কাল থেকেই প্রচন্ড বৃষ্টি হচ্ছিলো । এইরকম আবহাওয়ায় বাইরে বেরনো কোন চিন্তাই ছিলোনা। কিন্তু হঠাত্ একটা কাজ পড়ে যাওয়ায় বৃষ্টি মাথায় নিয়েই বেরিয়ে পড়েছিলাম বাইরে । কাজ শেষ করে রিকসায় উঠে ফিরছিলাম কিন্তু আবার বৃষ্টিহানা দিলো ।
তাই প্রচন্ড বৃষ্টির মধ্যে রিকসাথেকে ফার্মগেটে নেমে যাত্রী ছাউনিতে দৌড়ে যেতে যেতে একদম ভিজে গেলাম ! যাত্রী ছাউনিটাওলোকে লোকারণ্য ! কোন মতে ঢুকে পরে গাঁ বাঁচালাম ! কিন্তু একটু পরেই বাঁধলো ঝামেলা ! পেছন থেকে কে যেন বলে উঠলো ”
এই মিষ্টার সামনে থেকে সরেন” ! এই যে একজন অতি রাগী মহিলা হবেন তা কন্ঠ শুনে বুঝতে পারছি ! পেছন দিকে তাকিয়ে দেখলাম মোটা কালো ফ্রেমের চশমা পড়া একটা মেয়ে আমার দিকে মাষ্টারনী লুক নিয়ে তাকিয়ে আছে !
এই ধরনের মেয়েদেরকে আমার বেয়াদপ টাইপ মনে হয় । আর এই মেয়ে তো বেয়াদপই আছে এক হাত সামনে আর বলে কিনা সামনে থেকে সরে যেতে ! তাই উত্তর দিলাম
আমি – জ্বী কাকে বলছেন আন্টি !
মেয়েটা – কিহ বেয়াদপ ছেলে আমায় তোর আন্টিমনে হয় ? [মেয়েটা রেগে গেছে ! বাহ রাগলে চশমীশের দেখছি গাল লাল হয়ে যায় !]
আমি – আন্টি নাতো কি ? যেভাবে তাকিয়ে আছেনআর কথা বলছেন আপনাকে যে কেউ আন্টিবলবে !
মেয়েটা – কি বললি শয়তান আমায় যে কেউ আন্টি বলবে ?
— তোর এতো বড় সাহস । মেয়ে দেখলেই এগুলো করতে ইচ্ছা করে তোদের !
[আমি আবারএমন কি করলাম !] চশমিশটার চেঁচ্যামেচি শুনে যাত্রী ছাউনি থেকে একজন জনদরদী ইয়া বডি ওয়ালা ভাই বেরিয়ে এসে আমার উপর চোঁটে গেলো যে কি জন্য আমি মেয়েটার সাথে লাগছি !
যাইহোক কথা না বাড়িয়ে মশা মাড়ার স্টাইলে মেয়েটার সামনে থেকে সড়ে কয়েক হাত দূরে চলে আসলাম । যা বডি ফিটনেস লোকটার আমায় না একবারে মেরে দেয় । ভয়ে ভয়ে কয়েক মিনিট দাঁড়িয়ে আছি যাত্রী ছাউনিতে কখনবৃষ্টি ছাড়বে এই আশায় !
সামনের দিকে তাকিয়ে থেকে বৃষ্টি দেখছি হঠাত্একটা প্রাইভেট কার একটা রিকসাকে দুমড়ে মুঁচড়েদিয়ে চলে গেলো !
যাত্রী ছাউনীর সবাইদৌড়েগিয়ে দেখি বুড়ো রিকসাওয়ালা স্পট ডেড হয়েগেছে। খুব খারাপ লাগা কাজ করতেছিলো ! তারপরেও রিকসাওয়ালাকে নিয়ে কিছু লোকজন হাসপাতালের উদ্দেশ্যে ছুটলো আমিও যেতে চাইলাম কিন্তু কয়েকজন বললো তারাই নিয়ে যাবে । আমি যাত্রী ছাউনিতে ফিরে এসে দেখি সেই চশমিশটা অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে ।
মানে দুর্ঘটনাটা চোখের সামনে দেখছে জন্য এই অবস্থা ! একবার চশমিশের দিকে তাকিয়ে দেখি শান্ত শিষ্ট ভাবে পড়ে আছে আরেক বার আশে পাশের সবার দিকে তাকিয়ে দেখি সবাই মজা নিচ্ছে । তাই আর বেশীক্ষণ না দাড়িয়ে মানবতার খাতিরে মেয়েটাকে দুজন মহিলার হেল্পনিয়ে পাশের একটা হাসপাতালে নিয়ে গেলাম !
প্রায় এক ঘন্টা চিকিত্সার পর মেয়েটা সুস্থ্যহলো । বিল পে করে মেয়েটার কাছে যেতেই মেয়েটা বললো ওর চশমাটা কৈ ? মেয়েটার ব্যাগ থেকে চশমটা বের করে দিলাম কিন্তু চশমাটার একটা ফ্রেম ভেঙ্গে গিয়েছিলো!
চশমটা দেখেই চশমীশ বললো – “আমি না চশমাছাড়া কিছু দেখতে পারি না ! আমায় একটু বাসায়পৌছে দিয়ে আসবেন ? “মেয়েটার বলার মধ্যেই একটা অসহায় ভাব ছিলো আমি উপেক্ষা করতে পারি নাই ! তাছাড়া মেয়েটা কাঁদো কাঁদো কন্ঠে কথাগুলো বলছিলো আমি কেন সম্ভবত কোন পুরুষই তা উপেক্ষা করতে পারবেনা।
হাসপাতাল থেকে বের হয়ে একটা রিকসা নিলাম ।বৃষ্টি ততক্ষণে থেমে গেছে । রিকসা ওয়ালাযাওয়ার ঠিকানা জিঙ্গাসা করতেই চশমীশটা ওরবাসার ঠিকানা বলে দিলো । রিকসা এগিয়ে চলেছে তার গন্তব্য আবার আকাশটা মেঘলা দেখাচ্ছে ।হয়তো আবার বৃষ্টি নামবে । নামুক পাশে এতো মায়াবী মেয়ে বসে থাকলে বৃষ্টি কেন সব কিছুই ভালো লাগে ।. রিকসা কিছুক্ষণ চলার পর বৃষ্টি থামলো ।
রাস্তার পাশে একটা টং দোকান দেখে রিকসার হুডটা নামিয়ে দিয়ে রিকসাওয়ালা মামাকে বললাম রিকসা থামাতে । ওমনি পাশে বসে থাকা চশমীশটার হুংকার এখানে কেন থামাতে বলছি ! সরাসরি বলেই দিলাম যে সিগরেট খাবো ! চশমীশটা তখন রিকসাওয়ালাকে বললো একদম থামবেন না । রিকসাওয়ালা গুলো ও তো সেই সেটা আপনাদেরসবারই জানা ! সিগারেট খাওয়া হলো না স্বাভাবিকভাবেই একটু মন খারাপ ছিলো ।
একটু পর হঠাত্ করেই চশমীশটা বলে উঠলো -, , চশমীশ – আপনার নাম কি [বাহ একদম ঠান্ডাগোলায় বলছে] আমি – রবিন ! [ভারী গলায় বললাম । একটু ভাব নিচ্ছি আরকি] চশমীশ – আমার নাম ঐশী ! [বাহ নামটা অনেক সুন্দর তো ] আমি – হুম ! চশমীশ – হুম কি ? আমার নাম জিঙ্গাসা করলেননা কেন ? কি করেন আপনি ?
আমি – আপনার নামটা অনেক সুন্দর ! এই ঘুরাঘুরি করি আরকি ! ঐশী – মানে বেকার ? আমি- বেকার বলিয়া লজ্জ্বা দিবেন না ! খিল খিল করে হেসে উঠলো মেয়েটা । অবাক হয়েসেই হাসিটা আমি দেখতে থাকলাম ! কি সুন্দর করেহাসতে পারে মেয়েটা ! ঐশী তো নিজেই অনেক সুন্দর । আমার এক সমস্যা সুন্দরী মেয়ে দেখলেই ভালো লেগে যায় । ঐশী যে আমার ভালো লাগার সিরিয়ালে কত নাম্বারে আছে তা ঠিক মনে করতে পারলাম না !
কিছুক্ষণ পর রিকসাটা থেমে গেলো ৫ তলাবিল্ডিংয়ের সামনে । মানে চলে এসেছি ঐশীদের বাসার সামনে । আমি নেমে ভাড়াটা মিটিয়ে ঐশীকে বললাম আমি – তাহলে থাকেন মিস চশমীশ ! আমি এখন আসি! ঐশী – আসি মানে ? এখন আমার সাথে উপরে চলেন গিয়ে আম্মুকে সব বলবেন কি থেকে কি হইছে। আর আপনার পরিচয় দিবেন আপনি আমার বন্ধুএর বেশী কিছু না ! ঐশীর পেছন পেছন ওর বাসার ভেতরে গেলাম। আমায় ড্রয়িং রুমে বসিয়ে রেখে ঐশী ভেতরে চলে গেলো । ড্রয়িং রুমের টেবিলে একটা উপন্যাসের বই রাখা ছিলো । যেটা আমার অনেক প্রিয় ।
ঐটাই একটু দেখতে লাগলাম । হঠাত্ করেই কে যেন প্রশ্ন করে বসলো নাম কি !? চোখটা উপরে তুলে দেখি মাঝ বয়সি একটা নারী ।মানে ঐশীর আম্মু । পাশে দাড়িয়ে আছে ঐশীও ! গোলাপী কালারের একটা ড্রেস পড়ে এসেছে সাথে ম্যাচিং রং করে চশমা । একদম গোলাপী পড়ির মতোই লাগছিলো । , আমি সালাম দিয়ে বললাম রবিন ।
ঐশীর আম্মু – কোথায় বাসা ?
আমি – গ্রামের বাসা রাজশাহীতে । তবে এখনফ্যামিলি নিয়ে ঢাকাতেই থাকি !
ঐশীর আম্মু – কি করো ?[মহিলাটা আমায়একপ্রকার জেরা করতেছিলো !]
আমি – ব্যাংকে জব করি । উত্তরটা দেওয়া মাত্র ঐশীর দিকে তাকালাম কারণ মেয়েটা চমকে যাওয়ার কথা । চমকে যাওয়ার চেয়ে বেশী কিছু হয়েছে । চশমীশের চোখ দুটো মনে হচ্ছিলো বের হয়ে আসবে বিষ্ময়ে !
এরপর ঐশীর আম্মু ঐখানে খাওয়ার জন্যঅনুরোধ করলো কিন্তু কাজের বাহানা দিয়ে বেরিয়ে আসলাম !
গেটের সামনে এসে ঐশী বললো – আপনি না বললেন আপনি বেকার ! আমি – আমি কি তা বলেছিলাম ?
ঐশী – হুম আপনি যে ফাযিল তা আমার বুঝা উচিত ছিলো ! আমি – তা বোধহয় আপনার আম্মুও বুঝে গিয়েছে !
ঐশী – মোটেও না ! আম্মু তো আমায় রুমেরমধ্যেগিয়ে বলছে যে এতো ভালো একটা ছেলেরসাথেতোর পরিচয় আছে আগে বলিস নি তো !! কথাগুলো বলেই ঐশী নিচের দিক তাকিয়ে ওড়নার আঁচলের কোণা পেঁচাতে লাগলো !।
লজ্জ্বায় দু গাল লাল হয়ে গিয়েছে ! নাহ এই একটা সুযোগ ভালো লাগাকে ভালোবাসায় পরিণত করার ! আর কতকাল একা যায় । তাই ঐশীকে বললাম আপনার ড্রয়িং টেবিলের উপররাখা উপন্যাসের বইটা আমার অনেক প্রিয় ।
যদি বইটা দিতেন তাহলে উপন্যাসটা আবার পড়াও হতো আর বইটা ফেরত দিতে এসে আন্টির হাতেররান্নাটাও খাওয়া হতো !
মেয়েটা সবটা বুঝতে পেরেছিলো এত টুকুতেই। ব্যাপক বুদ্ধিমান এমনিতেই তো আর চশমা পড়েনা !
একটু পরেই বইটা নিয়ে এসে আমায় দিয়ে বলেছিলো – আপনি খুব অগোছালো বইটা অন্ত্যত গুছিয়ে রাখবেন যত্নে ! আর খুব তাড়াতাড়ি দিয়ে যাবেন !
আমি একটু হেসে বললাম – হুম অবশ্যই । ওদের বাসা থেকে বেরিয়ে একটা রিকসা নিলাম । রিকসা চলছে সাথে আমার মন মস্তিষ্ক সব কিছু দ্রুত গতিতে কিছু ভাববার চেষ্টা করছে । নাহ এই মেয়েটাকে আমার চাই ।
খুব তাড়াতাড়ি আসবো তবে শুধু অন্যের লেখা উপন্যাসটা দিতে নয় নিজের জীবন নামক উপন্যাসের প্রতিটি পাতয় ঐশীকে নানা সরি চশমীশকে জড়িয়ে নিতে ।.,,,,, মানে started to love ঐশি।
বইটা তো নিয়ে গেলাম, গুছিয়েও রাখলাম কিন্তু পড়া আর হয় নি। শুধু তারই ভাবনায় আছি। কয়েকদিন পর ভাবলাম বইটা দিয়ে আসি। যেই ভাবা সেই কাজ। রেডি হয়ে বেরিয়ে পড়লাম ঐশির বাসার দিকে।
রিক্সায় যাচ্ছিলাম মনে মনে এক আলাদা অনুভূতি হচ্ছিলো, কিন্তু ওই দিনের চেয়ে অনুভূতি টা কম কারন ওই দিন ওর বাসায় যাওয়ার সময় আমার পাশে ঐশি ছিলো। এভাবে ভাবতে ভাবতে চলে আসলাম ঐশির বাসয়। বাসায় যেতেই ঐশি দড়জা খুলেই বললো – – কি পাইছৈন হুমম একে তো এতোদিন পর আসলেন তার ওপর নিজের নাম্বার টাও দিয়ে যান নি। আমি – কোন মিস করছিলে বুঝি?
ঐশি – আপনাকে মিস করতে আমার বয়েই গেছে, আমি তো আমার বই টা কে মিস করছিলাম। আমি – তাই নাও তোমার বই বইটা দিয়েই চলে আসলাম কিছুই বললাম না। এরপর একদিন পার্কে গিয়ে ওর সাথে দেখা আমাকে ধাক্কা মেরে এমন ভাবে চলে যাচ্ছিলো যেন আমাকে চেনেই না। তারপর আমি ভাবলাম এভাবে হয় না ও আমাকে এর আগেও ইগনোর করেছেব। তাই ওকে ডাক দিলাম বললাম – ও যেন একটু পর আমার সাথে দেকা করে। , প্রায় সন্ধায় ও আসলো।
এসে বললো- ঐশি – কি বলবেন বলুন, ডাকলেন যে? *আমি – আমি মনে মনে বললাম এতো ভাব। তারপর ওকে বললাম কিছু বলবো না যাও। ও মনে হয় এটা আশা করেনি।
ঐশি – সত্যি কিছু বলবেন না? [ কেমন যানি অন্য সুরে ] আমি – না বলনো না।
ও যখন মন খারাপ করে চলে যাচ্ছিলো তখন বলে উঠলাম – আমি তোমাকে ভালোবেসে ফেলেছি। এই চশমিস টা কি আমার হবে? ওয়াদা দিলাম প্রতিবার যখন তোমার চশমার দরকার হবে আমি তোমার চশমা এনে দিবো।
ঐশি কেমন যেনো একটা রাগি লুক নিয়ে বললো – কিহ, কি বললেন। আম্মু আপনাকে একটু পছন্দ করে ভালো ছেলে হিসাবে আর এখানে আপনার মধ্যে ভালোর ছিটে ফোটাও নেই। থামুন আজ ই আম্মু কে বলবো, আপনাকে শাস্তি দিতে। বলবো এই বান্দর টা কেই যেন জামাই বানিয়ে নিয়ে আসে। ঐশির এসব কথা আমি মাথা নিচু করে শুনছিলাম।
ওর শেষ কথাটা বুঝতে একটু সময় লাগলো, যতক্ষনে বুঝলাম মাথা তুলে দেখি ঐশির সেই রাগি লুক টা নেই, তার বদলে লজ্জা আর হাসির সংমিশ্রন।
জিগাস করলাম – কি বললে? ঐশি – অ্যাঁ কিছুই বোঝেনা। মনে হয় ছোটো বাচ্ছা। আমার মন চুরি করে নিয়ে গেছে, চোর একটা আর ভালোবাসি এই কথাটাই বলতে পারে না।। ফাজিল ছেলে।।।
আমি – তুমিও আমাকে ভালোবাসো? ঐশি – হুমম [ একটু লজ্জায়]
আমি – তাহলে আমার কথার উত্তর দিলে না যে? ঐশি – কিসের উত্তর দিবো হুমম। আপনি তো আমাকে প্রপোজ ও করেন নি , আমি – আচ্ছা তাই নাকি,,,, i love you ঐশি – wait wait আপনি কি আমাকে প্রপোজ করছেন নাকি। এভাবে কেউ প্রপোজ করে সোজা দাঁড়িয়ে? আর ফুল কই? না হবে না এই প্রপোজ চলবে না।
সরুন আপনার দ্বারা কিছু হবে না আমাকে যেতে দিন সরুন ভন্দু। হঠাৎ তখন তুমুল বৃষ্টি শুরু হলো আর ঐশি দৌরে যাওয়ার সময় আমি ওর হাত ধরলাম। পাশের গাছ থেকে ফুল ছিড়লাম, আল্লাই জানে কি ফুল। আর এরপর ঐশির সামনে হাটু গেড়ে বসে বললাম – ,,,, i love you।
আমি এই চশমিসকে অনেক ভালোবাসি, সে কি আমাকে একটু ভালোবাসতে পারবে? * ঐশি – না গো একটু মিকটু আমার দ্বারা হবে না, আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসবো ঠিক আছে . ,
এরপর আমি আর ঐশি হাত ধরে বৃষ্টির মধ্যে হাটছি। বৃষ্টি টা যেনো আমাদের জন্যই নামছে আজ। এভাবেই শুরু আমাদের লাভ স্টোরি। আর কয়েকদিনের মধ্যেই আমাদের বিয়েও হয়ে গেলো। ও এখন আমার মিষ্টি বউ।