– পড়ালেখা শেষ করে এখন দিনরাত , বাপের মুখের বকা খাচ্ছি …। এখনকার জামানাতো আপনারা আমার থেকে ভালো করে জানেন । সরকারী কোন চাকরি হইলেই আমাগো সোনার দেশের মানুষ গুলো । ঠিক সোনার দামের মতো টাকা চায় ।
আমার বাপ ও দিতে রাজি কিন্তুু ভাই আমার ছোট থেকে ওই সব চাকরির কোন শখ নাই ।
আজাইরা কোন মানুষ এর কথা শুনতে আমি মোটেও রাজি না ।
যেখানে কাজ টাই আমার রাজি না , আমার বাপরে কত করে বললাম , যে আব্বা আমারে যেই টাকা দিয়া চাকরি দিবা সেই টাকা গুলা আমারে দাও ।
তারপর দেখ কেমন ফটাফট বড়লোক হয়ে যাই । কিন্তুু কে শুনে কার কথা , আমার ভাই কোন গফ ও নাই , আর বিয়ে করার কোন প্লান ও নাই , যে চাকরির জন্য এত্ত টেনসন করমু ।
তাইতো এখন খালি সারাদিন টো টো কইরা ঘুরে বেড়াই । ঐযে আছে না বাঁদর যেমন সারাদিন এখান থেকে ওখানে আবার ওখান থেকে এখানে , ঠিক তেমন । চুল আর দাঁড়ি গুলো ও হয়েছে ঠিক বাঁদর এর মতো । আমার বাপরে কইলাম যে আব্বা ১০০ টা টাকা দাও চুল কাটমু ।
কী কইল জানেন … না থাক ওইটা আপনারা সবাই জানেন
…আরে ভাই কমন ডাইলগ কী এইবার বুচ্ছেন তাই তো । কিন্তুু আর যাই হোক দেখতে কিন্তুু মোটে ও খারাপ লাগতেছে না ।
পুরাই শাপিক খান … না না তার থেকে ও ভালো হি হি হি ।
– কী আর করার প্রতিদিনের মতো সেই স্কুল লাইফ এর সাইকেল টা নিয়ে বিকেলবেলা ঘুরতে বের হচ্ছি ।
– তো রাজা মশাই কোথায় যাওয়া হচ্ছে ( আব্বা ) ।
– কেন জানো না রাজ্য শাসন এ যাচ্ছি ।
– হুমমমমমম , যান যান আপনার তো আবার মেলা কাজ ।
– সেটা তো জানোই , নতুন করে বলার কী আছে ।
– আচ্ছা তোর কী কোন প্রেমিকা ও নাই হ্যা , তোর বয়স এর ছেলেদের কম করে হলে ও একটা প্রেমিকা আছে , আর তুই কী বলতো , ভালোবাসার মানুষটার জন্য সবাই কী না কী করছে , তোর ছোট সজীব ও কেমন একটা চাকরির জন্য ছোটাছুটি করছে ।
– আচ্ছা যার হিসি চাপে সেই তো হিসি করার জন্য ছোটাছুটি করে তাই না , এর মধ্যে আমাকে টানার কী আছে ।
– আচ্ছা তার মানে তুই প্রেম বিয়ে কিচ্ছু করবি না আর চাকরি ও করবি না । – আমারে কী পাগল পাইছো যে বিয়ে করমু , আচ্ছা বাদ দাও আগে বড়লোক হইয়া নেই তারপর ওইসব চিন্তা । তারপরে সাইকেলটা নিয়ে বের হয়ে পরলাম ।
– নদীর পার ধরে সাইকেল চালাইতাছি , আর গান গাইতাছি , নিজেরে কেমন রাজা রাজা মনে হচ্ছে । হঠাৎ কই থেকে একটা মেয়ে এসে আমার সাইকেলটার আগে পরে গেল । জোরে ব্রেক করার ফলে ধপ করে পরে গেলাম ।
– ওই ওই মাইয়া কিউট পোলা দেখলে মাথা ঠিক থাকে না তাই না , যাদের ডাইলগ তাদেরকেই দিলাম হি হি হি ।
