একটু সহানুভূতি আর একটু ভালোবাসা

একটু সহানুভূতি আর একটু ভালোবাসা

– মামা, একটু জোরে রিক্সা চালান।

– মামা আমি আর জোরে চালাতে পারবোনা।

– পারবি না মানে??দুপুরে ভাত খাস্ নি নাকি বেডা!!

– আপনি সামনে এসে রিক্সা চালান,আমি পিছনে গিয়ে বসি।

[ এখন শালা রিক্সাওয়ালারাও ভাব নিতে শিখে গেছে।কি যুগ আইলো রে!!]

– মামা একটু তাড়াতাড়ি করেন, আমার পরীক্ষা আছে।

– মামা আপনি টেনশন করবেন না।আমি জোরে চালাচ্ছি।

[বাব্বাহ! পরীক্ষার কথা শুনে দেখি মামা ভদ্র হয়ে গেল!]
______
এই দিক,ওই দিক করতেই দেখি মীমের ফোন।এই মাইয়া টা আমাকে জ্বালিয়ে খেলো! এ যাহ্ আজকে তো ৪ দিনের শেষ দিন।আমি আজকে কি বলব

মীমকে? ধুরর, পাগলী তুই বুঝিস না, আমি তোকে এক দেখাতেই আমার মনের মধ্যে জায়গা দিয়েছি।তাহলে,আমাকে কেনো তোর টাইম দিতে হবে!

– হারামি কই তুই?(মীম)

– এ মা আমি তো বাথরুমে।

– এ ছিঃ ছিঃ বাথরুমে কি করিস?

– বাথরুমে মানুষ কী করে?

– বাথরুমে ফোন নিয়ে গেছিস কেনো?

– আর বলিস না,ভুলে নিয়ে আসছি।

– কী বিশ্রী ব্যাপার!! কোচিং আসবি না।

– না রে।কেমনে যাবো?পেটের খুব সমস্যা দেখা দিছে!

– তাহলে,আমাকে যে ৪ দিন টাইম দিলি তার কী হবে??

– রাখ তোর টাইম!একটা মানুষের এই অবস্থা আর উনি টাইম নিয়ে আসছে!!

উফফফ,,,,,ফোনটা কেটে দিয়ে দেখি মামা রিক্সা থামিয়ে দিয়েছে।

– এই বেডা! রিক্সা থামালি কেনো?

– মামা আপনি আমার রিক্সাটাকে বাথরুম বানিয়ে ফেলনেন কেনো??

– বেডা এখন তো শুধু বাথরুম বানিয়ে ফেলছি। জোরে রিক্সা চালা নয়তো কিন্তু বড় কিছু বানিয়ে ফেলবো…

– মামা কী বিয়ে করছেন?

– ওই শালা,, আমাকে দেখে কি তোর তাই মনে হচ্ছে?

– হ মামা।

– কয় কী!! মামা আপনার কাজ টা ঠিক মতো করেন।

– কী কাজ মামা??

– বেডা! জোরে রিক্সা চালা,তুই তো আজ আমার পরীক্ষা মিস করাবি!

– মামা আপনি এতো কথা বলেন কেনো?

– বলি কী আর স্বাদে!! এর থেকে হেঁটে গেলেও আমি কোচিং এ আগে পৌঁছাতাম;

– তো হেঁটে যা না! কে নিষেধ করছে?

[ শালার চাপা ঠিক আছে]

রিক্সা কোচিং এর সামনে চলে এসেছে। রিক্সা থেকে নেমে মামাকে বললাম…..

– মামা ভাড়া কত?

– মামা ৩০ টাকা।

– এই নেনে ৫০ টাকা,পুরোটাই রাখেন।

– না মামা আমার বেশি লাগবে না।

– আরেহ্ রাখেন তো….

– মামা আপনার ফোন নাম্বার টা যদি দিতেন?

– কেনো নাম্বার দিয়ে কী করবেন?

– বাসায় ফেরার সময় আমি আপনাকে আবার নিয়ে যাবো,তাই।

[ কয় কী!!! তোর রিক্সায় আমি আবার যামু????]

– মামা কিছু বললেন??

– না কিছু না।ফোনটা দেন নাম্বার দিতেছি….

রিক্সাওয়ালা মামাকে নাম্বার টা দিয়ে, দিলাম এক দৌড়।দৌড়ে একদম কোচিং এর গেইটের সামনে চলে এসেছি। কোচিং এর মধ্যে ঢুকতেই,, আহা কী ঠান্ডা!!

এসির বাতাস! কোন দোজখে ছিলাম এতোক্ষণ!! সিড়ি দিয়ে জোরে জোরে উপরে উঠছিলাম,পরীক্ষা তো মনে হয় শুরু হয়ে গেছে!

দ্বিতীয় তালায় উঠে দেখি,আমার জম দাঁড়িয়ে আছে।এখন তো কাঁন্না করতে ইচ্ছা করছে।এইডা এখনো পরীক্ষা দিতে রুমে ঢুকেনি ক্যা!!! মীমকে দেখেও না

দেখার ভান করে তৃতীয় তালায় উঠতে শুরু করলাম…

– এ এ এ কে কে??? [ মীম আমার পাজ্ঞাবী টাধরে জোরে টান দিল]

– তোর বাপ।

– আব্বা তো বাড়িতে।কই নিয়ে যাস?

– আমাকে মিথ্যা বললি কেনো হারামি?

– কবে মিথ্যা কথা কইছি তোকে??

– তুই নাকি বাথরুমে? তোর নাকি পেটের সমস্যা??

– হ,,বাথরুমেই তো ছিলাম।কোচিং এর নিচ তালার বাথরুমে।

– মিথ্যা কথা বলার জায়গা পাস না??

– জায়গা পাইছি দেখেই তো বলছি…

 

– এই ফাঁকা রুমে নিয়ে আসলি কেনো?(আমি)

– তোকে আজ খাবো!

– রুমের দরজা বন্ধ করিস ক্যা?

– হারামি,,আমাকে ভলোবাসিস কী না বল???

– না বাসি না, কী করবি?

– ঠাস…ঠাস…ঠাস।

– ওই চড় মারলি কেন??

[ যত বারই মীমের সাথে দেখা হবে,সাথে চড় জিপি অফারের মতো একদম ফ্রী ]

– আজ ৪ দিনের শেষ দিন।আমার কথাটার উত্তরদে শয়তান?

– উপরে তো পরীক্ষা শেষ হয়ে যাচ্ছে।

– শেষ হয়ে যাক। তুই উত্তর টা দে আগে?

আজ থেকে চার দিন আগে মীমের কাছ থেকে টাইম নিয়েছিলাম,ওকে আমি ভালবাসি কি না,এইটা বলার জন্য।।গাধী মেয়ে একটা, আমি তো ভালোবাসি

শুধু তোকেই।এইটা আবার মুখে বলতে হয় নাকি! মীমের কাছ থেকে মাঝে মধ্যেই এইরকম চার,আট,দশ দিন টাইম নেই আর ওর সাথে ঝগড়া করি।খুন

শুটির মাঝে অবশ্য আলাদা একটা মজা পাই…

– চুপ করে আছিস কেনো?(মীম)

– না ভাবতেছি কীভাবে এইখান থেকে বের হয়ে যাবো।

[ কথাটা শুনে মীম দরজার কাছে গিয়ে দাড়ালো।তারপরেও আজ আমাকে বের হতে দিবে না ]

– এ এ কী করছিস? কোলের উপর এসে বসলি কেন?

– কিস খা….

[ কিস খা বলতে যতটুকু টাইম লাগলো! কাজটা শুরু হতে ঠিক ওতোটুকু টাইম লাগলো না।পাক্কা দেড় মিনিট ধরে চলতেছে।বন্ধ করার কোন নাম গন্ধ নেই ]

– ওই ছাড়। এইসব তো ভালোই পারিস?(মীম)

– হ,,অভিজ্ঞতা আছে।

– অভিজ্ঞতা আছে মানে???

– আর বলিস না,এর আগেও তের-চৌদ্দ টা মেয়ের ঠোঁটে, ঠোঁট বসিয়েছি।কতক মেয়ের মুখে কী গন্ধ!! ওয়াক থু…

– তারমানে, তুই এই টাইপেরই ছেলে।[মীমের চোখের কণায় জল জমে গিয়েছে ]

– থাম থাম। তোর চোখের জল মাটিতে ফেলিস না।

– আমার চোখের জলের মূল্য আছে কারো কাছে?

– হু,আছে তো।

– কার কাছে?

– তোর সামনে দাঁড়িয়ে থাকা পোলাটার কাছে…

– তাহলে, মাঝে মাঝে আমাকে কষ্ট দিস কেনো??

– আমাকে কখনো দেখেছিস কোন মেয়ের দিকে তাকিয়ে থাকতে?

– না

– তাহলে,এইসব বলিস কেনো?

– তুই তো একটু আগেই বলল্লি, তের-চৌদ্দ মেয়ের ঠোঁটে….?? ছিঃ

– পোলাটা একটু বেশি মজা করে সব সময়, এইটা জানিস না গাঁধী?

– পোলাটার মজাগুলো যে,আমাকে মাঝে মাঝে কাঁদায়, এইটা কিন্তু পোলাটা কখনোই খেয়াল করে না।

– হইছে, এখন থেকে খেয়াল করবে নি।উপরে চল, পরীক্ষা দেবো।

– পরীক্ষার তো বিশ মিনিট শেষ!আর চল্লিশ মিনিট আছে।এখন গিয়ে কী পরীক্ষা দিবো?

– আরেহ্ চল।চল্লিশ মিনিটেই পরীক্ষা দিবো।

– আমি কিন্তু কিছু পড়ে আসি নি।

– আমি আছি কিসের জন্য??!!

– হু,,ভালো ছাত্র।

দুই জনে পরীক্ষা শেষ করে দেখি,সেই রিক্সাওয়ালা মামা ফোন দিয়েছে।

– কী রে আজ কাল রিক্সাওয়ালার কাছেও তোর নাম্বার থাকে??

– হুম,,বেচারা টা নিজের ইচ্ছায় আমার নাম্বার টা নিলো।

– হুম,সেলিব্রিটি মানুষ তো তাই…

– কোন মাইনডে বলল্লি কথাটা?

– রিক্সাওয়ালার মাইনডে বললাম..

– দেখ,রিক্সাওয়ালারাও কিন্তু মানুষের মধ্যে পড়ে।সবাই সমান।তারাও চায় সবার কাছ থেকে ভালোবাসা পেতে।

– আমার পাগলা তো দেখি অনেক কিছু বুঝতে শিখে গেছে।

– হু,,পরবর্তীতে রিক্সাওয়ালা দের নিয়ে মজা করবি না।

– ওক্কে…যথাআজ্ঞা স্যার।

সেই রিক্সাওয়ালা মামার রিক্সায় আমি আর মীম পেছনে চুপচাপ বসে আছি।হঠাৎ মামা বলে উঠল…..

— মামা আগের বার তো রিক্সাটাকে বাথরুম বানিয়ে ফেলছিলেন,,এইবার না হয় ওয়ানডারল্যান্ড পার্ক বানিয়ে ফেলেন।

[ এ রে!! মামার কী হুশ-টুশ কিছুই নাই? কখন কী বলতে হয় তাও জানে না।অন্যদিকে, মীম তো আমার দিকে চোখ কট-মট করে তাকিয়ে আছে ]

— এই বেডা! রাত কী পোহায়ে ফেলবি নি? ঠিক মতো রিক্সা চালা…

– মামা রিক্সা থামান তো????? [ মীম এত্তো জোরে মামাকে ধমক দিয়ে বলেছে কথাটা,মামার কাপড় নষ্ট হয়ে যাওয়ার মতো অবস্থা ]

– আরেহ্ রিক্সা থেকে নামতেছিস কেনো?

– আমি এই রিক্সাতে যাবো না।

– আশে-পাশে কোন রিক্সা নাই,এইটাতেই যাইতে হবে..

[ মীমকে আবার জোর করে টেনে রিক্সায় তুললাম ]

— ম্যাডাম,মামা কিন্তু অনেক ভালো! (রিক্সাওয়ালা)

– হু,হু।থাক, আপনার মামার আর প্রসংশা করতে হবে না

— না ম্যাডাম সত্ত্যি।ওনি অনেক ভালো। বাহিরের টা যতটা সুন্দর, ভেতরের টা তার থেকেও বেশি সুন্দর..

– মামা কী পাম দেওয়া শুরু করলেন?(আমি বলল্লাম)

— না মামা সত্ত্যি কথা বলতেছি।

– কীভাবে বুঝলেন আপনার মামা অনেক ভালো?(মীম)

— ম্যাডাম,আগের বার রিক্সা ভাড়া ছিল ৩০ টাকা। মামা আমাকে ৫০ টাকার নোট দিয়ে পুরোটাই আমার কাছে রাখতে বলেছে।

– এতটুকুতেই বুঝে গেলেন,আপনার মামা ভালো?

– হুম। সবাই এইরকম হয় না।গরীবদের সাহায্যে করতে আলাদা একটা মন লাগে ম্যাডাম।

[ গরীব মানুষদের একদিন সাহায্যে করলে, সে আপনাকে সারা জীবন মনে রাখবে।এইটা অনেক ভালো লাগে ]

 

রিক্সা বাসা পর্যন্ত চলে এসেছে।রিক্সা থেকে নেমে মামা আমার কানের কাছে এসে বলল….

— মামা, ম্যাডাম কিন্তু বহুত সুন্দর আছে।

এ শালা!বাড়িতে গিয়ে নিজের বউকে দেখ

– হ মামা। বাহিরের টা সুন্দর,ভিতরে ঝগড়া দিয়ে ভরপুর।

তাররপর, মামা কে ভাড়া টা দিলাম।মামা চলে গেল।এখন মীম এসে আমাকে বলতেছে……….

– রিক্সাওয়ালা তোর কানে কানে কী বলল্লো??

– বলছে যে,মেয়েটা দেখতে একদমই সুন্দর না। প্রথম শ্রেণীর বদজ্জাদ মেয়েটা।হি হি হি

[ ভাবতেছি,না জানি মীম কখন আমার উপর হামলা করে!! কিন্তু নাহ্…এবার তার উল্টা টা হলো ]

– এ কী!! কাঁদিস কেনো???

– এমনি

– টিস্যু নিবি?

– না

– এই মেয়ে মানুষের এতো চোখের জল কই থেকে আসে! বল তো?

– জানি না।

– চোখের ভিতর কী নদ-নদী আছে?

– না..সম্পূর্ণ একটা সাগর আছে।

– বাব্বাহ্! ভালোই তো। সেই সাগরের পানিতে কয়জনকে গোসল করাইছিস??

– এক জনকেও না।

– করাবি না?

– হুম করাবো।

– কয়জনকে?

– শুধু মাত্র একজনকে!

– কে সে??

– তুই…

– হ.. তাই নাকি!

– হ

তারপর থেকে, আমরা কখনো বেড়াতে বের হলে,সেই রিক্সাওয়ালা মামার রিক্সায় করে বেড়ায়। তিনজনে অনেক মজা করি। রিক্সাওয়ালা গুলো সব সময়

শুধু আপনার কাছ থেকে ভাড়াটাই আশা করে না, চায় একটু সহানুভূতি আর একটু ভালোবাসা।।

গল্পের বিষয়:
রোমান্টিক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত