আনরোমান্টিক

আনরোমান্টিক

শীত আসলেই বিয়ে করতে হয়, “এটাই নিয়ম”। এই নিয়মের বেড়াজ্বাল ছিন্ন করে গরমকালে যারা বিয়ে করে তারা সত্যিই দুর্ভাগা। কথাটা বলছিলেন আমার পরিচিত এক লেখক সাহেব। উনার কথা শুনে মাকে গিয়ে বললাম,
– আম্মু চাকরিতো হইছে! এখন…..!
আমার কথা শেষ হওয়ার আগেই মা বলে উঠলো, ওহ্ বুঝছি বাবা। তোর পছন্দের কেউ আছে নাকি?
– না, মা…..
– এতদিনে একটা মেয়েকেও পছন্দ করতে পারলি না, বুদ্ধু কোথাকার।
– মেয়েদের দিকে তাকাইতে লজ্জা করে।
– হা হা হা। শুন ফারাবী তোর জন্য একটা মেয়ে দেখে রাখছি! তুই চাইলে আগামী মাসেই বিয়ের কাজটা সেরে ফেলবো।
– তোমার যা ইচ্ছা….
– ওও এখন আমার ইচ্ছা?! একটু আগে’তো নিজেই বললি।
আমি একটু লজ্জা পেয়ে চলে আসলাম।

আজ আমার বিয়ে। রাত ১০টা, বাসর ঘরে ঢুকে একটু চমকে গেলাম! এত সুন্দর বউ?!!! মাশাল্লাহ্। এমন সময় আমার বন্ধু নিহাদের কথা মনে পড়লো! ওবলছিলো,
– দোস্ত তুই কখনো প্রেম করিসনাই, খুবভালো একটা বউ পাবি।

ভাবনার ঘোর ভেঙে দিয়ে বউ বলে উঠলো!
– এইযে কাছে আসেন…..!
আমি কাছে গেলাম, তারপর আমার মুখের দিকে চেয়েমেয়েটি বললো,
– একটা কথা জিজ্ঞেস করবো সত্যি করে বলবেন?
– হুম!
– এ পর্যন্ত কয়টা প্রেম করেছেন?
– করিনি’তো!
– একটাও না?
– না!
– সত্যি?
– হুম সত্যি।
– কাউকে ভালোবাসেন?
– নাহ্!!!
– আজ থেকে বাসবেন।
– কাকে?
– আমাকে…..!
– আচ্ছা।
– আচ্ছা বললে হবে না! কোনো মেয়ের দিকে তাকালে মেরে ফেলবো।
– ঠিক আছে!
– এই আপনি এতো আনরোমান্টিক কেন?
– কিভাবে রোমান্টিক হবো?
– আমার চোখের দিকে তাকান!

চিরজনমের প্রশান্তি জমে আছে বালিকার চোখের পাতায়! কেমনজানি নেশা নেশা লাগছে। খানিকটা লজ্জা পেয়ে বললাম,
– তুমি খুব সুন্দর।
এবার মেয়েটি ইমপ্রেসড!প্রাকৃতিক নিয়মে দুটি দেহ যখন একসাথে আলিঙ্গনে মেতে উঠবে, ঠিক তখনি আমি বলে উঠলাম!
– একটা কথা ছিলো…..!
– জ্বি বলুন…..
– শীত আসলেই বিয়ে করতে হয় কেন?
– জানেন না?
– না।
– আপনি আসলেই একটা বোকা।

আমি একটু ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে মেয়েটির দিকে তাকিয়ে রইলাম! তারপর বললাম,
– বলোনা প্লিজ…..!
– না আমার লজ্জা করে।
– প্লিজ….!
– আচ্ছা তাহলে শুনুন, “শীতকালে বিয়ে করলে শীত করে না।”
– বুঝিয়ে বলো?
– এতো পারবো না।প্র্যাক্টিক্যালি দেখাই?
– কিভাবে?
– কিছ্ছু বুঝেনা! আরে বাবা আজকে রাতে আমাদের প্র্যাকটিক্যাল ক্লাস হবে।
ছুটি…. ভাগেন…….!

সকালবেলা বউ ডেকে উঠলো,
– এইযে ফারাবী সাহেব ঘুম থেকে উঠুন।
– প্লিজ আরেকটু ঘুমোতে দাওনা।
– নাহ্ অনেক ঘুমাইছেন এবার উঠুন।
– উঠলে কি হবে?
– কিছু হবে না, মা ডাকছে ব্রেকফাস্টের জন্য।

ব্রেকফাস্ট করে তানজিনাকে নিয়ে একটু ঘুরতে গেলাম (পার্কে)। এই প্রথম আমার পার্কে যাওয়া! বন্ধুদের থেকে শুনতাম, পার্ক নাকি প্রেম করার জন্য উপযুক্ত স্থান। কিন্তু এখানে এসে যা দেখলাম তা সত্যিই আশ্চর্যের!!!  সিরিয়ালি প্রত্যকেটা ছেলে তাদের গার্লফ্রেন্ডের কোলে মাথা রেখে শুয়ে আছে! কি আদর!!!
সবাই সবার সামনে এভাবে গল্প করছে, কারো চোখে কোনো লজ্জা দেখছি না আমি।  এসব দেখে আমি আর আমার বউ খুব বিব্রতকর অবস্থায় পড়ে গেলাম! রিকশায় করে বাসায় ফিরছি……. মৃদু বাতাসে তানজিনার চুলগুলো উড়ছে! আমি অবাক হয়ে চেয়ে আছি! আসলেই সৃষ্টিকর্তার সৃষ্টির কোনো তুলনা নেই।

গল্পের বিষয়:
রোমান্টিক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত