সাজানো বিয়ে!!

সাজানো বিয়ে!!

চোখ খুলতেই দেখলাম নিশি চায়ের কাপটা বিছানার পাশের টেবিলটাতে রাখলো । চায়ের কাপটা থেকে ধোয়া উঠছে ।

বিছানায় বেড টি খাওয়ার অভ্যাস আমার কোন কালেই ছিল না । কিন্তু এ বাড়ীর নিয়ম কানুন সব আলাদা । কেমন একটা বড়লোক বড়লোক ভাব । অবশ্য নিশিরা এমনিতেই বড় লোক । বড় লোক ওয়ালা ভাব না থেকে কি পারে ! চায়ের কাপ থেকে চোখ সরিয়ে নিশির দিকে তাকালাম । মুখটা কেমন একটু চিন্তিত লাগল ।

উঠে বসতে বসতে বললাম -কি হয়েছে ? চেয়েহারা এমন কেন লাগছে ?

আমার দিকে চায়ের কাপটা এগিয়ে দিতে দিতে বলল -নাহ কিছু না । নে চা নে ।

-নিশি তোর কি লজ্জা শরম বলে কিছু নেই ।

-মানে কি ? লজ্জা শরম থাকবে না কেন ?

-আরে তোর জামাই, রীতিমত পাঁচ লাখ টাকা দেনমোহ দিয়ে বিয়ে করেছি । আর তুই আমাকে তুই তুই করছিস ।

-ওহ ! অপু ফাজলামো করবি না তো ! এমনিতেই টেনশন লাগছে খুব । আর তার উপর তুই ফাজলামো শুরু করেছিস ।

-টেনশনের কি আছে ? নিশি বলল

-তোর কোন টেনশন নাই । সব টেনশন তো আমার ! কি ঝামেলায় যে আমি পরেছি ! দাদী মনে হয় এবার রিকভার করে ফেলবে !

-কি বলছিস তুই ? কথাটা এমন ভাবে বললাম যেন নিশির দাদি এ যাত্রায় বেঁচে গেলে আমার বড় ক্ষতি হয়ে যাবে । কিন্তু একটু পরে নিজের কাছেই লজ্জা লাগল । ছি ছি কি ভাবছি আমি । আমি বললাম

-সরি !! কিছু মনে করিস না ।

-না ঠিক আছে । আমিও খানিকটা চিন্তিত । আমি ভাবিনি এমনটা হবে ! নিজে আটকেছি তোকেও আটকেছি । তার উপর … নিশি চুপ করে গেল ।

-তার উপর ? নিশি বলল

-বাবা তোকে আজ অফিস নিয়ে যাবে বলছিল !

-কি বলিস তুই ? উনি কি সিরিয়াস ?

-হুম ।

-সেকি ! কি সর্বনাসের কথা ? কেন ?

-কেন মানে ? তুমি তার এক মাত্র মেয়ের একমাত্র জামাই । তোমাকেই তো সব কিছুর দায় দায়িত্ব নিতে হবে !

-আরে জামায়ের গুল্লি মারি ! কথাটা মনে হয় একটু জোরেই বলেফেলেছিলাম ।

নিশি বলল -আরে আস্তে ! আমি গলা নামিয়ে বললাম

-জামায়ের গুল্লি মারি । জামাই তো আর আসল না । ভূয়া জামাই ।

-জামাই যে ভূয়া সেটা তুই জানিস , আমি জানি , কিন্তু তোর শ্বশুর মশাই তো আর জানে না ।

-নিশি তা তো আমি জানি । তুই কি বুঝতে পারছিস যে এই খবর যদি আমার বাসায় পৌছায় তাহলে কি হবে ? আমার বাপ যদি জানতে পারে যে আমি বিয়ে করে ফেলেছি তাহলে আমাকে স্রেফ গুলি করে দিবে । আর তুই আমার বৌ না তোকেও গুলি করবে । আমার বাবার কাছে একটা ব্রিটিস আমলের দোনালা বন্দুক আছে । আমার দাদার ।

-বন্দুক আছে বুঝলাম কিন্তু আমাকে কেন গুলি করবে কেন ? আমি কি করেছি ?

-কি কয়েছিস ? আমার বাপ কি মনে করে জানিস ? আমার বাপ মনে করে আমি হলাম গাধা আর আমাকে যে বিয়ে করবে সে হবে আমার থেকেও বড় গাধা । আর তার মতে গাধাদের বেশি দিন বেঁচে থাকার অধিকার নাই ।

নিশি বলল -ঠিক আছে । বেশি কথা বলতে হবে না । ফ্রেস হয়ে জলদি নাস্তার টেবিলে আয় । নিশি চলে গেল । আমি বাধরুমে ঢুকলাম । আমার মনটা ভাল হয়ে গেল । নিশির এই বাধরুমটা আমার খুব পছন্দ । পুরো বাধরুম টা একদম নীল রংয়ের । বাথটাব টাও নীল রংয়ের । যখন বাথটাবে গা ভিজিয়ে শুয়ে থাকি জীবনটা বড় আনন্দ ময় মনে হয় । ইস যদি নিশি ঐ দিন আমাকে কথাটা না বলতে তাহলে এই নীল বাথরুমে গোছল করাই হত না । জীবনটা অর্ধেক বৃথাই হয়ে যেত ! নিশি সাথে সাখ্যতা প্রথম থেকেই ছিল । তুই তোকারির সম্পর্ক । প্রথম থেকেই ও আমার খুব ভাল বন্ধু । তাই বন্ধুর উপকার করতে এসেছিলাম আর এসে যে এমন ভাবে আটকে যাবো ভাবি নি ।

ক্লাসে একদিন নিশি আমাকে দেকে বলল -তুই কি কয়দিনের জন্য আমার হাজবেন্ড হতে পারবি ? আমি প্রথমে ভেবেছিলা নিশি হয়তো এমনিতেই ফান করছে কিন্তু ওর মুখ দেখে মনে হল না ও বেশ সিরিয়াস !

-তুই কি সিরিয়াস ?

-রাজি কি না বল ? না হলে অন্য কারো কাছে যাই !

-কেস টা কি আগে বল ? তারপর না হয় বলি । নিশি বলল

-এখানে বলা যাবে না । আগে বাইরে চল । ক্যাম্পাসে বাইরে একটা রেস্টুরেন্টে গিয়ে বসলাম ।

-এবার বল ! নিশি কিছুক্ষন চিন্তা করে নিল । যেন কিছু গুছিয়ে নিল । তারপর বলল -আামর দাদীর অবস্থা খুব ক্রিটিক্যাল । আই সিইউ তে আছে । খু বেশি দিন আর স্টে করবে না ।

-ও ! -দাদীর খুব ইচ্ছা মরার আগে উনি তার নাত জামাই দেখ যাবেন ।

-ও ! -ও ! মানে ? আম কিছু বুঝলাম না । নিশি বলল -আরে গাধা , মানে হল আমার জামাই দেখতে চান উনি !! আমি কিছুক্ষন তাকিয়ে রইলাম নিশির দিকে । এই মেয়ে ঠিক কি বলতে চাইছে ? নিশি বলল -আমি চাই তুই আমার হাসবেন্ড হয়ে দাদীর সামনে যাবি !!

-একটা কথা বলব? -বল !

-আমি যতদুর জানি তুই তোর দাদিকে একদম পছন্দ করিস না । তাহলে ?

-আর বলিস না । আমি পছন্দ না করলে কি হবে আমার বাপতো তার মাকে পছন্দ করে ! নিজের মার শেষ ইচ্ছা বলে কথা ! আমাকে তো আর জোর করে কিছু বলতে পারছে না কিন্তু আব্বুর মুখটা দেখে আমা রকেমন জানি খুব মায়া লাগছে !

-তাহলে সত্যি সত্যি বিয়ে করে ফেল ! নিশি কিছুক্ষন আমার দিকে তাকিয়ে থেকে বলল -দেখ এডভাইস দিবি না । তুই হেল্পটা করবি কি না বল !!

-তা না হয় করলাম ! কিন্তু যখন সত্য টা সামনে আসবে তখন কি করবি ? তোর বাপকে কি জবাব দিবি ?

-সে চিন্তা আমার !! এখন এই ঝামেলাটা তো দুর হোক !! তুই হবি ? আমি হাসলাম । বললাম -হতে পারি !! একটু নাইসলি বল ! আমার সামনে হাটু গেড়ে বল যে অপু হাসান আমি তোমার প্রেমে দেওয়ানা হয়েছি । তুমি কি আমার হাসবেন্ড হবে ?

-আহা !! সাধ কত !! -কি বলবি না ?

-মরে গেলেও না ।

-ওকে আর কি করা ! তবে একটা কথা । এই কথা যেন আমার বাসায় না পৌছায় !! যদি আমার বাপ জানতে পারবে তাহলে কিন্তু আমার খবর আছে !

-আরে কোন সমস্যা নাই ! ভার্সিটি তো এখন বন্ধ ! সপ্তাহ খানেক তুই আমাদের বাসায় থাকবি । ব্যাস ! আর কিছু না ।

-তোদের বাড়ি মানে ঘর জামাই ! নিশি হাসলো ! আমরা ভেবেছিলাম নিশি দাদি খুব বেশিদিন টিকবে না । আর আমাদের কোন সমস্যা হবে না । কিন্তু এখন দেখছি অবস্থা খারাপ ! যদি এ যাত্রায় টিকে যায় আমার তো খবর আছে !! আর কোন ভাবে যদি বাসায় জেনে যায় তাহলে তো আর কোন কথাই নাই !! চুপচাপ নাস্তা খাচ্ছিলাম । এমন সময় নিশি বাবা বলল -আজকি তোমাদের দুজনের কোন প্লান আছে নাকি ? নিশি বলল -কেন আব্বু ?

-না আলসে আমি অপুকে আমাদের অফিসে নিয়ে যেতে চাচ্ছিলাম । কি বল অপু? আমি নিশির দিকে তাকালাম । ও চোখ দিয়ে ইসারা করলো না বলতে । আমি নিশির বাবার দিকে তাকিয়ে বললাম -আমি অফিসে গিয়ে কি করবো ? নিশির বাবা বলল -এটা কেমন কথা ! সামনে গিয়ে তুমি তো অফিরের দায় দায়িত্ব নিবে !

-আমি ? আমি হাসলাম ! বললাম -কিন্তু আমি কিভাবে নিবো ? -এ সব তো এখন তোমারই !

-আঙ্কেল আপনার একটু ভুল হচ্ছে মনে হয় ! আপনি হয়তো ভেবেছেন নিশির হাসবেন্ট হিসাবে আমি এসব কিছুর দায়িত্ব আমি নিব কিন্তু আমি এটা করতে পারবো না । নিশির বাবা আমার দিকে জিজ্ঞাসা নিয়ে তাকিয়ে থাকলো । আমি বললাম -এসব কিছু আপনার আপনার থেকে নিশি পাবে । এগুলোর মালিক নিশি হবে ।এর দেখোশুনার দায়িত্বও নিশির । যদি এর সব কিছুর দায়িত্ব আমি নেই তাহলে মানুষ বলবে যে আমি শ্বশুরের টাকায় নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছি । এটাতে আমার আপত্তি আছে ।আমি আমার নিজের যোগ্যতায় বড় হতে চাই ! আমার কথা শুনে নিশির বাবা বেশ পুলকিত হলেন বলে মনে হল । নিশিও দেখলাম অর্থপূর্ণ চোখ তাকালো !

নিশির বাবা বলল -আচ্ছা তুমি যা চাও তাই হবে ! আমি জোর করবো না । তা তোমার বাবার নাম্বার টা আমাকে একটু দাও !! আমার বুকের ভিতর কেমন করে উঠল ।

-জ্বি?? নিশি বলল -আব্বু তোমাকে আমি কি বলেছিলাম !

-আরে আমার মনে আছে তো ! আমি ওনাকে আগেই বিয়ের কথা বলবো না । আমি ওনাকে আগে বিয়ের জন্য প্রপোজাল পাঠাবো ! রাজিতো হয়েও যেতে পারে । তারপর দেখা যাবে । আর যদি না রাজি হয় তাহলে ফোন রেখে যাবো ! কোন তো সমস্যা নাই ! তারপর আমার দিকে তাকিয়ে বলল -দাও নাম্বার টা দাও ! আমি একবার নিশির দিকে তাকালাম আর একবার নিশির বাবার দিকে তাকালাম । মোবাইল টা বের করতে যাবো ঠিক তখনই ফোন বেজে উঠল । আব্বার ফোন !! আমার বুকটা ধুক করে উঠল !

আমি ফোন রিসিভ করলাম -আস্লামালাইকুম আব্বা ! -কোথায় তুমি? সর্বনাশ ! তুমি?? আমার আব্বা আমাকে সবসময় তুই করে বলেন কিন্তু যখন কোন সিরিয়াস বিষয় হয় তখন তুমি ! তারমানে কিছু হয়েছে !! কি হয়েছে ?

-কি হল কথা বলছো না ? কোথায় তুমি ? -আমি ?

-শ্বশুর বাড়ি ?? আমার বুকটা মনে হল এখনই ফেটে যাবে । আমি শ্বশুর বাড়ি এটা আমার বাপ জানলো কিভাবে ? -তুমি থাকো ওখানে আমি আসছি তুমি এতো বড় লায়েক হয়ে গেছ যে আমাকে না জানিয়েই বিয়ে করে ফেলেছ । তার উপর শ্বশুর বাড়ি গিয়ে উঠছ,ঘর জামাই হয়ে ! তুমি থাকো আমি আসছি !! আব্বা ফোন রেখে দিল । ফোন রাখার পর নিশি আমার দিকে তাকিয়ে বলল -কি হয়েছে ? আমার আব্বা আসছে !

-মানে ? উনি জানলেন কি ভাবে ? -আমি কিভাবে বলবো ? আমি উঠে পড়লাম । এখানে থাকা এখ ন একদম নিরাপদ নয় । আমার অবস্থা আসলে খারাপ । নিশির আব্বা বলল -আরে তুমি এতো ভয় পাচ্ছ কেন ? -আপনি আমার বাবা কে চিনেন না ? উনার মত রাগি মানুষ আমাদের এলাকাতে আর একটাও নাই ! আমাকে যদি এখন এখানে পায় একদম চিবিয়ে খেয়ে ফেলবে ! আমাকে এখ পালাতে হবে । যে করেই হোক !!

-আরে পালাবে কেন ? নিশির বাবা কি যেন ভাবলো ! আচ্ছা ঠিক আছে । তোমাদের তো হানিমুন হয় নি ! আর মার অবস্থাও এখন মোটামুটি ভাল । তোমরা এক কাজ কর, সিলেট চলে যাও ! ঠিক আছে ! ওখানে আমার একটা বাংলো বাড়ি আছে । ওখানে কয়দিন থেকে আসো ! আর আমি এদিকে তোমার বাবার জন্য ওয়েট করি । উনি আসলে না হয় ওনাকে সামলাবো আমি ! আমি আর কিছু ভাবলাম না । আসলে আমার মাথা কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে । আমার কেবল মনে হচ্ছে আব্বা আসার আমাকে এখান থেকে পালাতে হবে ! আমি জলদি ঘরের দিকে রওনা দিলাম । নিশি আমার পেছন পেছন এল !!

বাবা আমার পেছন পেছন দৌড়াচ্ছেন তার ব্রিটিস আমলের বন্দুক নিয়ে ! আমি দৌড়াচ্ছি প্রানপনে কিন্তু যতই দৌড়ানোর চেষ্টা করছি কেন জানি খুব বেশি এগিতে পারছি না । প্রতি মুহুর্তে বাবার দোনালা বন্দুকটা এগিয়েই আসছে। আমি তো টেনশনে পড়ে গেলাম ।

-এই একটু আস্তে দৌড়াও ! আমি ডান দিকে তাকিয়ে দেখি আমি কেবল একা দৌড়াচ্ছি না আমার সাথে নিশিও দৌড়াচ্ছে । সব চেয়ে অবাক হওয়ার কথা নিশি দৌড়াচ্ছে বউ এর সাজে । যেন বিয়ের আসর থেকে আমি ওকে নিয়ে পালিয়েছি । নিশির পরনে লাল রংয়ের একটা ল্যাহেঙ্গা । আর সারা শরীর জুড়ে গহনা ভর্তি !! গ হনার ভারে ঠিক মত দৌড়াতেও পারছে না । আমি বললাম -তুমি এরকম গহনা আর ল্যাহেঙ্গা পরে দৌড়াচ্ছ কেন ?

-গাধার মত প্রশ্ন করবে না । গহনা ফেলে দৌড়ানোর থেকে গুলি খেয়ে মরে যাওয়া ভাল ! আমি আশ্চর্য হয়ে গেলাম । পেছনে একজন বন্দুক নিয়ে দৌড়াচ্ছে আর এই গহনার পেছনে লেগে আছে ! আশ্চর্য মেয়েদের সাইকোলজি !! আমি দৌড়াতে দৌড়াতেই হোচট খেয়ে পরে গেলাম । ভেবেছিলাম খুব ব্যাথা লাগবে কিন্তু ঠিক তখনই আমার ঘুম ভেঙ্গে গেল । বিছানায়উঠে বাসেও দেখলাম বুকের ভিতর কেমন ধরফর করছে ! মাই গড !! যদি এই স্বপ্ন সত্যি হয়ে যায় !! তাহলে উপায় আছে !!

অবশ্য সত্যি হবার সম্ভাবনা কম !! আব্বা এখানে আসতে পারবে না ! মনটা একটু শান্ত হলে বিছানা ছেড়ে জানালায় কাছে আসলাম । বাইরে তখনও খুব বেশি আলো ফোটে নি । বাড়ান্দার দিকে চোখ পড়তেই আমার মনটা ভাল হয়ে গেল । এই সকাল বলা নিশিকে দেখলাম বারান্দায় উপর পা ঝুলিয়ে বসে আছে , হাতে একটা কাচের মগ ! ভিতরের তরলের রং দেখেতো মনে হচ্ছে কফি ! কি রে ভাই চা বাগানে বেড়াতে এসে কফি খাচ্ছে !! আমি বারান্দার বেড়িয়ে এলাম ! আামর পায়ের আওায়জ পেয়ে নিশি আমার দিকে ফিরে তাকালো!

-চারিদিকে চা বাগান রেখে কেউ যদি তার মাঝখানে কফির মগ নিয়ে বসে থাকে তাহলে তাকে কি বলা উচিত্ ? ধোয়া ওঠা কফির মগে একটা চুমুক দিয়ে নিশি আমার দিকে তাকাল ভাল করে। কাল নিশিকে যত খানি চিন্তিত মনে হচ্ছিল আজ ততখানি মনে হচ্ছে । নিশি বাংলোর বারান্দায় বসে আছে পা ঝুলিয়ে । আমি ওর পাশে গিয়ে বসলাম ।

-এই চা বাগানে কফি পেলি কোথায় ? নিশি এবারও কিছু বলল না । কাচের মগটা আমার পাশে রেখে সামনে তাকাল ।

-জানিশ এই জায়গা আমার খুব পছন্দের । এখানে বসে থাকলে মনে হয় বসেই থাকি । আর সকালবেলাটা কি যে চমৎকার লাগে এখানে বসে থাকতে !

-হুম তাই তো দেখছি । শ্বশুর মশাই জব্বর একখ্যান বাড়ি কিনছে ! নিশি আমার দিকে তাকাল । -খুব আনন্দে আসিছ মনে হচ্ছে ! কাল তো লেজ গুটিয়ে কেমন দৌড় মারলে ! দেখলাম তো আমি ! আর এখন ?

-আসলে এখন কেন জানি আর ভয় লাগছে না । মনে হচ্ছে না যে আব্বা এখানে আসতে পারবে ! আর সকাল বেলা এমন একটা স্বপ্ন দেখে ঘুম ভাঙ্গল !! আর ……-আর ?

-আর সকালবেলা তোকে এই এখানে বসে থাকতে দেখে কেন জানা খুব ভাল লাগল । মনে হল .. মনে হল যে গল্পের কোন নায়িকা বসে আছে বারান্দায় । একটু একটু করে কফির মগে চুমুক দিচ্ছে । চমৎকার একটি গল্পের শুরু । মগটা তুলে এবার আমি চুমুক দিলাম । আমি ভেবেছিলাম নিশি হয়তো চিত্কার করে উঠবে । কিন্তু কিছু বলল না । আমার দিকে তাকিয়ে রইল কিছুক্ষন । তারপর -বলল চল ঐ দিকটা যাই । বলেই নিশি বারান্দা থেকে ঘাসের উপর লাফ দিল ।

-দাড়া ঘুরে আসছি । -আরে এই খান দিয়ে আয় না ।

-স্যান্ডেল পরে আসি । নিশি বলল -আমি খালি পায়ে আসতে পারলে তুই পারবি না ? আর সকাল বেলায় খালি পায়ে হাটার মজাই আলাদা । আয় । আমি ওখান থেকেই নিচে নেমে এলাম । নিশির সাথে হাটতে লাগলাম । সত্যি বলব কি আমি কখনও ভাবি নি আমার জীবনে এমন দিন আসবে ! এমন একটা চমৎকার একটা দিন । আমরা দুজন এমন সুন্দর সকালে হাটছি পাশাপাশি । নিশি টুকটাক কথা বলছে । আমি চারিদিক দেখছি । চারিদিকের পরিবেশ আমাকে মুগ্ধ করে ফেলছে । হাটতে হাটতে আমি দাড়িয়ে গেলাম কিছুক্ষনের জন্য । নিশি তখনও কথা বলতে বলতে এগিয়ে চলেছে । আমি যে দাড়িয়ে পরেছি ও এইটা লক্ষ্য করে নি । যখন লক্ষ্য করলো তখন আমার দিকে তাকিয়ে বলল -কিরে দাড়িয়ে পরলি কেন ? আমি একটু দৌড়ে ওর সামনে এসে দাড়ালাম ।

নিশি আবার বলল -দাড়িয়ে পড়লি কেন ? -তোকে দেখছিলাম । নিশি আবারও কিছুক্ষন তাকিয়ে রইল । দিন ভালই কাটতে লাগলো । সারাদিন এদিক ওদিক ঘুরে বেড়াই নিশির সাথে । সকাল বেলা একসাথে হাটতে বের হই খালি পায়ে, রাতে একসাথে জোঁছনা দেখি দুজন ! জীবনটা কেন জানি খুব সুন্দর হয়ে গেল । কিন্তু কয়দিনের জন্য ! এই মিথ্যা আর কয়দিন !! এখান থেকে ফিয়ে গেলে আবার তো ……. আচ্ছা এই মিথ্যা টা কি সত্যি হতে পরে না ?

ছিঃ কি ভাবছি ? নিশি শুনলে কি ভাববে ? তবে চিন্তা টা আবার আমার মাথায় এলো । ঐদিন রাতে বারান্ডায় বসে ছিলাম দুজন । বাইরে খুব সুন্দর জোঁছনা উঠেছে । আমি মাঝে মাঝে নিশির দিকে তাকাচ্ছি । নিশি তাকিয়েই আছে বাইরের দিকে ! হঠাৎ নিশি বলল -অপু ঘুম আসছে ! -ভিতরে যাবি । -না ভিতরে যেতে ইচ্ছা করছে না । তোর কোলে মাথা রেখে একটু শুব ? আমি একটু অবাক হলাম । হেসে বললাম -শুবি ? শো !

নিশি আমার মাথা রেখে শুয়ে পড়লো । আমি আস্তে আস্তে নিশির মাথায় হাত বুলাতে লাগলাম । আমার মনে মধ্যে কেমন যেন একটা অদ্ভুদ অনুভুতি হতে লাগলো ! আশ্চার্য ভালা লাগার অনুভুতি !! -অপু ! -হুম !

-আমি একটা অন্যায় করেছি । তুই কি আমার উপর রাগ করবি ?

-কি করেছিস ? নিশি কিছু না বলে আমার দিকে তাকিয়েই রইলো । -কি হল বল !

-না বলব না । থাক ! আমি আর কিছু জানতে চাইলাম না । একন না হোক পরে একসময় জিজ্ঞেস করে নিবো । এখন এই চমৎকার সময়টা নষ্ট করতে ইচ্ছে করছে না । সকাল বেলা আবার সেই একই স্বপ্ন দেখে ঘুম ভাঙ্গল । আব্বা বন্দুক নিয়ে আমার পেছনে দৌড়াচ্ছে ।

তবে আজ হোচট খাওায়ার আগেই ঘুম ভাঙ্গল । নিশির ডাকে ।

-উঠ ! -গুড মর্নিং !

-তোকে গড মর্নিং বলতে পারছি না !

-কেন ? নিশি কোন কথা না বলে ঘর থেকে বের হয়ে গেল । আমি বিছানা থেকে উঠে ওর পেছন পেছন গেলাম । বারান্দায় এসে আমার বুকে ৪২০ ভোল্টের একটা শক লাগলো !! আমার মনে হল নিশির পেছন না আসাই বোধ হয় ভাল ছিল । বারান্দায় একটা টেবিল পাতা ছিল । টেবিলের চারপাশে চারটা চেয়ার । সেই চারটা চেবিলের একটাতে আব্বা বসে আসে । আর একটাতে নিশির আব্বা ! তিন নম্বরটাতে নিশি গিয়ে বসলো । আমার প্রথমে মনে হল আমি স্বপ্নই দেখছি । এইটা তো হতে পারে না । কিন্তু স্বপ্নতো একটু আগে দেখছিলাম । নিশি আমাকে দেকে আলনো । তাহলে কি স্বপ্নের মধ্যে স্বপ্ন দেখছি । ইনসেপ্শন মুভিতে যেমন হয় ! আব্বা চা খাওয়ায় ব্যস্ত আমার দিকে তাকায় নি এখনও । আম কি করবো ঠি এখনও আমার মাথায় কাজ করছে না ! দৌড় কি মারবো ??

নিশির আব্বা বলল -দাড়িয়ে কেন ? বস ! নিশি একে চা দে ! নিশি টিপট থেকে চা ঢালতে শুরু করলো । আমি দুরুদুরু বুক নিয়ে বসলাম চেয়ারে । চায়ে একটা চুমুক দিয়ে আব্বা নিশির দিকে তাকিয়ে বলল -তোমারা কবে বিয়ে করেছ ? নিশি বলল -জি আঙ্কেল, এই দুই সপ্তাহ আগে ! আব্বা নিশিকে জোরে একটা ধমক দিল । এতো জোরে যে আমার হাত থেকে চায়ের কাপ পরে যেত । আব্বা বলল -আঙ্কেল বলছো কেন ? আমি তোমার আঙ্কেল হই ? আমি ভেবেছিলাম নিশি ধমক খেয়ে ভয় পাবে অথবা মন খারাপ করবে কিন্তু আমাকে অবাক করে দিয়ে নিশি হেসে ফেলল। আরে এই মেয়ের সমস্যা কি ? এই মেয়ে হাসে ক্যান??? নিশি বলল -সরি বাবা !! আব্বা বলল -কোথায় করেছ বিয়ে ?

-জ্বি মগবাজার কাজী অফিসে !!

-দেন মোহর কত করেছ? আমি পড়লাসম বিপদে । আল্লাই জানে নিশি কি বলে !!!

-জ্বি ! ৫ লক্ষ্য এক টাকা !! এবার আব্বা আমার দিকে তাকাল

-বিয়ে যে করলি বউকে দেন মোহরের টাকা দিবি কোথা থেকে ? আমি মনে মনে একটু প্রসন্ন বোধ করলাম । আব্বা তুমি থেকে তুই তে নেমে এসেছে ! তার মানে রাগ একটু কমেছে ! কিন্তু !! পরক্ষনেই আমার মনে আর একটা চিন্তা মাথায় এল ! আব্বার ভাব চক্কর দেখে মনে হচ্ছে তো আব্বা আমার আর নিশির বিয়েটা সত্যি বলে ধরে নিয়েছে ! ও মাই গড !! এটাতো আরো বড় সমস্যা !! বাবা যদি কাবিনা নামা দেখতে চায় ??

ওটা নীলক্ষেত থেকে বানানো !! আমার মনের কথা মনেই রইল । বাবা বলল -কাবিন নামা কোথায় ? সর্বনাশ !! -আঙ্কেল ওটা তো সঙ্গে আন নি । বাবা আবার নিশির দিকে তাকাল । নিশি একটু জিহ্বা কামড়ে বলল -বাবা !! নিশির বাবা এতোক্ষন চুপ ছিল ।

বাবাকে বলল -আরে বিয়াই সাহেব এবার একটু শান্ত হোন !! আমি তো আপনাকে বললামই ওদের খুব একটা দোষ নাই । আমার ময়ের জন্য ওরা এমন করেছে ! তারপর নিশি কে বলল -তুই জামাইকে ঘরে নিয়ে যা । আমি বিয়াই সাহেবের সাথে একটু কথা বলি !!

নিশি আমাকে নিয়ে পেছনের বারান্দায় চলে এল । আমি একটু হাপ ছেড়ে বাঁচলাম । আব্বার সামনে ঠিক মত দম নিতেও কষ্ট হচ্ছিল । নিশি আবার বারান্দা থেকে পা ঝুলিয়ে বসল। আমি বললাম -আমার বাপ এখানে আসলো কিভাবে ? আর তুই বুঝতে পারছিস কি হতে চলেছে ? এরাতো আমাদের সত্যি সত্যি বিয়ে দিবে !! আমি তো কিছু ভাবতেই পারছি না । নিশি আমার দিকে তাকিয়ে থাকলো কিছুক্ষন !!

তারপর আমার হাত ধরে বলল -আমার সাথে বিয়ে হলে কি তোর অনেক সমস্যা হয়ে যাবে ? নিশির কথা আমি কিছুই বুঝতেই পারলাম না ! বললাম -মানে ?

-মানে হল আমি চাই তো সাথে আমার …….. নিশি চুপ করে গেল। আমি কেবল অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম নিশির দিকে । এতোদিনের পরিচিত নিশিকে বর অপরিচিত মনে হতে লাগলো !! কিছুক্ষন চুপ থাকার পর নিশি বলল -আব্বু যখন বিয়ের কথা বলল, জানিস সবার আগে আমার তোর কথাই মনে হয়েছে ! নকল হোক আর আসল হোক আমি এটাই চেয়েছি ! নিশি আমার হাত টা ছেড়ে দিল ।

-কিন্তু তুই যদি না চাস তাহলে এখনও তেমন কিছুই হয়নি !! আমার কেন জানি রাতের সেই ভাল লাগার অনুভুতিটা ফিরে এল । বললাম -তুই কি আমাকে তুই করেই বলবি বিয়ের পর ? তাহলে কিন্তু হবে না ! তুমি করে বলতে হবে ! পারবি ?? নিশি হেসে ফেলল -তোকে কোনদিন তুমি বলব না !! -আচ্ছা যা ইচ্ছা বলিস । কিন্তু যে মিথ্যাটা ওনারা সত্য ভেবে বসে আছে, সেটার কি হবে ? -ব্যাপার না !

-তবে একটা ব্যাপার আমি বুঝতে পারছি না যে আমার আব্বা কে এই খবে দিলো কে ! এবার নিশি আমার দিকে তাকাল । বলল -আসলে তোকে একটা কথা বলতে চেয়েছিল । কিছুক্ষন চুপ করে থেকে আবার বলল -তোর আব্বা কে আমি ফোন করে সব বলেছিলাম -কি?? -প্লিজ রাগ করিস না !

-রাগ করবো না ?? নিশি আর দাড়াল না । বারান্দা থেকে লাফ দিয়ে বাগানের দিকে দৌড় মারলো ! -তুই কোথায় যাস ! দাড়া !! আমি নিজের ওর পেছন পেছন দৌড় লাগালাম !

গল্পের বিষয়:
রোমান্টিক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত