একদিন বিকেল বেলা,,,
রুমে বসে ল্যাপটপ দিয়ে গেমস খেলতেছি আর তখনই রুমের দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ পেলাম।
– আসতে পারি? ( তানহা)
– আসুন ( রাগি কণ্ঠে)
– আপনার পাশে একটু বসি?
– কেন?
– না, এমনি। আপনার সমস্যা হলে আমি দাড়িয়েই থাকি।
– দাড়িয়ে থাকার দরকার নেই, বসুন। ( ব্যপার কি, এতো ভালো হলো কেন?)
– থ্যাংকস, খুব রেগে আছেন আমার উপর তাই না?
-,,,,,,,
– আসলে আমি বুঝতে পারিনি আপনি এতটা মাইন্ড করবেন। স্যরি, ভুল হয়ে গেছে। আর কখনো এমন হবে না।
আর কখনো আপনার কোনো জিনিসে হাত ও দিব না।
– হুম,, গুড।
– আসলে হয়েছে কি জানেন,, সবসময় একা একা থাকি তো,কিন্তু একা থাকা একদম ভালো লাগে না। খুব অসহায় মনে হয় নিজেকে।
মা নেই তো তাই, যদি থাকতো তাহলে হয়তো মার সাথেই সময় কাটাতাম। শুধু শুধু আর আপনাদের বিরক্ত করতাম না।
মার আদর তো কখনো পাইনি….,
কিন্তু আপনারা এখানে আসার পর থেকে আপনার আম্মুর কাছ থেকে সেটা পেয়েছি কিন্তু আপনার মনে হয় এটা পছন্দ না,
কারণ আমি আপনার আদরে ভাগ বসিয়েছি, তাই হয়তো আপনি আমাকে কখনো একটু ভালভাবে দেখেননি সবসময় আমার প্রতি রেগে থাকতেন,
এটা আমি ঠিকই বুঝতে পেরেছি, আর আমি আপনাকে নানারকম সমস্যায় ফেলে দেই, এইসব কিছুর জন্য স্যরি।
আসলে আমারই ভুল হয়েছে আপনাদের ফ্যামিলির ভেতর প্রবেশ করা।
ভালো থাকবেন, আমাকে হয়তো আর বেশী দিন আপনাদের সয্য করতে হবে না।
আমি আর বাবা চলে যাব এখান থেকে। ( রুম থেকে বেরিয়ে যেতে লাগলো)
– আরে এই শুনুন ( অজান্তেই আমার চোখ দিয়ে দু ফোটা পানি বেরিয়ে আসলো)
– জ্বী বলুন,,
– এসব কি বললেন এতো সময়,, আমি এমন মনে করবো কেন? আমি এমন কিছুই ভাবিনি।
– ওহ্, তাহলে থ্যাংকস।( রুম থেকে চলে গেল)
…
যাহ্ বাবা, এতদিন ওকে এতো হিংসা করতাম কিন্তু এখন এই মেেয়টার জন্য কেন যেন অনেক কষ্ট হচ্ছে।
ল্যাপটপ রেখে ড্রয়িংরুমে গেলাম, গিয়ে দেখি ওখানে কেউ নেই,,
কিন্তু একটু দাড়িয়ে থেকে বুঝতে পারলাম আম্মুর ঘর থেকে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কান্নার আওয়াজ আসছে।
.
তাই আমি আম্মুর কাছে গেলাম। গিয়ে দেখি তানহা আম্মুর কাঁধে মাথা রেখে কাঁদছে, আর আম্মু ওকে কান্না থামাতে বলতেছে কিন্তু ও থামছে না।
আর একটু আম্মুর পাশে বসে থেকে চলে গেল,, আমি এ সবই দরজার কাছে দাড়িয়ে দাড়িয়ে দেখলাম।
.
– আম্মু ওরা কই যাচ্ছে?
– ওর বাবা নাকি বদলি নিয়েছে আর ১৫-২০ দিন পর চলে যাবে অন্য জায়গায় কিন্তু পাগলীটা এখনই কান্নাকাটি শুরু করে দিয়েছে।
– ওহ্ তাই, ( শুনে খুব হাসি পেল)
.
পরের দিন,,
তানহার জন্য এখনই কেমন যেন খুব মায়া হচ্ছে, খারাপ ও লাগতেছে অনেক।
এখন হয়তো ওর মনটা খুব খারাপ হয়ে আছে, হুম,
আমাকেই ভালো করার চেষ্টা করতে হবে কারণ আমিই ওকে এতদিন অবহেলা আর হিংসা করে আসছি।
.
সকাল ১১টা বেজে গেল, ড্রয়িংরুমে বসে বসে তানহার অপেক্ষা করছি, কখন ও আসবে আমাদের বাসায়।
কিন্তু আরও কিছু সময় অপেক্ষা করার পর যখন দেখলাম ও আর আসছে না তাই আমি নিজেই চললাম ওর বাসায়।
.
ওর বাসার সামনে গিয়ে দেখি মেইন দরজা খোলা তাই ভেতরে গেলাম,
ভেতর গিয়ে ওর রুমের জানালা দিয়ে উকি মেরে দেখি বিছানায় মাথা নিচু করে বসে আছে তাই ওর রুমের দরজার কাছে গেলাম।
– আসতে পারি তানহা?
– ওহ্ আপনি। আসুন আসুন।
– আজ যাওনি কেন আমাদের বাসায়? প্রতিদিন গিয়ে তো বসে থাকো আম্মুর সাথে সময় কাটাও, তাহলে আজ যাওনি কেন?( তুমি করে বললাম)
– আর মাত্র কয়েক দিনই তো আছি এ কয়দিন আর আপনাদের বোঝা হয়ে আপনাদের জ্বালাতন করতে চাই না।
– ধুরর, এইসব কি বলো? আসো আমার সাথে।
– কই?
– আম্মু যেতে বলছে। ( মিথ্যা কথা)
– আচ্ছা চলুন।
– ওয়েট,, শাড়ি পরে আসো।
– কেন?
– শাড়িতে মনে হয় সুন্দর লাগবে বেশী। ( বলেই আমার মুখ চেপে ধরলাম)
– আচ্ছা ( মুখটা কালো করে)
.
তারপর কিছুক্ষণ ওখানে এক রুমে অপেক্ষা করলাম ওর জন্য, কিছুক্ষণ পর দেখি একটা নীল শাড়ি পরে বেরিয়ে আসলো অন্য রুম থেকে।
আমি মেয়ে না হলেও নীল শাড়ি আমার অনেক বেশী পছন্দ আর চোখের সামনে এখন একটা নীল শাড়ি পড়া মেয়েকে দেখতেছি, অনেক কিউট লাগছে, একদম যেন এক অপ্সরী।
.
ও শাড়ি পরে আসার পর আমার সামনে এসে দাড়ালো আর আমার চোখটা যেন ওর উপর থেকে সরতেই চাইছে না তাই আমি ড্যাবড্যাব করে ওর দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলাম,,
– এই হ্যালো, আকাশ ভাইয়া কি হয়েছে?
– কিছু না। ( কেন জানি ভাইয়া বলায় কলিজায় আঘাত লাগলো)
– চলুন,
– আচ্ছা।
.
তারপর ওকে নিয়ে আমাদের বাসায় গেলাম আম্মুকে কোনো ভাবে ম্যানেজ করলাম যে আম্মুই ওকে ডেকেছে।
তাই আম্মুকে আর একটু বুঝিয়ে শুনিয়ে ওকে নিয়ে ঘুরতে যাওয়ার প্লান করলাম। তানহাও রাজি হলো আমার সাথে যেতে।
.
তারপর ওকে নিয়ে অনেক সময় এদিক ওদিক ঘুরলাম, ওর মুখের দিকে তাকিয়ে আমারও ভালো লাগলো কারণ ও তখন মিটিমিটি হাসছিলো।
আর কখন থেকে যে ওকে ভালো লাগতে শুরু করছে নিজেই জানি না।
.
কিন্তু এখন এটা ভেবে খারাপ লাগছে যে ও আর কয়েক দিন পর এখান থেকে চলে যাবে।
আচ্ছা, ওকে আটকানোর কি কোনো রাস্তা নেই,,, আমি কি ওকে কোনো ভাবে এখানে ধরে রাখতে পারবো না?
.
আরও দুদিন পর,,,,
এখন প্রায় দুজনে খুব ফ্রী হয়ে গেছি,,
আগের সব রাগ, ফাজলামো বাদ দিয়ে ফ্রেন্ডশীপ করে নিয়েছি আর আমি এখন সবসময় ওর পেছনে ঘুরঘুর করি কিভাবে ওকে এখানে থেকে যাওয়ার কথা বলবো?
আর এখনও সেই আগের মতো আমাদের বাসায় এসে বসে থাকে, আর এখন শুধু আম্মুর সাথে কথা বলে না, আমার সাথেও আড্ডা দেয় বেশীর ভাগ সময়।
আমারও খুব ভালো লাগে ওর সাথে কথা বলতে।
.
আগে কখনো ওর ওই মিষ্টি মুখের দিকে ভালভাবে লক্ষ্য করিনি তাহলে হয়তো ওর মুখের মায়ায় আরো আগেই জড়িয়ে যেতাম, এখনো জড়িয়ে গেছি তবে একটু দেরীতে।
.
রাতে কিছুক্ষণ টিভি দেখে আম্মুর কাছে গেলাম,, আম্মু বাসায় আছে আর আব্বু কাজের জন্য একটু বাইরে গেছে তাই এখন আম্মুর সাথেই সব শেয়ার করি,
আম্মুর কাছে গিয়ে আম্মুর গলা জড়িয়ে ধরে বসে পরলাম।
.
– আকাশ, কি হইছে?
– উমমমম,, বলতে পারছি না, লজ্জা করে।
– কার প্রেমে পরলি?
– বুঝেই গেছো,,,,
ও মা,
– বল,
– তানহাকে চাই,
– জানি,
– কেমনে জানো?
– আমি আগেই বুঝতে পারছি তুই ওর প্রেমে পরবি, তাহলে কি এখন ওর বাবাকে বলবো?
– বিয়ের কথা?
– তা নয়তো কি?
– ওকে ওকে, উম্মা, লক্ষী আম্মু।
– যা এবার নিজের ভালবাসার কথা জানা ওকে।
– আচ্ছা।
.
পরের দিন,,
বিকেল বেলা,
এখনই এই মনোরম পরিবেশে প্রপোজ করার সঠিক সময়, তাই ভাবলাম ওর কাছে যাই,, ওকে ওর বাসায় অনেক খুজলাম কিন্তু পেলাম না। গেল কই আবার?
অবশেষে গিয়ে দেখি পাগলীটা আমাদের বাসার ছাদে গিয়েই দাড়িয়ে আছে।
.
– তানহা,
– বলুন,
– ইয়ে মানে, কি করে যে বলি?
– আরে বলে ফেলুন,, বেশী না বলতে পারলে সংক্ষিপ্ত করে বলেন।
– আচ্ছা সংক্ষিপ্ত করে বলি,, আই লেবু
– মানে!!
– আই লাভ ইউ কে সংক্ষিপ্ত করে আই লেবু বললাম।
– হিহিহি, তাই।
– হুম, ( নিজেকে বোকা বোকা লাগছে)
– ঘুঘু ফাঁদে পা দিয়েছে।
– মানে!!
– সেদিনের কথায় এতো ইমোশনাল হয়ে আমার প্রেমে পরেছেন এটা আমি বুঝতেই পারিনি।
– আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না।
– আরে বোকা,,,আই লেবু ২।
– সত্যিই?
– আরে হ্যাঁ,, কিন্তু এটা বলতে একটু সময় বেশী নিলে মনে হয়। তার জন্য, আই হেট ইউ…
– আই হেট ইউ ২,,আরিয়ান্না কি বললি?
– আই লেবু।
– হুম, এটাই বলবে সবসময়।
– আচ্ছা,, এবার জড়িয়ে ধরি?
– হুম ধরো।
.
আহা, কি শান্তি,,
কাছের মানুষটাকে আরও কাছে খুব আপন করে পেলে এতো সুখ লাগে এটা কখনো ভাবিনি…..,,
কিন্তু এখন ঠিক বুঝতে পারছি ভালবাসা আপন করে পেলে কেমন সুখ অনুভূতি হয়।
.
– খুব ভালবাসি তোকে পাগলী, এত্তো গুলো।
– আমিও তোকে এত্তো গুলো ভালবাসি রে পাগল।।
(সমাপ্তি)…