বৃষ্টি ভেজা ভালোবাসা -২

বৃষ্টি ভেজা ভালোবাসা -২

–এই যে শুনুন?

—জ্বী আমাকে বলছেন?

—প্রতিদিন তো আপনিই ফলো করেন আমাকে,তাহলে নিশ্চয়ই আপনাকেই বলছি।

[আমি একটু অবাক হয়ে আমতা আমতা করতে লাগলাম]

—না মানে ইয়ে,,আসলে,,,

—থাক আর ইয়ে মানে করা লাগবে না।ছাতাটা ধরুন।

—মানে?

—মানে বুঝেন না,বৃষ্টি পড়ছে ছাতাটা ধরুন,দেখছেন না আমি ছাতা নিয়ে আসেনি।

[আমি বুঝতেই পারছি না,মেয়েটা সব কীভাবে বুঝে গেলো]

—এত বড় ছাতা, তাও আবার ফুটো?

—আসলে অনেকদিন ব্যবহার করা হয় নাতো তাই।

—হুমম,,তা বৃষ্টির দিনেও আমাকে ফলো করতে আসতে হলো কেনো?আজকে একটু বিশ্রাম নিতে পারতেন।

—না মানে, তোমাকে মানে আপনাকে একদিন না দেখলে আমার মনের মধ্যে শূন্যতা বিরাজ করে,তাই,,,,?

—থাক হইছে হইছে, আর পাম দিতে হবে না,সব ছেলেদের চেনা আছে।

—আমি সবার মত না।

—সবাই একই কথা বলে,আমি সবার মত না।আর হ্যা আপনাকে আর যাওয়া লাগবে না,সামনেই আমার বাসা,এতটুকু আমি একাই যাবো।

—জ্বী ঠিকআছে।

—আর শুনুন আগামিকাল থেকে ছোট ছাতা নিয়ে আসবেন।

—মানে?

—মানে বোঝা লাগবে না।যেটা বলছি সেটা করবেন।
.
>কথাটা বলেই রূপন্তী চলে গেলো।

এতক্ষন রূপন্তীর সাথেই একই ছাতার মধ্যে হাটছিলাম।আমার বিশ্বাসই হচ্ছে না যাকে এতদিন ফলো করছি সে হঠাৎ-ই আমাকে এভাবে অবাক করে দিবে।

যখন হাটছিলাম তখন রূপন্তীর শরীর থেকে মাতাল করা ঘ্রান বের হচ্ছিলো।যেটা হাজার পারফিউম কেউ হার মানাই।

>আর আমি মাহিন, বাবা-মার একমাত্র ছেলে।বাবার বিরাট বড় ব্যবসা আছে তাই আর নিজের কোন চিন্তা নেই।তবে এলাকায় মাঝে মধ্যে দাদাগিরি

করি,সেই সুবাদে কিছুটা পরিচিতিও আছে। আর ঠিক একদিন –

—দোস্ত সিগারেটটা ধরিয়ে দে তো?

—এই নে টানতে থাক।

—কিরে আজকে তো কাউকে দেখতে পাচ্ছি না।সব মেয়েরা কোন পথ দিয়ে যাচ্ছে এখন।

—আমাদের ভয়তে মনে হয় অন্য পথ ধরেছে।

[ঠিক এমন সময় একটা ছেলে এসে বলল]

–ভাইয়ারা আপনারা এখানে দাড়িয়ে ডিস্ট্রার্ব করেন এটা কী ঠিক বলেন।

—এই কে রে তুই আমাদের জ্ঞান দিতে আসছি।

>তারপরেই আমরা সবাই মিলে ছেলেটা কে মারতে লাগলাম,কিন্তু এমন সময় পাশ দিয়ে একটা মেয়ে গেলো,সেখান থেকেই দাদাগিরি করার সময় পাই

না,ফলো করতে করতেই সময় শেষ।
.
পরের দিন….

—ছাতাটা মনে হচ্ছে নতুন কিনেছেন? (রূপন্তী)

—না আসলে, হুমম। (আমি)

—তা আমাকে ফলো করেন কেনো?

—সত্যি বলতে ভালবাসি।

–কতজন কে ভালবাসেন?

—মানে,আমি শুধু তোমাকেই মানে আপনাকেই বাসি।

–তো যারা এলাকায় দাদাগিরি করে, মেয়েদের বিরক্ত করে তেমন ছেলে আমার পছন্দ না।

—আমি সব কমিয়ে দিয়েছি।ঐসব আর তেমন করি না।

—কমালে হবে না,একদম ছেড়ে দিতে হবে।

—আচ্ছা ছেড়ে দিবো,তোমার জন্য মানে আপনার জন্য সব ছেড়ে দিবো।

—ঠিকআছে তুমি করে বলতে পারেন।

কিন্তু আপনার বন্ধুরা তো করে তাদের নিষেধ করে দিবেন।

–হুমম,মাথা নেড়ে হা সূচক জবাব দিলাম।

>কথাটা বলেই রূপন্তী আমার ছাতাটা নিয়ে চলে গেলো।এতক্ষন লেকের পাশেই দুজনে এক ছাতার মধ্যে দাড়িয়ে কথা বলছিলাম।আমার নিজেরই বিশ্বাস

হয় না আমি দাদাগিরি করেছি,কারন এই মেয়ের সামনে আসলেই কেমন নিজেকে বিড়াল মনে হয়।
.
>তারপর থেকে বন্ধুদেরও বলে দিলাম যাতে এমন দাদাগিরি না করে।আমার এমন পরিবর্তন দেখে আমার বাবা-মাও আমাকে চিনতে পারে না।সব কী যে

ভাবে আমাকে বুঝতেছি না।রূপন্তী কে প্রথম দেখায় ভাল লেগে গেছিলো,

তারপর ভাল লাগা থেকেই ভালবাসা।
.
—কী ব্যাপার বলে ছিলাম না তাড়াতাড়ি আসতে? (রূপন্তী)

—আসলে রাস্তায় অনেক জ্যাম ছিলো তাই….? (আমি)

—হইছে হইছে আর বলা লাগবে না।

—রূপন্তী তুমি আমাকে ভালবাসো?

—হঠাৎ এই প্রশ্ন।

—না আসলে আমি তো বলেছি কিন্তু তুমি তো মুখ ফুটে কিছু বলোনি তাই শুনতে চাচ্ছিলাম আর কী।

—সময় হলেই সব জানতে পারবেন।

—আমাকে তুমি করে বলতে পারো না।

—না পারি না।

—তাহলে আমিও আপনি করে বলবো।

–একদম খুন করে ফেলবো।

—কেনো?

—আমি আপনি করেই বলবো,আর আপনি আমাকে তুমি করেই।

[রূপন্তীর কথার কোন আগা মাথায় বুঝতেছি না।ঠিক ভালবাসে কিনা সেটাও বুঝতে পারছি না]

—এই যে কী ভাবছেন।

—নাহ কিছু না।

—শোনেন আগামিকাল থেকে আপনার বাবার ব্যবসা দেখাশোনা করবেন।

—আমি ব্যবসা,,,?

—জ্বী আপনিই ব্যবসা,না হলে আর দেখা করব না।

—না,না,না,,তো

মার কথাই হবে।
.
>রূপন্তী চলে গেলো,অবশ্য আজ বৃষ্টি নেই। কিন্তু প্রতিদিন কোন একটা কাজ ধরিয়ে দিয়ে যাবে।কিভাবে যে বলব বাবা কে,কতদিন ধরে বলেছে তার ব্যবসা

দেখাশোনা করতে,কিন্তু সেই সব কথা তখন কানেই তুলিনি,কিন্তু আজ।বাড়ীতে গিয়েই—

—বাবা আমার একটা কথা ছিলো?

—হ্যা বল।

—আমি তোমার ব্যবসা দেখাশোনা করতে রাজি।

>কথাটা বাবা শোনার পরেই কেমন চোখ করে দেখছে।মনে হচ্ছে চোখ দুটো বেরিয়ে আসবে।

—তা হঠাৎ এমন মনোভাব কিভাবে হলো জানতে পারি।

—এমনিই তো,ভেবে দেখলাম আর কত ঘুরে বেড়াবো,তাই এই সিদ্ধান্ত নিলাম।
.
>বাবা আর কিছু বলল না।এরপর থেকেই বাবার ব্যবসা দেখছি এখন।কী আর করব রূপন্তীর ভালবাসা পাওয়ার জন্য সব কিছু করতে পারি।কিন্তু রূপন্তী

আমাকে ভালবাসে তো,সেটাই বুঝতে পারছি না। রূপন্তীর কথা ভাবতে ভাবতেই রূপন্তীর ফোন—

—এই যে মাহিন সাহেব আমার কথা বুঝি আর মনে নেই আপনার।

–কী যে বলো,তোমার কথায় ভাবছিলাম।

—আমার কথা ভাবলে ঠিকই খোজ নিতে।

—আসলে ব্যবসার কাজের অনেক চাপ তাই সুযোগ করে উঠতে পারিনি।

—হুম বুঝি তো,আর কিছুদিন পর তো ঠিকই ভুলে যাবেন।

—কখনোই না,যাকে ভালবাসি তাকে এতো সহজে ভুলি কী করে।

—জ্বী হইছে,আর শোনেন ঠিকমত নামাজ পড়বেন।

—আচ্ছা পড়বো তো।

—আর আপনি ভাল আছেন তো?

—হুমম,তুমি?

[আমি রূপন্তীর নিঃশ্বাসটা অনুভব করতে পারছি,অনুভুতি টা বোঝানোর মত না]

—হুমম,,এখন রাখছি আম্মু ডাকতেছে।আর আগামিকাল বিকাল পাঁচটাই দেখা করবেন কথা আছে।আর আসার সময় পাঞ্জাবি পড়ে আসবেন।

.
>কথাটা বলেই রূপন্তী ফোন কেটে দিলো।পাগলী একটা,এই পাগলী এটা এসেই আমার জীবন টা কেমন জানি বদলে দিলো।রূপন্তী আমার জীবনে না

আসলে আমার জীবনটা যে কেমন হতো,হয়তো অন্ধকারে চলে যেতো, হয়তো না।
.
রূপন্তী আর আমি পাশাপাশি একই ছাতার মধ্যে বসে আছি।একটা নীল রঙ্গের পাঞ্জাবি পড়ে আসছি।ঝিরিঝিরি বৃষ্টি পড়ছে।আর রূপন্তী স্বাভাবিক ভাবেই

যেভাবে বোরখা পড়ে থাকে ঠিক সেভাবেই আছে।দুজনেই চুপ এখন,কিন্তু কথাটা আমি শুরু করলাম-

—রূপন্তী তুমি আমাকে ভালবাসো?

—জানি না।

—সত্যি জানো না?

—তাও জানি না।চুপ করে বৃষ্টি দেখেন তো।

—সেটা তো দেখবো।কিন্তু কেনো ডেকেছো জানতে পারি?

—তোমাকে দেখতে খুব ইচ্ছা করছিলো তাই ডেকেছি।

[আমি ভাবছি এই মেয়েটা কে ঠিক বুঝতে পারছি না,সত্যি আমাকে ভালবাসে তো।]

—বলো না ভালবাসো কিনা?

—বললাম তো জানি না।

>আমি ছাতার মধ্য থেকে বের হয়ে দাড়িয়ে পড়লাম,চলে যাওয়ার উপক্রম,কিন্তু কেউ আমার হাতের একটা আঙ্গুল ধরে বলতে লাগল-

—-বাসা থেকে ছেলে দেখছে।কী করব আমি।

—কী,তুমি একবার বলো আমাকে ভালবাসো কিনা,বাকিটা আমি দেখছি।

[রূপন্তী ছাতার মধ্যে দাড়িয়ে, আর আমি ভিজছি ছাতার বাইরে দাড়িয়ে]

—গাধারাম সেই একই কথা আবার,তোমাকে ভাল না বাসলে কেনো তোমার সাথে দেখা করব?

কেনো তোমাকে শাসন করব?কেনো তোমাকে আমার মনের মত করে গুছিয়ে নিলাম।এসব বোঝনা তুমি,ভালবাসি তাই করেছি,সব কী মুখে বলতে হয়?হ্যা

ভালবাসি অনেক ভালবাসি।

[কথাগুলো একবাড়ে বলল রূপন্তী]

.
>আমি কিছু বললাম না,শুধু ছাতাটা উড়িয়ে দিয়ে চেচিয়ে বললাম,আমিও অনেক ভালবাসি,আগামিকাল বিয়ের প্রস্তাব যাবে তোমাদের বাড়ী।

—কীহহ,যদি বাসা থেকে না মানে?

—দাদাগিরি দেখিয়ে তুলে নিয়ে আসবো তাহলে।

>রূপন্তী আর কিছু বলল না,আমি আর রূপন্তী দুজনে দুজনার হাত ধরে বৃষ্টিতে ভিজছি,আর বৃষ্টিটা কে উপভোগ করছি।শুরু হলো আমাদের বৃষ্টি ভেজা

ভালবাসা।

গল্পের বিষয়:
রোমান্টিক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত