১০০তম থাপ্পর

১০০তম থাপ্পর

:-ম্যাম আসবো?(আমি)
আমার দিকে ম্যাম কিছুক্ষণ একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলেন।নিজেকে এই মূহুর্তে চিরিয়াখানার কোন অদ্ভুদ প্রাণী মনে হচ্ছে।চিরিয়াখানার প্রাণী না হলে কী এমনভাবে কেউ দেখে।
:-তো মিঃ হুসাইন আজও লেট?(ম্যাম)
:-না আসলে ম্যাম হয়েছে কী!আজও ঘুম থেকে ওঠতে দেরী হওয়ায় লেট হয়েছে।(আমি)
:-সারারাত কী চুরি করেন যে ঘুম থেকে ওঠতে দেরী হয়।
:-তেমন কিছু নয়।সকালে ডেকে দেওয়ার মত কেউ নেই এই জন্য দেরী হয়।
:-তাহলে একটা বিয়ে করে ফেলেন।
:-আপনি রাজি থাকলে আজই বিয়ে করবো।(গুনগুন করে)
:-কিছু বললেন?
:-না না কিছুনা।আমি যায়।
:-ফাইলগুলো নিয়ে গিয়ে ২টার মধ্যে সই করে আমাকে দেখাবেন।(কয়েকটা ফাইল আমার হাতে দিয়ে)
:-ঠিক আছে ম্যাম।
আমি ফাইলগুলো নিয়ে নিজের টেবিলে চলে আসলাম।
আমি হুসাইন পড়ালেখা শেষ করে একটা ব্যাংকে চাকরি করছি।যার সাথে আমার কথা হলো উনি আমার বস।শুধু আমার বস বললে ভুল হবে।এই অফিসের বস।আমি প্রতিদিন লেট করে আসি আর প্রতিদিন ম্যামের কথা শুনতে হয়।আসলে আমি ইচ্ছে করেই প্রতিদিন লেট করে আসি।ম্যামের কাছে ঝাঁড়ি শুনতে ভালো লাগে।আমার জায়গায় অন্যকেউ হলে এতদিনে চাকরি কবেই চলে যেতো।ম্যামের নাম মুনিয়া।অফিসের বস বাদেও মুনিয়ার একটা পরিচয় আছে।মুনিয়া আমার গালফ্রেন্ড।অফিসে আমরা এমনভাবে থাকি যেনো কেউ কাউকে চিনিইনা তেমন একটা।
এসব কথা পরে ভাবা যাবে আগে ফাইলগুলো রেডি করি নাহলে আবার ঝাঁড়ি খেতে হবে।অফিসের কাজের ব্যাপারে মুনিয়া খুব কড়া।
:-কী হুসাইন সাহেব কাজ কেমন চলছে?(শিপন)
আমি ফাইলগুলো রেখে শিপনের দিকে তাকিয়ে উওর দিলাম
:-জ্বি ভালো।(আমি)
শিপন এই শহরের বড় ব্যবসায়ী।আমাদের ব্যাংক থেকে প্রমি সপ্তাহে টাকা লেনদেন করে।দেখে মনে হয় আমার সমবয়সী হবে।
:-তোমাদের ম্যাম কী তার রুমেই আছে?
:-হ্যাঁ।
:-আচ্ছা তুমি তোমার কাজ করো।
এই লোকটাকে আমার একটুও সহ্য হয়না।প্রতি সপ্তাহে আসে আর মুনিয়ার সাথে হেসে হেসে কথা বলে যেটা আমার একটুও সহ্য হয়না।আজকেও তার ব্যতিক্রম হলোনা।মুনিয়ার রুম থেকে হাসির শব্দ ভেসে আসছে।ইচ্ছে করছে এখন গিয়ে লোকটাকে গলা টিপে মেরে ফেলি।আমি এর আগে অনেকবার মুনিয়াকে বলেছি লোকটার সাথে হেসে কথা বলবেনা কিন্তু ও বলে অফিসের কাজের ব্যাপারে এতটুকু করতেই হবে।
শিপন পুরো ৩০মিনিট পর মুনিয়ার রুম থেকে বের হয়ে চলে গেলো।আমি নিজের টেবিল ছেড়ে মুনিয়ার রুমে গেলাম।ও বসে আছে।
:-কী হচ্ছে এসব?(আমি)
:-কই কী হচ্ছে?(মুনিয়া)
:-তোমাকে কতবার বলেছি ওর সাথে হেসে হেসে কথা বলবেনা তারপরেও কেনো বলো?
:-বলেছি তাতে কী হয়েছে শুনি।তাছাড়া আমি এখন এই ব্যাপারটা নিয়ে কথা বলতে চাচ্ছিনা।অফিসে শুধু অফিসের কথা বলবে এর বাইরে কিছু নয়।
আমি আর কিছু না বলে মুনিয়ার রুম থেকে বের হয় আসলাম।প্রচন্ড রাগ হচ্ছে।সব প্রেমিকরাই এক।কোন ছেলের সাথে যদি তার প্রমিকার কথা বলতে দেখে তাহলে তার মধ্যে জ্বালাপোড়া শুরু হয়ে যায়।একপ্রকার রাগ নিয়ে ফাইলগুলো দেখা শেষ করলাম।এরপর সেগুলো নিয়ে মুনিয়ার রুমে আবার গেলাম।
:-ম্যাম ফাইলগুলো রেডি।(আমি)
:-ওকে রেখে যান আমি দেখে নিবো।(মুনিয়া)
আমি ফাইলগুলো রেখে নিজের টেবিলে চলে আসলাম।এখন আর কোন কাজ নেই তাই ফেসবুকে ঢুকলাম।কিছুক্ষণ পর মুনিয়ার চিৎকার শুনলাম।আমিসহ অফিসের সবাই ম্যামের রুমে দৌঁড় দিলাম।মুনিয়া একটা ফাইল হাতে দাঁড়িয়ে আছে।চেহারাটা কটকটি রানীর মত করে আছে।মন হচ্ছে এখন কাছে যাকে পাবে তাকেই গিলে খাবে।
:-হুসাইন সাহেব এদিকে আসুন।(মুনিয়া)
আমি ভয়ে ভয়ে এগিয়ে গেলাম।আমি কাছে যেতেই মুনিয়া ঠাস করে আমার গালে একটা থাপ্পর মারলো।আমি মোটেও এই পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত ছিলাম না।তাছাড়া মুনিয়া কেনো আমাকে চড় মারলো সেই বিষয়টাও অজানা।
:-এই দেখুন কী করেছেন আপনি?পুরো প্রজেক্টটাই নষ্ট করে দিয়েছেন।এখন এসব কীভাবে ঠিক করবো?আমার এতদিনের সব চেষ্টা জ্বলে গেলো।আপনার মত একটা অপদার্থকে কে যে চাকরী দিয়েছিলো ভেবেই পায়না।প্রতিদিন অফিসে আসবেন লেট করে কাজ ঠিকমত করবেন না।আপনি আজই রিজাইন দিয়ে দিবেন।সবাই যার যার কাজে যান।(রাগে ফুসতে ফুসতে)
:-সবার সামনে এভাবে অপমান না করলেও পারতে।(আমি)
:-তোর জন্য এটাই উচিত।আজ ৫টা আমার লাইফটাকে তুই বন্দি করে রেখেছিস।
:-কী বললে তুমি?
:-যা বলেছি ঠিকই বলেছি।আমি মুক্তি চাই।
:-আচ্ছা আজ থেকে তুমি মুক্ত।আর কোনদিন তোমাকে বিরক্ত করবোনা।
আমিও বেড়িয়ে আসলাম।নিজের টেবিলে। এসে রিজাইন লেটার লিখে পিয়নের কাছে দিয়ে অফিস থেকে বেড়িয়ে আসলাম।
মুনিয়া আমার সাথে এমন ব্যবহার করবে আমি ভাবতেও পারিনি।প্রায় ৫বছরের রিলেশন আমাদের। এই ৫বছরে কোনদিন মুনিয়া আমার সাথে খারাপ ব্যবহার করেনি।একদমই করেনি বললে ভুল হবে কেননা আজ কয়েকদিন যাবৎ মুনিয়া আমাকে ইগনোর করছে।আগের মত কথা বলেনা।আমাকে ঠিকমত সময় দেয়না।সবকিছুতে কেমন জানি রাগ দেখায়।মানুষ বড় হয়ে গেলে এমনি হয়ে যায় মনে হয়।নিচের মানুষগুলোকে আর মানুষ মনে করেনা।মুনিয়া আজ বড় হয়ে গেছে।ও আমার অফিসের বস আর আমি মাএ একজন কর্মচারী।কর্মচারীর সাথে বস তো এমন ব্যবহার করবেই।
বাসায় এসে সবকিছু গুছিয়ে নিলাম।আজই আমি বাসায় চলে যাবো।চাকরির জন্য এই শহরে এসেছিলাম।চাকরিই যখন নেই তখন আর এখানে থেকে কী করবো।তার থেকেও একটা বড় কথা হলো মুনিয়ার জন্য এখানে পড়ে ছিলাম।আব্বুকে যেদিন বলেছিলাম আমি ব্যাংকে চাকরি করবো সেদিন অনেক রাগ করেছিলো। বলেছিলো আমাদের ব্যবসা দেখাশুনা করবে কে তাহলে?আমি তখন আব্বুকে অনেক বুঝিয়ে সুজিয়ে রাজি করিয়ে চাকরিতে জয়েন করেছিলাম।।আমার আব্বুর বড় ব্যবসা ছেড়ে মুনিয়ার কথামত চাকরী করতে এসেছিলাম যার ফল আজকের ব্যবহার।
আগের সিমগুলো খুলে ভেঙ্গে ফেললাম।নতুন একটা সিম নিলাম।নতুন সিম থেকে আব্বুর নম্বরে ফোন দিলাম।
:-আসসালামুআলাইকুম।(আমি)
:-ওলাইকুমআসসালাম।(আব্বু)
:-আব্বু আমি বাসায় আসছি।এখন কোনকিছু জিঙ্গেস করোনা বাসায় এসে সবকিছু বলবো।
:-আচ্ছা আয়।সাবধানে আসিস।
ফোন রেখে দিলাম।মুনিয়া আমার এই নম্বর জানেনা।আমি আর কোনদিন মুনিয়ার সামনে যাবোনা।মুনিয়ার আমাকে আর প্রয়োজন নেই সেটা বুঝে গেছি।আমাকে যে চাইনা তার জীবনে থেকে আমি তাকে জ্বালাতে চাইনা।
২দিন পর।
আজ ২দিন হলো মুনিয়ার সাথে আমার কোন যোগাযোগ নেই।যোগাযোগ অবশ্য না থাকারই কথা আমার কারণ আমার বর্তমান ফোন নং ও জানেনা।মুনিয়াকে ছাড়া থাকতে আমার বড্ড বেশি কষ্ট হচ্ছে।এতদিনের রিলেশন একদিনে ভুলে যায় কিভাবে?তবে ভুলে থাকতে চেষ্টা করছি।হঠাৎ আম্মুর আগমন
:-হুসাইন বাবা দেখতো এর মধ্যে কোন মেয়েটাকে তোর ভালো লাগে।
আমার সামনে কয়েকটা মেয়ের ছবি দেখিয়ে।
:-আম্মু আমি এখন বিয়ে করতে চাইনা।(আমি)
:-এর আগে অনেকবার এমন কথা বলে পার পেয়েছিস এবার আর পাবিনা।আর যদি এবার বিয়ে না করিস তাহলে আমি বাসা থেকে চলে যাবো।
:-আচ্ছা তোমাদের যা ভালো মনে হয় করো।
আম্মু ছবিগুলো টেবিলের উপর রেখে চলে গেলো।ছবিগুলো দেখার কোন ইচ্ছে নেই।ল্যাপটপ বের করে মুনিয়ার ছবিগুলো দেখতে লাগলাম।মুনিয়ার সাথে কত স্মৃতি জরিয়ে আছে।চোখগুলো ঝাপসা হয়ে আসছে তাই ল্যাপটপ বন্ধ করে ঘুমানোর চেষ্টা করলাম।না ঘুমও আসছেনা।
ডায়েরীতে কিছু লেখা দরকার।ড্রয়ার থেকে ডায়রিটা বের করে প্রথম পাতা উল্টলাম।
প্রথম পাতাতে বড় বড় করে লেখা
মুনিয়া +হুসাইন।
দ্বিতীয় পাতা উল্টলাম।২য় পাতাতে একটা খোপা রাখা।
সেদিন ছিলো আমার কলেজের প্রথমদিন।ইন্টার শেষ করে বিবিএতে ভর্তি হয়েছি।কলেজের গেট দিয়ে তাড়াহুরা করে ঢুকতে গিয়ে একটা মেয়ের সাথে ধাক্কা লাগে।ধাক্কা খেয়ে দুজন দুদিকে ছিটকে পড়ি।
মাঠি থেকে ওঠে দাঁড়াতেই একটা নরম হাতের থাপ্পর আমার গালে এসে পড়ে।
:-বেয়াদব ছেলে।মেয়ে দেখলেই ধাক্কা খেতে ইচ্ছে করে।থাপ্পর দিয়ে মুখ লাল করে দিবো।
আরো কিছু কথা শুনিয়ে মেয়েটা চলে গেলো।আমি কিছু বলতে পারছিনা।মনে হচ্ছে কে যেনো আমার মুখ আটকে ধরে রেখেছে।মেয়েটার যতক্ষন ছিলো আমি একদৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলাম।মেয়েটাকে দেখে মনে হচ্ছিলো কোন পরী আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছে।
যাইহোক ক্লাসের সময়,হয়ে গেছে তাই সামনের দিকে পা বাড়ালাম।হঠাৎ পায়ের কাছে কিছু একটা পড়ে দেখলাম।একটা খোপা।মনে হয় মেয়েটার চুল থেকে খসে পড়ে গেছে।আমি ওঠিয়ে পকেটে রেখে দিলাম।
ক্লাসে গিয়ে দেখি প্রায় সবাই চলে এসেছে।এই কলেজের কাউকে আমি চিনিনা।নতুন পরিবেশ +নতুন কলেজ।সবকিছু কেমন জানি মনে হচ্ছিলো।হঠাৎ লক্ষ্য করলাম যেই মেয়েটার সাথে ধাক্কা খেলাম সে তৃতীয় বেন্চে বসে আছে।তারমানে মেয়েটা আমাদের কলেজেরই।যাক ভালোই হলো।
এরপর থেকে প্রতিদিন মেয়েটার দিকে তাকিয়ে থাকতাম।স্যার যখন সবার সাথে সবাইকে পরিচয় করিয়ে দেয় তখন জানতে পারি মেয়েটার নাম মুনিয়া।মাঝে মুনিয়াকে ফলো করতাম।ও বুঝতে কিনা জানিনা তবে কিছু বলতোনা।এরপর কেটে যায় ৪মাসের মত।এই ৪মাসে অনেকটাই ভালোবেসে ফেলেছি মুনিয়াকে কিন্তু বলতে পারিনা।
আজও মুনিয়াকে ফলো করছি।আজ বাসা থেকে সিদ্ধান্ত নিয়ে এসেছি মুনিয়াকে আমার ভালোবাসার কথা বলে দিবো তবে যা হবার হবে।একএক করে মুনিয়ার সব বান্ধবি আলাদা হয়ে গেলো।এবার ও একা।এই সুযোগ।তাছাড়া এখন এই গলিতে তেমন একটা মানুষকেও দেখা যাচ্ছেনা।
আমি মুনিয়াকে পিছন থেকে ডাক দিলাম।আমার ডাক শুনে দাঁড়ালো।
:-কিছু বলবে?(মুনিয়া)
:-হুম।(আমি)
:-বলো।
:-কথাটা কিভাবে বলবো বুঝতে পারছিনা।
:-তাড়াতাড়ি বলো আমার বাসায় কাজ আছে।
আমি চোখে বন্ধ করে এক নিঃশাসে বলে দিলাম
:-আমি তোমাকে ভালোবাসি মুনিয়া।
চোখ খুলতেই ঠাস ঠাস করে দুইটা চড় মারলো মুনিয়া।এরপর কিছু না বলে চলে গেলো।আমি অবাক হয়ে ওর চলে যাওয়া দেখছি। মুনিয়াই মনে হয় একমাএ মেয়ে ভালোবাসার কথা শুনে শুধু থাপ্পর দিয়ে চলে গেলো।অন্য মেয়েরাতো থাপ্পরের সাথে অনেকগুলো কথা উপহার দেয়।কিন্তু মুনিয়া দিলোনা।ব্যাপারট
া মাথায় ঢুকলোনা আমার।
পরেরদিন সারা ক্লাসে কেমন করে জানি জানাজানি হয়ে গেলো আমি মুনিয়াকে প্রপোজ করেছি।এটা নিয়ে অনেকেই অনেক মন্তব্য করছে।আমি যখন মুনিয়াকে প্রপোজ করি তখন আশেপাশে কেউ ছিলোনা সবাই কার কাছ থেকে শুনলো?মুনিয়া বলেনিতো সবাইকে?হয়তোবা।

আজ দ্বিতীয় বারের মত মুনিয়াকে প্রপোজ করার জন্য ওর পিছু নিয়েছি।জানিনা আজ কপালে কী আছে।কোন কবি যেনো বলেছিলো একবারে না পারিলে দেখো শতবার সেই উক্তির উপর ভিওি করেই আজ মুনিয়াকে প্রপোজ করতে আসা।আগের দিনের থেকে ভিন্মভাবে প্রপোজ করতে এসেছি।আজ একটু স্মাটলি এবং গোলাপ ফুল নিয়ে এসেছি।
ওইতো মুনিয়ার বান্ধবিরা ওর থেকে আলাদা হয়ে গেলো।যাই প্রপোজটা করেই ফেলি।
:-মুনিয়া তোমার সাথে কিছু কথা ছিলো?(আমি)
:-আবার তুমি!কালকে থাপ্পর খেয়ে শিক্ষা হয়নি??(মুনিয়া)
:-কী যে বলোনা তুমি।গুরুজনরা বলিয়াছেন একবারে না পারিলে দেখো শতবার।সেই উক্তি উপেক্ষা করি কিভাবে বলো?
:-তো বলো কী বলবে?
আমি ব্যাগ থেকে গোলাপ ফুল বের করে মুনিয়ার সামনে ধরে বললাম
:-মুনিয়া তুমি কী আমার বউ হবে?কথা দিচ্ছি তুমি আমার বউ হলে দুজন মিলে একটা ফুটবল টিম বানাবো।(আমি)
মুনিয়া আমার হাত থেকে ফুলটা নিলো।আমার খুশি দেখে কে।কিন্তু সেই খুশি বেশিক্ষণ স্থায়ী হলোনা।মুনিয়া কালকের মত ২টা থাপ্পর দিয়ে চলে গেলো।আর আমি হা করে ওর চলে যাওয়ার পথের পানে চেয়ে আছি।ধুর কপালটাই খারাপ।কেনো যে ফুটবল টিম বানানোর কথা বললাম।এটা না বললে মনে হয় রাজি হতো।
কিছুদিন পর।
আজ শেষ বারের মত প্রপোজ করতে এসেছি।এর আগে ২৪বার প্রপোজ করেছি আর প্রতিবারই খেতে হয়েছে থাপ্পর।আজ ওর সব বান্ধবীদের সামনেই প্রপোজ করবো।মেন রাস্তা থেকে গলির মধ্যে নামতেই আমি মুনিয়ার সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম।
:-মুনিয়া তোমাকে আমি আজ কিছু কথা বলতে চাই।জানি আমাকে তোমার ভালো লাগেনা।কিন্তু বিশ্বাস করো আমি সত্যিই তোমাকে ভালোবাসি।তোমাকে যেদিন প্রথম দেখি সেদিনই তোমাকে ভালোবেসে ফেলেছিলাম।এই কয়েকদিনে তোমাকে অনেক বিরক্ত করেছি।সবকিছুর জন্য ক্ষমা চাইছি।
কথাগুলো বলে পিছন দিকে ঘুরে হাঁটা শুরু করলাম।দুপা এগোতেই কে যেনো পিছন থেকে আমার কলার চেপে ধরলো।পিছন দিকে ঘুরতেই কেউ একজন আমার লাগে ঠাস ঠাস করে থাপ্পর মেরে দিলো।এ আর কেউ নয় মুনিয়া।
:-ওই আমাকে রেখে যাও কোথায় শুনি?(মুনিয়া)
:-যে আমাকে ভালোবাসেনা তার কাছে থেকে কী করবো?(আমি)
:-কে বলেছে ভালোবাসিনা?আমিও ভালোবাসি তোমায়।তবে আমার একটা স্বপ্নছিলো। আমি যার সাথে রিলেশন করবো তাকে ৫০টা থাপ্পর দিবো।৫০থাপ্পর শেষ হলে রিলেশন শুরু।এরপর আর ৫০থাপ্পরের পর বিয়ে।
বলে কী এই মাইয়া?নিশ্চয় মাথায় সমস্যা আছে।নাহলে এমন কথা কেউ বলে।হুসাইন তুই পালা নাহলে এবার তুই শেষ।কিন্তু পালানোর উপায় নাই মুনিয়া আমার কলার ধরে রেখেছে।এখনো আরো ৫০টা থাপ্পর খেতে হবে এটা ভাবতেই হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসছে।
কেউ একজন আমাকে জরিয়ে ধরেছে।ধুর কেউ একজন বলছি কেনো মুনিয়া জরিয়ে ধরেছে।আমি মনে মনে বললাম বালিকা তুমি যদি আমাকে প্রতিদিন এভাবে জরিয়ে ধরো তাহলে দিনে আমি ৫০টা থাপ্পর খেতেও রাজি আছি। এভাবেই শুরু হয়েছিলো আমাদের পথচলা।এরপর কেটে গেছে অনেকগুলো দিন মাস বছর।
:-হুসাইন বাবা তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নে আমরা সবাই বাইরে যাবো।
রুমের বাইরে থেকে আম্মুর কথা শুনে বাস্তবে ফিরলাম।চোখ দিয়ে কয়েকফোঁটা নোনা জল গড়িয়ে পড়লো।আজ সবই অতীত।মুনিয়া বলেছিলো ১০০তম থাপ্পরের দিন আমাদের বাসর রাত হবে কিন্তু ১০০তম থাপ্পর হবার আগেই ও আমাকে ছেড়ে চলে গেলো।১০০তম থাপ্পর হতে আর মাএ ২টা বাকি।রিলেশন শুরু হবার পর মাঝে মাঝেই থাপ্পর খেতে হতো।কখনো দেরী করে যাওয়ায়,কখনো শার্ট ঠিকমত পড়ে না যাওয়ায়।ভালোই লাগতো ওর থাপ্পরগুলো।
যাই রেডি হয়ে নিই নাহলে আম্মু আবার রাগ করবে।
রেডি হয়ে আমরা সকলে বেড়িয়ে পড়লাম।আমরা সবাই বলতে আব্বু,আম্মু আর আমি।জানিনা কোথায় যাচ্ছি আমরা।কারো কাছে জিঙ্গেসও করতে ইচ্ছে করছেনা।সবকিছুতেই কেমন জানি বিরক্ত করছে।গাড়ির মধ্যে বসে আমি বাইরের প্রকৃতি দেখছি।প্রায় ২০মিনিট মত গাড়ি চলার পর একটা রেষ্টুরেন্টের সামনে এসে নামলাম।হঠাৎ রেষ্টুরেন্টে কেনো সেটা আমার অজানা।আব্বু,আম্মু আগে আগে ভিতরের দিকে গেলো আর আমি তাদের পিছু পিছু।ভিতরে ঢুকে বুঝতে পারলাম আমরা কারো জন্নদিনের অনুষ্ঠানে এসেছি।
আব্বু আমাকে তার বন্ধুদের সাথে পরিচয় করিয়ে দিলেন।কিছুক্ষণ পর শুরু হলো কেক কাটার পর্ব। আব্বুর বন্ধুর মেয়ের জন্মদিন। মেয়েটাকে আমি চিনি কোনরকম। এর আগে একবার আমাদের বাসায় গিয়েছিলো। কেক কাটার পর্ব শেষ আব্বু সবার সামনে ঘোষনা করলেন আমার সাথে নাকি আব্বুর ফ্রেন্ডের মেয়ের বিয়ে হবে।আমি এটা শুনে অনেকটা অবাক হলাম কিন্তু কিছু বললাম না।এখানে সবার সামনে কিছু বললে আব্বুকে অপমান করা হবে বাসায় গিয়ে যা বলার বলবো।
অনুষ্ঠান শেষে বাসায় আসতে আসতে অনেক রাত হয়ে গেলো।বাসায় এসে আব্বুকে বললাম
:-আব্বু আমি এই বিয়ে করতে পারবোনা।(আমি)
:-কেনো?মেয়ে পছন্দ হয়নি।(আব্বু)
:-না।
:-তাহলে?অন্য কাউকে ভালোবাসিস?
:-না।আমি এখন বিয়ে করতে চাচ্ছিনা।
:-অন্য কাউকে যখন পছন্দ করিস না তাহলে এই বিয়েটা তোকে করতেই হবে।
:-দেখো বেশি জোরাজুরি করলে আমি বাসা থেকে চলে যাবো।
:-বাসার বাইরে যেতে হলে আমার লাশের উপর দিয়ে যাবি।কথাটা মনে রাখিস।
আমি আর কিছু না বলে রুমে চলে আসলাম।প্রচন্ড খারাপ লাগছে মুনিয়ার জন্য।চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে করছে আর বলতে ইচ্ছে করছে মুনিয়া আমি তোমাকে বড্ড বেশি ভালোবাসি।প্লিজ মুনিয়া ফিরে আসো।কিন্তু কথাগুলো গলার মধ্যেই আটকে গেলো।
আজ আমার বিয়ে।শুনেছি বিয়ের দিনে কন্যারা কাঁদে কিন্তু আমার বেলায় তারর উল্টো।আমি রুমে বসে বসে কাঁদছি।মুনিয়ার জায়গায় অন্য কাউকে বসানো আমার পক্ষে সম্ভব না।
ড্রয়িংরুম থেকে চিৎকারের আওয়াজ ভেসে আসছে।চোখের পানি মুছে ড্রয়িংরুমে গেলাম।
একি দেখছি আমি??মুনিয়া!ও এখানে আসলো কেমন করে?আর এখানেই কী করছে ও?অনেকগুলো প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে মাথার মধ্যে।
মুনিয়া আমাকে দেখা মাএই এসে জরিয়ে ধরলো।রুম ভর্তি সব মানুষ আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে।মুনিয়ে আমাকে জরিয়ে ধরে কাঁদছে আর বলছে
:-প্লিজ আমাকে ক্ষমা করে দাও।আমি আর কখনো তোমাকে কষ্ট দিবোনা।প্লিজ আমাকে ক্ষমা করে দাও।(মুনিয়া)
আমি মুনিয়াকে আমার কাছ থেকে ছাড়িয়ে বললাম
:-তুমি চলে যাও।আজ আমার বিয়ে।
আমার কথা শুনে মুনিয়া আমার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলো।হয়তো এমন কথা ও আশা করেনি।
হঠাৎ আব্বু ড্রয়িংরুমে রুমে প্রবেশ করে বলে ওঠলেন আমার সব মান সম্মান আজ শেষ হয়ে গেলো।কথাগুলো বলে শোফায় বসে পড়লো।আমি আব্বুর কাছে এগিয়ে গিয়ে বললাম
:-আপনার সম্মানহানি আমি হতে দিবোনা।আপনার পছন্দের মেয়েকেই বিয়ে করবো আমি।
:-এই বিয়েটা আর হচ্ছেনা।মেয়ে পালিয়েছে।(আব্বু)
:-ঠিকই হয়েছে।আমি থাকতে তোমার অন্যকারো সাথে বিয়ে হতে পারেনা।(মুনিয়া)
আচ্ছা এই মেয়ের কী লজ্জা বলতে কিছু নাই।রুমভর্তি এত মানুষের সামনে এসব বলছে।
:-কে মা তুমি?(আব্বু)
:-আমি আপনার ছেলের বউ।(মুনিয়া)
সবাই একসাথে বলে ওঠলো
:-কী?
:-এসব কী বলছেন?আমি আপনাকে চিনিইনা তার বিয়ে হলো কবে?(আমি)
:-ওই চুপ থাকো তুমি।(মুনিয়া)
মুনিয়ার ওর ব্যাগ থেকে কিছু কাগজ বের করে বললো
:-এই দেখেন আমাদের বিয়ের কাগজপাতি।(মুনিয়া)
আব্বু মুনিয়ার হাত থেকে কাগজগুলো নিয়ে পড়ে দেখলো।পড়া শেষ হলে এসে আমার গালে ঠাস করে দুইটা থাপ্পর বসিয়ে দিলেন।
:-তুই আমার ছেলে এটা ভাবতে ঘৃনা হচ্ছে।একটা মেয়েকে আগে বিয়ে করে আবার আরেকটা মেয়েকে বিয়ে করতে চাচ্ছিস।ছিঁ।(আব্বু)
:-আব্বু এসব কাগজ ভুয়া।(আমি)
:-চুপ থাক আর কোন কথা বলবিনা তুই।মুনিয়া মামনি তোমার আব্বুর নম্বরটা দাওতো।
:-এই নিন।(মুনিয়া)
ধুর কী হতে কী হয়ে গেলো।আবার থাপ্পর খেতে হবে?ওই উপর ওয়ালা যার সাথে যার বিয়ে ঠিক করে রেখেছেন তার সাথেই বিয়ে হবে। এটাই হলো।১০০তম থাপ্পর খাওয়া থেকে আমাকে কেউ আটকাতে পারলোনা।
মুনিয়ার বাড়ি থেকে লোকজন আসলে কাজি ডেকে আমাদের বিয়ের কাজ শেষ হলো।
রাত ১২টা।
মুনিয়া খাটের উপর বসে আছে আর আমি খাটের এককোণে দাঁড়িয়ে আছি। মুনিয়ার কাছে যাবোনা।গেলেই থাপ্পর খেতে হবে এটা নিশ্চিত।
:-ওই তুমি ওখানে এভাবে দাঁড়িয়ে আছো কেনো?আমার কাছে আসো।(মুনিয়া)
:-তোমার কাছে যাবোনা।তোমার কাছে গেলেই তুমি থাপ্পর দিবে।(আমি)
:-দাঁড়াও আমি আসছি।
মুনিয়া ওঠে আমার কাছে চলে আসলো।আমি দৌঁড় দেবার আগেই ধরে ফেললো আমাকে।এরপর ঠাস করে দুইটা থাপ্পর মেরে বললো
:-১০০টা পুর্ণ হলো।
আমি গালে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছি আর মনে মনে ভাবছি আমি মনে হয় একমাএ ছেলে যেকীনা বাসর রাতে বউএর হাতে থাপ্পর খেলাম।
:-তোমার ফোন অফ কেনো?(মুনিয়া)
:-এমনিতেই।(আমি)
:-জানো সেদিন তোমার সাথে খারাপ ব্যবহার করার পর কতবার তোমাকে ফোন দিয়েছি?পিয়ন যখন তোমার রিজাইন লেটার আমার হাতে দিলো তখন খুব কষ্ট হচ্ছিলো আমার। এই কয়দিন তোমাকে অনেকবার ফোন দিয়েছি কিন্তু পায়নি।অফিস থেকে ছুটি দিচ্ছিলোনা তাই তোমাদের বাসায়ও আসতে পারছিলাম না।আজ ছুঁটি পেয়েই চলে আসলাম।
আমি চুপচাপ শুধু শুনছি।
:-কীহলো চুপ করে আছো কেনো?কথা বলবেনা?(মুনিয়া)
:-বলার মত কিছু নেই।(আমি)
:-প্লিজ কথা বলো আমার সাথে।এখন থেকে তুমি যা বলবে আমি তাই করবো।প্লিজ কথা বলো।
:-আমি যা বলবো তাই করবে?
:-হ্যাঁ।
:-বুঝে বলছোতো?
:-বুঝেই বলছি।
:-তাহলে তুমি ওই চাকরীটা ছেড়ে দাও।
:-সেটার সিদ্ধান্ত আমি আগেই নিয়ে নিয়েছি বুঝলে।বিয়ের পরে নিজে কষ্ট করবো কেনো?আমার বর কষ্ট করবে আর আমি বসে বসে খাবো।হি হি হি।
আসলে মেয়েরা খুব অদ্ভুদ হয় সেটা মুনিয়াকে দেখে আজ বুঝলাম।
আমি মুনিয়ার কোমড় ধরে কাছে টেনে নিয়ে বললাম
:-তোমাকে কিছু করতে হবেনা শুধু প্রতিদিন তোমার ঠোটের লিপিষ্টিক খেতে দিয়ো তাতেই হবে।
:-না দিবোনা।
:-কী বললে?যাও আর কথা বলবোনা তোমার সাথে।
মুনিয়াকে ছেড়ে দিলাম আমি। কিন্তু মুনিয়া ছাড়লো না।আমার ঠোঁটে ওর ঠোঁট লাগিয়ে দিলো।এরপর দুজন দুজনার মাঝে হারিয়ে গেলাম।
শুরু আমাদের নতুন দিনের।
……………………………………..সমাপ্ত……………………………………..

গল্পের বিষয়:
রোমান্টিক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত