মেয়েটার সাথে দেখা হয় রাস্তায়। হঠাৎ পিছন থেকে এসে বলল…
-এখানে চটপটির দোকান কোনটা??
আমি মেয়েটাকে বললাম…
-ডানে গিয়ে বামে মোড় নিবেন। তারপর সোজা গিয়ে তিনটা রাস্তা দেখবেন। আপনি বাম পাশের রাস্তা ধরে একটু এগিয়ে যাবেন। তারপর নাক বরাবর একটা দোকান দেখবেন। সেখানে লিখা আছে কিরণমালা চটপটি। ব্রেকেটে লিখা আছে (পার্সেল করা হয়।)
-হইছে হইছে। আপনি আমাকে এভাবে না বলে একটু এগিয়ে দিয়ে আসুন তো।
আমি অবাক দৃষ্টিতে তাকালাম মেয়েটার দিকে। মেয়েটা আমার তাকানো দেখে বলল…
-সরি। আপনি মনে হয় যেতে পারবেন না। সরি।আমিই যেতে পারবো।
বুঝলাম মেয়েটা লজ্জিত হয়েছে। মাথাটা নিচু করে মেয়েটা গুনগুন করতে করতে আর হাত নাড়তে নাড়তে হাঁটতে শুরু করলো। মেয়েটা আমার বলা কথা গুলো স্মরণ করতে চেষ্টা করছে। আমি পিছন থেকে মেয়েটাকে ডেকে বললাম…
-শুনুন।
-জ্বী।
-দাঁড়ান। আমি যাবো।
বলেই হাটা দিলাম।
আমি মেয়েটাকে চটপটি দোকানটা পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে আসলাম। এই মুহুর্তে দাঁড়িয়ে আছি পাখির মোড়ের কিরণমালা চটপটি দোকানের সামনে। দোকানটার নাম যদি কিরণমালা নাটকের পরিচালক দেখতে পারতো তাহলে নিশ্চয়ই ঐ নাটকে দোকানটার মালিককে একটা সুযোগ দিতো। হতে পারে সেটা রাক্ষসীদের খাবার তৈরীর চরিত্র। কিন্তু আমার মস্তিষ্ক বার বার জানতে চাচ্ছে রাক্ষসীরা কি চটপটি খায়?? যদি কখনো কোনো রাক্ষসীর সাথে দেখা হয় তাহলে এই গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নটা করবো।
মেয়েটা কিরণমালা চটপটি দোকানটা থেকে চলে আসছে কিন্তু কিভাবে যেন বার বার পিছন ফিরে তাকাচ্ছে। আমি কেন জানি গোয়েন্দার মতো মেয়েটার পিছন পিছন গেলাম।। তারপর দেখলাম মেয়েটা একটু দূরে গিয়ে আবারো চটপটির দোকানটার দিকে তাকালো। মুখে একরকম তৃপ্তির হাসি। তারপর আমি পিছন থেকে বললাম…
-বার বার কেন তাকাচ্ছেন ওদিকে?? কোনো সমস্যা?
মেয়েটা চমকে গেল আমার কথা শুনে। তারপর বলল…
-আপনি যাননি এখনো??
কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললাম..
-না। এখানেই ছিলাম।
-না আসলে একটা লোক বার বার আমার দিকে তাকাচ্ছিলো দোকানটাতে। এখানে আসার পরও লোকটা তাকিয়ে আছে।
-কোন লোকটা??
-ঐ যে গোফওয়ালা লোকটা।
আমি ভাল করে খেয়াল করে দেখলাম লোকটা আমার পরিচিত একজন। আমার মামার থানার হাবিলদার সাহেব। মামার থানা বলাটা ভুল হবে। থানা সরকারি কার্যালয়। মামা সেখানকার চাকর মাত্র। চাকর বলাটা ভুল নয়। কারণ যারা চাকরী করে তারা চাকরই। তবে মামা উচ্চপদস্থ চাকর। মানে ওসি সাহেব।
আমি মেয়েটাকে আশ্বস্ত করে চলে যেতে বললাম। হাবিলদার মেয়েটার দিকে কেন তাকাচ্ছিলো সেটা জানি। হাবিলদার আমাকে ফলো করছে আজকাল। আমার সাথে মেয়েটাকে দেখেই মেয়েটার দিকে এভাবে তাকাচ্ছিলো। আর এসব কিছুর মূলহোতা হলেন আমার মামা।
.
একলা একলা হাটছিলাম রাস্তায়। হঠাৎ হাবিলদার সাহেব পুলিশের গাড়িতে চড়ে আমার সামনে এসে থামালেন। আমাকে বলল…
-পিছনে উঠে বসো। থানায় কাজ আছে।
-কি কাজ??
-সেখানে গেলেই দেখতে পারবে। উঠো।
আমি চুপচাপ গাড়িতে উঠে বসলাম। আমার বিপরীত পাশে একটা মহিলা পুলিশ বসে আছে আর সাথে একটা মেয়ে। মেয়েটার মুখ দেখতে পারছি না। মেয়েটা লম্বা ঘোমটা দিয়ে আছে। কিন্তু একটা কান্নার আওয়াজ আসছে। যেটাকে ছিঁচকাঁদুনে বলা হয়। আমি মহিলা পুলিশের দিকে তাকিয়ে ইশারায় বললাম…
-কিসের আসামী??
উনি বললেন…
-মাদকদ্রব্যের সাথে ধরেছি।
আমি ওনাকে কথাটা ইশারায় জিজ্ঞাস করলেও উনি কিন্তু ইশারায় উত্তর দেননি। মেয়েটাকে শুনিয়েই বলল। আর সেই কথাটা শুনে মেয়েটা লম্বা ঘোমটা তুলে কান্না করতে করতে বলল…
-সব মিথ্যা কথা। আমার কাছে এসব কিছু ছিলো না। ভার্সিটি যাওয়ার পথ থেকে আমাকে ধরে নিয়ে আসা হয়েছে।
আমি মেয়েটার কথাটার থেকে মেয়েটার মুখ দেখে বেশি আশ্চর্য হয়েছি। আমি মনে করতে পারছি না কোথায় দেখেছি ওনাকে। মনে পরছে না। হঠাৎ মনে হলো উনি সেই কিরণমালা চটপটির কাস্টমার। আমি মেয়েটাকে বললাম…
-আপনি সেই কিরণমালা না??
মেয়েটা কান্না থামিয়ে ধমক দিয়ে বলল…
-আমি ইলমা।
-ওহ। সরি সরি।আপনার সাথেই তো সেদিন দেখা হয়েছিলো তাই না?
বলেই হাসতে শুরু করলাম। এই মুহুর্তে হাসাটা ঠিক হয়েছে কি না জানি না। তবে মেয়েটা যে আমার হাসিতে বিরক্ত হয়েছে সেটা বুঝতে পারছি। তবে আমাদের কার্যকলাপ বেশ মনোযোগ দিয়ে মহিলা পুলিশটা দেখছে। উনার কাছে আমাদের ব্যাপারটা উপভোগ্য নাকি বিরক্তিকর সেটা বুঝে উঠতে পারছি না। এবার ইলমা কান্না করতে করতে আমাকে বলল…
-আপনি এখানে কেন??
-আমি তো এটা দিয়ে প্রায়ই যাওয়া আসা করি। কান্না করবেন না। আপনার কিছু হবে না।
-আমি আমার খালার বাসায় আসছি কিছুদিন হলো।এখানে থেকে ভার্সিটিতে পড়ি। কিছু চিনিনা জানিনা। যদি ওনাদের কানে যায় পুলিশ আমাকে ধরে এনেছে তাহলে আমি কিভাবে মুখ দেখাবো? আমার মরণ ছাড়া আর কোনো উপায় থাকবেনা।
বলেই মেয়েটার কান্না বেড়ে গেলো। আমি বললাম…
-শুনুন। আপনার কোনো সমস্যা হবে না। আমি আছি তো।
-কি করবেন আপনি?? কি করতে পারবেন??
-আপনি চুপ করেন তাহলে সব ঠিক করবো।
.
মামা আমার সামনে বসে আছে। আমি মামাকে বললাম…
-কি জন্য ওকে ধরেছেন?
মামা কিছুই বলল না।
মামা পকেট থেকে ফোনটা বের করে কানে দিয়ে বলতে শুরু করলেন…
-কোনো কথা নয়। ডিরেক্টলি ইনকাউন্টার করে ফেলো। আমি পার্মিশন দিলাম।
কথাটা বলার সাথে সাথে মামার কানের ফোনটা বেজে উঠলো। মামা হকচকিয়ে গেলেন। কারণ মামার মিথ্যা ফোনের কথোপকথন আমার কাছে প্রকাশ হয়ে গেল। আমার হাসতে ইচ্ছা করছে। কিন্তু হাসতে পারছি না। মামা ফোনে হ্যালো বলতে বলতে সামনে থেকে লজ্জায় চলে গেলেন।
আসলে মামার একটা অভ্যাস আছে। সেটা হলো মামা সব সময় মানুষের সামনে বড় বড় কথা বলেন। বিশেষ করে উনি উনার ক্ষমতার কথা সবার কাছে বলে বেড়ান। আর বলে বেড়ানোর একটা বিশেষ পদ্ধতি উনি ব্যবহার করেন। সেটা হলো উনি মানুষের সামনে শুধুশুধু ফোন কানে দিয়ে নানা রকম কথা বলেন। যেটা উনার ক্ষমতার বাইরে।
আমি মামাকে ডেকে আবার বললাম…
-ওকে কেন ধরে এনেছেন??
-ওর সাথে মাদকদ্রব্য পাওয়া গেছে।
-আমি জানি আপনি কেন এরকম করছেন। তবে এটা কি ভাল হচ্ছে মামা??
মামা উনার চেয়ার থেকে উঠে জানালার সামনে গিয়ে দাড়ালেন। তারপর বললেন…
-কে হয় তোর??
-ও আমার কেউ না। একদিন রাস্তায় কথা হয়েছিলো শুধু।
-মিথ্যা বলবি না। হাবিলদার আমাকে সব বলেছে।
-কি বলছে??
-তুই ওর সাথে হাত ধরে হেঁটে চটপটি দোকানে নিয়ে গেছিস। তারপর একে অপরকে খাইয়ে দিয়েছিস।প্রেম চলছে তাই না??
আমি মামাকে আর কিছু না বলে ইফাকে কল দিলাম।
ইফা আমার ফোন পেয়ে খুব উত্তেজনাপূর্ণ হয়ে বলল…
-কেমন আছো?
কেমন আছো এর উত্তর না দিয়ে আমি বললাম…
-তোমার বাবা আমার এক ফ্রেন্ডকে শুধু শুধু তুলে এনেছে।
ইফা বুঝতে পেরেছে আমি ওর সাথে মিষ্টি মিষ্টি কথা বলতে কল দেইনি। তাই ও একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল…
-ছেলে না মেয়ে??
-মেয়ে।
-আচ্ছা বাবাকে ফোনটা দেও।
আমি মামার কাছে ফোনটা দিলাম। মামা কি যেন বলে ফোনটা আমার হাতে দিয়ে বলল…
-ওকে নিয়ে যা। তবুও শুনে রাখ বিয়েটা আমার মেয়েকেই করতে হবে।
.
থানা থেকে বের হয়ে আমি আর ইলমা হাটছি। কেউ কিছু বলছি না। ইলমাই তারপর বলল…
-অনেক ধন্যবাদ আপনাকে। আপনি না থাকলে যে কি হতো!
ইলমার কথাটা শুনে বললাম…
-ওরা আমার কারণেই আপনাকে ধরেছে।
-আপনার কারণে কেন?
-ওসি সাহেব আমার মামা। আর ওনার মেয়ের নাম ইফা। উনার পরিবার আর আমার পরিবার চায় আমি ইফাকেই বিয়েটা করি। কিন্তু আমি ইফাকে ওরকম দৃষ্টিতে দেখিনি কখনো। আর মামা তাই আমার পিছনে গোয়েন্দা লাগিয়ে দিয়েছে। সেদিন হাবিলদার আপনাকে আমার সাথে দেখে মামাকে আবোলতাবোল বুঝিয়েছে। আর সেজন্যই আজ আপনাকে ধরে এনেছে।
-হাহাহা।
মেয়েটা আমার কথাশুনে হাসছে। খুব হাসছে। মানুষ কি অদ্ভুত। একটু আগে কান্না করতে করতে মেঘনা নদীর পানি বাড়িয়ে ফেলছিলো। আর এখন হাসতে হাসতে সব ভুলে যাচ্ছে।
-আপনি বিয়েটা করেই ফেলুন।
ইলমার কথাটা শুনেও না শোনার ভান করে বললাম…
-আজ খুব রোদ। চৈত্রের দুপুর।
-হুম।
-রবি ঠাকুরের মতে এটা দিনের সবচেয়ে সুন্দর সময় ও প্রাকৃতিক দৃশ্য। এখন উনি হলে একটা রোমান্টিক অথবা প্রকৃতির সৌন্দর্যের কবিতা লিখে ফেলতো। কিন্তু আমি লিখবো নজরুলের মতো বিদ্রোহী কবিতা।
-নজরুল তো শোষকদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহী কবিতা লিখতো।
-হুম। এখন আমার শোষক হলো সূর্য। আমার শরীরের সব শক্তি শুষে নিচ্ছে। আমিও লিখবো সূর্যের বিরুদ্ধে বিদ্রোহী কবিতা।
মেয়েটা আবারো হাসছে। মনে হয় মেয়েটা ছোটবেলায় স্কুলের এসেম্বলি ক্লাসে হাত সামনে বাড়িয়ে শপথে বলতো…
-হে প্রভু আমাকে শক্তি দিন আমি যেন প্রতিদিন কারণে অকারণে হাসতে পারি। আমিন আমিন আমিন।
.
-আমি আমার বাসায় চলে আসছি। আপনি কোথায় থাকেন??
-এই তো সামনেই। আচ্ছা তাহলে যান। আর আমার জন্য আপনাকে অনেক অসুবিধায় পরতে হলো। সেজন্য আমি দুঃখিত।
এটা বলেই আমি পাঁচ কদম যেতেই ইলমা ডেকে বলল…
-আপনার ফোন নাম্বারটা নিতে পারি??
-আপনার সাথে আমার কয়বার দেখা হলো??
-দুইবার।
-কোনো ফোন নাম্বার দরকার পরেছে??
-না তো।
-তাহলে ধরেই নিন আপনার সাথে আমার তৃতীয় বার দেখা হবে।
মেয়েটা আর কিছুই বলল না। হাসছে। মেয়েটার হাসিরোগ আছে মনে হয়।
আমি মেয়েটার হাসি থামিয়ে বললাম…
-নাম্বার লাগবেই??
-আপনার সমস্যা না থাকলে হুম লাগবেই।
-আচ্ছা লিখুন।
মেয়েটা আমার ন্মবার লিখে ধন্যবাদ দিয়ে চলে যেতে চাইলো। আমি বললাম..
-আসলে আমার স্মৃতিশক্তি খুবই দুর্বল। আপনি আমাকে কল দিয়ে যখন বলবো কে?? তখন আপনি বলবেন…
“আমি ইলমা। ঐযে আপনার বজ্জাত মামা আমাকে ধরে নিয়ে গিয়েছিলো!!”
ইলমা কথাটা শুনে হাসতে হাসতে প্রায় পরেই যাচ্ছিলো। ওর হাসিটা কিন্তু একটা ভালবাসার উপন্যাস লিখার জন্য যথেষ্ট।
.
.
রাতে বসে বসে তশিও মারওইয়ামার বেঁচে থাকার নীতিবাক্য বইটা পড়তেছিলাম। উনি জাপানের একজন ইতিহাসবিদ ছিলেন। তার একটা নীতিবাক্য হলো “স্বামী স্ত্রী পরস্পর একে অপরের বিপরীতে স্থাপিত একজোড়া আয়না স্বরুপ।”
স্বামী স্ত্রী তাই নিজেদের ভুল নিজেদের মধ্যে ঘুচিয়ে ফেলা উচিত। কিন্তু আমাদের দেশে সেই আয়নাকে মেয়েরা সাজগোজ করার কাজে ব্যবহার করে, ভুল শুধরানোর জন্য নয়।
হঠাৎ মামা কল দিলেন। আমি মামার সাথে রসিকতা করার জন্য বললাম…
-হ্যালো। ওসি সাহেবের ভাগিনা স্পিকিং।
-তোকে রিমান্ডে নিয়ে লাঠিপেটা করবো হতচ্ছাড়া। তুই ঐ মেয়েকে আমার নাম্বার দিয়েছিস কেন??
-আসলে মেয়েটা যখনি সমস্যায় পরে তখনি আমার সাথে দেখা হয়। তাই ভাবলাম আপনি সরকারের লোক, জনগণের সেবা করার জন্য আপনাকেই দরকার তাই আপনার নাম্বার দিয়ে দিলাম।
-তুই জানিস মেয়েটা আমাকে বজ্জাত বলেছে??
-এটাতো খুবই খারাপ। আমি বকে দিবো মামা।
মামা রাগে ফোনটা রেখে দিলো। আমি জোরে হাসতে শুরু করলাম। তারপর আম্মু এসে বলল…
-একলা একলা হাসছিস কেন??
-খিদা লেগেছে তাই।
-খিদা লাগলে মানুষ হাসে??
-না কান্না করে। এখন তো আমি বাচ্চা নই তাই হেসেই তোমাকে বিরক্ত করছি।
আম্মু হেসে বলল…
-ইফা তোকে বিয়ে করবে না।
-কেন??
-তোর আশায় বসে থাকলে মেয়ের কপালে বিয়েই থাকবেনা।
-হুম।। বুদ্ধিমতী মেয়ে।
-ইলমা মেয়েটাকেই তাহলে বিয়ে করছিস??
-কোন ইলমা??
-তোর মামা আমাকে কল দিয়েছিলো।
-কি বলেছে??
-তুই নাকি মেয়েটার সাথে চটপটি খেতে যাস ইদানীং। এটা কি সত্যি??
-যদি ঠিক এই কথাটার জন্য ইফা আমাকে বিয়ে করতে না চায় তাহলে সত্যি।
-তোর মামার কাছ থেকে ইলমার নাম্বারটা নিয়েছি।
-তাই নাকি?? দাও তো আমাকে।
-না। আগে খেতে আয়। তারপর নিস।
.
.
-হ্যালো।
-জ্বী কে বলছেন??
-বজ্জাত ওসি সাহেবের ভাগিনা।
-হাহাহা। আপনি অবশেষে কল দিলেন আমাকে??
-হুম দিলাম। নাম্বারটা আম্মু দিলো।
-আপনার আম্মু আমার নাম্বার কই পেলো??
-সেটা এক বিরাট ইতিহাস। অন্য একদিন বলবো।
-ওহ আচ্ছা। কাল আপনার সাথে দেখা করবো।
-কেন বলুন তো??
-শুনেছি এখানকার একটা দোকানে খুব ভাল মিষ্টি পাওয়া যায়। সেখানে নিয়ে যাবেন??
-আমি তাহলে আপনার হাটন্ত ড্রাইভার হয়ে গেলাম।
-হাটন্ত ড্রাইভার মানে??
-আমি তো আপনাকে হাটিয়েই মিষ্টির দোকানে নিয়ে যাবো। যদি গাড়ি থাকতো তাহলে গাড়ির ড্রাইভার হতাম।
-আপনি খুব ইন্টারেস্টিং একটা মানুষ।
.
ইলমার সাথে এভাবেই ঘনিষ্ঠতা বেড়ে গেলো আমার।আপনি থেকে তুমিতেও নেমেছি। আজকাল ওর সাথে দেখা না হলে বেশ খারাপ লাগে,কথা না বললে খারাপ লাগে। চিনচিন ব্যথা হয়। কিন্তু এক সময় এই আমিই বাংলা মুভির এরকম ডায়লগ শুনে হাসতাম। ইলমা কাল আমাকে দেখা করতে বলেছে। মেয়েটা আজকাল আমাকে খুব দৌড়ের উপর রাখে। কিছু কিছু বিরক্তিমূলক সুখ আছে। ও আমাকে বিরক্ত করলেও সুখ পাই। কি জানে হয়তো এটা সেই চিনচিন ব্যথার সাইড এফেক্ট।
.
-আচ্ছা রাতে ঘুমানোর আগে তুমি কার কথা ভাবো??
আমি ওর কথাটা শুনে চুপ করে রইলাম। কিছু কিছু সময় সত্য উত্তর দেওয়াটা মহাপাপ হয়ে যায়। তাই বললাম..
-টিকটিকির কথা।
-মানে??
-আমি ঘুমানোর আগে তাকিয়ে সব সময় একটা টিকটিকি দেখি। তাই অনেক্ষণ এটা নিয়েই ভাবি।
-ধ্যাত। আমি বলতেছি কাউকে মনে পরেনা? বিশেষ কেউ??
–না তো। বিশেষ কারো কথা রাতে ঘুমানোর আগে মনে পরবে কেন?? সারাক্ষণই মনের মধ্যে থাকে।
-কে সে জানতে পারি??
-আমার মনে নেই। তবে আমার আম্মুর মনে আছে।
ও কথাটা শুনে রাগী দৃষ্টিতে তাকালো আমার দিকে। আমি বললাম…
-সব মেয়েদের রাগলে সুন্দরী লাগতে হবে এমন কোনো কথা নেই। তোমাকে পেত্নী লাগে।
কথাটা শুনে ও হেসে উঠলো। ওর হাসিটা দেখে বললাম…
-তবে হাসলে তোমাকে ভালই লাগে।
ইলমা লজ্জায় অন্যদিকে তাকালো।
.
সকালে হাটা স্বাস্থ্যের জন্য বেশ ভাল। তবে আমি হাটি দুপুর বেলা। সকালে ঘুমের সাথে লড়াই করার অভ্যাস আমার নেই। আমি দুপুরবেলা হাটার সময় হঠাৎ মামা আমাকে কল দিলো। আমি ফোন রিসিভ করার পর উনি বললেন…
-ইলমাকে আজ ধরে নিয়ে যাচ্ছি।
-কেন?
-ওর কাছে এবার সত্যি সত্যি মাদকদ্রব্য পাওয়া গেছে।
-কই আপনি এখন??
-ওদের বাড়িতে।
-আচ্ছা আমি আসতেছি।
.
আমি ইলমাদের বাড়িতে গিয়ে বেশ অবাক হলাম। ইলমাকে ধরতে পুলিশ ফোর্স আসবে। কিন্তু এখানে আমার পুরো পরিবার এসেছে। আমার পরিবারের সবাই কি তাহলে পুলিশে যোগদান করলো??
আমাকে দেখে মামা এগিয়ে এসে বলল…
-ওনারা ইলমার বাবা মা। গ্রাম থেকে এসেছে। ওনারাও এর সাথে জড়িত।
-মামা ওনাদের কাছ থেকে কিছু টাকা নিয়ে ছেড়ে দিন। লাভ হবে। মামী খুশি হবে।
মামা আমার কথা শুনে একটা ধমক দিলেন। আমি জানি মামা ঘুষ খান না।উনি বললেন…
-তুই ও এইসবের সাথে জড়িত।
-জানতাম এটাই বলবেন।
-বেশি কথা না বলে রেডি হয়েনে।
.
-মামা কিন্তু বজ্জাত হলেও খুব ভাল মানুষ।
-মামা তোমাকে ঘুষ দিয়েছে??
-না। উনি থাকায় আজ আমাদের বিয়েটা হলো।
-তুমি আগে বললে আরো আগেই করতাম।
-আমি কেন বলবো?? আমি ভয়ে বলিনি।
– সেই দিক থেকে তাহলে ভালই হলো। আমিও ভয়ে বলতাম না। মামার কারণেই হলো। উনাকে কাল পাঁচটাকা ঘুষ দিবো।
-পাঁচটাকা কেন??
-ঘুষ দেখিয়ে দিতে হয়না। মুঠো করে হাতে ধরিয়ে দিতে হয়। আর দেওয়ার সময় বলতে হয় “চা খাওয়ার টাকা দিলাম।” সবাই চায়ের সমপরিমাণ দেয় না। অনেক বাড়িয়েই দেয়। তবে আমি মামার সাথে মিথ্যা বলবো না। চায়ের সমপরিমাণ টাকাই দিবো।
-তুমিও না।
-চলো দুজন মিলে শপথ গ্রহন করি।
-শপথ কেন??
– ক্লাস শুরুর আগে শপথ নেও তাহলে বিবাহিত জীবনের আগে কেন নিবে না??
-আচ্ছা তুমি বলো। আমিও সাথে সাথে বলি।
“হে প্রভু আমাদের শক্তি দিন। আমরা যেন আজীবন একে অপরের আয়না হয়ে থাকতে পারি। দুজন দুজনকে আগলে রাখতে পারি। আমিন আমিন আমিন।”
গল্পের বিষয়:
রোমান্টিক