মায়ার জালে আবদ্ধ

মায়ার জালে আবদ্ধ

-এই যে শুনুন।(কথা)
-জি, বলুন।(আমি)
-I love u.(কথা)
-মানে?(আমি)
-মানে আমি আপনাকে ভালোবাসি।(একটু উচ্চস্বরে)(কথা)
আমি একটু আশেপাশে তাকালাম। সবাই আমাদের দিকে হা করে তাকিয়ে আছে।
-এই যে কিছু বলছেন না কেন?(কথা)
ঠাসসসসসস…………………
-এটা কী হলো?(কাঁদো কাঁদো ভাব)(কথা)
-এটাকে এক কথায় বলে চড়। ছেলেরা মেয়েদেরকে প্রোপজ করলে যেমন চড় মারে তেমনি কোনো মেয়ে আমাকে প্রোপজ করলে আমিও চড় মারি। এটা আমার Style.(আমি)
একথাটা বলে আমি সেখান থেকে চলে আসলাম। আসার আগে একবার পিছনে দেখেছিলাম। দেখলাম কথা আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
ও——-আমার পরিচয়টা বলি। আমি শুভ চৌধুরি নীল। সবাই নীল বলেই ডাকে। আমি অনার্স ৩য় বর্ষ। আর ওই যে মেয়েটা ও হলো কথা চক্রবর্তী। ও আমার ২ বছরের জুনিয়র। ও আমাকে ভালোবাসে। কিন্তু আমি বাসি না। একদিন আমি তাড়াহুড়া করে যাচ্ছিলাম। হঠাৎ আমার সাথে এক মেয়ের ধাক্কা লাগে। সেটা ছিল কথা। আমি তাকে Sorry বলে চলে আসি। একটু আজীব লেগেছিল। কারণ ওর জায়গায় অন্য কোনো মেয়ে হলে তো আমার ১২ টা না না ১৩টাই বাজিয়ে ছাড়তো। কিন্তু ও কিছুই বলেনি। এর পরেরদিন সে এসে আমাকে বলে ও নাকি আমাকে পছন্দ করে।আমি ওকে অনেকবার বোঝানোর চেষ্টা করি কিন্তু কিছু বুঝতেই চায়নি। এর পরে তো আপনারা জানেন…। ছুটির পর বাসাই ফিরছিলাম। হঠাৎ মেয়েটা আমার সামনে এসে দাড়াল।
-এই যে এখানে আসার পর থেকে অনেক ছেলেই আমার পিছন পিছন ঘুরছে। আর আমি আপনার পিছনে। কোনো পাত্তা দিচ্ছেন না কেন?(কথা)
-কারণ আমার তোমাকে পছন্দ না।(আমি)
-কেন? আমি কোন দিক থেকে খারাপ শুনি?(কথা)
-দেখ তুমি যদি কথা না শুনো তাহলে আমি তোমার পরিবারকে জানাতে বাধ্য হব।(আমি)
-তাহলে যান। এক্ষুনি যান। তারা আপনাকে জামাই এর মতো বরণ করবে।(কথা)
-মানে!?(আমি)
-মানে তারা সব জানে। তাদেরকে আমি সব বলেছি এবং তারা সবাই রাজি।(কথা)
-আপনাকে আমি —-(রেগে গিয়ে বলি)
-ভালোবাসি তাইতো। আমি জানি। (কথা)
-আচ্ছা মুশকিল তো।(আমি)
আমি আর কিছু না বলে বাসায় চলে আসি। বাসায় এসে সোজা ঘরে ঢুকে যায়। ফ্রেশ হয়ে পড়তে বসলাম। কিন্তু আজ কেন জানিনা পড়াই মন বসছেনা। শুধু আজকের ঘটনাটা মাথায় ঘুরছে। ইস্ মেয়েটিকে চড় মেরেছি বলে কষ্ট লাগছে। কালকেই গিয়ে Sorry বলে আসব। না না Sorry বললে ও আবার উল্টাপাল্টা কিছু ভাববে। কিন্তু আমি ওর কথা এত কেন ভাবছি? তাহলে কী আমিও। না না আমি শুধু মায়াকে ভালোবাসি। কিন্তু আমি কেন কথাকে ভুলতে পারছিনা?
কাল ভার্সিটিতে ঢুকে দেখি কথা ওর ফ্রেন্ডের সাথে চকলেট নিয়ে ঝগড়া করছে। মায়াও এরকমই করত। আজ কথাকে একটু ভালো করেই দেখলাম। এতদিন খেয়াল করিনি। কথা কিন্তু অবিকল মায়ার মতোই দেখতে। চুলে ফ্রাঞ্চ বেণী করে কাঁধের একপাশে রেখেছে। কপালে কালো টিপ। নীল থ্রীপিসে ওকে দারুন মানিয়েছে। বিশেষ করে ওর চোখ। আমি তাড়াতাড়ি ক্লাসে যাচ্ছি যাতে কথার চোখে না পড়ি। কিন্তু ওর চোখ বোধই শকুনের চোখ। ঠিকই চোখে পড়ে গেলাম ওর।
-এই যে নীল।(কথা)
-দেখ আমি অন্য কাউকে——(আমি)
-ভালোবাসেন। আমি জানি। আমার শ্বাশুড়ি মা আমাকে বলেছে। আপনি মায়াকে ভালোবাসেন। কিন্তু সে এখন আর নেই।(কথা)
-শ্বাশুড়ি মা বলেছে মানে?(আমি)
-মানে আপনার মা।(কথা)
-কীইই???আমার মা কখন তোমার শ্বাশুড়ি হলো।(আমি)
-থুক্কু। হবু শ্বাশুড়ি আরকি।(কথা)
-এ মেয়ের জ্বালাই আমি কোথায় যাব?(আমি)
-যেখানে ইচ্ছা সেখানে যান। কিন্তু আমায় নিয়ে যেতে হবে(কথা)
-Oh God সরেন এখান থেকে। আমার ক্লাসের দেরি হয়ে যাচ্ছে।(আমি)
আমি বাসাই এসে মাকে জিজ্ঞেস করলাম।
–মা তুমি কি কথাকে মায়ার সম্পর্কে কিছু বলেছ।(বেশ রেগে গিয়ে আমি বলি)
-তুই আগে শান্ত হয়ে বস।(মা)
-তুমি বলেছ কিনা সেটা আগে বল।(আমি)
-হ্যাঁ বলেছি।(মা)
আমি আরো রেগে গিয়ে আমার রুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করে বিছানায় শুয়ে পড়ি। কখন যে ঘুমিয়ে পড়ি বুঝতে পারিনি। সকালে উঠে কিছু না খেয়েই বেরিয়ে পড়লাম। মা অনেকবার করে খেয়ে যেতে বলেছিল। আমি রাগ করে খাইনি। ভার্সিটিতে গিয়ে দেখি কথা সেখানে নেয়। যাক বাঁচা গেল। নাহলে নির্ঘাত আজ আমার হাতে মার খেত। ক্লাসে ঢুকব এমন সময়
-এই যে নীল।(কথা)
আমি পিছনে তাকালাম। দেখলাম কথা হাতে খাবার নিয়ে দাড়িয়ে আছে।
-কী হয়েছে?(রেগেই বললাম কথাটা আমি)
-আমার শ্বাশুড়িমা বলেছে আপনি নাকী কাল রাত থেকে কিছু খাননি। তাই আমিও খাইনি।(কথা)
-কিছু খাওনি না?(আমি)
আমি ওর হাত ধরে পিছনের একটি কুয়োর দিকে নিয়ে গেলাম। সবাই আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে।
-কী হয়েছে এখানে আনলেন কেন?(কথা)
-খুব তো বলো ভালোবাস আমায়। নাও ঝাপ দাও এই কুয়োয়। কী হলো দাও। জানতাম পারবা না। মায়া আমাকে বাঁচাতে গিয়ে নিজের জীবন দিয়েছে। আমাকে বাঁচিয়েছে ঠিক কিন্তু নিজে হারিয়ে গিয়েছে কোনো এক অজানা জায়গায়।(আমি)
আমি এ কথাগুলো বলে চলে আসছিলাম। হঠাৎ পানিতে কিছু পড়ে যাওয়ার আওয়াজ শুনলাম। আমি পিছনে ফিরে দেখি কথা ওর জায়গা্য দাড়িয়ে নেয়। অন্যরা বলছে ও কুয়োতে ঝাপ দিয়েছে। আমি কুয়োয় দেখলাম কথার ওড়নাটা পানিতে ভাসছে।
কথা হাসপাতালের বেডে শুয়ে আছে। এখনও জ্ঞান ফিরে নি ওর। তাই আমি বাইরে বসে আছি। কিছুক্ষণ পর একটা নার্স এসে বলল কথার জ্ঞান ফিরে এসেছে। আমি রূমে গিয়ে একটা থাপ্পড় দিলাম ওকে।
-এই তুমি কুয়োতে ঝাপ দিলে কেন?(রেগে গিয়ে বললাম)
-তোমায় ভালোবাসি তাই।(কেঁদে কেঁদে বলল)
এই অল্প কিছুক্ষণে আমি বুঝে গেছি যে কথাকে আমিও ভালোবেসে ফেলেছি। আমি আর কিছু না ভেবে ওকে জড়িয়ে ধরি।
-এত ভালোবাস আমায়।(আমি)
কথা আর আমি একে অপরকে জড়িয়ে কাঁদছি।
-হয়েছে হয়েছে আর কাঁদতে হবে না। কালই তোদের বিয়ের ব্যবস্থা করছি।(মা)
মা যে কখন এসেছে বুঝতেই পারিনি। যখন বুঝতে পারি তাড়াতাড়ি কথাকে ছেড়ে দিই। মা বেডের কাছে গিয়ে কথাকে আদর করতে লাগল।
-আমার ছেলের কষ্ট দূর করতে পারবি তো।(মা)
এরপর মায়ার আবদ্ধ জাল থেকে বের হয়ে কথার জালে আটকে গেলাম

গল্পের বিষয়:
রোমান্টিক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত