তৃষা ওর বাবার দিকে কিছু সময় শান্ত চোখে তাকিয়ে থেকে বলল -কাজটা না করলে হত না ?
ওর বাবা হাসি আটকাতে আটকাতে বলল -তোমাকে সারপ্রাইজ দিতে চেয়েছিলাম !
-এটা কে সাইপ্রাইজ বলে ?
-কেন বলে না ? তৃষা খুব বিরক্ত চোখে ওর বাবার দিকে তাকালো । তবে নিজের কাছেই অবাক লাগছে এই ভেবে যে ওর আসলে সেই বিরক্তি ভাবটা থাকছে না । ও চেষ্টা করছে বিরক্ত হতে কিন্তু পারছে না ।
তৃষার বাবা বলল -শোন, বেশি চিন্তা করিস না । আমি ওকে কিছুই বলি নি। বলতে পারিস এটা একটা ভাগ্য ।
-বুঝতে পারছি । এখন তুমি তোমার কাজে যাও । আমাকে কাজ করতে দাও । তৃষার বাবা আর কোন কথা বললেন না । তিনি মুখে হাসি নিয়ে বাইরে বেরিয়ে গেলেন । তার মন মেজাজ আজ বেশ ভাল । এতো দিন ধরে তিনি কিছুতেই মেয়ের সাথে পেরে উঠছিলেন না ।
আজকে তার মেয়েকে ভাল বিপদে ফেলা গেছে । তৃষা কিছুটা সময় নিজের চেয়ারে চুপ করে বসে রইলো । কি করবে কিছুই বুঝতে পারছিলো না । কি করা উচিৎ সেটা নিয়েও ভাবতে হবে । এমন সময় ওর ফোন বেঁজে উঠলো । ফোনের দিকে না তাকিয়েই বুঝতে পারলো কে ফোন দিয়েছে । এই রিংটোন টা কেবল একজনের জন্য সেট করা ।
-হ্যালো ! -কি খবর ?
-ভাল ? কন্ঠস্বর শুনেই ওপাশ থেকে অপু বলল -কি হয়েছে ?
-কিছু না । যদিও জানে এসব বলে খুব একটা ভাল নেই । অপু ওর কন্ঠস্বর শুনলেই বুঝতে পারে যে ওর কিছু হয়েছে । শত চেষ্টা করেও সেটা ঢাকার কোন উপায় নেই ।
তবুও তৃষা আরেকবার বলল -কিছু হয় নি ।
-কি হয়েছে ? বল তাহলে আমিও তোমাকে একটা সুসংবাদ দিবো ।
-কি সুসংবাদ ?
-আগে বল তোমার কি হয়েছে তাহলেই বলব ? তৃষা কিছুটা সময় চুপ করে রইলো ।
তারপর বলল, -অফিস সমস্যা । তুমি শুনে কি করবা শুনি !
-তবুও বল শুনি !
-আরে ড্যাড মাঝে মাঝে এমন সব কাজ করে না ? আমি যে কি করবো ? যাই হোক সেটা নিয়ে তোমাকে ভাবতে হবে না । এখন বল তোমার কি সুংবাদ ! ওপাশ থেকে কিছুটা সময় আবার নিরবতা । তারপর অপু বলল -আমি চাকরি পেয়েছি !
-সত্যি !! -হ্যা । একদম সত্যি । জানোই তো মাঝে মাঝে এখানে ওখানে সিভি ড্রপ করি । কবে সিভি ড্রপ করেছিলাম সেটা আমার ঠিক মনেও নেই । সপ্তাহখানেক আগে একটা আসে । তৃষা বলল -কই আমাকে তো বল নি ।
-আরে তোমাকে সেদিন বললাম যে একটা কল এসেছে ! তৃষা একটু মনে করার চেষ্টা করলো । আসলেই সপ্তাহ খানেক আগে ও একবার বলেছিলো যে একটা ইন্টারভিউ কল এসেছে । ওর নাকি মনেও নেই এপ্লাই করেছিলো কি না । তাই যাবে কি না ঠিক নেই । এই জন্য তৃষাও খুব একটা গুরুত্ব দেয় নি । তৃষা বলল -কন্গ্রাস !
অপু বলল -শুনো এই শুকনো মুখে অভিনন্দন দিলে চলবে না । আজকে আমার সাথে দেখা করতেই হবে !
আজ ….. -আজকে কি ? অপু কিছু বলতে গিয়েও থেমে গিয়েছিলো । তারপর বলল -নাহ আজকে দেখা করা যাবে না ।
-কেন ?
-আরে আমি যে অফিসে জয়েন করেছি, সেই অফিসে নাকি আরেক বস আছে । লেডি বস । খুব নাকি রাগী । সবাই খুব ভয় পায় তাকে । আর মাঝে মাঝে নাকি সবাইকে খুব প্যারা দেয় ! -বাহ । জয়েন করেই দেখছি সব খবর পেয়ে গেছো !
-আরে তুমি তো জানো আমি কারো সাথেও নাই পাঁচেও নাই । দেখি অনেকেই যেচে এসেই বলতেছে । লাঞ্চ আওয়ারেই বলে গেল ।
-কে বলল শুনি ?
-আরে তুমি কি চিনবা নাকি !
-না চিনি তবুও শুনি নাম ।
-ঐ যে ম্যাডামের পিএ সম্ভবত । সে নাকি সব সময় দৌড়ের উপরেই থাকে । তবে আমার মনে হচ্ছে সত্যি !
-একদিন অফিস না করতে করতেই বুঝে গেলে সব সত্যি !
-আজকে মাত্র জয়েন করলাম আজকেই আমাকে যেতে বলেছে গাজিপুর । ফ্যাক্টরী ভিজিটে । বুঝো সামনে কি প্যারা অপেক্ষা করছে !
-হুম ! আসলেই তোমার জন্য প্যারাই অপেক্ষা করছে ।
-আচ্ছা যাই হোক, এখন রাখি । পরে কথা হবে কেমন ! যদি প্রথম দিনই দেখে আমি কাজ বাদ দিয়ে এতো কথা বলছি তাহলে আমার চাকরি আজই নট হয়ে যাবে ! ফোন রেখে তৃষার মনে হল ওর মেজাজ একটু একটু খারাপ হচ্ছে । ফোন করে ওর পিএ হাসানকে ভেতরে আসতে বলল।
অপু আসলেই কনফিউজ ছিল ওর এই চাকরিটা নিয়ে । এভাবে ওর কপালে চাকরিটা জুটে যাবে ও কোন দিন ভাবেও নি । এখন এমন হয়ে গেছে যে অনেক কোম্পানীতে এপ্লাই করলেও ডাক আসে না কিন্তু এই কোম্পানীতে ডাক চলে কিভাবে সেটা ও বুঝতে পারছিলো না ।
প্রথমে মনে হয়েছিলো যে হয়তো ভুয়া কল । হয়তো চাকরি দেওয়ার নামে কোন টাকা পয়সার নেওয়া পায়তারা করছে । কিন্তু যখন এতো বড় অফিসে ঠিকানাতে এসে হাজির হল তখন সব সন্দেহ দুর হয়ে গেল । সেই সাথে এও একটা ধারনা হয়েছিলো যে চাকরিটা ওর হচ্ছে না ।
এপোয়েন্টমেন্ট লেটারটা হাতে পেয়েও ওর ঠিক বিশ্বাস হচ্ছিলো না যে চাকরিটা ও পেয়ে গেছে । তবে তৃষাকে সারপ্রাইজ দেবেই বলেই সে কিছু বলে নি । আজকেই ওর সাথে দেখা করতে পারলে ভাল হত । কিন্তু এখন ওকে যেতে হবে গাজীপুরে । সেখানে নাকি কি একটা কাজ আছে । চাকরির প্রথমে দিকে ওকে এভাবে এতোদুর পাঠানো হবে সেটা ও ভাবতে পারে নি । বড় ম্যামের নাকি হুকুম ।
লাঞ্চ আওয়ারে সবাই ওকে এই ম্যামের ব্যাপারে বেশ ভয় দেখিয়েছে । অপু কদিন এখানে চাকরি করতে পারে সেটাই হচ্ছে এখন দেখার ব্যাপার । যাই হোক ও গাজীপুর যাওয়ারই প্লান করছিলো তখনই ওকে জানানো হল যে ওকে একা যেতে হবে না । ম্যামও নাকি যাবে এবং সে ম্যামের গাড়িতে করেই যেতে পারবে । তাই তাকে অপেক্ষা করতে বলা হল ।
চাকরির প্রথম দিন বসে গাড়িতে ওঠার সুযোগ । না জানি সামনে কি আছে ! পার্কিং লটে অপেক্ষা করতে লাগলো । একবার মনে হল তৃষা আরেকবার ফোন দিতে কিন্তু সেটার পরিকল্পনা বাদ দিল । সেও এখন ব্যস্ত । তাকে রাতে আবার ফোন দিতে হবে । এখন ব্যাপারটা এমন হয়ে গেছে যে রাতে তৃষার সাথে কথা বলাটা একটা অভ্যাসের মত হয়ে গেছে । কোন ভাবেই ওর সাথে কথা না ঘুম আসে না । কেবল কি ঘুম অন্য কোন কাজও করা যায় না ।
ফোন বের করে কিছু সময় ফেসবুক ব্রাউজ করতে লাগলো । একটু পরেই কালো রংয়ের একটা অডি দেখতে পেল ওর দিকে এগিয়ে আসছে । গাড়িটার সামনে দেখতে পেল ম্যামের পিএ হাসান সাহেব বসে আছে । এই লোকই তাকে সাবধান করেছিলো । পেছনে কেউ বসে তবে তার চেহারা বোঝা যাচ্ছে না । অপু একটু চিন্তিত হল । ড্রাইভারের সিটে পিএ বসে আছে এর অর্থ হচ্ছে ওকে বসতে হবে পেছনের সিটে । বসের পাশে । গাড়িটা এসে থামলো ঠিক ওর পাশেই । ও একটু দ্বিধান্বিত হয়ে পেছনের দরজারটা খুললে ।
তারপর মাথা নিচু করে ঢুকতে যাবে তখনই একট বড় ধরনের শক খেল । বের হয়ে আসতে যাচ্ছিলো কিন্তু গাড়ির ছাদে মাথা ঠুকে গেল ! মাঝ পথেই থেমে গেল । গাড়িতে তৃষা বসে আছে ।
ওর দিকে তাকিয়ে বলল -কি ব্যাপার ভুত দেখেছো ?
-তুমি এখানে ? সামনে থেকে পিএ হাসান বলল -জি ইনিই আমাদের বস । উঠে বসুন অপু সাহেব । আস্তে আস্তে অপুর কাছে সব কিছু পরিস্কার হয়ে উঠলো । কিভাবে ও এতো স হজে চাকরিটা পেয়ে গেল সেটাও বুঝতে কষ্ট হল না । অপুর মুখের ভাব দেখে তৃষার বুঝতে কষ্ট হল না ও আসলে কি ভাবছে ।
তৃষা বলল -আমিও তোমার মত সারপ্রাইজড হয়েছিলাম । আজ সকালেই তোমাকে অফিসে দেখেছি তখন । এতে আমার কোন হাত নেই । ড্যাড আর বড় ভাইয়া মিলে করেছে সব ।
সামনের সিট থেকে পিএ হাত তুলে বলল -আমিও হেল্প করেছি । তৃষা সেদিকে তাকিয়ে বলল -সাট আপ !
এখনও বসে আছো কেন তুমি ? যাও । কাল থেকে সাত দিন অফিসে আসবা না । পিএ যেন খুশিই হল কথা শুনে । অপুর দিকে একটু তাকিয়ে নেমে গাড়ি থেকে । তারপরই গাড়ি চলতে শুরু করলো । অপু তখনও তৃষার দিকে তাকিয়ে । ওর আসলে ঠিক বিশ্বাস হচ্ছে না ।
তৃষা বলল -এভাবে তাকিয়ে থেকো না তো ! দুরে বসে থাকবা নাকি একটু সরে এসে বসবা ! অপু হেসে ফেলল । তারপর তৃষার দিকে আরেকটু এগিয়ে গিয়ে বসলো ।