ভাইয়া এই ভাইয়া আর কত ঘুমাবি।(শীলা)
ঘুম ভেঙ্গে গেলো।ঘুম ঘুম চোখে বললাম
:-দিলিতো স্বপ্নটা ভেঙ্গে।নীরাকে নিয়ে কত রোমান্টিক স্বপ্ন দেখছিলাম।ইশ ওকে প্রায়,পটিয়েই ফেলেছিলাম(আমি)
:-হি হি হি হি হি
:-হাঁসছিস কেনো।আমি কী জোকার যে আমাকে দেখে হাঁসছিস।
:-তুই নীরাকে এতবার প্রপোজ করার পরেও যখন রাজি হয়না তখন বারবার কেনো যাস প্রপোজ করতে।
:-ধ্যাত।তুইও তোর ফাজিল বান্ধবিটার মত।একটু আমার হয়ে ওকে বলবি কী তানা আরো ওকে আমার থেকে দুরে সরিয়ে দিস।
:-নিজে পারেনা সেটা বলেনা।
:-তুই আমার রুম থেকে বের হ।আর শোন তোর বান্ধবীকে আজ শেষবারের মত প্রপোজ করবো রাজি হলে হলো নাহলে বাদ।
:-তোকে আমার বান্ধবী কোনদিন ভালবাসবে না।
কথাটি বলেই শীলা আমার রুম থেকে চলে গেলো।সকাল সকাল মেজাজটাই খারাপ করে দিলো।আর আমি ওর চলে যাওয়া দেখছি আর ভাবছি ও যেমন আমার বোনটাও তেমন।ও আপনাদেরতো পরিচয়ই দেওয়া হয়নি।আমি হুসাইন।অনার্স ১ম বর্ষে পড়ছি।আর এতসময় যার সাথে ঝগড়া করলাম উনি আমার একমাএ বোন।সবসময় আমাকে বাঁশ দেওয়ার জন্য রেডি থাকে।আর নীরা হলো আমার ফাজিল বোনটার বান্ধবী।ওটা আরেক ফাজিল।আমাকে আজ ৬ মাস ধরে ওর পিছু পিছু ঘুরাচ্ছে।নীরাকে প্রথম দেখেছিলাম আমার জন্নদিনের অনুষ্ঠানে।সেদিন ও নীল শাড়ি পড়ে এসেছিলো।প্রথম দেখাতেই ওর প্রেমে পড়ে গিয়েছিলাম।এরপর আমার এক ফ্রেন্ডকে দিয়ে আমার ভালবাসার কথা বলায় কিন্তু না করে দেয় এবং আমার বোনকে বলে দেয়।আপনারাই বলেন কেউ প্রপোজ করেছে ভালো কথা তাই সেটা অন্যকে বলে দিতে হবে। আমার বোনটা এটা নিয়ে আমাকে সবসময় পচায়।কিছু বলতেও পারিনা আবার সহ্য করতেও পারিনা। আবার ওর বান্ধবীরাও সবগুলো ফাজিল আমাকে দেখলেই মুখ টিপে টিপে হাঁসে।সবগুলো ফাজিলের ডিব্বা।যাইহোক আটটা বাজে এখন নীরা প্রাইভেটে যাবে। আজ ওকে শেষ বারের মত প্রপোজ করবো।মানে ১০০ বার পুরুন হবে আজ।ফ্রেশ হয়ে রেডি হয়ে নিলাম।হালকা নাস্তা করে বেড়িয়ে পড়লাম।আমাদের বাসা থেকে নীরাদের প্রাইভেট সেন্টার বেশি দুরে না।হেঁটে গেলে ৫ মিনিট লাগে।হাঁটতেছি আর ভাবছি আজ নীরা রাজি না হলে ওকে ভুলে যাবো।আচ্ছা চাইলেই কী ভুলা যায়।এতদিন ধরে ওকে ভালবাসি আর এক মুহুর্তে সব ভুলে যাবো।এটা সম্ভব না।এসব ভাবতে ভাবতে নীরার প্রাইভেটের সামনে চলে আসলাম।৫ মিনিট অপেক্ষা করার দেখলাম নীরা আসছে।ওর পাশের বান্ধবীটা দুর থেকে আমাকে দেখে মুখ টিপে টিপে হাঁসছে।আমি গিয়ে নীরার সামনে দাঁড়ালাম।নীরা আমাকে দেখে না দেখার ভান করে চলে যেতে চাইলো।আমি বললাম
:-নীরা তোমার সাথে আমার কিছু কথা ছিলো(আমি)
:-জ্বি বলুন(নীরা)
:-আমি তোমার পিছে আজ ৬মাস যাবৎ ঘুরছি এটা তুমি ভালো করেই জানো।অনেকবার তোমাকে প্রপোজও করেছি কিন্তু তুমি রাজি হওনি।প্রতিবারই বলেছো ভেবে দেখবো কিন্তু পরে আর কোন উওর দাওনি।আমি তোমাকে সত্যিই অনেক ভালবাসি তাই বারবার তোমার কাছে ছুঁটে আসি।তুমি হয়তো আমাকে ভালবাসোনাতাই আমার প্রশ্নের উওর দাওনা।তোমাকে এতদিন বিরক্ত করার জন্য সরি।আমাকে ক্ষমা করে দিও বাই।
কথাগুলো একনাগারে বলে চলে আসলাম।যার কাছে আমার ভালবাসার কোন মূল্য নেই তাঁর পিছে না যাওয়াই ভালো।ওখান থেকে সোজা কলেজে চলে আসলাম।কলেজে এসে ক্লাস করে এক বন্ধুর বাসায় গেলাম বই আনতে।ওদের বাড়ি থেকে আসতে আসতে সন্ধা হয়ে গেলো।বাড়িতে এসে আম্মুকে বললাম খাবার দিতে।খাওয়া দাওয়া করে রুমে এসে বসলাম।বসে বসে নীরার কথা ভাবছি।এমন সময় শীলা রুমে আসলো
:-কিরে আজ আবার নাকি নীরাকে প্রপোজ করেছিস।দেখলিতো আমি বলেছিলাম না নীটা তোকে কখনোই ভালবাসবে না।(শীলা)
:-করেছি তো কী হয়েছে।তোর বান্ধবীর ভাব বেশি হয়ে গেছে তাইনা।ও নিজেকে বিশ্ব সুন্দরী মনে করে।৭ দিনের মধ্যে যদি ওর থেকে ভাল মেয়ের সাথে সম্পর্ক করতে না,পারি তাহলে আমার নাম হুসাইন না।(আমি)
:-ভাইয়া তোকে একটা জরুরী কথা বলার ছিলো?
:-তাঁড়াতাঁড়ি বলে এখান থেকে যা
:-এই চিঠিটা নীরা তোকে দিতে বলেছে।
:-আমি চিঠি দিয়ে কী করবো।
:-আমি কী করে বলবো। এইনে তোর চিঠি
শীলা চিঠিটা আমার হাতে দিয়ে রুম থেকে চলে গেলো।আমি চিঠিটা খুলে দেখি চিঠির মাঝখানে বড় করে লেখা
“”‘কাল সকাল ১০ টায় ওমুক পার্কে চলে আসবেন'””‘
চিঠিটা পড়ে আমি শীলাকে ডাক দিলাম।
:-নীরা কালকে দেখা করতে বলছে কিসের জন্য(আমি)
:-আমি কী করে বলবো।হয়তো ওর বয়ফ্রেন্ডের সাথে তোর পরিচয় করিয়ে দেবে।(শীলা)
:-ওর বয়ফ্রেন্ড আছে সেটাতো জানতাম না। তুইতো কোনদিন বলিসনি
:-আমিই কী জানতাম।ও আজকে বললো আমাকে।
:-ও
শীলা চলে গেলে আমি রুমের দরজা বন্ধ করে দিয়ে শুয়ে শুয়ে পড়লাম।শুয়ে শুয়ে ভাবছি ওর বিএফ আছে এটা আমাকে আগে বললেই পারতো এতদিন আমাকে অযথা কেনো ঘুরালো।সেদিন সারারাত ঘুম হলোনা।পরেদিন নীরার দেওয়া ঠিকানা অনুযায়ী গেলাম।আমার যাওয়ার উদ্দেশ্য ২টা।১.নীরার বয়ফ্রেন্ডকে দেখা।২.আমাকে এতদিন ঘুরানোর জন্য শাস্তি দেওয়া।আমি পৌঁছে দেখি নীরা আগে থেকেই বসে আছে।সেই প্রথমদিনের মত নীল শাড়ি পড়েছে।সাথে হাতে চুড়ি আর চোখে গাড়ো করে
কাজল দেওয়া।আমি আবার ওর প্রেমে পড়ে গেলাম। কিন্তু ওর বিএফ আছে এটা মনে পড়তেই সব ভালবাসা উধাও হয়ে রাগ জন্ন নিলো।আমি নীরার সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম।আমাকে দেখে ও বললো
:-কেমন আছেন(নীরা)
:-ভালো।আপনি(আমি)
:-আমাকে আপনি করে বলছেন কেনো?
:-কোন অধিকারে তুমি করে বলবো?
:-থাক বলতে হবেনা।
:-আপনার বয়ফ্রেন্ড কোথায়?
:-আমার বয়ফ্রেন্ড আসলো কোথা থেকে?
:-মিথ্যা বলছেন কেনো?
:-আমি সত্যিই বলছি আমার বয়ফ্রেন্ড নেই।
আমি নীরার কথা শুনে অবাক হলাম।তবে কী শীলা আমাকে পঁচানোর জন্য মিথ্যা বললো।
:-হ্যাঁ আমি একটা গাধাকে ভালবাসি কিন্তু সেই গাধা আমার ভালবাসা বুঝেনা(নীরা)
এবার আবার নীরার উপর রাগ হলো।
:-আপনি অন্যকাউকে ভালবাসেন তাহলে ৬ মাস আমাকে ঘুরালেন কেনো?বলে দিলেই পারতেন। (চিৎকার করে কথাটা বললাম)
আমার কথা শুনে আশেপাশের লোকজন তাঁকিয়ে আছে।নীরাও অবাক হয়ে আমার দিকে তাঁকিয়ে আছে।
:-আপনি আসলেই একটা গাধা।আপনাকে আমি ভালবাসি এটা আপনি কোনদিনও বুঝলেন না।(নীরা)
আমি এবার অবাক না হয়ে পারলাম না।নীরা আমাকে ভালবাসে এটা শুনে মনের ভিতর অন্যরকম একটা অনুভতি কাজ করছে।
:-আমি দেখতে চেয়েছিলাম তুমি আমাকে কতটুকু ভালবাসো তাই তোমাকে দিয়ে এতবার প্রপোজ করালাম।আমিও আপনাকে আগে থেকেই ভালবাসি।শীলা আর আমি মিলে আপনার সাথে মজা নেওয়ার জন্য এমন করেছি।
আমি ওর কথা যত শুনছি তত অবাক হচ্ছি।
:-আমাকে যে শাস্তি দিবে আমি মাথা পেতে নিবো(নীরা)
:-তোমাকে অব্যশই শাস্তি পেতে হবে।(আমি)
:-কী শাস্তি(নীরা)
:-আমাকে অনেক ভালবাসতে হবে।কখনো ছেড়ে যেতে পারবেনা।
:-আচ্ছা
:-আমরা দুজন দুজনাকে তুমি করে বলছি এটা কী খেয়াল করেছো?
:-আসলেইতো
:-তোমার হাতটা ধরবো?
:-এতে অনুমতি নেওয়ার কী আছে।
আমি আর নীরা হাত ধরে হাঁটছি।জানিনা কতদুর হাঁটবো আমরা।
…………………………………………………((সমাপ্ত))…………………………………………….