– এই যে… হ্যালো ।
– জ্বী আমাকে বলছেন ।
– না তোমাকে নাতো ।
– ওকে সরি তাহলে আমি গেলাম ।
– ওই পোলা এত্ত ভাব নাও কেন ।
– পায়ের নিচে থেকে উপর পর্যন্ত তাকাই দেখলাম ,
আমিতো ৮০ টাকার জুতো , ৩৭০ টাকার প্যান্ট
আর ১৩০ টাকার একটা গেঙ্গি পড়ে আছি ।
৫৮০ টাকার কাপড় পড়ে ও কী ভাব মারা যায়
মেয়েটার জুতোটার দিকে তাকাইলাম ।
আমার সব কিছু কেনার টাকা দিয়ে ওর
একটা জুতো ও হবে না …।
মেয়েটাকে বললাম …
– আসলে আপনি মনে হয় কিছু ভুল করছেন ,
আপনার একটা জুতোর টাকা দিয়ে আমার
অল বডি এর কাপড় কেনা হয়ে যাবে ।
আর এই গুলো দিয়ে আমি কেমনে ভাব মারব ,
আপনি যাকে খুঁজছেন আমি সে না ।
– আচ্ছা মানলাম তুমি সে না , তোমার
নাম তো সাহরিয়া তাই না ।
– সাহরিয়া নাম তো অন্য কারো ও হতে পারে ।
– ওই পোলা একটা চর দিমু , আমাকে
তুমি চেন ।
– না মানে একবার দেখছিলাম আমাদের ক্লাস
এ , আর আপনার জন্য তো সব ছেলেরা পাগল ।
– বাহ অনেক কিছু জানো তো , আচ্ছা বলতো
আমার নাম কী ।
– না মানে আমি আপনার নাম তো জানি না ।
– ওই পোলা আমার নাম জানো না ক্যান ।
– আরে আমি আপনার নাম দিয়ে কী করব
আজব তো ।
– আমার নাম নিধি , এরবার থেকে মনে
রাখবা না হলে …………. ফেলব, মনে থাকে যেন ।
– আচ্ছা আমি গেলাম ।
– ওই গেলাম মানে , কই যাবা ।
– আমার দুইটা ছাত্র পড়াতে যেতে
হবে ।
– ওকে যাও বাট কালকে কলেজে আসবা ।
– মাথাটা একটু নেরে চলে আসলাম ।
আজব মেয়ে এসে বলে কী না তাঁর নাম
মনে রাখতে হবে ।
দুইটা ছাত্র পড়াই রাত আট টাই বাসাই আসলাম ,
বাসা মানে ।
আমি আর এক বড় ভাই মাঝারি সাইজ
এর এরটা রুম নিয়ে থাকি ।
আমি গ্রামের একটা সাধারণ ঘরের ছেলে
অনেক কষ্টে পড়াশুনা চালাই যাইতেছি ,
আমি তেমন বড় কোন স্বপ্ন দেখি না
আসলে গরীব দের বড় স্বপ্ন দেখা মানে
আজাইরা সময় নষ্ট ।
কিন্তুু আমি সব সময় অনেক কিছু নিয়ে ভাবি কারণ …
আমি একটা উক্তি পড়েছিলাম ।
হতাশ হয়ে যে ও না ,
তুমি যা ভাবো, তাঁর চাইতে তুমি বেশি জানো ।
কথাটার অর্থ আমি উপলদ্ধি করতে পারি
কিন্তুু সেটা বুঝিয়ে বলতে পাড়ি না ।
যাই হোক আমার মনে হয়
এই কথাটায় আমাকে ভাবতে শিখিয়েছে ।
পরেরদিন সকালে কলেজে গেলাম ।
– একটা বড় কৃষ্ণচূড়া গাছের নিচে
বসে আছি , অনেকক্ষণ যাবত বসে আছি ।
হঠাৎ পিছনথেকে …
– ওই সাহরিয়া তোমাকে আমি সেই কখন থেকে
খুঁজতেছি ।
– কেন ।
– ওই কেন মানে কী হুমমমমমম , আমার খিদে
লাগছে চলো খাবো ।
– হাত ধরে টেনে নিয়ে গেলো ক্যান্টিনে ।
আমাদের খাবার এর সময় ওর আর ও কয়টা খাদক
ফ্রেন্ড এসে জুটল ।
এটা ওটা খেয়ে সবাই বিদাই সাথে নিধি
ও চলে গেল ।
আমি শুধু হা করে আছি , আর ভাবছি পাঁচ
দিন দুপুরে না খেয়ে থাকা লাগবে ।
না এই সব মেয়েদের কাছে থেকে যতই
দূরে থাকা যায় ততই ভালো ।
সব ক্লাস শেষ করে হেঁটে হেঁটে বাসাই যাচ্ছি ।
– সামনে একটা কার এসে দাঁড়ালো ,
আমি আমার নিজ গতিতে যাচ্ছিলাম ।
কারণ আমার জন্য আজ পর্যন্ত কোন
সাইকেল ও দাঁড়াই নাই আবার কার ।
পিছন থেকে মেয়েলি কণ্ঠে কেউ ডাক
দিলো …
– সাহরিয়া ….।
– বুঝতে আর বাঁকি রইল না এটা নিধির গলা ।
তাই দাঁড়াই গেলাম ।
– হুমমমমমম বলেন কী বলবেন ।
– ওই তুমি আমাকে তুমি করে বলবা ।
– আচ্ছা বলো কি বলবা ।
– সাহরিয়া আমি তোমাকে ভালোবাসি ।
– আচ্ছা আমি গেলাম ।
– ওই আমার উত্তর দিয়ে যাও ।
– আমার কোন উত্তর জানা নাই ,
আমি গেলাম ।
– যদি আর এক পা সামনে দাও না পা
ভেঙ্গে ফেলব ।
– আরে দূর যাও না , আরো অনেক পোলা তো
আছে , তাঁদের গিয়ে বলো আমাকে বলা
ক্যান লাগবে ।
– ওই তোমাকেই তো ভালোবাসি তাইলে
অন্য পোলা কে বলতে যাবো কেনো ।
– হা হা হা ভালবাসো তাও আমাকে , আচ্ছা
কার সাথে কত টাকার বাজি ধরছ , নাকি
সব্বাইকেই দেখানোর জন্য যে
দেখো, যেই ছেলে কোন মেয়ের সাথে
কথা বলে না তাঁকে আমার পিছন পিছন
ঘুরাইতেছি ।
আর মজা নেয়া শেষ হইলে ছেলেটাকে
ছেঁড়ে দিবা ।
এই তোমার মতো মেয়ে গুলোকে না আমি
ভালো করে চিনি ।
আচ্ছা যাই হোক আমার মতো একটা গরীব
ছেলের সাথে এমনটা করবে ভেবে একটু ও
খারাপ লাগলো না , যে পরে আমার
কী হতে পারে , আমার জায়গাতে অন্য ছেলে
হলে তো ঠিক পটে যেত ।
আর শেষ অব্দি ছেলেটার লাইফ শেষ ,
এতেই তোমরা মজা পাও তাই না ।
কাউকে ভালবাসলে মন থেকে বাসবা ,
আর না হইলে কোন দরকার নাই ।
– আর হ্যাঁ আমার কথাই রাগ করে থাকলে
সরি , আমি গেলাম ।
চলে আসছি আর ভাবছি কথা গুলো বলার
সময় ।
মেয়েটা কিছু বলেনি শুধু ও দিকে
যখন তাকাইছিলাম তখন দেখলাম ওর চোখ
দিয়ে পানি পড়ছে ,
মনে হয় একটু বেশি বলে ফেলছিলাম ।
আসলে অনেক টেনশন এর মধ্যে ছিলাম ,
তাই মুখে যা আসছে বলে ফেলছি এখন
আর ওই সব ভেবে কোন লাভ নাই ।
বাসাই আসলাম গোসল করে লম্বা একটা
ঘুম ,টাকা নাই তাই দুপরের খাবার অফ ,
৪ টার দিকে দুইটা ছাত্র পড়াইতে যেতে
হবে ,তাঁদের পড়াইতে গেলে চা বিস্কিট দেই ওই
গুলো দিয়ে দুপরের খাবার মেকআপ ।
এই ভাবে ভালোই দিন যাচ্ছিল ,
কলেজে গেলে নিধি ও আর বিরক্ত করে না ।
না মানে ওকে দেখতে পাই নাই কয়দিন
থেকে , মনে হয় আসে নাই ।
ওই সব ভেবে আমার কোন লাভ নাই ,
ওরা অনেক বড়লোক , আর আমি কই একটা
গ্রামের কৃষক এর ছেলে ।
আজকে ও সেই
বড় কৃষ্ণচূড়া গাছের নিচে
বসে আছি ।
হঠাৎ একটা মেয়ের আগমন ।
– আপনি কী সাহরিয়া ।
– হুমমমমম বলেন ।
– আচ্ছা আপনার এত্ত কীসের ভাব শুনি ।
– দূর আবার সেই প্রশ্ন , আচ্ছা আপনি
আমার কোন দিকটা দেখে ভাব মনে হইল
বলেন ।
– ওই আপনি নিধি কে কী সব আবল তাবোল
বলছেন হুমমমম , ও কে জানেন , এই শহরের
সব থেকে বড়লোক বাবার এক মাত্র মেয়ে ।
ওর পিছনে কত ছেলে ঘুর ঘুর করে , ও কাউকে
পাত্তা দেই না ,
আপনার মতো এমন একটা ছেলেকে ও কেমনে
যে ভালবাসলো আমি ভাবতে পারছি না ।
আর আপনি কী না তাঁকেই ওইসব কথা
শুনাই দিলেন ছি …
পাগলিটা সেই দিনের পর থেকে
কিচ্ছু খায় নাই জানেন ,
শুধু কেঁদে চলেছে ।
কলেজে যখন আপনাকে প্রথম
দেখেছে তখন থেকে শুধু আপনার
কথাই বলতো ,
জানতাম না যে আপনি এমন হবেন ।
– আচ্ছা আমি এখন গেলাম , আর কালকে নিধিকে
কলেজ এ আসতে বইলেন , ওর সাথে আমার
অনেক কথা আছে ।
– না ও আসবে না ।
– আচ্ছা না আসুক , আপনার বলার বলবেন ।
আর একটা কথা মানিকে যেমন রতন চেনে ,
তেমনি পাগলিটাই তাঁর পাগলকে চেনে ।
কালকে ১১ টার দিকে আসতে বলবেন ,
আমি গেলাম ।
বলে বাসাই চলে আসলাম …।
পরের দিন ১১ টাই সেই
কৃষ্ণচূড়া গাছের কাছে যেতেই দূর থেকে
দেখলাম নিধি বসে আছে ।
পাগলিটা কেমন শুকাই গেছে , আর চোখের
নিচে কালো দাগ পড়ে গাছে ।
কাছে গিয়ে তাঁর পাশে বসলাম ,
নীল শাড়ী পড়ে এসেছে কেমন পরী দের
মতো লাগছে ।
– নিধি আমাকে মাফ করে দাও ,
আমার ওই ভাবে বলা ঠিক হয় নাই ।
আসলে কী করব বলো আমার নিজের খরচ
পড়াশুনার খরচ আমাকেই চালাতে হয় ।
গ্রামে একটু জমি আছে ওই গুলো দিয়ে সংসার
চলে , আমার মতো ছেলেদের কোন শখ করতে
নেই জানো , আর ভালোবাসা তো দূরে ,
তোমার জন্য আমি কিচ্ছু করতে পারব না ।
যেই ছেলের নিজের দুইবেলা ভাত জুটে
না সে তোমাকে কেমনে ভালবাসবে বলো ।
বলতে লজ্জা করছে তোমাদের সেইদিন
ওই খাবার এর বিল দেওয়াতে আমি এখন প্রতি
দুপুরে না খেয়ে থাকা লাগে ।
– ওই কী বলো এই সব ,তার মানে এই কয়দিন দুপরে
তুমি না খেয়ে ছিলে ।
– হুমমমমম ।
– তুমি না একটা পাগল ,তাইতো মুখটা এমন শুকনা
লাগছে (মনে হয় এই কেঁদে দিবে ) ।
– আচ্ছা এত সব শোনার পড়ে কী ভালবাসবা বলো ।
আচ্ছা আমি গেলাম ।
– ওই নিজেকে কী মনে করো হুমমমম , একটা মেয়েকে
কাঁদিয়ে শান্তি পাও তাই না ।
– আর এ বাবা আমি তো গরীব ।
– তাঁতে কী হয়েছে আমি তোমাকেই ভালোবাসব ,
আর তুমি খালি এত্ত বেশি বোঝ কেন হুমমমম , তুমি
গরীব তো কী হয়েছে আমি তো আছি ।
– আচ্ছা ছেঁড়ে যাবা নাতো ,
বলতেই এসে জরাই ধরল ।
ওই কী করছ সবাই দেখছে তো ।
– তুমি না বললে ছেঁড়ে না যেতে ,
– ওই পাগলি তাই বলে সবার সামনে জরাই
ধরবা ।
– হুমমমমম ধরবো ….. আচ্ছা চলো খাইতে
যাবো ।
– না না থাক একদিন যেয়েই আমাকে দুপরে
না খেয়ে থাকতে হয় , আজকে গেলা সকাল আর রাতে
ও না খেয়ে থাকতে হবে ।
– হি হি হি দূর পাগল চলো তো ।
– তুমি বিল দিবা তো ।
– হুমমমম ।
– আহা কত দিন থেকে পেট ভরে খাই নাই
আজকে তো সব খাবো ।
– পাগল একটা …।
– পাগলি একটা …।
– ওই কী বললা … দাঁড়াও আবার সবার
সামনে জরাই ধরবো ।
কী মেয়েরে বাবা … আপনারা
সবাই চক্ষু দুইটার জানালা বন্ধ কইরা
ফালান … পাগলিটা আমাকে জরাই ধরার
সময় আপনারা দেইখা ফেললে আমারে সরম
লাগবো তো হি হি হি ……………।