দুষ্ট মিষ্টি ভালোবাসার গল্প

দুষ্ট মিষ্টি ভালোবাসার গল্প

ফাইজলামু করে এক মেয়েকে আই লাভ ইউ বলে তাঁর ভাইদের হাতে খেলাম পিটানি! অথচ আমি মেয়েটার নাম পর্যন্ত জানি না! কোথায় বাড়ি? কোন শ্রেণীতে পড়ে? এসব ও জানি না! শুধু দুদিন রাস্তায় দেখেছি। তৃতীয় দিনের মাথায় মেয়েটাকে ডাক দিয়ে বলে দিলাম, এই মেয়ে। আই লাভ ইউ!
মেয়ে টা ও একটা কচু আসলে। আমি নাহয় আই লাভ ইউ বলেই ফেলেছি, তাই বলে এই কথা গিয়ে ভাইদের বলতে হবে? কচুর ভাই ও একেক টা যেনো মানুষরূপী হাতি, প্রতিদিন একটা করে আটার বস্তা খায়!
এতো মোটা মোটা। পিটানি খাওয়ার পুরো এক সপ্তাহ পর আবার সেই রাস্তা দিয়ে হাঁটছি। সেই মেয়ের আরেক ভাই সামনে এসে হাজির! চোখ লাল করে বললো, তুই না কী অরিমাকে আই লাভ ইউ বলেছিস?
আমি মনে মনে বলছি, আগে যদি জানতাম বালিকার ডজন খানেক ভাই আছে। তাহলে আপু বলে সালাম দিয়ে কেটে পরতাম।
বলতে ও পারছি না যে, ভাই ফাইজলামু করে আই লাভ ইউ বলেছি। আমি আপনার বোনকে ভালোবাসি না।
উত্তর দিলাম, নাম টা বেশ সুন্দর! তবে আমি আপনার বোনকে তো চিনি ই না।
বালিকার ভাই আঙুল তুলে বললো, সাত ভাইয়ের একটা ই আদরের বোন। তাই বুঝতে ই পারছিস, আমি কী বলতে চাচ্ছি? তাছাড়া অরুর বিয়ে ও ঠিক করা। আর কোনোদিন যেনো আমার বোনের সামনে পিছনে না দেখি, ঠিকাছে?
আমি মাথা নাড়িয়ে বললাম জানান দিলাম, ঠিকাছে।
এরপরে আর অরিমার সামনে পরি না। কী একটা লজ্জার বিষয়! শুধু শুধু আই লাভ ইউ বলে একটা কাহিনী বাঁধালাম।
কিছুদিন পর।
শুক্রবার সকালে বের হলাম বাজার করতে। প্রাইমারি স্কুলটার কাছে যেতে ই হঠাৎ এমন বৃষ্টি নামলো যে স্কুলের বারান্দায় না উঠে পারলাম না। বারান্দায় উঠে বুকের ভিতর একটা মোচড় অনুভব করলাম! কারণ অরিমাকে দেখলাম বারান্দায় হাতে বই নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে!
শুক্রবারে হাতে বই কেনো? তারচেয়ে বড় কথা মেয়ে টা আমাকে দেখে ভয়ে কাঁপছে! এমন এক পরিস্থিতি যে অরিমাকে গুম করে ফেললে কাক পক্ষী ও টের পাবে না। ধুর এই মেয়ের সাথে কথা বলার ইচ্ছা ই নেই কোনো।
বৃষ্টি ও থামছে না। সে কী? হঠাৎ অরিমা কান্না আরম্ভ করে দিলো কেনো? আমার তো ভয় লাগছে। কিছু জিজ্ঞেস করলে আবার ভাইদের কাছে না গিয়ে উল্টো টা বলে! তবু ও বললাম, কাঁদছেন কেনো?
অরিমা কাঁদতে কাঁদতে ই বললো, বৃষ্টি থামে না কেনো? আপনাকে আর আমাকে মানুষ যদি এই অবস্থায় দেখে তাহলে তাঁরা কী ভাববে?
শুনে মেজাজ খারাপ হলো। বললাম, এজন্য কাঁদতে হয়? আর আপনি কী মনে করেছেন আমি আপনাকে ভালোবাসি? যত্তসব, সেদিন ফাইজলামু করে আই লাভ ইউ বলেছিলাম। নিজেকে নাইকা ভাবার কিছু নেই।
বুঝলাম না। এই কথা বলার পর অরিমা কান্না বন্ধ করে দিয়ে বললো, ভালোবাসেন না?
আমি, না।
বলার সাথে সাথে বৃষ্টি থেমে যায়। পরক্ষণনে ই আমি বেরিয়ে সোজা বাজারে চলে গেলাম। এরপর থেকে আর অরিমাকে দেখিনি প্রায় এক মাস। হঠাৎ আরেকদিন অরিমার ভাই আমাকে ডেকে বললো, তুই অরিমাকে কিছু বলেছিস? অরু তো বাড়িতে থাকতে চাচ্ছে না। বলছে নানু বাড়িতে গিয়ে পড়বে।
আমি অবাক হয়ে বললাম, ভাই কেনো আমাকে বারবার বিরক্ত করছেন? একদিন ফাইজলামু করে আই লাভ ইউ ই তো বলেছিলাম। আর তো কিছু না। আমি আপনার বোনকে না বিরক্ত করি না ভালোবাসি। তাহলে আপনার কেনো মনে হলো অরিমা নানু বাড়ি গিয়ে পড়বে সেখানে আমার কোনো হাত আছে?
কথা টা বলার পর দেখলাম অরিমার ভাইয়ের মুখ টা মেঘাচ্ছন্ন হয়ে গেলো! মনে হলো আমার কথায় খুব কষ্ট পেয়েছেন। উনি আমার ঘাড়ে হাত রেখে বললেন, আমি তো তোর বড় তাই মাফ আর চাইলাম না। চাইলে ক্ষমা করে দিতে পারিস। তবে মা নেই তো। মা দুনিয়া থেকে বিদায় নেয়ার আগে ঘরেরলক্ষ্মী হিসেবে একটামাত্র বোনকে রেখে গিয়েছেন। সে ও যদি আমাদের সাথে না থাকতে চায় তাহলে কেমন লাগে বল? সাত ভাইয়ের একজন ও বিয়ে করেনি যদি বাড়িতে বৌ এসে অরিমার সাথে না মিশতে পারে সেজন্য।
বলে উনি চলে গেলেন। বিষয় টা আমার মাথায় এলো না। অরিমার না কী বিয়ে ও ঠিক। তাহলে আবার হঠাৎ নানু বাড়ি গিয়ে পড়বে বলছে কেনো? আমার একবার অরিমার সাথে কথা বলা উচিৎ?
না খামখা আরেক টা ঝামেলা পাকাবার কোনো দরকার নেই। এরপরে আর অরিমাকে ও দেখিনি অরিমার ভাইদের ও দেখিনি। অরিমার কোনো বান্ধবীকে ও জিজ্ঞেস করিনি যে অরিমা কোথায়?
ছয় মাস পর।
কাজ শিখতে ঢাকা আসলাম আজকে। অবশ্য আরেক টা কারণ আছে। সে কারণ টা হলো মামাতো ভাইয়ের বিয়ে। মজার বিষয় হলো মামাতো ভাই আলতাফ আমার ছোট! দুদিন ধরে বাড়িঘর সাজানো হচ্ছে।
আলতাফ আর আমি বেলকনিতে বসে গল্প করছি। হঠাৎ কথার মাঝে বলে ফেললো, মেয়েটাকে আমি ভুলতে পারবো না। কিন্তু বিয়ে টা ও না করে উপায় নেই।
আমি গম্ভীর হয়ে বললাম, প্রাক্তন প্রেমিকা? বিয়ে হয়ে গিয়েছে?
আলতাফ বললো, না। অরিমা নামের একটা মেয়ের সাথে আমার বিয়ে হওয়ার কথা ছিলো। মেয়ে টা খুব ভালো। ভালো লাগার কথা অরিমার ভাইদের বলে ও ছিলাম। সবকিছু ঠিকঠাক ই ছিলো। কিন্তু কিছু মাস আগে বললো কোন ছেলে না কী তাঁকে ফাইজলামু করে আই লাভ ইউ বলেছিলো। ফাইজলামু করা আই লাভ ইউ বলা ছেলেটাকে ই না কী ভালোবেসে ফেলেছে! তাই আর কোনোদিন বিয়ে করবে না।
আমি আলতাফের কথা শুনে দাঁড়িয়ে বললাম, তাহলে তোর ভালোলাগা ভালোবাসা?
আলতাফ মুচকি হেসে বললো, তা বৌয়ের জন্য মজুত করে রাখলাম। যেহেতু বিয়ে টা করতে ই হবে।
আমি তাড়াহুড়ো করে বললাম, অরিমা সেই ছেলেটার নাম বলেনি তোকে? আর অরিমার কী সাত ভাই?
আলতাফ বললো, একটা ব্যাপার বুঝলাম না। কতোবার যে ছেলেটার নাম জিজ্ঞেস করেছি, কিন্তু কিছুতে ই ছেলেটার নাম মুখে আনাতে পারিনি। আর হ্যাঁ সাত ভাই। কিন্তু তুমি এভাবে বারবার ডুগ গিলছো কেনো?
আমি কোনোরকম বললাম, আরে সেই ছেলে টা ই আমি! কিন্তু আমি কী জানতাম না কী যে ফাইজলামু করে আই লাভ ইউ বলাতে ই অরিমা আমাকে ভালোবেসে ফেলবে? এখন এতো কথা বলার সময় নেই। অরিমার নাম্বার আছে না তোর কাছে? অরিমার ভাইদের নাম্বার তো আছে ই?
আলতাফ অবাক হয়ে বললো, বলো কীহ? অরিমা তো ফোন ব্যবহার করে না। কিন্তু এক ভাইয়ের নাম্বার আছে।
আমি, তাড়াতাড়ি দে।
বলে নাম্বার টা নিয়ে অরিমার ভাইকে ফোন দিলাম। উনি ফোন ধরে ই বললেন, হ্যালো কে?
আমি নির্ভয়ে বললাম, আমি সে, যে আপনার বোনকে ফাইজলামু করে আই লাভ ইউ বলেছিলো।
উনি বললেন, হ্যাঁ কিন্তু এখন কী চাও?
আমি নরম হয়ে বললাম, এখন মন থেকে অরিমাকে আই লাভ ইউ বলতে চাই। অরিমার নাম্বার টা দেন। দেখুন জানি আমি বেয়াদবি করছি কিন্তু অরিমার নাম্বার টা আমার খুব খুব দরকার। তাই অন্য কারো কাছে না গিয়ে আপনাকে ই বললাম। পরে আপনি আমার হাত পা ভেঙ্গে দিয়েন তা ও নাম্বার টা দেন।
উনি রেগে, রং নাম্বার।
বলে ফোন টা কেটে দিলেন। তারপর এতো এতো ফোন দিলাম কিন্তু আর ফোন ই তুলেনি। সবশেষে গিয়ে অরিমার এক বান্ধবীর নাম্বার যোগাড় করলাম। জানলাম অরিমা ফোন ই চালায় না! কী যে করি!
আর সাতপাঁচ না ভেবে অরিমার নানু বাড়িতে ই চলে গেলাম। দরজায় গিয়ে ঠকঠক করতে ই অরিমা দরজা খুলে বললো, কে আপনি?
আমি অবাক হয়ে অরিমার দিকে তাকিয়ে রইলাম কিছুক্ষণ।
অরিমা আমাকে চিনতে পারেনি! মাথায় ক্যাপ আর মুখের দাড়ির জন্য হয়তো। আমি বললাম, ডিসের লোক।
অরিমা তারপর সরে গিয়ে ভিতরে ঢুকতে দিয়ে বললো, আপনাদের ডিসের ব্যবসা করতে কে বলে? একটা চ্যানেল ও স্পষ্ট আসে না। নানু ঐ নানু। দেখো ডিসের লোক এসেছে।
অরিমার নানু এসে ডিসের লাইন আর টিভি দেখিয়ে দিলো। কিন্তু আমি আহম্মকের মতো বসে আছি! আমি তো কারেন্ট এর ই কিছু বুঝি না আবার ডিস! আমার এভাবে চুপ করে থাকা দেখে অরিমা বললো, কী ব্যাপার বসে আছেন কেনো? ঠিক করেন।
আমি অপেক্ষা করছি কখন অরিমার নানু রুম থেকে বেরোবে। উনি বেরোবার পরে ই মাথার ক্যাপ খুলে বললাম, আমি ডিসের লোক না তো। আমি তোমার লোক!
অরিমা আমার কথা শুনে একটু নড়সড়ে দাঁড়ালো। এবার আমাকে চিনতে পেরেছে। কী বলবে বুঝতে পারছে না। আমি অরিমার দিকে তাকিয়ে বললাম, আই লাভ ইউ অরু।
অরিমা কথা টা শুনে দৌড় দিয়ে এই রুম ত্যাগ করলো! আমি মাথায় হাত দিয়ে বসে আছি। কিছুক্ষণ পর অরিমার নানু এসে বললো, কাজ হয়েছে?
আমি বললাম, না। ডিসের লাইন ঠিক করার মেশিন আনিনি।
এই কথা বলে পরলাম বিপদে। উনি তারপর একরকম আমার সামনে ঠাঁই দাঁড়িয়ে রইলেন। আমি আর না বেরিয়ে পারলাম না। দরজার কাছে আসতে ই অরিমা এসে বললো, এই ডিসওয়ালা কালকে আবার মনে করে আসবেন কিন্তু। টিভি দেখতে পারছি না অনেক দিন। আর এই নিন ডিসের বিল।
অরিমার মুচকি হেসে দেখে আর আমার কিছু বুঝতে বাকী রইলো না। বিলের কাগজ টা খুলে দেখি লেখা, এইবার ও কী ফাইজলামু করে বলেছেন? না বললে মিস কল দিয়েন। নানুর ফোন আমি পরে মেসেজ দিবোনি।
নিচে দেয়া নাম্বার দেখে আমি খুশিতে আত্মহারা। পরেরদিন আর অরিমার নানুর বাড়ি যাইনি। আমাদের পিরীত টইটম্বুর। কিন্তু এক মহা সমস্যার জন্য অরিমাকে বিয়ে করতে পারছি না। অরিমার ভাইয়েরা বলেছে যে, অরিমাকে বিয়ে করতে হলে ঘরজামাই থাকতে হবে!
কিন্তু আমি ঘরজামাই থাকতে পারবো না। এই কথা টা অরিমার ভাইদের কে বুঝাবে?
পনেরো বছর পর।
অরিমার ভাইদের বুঝিয়ে অরিমাকে বিয়ে করেছিলাম খুব কষ্টে। বিয়ের সময় মনে মনে একটা পণ করেছিলাম যে অরিমার সাত ভাইয়ের কোলে সাত টা ভাগ্নেভাগ্নি থাকবে। সেজন্য আমরা আজকে সপ্তম বারের মতো হানিমুনে যাচ্ছি!
সবার দোয়া কামনা করছি!
কিন্তু অরিমা আমার থেকে ও আগে। বলছে, আমার একটা ক্রিকেট টিম চাই!
আমি ভাবছি, টিম বানানো টা কী ঠিক হবে?
আই লাভ ইউ

গল্পের বিষয়:
রোমান্টিক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত