বোবা বউ

বোবা বউ

আজ শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটির দিন তাই সকালেও একটা লম্বা ঘুম দিলাম।অন্য সকল দিনেই সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে অফিসের উদ্দেশ্যে যেতে হয় সে জন্য আজ একটু রেস্ট নেয়া আরকি।কিন্তু বাসায় যে বউ আছে তার জন্য কি শান্তির ঘুম সফল হয় নাকি।একটু পর পর এসে হাতের চুড়ির ঝনঝন শব্দ শুনিয়ে যায়,তারপর মুখে সজোরে ফু দিয়ে যায় যেন ঘুম থেকে উঠি।
.
কিন্তু আজ আমি উঠার নয়।আজ ঘুমাবই খুব ক্লান্ত লাগছে তাই।কিন্তু আমার সোনা বউ পর পর তিনবার এসে ঘুম থেকে উঠানোর চেষ্টা করলো সেই আগের সিস্টেমে।কিন্তু
আমি ঘুম থেকে না উঠে সেই আগের মতই শান্তির ঘুমে আছি।একটু পর খেয়াল করলার আমার সোনা বউ আর এসে ঘুম থেকে উঠানোর চেষ্টা করছে না।মনে হয় রাগ করেছে নো প্রবলেম কিভাবে রাগ ভাংগাতে হয় তা আমি ভাল ভাবেই জানি।
.
আমার সোনা বউয়ের নাম অনামিকা।দেখতে ফাটাফাটি কিন্তু একটা প্রবলেম হল সে কথা বলতে পারে না মানে বোবা আরকি।আমাদের বিয়ে টা হয়েছে পারিবারিক ভাবে দেখাদেখি করে।আসলে বিয়ে করেছি আমি এক প্রকার জেদ করে।
.
কারন আমি একটা মেয়েকে ভালবাসতাম।মেয়েটি অনেক সুন্দর ছিল।এককথায় আধুনিক স্টাইলিশ টাইপের মেয়ে।নাম ছিল আদিবা,মেয়েটি দেখতে যেমন সুন্দর ছিল,তেমনি ছিল তার কন্ঠ আর কথাবার্তা।সব মিলিয়ে পারফেক্ট একটা মেয়ে ছিল।কিন্তু তার সবচেয়ে বড় দোষ ছিল সে অংহকার করতো তার রুপ আর সৌন্দয নিয়ে।সবসময় আমাকে তার অযোগ্য বলে আমাকে রাগাতো।
.
যেহেতু আমি খুব আহামরি বড় লোক ফ্যামিলির না।তাই তার পিছনে খুব বেশি টাকা উরাতে পারতাম না।তবে যথেষ্ট টাকাই তার পিছনে খরচ করতাম।হঠাৎ একদিন সে আমাকে বলে গেল আমি নাকি তার যোগ্য না আমার যোগ্য এক মেয়ে দেখে প্রেম করতে তারপর বিয়ে করতে।এই বলে এক বছরের প্রেম প্রত্যাখ্যান করে চলে গেল আদিবা।
.
তারপর থেকে আমি অন্যরকম হয়ে যাই।ঠিক মত খাওয়া দাওয়া আর ঘুমাই না।এতে আমার আব্বু আম্মু আর আমার একমাত্র মামা যিনি আমাকে আপন ছেলের মত মনে করে তারা সবাই টেনশনে পড়ে গেল।মামা আব্বু আম্মুর সাথে একটা বুদ্ধি করে তার অফিসে আমাকে বসতে বলল।আসলে আমার মামার কোন সন্তান ছিল না।তাই তিনি সবসময় আমাকে তার পুরো অফিসের দায়িত্ব দিতে চেয়েছিলেন।আর এবার এক প্রকার জোর করে অফিসে বসিয়ে দিলেন।
.
তারপরেও দেখা গেল আমি ঠিক মত অফিসের কাজ করি না।মামা এসে সব ঠিক করে দিয়ে যায়।এবার আমার আব্বু,আম্মু আর আমার মামা প্ল্যান করে আমাকে বিয়ে দিবে।তারা চিন্তা করেছিল বিয়ে দিলে হয়তো সব ঠিক হয়ে যাবে।তাই আমাকে জোর করে পাত্রি দেখাতে নিয়ে যাওয়ার জন্য রাজি করায়।
.
যথাসময়ে পাত্রি দেখার জন্য হাজির হলাম পাত্রির বাসায়।পাত্রি মানে অনামিকাকে আমাদের সামনে আনা হল।আমি লজ্জায় তাকাতে পারি নি নিচেই দিকেই তাকিয়েছিলাম।হঠাৎ আম্মু অনামিকাকে একটা প্রশ্ন করলো।অনামিকা কিছু বলল না আবার আম্মু প্রশ্ন করলো।তার বাবা তখন বলল অনামিকা কথা বলতে পারে না।ছোট বেলায় কোন একটা এক্সিডেন্ট এর কারনে।এই বলে তিনি কান্না করতে করতে চলে গেল।
.
অনামিকার বাবার কান্না শুনে কেমন যেন আমার খারাপ লাগলো।তাই ইচ্ছে হল অনামিকাকে এক পলক দেখার জন্য।অনামিকাকে দেখেই আমি অবাক হলাম।এত্ত সুন্দর একটা মেয়ে এত্ত মায়াবি চেহারার অধিকারী একটা মেয়ে কথা বলতে পারে না।আর তাই বিয়ে হচ্ছে না চিন্তা করতেই আমার খুব খারাপ লাগল।তাই তখনি সিদ্ধান্ত নিলাম একেই বিয়ে করব কারন এ মেয়ের অংহকার থাকবে না।আর আমি তার অযোগ্য নই।
.
এদিকে আব্বু,আম্মু আর মামা মেয়ের এই প্রবলেম শুনে এই বিয়ে হবে না বলে চলে যাচ্ছিলেন।ঠিক সেই সময় আমি জোরে বললাম,, আমি এই মেয়েকেই বিয়ে করব কারন আমি এই মেয়েকে পছন্দ করে ফেলেছি।আর তাই আজকেই বিয়ে করব।আমার কথা শুনে মেয়ের আম্মু আর পরিবারের সবার মুখে হাসি ফোটে উঠল। প্রথমে আব্বু,আম্মু আর মামা একটু ইতস্ততবোধ করলেও পরে আমার দিকে তাকিয়ে রাজী হল।তারপর তৎক্ষনাত কাজী ডেকে এনে বিয়েটা সম্পন্ন করা হল।আর এই ভাবেই আমার বিয়েটা হয়েছিল।
.
যাক গে সে কথা,অনেকক্ষন হয়ে গেল আর তো অনামিকা আসলো না আমার কাছে।মনে হচ্ছে খুব রাগ করেছে আজ।করুক রাগ আমিও জানি কি করে রাগ ভাংগাতে হয়।
.
তাড়াতাড়ি বিছানা থেকে উঠে গিয়ে অনামিকাকে খুঁজতে লাগলাম।খুঁজতে খুঁজতে রান্না ঘরে পেলাম দেখলাম সে নাস্তা বানাচ্ছে।একি আজ তো দেখছি তিনজনের নাস্তা হচ্ছে।মানে আমার নাস্তা অফ।আমি তাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরলাম।সে এক ঝটকায় তাকে ছাড়িয়ে নিয়ে আমার দিকে হাতের আংগুল উচিয়ে সাবধান করে দিল।আর বুঝালো আমার সাথে তার কোন কথা নেই।
.
আমি ও তখন একটু রাগ দেখিয়ে চলে আসলাম।মানে পল্টি নিলাম আরকি এমন ভাব ধরলাম আমি খুব রাগ করছি।আসলে এটা হল রাগ ভাংগানোর থেরাপি।
.
একটু পর দেখি আমার সোনা বউ আমার কাছে এসে লজ্জিত ভাবে বসে বুঝালো নাস্তা রেডি।এখন দুইজন একসাথে বসে খাবে।আমি মনে মনে বললাম,,ইয়েস থেরাপি কাজ হয়েছে।কিন্তু আমি তো প্রচুর রাগ করেছি।না খেতে যাওয়া উচিত হবে না।তাই বলে দিলাম খাব না।সে আর কিছু না বলে চলে গেল।
.
দেখতে দেখতে দুপুর হয়ে গেল।এমন ক্ষুদা লাগছে মনে হচ্ছে পেটে কেউ বসে ছুরি চালাচ্ছে।তাই চুরি করে খাওয়ার জন্য খাবার টেবিলে দিকে যেতেই দেখলাম।আমার রাক্ষসী সোনা বউ খাচ্ছে আহা হা মুরগির রোস্টের ঘ্রান।জিবে জল এসে গেল আমার।অনামিকা আমার দিকে দেখালো খাব কিনা।আমি বললাম খাব না।বলার সাথে সাথে সে আমাকে দেখিয়ে দেখিয়ে রাক্ষসের মত অন্য গুলা খেতে লাগল।এভাবে রাতেও না খেয়ে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম।
.
হঠাৎ মাঝরাতে টের পেলাম কেউ আমার বুকের মধ্যে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে।আমি চোখ খুলে দেখলাম আমার সোনা বউ কাঁদছে।আমি বললাম কি হয়েছে কান্না করছো কেন।সে আমাকে বুঝালো আমি নাকি অজ্ঞান হয়ে গেছিলাম।আমাকে অনেক বার উঠানোর চেষ্টা করেছে কিন্তু উঠিনি।আমাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে করতে বুঝালো সে আর কোন দিন আমার কাছে কোন কিছু চাইবে না সারাজীবন আমি তার পাশে থাকলেই হবে।আসলে আজকে অনামিকাকে নিয়ে ঘুরতে বের হওয়ার কথা ছিল।আর আমি সেটা ভুলেই গিয়েছিলাম।
.
আমি অনামিকার চোখের পানি গুলা মুছে দিয়ে কপালে একটা উষ্ণতার ছোয়া একে দিয়ে।মোবাইলটা বের করে মামাকে ফোন করে বলে দিলাম কাল অফিসে যান না।মামা যেন গিয়ে অফিস সামলায়।কারন কালকে সারাদিন তার ভাগিনার বউ কে নিয়ে ভাগিনা বিভিন্ন জায়গায় ঘুরবে।এই বলে অনামিকাকে কোলে করে নিয়ে খাবার রুমে গিলে দুইজনে একসাথে খাবার খেলাম।

 

………………………………………….(সমাপ্ত)…………………………………….

গল্পের বিষয়:
রোমান্টিক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত