তুমিময়

তুমিময়

কারো হাসির শব্দে আমার ঘুমটা ভেঙ্গে গেল। আজ এমনি অফিসের ছুটির দিন তাই একটু ঘুমাচ্ছিলাম কিন্তু পাশের রুমে তাম্মির সাথে আরো একটা মেয়ের কথা শুনতে পাচ্ছি। সব কিছু বাদ দিয়ে আবার একটু ঘুমানোর চেষ্টা করলাম। কিন্তু ওদের কথার চাপে আমার ঘুমের সাড়ে বারটা বেজে গেল। তাই চিৎকার দিয়ে বললাম….
— তাম্মি একটু আস্তে হাসা যায় না। আস্তে কথা বল। আর হাসতে হলে ছাদে গিয়ে হাসতে থাক।
আমার ধমক শুনে তাম্মি একদম চুপ হয়ে গেল। আর কোন আওয়াজ হলো না। আমি আমার মত ঘুমিয়ে রইলাম। তখন দরজায় ধাক্কা পরলো। আবার কে আসলো? ছুটির দিনেও কি শান্তিতে ঘুমাতে দিবে না। চোখটা পরিষ্কার করতে করতে বিছানা ছেড়ে দরজা খুলতে গেলাম। দরজা খুলতেই মা রুমে প্রবেশ করলো আর আমি আমার বিছানায় উঠে গেলাম ঘুমানোর জন্য। তখম মা বলল…
— কিরে ঘুম থেকে উঠে যা। বাসায় মানুষ এসেছে?
— জানি কিন্তু আমি কেন উঠবো? ওনারা কি আমাকে দর্শন করতে এসেছে না কি?
— হুমম নিত্তিয়ার বাবা এসেছে তোরে দেখতে?
— হুমম… কি?কোন কথা নাই বার্তা নাই দেখতে চলে আসলো।
— বাবা রাগ করিস না। আসলে তোর বাবা গতকাল রাতে ওদের দাওয়াত দিছে আজকে আমাদের বাসায় বেড়াতে।
— বেড়াতে এসেছে ভাল। সারা দিন মজা করুক আর আনন্দ করে দিন কাটাক। তারপর টা টা বাই হয়ে যাক। এখানে আমাকে দেখার কথা আসছে কেন?
— আসলে তোর বাবা তোর জন্য নিত্তিয়াকে পছন্দ করে করেছে। এবার নিত্তিয়ার বাবা তোকে পছন্দ করলেই হবে।
— মা আমি বিয়ে করতে পারবো না
— তোরে তো কেউ বিয়ে করতে বলছে না? একবার ভাল করে নিত্তিয়ার বাবার সামনে যা। তারপর দেখ নিত্তিয়ার বাবা তোকে পছন্দ করে কি না? আর বিয়ের কথা তো অনেক দূরের ব্যাপার।
— আচ্ছা যা তোমাদের মর্জি।
মা আমার রুমটা গুছিয়ে দিতে লাগলো আর আমি ফ্রেশ হতে চলে গেলাম।ফ্রেশ হতে বের হতে যাবো তখন খেয়াল করি আমার রুমে কেউ ডুকেছে। মনে হয় মা বা তাম্মি হবে। তাই খালি গায়েই ওয়াশরুম থেকে বের হলাম। কিন্তু ঠিক এর বিপরীত ঘটলো। একটা মেয়ে আমার দিকে ডেব ডেব করে তাকিয়ে রইলো। আমি তারাতারি মেয়েটার দিকে পিছন ঘুরে তাকালাম।
— ওই আপনি কে?আর আমার পারমিশন ছাড়া রুমে ডুকলেন কেন?
— আমি নিত্তিয়া আর রুমে কেউ ছিল না তাই একটু ঘুরে দেখছিলাম।
— হুমম বেশি কিছু দেখে ফেলেছেন আর এখন যান।
— হুমম
— আর আরেকটা কথা। কাউকে বলবে না প্লিজ।
— আচ্ছা কি বলবো না বলেন তো?(মুচকি হেসে দিলো)
— দেখুন বুঝেও না বুঝার চেষ্টা করবেন না ওকে।
— হুমম বুঝছি।
— হুমম এবার তাহলে যান।
মেয়েটি চলে গেল আর আমি গিয়ে দরজাটা লাগিয়ে দিলাম। তার মানে এই হলো নিত্তিয়া। ধ্যাত ওর সাথে প্রথম দেখাটাই এমন ভাবে হলো যে ভাবতেই হাসি পাচ্ছে। মেয়েটা এই ব্যাপারটা কেমন ভাবে নেবে এটাই কথা।
আমি ফ্রেশ হয়ে রুমে বসে মোবাইলে গেমস খেলছি। কারন নিত্তিয়ার বাবার কারনে বাইরে গিয়ে নাস্তা করতে পারছি না। তখনই মা আসলো।
— কিরে ফ্রেশ হয়ে গেছিস?
— দেখতেই তো পারছো।
— আয় নাস্তা করে নে।
— না আমার নাস্তাটা দিয়ে যাও। বাইরে নিত্তিয়ার বাবা।
— বোকা ছেলে এতে সমস্যা কি? এই ধর দুপুরের বাজারের লিস্ট।
— এতো কিছু জানি না। তুমি নাস্তাটা পাঠিয়ে দাও। (বাজারের লিস্ট টা নিতে নিতে বললাম)
— পারবো না। আমার রান্না ঘরে অনেক কাজ আর তাম্মি স্নানে গেছে।
— আচ্ছা তাহলে আমি না খেয়েই বাইরে যাবো।
— বসে থাক, দেখি।
আমিও কিছুক্ষণ বসে রইলাম। এক পর্যায় রাগ উঠে গেল তাই বাইরে যাওয়ার জন্য রেডি হয়ে বাজারের লিস্ট টা পকেটে নিয়ে যেই রুম থেকে বের হতে যাবো তখনই নিত্তিয়া খাবার নিয়ে রুমে ঢুকলো। তখনই একটা ধাক্কা খেতাম কিন্তু একটুর জন্য বেঁচে গেলাম। নিত্তিয়া আমার সামনে খাবার নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তখন ওই বলল…
— আন্টি বলছে খেয়ে তারপর বাজারে যেতেন?
— হুম
আমি আর কথা বাড়ালাম না। আর নিত্তিয়াও চলে গেল। আমি কোন কিছু না ভেবে খেয়ে দেয়ে বাসা থেকে বেড়িয়ে গেলাম। অবশ্য বাসা থেকে বের হওয়ার সময় নিত্তিয়ার বাবার সাথে মুলাকাত করে নিয়েছি।
.
বাজার করতে কম কিছু লেখে নি। মনে হচ্ছে আজকেই আমার বিয়ে লেগেছে আর সবাইকে দাওয়াত দিয়ে খাওয়াবে। আপাতত আমি তাম্মির বিয়ে না হওয়া পর্যন্ত নিজে বিয়ে করবো না। এইসব কথা ভাবছি আর বাসার দিকে আসলাম। বাসায় যেতেই দেখি আমার কয়েক জন আঙ্কেল আন্টি এসেছে। আর আমার ছোট কয়েকটা কাজিনও এসেছে। আমাকে দেখে আমার এক কাজিন দিয়া বলল….
— শুভ কামনা রাজ দা। নতুন জীবন সুখের হোক।
ওর কথা শুনে কোন রিয়েক্ট করলাম না কারন ওরা সবাই আমার ছোট। কিন্তু ওর কথায় একটা পুড়া পুড়া গন্ধ পাচ্ছি। হুমম তবে সেটা আমারই কপাল পুড়ার গন্ধ মনে হচ্ছে। বাজার গুলো নিয়ে রান্না ঘরে যেতেই দেখি সবাই হাতে হাতে কত কাজ করছে?আমি মাকে ডাক দিতেই মা বলল…
— রাজ যা বাবা তারাতারি স্নান করে রেডি হয়ে নে।
— কেন মা আজ তো আমার জন্মদিন না? তাহলে কেন এতো আদর দেখিয়ে কথা বলছো?
— বোকা ছেলে কি যে বলিস? আজ তোর আংটি বদল হবে।
— মা আমি তো বলছিলাম বিয়ে করবো না।
— তোকে বিয়ে করতে কে বলছে? শুধু আংটি বদল করে রাখ। বিয়ে তো আর হচ্ছে না।
— ঠিকই বলেছে। এমন ভাবে বিয়ের দিন আমার বিয়ের পিড়িতে বসিয়ে দিয়ে বলবে। বিয়ের পিড়িতেই তো বসেছিস, বিয়ে তো আর করছিস না।
— ধুর বোকা এমন করছিস কেন? এখন যদি মানা করিস তাহলে তোর বাবার সম্মানটা কি থাকবে?
— ওনি যদি ওনার সম্মানের কথাই ভাবতো তাহলে অন্তত আমার সাথে কথা বলে এই বিয়েটা ঠিক করতো।
— রাজ বেশি হয়ে যাচ্ছে কিন্তু।
— আমার সব কিছুই তো তোমাদের কাছে বেশি লাগে। যা ইচ্ছা করতে থাকো তোমরা।
আমি এক প্রকার রাগ দেখিয়ে রান্না ঘর থেকে বেড়িয়ে আসলাম। আর রান্না ঘর থেকে বের হতে যাওয়ার সময় দেখি নিত্তিয়া দাঁড়িয়ে আছে। আমি ওরে দেখেও পাশ কাটিয়ে চলে আসলাম।
.
রুমে এসে বসে আছি। আমার বিয়ে ঠিক করেছে কিন্তু একটা বার আমার সম্মতির কথা বিবেচনা করলো না। আমি সারাটা জীবন যাকে নিয়ে চলবো তাকে আমি ভাল মত চিনিও না কিন্তু এখন আমার নাকি বিয়ে। বেশ অদ্ভুত লাগছে ব্যাপারটা?
সেই মুহূর্তে রুমে কারো প্রবেশ খেয়াল করলাম। তাকিয়ে দেখি নিত্তিয়া দাঁড়িয়ে আছে। আমি সৌজন্য বোধ দেখিয়ে বসতে বললাম। তখন ও বলল….
— আচ্ছা আমাকে আপনার পছন্দ নয় তাই না।
— ঠিক তা নয়। পৃথিবীর প্রতিটা জিনিসই সুন্দর আর সব চেয়ে বেশি সুন্দর হলো প্রতিটা মেয়ে।
— তাহলে আপনার বিয়েতে আপত্তি কেন?
— আপনাকে আমি চিনি না। তাছাড়া আপনার ব্যাপারে কিছুই জানি না আর সব চেয়ে বড় কথা হলো আপনার পছন্দ অপছন্দ গুলো জানি না।ধরেন বিয়ের পর আপনার সাথে আমার কোন একটা বিষয় নিয়ে ঝগড়া হলো তখন আমাদের দূরত্বটা বাড়তে থাকবে কারন আমি তো আপনার পছন্দ অপছন্দটা জানি না।
— তাহলে এটাই কারন?
— আরো অনেক কারন আছে তবে আপাতত মনে পরছে না।
— দেখুন আপনার কথায় যুক্তি আছে যে বিয়ের আগে একজন আরেকজনে জানাটা আবশ্যক কিন্তু সব ক্ষেত্রে এমনটা খাটে না। যদি রিলেশন করে বিয়ে হয় তাহলে হয়ত একজন আরেক জনকে জানে তবে আমার মতে বলবো অচেনা দুইটা মানুষই বিয়ে করা ঠিক। কারন এতে একটু হলেও ভয় থাকে। আচ্ছা ধরুন আপনি যাকে ভালবাসেন তার সাথেই আপনি বিয়ে করলেন। ধরে নেন ৩ বছরের রিলেশন করেই বিয়ে। একজনের ব্যাপারে আরেকজন খুব ভাল জানেন। খুব সুখেই আছেন। ধরুন একদিন পাশের বাড়ি আন্টি আপনার বউকে বলল ওনার সাথে কোথায় যেতে বা কিছু কাজ করতে। তখন আপনার চির চেনা পরিচিত বউটা ভাববে আমি এখন বাইরেই যাই। এতে যদি আপনি রাগ করেন তাহলে আপনায় সরি বলে দিবে। কিন্তু যদি অচেনা কাউকে বিয়ে করেন আর পাশের বাড়ির আন্টি আপনার বউকে কোন কাজের কথা বলে বা কোথাও যেতে বলে তাহলে আপনার অচেনা বউটা আপনাকে ফোন দিয়ে আপনার পারমিশন নিয়ে কাজ করবে। এবার আপনিই ভেবে দেখুন কেমন মেয়ে বিয়ে করা ঠিক?
— হুমম আপনার কথাতেও যুক্তি আছে কিন্তু আমি যে এখনই বিয়ে করতে চাই না।
— তবে কবে করতে চান? বুড়া হয়ে।
— আরে তা নয়। আসলে আমি আমার সমস্যাটা আপনাকে বুঝাতে পারছি না।
— বুঝাতে চেষ্টাও তো করছেন না।
— আচ্ছা যাই হোক, একটা প্রশ্নের উত্তর দিতে পারলে আমি বিয়ে করবো?
— বলেন দেখি এই ছোট মাথায় আপনার প্রশ্নের উত্তর আছে কি না?
— আচ্ছা আমাদের বিয়ের পর আপনি আমার পরিবারটাকে কেমন ভাবে নিবেন?
— সুন্দর একটা প্রশ্ন। আপনার বাবাকে নিজের বাবার মতই ভাববো। আর আমার তো মা নেই তাই আপনার মা আমার মা। আর তাম্মি হলো আমার বন্ধুর মত। যার সাথে সব কিছু শেয়ার করবো।
— আর আমি?
— সেটা ভাবতে হবে। কারন আমি যাকে খুব ভালবাসি তাকে ভিন্ন ভিন্ন নামে ডাকি।
— হুম আপনি এখন যান আর রেডি হয়ে নেন।
নিত্তিয়া কিছু বললো না, শুধু মাথা নিচু করে একটা হাসি দিয়ে চলে গেল। আমি জানি নিত্তিয়াকে মা নিজেই এখানে পাঠিয়েছে। আর ওর কথা গুলো আমার মত বদলাতে বাধ্য করলো।
.
আংটি বদলের অনুষ্ঠান শেষ করে সবাই এক সাথে খেতে বসলাম আর নিত্তিয়াকে সবাই মিলে আমার পাশে বসিয়েছে। জানি না সময়টা কোথা দিয়ে পার হয়ে গেল তবে বলতে পারি আপেক্ষিক সময়ের সূত্রের মত নিজেকে ধারন করলাম। আমাদের পদার্থ বিজ্ঞান ক্লাসে স্যারকে আমি প্রশ্ন করেছিলাম “স্যার আপেক্ষিক সময় কি?”। স্যার তখন খুব সহজ ভাবে বললেন” রাজ ধরো তুমি একটা আগুনের চুলার সামনে দাঁড়িয়ে আছো আর সেই চুলার তাপ তোমার শরীরে লাগছে। তখন তোমার কাছে ১০ মিনিট দাঁড়িয়ে থাকাকে মনে হয় ১ ঘন্টা দাড়িয়ে আছো। আবার মনে করো তুমি একটা সুন্দরী মেয়ে পাশে ১ ঘন্টা বসে আছো তখন মনে হবে এই তো মাত্র ১০ মিনিট বসে আছো । সময়ের তুলনাই হলো আপেক্ষিক সময়”। আজ ঠিক এমনই ঘটলো। কখন যে সময় চলে গেল বুঝতেই পারলাম না ।
এরপর সবাই মিলে আমাদের বিয়ের তারিখটা ঠিক করে দিলো। আগামী ২ সপ্তাহ পরেই আমাদের বিয়ের তারিখ ঠিক হলো। এর মাঝে আমার আর নিত্তিয়ার মাঝে কোন কথা হয় নি। তবে ওইদিনই আমি ওর নাম্বার আমার কাছে রেখে দিয়ে ছিলাম।
এভাবে প্রায় ১ টা সপ্তাহ কেটে গেল। আমি নিত্তিয়ার শাড়ী কিনার জন্য নিত্তিয়াকে ফোন করেছিলাম কিন্তু ওর ফোন বন্ধ পাই। একদিন তাম্মিকে নিয়ে বিকালে শপিংয়ে বের হই। শপিং শেষ করে যখন রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলাম তখন পাশের রোডে নিত্তিয়াকে একটা ব্যাগ নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখি। তখনই দেখি একটা রিকশা ওর সামনে এসে থামলো আর ওই রিকশায় একটা ছেলে ছিল। নিত্তিয়া হাসতে হাসতে রিকশায় উঠে বসলো। আমাদের রিকশা এগিয়ে যাওয়ায় আমি আর ওকে দেখতে পাই নি। বাসায় গিয়ে অনেক বার ফোন দিতে চাইলেও নিত্তিয়ার মোবাইল বন্ধ পাই। আমার প্রচন্ড রাগ হলো। ছেলেটা কে হতে পারে?নিত্তিয়া কি আগে থেকেই কাউকে ভালবাসে? হঠাৎ তাম্মি আমার রুমে আসলো।
— ভাইয়া বাবা তোকে ডাকছে?
— তুই যা আমি আসছি।
আমি বাবার কাছে যেতেই বাবা বলল…
— রাজ আজ কি কোথায় যাবে নাকি ফ্রি আছো?
— হুমম বাবা ফ্রি আছি।কেন কোন দরকার আছে?
— আসলে তোমার বিয়ের কার্ড গুলো চলে এসেছে। তাই আজ থেকে বিলি করা শুরু করে দাও। মানুষ তো কম হবে না।
— কারা কারা আসবে তাদের লিস্ট আর কার্ড গুলো আমায় দিয়ে দাও আমি পৌঁছে দিবো।
— তার আগে একটা কার্ড নিয়ে নিত্তিয়াদের বাসায় দিয়ে আসো। কারন ওরা আমাদের আত্মীয় হতে চলেছে তাই কার্ড বিতরেণের প্রথম কাজটা ওদের বাসা থেকে শুরু করো।
— আচ্ছা।
তারপর আমি কার্ড নিয়ে রওনা হয়ে গেলাম নিত্তিয়াদের বাসার দিকে।প্রায় আধা ঘন্টা পর ওদের বাসায় এসে পৌঁছালাম। বাসায় পৌঁছে কলিং বেল বাজাতে নিত্তিয়ার বাবা দরজা খুলল…
— আরে রাজ বাবা যে। ভিতরে আসো।
— হুম
ভিতরে যেতেই আমায় বসতে বলল আর আমিও বসলাম। ওনি ব্যস্ত হয়ে উঠলেন। তারপর আমার জন্য কিছু আনতে গেলেন। আমি অবশ্য মানা করেছি কিন্তু ওনি আমার কথা শুনে নি। একটু পর আমার সামনে কিছু মিষ্টি নিয়ে আসলেন। আর বললেন…
— বাবা নিত্তিয়ার মা যদি বেঁচে থাকতো তাহলে হয়ত এইসব কাজ নিত্তিয়ার মা ই করতো।
— ঠিক আছে আঙ্কেল।
— আচ্ছা এবার বলো আমাদের বাসায় আসার কারন কি?
— বাবা বিয়ের কার্ড দিয়ে পাঠিয়েছে। আপনাদের বাসা থেকেই কার্ড দেওয়া শুরু করতে চান।
— ও আচ্ছা।
— আঙ্কেল নিত্তিয়া।
— ও তো ঘন্টা খানেক আগে একটু বেড়িয়েছে। একটু বসো ও হয়ত চলে আসবে।
— না আঙ্কেল এখন সময় নেই। পরে আসবো এক সময়।
— আচ্ছা বাবা।
ওনার থেকে বিদায় নিয়ে চলে আসি। ওদের বাসার গেটের সামনে আসতেই দেখি নিত্তিয়া আসছে আর সাথে ওই ছেলেটাও। তাও আবার এক রিকশায়। আমি ওদের না দেখার অভিনয় করে পাশ কাটিয়ে চলে যেতে থাকি কিন্তু সেই আমার সামনে এসেই রিকশা থামে আর নিত্তিয়া ছেলেটাকে বিদায় জানিয়ে আমার সামনে দাঁড়ায়।
— কি হলো? দেখেও না দেখার ভান করে চলে যাচ্ছেন?
— দেখা করাটা প্রয়োজন মনে করি নি।
— ও তাও তো কথা। আমার সাথে কেনই বা কথা বলবেন।
আমি পাশ কাটিয়ে চলে যেতে লাগলাম। তখনি পিছন থেকে নিত্তিয়া ডাক দিলো।
— এই যে শুনেন
— হুমম।
— আমার সাথের ছেলেটা আমার বন্ধু ছিল।
— তো আমি কি করবো?
— তাও ঠিক এতে আপনার কি?
— হুমম।
— আচ্ছা সন্দেহ করছেন আমায়।
— সেটা করলে আপনার ডাকে দাঁড়াতাম না।
— তাহলে রাগ করেছেন আমার উপর।
— জানি না।
— হুমম বুঝলাম। এখন চলেন।
— কোথায়?
— আপনায় কিডন্যাপ করবো। চুপচাপ চলেন তো। মেয়েদের মত এতো প্রশ্ন করছেন কেন?
— হুম।
আর কোন কথা না বলে ওর সাথে হাঁটতে লাগলাম। একটু পর ও একটা রিকশা নিলো আর লালহাটি যাওয়ার কথা বলল। আর ওইখানে যাওয়ার রাস্তা তো সেখানে নিত্তিয়াকে যেখানে দেখেছি সেই রাস্তাটা। আমিও রিকশায় চুপচাপ বসে রইলাম।
কিছুক্ষন পর একটা বস্তির সামনে এসে রিকশাটা থামলো। এইদিকে আমার আসা হয় না প্রায় ৫ বা ৬ বছর তো হবেই। রিকশা থেকে নেমে ওর পিছু পিছু যেতে লাগলাম। তখন এক মহিলা বলল…
— নিত্তিয়া তুমি এখনো বাসায় যাও নি। আর তোমার সাথে ইনি কে?
— যার সাথে আমার বিয়ে ঠিক হয়েছে তিনিই ইনি।
সবাই আমাকে আশির্বাদ করতে এলো। কিছুক্ষণের জন্য আমার পৃথিবীটা থমকেই গেল। কারন এই লোক গুলোর মনটা কত্তো পরিষ্কার যদিও নোংরা পরিবেশে থাকে।
ওইখানে সময় কাটিয়ে বের হয়ে আমি নিত্তিয়াকে বললাম একটা কফি হাউজে যেতে। তারপর দুইজন মিলে একটা শপিং মলের ৫ তলার শপিং মলে গেলাম। তখন আমি বললাম….
— নিত্তিয়া আপনার সাথে ওদের পরিচয় কেমন করে?
— আচ্ছা রাজ সাহেব কিছুদিন আগে যে শৈতপ্রবাহ মানে অনেক শীত চলে গেল তখন তো কত্তো মানুষ বস্তিতে বা রেলওয়েতে কম্বল দিতে দিতে সেলফি তুলে মহান সাজছে মনে আছে। কোন রকমে শীতটা পার হয়ে গেছে। ওই সময় অনেকেই নানান রকম রোগে আক্রান্ত হয়ে ছিল। এইসবের খুজ কেউ নিয়েছে নাকি আগামীতে কেউ নিবে। তাই ভার্সিটিতে আমরা একটা দল গঠন করে এই ক্ষতি হওয়া মানুষদের সাধ্য মত সাহায্য করছি। আর ওই ছেলেটাও আমাদের গ্রুপের। এবার কিছু বলার থাকলে বলতে পারেন।
— কি বলবো ভাষা খুঁজে পাচ্ছি?এখন তো আপনার ব্যাপারে যত জানতে পারছি ততই আপনাকে ভালবাসতে ইচ্ছা করছে।আর সব কিছুতে নিজেকে তুমিময় করতে ইচ্ছা করছে।
— এমন ভাবে তাকাইয়েন না প্রেম হয়ে যাবে।
— হোক না কিছু একটা।
তারপর এভাবেই দিনের পরিবর্তে আমাদের বিয়েটা হয়ে গেল আর এখন মনে হচ্ছে বিয়ে করে ভুল করে নি। বরং কোন মেয়েকে নিয়ে আমার মনে যা সন্দেহ ছিল তা দূর হয়ে গেছে।

গল্পের বিষয়:
রোমান্টিক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত