– আপনার মনে খুব কষ্ট, তাই না? (মিষ্টি মেঘ)
-আপনি কি মনোবিজ্ঞান নিয়ে পড়াশুনা করেন? (আমি)
– নাতো, কেন?
– আপনার কি দেখে মনে হলো আমার মনে খুব কষ্ট??
– না মানে… কিভাবে শুরু করবো বুঝতে পারছিলাম না তাই……..
– হুম, এখন কিভাবে শেষ করতে দেখাচ্ছি ৷
ভাল থাকবেন, শুভরাত্রি ৷ Bye….
রিপ্লাইয়ের অপেক্ষা না করে বালিশের আশ্রয় নিলাম ৷ ফেসবুকে এখন ফেক আইডির ছড়াছড়ি, তাই এদের কথা ভেবে ঘুম নষ্ট না করাই ভালো ৷
পরদিন সকালে উঠে দেখি ফেসবুক থেকে বের হতে ভুলে গেছিলাম এবং ওই আইডি থেকে ১৩টা মেসেজ ৷
আমি অনলাইনে আছি কিন্তু রিপ্লাই দিচ্ছি না কেন? ঘুমিয়ে পড়লাম নাকি? এত ভাব কেন আমার?
এরকম ছিল মেসেজের কথাগুলো ৷ দেখি আইডি টা অনলাইনে আছে ৷ ছোট করে একটা মেসেজ দিলাম,
– শুভ সকাল ৷
– শুভ সকাল, কেমন আছেন?
– ভাল, আপনার নাম কি?
– মিম
– Sweet name.
– ধন্যবাদ ৷ এখন কলেজে যাব, রাতে কথা হবে, বাই
– Ok, Bye…
এভাবেই শুরু হয় আমাদের সম্পর্কটা ৷ আমাদের কথাবার্তা সবসময় মেসেজের মাধ্যমে হতো, কখনো কেউ কারো কন্ঠ শুনিনি এমনকি ছবিও দেখিনি ৷
আমাদের পরষ্পর বোঝাপড়াটা ছিল দারুন ৷ ও খুব ভাল বুঝতো আমাকে ৷ সারাদিন কে কি করলাম তা শেয়ার করতাম একে অপরের সাথে ৷
আমি অনেকটা নির্ভরশীল হয়ে পড়ি মিমের উপর ৷ ওর মায়ায় জড়িয়ে যাই গভীরভাবে ৷ বুঝতে পারি আমি ওকে ভালবেসে ফেলেছি ৷
অনেক ভেবে মেসেজ দিলাম…….,
– তোমার সাথে কিছু কথা আছে ৷ মেসেজে বলা যাবেনা, অনেক সিরিয়াস ৷ ০১৭……….. এটা আমার নাম্বার ৷
১০ মিনিট পর অপরিচিত নাম্বার থেকে কল, বুঝলাম মিমের ফোন ৷ রিসিভ করে,
– হ্যালো, কে? মিম? (আমি)
– হ্যা, বলো কি তোমার সিরিয়াস কথা ৷ (মিম)
– আমি মিষ্টি মেঘে মায়ায় জড়িয়ে গেছি ৷ এর থেকে বের হওয়ার ক্ষমতা আমার নেই ৷
আর বের হতেও চাই না, আমি এই মেঘের মায়ায় জড়িয়ে থাকতে চাই সারাজীবনের জন্য ৷
এক নিমিষে বলে ফেলালাম কথাগুলো ৷ মিম নিশ্চুপ…
আমি আবার বললাম,
– কি হলো, কিছু বলবা না?
– তুমি তো আমায় কখনো দেখনি ৷
– দেখাটা আমার কাছে বড় বিষয় না ৷
– তারপরও আমাকে দেখার পর তোমার মনের পরিবর্তনও হতে পারে ৷
– তোমার যদি তাই মনেহয় তাহলে চলো কাল দেখা করি ৷
– আচ্ছা ঠিক আছে ৷
আজ আমাদের প্রথম দেখা হবে ৷ আমি ওকে একটা নীল শাড়ী পরে …….পার্কে আসতে বলেছি ৷
কিন্তু পার্কে কোন নীল শাড়ী পরা মেয়ে দেখলাম না ৷ এক কোনায় একটা মেয়ে একা বসে আছে ৷ সামনে এগিয়ে গেলাম, মোটা এবং শ্যামলা বর্ণের একটা মেয়ে ৷
আমি বললাম….,
– মিম?
– হুম, তুমি রিয়াদ
– হ্যা
চেহারাটা সুন্দর না তার জন্য একটু খারাপ লাগলেও বেশি খারাপ লাগছিল শাড়ীটা না পরার জন্য ৷ কিন্তু খারাপ লাগার চেয়ে ভালবাসাটা একটু বেশি ছিল ৷
তাই ওর হাতে একটা গোলাপ দিয়ে বললাম,
– Will you marry me?
ও আমার দিকে অবাক হয়ে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকলো ৷ হটাৎ পেছন থেকে নীল বসনা এক মায়াবী নারী মুর্তি আমার সামনে এসে দাড়ালো ৷
তারপর বসে থাকা মেয়েটি আমার দেওয়া গোলাপটি এই নীল বসনার হাতে দিয়ে বলল,
– নে, সামলা তোর রোমিওকে ৷
খেলাটা বুঝতে আমার দেরি হলো না ৷ মিম আমার পাশে এসে বসল, কিন্তু চুপ করে বসে আছে ৷ আমি ওর কানের কাছে মুখ নিয়ে বললাম,
– I Love You mim…
– (নিশ্চুপ)
আরো কয়েকবার বললাম ৷ মিম সেভাবেই নিশ্চুপ, শুধু আঙ্গুলের কড় দিয়ে কিছু একটা গুনছে ৷
আমি একের পর এক প্রশ্ন করে যাচ্ছি, কিন্তু ও কিছুই বলছে না ৷ আমি একটু রেগে গিয়ে বললাম,
– কিছু বলো, যদি না বলতে চাও তাহলে চলো উঠে পড়ি ৷
– ১৩টা শেষ, I Love You too….
– এতক্ষণ কি হলো?
– এটা আমার ১৩টা মেসেজের রিপ্লাই না দেওয়ার শাস্তি ৷
বলে একটা দুষ্ট হাসি দিয়ে আমার কাঁধে মাথা রাখলো ৷
অস্তমিত সূর্য, সবুজ ঘাস, একটা কদম গাছ আর গাছের ডালে বসে থাকা একটি শালিক পাখি সাক্ষী হয়ে রইলো আমাদের ভালবাসার ৷