ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট একসেপ্ট করার ঠিক তিন মিনিটের মাথায় আমি মালিহা নামের মেয়েটাকে মেসেজ
দিলাম।
-‘হাই, তোমার হানিমুনে কোথায় যাওয়ার ইচ্ছা? সুইজারল্যান্ড, না ব্যাংকক।’
-‘হোয়াট! এইসব কি বলতেছেন!’
-‘আচ্ছা বাদ দাও। এটা বলো, তুমি ফার্স্ট বেবি ছেলে চাও, না মেয়ে।’
-‘এক্সকিউজ মিইই! কে আপনি? হু আরয়ু? আর আমার কাছে কি চান বলুনতো?’
-‘খুব সিম্পিল। আই লাভ ইউ। ডু ইউ লাভ মি?’
-‘হাহ! হাসাইলেন। পাগল নাকি? আমি আপনাকে চিনি না পর্যন্ত। ইভেন ফেবুতে ফ্রেন্ডই হইলাম মাত্র। আর সাথে সাথেই প্রপোজ!’
-‘তো কি ভাবছিলা? অন্য ছেলেদের মতো প্রথমে ফ্রেন্ড হবো, কয়দিন চ্যাটিং এর পর নাম্বার চাইবো, তার
আরো কয়েকদিন পর দেখা করতেচাইবো, তোমাকে হাসাবো, সারপ্রাইজ দিবো, নানান পদ্ধতিতে তোমাকে ইমপ্রেস করার ট্রাই করবো। আমাদের সারাদিন,
সারারাত কথা হতে থাকবে। তারপর গিয়ে আমি তোমাকে প্রপোজ করবো। তাইতো?’
-‘ও হ্যালো….’
-‘নো নো নো। তুমি আগে আমার কথা শুনো। এসব দীর্ঘমেয়াদি কার্য পরিক্রমায় কি হবে ভেবে দেখছো? প্রচুর মেগাবাইট নষ্ট হবে, ফোনের অসংখ্য ব্যালেন্স
জলে যাবে, ধারণার বাইরে টাইম ওয়েস্ট হবে, আমি ঠিকমতো লিখাপড়া করতে পারবো না, বাড়ির কাজ করতে পারবো না। সব মিলিয়ে আমি তোমাকে
পটানোর চক্করে কয়েকটা বছর পিছিয়ে যাবো। তাই বলতেছি রাজি যখন হবাই তখন শুধু শুধু এতো
ঝামেলা করে কি লাভ? ব্যাপারটা জাস্ট কয়দিন আগে আর পরে ছাড়া তো কিছুই না। সো এখনই তুমি হ্যা বলে দিলে আমাদের দুজনেরই মঙ্গল। রাইট?’
-‘উহু, একদম রং। আপনি নিজেরে কি ভাবেন বলুনতো! ফিল্মের হিরো? মেয়েদের পটানো এতোই সোজা? আই থিংক আপনার একজন সাইকিয়াট্রিস্ট এর
সাথে কনসাল্ট করা উচিত।’
-‘হাহাহাহা!’
-‘কি হলো!!’
-‘তোমার কথা শুনে হাসি পেলো। কি ভাবছো আমারে? এতোক্ষন যা যা বললাম এইভাবেই চিন্তাভাবনা
করা একজন ট্রিপিক্যাল ছেলে? আরে ইয়ার, আম যাস্ট কিডিং। একচুয়ালি আমি তো ফেসবুক রিলেশনেই বিশ্বাস করি না।’
-‘সিরিয়াসলি!’
-‘তাছাড়া আবার কি? আচ্ছা চলো তোমারে বোঝাই। দেখ, ফেসবুকে ছেলে মেয়েদের ভেতর যেটা হয়
সেটাকে লাভ বলে না। সেটা যাস্ট ক্রাশ, সাময়িক এট্রাকশন ইউ নো। কয়েকদিন সারা দিনরাত পাগলের
মতো চ্যাটিং করার পর যেকোনো একজন আরেকজনের প্রতি দুর্বল হয়ে পড়বে। আর ঠিক তখনই যে উইক হবে তার উপর থেকে তার বিপরীত জনের
এট্রাকশন চলে যাবে। সেটা হতে পারে ছেলেটা বা মেয়েটা, কিন্তু সুত্র একই। তার তখন ফ্রেন্ডলিস্টের অন্য একজনের সাথে চ্যাট করতে বেশি ইন্টারেস্টিং
লাগবে। ফলাফল ঝগড়া এবং ব্লক। তারপর পুনরায় অন্য কারো ওপর ক্রাশ। ঘটনা সমাপ্ত। বিলিভ মি, নিউটনের সুত্র ভুল হলেও ফেসবুকের এই
রিলেশনশিপ সুত্র কখনোই ভুল হবে না।’
-‘ওয়াও, ভালো বলছেন তো! আপনার লজিক অনেক ক্লিয়ার।’
-‘বিকজ আই এম আ ক্লিয়ার বয়। আই মিন নিয়মিত ক্লিয়ার শ্যাম্পু ইউজ করি। নাথিং টু হাইড।’
-‘হেহেহে। আপনার সেন্স অফ হিউমার টু গুড।’
-‘আমার সেন্স অফ ফ্রেন্ডশিপও কিন্তু আরো বেশি গুড! ফ্রেন্ড…?’
-‘হুম….ওকে…
(কয়েকমাস পর)
-“এই মালিহা, তুমি জানো তোমার ভাগ্য কত্তো খারাপ? আজ থেকে অনেক অন্নেক বছর আগে তোমার জন্ম হলে কি হতো জানো? তোমার জন্মদিনের
শুভেচ্ছা জানাতে একটা উপন্যাস লিখে ফেলতো উইলিয়াম শেক্সপিয়ার।লিওনার্দো ভিঞ্চি তোমাকে মডেল করে আকতো তার জগতবিখ্যাত পোট্রেট, নাম
দিত ‘মালিহাসা’। এই রাতেই রবিন্দ্রনাথ আর রবার্ট ফ্রস্ট লিখতো তাদের সেরা পংক্তি গুলো, শুধুমাত্র তোমায় বার্থডে উইশ করার জন্য। সম্রাট আকবর
তোমাকে গিফট করতো তার স্বপ্নের মহামূল্যবান কহিনুর। আইনস্টাইন থিওরি অফ রিলেটিভিটি ভুলে গেলেও ভুলতো না তোমার জন্মদিনের কথা। কিন্তু
দ্যাখো এসব কিছুই হলো না। দুর্ভাগ্যবশতঃ তুমি জন্ম নিলে আমার সময়ে। তাই তোমার ভাগ্যে জুটলো
খুব সাধারন একটা বার্থডে উইশ- ‘শুভ জন্মদিন মালিহা, আজকে এই মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির সবটুকু শুভকামনা শুধুমাত্র তোমার জন্য’।”
-‘ওয়াও, আমার এই একুশ বছরের লাইফে কেউ এত্তো সুন্দর করে বার্থডে উইশ করেনি। থ্যাংক্যু সোওওও মাচ।’
-‘ইউ আর স্ট্রংলি ওয়েলকাম।’
(আরো কিছুদিন পর)
-‘এই জানো আমি একটা বই লিখতেছি।’
-‘ওয়াও, সত্যি?’
-‘হুম, বইটার নাম কি শুনবা? টেলিফোন ডিরেক্টরি। এইজন্যই তোমার নাম্বারটা লাগবে। দিবা?’
-‘হাহাহা, আচ্ছা…ওকে!’
(এক বছর পর)
-‘এই মালিহা তুমি কি জানো পৃথিবীর সবকিছুই আগে থেকে ঠিক করে রাখা আছে।’
-‘হুম জানি তো।’
-‘আচ্ছা সৃষ্টিকর্তার প্রি- প্লান কি চাইলেই তুমি বা আমি ভেস্তে দিতে পারি? এটার চেষ্টা করাটাওকি ঠিক?’
