–স্যার, আপনি বিয়ে করবেন না?
–করবো।
–কবে করবেন? কাকে করবেন?
–আশ্চর্য তো! তুমি সবসময় আমাকে এই প্রশ্ন করো কেন?
–কারণ আমি একটা ডিসিশন নিয়ে ফেলেছি যে।
–কিসের ডিসিশন? তোমার আবার ডিসিশন কি?
–আমার যখন আঠারো বছর হয়ে যাবে তখন আমি আপনাকে বিয়ে করবো বলে ঠিক করেছি।
–কি!! কার কাছ থেকে শিখেছো এসব আজে বাজে কথা?
–আমি নিজে নিজে বুদ্ধি করে বের করেছি।
–শোনো মেয়ে, তোমার এসব যন্ত্রণা অনেক সহ্য করেছি আর না। ফের
এসব বললে আমি সোজা গিয়ে তোমার আম্মুর কাছে বিচার দিবো।
–একবার আমি বড় হয়ে যাই তখন দেখবেন কি করি! আম্মু যেমন আব্বুকে বকে আমিও
আপনাকে খুব করে বকে দিবো। হুহ!
–এই মেয়ে চুপ করো। একদম চুপ। ক্লাস থ্রি তে পড়ে এরকম বেয়াদব মেয়ে আমি জীবনেও দেখিনি।
তোমার আম্মুকে ডাক দাও। তোমার মতো বেয়াদব মেয়েকে পড়ানো আমার পক্ষে সম্ভব না।
সেদিনের পর স্যারের সাথে সাদিয়ার। আর দেখা হয়নি। বেতন নিতে একবার অবশ্য
এসেছিল কিন্তু সাদিয়ার
সাথে দেখা হয়নি তার। সাদিয়ার আম্মু সাদিয়াকে তার সামনে যেতে দেয়নি।
তখন সাদিয়ার বয়স ছিল দশ। তার স্যাঁর(রেহান) তখন মাত্র এসএসসি দিয়েছে!!
প্রেম, ভালোবাসা কিছুই
বুঝতো না সাদিয়া তবুও
কেন জানি সেই মানুষটিকে তার খুব ভালো লাগতো।
স্যাঁর চলে গেলো।
সাদিয়া ও বড় হতে লাগল।
স্যাঁর (রেহানের) কথা সাদিয়ার মনেই ছিল না।
কলেজে উঠতেই সাদিয়ার বাবা তার বিয়ে ঠিক করে ফেললেন। বিয়েতে সাদিয়ার একদমই মত ছিলোনা।
যে ছেলেটির সাথে ওর
বিয়ে ঠিক করেছে সে ডাক্তার।
ছেলেটির সাথে প্রথম যখন
দেখা করতে গিয়েছিল সাদিয়া মোটামোটি বড় ধরণের ধাক্কা খেয়েছিল। বেচারা নিজেও
সাদিয়াকে দেখে কম অবাক হয়নি। সেদিন কেউ ই কিছু বলে নি। চুপ করে কিছুক্ষণ বসেছিল দুজন।
সাদিয়া বাড়ি এসে জানায় ছেলে আমার পছন্দ হয়েছে। আমাকে ও
তার পছন্দ হয়েছে।
তার কিছুদিন পর ওদেও বিয়ে হয়!!
———- বাসর রাত ——–
সাদিয়া রুমে একা বসে আছে, রেহান রুমে যখন প্রবেশ করল, সাদিয়া তখন রেহানের পা ছুয়ে সালাম করল😍 সাদিয়াকে রেহান কিছু না বলে সেও বোকার মত সাদিয়ার পা ছুয়ে সালাম করতে গেলো😄😜
সাদিয়ে একটু সরে গিয়ে বলে উঠল ঐ কি করেন??? রেহানও বলে উঠল তাই তো আমি সালাম করতে যায় কেন!!
সাদিয়া তখন চুপচাপ বিছানায় গিয়ে বসলো!! রেহানও একটু পর বিছানার একদম কিনারায় গিয়ে বসলো!!
আজব হলেও এভাবে ২০ মিনিট পার হবার পরও
সত্যি যে কেউ কারো সাথে একটাও কথা বলে নাই!! রেহান ও কিছু
বলেনি আর সাদিয়াও না। সাদিয়া মনে মনে ভাবছে আজ ও সে কিছু
বলবে বলে মনে হচ্ছে না। বোকার মতো নিচের দিকে তাকিয়েই থাকবে!! আর সাদিয়া মনে প্রাণে চাইছে মানুষটি যেন মুখ
খুলে। কথা বলতে পারে কি না এটা অন্তত জানা উচিৎ😄
হঠাৎ ৩০-৩৫ মিনিট যাবার পর রেহান দেখলো কিছু না বললে নয় তখন একটু মুখ খুলল, তু তু তুমি তো দেখা যায় সাংঘাতিক
ভয়ংকর মেয়ে। বিয়ে করার নীল নকশা কি তখন ই বানিয়েছিলে?
–হিহি! আমি কিছু বলবো না। আমার খুব হাসি পাচ্ছে। হিহিহি…
–হাসবেনা। আমি খুবই সিরিয়াস।
–হাসলে কি করবেন? আম্মুর কাছে বিচার দিবেন?
-হুম।
–যত ইচ্ছা বিচার দিন। তখন তো বিচার দিয়ে পালিয়ে গিয়েছিলেন এইবার কোথায় পালাবেন? হুম?
আম্মু যেমন আব্বুকে বকা দেই আমিও এইবার আপনাকে খুব করে বকে দিবো। হিহি
–আচ্ছা তুমি হাসো আমি বাহিরে যাই!!
–কি বললেন?😠 নতুন বউ ঘরে রেখে বাহিরে যাওয়া??😠
–না মানে, আমার খুব লজ্জা করছে
–ইস, কি লাজুক লতা, আপনি এখন বউয়ের সাথে থাকবেন নাকি বকাঝকা শুনবেন?
–এ না না, এত রাতে বকা দিলে কেউ শুনতে পেলে কি না কি ভাববে তার চেয়ে, বউয়ের কাছে থাকায় ভালো😊😊
–এই তো গুড বয়
–আচ্ছা সাদিয়া, তুমি ঘুমিয়ে পড়
–কেনো আপনার কি ঘুম পাচ্ছে???
–হ্যাঁ
–আপনি ঘুমলে মাথায় পানি ঢেলে দিব!! হি হি
–এ না, ঘুম নাই
–মাত্রই না বললেন ঘুম আচ্ছে
–এখন নাই, এই শীতের মধ্য ঘুমের সময় মাথায় পানি ঢালার কথা শুনলে, ঘুমের ওষুধ খাওয়া মানুটিও জেগে থাকতে পারবে!!
–হি হি হি
–তুমি এতো হাসো কেনো
–তাহলে কি কাঁদব??
–এ না, আর বলব না, সরি
–মনে যেনো থাকে
–এখন আমরা কি করব??
–কেনো জানেন না??
–আসলে প্রথম বাসর রাত তো
–কি?? কেনো আরো বিয়ে করার ইচ্ছা আছে??
–এ না, ঘরে এমন মিষ্টি বউ থাকতে, আরেকটা বিয়ে?? স্বপ্নেও যদি কখনো দেখি স্বপ্নকে বকা দিব!!
–সাদিয়া কথাটা শুনে খুব হাসলো, এই যে আমার ডাক্তার বর, আমাকে সত্যিই ভালবাসেন??
–রেহান মাথা নিঁচু একটু মাথা ঝাকিয়ে বলল , হুু…
–হু কি?? আপনি আগে কারো সাথে প্রেম করছেন??
–না,
–কেনো করেন নি??
–সত্যিই বলল??
–হ্যাঁ,
–শুধু বউকে ভালবাসবো বলে, বউয়ের সাথে প্রেম করব বলে!!
–এই উঠে দাঁড়ান, এটা বলে সাদিয়াও উঠে দাড়াল,
–কেনো দাঁড়াতে বললে??
–ঐ যে ওখান থেকে ফুল এনে হাঁটু গেরে বসে আমাকে প্রপোজ করেন!!
–প্রপোজ কেন??
–বারে, এই না বললেন, বউয়ের সাথে প্রেম করবেন, তাহলে প্রপোজ করতে হবে না??
–বাসর রাতে, বউকে প্রপোজ করতে হয়??
–সাদিয়া মুখটা ঘুরিয়ে, একটু হেসে বলল হ্যাঁ গো হ্যাঁ
–আচ্ছা করব, আমি কিন্তু রোমান্টিক কথা জানি না!!
–জানতে হবে না, যেমনে পারেন করেন!!!!
–আচ্ছা ঠিক আছে
————- প্রপোজ ————-
টেবিলে কিছু ফুল রাখা ছিল, সেখানে থেকে কিছু ফুল হাতে নিলো রেহান, এরপর ধীর পায়ে হেঁটে হেঁটে সাদিয়ার কাছে এলো, এরপর হাঁটু গেরে বসে সাদিয়ার হাঁতটি ধরে বলল,, সাদিয়া আমি বিয়ের আগে সিংগেল থেকেছি কারণ বিয়ের পর বউকে খুব ভালবাসাবো বলে, বউয়ের সাথে দুষ্টু-মিষ্টি প্রেম করব বলে,, একা থেকেছি যাতে বউয়ের হাতটি ধরে বলতে পারি শুধু তোমারই জন্য একা থেকেছি, হ্যাঁ আমার সে অপেক্ষার অবসান ঘটেছে যাকে ভালবাসতে চেয়েছি তাকে পেয়ে গেছি, সে মেয়েটা তুমি সাদিয়া!! এই তোমার হাঁতটি ধরলাম বাকিটা জীবন এই হাঁতটি ধরেই কাটাকে চাই!!
–সাদিয়া রেহানের কথাগুলো শুনে কথা বলার ভাষা হারিয়ে ফেলছে হয়তো, কিছু বলছে না চোখ থেকে কয়েক ফোটা অশ্রু বের হলো, এ অশ্রু কষ্টের নয় পরম আনন্দের!!
–রেহান আরো বলল, আমি সুপুরুষ হতে চাই, আর আমি বিশ্বাস করি, একটা সুপুরুষ শত নারীকে ভালবাসে না, বরং একটা নারীকে হাজার উপায়ে ভালবাসে, আমি সে সুপুরুষ হতে চাই!! এই বলে উঠে দাঁড়াল!!
–সাদিয়া আর কিছু না বলে জড়িয়ে ধরল রেহানকে, রেহানও গভীর ভালবাসায় জড়িয়ে ধরলো সাদিয়াকে!!
……………………………………..সমাপ্তি………………………………….