ডায়নী মেয়ে

ডায়নী মেয়ে

:-হনুমান কইরে তুই?(অবনী)
:-তোমার মাথার উপর হনুমানী।(আমি)
:-ওই হনুমানী কী?
:-হনুমানের বউতো হনুমানীই হয় তাইনা।আমি হনুমান হলে তুইতো হনুমানী।কারণ তুই আমার —-না থাক বলতে লজ্জা লাগে।
:-আজ তুই কলেজে আয় তোর একদিন কী আমার একদিন।
:-ইসরে এখন যদি তোর কাছে থাকতাম তাহলে তোর রাগী লুকটা দেখতে পারতাম।শুনেছি মেয়েদের রাগলে খুব সুন্দর লাগে।
:-তুই আজ আয় দেখ তোর কী করি।
টুট টুট।
ওপাশ থেকে ফোন কল কেটে গেলো।আমার খুব হাসি পায় মেঘার কথা শুনলে।প্রতিদিন সকালে ফোন করে আমাকে ঝাঁড়ি মারবে।তারপর যখন আমি ওর সামনে যায় ঝাঁড়িতো দুরের কথা কী বলেছিলো ফোনে সব ভুলে যায়।অবশ্য ঝাঁড়ি দেওয়ার কারণ আছে।আমি প্রতিদিন দেরী করে কলেজে যায় আর মহারাণী আমার জন্য ওয়েট করতে করতে হাপিয়ে যায়।
আমি হুসাইন।অনার্স সেকেন্ড বর্ষের ছাএ।এতসময় ফোনে যার সাথে ঝগড়া করলাম তার নাম মেঘা।আমার জানের দোস।থুক্কু শুধু দোস না মনের মানুষও বটে।আমি মেঘাকে মনে মনে পছন্দ করি কিন্তু কখনো বলা হয়ে ওঠেনি।মেঘার সাথে বন্ধুত্বটা হয়েছিলো অদ্ভুদভাবে।
আমি আর আমার দুজন ফ্রেন্ড সেমিনারের সামনে বসে আছি।হঠাৎ স্যার আমাকে ডেকে পাঠালো।স্যারের প্রিয় ছাএ ছিলাম আমি।যেকোনো কাজে স্যার আমাকে সবার আগে ডাকে।
:-হুসাইন ওকে ফাষ্ট ইয়ারের ক্লাসরুম দেখিয়ে দাওতো।(একটা মেয়েকে দেখিয়ে স্যার বললো)
:-আচ্ছা।(আমি)
আমি মেয়েটিকে নিয়ে ক্লাসরুমে চলে আসলাম।
:-আপনার নামটাইতো জানা হয়নি।(মেয়েটি)
:-আমি হুসাইন।আপনি?(আমি)
:-মেঘা।আপনি কোন ইয়ারে?
:-ফাষ্ট ইয়ার।
:-তাহলেতো আমরা ক্লাসমেট।
:-জ্বি।আপনি হঠাৎ ফাষ্ট ইয়ারের মাঝামাঝি কোথা থেকে আসলেন?
:-আসলে বাসায় সমস্যার কারণে এতদিন আসা হয়নি।
:-ও।
:-আপনার কাছে নোটখাতা আছে?
:-জ্বি আছে।
এভাবেই মেঘার সাথে পরিচয়।এখন আমরা খুব ভালো ফ্রেন্ড।মেঘা আমার খুব কেয়ার করে বাট ভালোবাসে কিনা জানিনা।
এখন যায় তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নিই নাহলে আমার কপালে দুঃখ আছে।
রেডি হয়ে কলেজের উদ্দেশ্য রওনা হলাম।আমার ঘুম বাবাজির জন্য প্রতিদিন ওঠতে দেরী হয়ে যায়।ঘুম বাবাজি আমাকে ছাড়তেই চাইনা।কলেজের সামনের দোকান থেকে দুইটা ডেইরী মিল্ক কিনে নিলাম।প্রতিদিন এটা দিয়েই মেঘার রাগ ভাঙ্গাই।মেঘা ডেইরী মিল্ক হাতে পেলেই সব রাগ ভুলে যায়।
কলেজ গেট দিয়ে ঢুকতেই আমার চোখ কপালে।মেঘা মাঠের এককোণায় বসে একটা ছেলের সাথে গল্প করছে।ছেলেটাকে আমি চিনি।আমাদের এক ইয়ার উপরে পড়ে।আমি পকেট থেকে ফোন বের করে মেঘাকে ফোন দিলাম।রিং হচ্ছে কিন্তু ও ফোন ধরছেনা।আমি মেঘার কাছে গিয়ে বললাম
:-কিরে বারবার ফোন দিচ্ছি ধরিস না কেনো?(আমি)
:-তুই ফোন দিলি কখন?(মেঘা)
:-ফোনটা হাতে নিয়ে দেখ।
মেঘা ওর ব্যাগ থেকে ফোন বের করে দেখে বললো
:-সরিরে খেয়াল করিনি।
:-এদিকে আয় কথা আছে।
:-দেখছিস না গল্প করছি।তুইও বস আমাদের সাথে।
:-তোকে আমি আসতে বলেছি আয়।
আমি একপ্রকার জোর করে মেঘার হাত ধরে টেনে নিয়ে আসলাম।
:-কী হচ্ছে এসব?(মেঘা)
:-কী হচ্ছে বুঝিস না তুই?(আমি)
:-না বুঝিনা।
:-তুই ওই ছেলের সাথে বসে গল্প করছিস কেনো?
:-করেছিতো কী হয়েছে?
:-অনেককিছু।এরপর যেনো ওই ছেলের সাথে গল্প করতে না দেখি।
:-দেখ হুসাইন আমার সবকিছুতে নাক গলাতে আসবিনা।আমার যার সাথে খুশি তার সাথে কথা বলবো এতে তুই রেগে যাস কেনো এটা বুঝিনা।অনেক হয়েছে আর না।আমাকে একটু শান্তিতে থাকতে দে।
মেঘার কথা শুনে অবাক হলাম। এরকম ব্যবহার এর আগে কোনোদিন মেঘা করেনি।আর আমি মেঘার কাছ থেকে এমন ব্যবহার আশা করিনি।
:-আমি তোকে খুব বিরক্ত করি তাইনা?(আমি)
:-আমি সেটা বলিনি।(মেঘা)
:-বুঝেছি।আচ্ছা তোকে আর কোনদিন বিরক্ত করবোনা।
:-মর তুই।আমার চোখের সামনে থেকে যা।
আমি আর কিছু না বলে মেঘার সামনে থেকে চলে আসলাম।ক্লাসরুমে এসে বসলাম কিছুক্ষণ।মেঘাও এসে বসেছে।কিছুক্ষণ পরেই ক্লাস শুরু হবে।আমার ক্লাসে মন বসছেনা।ঘুরেফিরে একটা কথাই মনে পড়ছে”” তুই আমার সামনে আর আসবিনা””।ক্লাস না করে বাসায় চলে আসলাম।মনটা খুব খারাপ হয়ে আছে।মেঘা আমার সাথে এমন ব্যবহার করবে স্বপ্নেও ভাবিনি।
আজ ২দিন কলেজে যায়না।মেঘার সাথে কোনো যোগাযোগ করিনি।সেদিন বাসায় আসার পর থেকে ফোন অফ করে রেখেছি।আম্মু অনেকবার জিঙ্গেস করেছে কী হয়েছে আমি প্রতিবারই বলেছি শরীলটা ভালো লাগছেনা।মেঘাকে খুব মিস করছি।মেঘার বাসা আর আমাদের বাসা পাশাপাশি গ্রামে।আব্বু আম্মু সবাই আমাদের বন্ধুত্বের ব্যাপারে জানে তেমনি মেঘার ফ্যামিলির লোকজনও জানে।মেঘা অনেকবার আমাদের বাসায় এসেছে আমিও ওদের বাসায় গিয়েছি অনেকবার।
আমার ভাবনায় ব্যাঘাত ঘটিয়ে রুমে কেউ ঢুকলো।আমি কিছু বুঝে ওঠার আগেই একটা মানুষ আমার উপর ঝাপিয়ে পড়লো।হ্যা মেঘা এসেছে।আমি নিজেকে মেঘার কাছ থেকে ছাড়িয়ে বললাম
:-আপনি কেনো এসেছেন এখানে?(আমি)
:-আমার শুশুর বাড়িতে আমি আসবো তাতে কার কী শুনি?(মেঘা)
:-আপনি ভুল বাড়িতে এসেছেন।
:-ওই কী বললি তুই?আবার বল কথাটা?
:-আপনি কী কানে কম শুনের নাকি?
মেঘা আমার কথার উওর না দিয়ে আমার কান টেনে ধরলো।এরপর টানতে টানতে ড্রয়িংরুমে নিয়ে আসলো।
আমার কাছে খুব ব্যাথা লাগছে সাথে লজ্জাও লাগছে।ড্রয়িংরুমে আব্বু,আম্মু,ছোট চাচি আরো অনেকে বসে আছে।
:-মেঘা কান ছাড় খুব লাগছে।(আমি)
:-ছাড়বোনা।দুদিন আমার সাথে যোগাযোগ করিস নি তার বিচার হবে তারপর ছাড়বো।(মেঘা)
আমার এই অবস্থা দেখে সবাই মিটমিট করে হাসছে।
:-আন্টি আঙ্কেল এই গাধার বিচার করেন আপনারা।আজ দুই দিন ও আমার সাথে কথা বলেনি।(মেঘা)
:-আমরা শাস্তি দিতে পারবোনা মামনি।তোমাদের ব্যাপার তোমরাই মিটাও।(আব্বু)
ইস বলে কী?আব্বুর কথা শুনে মনে হচ্ছে আমার থেকে মেঘাকে তারা বেশি ভালোবাসে।
:-গাধাটাকে বাইরে নিয়ে যাও।আজ দুদিন রুম থেকেই বের হয়না।(আম্মু)
:-আন্টি একটা কথা বলবো?(মেঘা)
:-বলো।(আম্মু)
:-আমি এই গাধাটাকে সারাজীবনের জন্য আমার কাছে রেখে দিতে চাই।
:-সেটাতো আমরা কবেই দিয়ে দিয়েছি।
বলে কী এই মাইয়া?মুখে কোনো কথা আটকায় না।আমিই মনে হয় একমাএ ছেলে যাকে কোনো মেয়ে সামনাসামনি ছেলেটির পরিবারের লোকজনের কাছে নিজের ভালোবাসার কথা বলে।আমার আব্বু আম্মু মনে হয় পাগল হয়েছে নাহলে এরকম একটা কথা শুনার পর চুপ করে থাকে।আমি নিশ্চিত আমার বাবা মায়ের পরিবর্তে অন্যকেউ হলে আমাকে সহ মেয়েটির অবস্থার বারোটা বাজিয়ে ছাড়তো।
মেঘা আমার কান ধরে টানতে টানতে বাইরে নিয়ে আসলো।গেটের বাইরে এসে একটা রিক্সা ঠিক করে তাতে আমাকে ওঠালো।রিক্সাতে ওঠার পর মেঘা আমার কান ছেড়ে দিলো।যাক বাবা বাঁচলাম।মেয়েতো নয় যেনো ডায়নী। আমার কানটা ছিঁড়ে ফেলার মত অবস্থা করে ফেলেছিলো।
:-ওই তুই কী মানুষ না অন্যকিছু?(আমি)
:-আমি মানুষ না ভূত।হি হি হি হি(মেঘা)
:-দাঁত কেলিয়ে হাসছে।আমার কানের বারোটা বাজিয়ে দিয়েছিস তুই।
:-ঠিকই করেছি।
:-তোর মত ডায়নী মেয়ে জীবনেও দেখিনি।
:-এখন থেকে রোজ দেখবি।
:-তুই আস্ত একটা পেইন।
:-সেমটু।
:-ধ্যাত থাক তুই।মামা রিক্সা থামান।
:-না মামা থামাবেন না।আর তুই যদি এখন রিক্সা থেকে নামিস তাহকে আমাকে সারাজীবনের জন্য হারাবি।
মেঘার শেষ কথাটা শুনে চুপ করে বসে রইলাম।আমি মেঘাকে কখনোই হারাতে চাইনা।
মেঘা আমার কাঁধে মাথে রাখলো।এই প্রথম মেঘা আমার কাঁধে মাথা রাখলো।এর আগে অনেকবার রিক্সাতে ওঠেছি কিন্তু মেঘা আমার কাঁধে মাথা রাখেনি। মেঘা চুলগুলো খুলে দিলো।ওর চুল বাতাসে উড়ে এসে আমার মুখে পড়ছে।অদ্ভুদ এক ভালোলাগা কাজ করছে আমার মাঝে।
:-ভালোবাসিস আমাকে?(আমি)
:-না বাসিনা।(মেঘা)
:-সত্যিতো?
:-আস্ত একটা গাধা তুই।তোর বাসার সবার সামনে কী বললাম ভুলে গেছিস?
:-আমি এখন আবার শুনতে চাই।
:-বলবোনা।
:-ওকে লাগবেনা।
কথাটা বলে অন্যদিকে মুখ ঘুড়িয়ে বসে রইলাম।
:-আমার বাবুটা রাগ করেছে?(মেঘা)
:-আমি কারো বাবু না।(আমি)
:-ভালোবাসি তোমাকে বাবু।
:-আমি বাসিনা।
আমার কথা শুনে মেঘা আমার কাধ থেকে মাথা ওঠিয়ে আবার আমার কান চেপে ধরলো।তবে এবার অনেক শক্ত করে।ব্যাথা পাচ্ছি খুব।
:-ছাড় লাগছে খুব।(আমি)
:-আগে ভালোবাসি বলবি তারপর ছাড়বো।
:-বলছি বলছি আগে কানতো ছাড়।
মেঘা কান ছেড়ে বললো
:-হুম বল।
:-কী বলবো?
মেঘা আমার কথা শুনে চোখ গরম করে আমার দিকে তাকালো।আমি বড় কিছু ঘটার আভাস পাচ্ছি।কোনকিছু ঘটার আগেই ভালোবাসি বলে দিতে হবে নয়তো আমি শেষ।
:-ভালোবাসি।(আমি)
:-কাকে?(মেঘা)
:-তোমাকে।
:-আপা আমি কিন্তু সব শুনে ফেলছি।(রিক্সাওয়ালা)
রিক্সাওয়ালার কথা শুনে আমি আর মেঘা দুজনেই লজ্জা পেলাম।আমাদের খেয়ালই ছিলোনা আমরা রিক্সাতে বসে আছি।মেঘা কাঁদে মুখ লুকিয়ে রাখলো।আমাদের কান্ড দেখে রিক্সাওয়ালা মামা মিটমিট করে হাসছে।

……………………………………..*সমাপ্ত*………………………………….

গল্পের বিষয়:
রোমান্টিক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত