** প্রায় রাতে রুপা আমাকে ফোন দিয়ে ওয়েটিংয়ে পেত। আমি কথা ঘুরিয়ে বলতাম ‘ বাবু আমার ফ্রেন্ড কল দিছিল। রুপা আমার কথা বিশ্বাস করে বলত আচ্ছা ঠিক আছে।।
আমি শান্তিতে নিশ্বাস ফেলে রুপার সাথে ৫মিনিট কথা বলার পর’ বলতাম আমার শরীর খারাপ লাগছে – ঘুমিয়ে যাই? রুপা আমার কথা শুনে বলত আচ্ছা ঘুমিয়ে পরো তুমি।
আমি এই ভাবে দিন দিন রুপাকে এভয়েড করতে লাগলাম। আমার এখন আর ওকে ভাল লাগে না। আমি এই সম্পর্কে বিরক্ত হয়ে গেছি।
প্রতিদিন ফোনে কথা বলা ‘ দেখা করা আমার আর ভালো লাগে না। রুপা এইসব হয়তো বুঝতে পেরেছে তাই আর দেখা করার কথা বলে না।
আমি প্রায় রাতে ওয়েটিংয়ে থাকতাম আর রুপা আমায় বার বার কল দিত!!
সে দিন রাতে ৩টার সময় ফোনে কথা বলছি’ তখন হঠাৎ ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখি ৫৩টা ফোন কল আসছে ওয়েটিংয়ে।
আমি ফোন ব্যাক করে শুনতে পারলাম রুপা কান্না করছে!! কান্না করে করে আমায় বলল ‘ আজকে ও কি ফ্রেন্ড কল দিছে??
আমি রুপার কথা শুনে চুপ করে থাকলাম কিছু বললাম না।
– – দু দিন পর এক বিকালে রুপার সাথে দেখা হল সেই পার্কে। যেখানে আমি রুপাকে প্রথম ভালবাসার কথা বলেছিলাম।
আজ রুপা নীল শাড়ি পরে এসেছে। আমায় দেখে রুপা অনেক খুশি।
আমি ওর মুখ দেখে বুঝতে পারলাম – রুপা খুশিতে ফোন ওয়েটিং এর কথা সব ভুলে গেছে! রুপা আমার পাশে বসে আছে।
রুপা: তুমি খেয়ে এসেছ?
আমি : হুম।
রুপা : বাসার সবাই ভাল আছে?
আমি রুপার দিকে তাকিয়ে বললাম ‘ হুম ভাল আছে। আমি এখানে রুপার সাথে প্রেম করতে আসিনি!!
আমি এসেছি এই সম্পর্ককে এখানেই শেষ করতে। আমার ভালো লাগছে না আর এইসব।
রুপা ব্যাগ থেকে টিফিন বক্স বার করে বলল ‘ তোমার জন্য নিজে বানিয়ে এনেছি। তোমার প্রিয় খাবার পাটিশাপতা ।।
আমি রুপার দিকে তাকিয়ে বললাম ‘ আমি কিছু বলতে চাই তোমায় রুপা। রুপা তখন টিফিন বক্স খুলে হাতে চামচ নিয়ে বলল – খেয়ে খেয়ে বলো।
আমি রুপার মুখে ভালবাসা আর মিষ্টি হাসি দেখতে পাচ্ছি। কিন্তু আমি আমার মন কঠিন করে বলে দিলাম সব’ ব্রেক-আপ এর কথা।
আমার কথা শুনে ওর হাত থেকে চামচ মাটিতে পরে গেল – তাকিয়ে থাকল অসহায় হয়ে।।
তারপর বলল ‘ ২বছরের সম্পর্ক আমাদের আর তুমি বলছ এখন ব্রেকাপ !! কোথায় হারিয়ে গেল তোমার সেই সব প্রমিস? আমার হাতে হাত রেখে করা ওয়াদা।
আমি রুপার কথা শুনে চুপ করে দাঁড়িয়ে আছি কিছু বলছি না।
রুপা আবার বলল ‘ মনে আছে বলেছিলে আমার হাত ধরে ‘এই জায়গায় দাঁড়িয়ে- রুপা আমি কোন দিন তোমাকে ছেড়ে যাব না!
রুপা আমি ভালবাসি তোমায়!! কোথায় গেল সেই সব কথা! কোথায় হারিয়ে গেল দিপ?? আমি রুপার কথা শুনে চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকলাম।
তারপর বললাম ‘ আমি ভালবাসতাম তোমায় কিন্তু এখন আর বাসি না। আমায় মাফ করে দাও। মনে কর এইসব শুধু টাইম পাস ছিল আর কিছু না।
দয়া করে আমায় ভুলে যাও। বাবা মা যেখানে বিয়ে দিবে সেখানে বিয়ে কর ‘ দেখবা অনেক সুখে থাকবা।
– – রুপা আমার কথা শুনে চুপ করে দাঁড়িয়ে ‘মাটির দিকে তাকিয়ে আছে। ওর চোখ থেকে টপটপ করে জল মাটিতে পরছে ।
আমি রুপার কান্না দেখে বললাম ‘ কান্না করে কি হবে? ভালবাসা তো আর জোর করে হয়না। আর তা ছাড়া আমার চাকরি নেই – বিয়ে করে তোমায় খাওয়াব কি?
রুপা কান্না মাখা চোখ নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বলল ‘পানি খেয়ে থাকতে পারব কিন্তু আমায় ভুলে যেও না।
আমি বললাম’ পানি খেয়ে কি জীবন চলে? এই সব চলচ্চিত্রে হয়’ বাস্তবতা অনেক কঠিন!!
সে দিন রুপা আমার চোখে চোখ রাখতে পারছিল না। শুধু কান্না করছিল। আমি ওর কান্না সেই দিন দেখতে পারিনি। আমি অমানুষ হয়ে গিয়েছিলাম।
আমার মন সে দিন হয়তো মানুষের মন থেকে পরিবর্তন হয়ে ‘ পশুর মন হয়ে গেছল!! আমাদের ব্রেক-আপ হয়ে গেল।
আমি রুপার নাম্বার ‘ফোন থেকে কেটে দিলাম। রুপা মাঝেমধ্যে আমায় কল দিত কিন্তু আমি রিসিভ করতাম না। আমার এইসব বিরক্ত লাগতো।
বিরক্ত লাগার কারণ তখন আমার আরো একটা বড় লোকের মেয়ের সাথে প্রেম হয়ে গেছে। মেয়েটা আমায় বিয়ে করতে চায়। ওর নাম হল ইরা।
ইরার সাথে প্রথম দেখা হয় আমার এইটা শপিং মলে। তখনও রুপার সাথে আমার সম্পর্ক ছিল কিন্তু আমি সেই সময়কালে রুপার কথা চিন্তা করি নি।
ইরা যেদিন প্রথম আমায় বিয়ের কথা বলল ‘ তখন আমি কোন কিছু চিন্তা না করেই হ্যা বলে দিলাম। আমার মনে হয়নি রুপার কথা।
মনে হয়নি এইটা বিশ্বাস আমার পথ চেয়ে আছে। আর সেই বিশ্বাস এর নাম রুপা।
– –প্রায় রাতে রুপা আমায় কল দিত আর কান্নাকাটি করতো। আমি বিরক্ত হতাম।
চুপ করে কান্না করা শুনতাম তারপর বলতাম ‘ তোমার কান্না করা শেষ’ এখন ফোন রাখি? আমি ঘুমাব।
এই বলে ফোন কেটে দিতাম কিন্তু রুপা আমায় আবার ফোন দিত তখন আমি বিরক্ত হয়ে ফোন অফ করে দিতাম।।
সে দিন রাতে ঘুমিয়ে আছি তখন রুপা ফোন দিচ্ছে। আমি ওর কল দেখে বিরক্ত হয়ে বার বার ফোন কাটছি কিন্তু মেয়েটা ভীষণ ছেছরা!! কল দিচ্ছে আর দিচ্ছে।
শেষমেশ রাগ করে কল রিসিভ করে বললাম’ সমস্যা কি তোমার??
রুপা আমার কথা শুনে চুপ করে রইল তারপর বলল Happy Birthday To You. আমি রুপার কথা শুনে হা করে দিলাম।
আজকে আমার জন্মদিন?? আমি ভুলেই গিয়েছিলাম। ইরা আমায় একবারও ফোন দিয়ে কিছু বলল না অথচ রুপা ঠিক সেটা মনে রেখেছিল।
আমি সে দিন রাতে রুপার সাথে একটু ভাল করে কথা বললাম। আমি রুপার কন্ঠ শুনে বুঝতে পারলাম ওর শরীর ভাল না।
রুপা ফোন রাখার আগে বলল ‘ চিন্তা কর না আমি আর ফোন দিব না। ভালো থেকো নিজের খেয়াল রেখো । এই বলে ফোন রেখে দিল রুপা।।
– – ইরা অবশ্য পরের দিন আমার জন্ম দিনের উইস করল আর বলল’ বাবু আমি ঘুমিয়ে গেছিলাম রাতে। প্লিজ রাগ করো না।
আমি আর ইরার উপর রাগ করে থাকতে পারলাম না। ইরাকে পেয়ে আমি রুপার কথা ভুলে গেলাম। এখন আর রুপা আমায় কল দেয় না।
আমি এখন ইরা নিয়ে বেস্ত। ইরা প্রতিদিন আমার সাথে দেখা করতো কফি শপে। এই ভাবে দিন চলতে থাকে। আমাদের ভালবাসা বাড়তে থাকে।
রাতে খাওয়া দাওয়া করে ঘুমিয়ে আছি তখন একটা নাম্বার থেকে ফোন আসে। আমি ফোন রিসিভ করে জানতে পারলাম” এই নাম্বার রুপার ফ্রেন্ড আকাশের।
আকাশ আমায় বলল ‘ ভাইয়া আপনি কেন এমনটা করলেন রুপার সাথে? রুপা না খেয়ে থাকে -কারো সাথে কথা বলে না। বাসায় একা বসে কান্না করে।
ভাইয়া ওর অবস্থা খুব খারাপ। এই ভাবে চলতে থাকলে রুপা বাঁচবে না!!
আমি আকাশের কথা শুনে রাগে ফুলে গিয়ে বললাম ‘ তোর যখন এতো চিন্তা রুপাকে নিয়ে তা হলে তুই ওর সাথে প্রেম করিস না কেন সালা??
– – আকাশের সাথে কথা বলার সময় – ইরা ৩/৪ বার ফোন ওয়েটিংয়ে পেয়েছে আমার। আমি ফোন ব্যাক করে দেখি মেয়েটা মন খারাপ করে বসে আছে।
আমায় বলল ‘ তুমি কার সাথে প্রেম করছিলা দিপ? আমি বললাম কেউ না ইরা ছোট ভাই ফোন দিছিল। কিন্তু এইরা আমার কথা শুনলনা।
মন মরা হয়ে কথা বলল। আমি বুঝতে পারলাম ‘ মেয়েটা আমায় অনেক ভালবাসে। আমি পরের দিন ইরা সাথে দেখা করলাম।
ইরা আমার সামনে মন খারাপ করে বসে আছে। আমি চকলেট দিয়ে বললাম ‘ আমি সত্যি কাল রাতে কোন মেয়ের সাথে কথা বলি নাই ইরা।
অনেক বুঝানোর পর ইরা আমার দিকে তাকিয়ে বলল ‘ আচ্ছা বিশ্বাস করলাম তোমায়। আমি ইরার কথা শুনে শান্তিতে নিশ্বাস ফেললাম।
ইরা আমার হাতে হাত রেখে বলল’ আমি তোমায় ছাড়া বাঁচবোনা দিপ। তুমি বিশ্বাস কর দিপ আমার আর কোন BF নেই।
আমি শুধু তোমাকে ভালবাসি – বিশ্বাস করি। আমার বিশ্বাস নষ্ট করে দিও না।। আমি ইরার কথা শুনে চুপ করে থাকলাম।
চিন্তা করতে থাকলাম মেয়েটা আমায় কত ভালবাসে। তারপর বললা ‘ না ইরা আমি তোমাকে ছেড়ে কোথাও যাব না ।
– – আমি কথা বলা শেষ করার সাথে সাথে এইটা ছেলে এসে আমাদের পাশে দাঁড়াল। ইরা ছেলেটাকে দেখে চমকে গেল।
ছেলেটা বলল ‘ তুমি এখানে কি কর ইরা?? তুমি না বললা ‘ তুমার শরীর খারাপ বের হতে পারবা না! আমি এইসব শুনে হা করে দিলাম।
জানাতে পারলাম এই ছেলেটা ইরার BF.. ইরা ছেলেটিকে বলে’ জান আমি কাজিন এর সাথে দেখা করতে এসেছি। আমি ইরার কথা শুনে হা করে আছি!!!
– – রাতে দাঁড়িয়ে আছি ছাদের। আজ রুপার কথা অনেক মনে হচ্ছে। আমি খারাপ একটা মেয়ের জন্য রুপার মতন ভাল মেয়েকে ছেড়ে দিলাম!
আমি কেন বুঝতে পারলাম না – যে মেয়ে প্রথম দেখাতে Love You বলতে পারে ” সে মেয়ে কেমন হতে পারে!! আমি সে দিন রুপার কান্না দেখিনি। আমি মানুষ না।
নিজের অজান্তে আমার চোখ থেকে জল পরল মাটিতে। রাতে অনেক গুলো ঘুমের ঔষদ খেয়ে ঘুমিয়ে গেলাম। আর কিছু বলতে পারি না।
চোখ খুলে দেখি হাসপাতালে আমি। পাশে মা আর বন্ধুরা। মা কান্না করছেন। বাবা বাইরে ডাক্তারের সাথে কথা বলছেন।
আমি হাসপাতাল থেকে ২দিন পর ছাড়া পেলাম। বাসায় এসে শুয়ে আছি বিছানায়। রুপার কথা অনেক মনে হচ্ছে। মা আমায় পানি দিয়ে গেলেন।
আমি মাকে বললাম ‘ মা আমার ফোনটা দিয়ে যাও। মা ফোন দিয়ে চলে গেলেন। আমি ফোন হাতে নিয়ে ফেসবুক ওপেন করলাম।
দেখি অনেক গুলা মেসেজ জমে আছে। তারপর যা দেখলাম তা দেখে আমি নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারলাম না।
দেখি রুপার বন্ধুদের স্ট্যাটাস – – – রুপা এই পৃথিবীর মায়া ছেড়ে চলে গেছে!! রোড এক্সিডেন্টে মারা গেছে রুপা ২দিন আগে!!!
আমার মাথা কাজ করা বন্ধ করে দিল আমি ফোন রেখে ছুটে গেলাম রুপার কাছে।।
– – আমি বসে আছি রুপার কবরের সামনে। চোখ থেকে জল টপটপ করে পরছে মাটিতে আমার। আমি তাকিয়ে আছি মাটির নিচে ঘুমন্ত রুপার দিকে।
আমার মনে হল সে দিন এর কথা। সেই দিন রুপা আমায় বলেছিল’ দিপ আমি পানি খেয়ে থাকতে পারব তোমার সংসারে কিন্তু আমি তোমাকে ছাড়া বাঁচতে পারব না।
আমি রুপার কথা চিন্তা করে করে কান্না করছি। আমি পাগল হয়ে যাচ্ছি।
আকাশের দিকে তাকিয়ে বললাম’ হে আমার খোদা – আমার ভুল হয়ে গেছে। আমি আর ভুল করবনা। আমার কাছে রুপাকে ফিরিয়ে দাও খোদা।।
আকাশে মেঘ জমে আছে। আমি কান্না করছি তখন মেঘে বিশাল জোরে গর্জন করে উঠল। আমি চমকে গিয়ে উঠে বসলাম বিছানায়।
দেয়াল ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি রাত ২টা!! আমি কি এইসব স্বপ্নে দেখেছি এতো সময়?? আমি ভয়ে ঘেমে গেছি!! তা হলে কি ইরা নামের কেউ নেই?
আর রুপার সাথে আমার ব্রেক-আপ হয়নি? আমি ফোন ডায়েল কল দেখলাম। কিন্তু ইরা নামের কারো নাম্বার নেই ‘ সব নাম্বার রুপার।
এর মানে এতো সময় সব কিছু আমি স্বপ্নে দেখছিলাম!! আমি পাগলের মতন বাইরে গেলাম। গিয়ে দেখি বাইরে সত্যি বৃষ্টি হচ্ছে আর মেঘ ডাকছে।
আমি বাইক নিয়ে রুপার বাসার সামনে এসে দাঁড়ালাম। বৃষ্টিতে আমি ভিজে গেছি। আমি রুপাকে ফোন দিয়ে বারান্দায় আসার কথা বললাম।
রুপা বারান্দায় এসে ‘ এতো রাতে আমাকে দেখে অবাক হয়ে গেল। বলল ‘পাগল হয়ে গেছো তুমি?? আমি বললা ‘ হ্যা রুপা তোমার প্রেমে আমি পাগল হয়ে গেছি।
তোমাকে দেখতে ইচ্ছা করছিল তাই চলে আসছি।। আমি নিচে থেকে উপরে বারান্দায় দাঁড়িয়ে থাকা রুপার সাথে ফোনে কথা বলেছি।
রুপা হাসি দিয়ে বলল “পাগল একটা। এই বলে ভেতরে গিয়ে একটা ছাতা এনে উপর থেকে আমার দিকে ছুড়ে দিল।
– – আমি ছাতা হাতে দাঁড়িয়ে আছি।আশেপাশে কেউ নেই। বৃষ্টি হচ্ছে ঝমঝমিয়ে।
রুপা আমার দিকে তাকিয়ে আছে বারান্দা থেকে আর আমি তাকিয়ে আছি রুপার দিকে। মন ভরে দেখছি দুজন দুজনাকে…….