– এই যে আপনার সাহস তো কম না নিজের ভালো চাইলে তারাতারি কেটে পরেন ।
– ওলে বাবা সাহরিয়া ওই সব হুমকিতে ভয় পায় না , ভালই ভালই আমার সাইকেল আর আর পা ঠিক করে দিন , না হলে কানের গোরাই দিমু একটা । – ওই পোলা তোমার সাহস তো কম না ।
– এই সব তো শুধু ট্রেইলর পুরু সাহস তো পরেই আছে হু হা হা হা ।
– তোর দাঁত বের করে হাঁসা বন্ধ করছি দাঁড়া ।
– ওই…. ফাঁকা রাস্তাই নিজেই একটা অপরাধ করে আবার আমাকেই তুই তুকারি করছেন । সাহস তো কম না । নেহাত ভালো ছেলে তাই । তা না হলে ।
– ওই তা না হলে কী হুমমম , রফিক সাহেব তারাতারি রাস্তাই আসেন ।
– বাবা রে বাবা আমি তো ভয় পেয়ে গেছি । মেয়েটার দিকে তাকাই দেখি রাগে খালি ফুলতিছে । হঠাৎ একটা পুলিশ আসলো ।
– জ্বী …. ম্যাডাম বলেন ।
– আমি তো হা করে আছি , বিনা কারণে ফেঁসে গেলাম না তো আবার ।
– রফিক সাহেব এই বেয়াদপ আর ওর সাইকেলটাকে থানাই নিয়ে চলেন ।
– ম্যাডম ও ম্যাডাম এই শিশুর মতো ছেলেটাকে কী না নিয়ে গেলে হয় না বলেন , বাচ্চা মানুষ ২ একটা ভুল তো হবেই তাইনা ।
– বাচ্চা মানুষ বলেই তো গাড়িতে করে নিয়ে যাচ্ছি । কী আর করার , লোকে বলে না মেয়ে আর পুলিশ এর খপ্পরে পরেছ তো মরেছ ।
– আমার কপাল তো দিগুণ খারাপ তাই মেয়ে + আবার পুলিশ , কপালে কী আছে একমাত্র আল্লাহ্ যানে । আর যাই হোক মেয়েটা কিন্তুু ঝাক্কাস । আমার সাইকেল টা কে একটা রুমে ,আর আমি মেয়েটা সামনা সামনি লকাপের মধ্যে আছি । মেয়েটা একটা টেবিলে বসে কী যেনো করছে , আমার আবার কথা না বললে পেট ব্যাথা করে । দূর লকাপেই তো আছি মেয়েটার সাথেই কথা বলি ।
– ও ম্যাডাম হ্যালো …
– কেমন রাগী ভাবে তাকালো , এই জন্যই মনে হয় পুলিশ এর চাকরিটা পাইছে ।
– আচ্ছা ম্যাডাম আপনার নাম কী ? – রিয়া ……।
– বাহ আমার নামের সাথে বেশ মিলতো সাহ+রিয়া=সাহরিয়া । আমার নাম সাহরিয়া । কী যেনো লিখছেই তো লিখছে , আমি যে একটা মানুষ কথা বলছি ওনার কোন কেয়ার নাই । না হওয়ারই কথা , একে তো সুন্দরী তাঁর ওপরে আবার থানার হেড । সুন্দরী হলেই তো মাটিতে পা পরে না কী যে ঝামেলাই পরলামরে ভাই ।
– ও ম্যাডাম আমাকে ছেঁড়ে দেন না , আপনাকে প্রথম এ চিনলে কী অমন করতাম । আর আপনে বলেন দোষ কী আমার একা ।
– ওই আপনে এত্ত কথা বলেন কেন ।
– কথা না বললে আমি থাকতে পারি না তো , কেমন বাচ্চা বাচ্চা ভাবে বল্লাম । এবার কী ভেবে যেন একটু হাসলো ।
– মুজনু মিয়া বাচ্চাটাকে এখানে নিয়ে আসেন ।
– ওকে ম্যাডাম …। বলে বাইরে নিয়ে আসলো ।
– নাম কী ?
– সাহরিয়া ।
– বাবার নাম ?
– ইকবাল হোসেন হাবিব ।
– মায়ের নাম ?
– আমার মা নাই ।
– আচ্ছা তোমার বাবার ফোন নাম্বারটা দাও ।
– হি হি হি আমার বাবা জীবনে ও এখানে নিতে আসবে না ।
– ওই দাঁত বন্ধ করে নাম্বার দাও । নাম্বার দিলাম ।
– হ্যালো , আঙ্কেল আপনার ছেলে কে সিনিয়র পুলিশ অফিসার এর সাথে বেয়াদবি করার জন্য থানাই নিয়ে আসা হইছে … আপনে এসে ওকে নিয়ে যান ।
– ওই শয়তান কে তো আমি কোন দিন নিয়ে আসব না ওখানেই ওকে রেখে দিন , তাও যাতে একটু মানুষ হয়ে ফিরে আসে ।
– আচ্ছা ঠিক আছে , এই যে সাহরিয়া তোমার বাবা কী বলল শুনলে তো ।
– হুমমমমম ।
– এখানেই রাখব নাকি বাড়ি যাবে ।
– আমি বাড়ি যাবো ।
– এবারের মতো ছেরে দিলাম নেক্সট যেন এমন বেয়াদবি না করো কেমন , তা হলে আর ছাড়া পাবা না বুঝলা ।
– হুমমমমমমমমমম ওকে ।
– যাও এবার ।
– এক দৌড়ে চলে আসলাম , কে যেন বলল বেয়াদপ পোলা একটা । যাক বাবা আজকের মতো বাঁচলাম …। বাসাই এসে ভাতের সাথে বকা খেয়ে শুয়ে পরলাম ।
– পরেরদিন সকাল সকাল রাস্তাই ব্রাশ করতে করতে ক্রিকেট খেলছি পিচ্চি গুলার সাথে ।
– সাহরিয়া ভাই এইবার কিন্তুু জোরে মারলে তুমি আউট ।
– ওকে ওকে বল কর , বল মারলাম আর বলটা গিয়ে রিয়ার গায়ে লাগলো , মানে কালকের ওই পুলিশ মেয়ে । বলটা নিয়ে আমার দিকে কেমন রেগে আসলো , আর কেমন কিউটুস ও লাগছিল হি হি হি ।
– এটা কী হল শুনি ।
– না মানে আমার দোষ নাই , বলটা তোমার গায়ে লাগছে ওকে বলো । বলেই ব্যাটটা নিয়ে দৌড় দিলাম । পরে একটা পিচ্চির কাছে থেকে শুনলাম । ও নাকি গতকাল রাতে আমাদের পাশের বাসাই ভাঁড়া আসছে ।
– দূর মেজাজ টা কেমন লাগে দেখে দেখে এই মেয়েকেই আসতে হবে ।
– বিকেলে ছাঁদে বসে বসে গিটার বাজাইতেছি আর গান গাইতেছি ।
– বাহ বেশ ভালো গান গাও তো ।
– পিছনে তাকাই দেখি রিয়া । এই মেয়েকে দেখলেই কেমন ভয় লাগে না জানি কখন জেলে পাঠাই দেই ।
– আচ্ছা সকালের ঘটনার জন্য ও কী থানাই নিয়ে যাবা ।
– হা হা আরে না না । এর পরে টুকটাক কথা , তারপরে অনেক দুষ্টুমি করলে ও কিছু বলে না । এখন আমি আর রিয়া অনেক ফ্রী ।
– ওই সাহরিয়া কাল আমাকে ঘুরতে নিয়ে যাবা কিন্তুু ।
– আচ্ছা ওকে । আমি আর রিয়া ঘুরতেছি হঠাৎ কয়েকটা ছেলে রিয়েকে উদ্দেশ্য করে বাজে কথা বলল ।
– রিয়া সাথে থাকাই অনেক সাহস হয়ে গেছে , রিয়া তুমি থাকো আমি দেখতেছি ।
– গিয়ে ওই ছেলে কে ঠাসসসসসসসসস করে একটা দিলাম , জীবনের ফাস্ট কাউকে এমন চর দিছি । সব পোলাপান আমার দিকে আসতিছে । আমি তো ভয় এ শেষ । রিয়া ও আমার সামনে আসলো ।
– ওদের মধ্যে একজন বলল ভাই মেয়ে টা থানার এস আই । পোলা গুলো শুনে কেমন দৌড়ে পালাই গেল ।
– আরে তুমি আসতে গেলে কেন আমি একাই সব গুলারে ।
– কী করতে সেটা ভালো করেই বুচ্ছি প্রথম দিন । সেদিন অনেক ঘোরাঘুরি করে সন্ধাই বাসাই আসতেছি ।
– রিয়াদের বাসার সামনে এসে বল্লাম । রিয়া আমাকে আমাদের বাসার গেট অব্দি দিয়ে আসবে ।
– ওই কেন । – না মানে আমার ভুতের জন্য ভয় করে ।
– এত্ত বড় একটা ছেলে তুবু ভয় করো ঠিক আছে চলো ।
– এই তো এসে গেছি ।
– ওকে এবার যাও কেমন পিচ্চি বাবু ।
– আচ্ছা টাটা কেমন ।
– বলে বাসাই চলে গেলাম । যাবার পর থেকেই মশার জ্বালা শুরু । তাই ভয়ে কয়েল নিতে গেলাম ।
– কয়েল নিয়ে আসতেছি , কই থেকে জানি একটা কুকুর চিল্লাইতেছে , আমি তো ভয়ে দিছি একটা দৌড় । জোরে দৌড়ে আসার ফলে একটা মাইক্রোর সাথে ফটাস করে ধাক্কা খাইলাম । মাথাটা কেমন ঝিম ঝিম করল তার পরে আর কিচ্ছু মনে নাই ।
– যখন জ্ঞান ফিরল দেখলাম রিয়া আমার পাশে বসে আছে , আর কেমন ফুফাই ফুফাই ক্যানতেছে । বাহিরে অনেক বৃষ্টি হচ্ছে ।
– আমি উঠে বসার চেষ্টা করতেই রিয়া আবার আমাকে শুইয়ে দিয়ে , আর বকা দিতে সুরু করল ।
– ওই নিজের দিকে তো কোন খেয়াল থাকে না , কোন দিন কী একটু ভালো ভাবে চলতে পারো না হুমমমমম ।
– আচ্ছা তুমি কেমনে জানলা ।
– আঙ্কেল আমাকে সব বলছে ।
– আচ্ছা আমি কয়দিন ধরে এখানে আছি ।
– তিন দিন ধরে বেয়াদব , আচ্ছা কেমনে এক্সিডেন্ট করলা শুনি ।
– আরে আমার কোন দোষ নাই জানো ওই হারামি কুত্তা চিল্লানি দিছে আর আমি দৌড়ানি দিয়েই তো আজ এখানে ।
– হবেই শয়তান যে একটা । আচ্ছা চাকরি করবা না ক্যান বলো ।
– ওই সব আমার ভালো লাগে না ।
– আচ্ছা বিয়ে করলে কী করবা ।
– হা হা হা দূর বিয়েই করব না আমি ।
– ওকে আমি গেলাম আমার কিছু কাজ আছে ।
– কেমন রিয়ার চোখে পানি টলমল করছে , আমি জানি ও আমাকে ভালবেসে ফেলেছে । ও হাত ধরে টান দিলাম আচ্ছা তুমি আমার গার্লফ্রেন্ড হবা ।
– দূর শয়তান ।
– একটা কথা বলব থানাই নিয়ে যাবা না তো ।
– না বলো । – আচ্ছা একটু জরাই ধরবা প্লিজ । বলার সাথেই জরাই ধরল । আহা কী শান্তি চাকরিটা মনে হয় আর করা লাগবে না ।
– ওই কী বল্লা ।
– না মানে সবসময় তোমার সাথে থাকার কোন চাকরি থাকলে করব ।
– ঠিকআছে আমার গাড়ির ড্রাইভার এর পদ টা দিবো কেমন ।
– অক্কে … ওই ছারলা কেন জরাই ধরো । এই যে আপনার চুপি চুপি পইড়া চলে যান … নো ডিস্টাব তা হলে কিন্তুু থানাই ধইরা নিয়া যাইব হি হি হি !