– কতদূর আসছো..?
— এইতো বাসে, রাস্তায় খুব জ্যাম…
– আচ্ছা আসো, আমি এখন বের হবো…
— এই শোন..?
– বলো…
— আজকে নীল শাড়িটা পড়ছো তো..?
– আহা ! নীল শাড়ি ছাড়া আর কোন শাড়ি নাই বুঝি..?
— আছে তো, কিন্তু নীল শাড়িতে তোমাকে খুব ভালো মানায়, একদম নীলপরীর মতো…
– উফফ ! আমি রাখছি…
— এই শোন, আরেকটা কথা…
– আবার কি..?
— হাতে লাল চুড়ি পড়তে ভুলনা আবার…
– এই শোন, আমি নীল শাড়িও পড়িনি আর লাল চুড়িও না… সব সময় তোমার পছন্দমত চলবে না, আজকে আমি আমার পছন্দমত পড়ে আসবো… রাখলাম…
.
কথাটা বলেই ফোন রেখে দিলো তুশি… ইমুর মন খারাপ হয়ে গেল… ভাবছে এরকম তো আগে কখনো বলেনি… আজকে আমার কথা শুনলো না, কাহিনী কি..? ভাবতে ভাবতে ইমু পার্কের পছন্দের জায়গায় গিয়ে বসলো… মন খারাপ করে বসে আছে ছেলেটা… হঠাৎ তুশির ফোন আসলো –
.
– এই আমি এসে পড়েছি, তুমি কোথায় আছো..?
— আগেরবার পার্কে যে বেঞ্চটাতে বসেছিলাম, আমি ওখানে আছি…
– আমাকে এসে নিয়ে যাও…
— আচ্ছা তুমি থাকো আমি আসতেছি…
.
মন খারাপ তবুও চলে গেলো তুশিকে নিয়ে আসতে… যেতে যেতে হঠাৎ যেটা দেখলো সেটা কখনো ভাবেনি ইমু… দেখলো ইমুর কথামত ঠিকই তুশি নীল শাড়ি পড়েছে… দূর থেকে হাতে কাঁচের লাল চুড়িও দেখা যায়… ইমু দৌড়ে সামনে গিয়ে বললো –
.
— এটা কোন ধরনের সারপ্রাইজ হলো..?
– কোনটা..?
— তুমি ফোনে তখন মিথ্যা বললা কেন..?
– তোমাকে একটু চমকে দিবো তাই একটু মিথ্যা বলছি… সরি…
— আমার কতো খারাপ লাগছিলো তুমি জানো..? মন খারাপ করে বসে ছিলাম…
– আহারে আমার বাবুটা… থাক আর মন খারাপ করতে হবে না, আমি তো এসে গেছি…
.
একে অপরের হাত ধরে পার্কের ভিতরে যেতে লাগলো দু’জন… গিয়ে বসলো পছন্দের সেই জায়গাটায়… হঠাৎ ইমু বলে উঠলো –
.
— আচ্ছা তুমি তো তোমার পছন্দ মতোও শাড়ি পড়তে পারতে… পড়লে না যে..?
– আমি জানতাম তুমি এই প্রশ্নটা করবা…
— আমার জানতে ইচ্ছে করছে, বলো…
– শোন, প্রতিটা মেয়ের কাছেই তার প্রিয় মানুষটা হয় খুব দামী… মেয়েরা যাকে ভালোবাসে সবটুকু দিয়েই ভালোবাসে… তখন নিজের পছন্দের চেয়ে প্রিয় মানুষটার পছন্দকে বেশি মূল্য দেয়…
.
ইমু বাকরুদ্ধ… তুশির এরকম কথা শুনে ইমু কিছুই বলতে পারছে না… মনে মনে ভাবছে আমি কি এরকম একটা মেয়েই চেয়েছিলাম..? যে আমার আমিকে চিনে নিবে… ইমু তুশির হাতটা শক্ত করে ধরে বললো –
.
— আমি জানি না ভালোবাসা মানে কি..? তবে আমি এইটুকু জানি ভালোবাসা মানে প্রিয় মানুষটার সুখ, দুঃখ নিজের মধ্যে আপন করে নেয়া… যেটা আমি তোমার মাঝে পেলাম…
– আরে বাবা এতো ইমোশনাল হতে হবে না… বুঝতে পারছি তুমি আমাকে নিজের থেকেও বেশি ভালোবাসো…
— আমি সত্যিই খুব ভাগ্যবান যে তোমার মত একজন কাউকে ভালোবাসতে পেরেছি…
– আমিও খুব লাকি তোমার মত একটা দুষ্টু ছেলে পেয়েছি…
— আমি দুষ্ট..?
– নয়তো কি..? সারাক্ষণ তো জ্বালাও…
— একটা জিনিশ খেয়াল করছো..?
– কি..?
— তোমার শাড়িও নীল আর আমার পাঞ্জাবিও নীল…
– ওয়াও ! খুব সুন্দর লাগছে দুইজনই নীল ড্রেস…
— জ্বি, এর জন্যিই তোমাকে নীল শাড়ি পড়তে বলেছি…
– বাহ ! সব আগে থেকে প্লান করে রাখো…
.
এই ফাঁকে হঠাৎ ইমুর মনে হলো আজকে তো রোজ ডে… ইমু যে তুশির জন্য টুকটুকে একটা লাল গোলাপ কিনেছে… পাঞ্জাবির পকেটে ফুলটা, ঠিক আছে কিনা হাত দিয়ে দেখতেছে আর তুশিকে বললো –
.
— তোমার জন্য ছোট্ট একটা উপহার আছে…
– সত্যি ! কই দেখাও…
— উহু ! আগে চোখ বন্ধ করো…
– এটার জন্য চোখ বন্ধ করতে হবে..?
— হুম ! করতো..
.
ইমু পাঞ্জাবির পকেট থেকে ফুলটা বের করে ফুলটা বের করে তুশির সামনে ধরে বললো –
.
— এবার তাঁকাও…
– ওয়াও… লাল গোলাপ…
— “Happy Rose Day”…
– কিন্তু আমি যে গোলাপ আনি নাই… তোমাকে কি দিবো..?
— তুমি অলরেডি দিয়েছো…
– কি দিয়েছি..?
— আমার পছন্দমত নীল শাড়ি আর লাল চুড়ি পড়ে আসছো যে, আমি তাতেই খুশি…
– তুমি একটা আস্তো পাগল…
— আর তুমি পাগলের পাগলী…