সে ম্যাসেজ দিয়ে বললাম, ” তোমরা তো এক হয়ে গেছ!”
” হুম। কেমন আছো। আজ কলেজে গিয়েছিলে? ”
” আরে আমার কথা রাখো। সাথীকে বড়রকমের বাঁশ দিলে। যাইহোক কি হয়েছিল তোমাদের?”
” এমনি ছোটখাটো ব্যাপার নিয়ে। আমাদের এরকম হয় মাঝেমাঝে। নতুন গল্প লিখলে?”
” শুধু গল্পের কথা সবসময় বলো কেন? অন্যকিছু বলা যায় না? যা শুনতে আগ্রহী। খুব আগ্রহী আমি! ”
” কি? আমি তো গল্প পড়ার জন্য এড হয়েছি। তাই খোঁজ নেই।”
” হু। ”
” কি বলতে চেয়েছিলে? কি শুনতে আগ্রহী?”
” কিছু না। কাল কলেজ আসবে?”
” হুম।”
” আচ্ছা। ”
.
কলেজে আসার পর আমি অপেক্ষায় ছিলাম বোরিং টাইপের মেয়েটা বলবে ” সরি রে গতকাল রাগ দেখিয়ে খাতা দেই নি বলে। মন খারাপ ছিল।”
সেইরকমটাই আশা করেছিলাম যেহেতু ওরা দুই বান্ধবী এক হয়ে গেছে। কিন্তু সাথী কথা বলেই না। এড়িয়ে চলে। কি অদ্ভুত মেয়ে একটা! আমার কি? যাক আমিও বলবো না কথা। ক্লাস শেষে যখন বেরিয়ে দেখলাম তুলিদের ও ক্লাস শেষ। তুলিকে ডাক দিলাম। আমার দিকে চেয়ে হাত নাড়াল। এসে বলল,” সাথী কই?”
” আসছে। আমিতো আর সাথীর সাথে মিশি না তুমি মানা করার পর। ”
” আরে তখন ঝগড়া ছিল তাই সাথীকে দুর্বল করতে চেয়েছি বলে মিশার কথা বারণ করেছিলাম। অবাক হলাম তোমার ফ্রেন্ডের সাথে কথা বলা বাদ দিয়ে দিলে আমার কথায়!”
” তুমি বললে আমি…..!”
সম্পূর্ণটা বলতে পারিনি। সাথী চলে আসলো। ধ্যাত আসার আর সময় পেল না। কিছুক্ষণ নীরব তিনজন হাটার পর তুলি বলল, ” জানিস সাথী তোর আর আমার বিবাদের সময় আমি শুভ্রকে তোর সাথে চলাফেরা করতে মানা করেছি বলে সে সেটাই করলো। দেখ কিরকম বন্ধু তোর!”
সাথী আমার দিকে একবার তাকিয়ে তারপর ” হা” বলেই চুপ করে রইলো।
তুলি আমাকে সাথীর কাছে বাঁশ দিলো! আমিও কম যাব কেন! আমি বললাম, ” আসলে বন্ধুত্বের চেয়ে প্রেমে- ভালবাসার দাম বেশি হয়। ”
আমার কথাশুনে তুলি বলল,” মানে!”
সাথী চুপ ছিল।এবার আরো ক্লিয়ার করে বললাম, ” দেখো নি সিনেমাতে নায়ক নিজের বন্ধুকে শত্রু বানিয়ে দেয় প্রেমিকার জন্য!”
আমার এই কথাও তুলি বুঝে নি। সম্ভবত আর বুঝবেও না। না বুঝার ভাণ করে নাকি! সাথী সম্ভবত বুঝেছে। মুখ আরো গম্ভীর করে ফেললো।
তুলিকে যে কি করে বুঝাই!
.
বাসায় এসে কিছুক্ষণ ভাবলাম। সাথীকে কাজে লাগালে কেমন হয়! তুলিকে যে পছন্দ করি সাথীকে দিয়ে বলানো যায়।এটা একটা ভাল আইডিয়া। রাতে সাথীকে একটিভ দেখে নক দিলাম।
” জানিস তুলির কথামত কেন তোকে এভয়েড করেছি?”
সিন কিরে বেশ কিছুক্ষণ পর বলল,” জানি। তুলিকে তোর পছন্দ হয়।”
” গ্রেট! সরি রে তোকে এভয়েড করার জন্য!”
” ইটস ওকে। ”
” একটা কাজ করে দিবি?”
” বল।”
” তুলিকে বলবি আমার যে পছন্দ হয় তাকে?”
“আচ্ছা।”
.
কলেজে আসার পর সাথী তুলিকে সেসব কিছুই বলল না। আমি আর কিছু বললাম না সাথীকে। রাতে ফোন দিলাম।
” বললি না কেন?”
” আমি পারবো না।”
” কেন পারবি না?”
” দেখ, তোর রিলেশন তুই ম্যানেজ কর। আমার এসব ভাল লাগে না। আমি কিছু করতে পারবো না।”
এইটুকু বলেই লাইন কেটে দিলো। যাক! এই মেয়েকে দিয়ে হবে না। ওর সাহিত্যে প্রেম বলে কিছু নেই, প্রেমের বড় খরা।আমার সাহিত্যে প্রেমের বড় ঢেউ, বাঁধ দেবার নাই কেউ।
.
এভাবে দুইমাস কেটে গেল। এরমাঝে অনেক কিছুই ঘটে গেল। পরীক্ষার জন্য গল্প লিখা বাদ দিয়ে দিতেই তুলিকে দেখতাম কেমন আগ্রহ হারিয়ে ফেললো আমার থেকে। কথা বলতো না ঠিকমতো। এড়িয়ে চলার গন্ধ পেতাম। প্রথম দিকে ভাবলাম, ব্যক্তিগত সমস্যায় হয়তো ভুগছে তাই ঠিকমতো কথা বলে না। পরে অনুমান করলাম সেইরকম কিছুই না।আমার গল্পকে পছন্দ করে আমাকে নয়। আমার উচিৎ ওর থেকে কেটে পড়া। জোরাজুরি করার মানে হয় না। এখন গল্প লিখি না। ইচ্ছা হয় না লিখতে। নতুন নতুন গল্প লিখার জন্য তুলির প্রশংসা অনুপ্রেরণা দিতো। এখনো লিখলে হয়তো তুলি প্রশংসা করবে। কিন্তু সেই প্রশংসায় কেন যেন আবেগ, অনুভূতিতে সাড়া দেয় না। পরীক্ষা শেষ তাই কলেজে যাওয়া হয় না বলে তুলির সাথে সপ্তাহ, দশদিন পর টুকটাক কথা হয়। যাস্ট ফর্মালিটি।
.
তুলির সাথে দূরত্ব বেড়েছে যে সেটা সাথীকে বলেছিলাম একদিন। সাথী বলল,” এখন দেখলি ভালবাসা মানে কি? কাউকে নিঃস্বার্থ ভালবাসার পর সেই ভালবাসার দাম পাওয়া যায় না। অবহেলাই শুধু পাওয়া হয়। তাইতো আমি প্রেম – ভালবাসায় বিশ্বাস করি না।
সেইদিন শেষ পরীক্ষার দিন ছিল। প্রায় একমাস হয়ে গেল পরীক্ষা শেষ হয়েছে। একমাস ধরে কারো সাথে দেখা হয় না। সাথী আরেকটি কথা বলেছিল,” চকচক করলে সোনা হয় না। সোনা আলাদা গুণ নিয়েই দামী জিনিস। চকচকের প্রয়োজন নেই। বুঝতে ভ্রম না করলে দূর, সেই ভ্রমের আঘাত যাবে বহুদূর।”
.
এইকথাগুলোর মানে বুঝিনি। সাথীকে জিজ্ঞেস করেও উত্তর বলেনি তখন। আমি আর জোর করিনি। হয়তো তুলিকে উদ্দ্যেশ্য করে বলছে। সাথীর সাথে প্রতিদিনই কথা হয়। তুলির ব্যাপার জানানোর পর সাথীকে আলাদা করে চিনলাম। এখন আর এতো খোঁচা দিয়ে কথা বলে না।আসলে আগে সাথীকে খুব বোরিং লাগতো। এখন আর লাগে না।
এখন আর আগের মতো ঝগড়া করতে চায় না।অল্পস্বল্প টেক কেয়ার, সামনে এগিয়ে যাবার অনুপ্রেরণা দেয়।
আমি অনেক পরে বুঝলাম যে সাথীই তুলির চেয়ে বেশি গুরুত্বের বিষয় ছিল আমার কাছে।তুলি আসায় আড়ালে পড়ে গেলেও ঠিকই আমাতে যুক্ত ছিল। তুলির কথানুযায়ী সাথীর সাথে কথা যখন বলতাম না তখন সাথীর এড়িয়ে চলা আমাকে রাগালেও, আমাকে হার্ট করলেও তুলির জন্য সেগুলা ভুলে যেতাম। স্বাভাবিক মনে করতাম। মানুষ ভালোটা খুব পরেই বুঝতে পারে। খারাপটার চাকচিক্যতে হার মানে।
.
আমি কি এবার তুলির পর সাথীর প্রতি দুর্বল হয়ে পড়েছি! সাথীকে এখন ভালবেসে ফেলেছি! খুব স্বার্থপর আমি। এটা আর হবে না। এটা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। সাথী যখন বলবে,” হা হা। শুভ্র তুই খুব অদ্ভুত। নিজের স্বার্থসাধন করতে এক তীর থেকে অন্য তীরে ঘুরাঘুরি করিছ। ভাবলি কি করে আমার তীরে তোর নৌকা ভিড়াতে দিব? তুই তো আগাছা। যার নুন খাছ, তার গুণ গাছ। ভাবিছ না এইটুকু যে তোর মনিবের ছায়ায় আমিই নিয়ে এসেছিলাম রে। ভুলে গেলি সব? ”
তখন এই কথাগুলো আমি কোনোভাবেই নিতে পারবো না। কোনোভাবেই না! পরীক্ষার পর থেকে এই একমাসে সাথীকে অন্যচোখে দেখা শুরু করেছি। মোটেও ঠিক হচ্ছে না। অনেক হয়েছে। সাথীকে নিয়ে আর স্বপ্ন দেখতে চাই না। এগুলা ভাবতে ভাবতে কখন যে অভিমানী চোখের অভিমান ঝড়ে পড়ছে বুঝতেই পারিনি। চোখ মুছে দেখলাম সাথী ফোন দিছে। রিসিভ করতে ইচ্ছে করছে না। সাথীর অস্তিত্ব দেখলে, অস্তিত্বের নিঃশ্বাসের ঘ্রাণ অনুভব করলে , অস্তিত্ব থেকে ভেসে আসা ধ্বনি শুনলে সত্যি সত্যি প্রেমে পড়ে যাব। তখন আর অবাধ্য মন কে থামাতে পারবো না। ফোন ধরিনি বলে ম্যাসেজ দিল ফোন ধরার জন্য একটা।
ফোন ধরলাম ।
” ফোন ধরিছ না কেন? ভাব নিস? ”
” ঘুম লেগে গেছিল। আর সাইলেন্ট ছিল তাই বুঝতে পারি নি। ম্যাসেজ আসার শব্দে ঘুম ভেঙ্গে গেল।আর এখন ধরলাম। কি বলবি বল?
” বলবো তো। তার আগে বল সাইলেন্ট থাকলে ফোন বাঁজে না , ম্যাসেজ বাঁজে কিভাবে! ”
” ওপস! মিস্টেক! আসলে আমার বোন ডাকছিল ফোন আসছে। ভাবছিলাম ম্যাসেজে শব্দ হয়েছে।”
” হইছে আর মিথ্যা বলতে হবে না। তোকে আমি চিনি। একটা খুশির খবর দেই?