-‘অবশ্যই না।’
-‘তাইলে ভেবে দেখো আজকে বিকাল ঠিক সাড়ে পাঁচটায় রুসান ক্যাফের তিন নাম্বার টেবিলে দুইটা
চেয়ার আমাদের জন্মের আগে থেকে তোমার আর আমার নামে বুক করে রাখা হয়েছে, সাথে কোল্ড কফির
অর্ডারও দিয়ে রাখা। এখন কি করবো বুঝতে পারতেছি না। সাজেশান দাও তো কি করা উচিত?’
-‘হুম… খুবই কঠিন প্রবলেম। তো তুমি কি ড্রেস পরে আসবা সেটাও কি জন্মের আগে থেকেই ঠিক করা, নাকি আজকে চ্যুজ করবা?’
-‘হাহাহা! সাদা টিশার্ট আর নীল জিন্স, তুমি?’
-‘গোলাপি থ্রি-পিচ।’
-‘ওক্কে!’
(কয়েকমাস পর)
-‘আজকের স্পেশাল দিনে বাইশটা বাইশ রঙের গোলাপ তোমায় উপহার দিলাম বাইশটা অক্ষরের জন্য।’
-‘বাইশটা অক্ষর? মানে?’
-‘Happy birth day to u maliha.’
-‘আরেহ, বাইশটা অক্ষরই তো হয়! ওয়াও! থ্যাংকু সো মাচ।’
-‘ইউ নো, যে এই বাক্যটা আবিস্কার করেছিলো সে তোমার বাইশতম বার্থডের কথা ভেবেই অক্ষরগুলো
গুনে গুনে সেট করেছিলো।’
-‘হাহাহা! তাইলে তো এখানে you হবে, u না।’
-‘এক্সাক্টলি। ঐ লোকের এইটুকুই ভুল ছিলো। কিন্তু সেই ভুলটা শোধরানোর জন্য উইলিয়াম শেক্সপিয়ার প্রথম you এর পরিবর্তে u লেখার প্রচলন করেন,
সেটাও শুধুমাত্র তোমার বাইশতম বার্থডের কথা ভেবেই।’
-‘সত্যি?’
-‘হুম একদম। আর এজন্যই এই পৃথিবীতে মোট বাইশ রঙের গোলাপ আছে।’
-‘রিয়ালি!! ধুরর! যাই হোক আমার গোলাপগুলা কিন্তু ভীষণ পছন্দ হইছে।’
-‘যাক, স্বার্থকতা। আসলে প্রথমে ভেবেছিলাম তোমার এই জন্মদিনে আইফোন সেভেন গিফট করবো। বাট ইউ নো, অর্থনৈতিক মন্দার পর কিডনির দাম
পড়ে গেছে। তাই আর বিক্রি করলাম না।’
-‘হাহাহা! তুমি না পারোও। ধ্যাত!’
(দুই বছর পর)
একদিন গভীর রাত্রে মালিহা আমাকে মেসেজ দিলো।
-‘এই শুনো, তোমাকে আমার একটাকথা বলার আছে।’
-‘কি কথা?’
-‘ইয়ে বুঝতেছি না কিভাবে বলবো।’
-‘আরে ধুর, বলে ফেলো তো!’
-‘হুম…একচিলি…তোমাকে আমার ভালোই লাগে। আই লাভ ইউ।’
-‘হাহাহাহাহ…’
-‘কি হলো। হাসো কেন?’
-‘তোমার কথা শেষ হলে এবার আমি বলি?’
-‘হ্যা, বলো।’
-‘লিসেন, তোমার দুই বছর আগের কথা মনে আছে? আমি একদম প্রথমে তোমাকে কি বলেছিলাম। মনে
থাকলে তো ভালোই, আর না থাকলেও সমস্যা নাই। এখন নতুন কিছু শুনো। এই গত দুই বছরে সারা দিনরাত তোমার সাথে চ্যাট করেছি আমি, তাতে খরচ
হইছে প্রায় সাতাশি জিবি ইন্টারনেট, যার দাম প্রায় আট হাজার টাকা। ডেইলি ফোনে দুই- তিন ঘন্টা কথার ফোনবিল দুই বছরে প্রায় সাড়ে এগারো হাজার
টাকা। রেস্টুরেন্ট বিল, গিফট মিলিয়ে আরো পনেরো হাজার। ভেবে দেখ আমি একজন বেকার ছেলে এতো টাকা কোথায় পেয়েছি? বাপের পকেট অথবা
মায়ের পার্স! যার জন্য এখন উনাদের চোখে আমি আর ভালো ছেলে নেই। আমার বাবার বেতন তো তুমি জানোই। হিসাবের বাইরে জাস্ট দশ হাজার টাকা
ছিলো না বলে ছোটভাই কম্পিউটার ক্লাসে ভর্তি হতে পারেনি। তার ভবিষ্যত কি হবে আল্লাহই জানে। আচ্ছা
টাকা পয়সা ছাড়ো। তোমাকে পটানোর পেছনে ডেইলি এতো টাইম দিতে গিয়ে আমি ঠিকমতো লেখাপড়া করতে পারিনি। আমার দুইটা সেমিস্টার গ্যাপ
গেছে। অন্যগুলার সিজিপিএ খুব উইক। ভবিষ্যতে কি করবো কোনো নিশ্চয়তা নেই। সেই টেনশানে আব্বুর হার্টে প্রবলেম দেখা দিয়েছে, আম্মুর হাই
প্রেশার। গত তিন ঈদেআব্বু আম্মু কেউ নতুন কাপড় নেইনি। আমি তোমাকে দুইটা করে ড্রেস গিফট করেছি। যার একেকটার দামে আব্বুর একমাসের
ঔষধ হয়। মনে আছে গত বার্থডেতে আমি রাত বারোটায়
তোমার বাসার সামনে আসছিলাম? ঐদিন বাসার কাউকে না জাগিয়ে দরজা খোলা রেখে বেরোনোর পর
চোর এসে টিভি ঘড়ি আর আম্মুর গয়নাগাটি সব নিয়ে গেছে। নতুন গয়না বানানো হচ্ছেনা বলে বোনের
বিয়ে দেয়া যাচ্ছে না। আমাদের বাসায় এখন আর আগের মতো আনন্দ নেই। কেউ হাসে না বহুদিন। ফ্রেন্ডদেরকে টাইম দিতে পারিনি বলে ওদের সাথেও
সম্পর্ক নষ্ট হয়ে গেছে। আর এইসবই হয়েছে শুধুমাত্র
তোমার জন্য। তুমি ঠিক দুই বছর আগে আমার প্রপোজালে রাজি না হওয়ার জন্য। মালিহা তুমি আমার লাইফটা ধ্বংস করে দিয়ে এখন আসছো
ভালোবাসতে? আই হেইট ইউ মালিহা, আমি তোমাকে ঘৃণা করি। তুমি প্লিজ আর আমার সাথে কন্টাক্ট করার কোনো ট্রাই কইরো না। তোমার সাথে যে
সম্পর্কই ছিলো নাকেন, সবকিছুই ব্রেকআপ। বাই।’
মোরাল অফ দ্যা স্টোরিঃ প্রেম জিনিসটা হোমিওপ্যাথি ঔষধ; স্লো কাজ করে। সাথে একমাত্র
হোমিওপ্যাথি, যার সাইড এফেক্ট ও আছে।
কার্যকারিতাঃ প্রপোজ করার আগে আপনার ক্রাশকে লিখাটি পড়ান। অত:পর বাবা-মাকে জানিয়ে শুভ
কাজটটা সেরে ফেলুন, সময় শ্রম টাকা সব সেভ হবে। ধংসের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে থাকা বড় ভাইয়ের আইডি থেকে।