ঘুম থেকে উঠেই হাত মুখ না ধুয়েই আগে ফেবুতে ঢুকলাম। এটা আমার রোজকারের অভ্যাস। হাটতে বসতে, খেলাধুলা, খাওয়া,আড্ডায় সব খানেই সব সময়ই আমার ফেইসবুক লাগবেই। এক কথায় বলতে গেলে আমি ফেইসবুকের পোকা,ফেইসবুক ছাড়া এক মিনিটও আমার চলে না। নিউজফিড চেক করছিলাম হঠাৎ একটি মেসেজ আসল। মেসেজটি দেখে আমার ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে উঠল।মেসেজটি ওপেন করলাম।
.
-হাই, কেমন আছেন?
-ভাল,কিন্তু আপনি?
-হুম আমিও ভাল আছি।
-আপনি কেমন আছেন তা জানতে চাইনি। আপনি কে সেটাই জানতে চাইছি।
-ওমা আপনি আমাকে চেনেন না?
-আপনি কোন আকাশের চাঁদ যে আপনাকে চেনবো।
-আমাকে না চেনার তো কথা নয়। আমরা একি পেইজে কাজ করি।
-ওহ! কোন পেইজ?
-কোন পেইজ এটাও বলতে হবে?
-আচ্ছা ঠিক আছে বলা লাগবে না।
-সত্যি কি আপনি আমাকে চেনেন না?
-কতোবার বলব! সত্যি আপনাকে আমি চিনি না।
-চেনেন না নাকি না চেনার ভাব দেখাচ্ছেন?
-আজব তো। আমি আপনার সাথে ভাব দেখাবো কি জন্য? আমি পর কারো সাথে ভাব দেখাই না।
-হুম এজন্যই দেখাচ্ছেন। আমিতো আর পর কেউ নই।
-এ্যা,,,চিনি না জানি না তাহলে আপনি আমার আপন হলেন কি করে?
-কেনো আপনিই নাহ পেজের এডমিন প্যানেলে বলেছিলেন পেইজের সবাই আপনার ফ্যামেলির মতো।
-হ্যা তা বলেছিলাম।কিন্তু আপনাকেতো আর পার্সোনালি বলিনি।
-সে আপনি যেভাবেই বলুন না কেনো। আপুন পার্সোনালি লেয় লিয়া,,,,হাম বি পেজ ম্যা কাম করতাহু। সো আপকে হিছাবছে হাম বহুত ক্লোজ হ্যায়।
-এই যে থামেন, আমার সাথে একদমই হিন্দি বলবেন না। আমি হিন্দি পছন্দ করি না।
-আচ্ছা ঠিকাছে আর বলবো না। কিন্তু আমি কোন রেলগাড়ি না যে থামবো।
-উফফ আপনি একটা পেইন।
.
মেজাজ খারাপ হয়ে যাচ্ছিল তাই ফেবু থেকে বের হয়ে আসলাম।
.
কলেজ ক্যাম্পাসে ফেবুতে লগিন করতেই দেখি আবার ওই আইডি থেকে মেসেজ।
-এই যে কথা না বলে চোরের মতো পালিয়ে গেলেন কেনো??
-আপনার প্রব্লেম টা কি আন্টি?
বলে রিপ্লে দিলাম। দেখি সাথে সাথেই আবার মেসেজ আসল।
-এই বেয়াদব ছেলে আমাকে আন্টি বলছ কি জন্য! আমাকে কি আন্টির মতো দেখায়।খবরদার আমাকে আন্টি বলবা না।
-আচ্ছা সরি! কিন্তু আমাকে নক করছেন কি জন্য?
-আপনার সাথে দেখা করব তাই।
-মানে কি! আমার সাথে কেনো দেখা করবেন?
-আমি আপনার ফ্যান যে তাই।
-ফ্যান?
-হুম ফ্যান।
-হাহাহাহা,,,,আমার একটা ফ্যানতো সিলিংয়ে আরেকটা টেবিলের উপর। তা আপনি কোনট?
-ফাজলামো করেন! আমি ওই ফ্যান হতে যাবো কি জন্য। আমি আপনার ভক্ত।
-ভক্ত! আমারো যে ভক্ত আছে জানতাম না তো।
-ইয়ার্কি রাখেন। আপনার ভক্ত না হয়ে কোন উপায় আছে। আমিতো বাবা ভালবাসা টাসায় বিশ্বাস করতাম না,কিন্তু আপনার গল্প পড়ে আমি নিজেই ভালবাসার প্রেমে পড়ে গেছি।মাঝে মাঝে ভেবে অবাক হই আপনি এত্ত সুন্দর গল্প লিখেন কি করে।
-কি করে আবার হাত দিয়ে কখনো খাতা-কলমে আবার কখনো কি-বোর্ডে।
-আপনিতো বড্ড পাজি! কথায় কথায় খালি ফাজলামি করেন। আর শুনুন শুধু আমি একা নই অনেক মানুষই আপনার ভক্ত। ভাল লেখেন বলে আবার ভাব নিয়েন না। আমরা আছি বলেই আপনারা লিখতে পারেন।
-জ্বী!
-কিছু বললেন না যে?
-কি বলব?
-দেখা করার ব্যাপারে।
-ওহ! আচ্ছা ভেবে দেখি।
-আবার ভাব নিচ্ছেন!
-হুম না নাহ।
-হইছে আর নেকামো করতে হবে না। আমার সাথে আপনার দেখা করার ইচ্ছে নেই বললেই পারেন।
-আরে না তা নয়।
-তা নয়তো কি!
-আচ্ছা ঠিকাছে কাল ক্যাফেটেরিয়ায় ঠিক বিকেল ৫টায়,অকে?
-সত্যি!
-হুম।
-থ্যাংকইউ! থ্যাংকইউ! থ্যাংকইউ! আপনাকে অনেক গুলা থ্যাংকইউ।
-হুম আপনাকেও।
.
.
এতক্ষণ ধরে যে মেয়েটার সাথে কথা বললাম ওর নাম তাস্মিয়া। আমরা একসাথেই “কাছে আসার গল্প” পেইজে কাজ করি। আমি ওকে চিনি,শুধু চিনি বললে ভুল হবে আমি ওকে অনেক ভাল করে জানি। চেনা সত্ত্বেও না চেনার ভান করার একটা কারণ আছে। কেননা আমি মনে করি কিছু কিছু প্রিয় মানুষকে নিজের দুর্বল জায়গার কথা বলা উচিৎ না বা বুঝতে দেওয়াও ঠিক না,কারণ এটা জেনে গেলে অন্য সময় আপনার এই দুর্বল জায়গায় সে আঘাত করবে। তাস্মিয়া আমার দুর্বল জায়গার মধ্যে অন্যতম।
.
তাস্মিয়ার নাম যতো না সুন্দর দেখতে ও আরো অনেক বেশি সুন্দর। জানিনা আমি ওর প্রতি কেনো এত দুর্বল,ওকে অনেক বেশি পছন্দ করি বলেই হয়তোবা, আবার হয়তোবা ওকে ভালওবাসি তাই।
.
ওর সাথে আমার দেখা হয় প্রায় দু-মাস আগে।দিনটা এখনো আমার মনে আছে, ডিসেম্বরের ১০ তারিখ ছিল। তখন হালকা হালকা বাতাসের সাথে শীতের আগমন হচ্ছিল মাত্র। এমন সময় প্রায় দিনেই প্রখর রোদ থাকে আবার রাতে অনেক ঠান্ডা। ওই দিনও এর ব্যাতিক্রম ছিলনা।
.
রিক্সা করে বন্ধুর বাসায় যাচ্ছিলাম। কিন্তু পথিমধ্যে বাধল বিরাট জ্যাম। এমনিতেই অনেক রোদ তার উপর জ্যাম মেজাজটাই বিগ্রে গেল। এদিকে ভেতরটা প্রায় শুকিয়ে যাচ্ছিল। মনে মনে ভাবলাম একটু পানি খেলে মন্দ হতো না। কিন্তু এই জ্যামের মাঝে এখন পানি পাবো কোথায়। তাই বাধ্য হয়ে রিক্সায়ই বসে রইলাম। এমন সময় টুপ করে এক ফোটা পানি এসে আমার হাতের উপর পড়ল। বুঝতে পারলাম না এটা কোথা থেকে আসল। ভাবতে না ভাবতেই দেখি টুপটুপ করে আরো অনেক গুলা বৃষ্টির ফোটা এসে গায়ে পড়ল। কিন্তু এই রৌদ্রময় দিনে,ফকফকা আকাশে হঠাৎ বৃষ্টি আসল কেমনে! সবই আল্লাহ্র লীলা। অবশ্য মনে মনে অনেক খুশি হলাম কেননা শুনছি বৃষ্টির প্রথম ফোটা যার গায়ে পড়ে সে অনেক ভাগ্যবান হয়। জানিনা আমার ভাগ্যে কি আছে। অবশ্য আমি ভাগ্যে বিশ্বাস করিনা,মানুষের কর্মেই সব। এসব ভাবতে না ভাবতেই ঝুম করে বৃষ্টি শুরু হল।
.
রিক্সার হুড তুলতে গিয়ে সামনের গাড়ির দিকে চোখ পড়তেই আমি পুরোই থ হয়ে গেলাম। রেশমি চুড়ি পড়া একটা মেয়ের হাত গাড়িরে ভেতর থেকে বাইরে বের হয়ে এল। জানিনা কেনো আমার চোখ ওই হাতের দিকের একদৃষ্টিতে তাকিয়েই রইল। বৃষ্টির ফোটাগুলো হাতটা স্পর্শ করতে দেখে আমার ভেতরেও কেমন যেন আলাদা একটা অনুভূতি স্পর্শ করতে শুরু করল। একটা সময় গাড়ি থেকে মেয়েটা বের হয়ে এলো। মেয়েটাকে দেখেই আমার হার্টবীট টা কয়েক মুহূর্তের জন্য বন্ধ হয়ে গেছিল। এত্ত সুন্দর একটা মেয়ে,মায়াবী চেহারা, চোখগুলো টানাটানা দেখে মনে হচ্ছিল হৃদয় কাড়া চোখ দুটু আল্লাহ অনেক যত্ন করে বানাইছেন। আমি কোন ভাবেই মেয়েটার থেকে চোখ ফেরাতে পারছিলাম না। নির্লজ্জের মতো মেয়েটার দিকে তাকিয়েই রইলাম। মেয়েটা বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে রাস্থার পাশে কয়েকটা পিচ্চির সাথে গিয়ে লাফালাফি করা শুরু করে দিল। আমি ঠাই মেয়েটার দিকে হা করে থাকিয়েই রইলাম। জীবনে অনেক মেয়ে দেখেছি কারো দিকে এভাবে কখনো তাকাইনি কিন্তু জানিনা কেনো এই মেয়েটিকে শুধুই দেখতে ইচ্ছে করছিল।
.
এতোক্ষণ আমি মেয়েটার দিকে এতোই মগ্ন ছিলাম যে বৃষ্টিতে ভিজে একাকার হয়ে গেছি সেটা বুঝতেও পারিনি। আমাদের জীবনে এমন কিছু মুহূর্ত আসে যেগুলা আমরা চাইলেও নিজের ইচ্ছায় কিছু করতে পারি না,তখন আপনাআপনি কখনযে সব হয়ে যায় আমরা বুঝতেও পারিনা। সবকিছু সাইডে রেখে আমার মনটা মেয়েটা কাছেই পড়ে থাকতে চাইল। কিন্তু পোড়া কপালে কি আর সুখ বেশি সয়।এমন সময়ই জ্যামটা ছাড়তে হল। এদিকে মাঝরাস্তায় রিক্সা থেকে নামতে পারছিলাম না। রিক্সাওয়ালাকে রিক্সা সাইড করতে বললাম। রিক্সা থেকে নেমে দৌড়ে রাস্থার পাশে আসলাম। কিন্তু একি মেয়েটা দেখি নাই। এদিক ওদিক তাকালাম পেলাম না,চারদিক ভাল করে দেখলাম কিন্তু কোথাও আর মেয়েটাকে দেখতে পেলাম না। দূর ভাগ্যটাই কুফা।
.
প্রথম দেখার পর থেকেই মেয়েটির বৃষ্টিতে ভেজার দৃশ্যটি বারবার চোখের সামনে ভেসে উঠছিল। কিছুতেই মেয়েটার কথা মাথা থেকে নামাতে পারছিলাম না। এইকয়দিন মেয়েটিকে অনেক খুঁজলাম কিন্তু কোথাও পেলাম না। একদিন আমি আর আমার বন্ধু রাশেদ বই মেলায় গেলাম। এই স্টল সেই স্টল ঘুরে ঘুরে দেখছিলাম। কিন্তু কিছুই ভাল লাগছিল না। হঠাৎ একটা স্টলে তাকাতেই আমার চোখ ওখানেই আটকে গেল। স্বপ্ন না বাস্তব কিছুই বুঝতে পারছিলাম না। এই কদিন ধরে আমি পাগলের মতো যেই মেয়েটিকে খুঁজে বেড়িয়েছি সে এখন আমার চোখের সামনে দাঁড়িয়ে। রাশেদকে মেয়েটিকে দেখালাম। ও অনেক জোর করল মেয়েটার সাথে গিয়ে কথা বলতে।কিন্তু আমার সাহস হল না।
.
এর পর রাশেদই মেয়েটার সব ডিটেলস আমাকে এনে দিল। ওর নাম তাস্মিয়া তানি,মেডিকেল কলেজের ফাইনাল ইয়ারে পড়ে,ওর বাবা পুলিশ কমিশনার, ওরা থাকে নীল কুঞ্জে ব্লা ব্লা ব্লা আরো কতো কি। বন্ধুরা পারেও বটে কিভাবে যে এত তথ্য জোগাড় করল আল্লাহই জানেন।
.
এর পর তাস্মিয়ার সাথে আমার আরো ৫/৬ বার দেখা হইছিল।কিন্তু কোন কথা হয়নি।কেননা আমি কখনো ওর সামনে দাঁড়াবার সাহস পাইনি।জানিনা কেনো কেমন একটা ভয় ভয় কাজ করত।
.
তারপর ও ফেইসবুকে আমি যে পেইজে কাজ করি ওই পেইজে জয়েন করে।তখন আমার খুশি আর কে দেখে। অনেক বার কথা বলার চিন্তা করছিলাম কিন্তু কেনো জানি আমার সাহসে কুলাচ্ছিল না। পুলিশ কমিশনারের মেয়ে তার উপর অসম্ভব সুন্দরি, আমাকে যদি পাত্তা না দেয় এই ভেবে আর কথা বলাই হয়নি। থাক বাবা কাছে গিয়ে কষ্ট পাওয়ার চেয়ে দূরে থেকে ভালবাসাই ভাল। আমার সব গল্পই একমাত্র ওকে ভেবেই লিখা।
.
কাল ওর সাথে দেখা করব মনের মধ্যে অনেক উত্তেজনা কাজ করছে সাথে সাথে নার্ভাস ও লাগছে। একটা ক্ষুধার্ত বেড়ালকে এক প্লেট মাছ দিলে সে সাতপাঁচ না ভেবেই মাছগুলো গপাগপ করে সব খেয়ে ফেলে,কিন্তু খাওয়ার পর তা বেশিক্ষণ হজম করতে পারে না। আমার অবস্থাও তেমন ক্ষুধার্ত বেড়ালের মতো মনে হচ্ছে। আর যাইহোক কালকের সুযোগ হাত ছাড়া করা যাবেনা।
.
সারা রাত সারা দিন অনেক কল্পনা জল্পনা করে কাটালাম। কোন কাজেই মন লাগাতে পারছিলাম না। সারাক্ষণইই ভাবছিলাম কখন ৫টা বাজবে আর কখন তাস্মিয়ার সাথে দেখা করব।
.
কোন রকমে ৪টা বাজতেই ক্যাফেটেরিয়ার দিকে রওনা দিলাম। রাস্থায় একটু জ্যাম থাকায় সাড়ে ৪টায় পৌছালাম। নইলে আরো দশ মিনিট আগে আসতাম। ক্যাফেটেরিয়ায় সুবিধা মতো জায়গা গেছে কর্ণারের টেবিলের একটা চেয়ারে বসে পড়লাম। মনে মনে হাবিজাবি কত কথাই না ভাবতে লাগলাম।
.
ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি এখনো ৪:৫০মিনিট বাজে। আজ কোন ভাবেই যেন সময় কাটতে চাচ্ছে না। এতোদিন কোন কিছুর জন্য অপেক্ষা করতে আমার সবচেয়ে বেশি বিরক্ত লাগত। কিন্তু আজ মোটেও বিরক্ত লাগছে না উল্টো অদ্ভুত একটা ভাল লাগা কাজ করছে। তাস্মিয়া আমার জীবনে না আসলে হয়তো কখনো বুঝতেও পারতাম না মাঝে মাঝে অপেক্ষায়ও এক প্রকার সুখ আছে। সারাক্ষণই মনে হয় এই বুঝি এলো এই বুঝি এলো। একবার ঘড়ির দিকে একবার পথের দিকে তাকানো, ঠিক যেন লুকোচুরি খেলা।
.
প্রায় ৫:১০ এর দিকে তাস্মিয়া এলো। ওকে দূর থেকে দেখেই আমি দাঁড়িয়ে পড়লাম। তাস্মিয়াকে দেখেই আমার চোখ কপালে উঠে গেল। এটা মানুষ না ডানাকাটা পরী কিছুই বুঝতে পারছিলাম না। একটা মানুষ কিভাবে এতো সুন্দর হতে পারে। ওকে যতোই দেখছি ততোই মুগ্ধ হচ্ছি। তাস্মিয়াকে আজ নীল রঙের শাড়িতে অসম্ভব রকম সুন্দর লাগছে। এমনিতেই নীল রঙ আমার অনেক পছন্দ, তার উপর যদি ঠোঁটে হালকা লিপস্টিক আর চোখে গাঢ় কাজল থাকে তাহলে কি আর ফিদা না হয়ে উপায় আছে। ওর দিকে একদৃষ্টিতেই তাকিয়ে রইলাম। কাছে আসেই তাস্মিয়া গলা হাকি দিল। আমি ঘোর ছেড়ে বাস্তবে আসলাম। তবে অনেক লজ্জা লাগছিল,বেহায়ার মতো শুধুই ওর দিকে তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছে করছিল। কে জানি বলেছিল “ছেলেরা প্রেমে পড়লে নাকি লজ্জা পায়” কথাটার আজ বাস্তব প্রমাণ পেলাম। যে ওই কথাটি বলেছিল তাকে ধন্যবাদ দেওয়া উচিৎ। কিন্তু কে ওই কথাটি বলেছিল এখন ঠিক মনে পড়ছে না। আরেহ এই কথাটি তো আমিই বলেছিলাম। নার্ভাসে সব কিছুই গুলিয়ে ফেলছিলাম। নিজেকে স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করলাম।
.
প্রায় ৫মিনিট ধরে বসে আছি কিন্তু কেউ কোন কথাই বলতে পারছিনা।
“আপনার সাথে কিছু……. হঠাৎ করে দুজন একসাথে বলে উঠলাম। একে অন্যের দিকে চাওয়া চাওয়ি করলাম দুজনের লজ্জা পেলাম। আরো কিছুক্ষণ নিরব ছিলাম। তারপর আবার দুজনে বলে উঠলাম “আপনাকে কিছু বলার ছিল।
তারপর তাস্মিয়া বলল
-বলেন কি বলবেন
আমি বললাম
-না আপনি বলেন।
-আপনি বলেন আমি শুনছি।
আমতা আমতা করে বললাম -আপনাকে অনেক সুন্দর লাগছে।
-আপনাকেও হলুদ পাঞ্জাবিতে ভাল মানিয়েছে।
-ধন্যবাদ।
-হিমু বুঝি অনেক পছন্দ করেন?
-তেমন না,রূপাকেই আমার অনেক পছন্দ।
-আমার কিন্তু হিমুকেই সবচেয়ে ভাল লাগে।
-ও আচ্ছা!
-আপনি অনেক ভাল গল্প লেখেন।
-ভাল লেখি কিনা জানি না, তবে মানুষের হৃদয়কে যাতে আমার লিখা নাড়া দিতে পারে সে হিসেবেই লেখার চেষ্টা করি। আপনিওতো কম নন,আপনিও অনেক ভাল লেখেন।
-কই নাতো! আমিতো গল্প লিখতে পারি না।
-গল্প না লিখেন কিন্তু ভালবাসা নিয়েতো সুন্দর সুন্দর কথা লিখেন।
-যাক মিথ্যে হলেও আপনার মূখে প্রশংসা শুনে ভাল লাগছে।
-মিথ্যে নয় সত্যি।
-আচ্ছা বাদ দেন,কি খাবেন বলেন।
আমি কিছু খাবো না বলার পরো আমার জন্য কফি আর ওর জন্য আইসক্রিম অর্ডার দিল। কথা বলতে বলতে কখন যে নার্ভাসনেস কেটে গেছে বুঝতেও পারিনি।
.
ক্যাফেটেরিয়া থেকে বেড় হয়ে দুজনে রাস্থায় হাটতে লাগলাম। তাস্মিয়ার সাথে হাটতে অন্য রকম ভাললাগা কাজ করছিল। তাস্মিয়া বলল -আমার সাথে ওই লেকের দ্বারে একটু হাটবেন? নাকি এখনো ভাব দেখাবেন?
আমি হ্যা কিংবা না বলে মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিলাম।
লেকের দ্বারে হাটতে হাটতে তাস্মিয়া বলল-আপনি নাহ কি যেন বলতে চাইছিলেন।
-না কিছু না…বলে আমি আবার বললাম “আপনিও তো কিছু একটা বলতে চাইছিলেন।
তাস্মিয়া আমার কথার জবাব না দিয়েই হাটতে থাকল। হঠাৎ থমকে দাঁড়িয়ে আবার জিজ্ঞেস করল
-আচ্ছা আপনার সব গল্পের চরিত্রে তাস্মিয়া নামটা কেন থাকে? আমি আপনার সব গল্পই পড়েছি সব গল্পেই এই নাম,কেনো?
-বিশেষ কোন কারণ নেই,এমনি।
-মিথ্যে।
-কি মিথ্যে?
-আপনি মিথ্যে বলছে।
-মিথ্যে কেনো বলব।
-আপনার চোখ বলছে আপনি মিথ্যে বলছেন,সত্যিটা বলুন।
-আপনি আবার চোখের ডাক্তার নাকি?
-হেয়ালী করবেন না,আমার কথার জবাব দিন।
-এটা জানা কি খুব জরুরী?
-হুম অনেক।
-পরে একসময় বলি?
-না এখনি বলুন।
-জোর করছেন।
-যদি ভাবেন তবে তাই।
.
কি বলব কিছুই বুঝতে পারছিলাম না। সত্যি বলতে সাহস হচ্ছিল না আবার মিথ্যেও বলতে পারছিলাম না। কিছুক্ষণের জন্য থমকে গেছিল। একবার মনে হচ্ছে ওকে সব সত্যি বলেই দেই,কিন্তু আবার মনে হচ্ছে যদি ভুল বুঝে। এদিকে আমি আর ওর থেকে দূরে থাকতেও পারছিনা। শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত নিলাম এবার সব সত্যিই বলে দেবো যা হবার হবে। নিজেকে মনে মনে প্রস্তুত করলাম। সাহস নিয়ে ওর সামনাসামনি দাঁড়ালাম।
তাস্মিয়া আবার বলল
-কি হল বলেন?
আমি আর দেরি করলাম না পকেট থেকে ওর জন্য কেনা আংটিটা বের করলাম। যদিও মানুষ হিসেবে আমি মোটেও রোমান্টিক না,তবুও একটু রোমান্টিক হওয়ার চেষ্টা করলাম। কেননা মেয়েরা রোমান্টিকতা অনেক পছন্দ করে। তাই হাটু গেড়ে বসে তাস্মিয়ার দিকে আংটিটি বাড়িয়ে দিয়ে বললাম
-তাস্মিয়া আই লাভ ইউ,উইল ইউ বি মাইন ফরেভার??
আমি আবার বললাম -সত্যিতো এটাই যে আমি তোমাকে প্রচন্ড ভালবেসে ফেলেছি। যেদিন তোমায় প্রথম দেখেছি সেদিনই তোমার প্রেমে আমি পাগল হয়ে গেছি। দিন কি রাত খাইয়া নেই দাওয়া নেই সারাক্ষণই শুধু তোমার কথাই ভাবতে ভাল লাগে। ২৪ ঘন্টার মাঝে একটা সেকেন্ডের জন্যও আমি তোমায় ভুলতে পারিনা। আমি হয়তো তোমায় অনেক কিছু দিতে পারবো না কিন্তু প্রাণ খুলে ভালবাসা দিতে পারবো। আমি হয়তো তোমায় অনেক সুখে রাখতে পারবো না,কিন্তু কখনো তোমার চোখের জল মাঠিতে পড়ার আগেই তোমার মুখে হাসি ফুটাতে পারবো। তোমার হাতটা কি আমায় সারা জীবনের কি জন্য ধরতে দেবে?? এক নাগারেই তাস্মিয়াকে কথা গুলো বলে ফেললাম। আমার কথা শুনে মনে হল তাস্মিয়া আকাশ থেকে পড়ল। ও হা করে দাঁড়িয়ে ছিল। বুঝতে পারছিলাম না ও কি বলবে বা কিইবা করবে। তাস্মিয়া আমার হাত থেকে আংটিটা নিল। দেখে মনে হল ও অনেক কনফিউশনে পড়ে গেছে। আংটিটা হাতে নিয়ে আংটির দিকে কিছুক্ষণ তাকাল। তারপর আমার কথার জবাব না দিয়েই ধীর পায়ে উল্টো পথে একপা একপা করে এগুতে লাগল। আমার আর বুঝতে বাকি রইল না যে ও আমায় ভালবাসে না। খুব কষ্ট লাগছিল। অজান্তেই চোখের কোণে পানি এসে গেল। গাল বেয়ে টুপ করে পানির ফোটা মাটিতে পড়ল। কোন ভাবেই মানতে পারছিলাম না যে তাস্মিয়া আমাকে ফিরিয়ে দেবে। আমি ওর নিশ্চুপে চলে যাওয়া দেখতে পারছিলাম না। তাই আকাশের দিকে তাকিয়েই চোখের জল ফেলতে লাগলাম।
.
কিন্তু তাস্মিয়া কিছু দূর গিয়ে আমাকে অবাক করে দিয়ে ঘুরে দৌড়ে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরল। আমি ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেলাম। এটা স্বপ্ন না সত্যি এর ফারাক আমি এই মুহূর্তে বুঝে উঠতে পারছিলাম না। আমিও তাস্মিয়াকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলাম।
তাস্মিয়া আমার বুকে মাথাটা রেখে কাঁদতে কাঁদতে বলল
-ভালবাসো আগে বলোনি কেনো?আমাকে কাঁদাতে খুব মজা লাগে নাহ!
-আগে বলার সুযোগ পাইনি যে।
-সেই প্রথম যেদিন তোমায় রাস্থা একটা বৃদ্ধলোককে সাহায্য করতে দেখি সেদিন থেকেই তোমার প্রতি আমার ভাললাগা কাজ করে। তারপর তোমায় বইমেলায় দেখে তোমার সম্পর্কে ধীরে ধীরে জানতে শুরু করি। কিন্তু লজ্জায় কখনো তোমার সামনে আসতে পারিনি। তোমায় ছাড়া আর একা থাকতে না পেরে লজ্জা সরমের মাথা খেয়ে আজ ভালবাসি বলব বলে তোমার সামনে দাড়িয়েছি। তোমায় সত্যি আমি অনেক বেশি ভালবাসি।
তাস্মিয়া কাঁদতে কাঁদতে কথাগুলো বলছিল। আমার বুক থেকে ওর মুখটা তুলে চোখের পানি মুছে দিলাম। মেয়েটা বড়ই অদ্ভুত কান্নাভেজা মুখেও অসম্ভব মায়া কাজ করছে। আমি বললাম
-আচ্ছা বাবা সরি আমি কি জানতাম যে তুমিও আমায় ভালবাসো। এবারতো কান্না থামাও। অবশ্য তোমার কান্নামাখা মুখ দেখতে খারাপ লাগছে না।
-চুপ একদম চুপ। আমাকে ছেড়ে কখনো কোথাও যেতে পারবানা।
-আচ্ছা যাবো না,কিন্তু এবারতো ছাড়ো।
-বলছি না চুপ।
-আর সবাই দেখছেতো।
-দেখুক! তাতে কি আসে যায় জড়িয়ে ধরতে বলছি ধরো।
-পারবো না।
-পারবা না মানে! এই পারবানা মানে কি? ধরো নইলে আব্বুকে বলে চৌদ্দ শিকের ভেতর ঢুকিয়ে দেবো।
-বাপরে কি দাজ্জাল মেয়ে।
-হুম আমি দাজ্জাল। ভালবাসায় কমতি হলে আমি তোমাকে ছেড়েও কথা বলবো না।
কি আর করা কোন উপায় না দেখে আমিও জড়িয়ে ধরে থাকলাম..
গল্পের বিষয়:
রোমান্টিক