মিষ্টি প্রেমের গল্প

মিষ্টি প্রেমের গল্প

আজ পহেলা ফাল্গুন। গতকাল রাতে হঠাৎ করেই প্রমী ফোন করে শিহাবকে সকাল এগারোটার মধ্যে তার হলের সামনে আসতে বলেছে। এমনিতে শিহাব বেশ চটপটে এবং বুদ্ধিমান। কিন্তু প্রমীর সামনা সামনি হলে কি জানি হয়ে যায়…… একটার পর একটা উল্টাপাল্টা কাজ করতে থাকে, এজন্য প্রমী প্রায়ই ওকে নিয়ে হাসাহাসি করে।ঠিক সকাল ১১ টায় শিহাব প্রীতিলতা হলের সামনে দাঁড়িয়ে  প্রমীকে ফোন দিল-

 

“প্রমী আমি এসেছি। তোমার কি দেরি হবে ?”

“এসেছিস মানে !! বের হবার আগে একবার ফোন দিবি না বুদ্ধু কোথাকার?”

“তাহলে কি আমি চলে যাব?”

“আরে না । একটু ওয়েট কর। আসছি।”

 

শিহাবের এই এক সমস্যা। তাদের ব্যাচের সবাই সবাইকে তুই করে বললেও শিহাব কাউকেই তুই বলতে পারে না।প্রমী হলুদ রঙের একটি শাড়ি পড়েছে। প্রমীকে দেখে শিহাবের সেই পুরনো কথাটা মনে হল- শাড়িতে কোন মেয়েকে যতটা সুন্দর  লাগে, তা আর অন্য কোন পোশাকে সম্ভব নয়। প্রমীকে আজ মনে হচ্ছে আকাশ থেকে নেমে আসা কোন অপ্সরী। কিন্তু মুখ ফুটে কিছুতেই সেটা বলতে পারল না।এদিকে প্রমী মনে মনে ভাবছে- ছেলেটা এত বোকা কেন! ওকে দেখানোর জন্যেই আসতে বললাম, অথচ ভদ্রতা করে একটা কথাও বললনা। শেষে নিজেই বলে উঠল-

 

“এই আমাকে কেমন লাগছে রে শাড়িতে?

“ওহ হা ভাল।

“শুধু ভাল ? হায় রে কপাল! মনে মনে প্রমী নিজেই নিজের মাথা চাপড়াতে লাগল।

 

শিহাবকে রিকশায় কাঁচুমাঁচু হয়ে বসে থাকতে দেখে প্রমীর একটু মায়াই লাগল।

 

“এই তোর কি কোন সমস্যা হচ্ছে?”

“না না। প্রথম উঠছি তো।”

“মানে? তুই কখনো রিকসায় উঠিস নাই?”

“না মানে উঠছি, কিন্তু কোন মেয়ের সাথে প্রথ…….”

 

শিহাবের কথা শেষ হবার আগেই প্রমী হি হি করে হেসে ফেলল। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে এটাই তাদের প্রথম ফাল্গুন । এইতো সেদিন পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হল দুজন। দেখতে দেখতে ২  মাস কেটে গেছে। এই দুইমাসে শিহাব প্রমীর মত অসম্ভব ভালো একজন বন্ধু পেয়েছে। রিকসা অতিথি পাখির লেকের সামনে আসতেই প্রমী বলল চল ওখানে বসি।

 

“কত পাখি!! কি সুন্দর!!!”বল তো এই যে পাখিরা এত দূর দেশ থেকে আমাদের এখানে উড়ে আসে কেন?”

” ওদের দেশে শীত বেশি। এখানে অপেক্ষাকৃত কম তাই।”

“উহু হল না।”  “তাহলে?”

“ওরা এখানে উড়ে আসে কারণ ওরা পাখি….. ওদের ডানা আছে। তা না হলে হেঁটে বা কোন বাহনে আসত…..হি হি হি  হি !!!!”

“হা হা হা হা- তাই তো।”

“আচ্ছা তুই এত বোকা কেন?”

“জানি না।”

“সেদিন আমি বোকাদের একটা লিস্ট করেছি। সেই লিস্টে তোর নাম দুই নম্বরে।”

“দুই নম্বরে কেন?”

“কারন, এক নম্বরে আমি নিজে আছি….. তোর মত একটা  বোকাকে এত পছন্দ করি- আমি এক নম্বরে থাকব না তো কে থাকবে???” “সত্যি????’

 

শিহাব অবাক হয়ে প্রমীর লাজুক মুখটার দিকে তাকাল।

“সত্যি না তো কি??? কিন্তু আমার কপালটা এতটাই খারাপ এই জিনিসটাও আমাকেই জানাতে  হল……তুই নিজে থেকে বুঝলিই না….”

বোকার মত শিহাবের মুখ থেকে বেরিয়ে গেল,

“থ্যাংক ইউ !!!!!!”

 

দীর্ঘ দশ সেকেন্ড দুই জন দুইজনের চোখের দিকে তাকিয়ে হেসে ফেলল । এরপর শিহাব আত্মবিশ্বাসের সাথে উঠে দাঁড়িয়ে প্রমীর সামনে গিয়ে বলল-  ” শাড়ীতে তোমাকে আজ অপ্সরীর মত লাগছে প্রমী।”

 

প্রমী অবাক হয়ে এই বোকা মানুষটির দিকে তাকাল । মনে হচ্ছে এ অন্য এক শিহাব। যে শিহাব তার অচেনা । অচেনা এই মানুষটির সামান্য  এ কথাতেই প্রমীর সমস্ত দেহমন ভাললাগায় ভালবাসায় আচ্ছন্ন হয়ে গেল।

গল্পের বিষয়:
রোমান্টিক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত