: বউ..ওও বউ!!
: (নিশ্চুপ)
: বউউ.!!
: (নিশ্চুপ)
বুঝেছি এইভাবে হবে না,আমার কি বুদ্ধি কম নাকি..
: নুচু ও নুচু!!
: ওই আমারে ঐ নামে ডাকবানা বলছিলাম ন? (রান্নাঘর থেকে)
: হুহ,এতোক্ষন তো বউ বলেই ডাকলাম
: বউ কি? আমার একটা নাম আছে বুঝলা!নুসু বলে ডাকবা,হুহ। (ঘরে এসে)
: হু,তাই তো নাম ধরেই ডাকলাম, নুচু!
: ফাজিল বেডা!
: ঐ তুমার বর আমি,যেটাকে জামাই বলে,জা মা ই!! একটু সম্মান দিয়ে কথা বল।
: হুহ
: আচ্ছা এদিকে আসো তো একটু
: কেন?
: আরে আসোই না..
: কি হইসে বলো.. (সামনে এসে)
‘
******
‘
: এটা কি হলো? (ঠোট মুছতে মুছতে)
: আহহ,সকালের মিষ্টি মিষ্টি নাস্তা.!
: বান্দর,শয়তান..
: যাই বল,আজ কি লিপষ্টিক দিয়েছিলা?
: ঐ আবার.!!
: না আর না,এমনি মজা করছিলাম
: লুচ্চা জামাই,পচা জামাই খালি সুজোগ খুজে (কাঁদো কাঁদো আল্লাদি স্বরে)
: হু তুমার ই তো
: কি?
: জানু
: হু,হইছে এখন নাস্তা করে রেডি হয়ে অফিস যাও
: ওমা এই মাত্রই তো নাস্তা করলাম.!
: কই নাস্তা করলা? আমার তো রান্নাই শেষ হলো না
: কেন তোমার ঠোট…
: ধ্যাত যাও তো
‘
গোসল করে নাস্তা করে নিলাম,অফিসে যাওয়ার জন্য রেডি হচ্ছিলাম তখনই শুরু হলো বৃষ্টি এমনিতে বৃষ্টি আমার ভালোই লাগে কিন্তু আজ কেমন যেন লাগছে। নাহ আজ অফিস মিস দিলে চলবে না অনেক কাজ আছে,হঠাৎ জানালার কাছে এসে অন্যমনস্ক হয়ে গেলাম। নুসু আর আমার দেখা হওয়ার প্রথম দিনটির কথা মনে পরে গেল,হারিয়ে গেলাম স্মৃতির পাতায়…
‘
(৩ বছর আগে)
‘
অনেকদিনের শখ ছিল বৃষ্টিতে ছবি তোলার আজ ভালোই বৃষ্টি হচ্ছে তাই তামজিদ ভাই কে ফোন দিয়ে বললাম কেমেরা টা নিয়ে আসতে..
‘
:হ্যালো ভাই কেমন আছো? (আমি)
:কাহিনি বাদ দে,কয়জন?
:কি কয়জন??
:ছবি কয়জন তুলবি?
:হুরু বেসি বুঝো কেন?
:আজ ১ ঘন্টার বেসি টাইম দিতে পারমু না।
:আমার আধা ঘন্টা হলেই হবে.!
:এইতো লাইনে আসো,কখন তুলবি? এখন তো বৃষ্টি হইতাছে।
:এখনই
:ভাই গাজা কয় কেজি খাইছিস?
:দেখ ভাই আমার বৃষ্টির মধ্যে ছবি তুলার অনেক শখ চল না!!
:আচ্ছা কিন্তু আমি ভিজতে পারমু না।
:এতো দামি পানিতে তুমারে ভিজতে দিমু না। তারাতারি আসো এখনই তুলমু
:হাইরে.!
‘
অত:পর প্রায় অনেকগুলা ছবি তুলে শখ মিটালাম..
বাড়ির রাস্তা ধরলাম পুরো শরীর ভিজে গেছে ফোনটা পলিথিন দিয়ে মুড়িয়ে বৃষ্টির মধ্যে হাটছি,ছবি তোলার চিন্তায় ছাতা আনতেও ভুলে গেছি। এমনিতে আমার ঠান্ডার সমস্যা আছে তার উপর এই বৃষ্টি এখন মনে হচ্ছে সত্যিই ভুল করে ফেলেছি,অনবরত হাছি আসছে আমার হাছি আবার অন্যরকম একবার “হেচ্ছ” তো আরেকবার “হাচ্ছি”। একদম খারাপ অবস্থায় পরেগেছি কোন গাড়ি বা রিক্সাও নেই। আবার শুরু হলো হাছি..
‘
: এই ছেলে এইই..
‘
সামনে তাকিয়ে দেখি এক মেয়ে আমার দিকে আসছে,সামনে এসে আবার বলল..
‘
: এইই পাগল (মেয়েটি)
: (নিশ্চুপ)
: এই এভাবে বৃষ্টিতে হাটছো কেন? ঠান্ডা লেগে যাবে তো..
‘
আমি কিছু বলার মত অবস্থায় নেই,মেয়েটাকে আমি চিনি। নাহ চিনি বললে ভুল হবে অনেক ভালো করেই চিনি ওর নাম “নুসু” আমাদের কলেজেই পড়ে। প্রথম দিন কলেজে গিয়েই এই মেয়েটির উপর ক্রাশিত হয়েছিলাম,মানে ক্রাশ খেয়েছিলাম। আজ আবার নতুন করে ক্রাশ খেলাম, সব নীলে নীলাকার হয়ে গেছে,আচ্ছা ওর নাম নীলা হলে কেমন হতো? ভালোই হতো! আজকের দিনের জন্য চমৎকার মানাত কারণ আজ ওর সব কিছুই নীল রঙে ভরে গেছে,এমনকি ছাতাটাও। কথা গুলো ভাবতে ভাবতে ১৮ তম বার হাচি দিলাম..
‘
:হাচ্চি..হাচ্চি..!!
:এই ছেলে এখানে এসো
:জ্বী বলেন।
:বলেন মানে কি? আমরা তো সেম ইয়ারে পড়ি আপনি করে বললা কেন?
:না মানে সরি
:তোতলামি করছো কেন? হিহিহি
‘
আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম,আজ যদি তার হাসি না দেখতাম তাহলে জীবনের অনেক বড় জিনিস মিস করতাম। ওর কথা শুনে ঘোর কাটল..
‘
:বৃষ্টিতে ভিজতেছ কেন? ঠান্ডা লেগে যাবে তো,আসো ছাতার নিচে আসো।
:না থাক সামনেই আমার বাসা,বাসায় চলে যাব এখন।
:আসতে বললাম না!! (রাগ দেখিয়ে বলল)
‘
আজ অবাক ই হচ্ছি,প্রথমে ওর ঐ পাগল করা হাসি আর এখন ওর রাগি চেহারা। শুনেছি রাগলে নাকি মেয়েদের অনেক সুন্দর দেখা যায়,আজ তা দেখেও নিলাম। কোন কথা না বলে চুপ চাপ ওর পাশে গিয়ে ছাতার নিচে দাঁড়িয়ে পরলাম। ১৫ মিনিটের মত দাঁড়িয়ে ছিলাম,নিরবতায় কাটল সম্পূর্ণ সময়টুকু নিরবতা টা কাটল ওর কথায়..
‘
“ভিতুর ডিম একটা”
‘
বলেই চলে গেল সেখান থেকে,এতক্ষনে খেয়াল করলাম বৃষ্টি শেষ হয়ে গেছে। আমিও ভেজা কাক হয়ে বাসায় চলে গেলাম,পরের দিন আর কলেজে যাই নি কারণ টা আর বলতে হবে না জানা কথা এক ঘণ্টা বৃষ্টিতে ভিজলে তো জ্বর আসবেই আমারবেলা তার বিপরীত হবে কেন? যাই হোক জ্বর কে পাত্তা না দিয়ে আমি সারাদিন গেম খেলেছি আর কার্টুন দেখেছি। পরের দিন কলেজে গিয়েই পরলাম ঝামেলায়..
‘
:আজ কই যাবা? টাকা না দিলে আজ তোর গিটার আর..(নীল)
:না থাক আর কিছু করতে হবে না ওর গিটার টা ভাঙলেই হবে (রাফসান)
:মানে কি কিসের টাকা?(আমি)
:ফ্লাস বেকে যাই? (রফি)
:না না সরি বুজছি কিসের টাকা। (আমি)
:দে তারাতারি (জয়)
:তরা কি আমারে এই ভাবে গরিব বানাবি? সামান্য একটু বাজিই তো হেরেছি তাই না? ছেরে দে
:ঐ ওর গিটার টা নে তো (রফি)
:ওই না না,এই নাও টাকা। হুদাই তুমারে বস বলি খালি বাশ দেও আমারে
:টাকা দেও ইমোশনাল কথা বাদ দেও।
‘
অতঃপর বাজি হারার ফল স্বরূপ আমার পকেট খালি হলো। গিটার টা বাচাতে টাকা টা দিতেই হলো। ক্লাসে যাচ্ছিলাম তখনই পেছন থেকে কার যেন ডাক শুনতে পেলাম..
‘
“গিটার কি বাজাতে পারেন? নাকি শুধু ভাব দেখানোর জন্যই কাধে নিয়ে ঘুরেন?”
‘
পেছনে তাকিয়ে দেখি নুসু। আমি কেন জানি ওর সামনে পরলেই বাক শক্তি হারিয়ে ফেলি,বার বার হারিয়ে যাই ওর চোখের মায়ায়। হয়তো ওকে ভালোলাগে তাই!
হ্যা ওকে আমার প্রথমদিন থেকেই ভালো লাগে, কিন্তু এ কথা রাফসান ছাড়া আর কেও জানে না। বলার সাহসও হয় না ওকে,ওকে দেখলেই তো আমার তোতলামি শুরু হয়ে যায়..
‘
:এইযে একদিনেই কি বোবা হয়ে গেলা?
:না মানে..না
:মানে মানে কি? আমাকে দেখলেই…
‘
তখনই ওর ফোন আসলো! চলে গেল কথা বলতে বলতে। আর আমি গভীর নিশ্বাস ফেললাম। ব্যর্থতার নিশ্বাস..
দুইদিন ধরেই রাফসানকে ব্যস্ত দেখছি ফোনে কথা বলে আর আমাদের সাথে বেশিক্ষন থাকেও না রফি ভাই ওর ওপর নজর রাখতে বলল। আমিও গোয়েন্দাগিরি শুরু করে দিলাম কিন্তু দুইদিনের মাথায় ওর ব্যস্ততার কারণ দেখে মাথা গরম হয়ে গেল লুকিয়ে লুকিয়ে ও নুসুর সাথে দেখা করতে যায়।
নিজেকে আর সামলাতে পারলাম না। সবাই আমার রাগকে ভয় পায় ওরা জানেই আমার রাগ উঠলে আমি কাওকে চিনি না। তাই রেগে-মেগে রাফসানের চাপা বরাবর দুটো বসিয়ে দিলাম,মার খেয়ে রাফসান বসে পরলো। আমার এ ধরনের কাজ দেখে নুসু অবাক হয়ে বলল..
‘
:মারলা কেন ওকে?
:না মানে..(মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছি)
:মারলা কেন ওকে?? (চোখ বড় বড় করে রাগ দেখিয়ে বলল)
:ভালোবাসি আমি তোমাকে,আর এটা জানার পরও ও এমন করলো কেন? প্রথমদিন থেকেই আমি তোমাকে ভালোবাসি কিন্তু কিছু বলতে পারিনি ভয় হয়,কিন্তু ও তো জানতো ও এমন করলো কেন? ভালোবাসি তোমাকে.. (নিজেও জানি না কিভাবে কথাগুলো বললাম)
‘
কোথা থেকে রফি,জয়,সাইদুল সবাই বেড়িয়ে এসে বলল..
‘
:যাক মুখ থেকে কথা গুলো তো বের হলো! (রফি)
:মানে? (অবাক হয়ে)
:মানে এই যে তুমি আমাকে ভালোবাসো তা বললে কি হতো? তোমার জন্য তো রাফান ছেলেটা মার খেল (নুসু)
:মানে কি এগুলার?
:মানে এগুলা আমাদের প্লান ছিল(রাফসান)
:তোরা এমন করলি কেন?
:তোর মুখ থেকে তো কথাই বের হয় না তাই আমাদের ই করতে হলো.!(রাফসান)
:অনেক হয়েছে এখন প্রপোজ করো ওকে..
:আমি এগুলা পারি না,হুহ
:কিহহ.. (চোখ পাকিয়ে আমার দিকে তাকালো,নুসু)
:করছি করছি..
“তোমাকে আমি হঠাৎ পেয়েছি
হারিয়ে সব ছন্দ
হঠাৎ হাওয়ায় উড়তে দেখেছি,
তোমার খোলা চুল.!
বৈরাগ্যকে ভালবেসেছি,ভালোবেসেছি তোমাকে
তোমাকে আমার সবই দিয়েছি,ভালোবাসার এক ফাঁকে”
‘
দেখি সবাই আমার দিকে হা তাকিয়ে আছে,হঠাৎ নুসু আমাকে জড়িয়ে ধরে বলল..
‘
“ভিতুর ডিম একটা”
.
নুসুর ডাকে বর্তমানে ফিরে আসলাম..
‘
:কি হলো অফিসে যাবা না?
:না
:কেন?
:আজ আমার বউ এর সাথে এপয়েনমেন্ট আছে.!
:মানে?
‘
কিছু না বলেই নুসুকে কোলে তুলে বাইরে চলে গেলাম,আবার সেই বৃষ্টিতে ভিজতে..
‘
:এই কি করছো? ভিজে যাব তো (নুসু)
:ভেজার জন্যই তো আনলাম.. (আমি)
:এই কাছে আসবানা একদম..একটু আগেও দুষ্টুমি করেছ..
:এই তোমার ঠোটে ওটা কি?
:কোথাই কি!!
:এই যে…
‘
হারিয়ে গেলাম আবার…
….(কাল্পনিক)…
……………………………………….((সমাপ্ত))……………………………………….