পল্টুর কথায় বিরক্ত না হয়ে পারলাম না ! পল্টুর এই একটা দোষ ! সব কিছুর ব্যাপারে একটা নিজেস্ব মতামত দিবে ! আর আমাকে কনফিউজ করবে ।
আর আমি এই ব্যাপারটা খুব ভাল করে লক্ষ্য করেছি যে নিশির ব্যাপরে পল্টুর এই মতামত একটু যেন বেশি কাজ করে !
নিশি কিছু একটা করলেই পল্টু তার বিপরীতে কিছু না কিছু বলবেই । আর আমাকে কনফিউজ করবে !
গত সপ্তাহে নিশি আমাকে একটা টাই গিফট করেছে ! খুবই স্বাভাবিক ! সে আমার গার্লফ্রেন্ড । আমাকে টাই গিফট করতেই পারে ! তার উপর আমি গত মাস থেকে জব করছি । আমাকে টাই দেওয়াটা স্বাভাবিক !
কিন্তু মহান পল্টু সাহেবের নিজেস্ব মতামত হচ্ছে এর মধ্য ঝামেলা আছে ! আমি বিরক্ত নিয়েই বললাম
-এর মধ্যে তুই ঝামেলার কি দেখিছ ? পল্টু তার স্বভাব মত একটু ভাবল কি যেন ! প্রত্যেকটা কথার জবাব দেওয়ার আগে পল্টু এরকম করে ! এমন একটা ভাব যেন খুব মন দিয়ে কিছু একটা ভাবছে ! পল্টু বলল
-তুই এখনও বুঝতে পারছিস না ?
-না ! শোন বেশি ফালতু কথা বলবি না । তোর কথা যত বার শুনেছি কোন কোন না ঝামেলা হয়েছে !
পল্টু আমার কথায় কোন ভ্রুক্ষেপ না করে বলল
-শোন মেয়েরা ছেলেদের দুইটা কারনে টাই গিফট করে ! দুইটা মারাত্বক বিষয়ে ইঙ্গিত দেয় ! যদিও পল্টুর কথা শোনার কোন ইচ্ছা ছিল না তবুও বলে ফেললাম
-কি কারন ?
কারন আমি জানি আমি না শুনতে চাইলেও পল্টু আমাকে ঠিকই শোনাবে !
পল্টু বলল -শোন আমাদের দেশে একটা প্রচলিত নিয়ম আছে যে বিএ পাশ না করে নাকি টাই পরা যায় না, ঠিক আছে?
আমি মাথা নাড়ালাম ।
– হ্যা ঠিক আছে !
– আরে এইটাই হল মেইন ইঙ্গিত ! বিএ পাশ !
টাই পরার বয়স হয়েছে ! তোমার মধ্যে ম্যাচুরিটি এসেছে ! তার উপর চাকরি করছো !! তার মানে বিয়ে করার বয়স হয়েছে !
আামকে এখন বিয়ে কর..।
আমি খানিকটা চমকালাম ! পল্টুর কথাটা কেন জানি ঠিক মনে হল !
কাল রাতেই নিশি আমাকে এমন একটা ইঙ্গিত দিয়েছে ! আমার মুখ দেখে পল্টু মনে কিছু একটা বুঝতে পারল ।
বলল -নিশি আরো কিছু বলেছে নাকি ?
-হুম ! -কি বলেছে?
-তেমন কিছু না । কাল রাতে যখন কথা বলছিলাম ও বলল যে বাসা থেকে নাকি ওর জন্য ছেলে দেখা শুরু করেছে !
পল্টু হেসে উঠল !
বিজ্ঞের মত বলল -দেখলি তো !! তোকে প্রথমেই টাই দিয়ে বিয়ে করার ইঙ্গিত দিয়েছে । তুই বুঝিছ নি ! তাই তোকে এ কথা বলেছে !!
আমার কেন জানি মনে হচ্ছে পল্টুর কথাটা ঠিক ! ঠিক নতো হবে ! না হবার তো কোন কারন নাই । এতো দিন ধরে ওর সাথে রিলেশন রয়েছে ! আমি এখন চাকরি পেয়েছি ! আমাকে বিয়ে করতে চাইতেই পারে ! এতে দোষের কিছু নাই ! আমি বললাম
-ঠিক আছে বুঝলাম ! এতে তো দোষের কিছু দেখছি না আমি !!
পল্টু তাচ্ছিলের সুরে বলল
-তোর মাথায় তো মগজ নাই তাই তো তই বুঝবি না ! যদি টাই দেওয়ার দুই নম্বার কারনটা বুঝতিস তাহলে আর এই কথা বলতিস না ! আমি জানি কারনটা ও বলবেই । তাই বললাম -বল তোর ভয়ংকর কারন !
পল্টু আমার দিকে তাকিয়ে কেমন একটা হাসি দিলো ।
বলল -তুই টাই পরতে পারিস ?
-এটা আবার কি ধরনের প্রশ্ন হল ? তুই আমাকে টাই পরতে দেখিস নি ?
-আহা এতো প্যাচাল পারোস ক্যান ? যা জানতে চাইছি সোজাসুজি উত্তর দে ? পারিস পরতে ?
-হুম পারি ।
-টাই পরা অবস্থায় তোর গলার অবস্থা কি করকম থাকে ?
-শোন পল্টু এতো ভনিতা ভাল লাগছে না । তোর ফালতু কথা অনেক শুনেছি । সোজা সুজি বলবি নাকি আমি চলে যাবো ?
সত্যি পল্টুর প্যাচাল শুনতে আর ভাল লাগছে না । আর তাছাড়া নিশির সাথে দেখা করার কথা আছে । আমি উঠেন পড়তে গেলাম ! পল্টু বলল
-আরে শোন না । আমি বসলাম ।
-টাই পরার অর্থ হল নিজের গলাকে টাইয়ের সাথে বেঁধে ফেলা । বুঝেছিস ? -তো ?
-আরে নিশি তোকে টাই দিয়েছে তার মানে হল নিশি বলছে যে এটা গলায় পর আর টাইয়ের অপর প্রান্ত থাকবে তার হাতে । আমি সুরু চোখে পল্টুর দিকে তাকালাম
-তুই কি বলতে চাস ? তুই বলতে চাস যে নিশি আমাকে নাকে দড়ি দিয়ে ঘোরাবে ?
-নাকে না গলায় ! তার ইঙ্গিত তো দিয়েই দিছে । তুই সেন বুছতে পারতাসোছ না !
-শোন পল্টু তোর কথা অনেক শুনেছি এখন আমি যাই ।
-কোথায় যাচ্ছিস ? নিশির সাথে দেখা করতে ?
-হুম ।
-আচ্ছা আমার একটা শেষ কথা শুনে যা । নাহ !! আজ মনে হয় পল্টুর হাত থেকে আর রক্ষা পাওয়া যাবে না ।
-যা বলবি জলদি বল ।
-তুই কি শিয়াল আর মুরগির গল্পটা জানিস ?
-কোনটা ?
-ঐ যে শিয়াল মুরগিকে ধরার আগে কেমন মিষ্টি মিষ্টি কথা বলে ।
-হ্যা আমি জানি ।
পল্টু বলল
-সব মেয়েরাই ছেলেদের কে ফাঁন্ডে ফেলার জন্য আগে খুব মিষ্টি মিষ্টি কথা বলবে । আর একবার যদি ফাঁদে পরে গেছিস তখন দেখবি তোর অবস্থ কি হয় ।
আমি আর দাড়ালাম না । পল্টুর কথা শোনা মানেই সময় নষ্ট করা । কি সব আলটু ফালটু কথা বলে আমাকে কনফিউজ করে ।
কিন্তু পল্টুর কিছু কথা কেন জানি বুকের মধ্যে আটকে আছে । নিশি আসলেই কয়দিন ধরে আমার সাথে খুব ভাল ব্যবহার শুরু করেছে ।
আগে যে খারাপ ব্যবহার করতো তা না তবে আগে আমার উপর কেমন একটা প্রভাব খাটাতো কিন্তু কয়দিন ধরে সেটা করছে না । এটা একটা অবাক হওয়ার মত বিষয় !
এই যেমন কাল রাতের কথাই ধরা যাক । কাল রাতে নিশি ফোন করে আজকে দেখা করার কথা বলল । তার আগে জিজ্ঞেস করে নিল যে আমার সময় আছে কি না ? কিন্তু আগে এমনটা কখনও করতো না । সরাসরি জায়গা আর সময় বলত । এবং কোন অবজেকশন ছাড়াই আমাকে দেখা করতে হত !
তাহলে কি পল্টুর কথা ঠিক ! তাই দিয়ে নিশি আমাকে বিয়ে করা জন্য একটা ইঙ্গিত দিল !! তারপর আমার গলার দড়ি !! শিয়াল আর মুরগি !! উফ!! পল্টুর কথা শোনাই উচিৎ হয়নি ! ও আসলেই আমাকে কনফিউজড করে দিয়েছ !! এখন কি করি !!
আমার কথাঃ . সেদিন টিউশনিতে আমার ছাত্র আমাকে বলল -আচ্ছা স্যার বলেন তো মেয়েরা যখন ছেলেদের টাই উপহার দেয় এর মানে কি ?
আমি বললাম -বিয়ের বয়স হয়ে যাচ্ছে ! বিয়ে কর !
-না স্যার ! এর মানে হল মেয়েটা ছেলেকে বলছে এই তোমাকে টাই দিলাম ।এর এক প্রান্ত তুমি তোমার গলায় পরবা আর অন্য প্রান্ত থাকবে আমার হাতে !! তোমাকে এখন আমি গলায় দড়ি দিয়ে ঘোড়াবো !!
গল্পটার সব কথাই ননছেন্সে ভরা । কোন লগিক নাই ।