মিষ্টি ভিষণ পাগলী টাইপের মেয়ে, সে সবসময় সবার সাথে মিলেমিশে থাকতে খুব পছন্দ করে, বন্ধুদের সাথে বেশ রশিকতা করে কথা বলে, কবিতা আবৃতি করতে অনেক পছন্দ করে, প্রায় সময় সে কবিতা আবৃতি করে বন্ধুদের শুনায়, এছারা বন্ধুদের মজার গল্প শুনিয়ে সবাইকে খুব হাঁসিখুঁশি ভাবে রাখে।
কিন্তু,,,
বেশ কিছুদিন ধরে সে সবার থেকে দূরে দূরে থাকছে, কারণ মিষ্টির মন খারাপ। এটা মিষ্টির বন্ধুরাও মেনে নিতে পারছে না। মিষ্টির মুখে কোনো হাঁসি নেই সবসময় মনমরা হয়ে থাকছে। মিষ্টির বন্ধুরা মিষ্টির মন ভালো করার জন্য অনেক চেষ্টা করছে কিন্তু কোনো লাভ হচ্ছে না!!
(সবাই ভাবছো মন খারাপের কারণটা কয়?? গল্পটি পড়তে থাকো পেয়ে যাবে)
মিষ্টির সবচেয়ে বেস্ট ফ্রেন্ড বৃষ্টি, সে মিষ্টির বিষয়ে অন্য সবার চেয়ে একটু বেশীই জানে,
——————
বৃষ্টি তার বেস্ট ফ্রেন্ড মেহেদির সাথে ফেসবুকে চ্যাটিং করছে
–হাই দোস্ত
–হ্যাঁলো, ডেয়ার দোস্ত
–কেমন আছিস
–ভালো আছি, তুই??
–ভাল আছি, কি করিস
–গান শুনি
–কার গান
–কিছু আবদারে জানি নেই মানে
তোর সঙ্গে আজ আমাকে নে
এগিয়ে দে এগিয়ে দে, দু-এক পা এগিয়ে
হাঁটতে চাই কয়েক পা তোর সাথে!!
–ওয়াও, ওসাম একটা গান
–দোস্ত তোর ছবি দে না একটা কতদিন তোরে দেখি না!
–ঐ কুত্তা, ৫ দিন আগেও একটা দিছি!!
–এখন চাইছি আবার দিবি
–একটা গ্রুপ ফটো আছে দেয়??
–আচ্ছা দে
–(ফোটো) দেখে মেহেদি নিচুপ!
–কিরে কেমন লাগছে??
–অপরুপ সুন্দরী
–তাই নাকি??
–তোরে বলি নি, তোর পাশে থাকা মেয়েটার কথা বলছি!!
–কুত্তা, শিয়াল, বিড়াল, তুই আমার ছবি নিয়ে চোখ দিছিস আমার বান্ধবীর দিকে???
–আগে বল সুন্দর জিনিস দেখা কি অন্যায়???
–নাহ
–মেয়েটা সুন্দর, চোখের পলক ফিরছে না দোষ কি আমার বল??
–মাইর খাবি???
–কল দেয়??
–দে
–তোর এমন বান্ধবী থাকতে আমি এখনো কেনো সিংগেল বল??
–এই যা ছবি দিয়ে তো বিপদে পড়লাম!!
–তুই বিপদে পড়ছিস?? আমাকেও বিপদে ফেলে দিছিস, এখন আমাকে উঁদ্ধার কর!!
–কি বলিস এসব??
–দোস্ত লাইনটা করিয়ে দে, প্রেমে পড়ে গেছি!!
–লাভ নাই,
–কেনো???
–ওর একটা রিলেশন ছিল ব্রেকআপ হয়ে গেছে!!
–ওয়াও, আমার সাথে প্রেম করার দরজাটাও খুলে গেছে!!
–কে মিষ্টি?? একবার যার মন ভাঙে তার মনে অন্য কেউ জায়গা করতে পারে না!!
–আমি পারব!!
–প্রথম ভালবাসা কেউ ভুলতে পারে না, বেসম্ভব ভালবাসে ছেলেটাকে!! ব্রেকআপ তাতে কি??এখনো ঘুমানোর আগে কেঁদে কেঁদে বালিশটাও ভিজিয়ে ফেলে!! ওর দ্বারা অন্য কাউকে ভালবাসা অসম্ভব!!
–মানুষ হচ্ছে সৃষ্টির সেরা জীব, আর মানুষের মুখে অসম্ভব কথা সাজায় না!!
–আমি একটা সমস্যার সমাধান খুঁজতে তোরে সাথে কথা বলছি, এখন দেখি সমস্যা আরো বেড়ে গেলো!!
–বল কি করতে হবে??
–এর আগে বলছিলি, তোর এক ক্লাসমেট ছ্যাঁকা খেয়ে, অনেক কান্না আর সর্বদা মন খারাপ করে থাকতো, তোর কথামত চলে মেয়েটা স্বাভাবিক হয়েছে, তাই ভাবলাম মিষ্টির জন্য কিছু পরামর্শ দে!!
–ব্রেকআপ কে করছে কি নিয়ে হয়েছে??
,
সবাই ভাবছেন মেহেদি কে? হ্যাঁ মেহেদি হলো এক বেশ ধনী বাপের ছেলে, এদিকে বৃষ্টির বেস্ট ফ্রেন্ড। মেহেদি ঢাকায় থাকে, মেহেদি ছোটবেলা থেকে নানা বাড়িতে বড় হয়েছে তার নানা বাড়ি ফরিদপুর। আর ফরিদপুর থেকেই SSC পাস করেছে, তারপরই ঢাকাতে চলে যায়
মা-বাবার কাছে। তবে, দু এক মাস পর পর ফরিদপুর আসে!!
———
হ্যাঁলো…
-দোস্ত শোন তাহলে, মিষ্টি একটা ছেলেকে ভিষণ ভালবাসতো, কিন্তু তার সাথে ব্রেকআপ করে দিছে..
–হা হা হা, হে হে মিষ্টি ব্রেকআপ করে দিছে, তাহলে ওর এত মন খারাপ কেনো??
–ঐ কুত্তা ব্রেকআপ করার ঘটনা না শুনে হাসলি কেন.??
খুব ভালবাসতো রিফাতকে রিলেশনটা ছিল ১০ মাসের, বেশ ভালো সময় যাচ্ছিল ওদের একদিন, রিফাত রুমডেট করতে চাই, মিষ্টি ওর কথা শুনে হতবাক কি বলছো এসব??
রিফাত: আচ্ছা আমরা তো একে অপরকে ভালবাসি একসময় বিয়েও করব, আর বিয়ের পরে যা করতে পারব এখন করতে সমস্যা কি.??
মিষ্টি:-আমি নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছি না তুমি বলছো এই কথা?? তোমাকে অনেক বিশ্বাস করি ভালবাসি। কিন্তু এখন দেখি তুমি এর যোগ্য না অন্য খারাপ ছেলেদের মত তুমিও….
রিফাত:- আসলে তুমি আমাকে ভালবাসো না যদি ভালবাসতে তাহলে রাজি হতে।
–আসলেই কি তাই??? আমি তোমায় ঠিকই ভালবাসি কিন্তু তুমি ভালবেসেছো আমাকে নয় আমার দেহকে ছি রিফাত ছি, যে ছেলে বিয়ের আগে রুমডেট করতে চাই তাকে সারা দুনিয়ার মানুষ ভালো বললেও এই মিষ্টি তাকে ভালো ছেলে কখনোই বলবে না, তুই একটা দুঃচরিত্র, লম্পট, কখনই আমার সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করবি না!!
–হ্যাঁলো মেহেদি, শুনলি তো সব??
–হুমম দোস্ত শুনলাম, ছেলেটা কি পড়ে মিষ্টিকে সরি বলে নি বা দেখা করে নি আর??
–না, অন্য কারো সাথে রিলেশন রয়েছে!!
–দোস্ত আমার সাধ্য থাকলে মিষ্টিকে নোবেল দিতাম ঠিকই করছে,
–এবার বল মিষ্টির মন থেকে ঐ বদজাতের নাম মুছে দিতে পারবি কিনা.???
–এটা কোনো ব্যাপার হলো??
–হুম জানি দোস্ত তুই পারবি, এক কাজ কর আমি ওর আইডির একটা ইস্ক্রিন সর্ট মেরে তোরে দিচ্ছি রিকুয়েস্ট দিবি
–ঠিক আছে দিয়ে রাখ, আমি একটিভ আছি! ফোন রাখ”!
,
…….. কিছুখন পর
দোস্ত এই যে ইস্ত্রীন সর্ট
–আচ্ছা এড দিছি, পড়ে কথা হবে বায়!!
——-
রাত ১০ টাই মেহেদি অনলাইনে এলো আর দেখলো
মিষ্টি ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট xpt করছে
……
মিষ্টিকে মেসেজ দিল
মিষ্টি মেসেজ দেখে রিপ্লাই দিল না
মেহেদি আবার নক করল
এবার
মিষ্টি:- who r u.??
মেহেদি :- আপনি জানেন আমি কে তারপরও জিজ্ঞেস কেনো করছেন??
–হ্যাঁ, বৃষ্টি বলেছে আপনার কথা তাই রিকুয়েস্ট xpt করছি, আপনাকে তারাছা চেনা চেনা লাগছে।
–হ্যাঁ, লাগারই কথা আমি তো ছোটবেলা থেকে বড় হয়েছি ফরিদপুর।
–ও আচ্ছা, আপনার নাম তো মেহেদি.?
–হ্যাঁ
এভাবেই ফেসবুকে ওদের কথা চলতে থাকে বেশ কিছুদিন, কিন্তু দিন যত গড়াতে থাকে মিষ্টির প্রতি মেহেদির দুর্বলতা বাড়তে থাকে!!!
——————-
কিছুদিন পর বৃষ্টি, মিষ্টিসহ সহ বেশ কিছু
বন্ধু-বান্ধব কলেজের মাঠের একখানে বসে আছে,
বৃষ্টি লক্ষ করল তাদের দিকে দু এক পা করে এগিয়ে আচ্ছে মেহেদি কাঁধে ব্যাগ নিয়ে, মেহেদি কাছে আসতেই
বৃষ্টিঃ– কিরে তুই?? স্বপ্ন দেখছি না তো??
মেহেদি:- স্বপ্ন হবে কেনো??
সেই সাথে আরো কিছু বন্ধু বলল কিরে দোস্ত তুই??
–আসার আগে তো কিছু বলিস নাই
–তাহলে এই চমকটা তো আর দিতে পারতাম না
–হুম সেটাই, বাট এখানে কেনো
–ধ্যাৎ, বাদ দে পড়ে বলি, এখানে বেশ কয়েকজন অপরিচিত ওদের সাথে পরিচয় করিয়ে দে
–ও হ্যাঁ, এই সবাই শোন এটা আমার ছোটবেলার ফ্রেন্ড একদম জানের দোস্ত
ওর নাম, মেহেদি
–হ্যাঁ আমি, মেহেদি এই কলেজে নতুন ভর্তী হয়েছি
–বেশ কয়েকজন বলে উঠল, বলিছ কি ঢাকার ভার্সিটি ছেরে, ফরিদপুর রাজেন্দ্র কলেজে.?? কাহিনী কি???
–আসলে ঐ যানযটের শহর ভালো লাগে না, আর বড় হয়েছি এখানে, আর এখানের সব কিছুর মায়ায় আমাকে টেনে এনেছে
এরপর বন্ধু মহলের কিছু আড্ডা হলো তারপর সবাই যার যার বাড়ির দিকে যাচ্ছে, বৃষ্টি বাড়ি আর মেহেদির নানা বাড়ি একখানে থাকায় ওরা একসাথে হেঁটেই বাড়িতে যায় বাড়িটাও কলেজ থেকে দূরে না ১৫-২০ মিনিট লাগে হেঁটে যেতে,
বৃষ্টি :- মেহেদির কান টেনে ধরে, এই হিরো হয়ে গেছিস তাই না, সবার কাছ থেকে পার পেলেও ভাবলি কেমনে আমার কাছ থেকে পার পাবি?? বল কি জন্য এখানে আচ্ছিস???
মেহেদি:- আগে কান ছাড় বলছি, যেদিন মিষ্টির ছবি দিছিস তখন মিষ্টির মিষ্টি হাঁসির ছবি দেখে সেদিনই ওর প্রেমে পড়ি, এরপর যত কথা বলি ঠিক ততই ওর প্রতি দুর্বল হয়েছি পারলাম না আর ঢাকায় থাকতে, তবে একটা জিনিস বুঝছি ও রিফাতকে অনেক বেশীই ভালবেসেছে যার কারনে ভুলতে পারছে না, আর ওর মন থেকে রিফাত নাম টা দূর করে নিজের নামটা বসাতে এসেছি!!
বৃষ্টি:- দেখ যদি ওর মন ভালো করতে পারিস তবে ভালো, কিন্তু যখন তুই তোর কথা বলবি তখন ও আরো বেশী ব্যথিত হবে সেই সাথে বন্ধুত্ব নষ্ট হবে, তোর সাথে আর সেই সাথে আমারও।
মেহেদি:-দেখ আমি ওরে ভালবেসেছি আর তুই আমার বেস্ট ফ্রেন্ড তুই যদি আশা না জাগিয়ে হতাশা দিস কেমনে হবে? আমি সব পরিকল্পনা করেই এখানে এসেছি। আর হ্যাঁ ওর ফেসবুকে যে বার্থডে ডেট দেখলাম সেটা কি রিয়েল??
–হ্যাঁ, এই তো মাস খানেক পর ওর বার্থডে
–আমি এই মেহেদি তোকে কথা দিচ্ছি ওর জন্মদিনের দিনই ওর সব কিছু ভুলিয়ে দেব যদি না পারি তবে, ঢাকাতে চলে যাব!!
–ঢাকা যেতে হবে না, তুই পারবি আমি জানি, আমি তোর সাথে আছি।
–ওর সব ভাল লাগা গুলো আমাকে বল
–বৃষ্টি মিষ্টির কিছু ভাললাগা গুলো বলল
—–
এভাবে সবাই প্রতিদিনই ক্যাম্পাসের একখানে বসে কিন্তু মিষ্টি আলাদা একখানে, মেহেদি সবার কাছে মিষ্টির একা থাকার কারণটা জানতে চাই, পরে সবাই মিষ্টির ঘটনাটা বলে দেয় (যদিও মেহেদি জানতো কিন্তু কথাটা ছিল বৃষ্টি আর তার মধ্য) তাই মেহেদি নতুন করে সবার কাছ থেকে জেনে নিলো,
পরদিন মেহেদি মিষ্টির কাছে গিয়ে বলল, ওদের থেকে সব কিছু শুনলাম তোমার রিলেশন আর ব্রেকআপের কথা। আমি তোমাকে কোনো জ্ঞান দিতে আছি নি, শুধু সত্য একটা বাস্তব সত্য কথা বলতে চাই,
যেমন: কিছু মেয়েরা তাকেই বেশী ভালবাসে যে ছেলেটা তাকে সবচেয়ে বেশী কষ্ট দেয়, সে মেয়েদের মধ্য তুমি একজন!! যে খারাপ তার জন্য মন খারাপ করে রাখার কোনো মানেই হয় না!!
আমার এই কথাটার সত্যটা কতটুকু বাড়িতে ভেবে উত্তরটা দিও,
হ্যাঁ, মিষ্টি কথাটা ভেবেছিল আর রাতেই মেহেদিকে ফেসবুকে মেসেজ দেয় তোমার সেই কথাটা ১০০% সত্য।
–ধন্যবাদ,
–কিন্তু আমি না ওরে কিছুতেই ভুলতে পারছি না
–ভুলতে চাও.???
–হুমমম, কোনো অমানুষকে মনে রাখার ইচ্ছা নেই!!
–তুমি আসলে ওর সাথে যেসব মুহূর্ত কাটিয়েছো বার বার সেগুলো ভাবো তাই ওরে ভুলতে পারছো না, ওকে ভুলার জন্য তোমাকে প্রথমে যা করতে হবে তা হলো ওর কিছু নেগেটিভ দিক গুলো ধরতে হবে আর সেটা নিয়ে নিজের মনে জেদ তৈরি করতে হবে ওরে বেশী থেকে বেশী ঘৃণা করতে হবে, যেমন:- তুমি এখন ওরে ভেবে কাঁদো, ওর জন্য মন খারাপ করে থাকো, আর ও এখন এই সময় কি করছে?? অন্য একটা মেয়ের সাথে রিলেশন নিয়ে ব্যস্ত, অন্য একটা মেয়ের হাত ধরে ঘুরছে, অন্য একটা মেয়ের সাথে আনন্দে দিন কাটাচ্ছে, তুমি এখন নিজের মনে জেদ তৈরি করবে, আর বলবে এমন একটা লম্পটকে ভেবে নিজেকে কেনো কষ্ট দিচ্ছি????
–আসলেই তো তাই ও, একটা লম্পট কিছুদিন আগে ওর ফ্রেন্ডের থেকে জানতে পারি এখন অন্য মেয়ের সাথে ওর রিলেশন চলছে
–হুমমম এভাবে ওর প্রতি ঘৃণা তৈরি করার চেষ্টা করো, আর একটা কথা মনে রেখো,
“”ভুল ভ্রান্তি দিয়েই মানুষের জীবন।
সেই ভুলকে প্রাধান্য দিয়ে,
বাকি জীবনে অশান্তি ডেকে আনবার কোন মানে হয় না!!
–হুমম, ঠিক বলেছো, আমি ওরে ভুলতে চাই, আমি লম্পট টাকে মনে রাখতে চাই না।
–হ্যাঁ, তুমি পারবা
–ওকে রাত অনেক, বাই
–ঠিক আছে শুভ রাত্রি
———————–
–পরদিন মিষ্টি কলেজে আসে নাই, ফোনও বন্ধ, রাতে অনলাইনে এসে
মেহেদিকে নক করল
–এই আজ কলেজে আসো নি কেনো.?? তুমি আসলে কি? তুমি সবাইকে খুব কষ্ট দিচ্ছো, তোমার বন্ধুরা তোমাকে কত ভালবাসে তুমি সেটা জানো না?? সবাইকে কষ্ট দিতে ভাল লাগে?
–একটু থামো….
আমি গতকাল সারারাত ঘুমাই নি, আর দিনেও অনেক ভেবেছি
–আবারও ওর কথা ভেবে তাই না.???
–না, তোমার কথা ভেবে
–তাই???😃
–হ্যাঁ, আর একটা জিনিস বুঝেছি আমি আমার বন্ধুদের অনেক কষ্ট দিছি আর দিতে চাই না, আমি এখন নিজেকে বুঝতে শুরু করছি।
–ভালো লাগল শুনে, আর একটা কথা মনে রেখো, জীবন কারো জন্য থেমে থাকে না
–হুমম ঠিকই বলেছো, আচ্ছা রাত অনেক ঘুমাব বাই!!
–ওকে
————————-
পরদিন, সবাই সেই ক্যাম্পাসে বসে আড্ডা দিচ্ছে আজও মিষ্টি আচ্ছে না, বৃষ্টি কল দিল মিষ্টিকে, বলল আসতেছি,
কিছুখন পর সবাই দেখতে পেল মিষ্টি আচ্ছে দূর থেকেই সবাই লক্ষ্য করল মিষ্টি আজ বেশ সেঁজেছে, আর কাছে এসে বলল সবাই কেমন আছিস??
–তখন সবাই বলল, আজ অনেক হ্যাঁপী এই তোরে এভাবেই আমরা সব সময় দেখতে চাই।
–হুমম এখন থেকে সব সময় এমনই দেখতে পাবি, আসলে এতদিন একটা ঘোড়ে ছিলাম সেটা একজন কেটে দিয়েছে, আর সে তোদের মধ্যই একজন
–শেষ মেষ কে তোর মাথা থেকে ভূতটা দূর করল??
–মিষ্টি হেঁসে হাত তুলে বলল দেখতো হাতে এসব কি দিয়ে ডিজাইন করা???
–সবাই বলল, মেহেদি রাঙানো, কারো বুঝতে বাকি রইল না, সবাই খুব হাঁসলো, মেহেদি কিছুটা লজ্জা পেলো আর উঠে যেতে লাগল, তখন সবাই বলল কিরে হিরো লজ্জা পাচ্ছো নাকি.??? মেহেদি আবার বসে পড়ল, তারপর সবাই ওরে অনেক ধন্যবাদ জানাল, এরপর সবাই গোল হয়ে বসে গানের কলি খেলতে শুরু করে।
.
.
এরপর থেকে মিষ্টি সব বন্ধুদের সাথে একসাথে আড্ডা দিত, মাঝে মাঝে মেহেদির সাথে আলাদা সময় পার করতো, আর এভাবে মিষ্টিট সাথে মেহেদির বন্ধুত্ব টাও ঘনিষ্ট হতে থাকে।
এভাবে বেশ কিছুদিন পেরিয়ে গেলো
——————
৫ দিন পর মিষ্টির বার্থডে সবাই গোপনে পরিকল্পনা করছে, এমনকি গোপনে মিষ্টিকে না জানিয়ে সবাই ওর মা-বাবার সাথেও কথা বলেছে,, কিভাবে বার্থডে সারপ্রাইজ দেয়া যায়?
সবাই চাই মিষ্টিকে বড় একটা সারপ্রাইজ দিতে যা মিষ্টি সহ সবার জন্য সর্বদা স্মরণীয় হয়ে থাকবে।
.
.
এভাবেই চার দিন চলে গেল আজ রাত ১২ টার পর নতুন দিন আসবে আর মিষ্টি নতুন করে আরেকটা বছরে পা রাখবে,
———-
রাত ১০ সব বন্ধুরা একটা গ্রুপে আড্ডা দেয় প্রতিটা দিন, অথচ আজ কেউ নেই, এভাবে রাত ১২ টা বেজে গেল, মিষ্টি তার বন্ধুদের মেসেজের অপেক্ষায় কিন্তু কেউ অনলাইনে নেই, সবাইকে কল দিল সবার ফেনটাও বন্ধ, মিষ্টি ঐ দিন রাতে খুব কান্না করছে বন্ধুরা সবাই তার বার্থডে তারিখ ভুলে গেছে, এভাবে কষ্ট নিয়ে কখন ঘুমিয়ে পড়ছে নিজেই জানে না,
সারপ্রাইজ ১ম ধাপ
………….
ভোর হতেই বৃষ্টি মিষ্টিকে ডেকে উঠিয়ে ফ্রেস করিয়ে নিয়ে যায় কলেজের দিকে যখন কলেজের প্রায় কাছাকাছি তখন মিষ্টির চোখ বন্ধ করে রাখে, পরে যে খানটাই সবাই বসে, সেখানে এসে চোখের বাঁধন খোলে আর মিষ্টি দেখতে পায় চারপাশে বেশ সুন্দর করে সাজিয়েছে আর তার বন্ধুরা কেক সামনে রেখে দাঁড়িয়ে আছে, সবাই বলে উঠল, হ্যাঁপী বার্থডে টু ইউ, এই পাগলী কি ভাবছিলি তোর বার্থডে আমরা ভুলে গেছি? এদিক আয় কেক কাটবি, মিষ্টির চোখে পানি চলে এল, এ কান্না কষ্টের না, বন্ধুত্তের ভালবাসার জন্য। এভাবে সকালটা সবাই খুব আনন্দ করল, মিষ্টিকে সবাই বলল দুপুর সাড়ে তিন টাই সেঁজে থাকবি বৃষ্টি তোরে নিয়ে আসবে, আমরা তোর প্রিয় একটা জায়গায় অপেক্ষা করব।
সারপ্রাইজ ২য় ধাপ
………..
সাড়ে ৩ টা বাজে বৃষ্টি চোখ বেঁধে মিষ্টিকে নিয়ে যাচ্ছে মিষ্টির প্রিয় জায়গায়
এসে পৌছাল আর চোখের বাঁধন টা খুলে দিল, আর চোখ মেলে মিষ্টি যা দেখল সত্যিই ভিষণ খুঁশি হলো, সে দেখতে পেলো ফুল দিয়ে সুন্দরভাবে সাজানো একটা নৌকা, আর নৌকার পাশে দাড়িয়ে মেহেদি তাকে স্বাগত জানাচ্ছে নৌকায় উঠার জন্য, এরপর মিষ্টিসহ সবাই এক এক করে নৌকায় উঠল, পদ্মা নদীতে এমনভাবে ফুলে সাঁজানো নৌকায় ঘুরা wow মিষ্টি আজ সত্যিই অনেক হ্যাঁপী সবাইকে বলল এই পাবনার পাগলরা আর কত সারপ্রাইজ দিবি, আমার তো মনে হচ্ছে সব স্বপ্ন দেখছি,
তখন মেহেদি বলল সারপ্রাইজের দেখছো কি সবে মাত্র শুরু,
–তার মানে আরো আছে??? এই এক কাজ করো পারলে পাবনাতে সিট ঠিক করো, এতো খুঁশি আমি নিতে পারছি না
মিষ্টির কথা শুনে হাঁসির হিড়িক পড়ে গেলো……
সারপ্রাইজ ৩য় ধাপ
———–
নৌকায় বেশ জমিয়ে আড্ডা দিচ্ছিল সন্ধ্যা ঘনিয়ে এল নৌকা নদীর পাড়ে নিয়ে এলো সবাই নেমে গেলো। এরপর সবাই হাঁটতে লাগল যখন সবাই বাড়ি যাবার উদ্দেশ্য রওনা দিবে গাড়িতে উঠল তখন সবাই বলল, আগে মিষ্টিকে তার বাড়ি পৌছে দিবে তার পর সবাই তার নিজ বাড়ি যাবে,
গাড়ি ছেড়ে দিল যখন মিষ্টির বাড়ির কাছাকাছি তখন বৃষ্টি আবার মিষ্টির চোখ বেঁধে দিল,
মিষ্টিঃ- আবার কি.??
মেহেদি বলল এই চুপ কোনো কথা বলা যাবে না, মিষ্টিকে সবাই তার বাড়ির ছাদে নিয়ে যাচ্ছে, মিষ্টি এই তোরা কি সত্যিই আমাকে পাগল বানিয়ে ছারবি???
–চুপ করে থাকতে বলছি
এর মধ্যই মিষ্টিকে সবাই ছাদে নিয়ে এলো
এবার মিষ্টির চোখের বাঁধন ছেরে দিল আর সবাই বলল না বলা পর্যন্ত জেনো চোখ বুজে থাকে, এরপর সবাই ঠিকঠাক হয়ে বলল এবার চোখ খোলো এবার মিষ্টি চেয়ে যা দেখলো সত্যিই তার কাছে অবিশ্বাস্য মনে হচ্ছে তার বাড়ির ছাদ চারপাশে লাইটিং করা আর তার সামনে একটা টেবিলে কেক নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে তার মা-বাবা, আর পাশে সব বন্ধুরা আর মিষ্টির খুব শখ ফানুশ উড়ানো মিষ্টি তার পাশে দেখতে পেলো তার ছোট ভাইটা ফানুশ নিয়ে দাঁড়িয়ে তার কাছে এসে বলল আপু তোমার না ফানুশ উড়ানো অনেক ইচ্ছা এ নাও এটা তুমি উড়িয়ে দাও, মিষ্টি আর তার ছোট ভাই ফানুশ উড়িয়ে দেবার সাথে সাথে তার বন্ধুরা তিনটা আতশ বাজি ফুটাল, এরপর মিষ্টি মা-বাবার সাথে কেক কাটে এরপর এভাবেই সবাই খুব ইনজয় করল, সব শেষে মিষ্টি বন্ধুদের কি বলবে তা বলার ভাষা হারিয়ে ফেলছে, সে কান্না শুরু করছে, কান্না করছে সবাই বলল এভাবে কাঁদিস না তো,
–তোরা আমাকে এতো ভালবাসিস আর আমি?? সত্যিই এটাই আমার জীবন সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ মুহূর্ত, কখনই ভুলবো না, নিশ্বাস যতদিন আছে এই মুহূর্তগুলো ঠিক ততদিন আমার মধ্য বেঁচে থাকবে,
রিফাতের সাথে ব্রেকআপের পর ভেবেছিলাম জীবন টা বুঝি শেষ ওরে ছাঁরা বাঁচব না, কিন্তু না একজন আমাকে শিখিয়েছে, না জীবনটা শেষ না বরং এখন থেকেই শুরু, তোদের সবাইকে সত্যিটা বলি জানিস রিফাতকে যতটা ভালবাসতাম এখন ঠিক তার চেয়ে হাজার গুণ ঘৃণা করি, তোদের মত বন্ধু থাকলে আর কিছু লাগে নাকি? এই একটা প্রশ্ন রয়ে গেলো, আজ যেসব মুহূর্ত পার করলাম এসব বুদ্ধি কে দিল.???
বৃষ্টি:- আয়োজন সবাই করছি, সাথে আন্টি- আঙ্কেল ও ছিল, কিন্তু সব কিছুর পরিকল্পনা করেছে একজন
মিষ্টিঃ- কে সে.??
মেহেদিঃ- বৃষ্টি আমি কিন্তু চলে যাব!”
বৃষ্টি:- যেতে দিলে তো.???
এই মিষ্টি তোর হাতে কিসের ডিজাইন .??
মিষ্টিঃ- হেঁসে কেনো দেখতে পাচ্ছিস না মেহেদি রাঙা, মিষ্টি কথাটা বলতেই সবাই খুব হাঁসলো ঐ দিকে কেবল মাত্র একজন লজ্জায় মুখ লাল করে আছে, মিটিমিটি হাঁসছে আর বলল মিষ্টি ওরা সবাই বানিয়ে বানিয়ে বলতেছে আমি কিছু করি নাই,
–থাক, আর বলতে হবে না, তোমায় ধন্যবাদ দিয়ে ছোট করব না, বন্ধু হয়ে সবসময় আমার পাশে এভাবে থাকবে তো??
মেহেদিঃ- হ্যাঁ, সবসময় বন্ধু হয়ে সবার সাথেই থাকব!!
এরপর থেকে ওরা সব বন্ধুরা মিলে ক্যাম্পাসে একসাথে আড্ডা দিত বিভিন্ন জায়গা ঘুরতে যেতো, মিষ্টির বেস্ট ফ্রেন্ড হয়ে উঠে মেহেদি, মাঝে মাঝে মিষ্টি আলাদা সময় পাড় করে মেহেদীর সাথে, বিভিন্ন ধরণের গল্পে মেতে উঠে!! ভালোই চলছে ওদের দিনগুলি ফেসবুকিং, ফোনে কথা বলা ক্যাম্পাসে আলাদা সময় পাড় করা!
,
একদিন ওরা ক্যাম্পাসের পুকুর পাড়ে বসে গল্প করছিল পরিবেশটা দারুণ চারপাশের গাছগাছালি এর সামনে পুকুর পেছনে কলেজ বেশ সুন্দর জায়গা!!
–মেহেদি তুমার লাভার নেই কেনো??
–কে বলেছে নেই
–আছে? কয় বলো নাই তো!
–আমিই তাকে ভালবাসি সে বাসে কিনা জানি না
–তার মানে তাকে ভালো লাগার কথা বলো নাই??
–কি করে বলব? যাকে ভালবাসি তাকে সে কথা বলার চেয়ে এখন তাকে হারানোর ভয় বেশি পায়!!
–সাহস নিয়ে বলে দিবা!
–সত্যি বলে দিব??
–মনের কথা মনের মধ্য রাখলে কষ্ট বাড়ে তাই চেপে রাখার চেয়ে বলে দেয়ায় ভালো!!
–যদি আমার সে পছন্দের মানুষটিকে মনের কথাটা বলি তুমি খুঁশি হবে??
–অবশ্যই খুঁশি হব!!
–মিষ্টি, আমি এ কলেজে ভর্তী হয় নি, আমি ঢাকা ভার্সিটিতেই পড়ি সাথে একটা জবও করি, যদিও জব না করলেও চলে তবে আমি নিজে কিছু করতে চাই এজন্য জব করি, এখানে আচ্ছি বিশেষ একটা উদ্দেশ্য, হয়তো দিন ১৫ দিন পর চলে যাব!!
–মিষ্টি হেঁসে বলল উদ্দেশ্য নিয়ে আচ্ছিলে??
–বৃষ্টির মুখে তোমার গল্পটা শুনি, বৃষ্টি আমাকে বলেছিল, তারপর ভাবলাম তোমার মন থেকে রিফাতের নাম দূর করতে হবে এজন্যই তোমার কাছে এঁসেছি!!
–মিষ্টি আবার হেঁসে বলল আর কোনো উদ্দেশ্য নেই??
–আছে
–কি সেটা??
–এক মিষ্টি পরীর মিষ্টি হাঁসির ছবি দেখে অল্প অল্প প্রেমে পড়েছি, তারপর একসাথে বেশ মুহূর্ত পাড় করে এখন তাকে খুব ভালবেসেছি আমি যে মিষ্টির কথা বলছি সে তুমি! ভালবাসি তোমাকে, তাই তোমার কাছে এঁসেছি!! আর এটাই সত্য!!
–তুমি যে এ উদ্দেশ্য নিয়ে আমার কাছে আচ্ছো সেটা আমার বার্থডের পর দিন বৃষ্টি আমাকে বলেছে, আমিও তোমাকে অল্প অল্প ভালবাসতে শুরু করেছি তাই ওদের থেকে তোমাকে বশি সময় দেয়, এখন তোমার কাছাকাছি থাকছি কারণ অল্প থেকে বেশি বেশি ভালবাসার জন্য!!
,
………………………………………………….. সমাপ্তি………………………………………………….