:-আপনি কি এখানে থাকেন?(মেয়ে)
:-হুমম।চলুন এখন ভেতরে।(আমি)
মেয়েটি আর কোন কথা না বলে রুমে প্রবেশ করলো।আর সাথে আমিও।
:-আপনাকে একটা কথা বলার ছিলো।(মেয়ে)
:-হুমম,বলুন।(আমি)
:-না মানে,কি করে বলি?
:-কোন দ্বিধা ছাড়াই বলুন।
:-আসলে আমার না খুব ক্ষুদা লেগেছে।
:-ওহহ।আচ্ছা,আপনি বসুন।আমি বাহির থেকে খাবার নিয়ে আসতেছি।
এই বলে আমি রুম থেকে বাহির হয়ে আসলাম।
রওয়ানা দিলাম রেস্টুরেন্টের উর্দেশ্য।
রেস্টুরেন্ট এ পৌঁছাতে পৌঁছাতে নাহয় আপনাদের সাথে পরিচিত হয়ে নিই।
তাহলে শুনুন,
আমার নাম রাকিবুল ইসলাম রাজু।
পড়ালেখা শেষ করে এখন একটা সরকারি প্রতিষ্টানে চাকরি করি।বাড়িতে মা আর ছোট এক ভাই আছে।আর আব্বু গত কয়েকমাস আগেই পরলোক গমন করেন।
যাইহোক,আম্মু আর ছোটভাই গ্রামের বাড়িতে থাকে।আর আমি চাকুরীসুত্রে শহরে থাকি।
আপাদতে পরিচয় পর্ব এখানেই থাক।
এবার গল্পে আসি।
আমি একটি রেস্টুরেন্টে এসে দুই প্যাকেট বিরিয়ানী নিয়ে আবারও বাসার উর্দেশ্য রওয়ানা দিলাম।
আপনারা হয়তো ভাবছেন,কিছুক্ষন আগে মানে আমি বাসায় থাকা অবস্থায় কোন এক মেয়ের সাথে কথা বলেছিলাম।সেই মেয়েটি কে?
তাহলে শুনুন,
প্রতিদিনের ন্যায় আমি আজকেও অফিসের উর্দেশ্য বাসা থেকে বাহির হই।
বাসা থেকে বাহির হয়ে যেই আমি রিক্সায় উঠবো,তখনই আমি দেখি একটি মেয়ে রাস্তার অপরপাশে থাকা একটি গাছের নিছে একটা পুঁটলি নিয়ে বসে আছে।
মেয়েটিকে দেখে আমার মনে কেমন যেন খটকা লাগলো।
কারণ,মেয়েটির সাজগোজ আর চেহারা দেখে আমার কেন যেন মনে হলো মেয়েটি কোন সাধারণ ঘরের মেয়ে নয়।
আমি আর ওসবে মনোযোগ না দিয়ে,রিক্সায় করে অফিসের দিকে রওয়ানা দিলাম।
যাইহোক,সন্ধ্যার দিকে অফিস ছুটি হলে,আমি হেঁটে হেঁটে বাসার দিকে রওয়ানা দিই।যেহেতু সন্ধ্যার দিকে রিক্সা পাওয়া যায় না সহজে।আর আমার অফিসও আমার ভাড়া বাসা থেকে বেশি দুরের না।হেঁটে গেলে মিনিট পনেরোর পথ।
অতঃপর,আমি যেই বাসার সামনে এসে গেইট দিয়ে ভেতরে ডুকবো,
:-একটু দাড়াবেন?
একথা শুনে আমি পেছনে তাকালাম।
অমনি দেখলাম সকালে দেখা মেয়েটি রাস্তার ওপাশ থেকে দৌড়ে আমার দিকে আসতেছে।
:-কিছু বলবেন?
মেয়েটি আমার সামনে এসে দাড়ালে,আমি কথাটা বলি।
:-হুমম(মেয়ে)
:-বলুন(আমি)
:-আমি একটা বিপদে পড়ে গেছি।যদি একটু সাহায্য করতেন।
:-আমি কি করে আপনাকে সাহায্য করবো?
:-আপনি আমাকে একটু আশ্রয় দিতে পারবেন?
:-আশ্রয়?আপনাকে চিনি না জানিনা,আমি কি করে আপনাকে আশ্রয় দিবো?
:-প্লিজ, দয়া করে আমাকে একটু আশ্রয় দিন।
এইবলে মেয়েটি কাঁদতে লাগলো।
:-দেখুন,আমি একজন ব্যাচেলর।আমি একটা রুমে ভাড়ায় থাকি।আমি আপনাকে কিসের ভিত্তিতে আশ্রয় দিই,বলুনতো?আর আমি একজন পুরুষ আর আপনি নারী।
:-প্লিজ দয়া করুন,
আমি একটু ভেবে নিয়ে বললাম,
:-চলুন(আমি)
:-ধন্যবাদ।
মেয়েটি খুশি হয়ে বললো।
এরপরেরটা তো আপনারা উপরেই জানলেন।
সত্যি বলতে কি আমি এখনো মেয়েটির নামও জানি না।
বাসায় এসে আমি রুমে ডুকে দেখি মেয়েটি টেবিলে থাকা আমার ডায়েরিটা পড়তেছে।
:-এহেম এহেম(আমি)
আমার উপস্থিতি টের পেয়ে ডায়েরিটা তাড়াতাড়ি করে টেবিলে রেখে দিয়ে আমার দিকে ঘুরে দাড়ালো মেয়েটি।
:-যান,ফ্রেশ হয়ে আসুন।(আমি)
:-হুমম।আচ্ছা,ওয়াশরুমটা কোন দিকে?(মেয়ে)
অতঃপর আমি মেয়েটাকে ওয়াসরুমটা দেখিয়ে দিয়ে বারান্দার বেলকনিতে গিয়ে দাড়ালাম।
মেয়েটিকে কেন যেন আমার সন্ধেহ হচ্ছে না।
মেয়েটির কথাবার্তায় মিশে আছে মাধুর্যতা।
মেয়েটি আমার সাথে কেমন স্বাভাবিকভাবে কথা বলছে।যেন আমি তার কতদিনের চেনা।
একটা কথা কিছুতেই বুঝতেছি না,
মেয়েটা এতমানুষ থাকতে আমার কাছে কেন আশ্রয় চাইলো?
নাকি মেয়েটার কোন ধান্ধা আছে নাকি?
কে জানে?
নাহ,মেয়েটার কাছ থেকে সবকিছু জানতে হবে।
এসব কথা মনে মনে ভাবতেছিলাম।
তখনই আমি আমার পাশে কারো দাড়িয়ে থাকার উপস্থিতি টের পেলাম।
তাই পাশে তাকালাম।
:-একি আপনি এখানে?(আমি)
:-আপনাকে ভেতরে না দেখে বাহিরে আসলাম।(মেয়ে)
:-ওহহ।আচ্ছা,আপনি গিয়ে খেয়ে নেন।
:-হুমম,আপনিও আসুন।একসাথে খেয়ে নিবো।
:-হুমম,চলেন।
আমি আর মেয়েটি রুমে প্রবেশ করলাম।
:-আপনি বসুন,আমি ফ্রেশ হয়ে আসি।
এই বলে আমি ফ্রেশ হতে চলে আসলাম।
ফ্রেশ হয়ে আসার পর,
:-একি আপনি বসে আছেন কেন?নিন খাওয়া শুরু করুন।(আমি)
:-আপনিও বসুন।(মেয়ে)
:-হুমম।
অতঃপর আমি আর মেয়েটি খাওয়া শুরু করলাম।
:-আচ্ছা,আমিতো এখনও আপনার নামটা জানতে পারি নাই।যদি নামটা বলতেন?(আমি)
:-আমার নাম হলো,নিধি।আপনার নাম বলতে হবে না।আপনার নাম আমি জানি।আপনার নাম রাজু।তাইনা?(নিধি)
:-হুমম।আপনি নিশ্চয় আমার ডায়েরি থেকে আমার পরিচয় জেনে নিয়েছেন।তাই না?
:-হুমম,
:-আপনি যেহেতু আমার পরিচয় জেনে নিয়েছেন,সেহেতু আপনার সম্পর্কেও আমায় কিছু বলেন।
:-যেমন?
:-যেমন,আপনি কোথায় থেকে এখানে এসেছেন?আর কেনই বা এখানে এসেছেন?আপনার পরিচয়ই বা কি?
:-আমি এই শহরেই থাকি।
:-মানে?(অবাক হয়ে)
:-আসলে আমি এই শহরের উত্তরে থাকি।আর আমি ওখান থেকে পালিয়ে এসেছি।
:-মানে?যদি একটু খুলে বলতেন।
:-তাহলে শুনুন,আজকে আমার বিয়ে হওয়ার কথা ছিলো।তাই আমি ওখান থেকে পালিয়ে এসেছি।
:-ও।তা কেন বিয়ের আসর থেকে পালিয়ে এসেছেন?
:-কারণ,আমার এই বিয়েতে কোন মত ছিলো না।সৎ মা আর আব্বু মিলে জোর করে আমাকে আমার আব্বুর বয়সের সমতুল্য এক বুড়োর কাছে বিয়ে দিচ্ছিলো।
:-আচ্চা,শুধু এইজন্য পালিয়ে এসেছেন?
:-না।আরও কারণ আছে,আমার আব্বু আর সৎ মা মিলে ঐ বুড়োর সম্পত্তি হাতড়িয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা করছিলো।আর আমি এটা চাইছিলাম না।আমিতো এই বিয়ে করতে রাজি নই।তাই পালিয়ে এসেছি।
:-ও।আচ্ছা,আপনি পালিয়ে না এসে যদি আপনার আব্বু আর আম্মুকে বলতেন,আপনি এই বিয়েতে রাজি নয়।তাহলে উনারা হয়তো বিয়েটা বন্ধ করতো।
:-বলেছিলাম,
:-উনারা কি বললেন,
:-বিয়ে বন্ধ করাতো দূরে থাক।বরং উনারা আমাকে মারধর শুরু করলেন,বিয়ে করার জন্য।
:-সেকি,আপনাকে আপনার আব্বু-আম্মু এখনো মারধর করে?
:-হুমম।
:-আচ্ছা,এখন খেয়ে নেন।
:-হুমম।
অতঃপর খাওয়া-দাওয়া শেষ হলো।
:-চা খাবেন?(আমি)
:-কোথায় পাবেন?(নিধি)
:-কেন?ঘরে তৈরি করবো।
:-এখানে রান্নাঘর আছে নাকি?
:-হুমম।কেন?
:-না মানে আপনি রান্না করতে পারেন নাকি?
:-হুমম।হঠাৎ এই প্রশ্ন?
:-না,মানে বাহির থেকে খাবার আনলেন যে?এখানেও তো তৈরি করতে পারতেন?
:-হুমম,তা আবশ্যক পারতাম।আচ্ছা,আপনি বসুন,আমি চা তৈরি করে আনি।
:-আপনি করা লাগবেনা।আমি করে নিয়ে আসি।আপনি শুধু আমাকে রান্নাঘরটা দেখিয়ে দিন।
:-হুমম,তাহলে আসুন।
অতঃপর আমি নিধিকে রান্নাঘর দেখিয়ে দিয়ে রুমে আসলাম।
তখনই আম্মুর ফোন এসে হাজির,
:-হ্যালো,আম্মু কেমন আছো?(আমি)
:-ভালো।তুই কেমন আছিস?বাবা।(আম্মু)
:-জ্বী ভালো।সিয়াম(ছোট ভাই) কোথায়?ও ভালো আছেতো?
:-হুমম,ও ভালো আছে।তোর খবর কি?আজকে তুই ফোন দিলি না যে?কিছু হয়েছে নাকি?
:-আম্মু,তুমি আমাকে নিয়ে চিন্তা করো না।তোমার দোয়ায় আমি ভালো আছি।আম্মু তোমাকে একটা কথা বলার ছিলো?
:-হুমম বল,
অতঃপর আম্মুকে মেয়েটির ব্যাপারে সবকিছু খুলে বললাম।
:-তুই ওর কাছে ফোনটা দেতো(আম্মু)
:-কেন আম্মু?
:-আমি ওর সাথে কথা বলবো।
:-কি যে বলো না আম্মু।আর ও এখন এখন রান্নাঘরে।পরে কথা বলো।এখন রাখি।কি বলো?
:-হুমম,রাখ।
অতঃপর ফোন কেটে দিলাম।
:-কে?আপনার আম্মু নাকি?
পেছন থেকে কথাটা বলে উঠলো নিধি।
:-হুমম।আপনি এখানে যে?
:-এই নিন,চা।
এই বলে নিধি আমার দিকে চায়ের কাপ বাড়িয়ে দিলো।
আমি চায়ের কাপটা হাতে নিয়ে নিধির দিকে তাকালাম।
:-আচ্ছা,এখানে আপনার পরিচিত কেউ আছে নাকি?(আমি)
:-না(নিধি)
:-ওহহ,
এই বলে আমি চায়ের কাপে চুমুক দিলাম।
:-আমার কেন জানি মনে হতেছে,আপনি পালিয়ে এসে ঠিক করেন নাই।(আমি)
নিধি চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে বলল,
:-আপনিই বলেন,এছাড়া আমার আর কিছু করার মত ছিলো?(নিধি)
:-তা আবশ্যক ঠিক যে,এছাড়া আপনার কোন উপায়ই ছিলো না।তারপরেও তো?
:-আপনি তো জানেন না,আমার উপর কি রকম অত্যাচার বয়ে যায়।আমার মা মারা যাওয়ার পর যেদিন বাবা নতুন করে বিয়ে করে সৎ মাকে নিয়ে আসেন,ঐদিন থেকে আমার উপর বয়ে আসে দুঃখের ঝড়।সৎ মায়ের কাছ থেকে দিনরাত শারীরিক-মানসিক নির্যাতন পেয়ে আসতে হয়েছে।বেশ কয়েকবার আত্নহত্যা করতে চেয়েছি।কিন্তু পারি নাই,নিজের বিবেকের কাছে হেরে।
এই বলে নিধি কাঁদতে লাগলো।
:-ওহহ,আপনার বাবা কিছু বলতো না আপনার সৎ মাকে?
:-না।বরং উনি আমাকে সৎমায়ের কথার উপর ভিত্তি করে মারধর করতো।
:-ওহহ,
এই বলে আমি চায়ের কাপে শেষ চুমুকটা দিলাম।
:-চা টা খুউব ভালো হয়েছে।(আমি)
আমার কথা শুনে নিধি চোখের পানি মুছে আমার দিকে তাকালো,
:-আর এক-কাপ আনবো নাকি?(নিধি)
:-আছে নাকি?
:-হুমম,
এই বলে নিধি রান্নাঘরের দিকে চলে গেলো।
মেয়েটার চেহারার দিকে তাকালে মনে হয় না,তার মনে কোন দুঃখ আছে।কিন্তু মেয়েটার মনে যে এত দুঃখ আছে সেটা কেহই উপলব্দি করতে পারবে না।
আমার মনে মেয়েটার জন্য কেমন যেন মায়া অনুভব করলাম।
:-এইই,নিন(নিধি)
:-হুহ,
:-চায়ের কাপটা ধরুন।
:-দিন,
চায়ের কাপ হাতে নিলাম।
:-আচ্ছা,আপনার কি মনে হয় না,একজন প্রাপ্ত বয়স্ক পুরুষ আর একজন প্রাপ্ত বয়স্ক নারী একসাথে থাকলে,পুরুষটি নারীর উপর আক্রমন করতে পারে?
এই বলে আমি চায়ের কাপে চুমুক দিলাম।
নিধি আমার দিকে তাকিয়ে একটা হাসি দিয়ে বলল,
:-সকল নারী-পুরুষ এক না।(নিধি)
:-যেমন?
:-উদাহরন স্বরুপ বলতে পারি,আপনাকে আমার ঐরকম মনে হয় না।
:-কেন মনে হয় না?
:-কারণ আপনার মুখের ঐ খোঁচা খোঁচা দাড়িগুলো বলে দেয়,আপনি এমন পুরুষ না,যে অসহায় কোন মেয়েকে আক্রমন করতে পারেন।
:-হা হা হা,শুধু এইটুকু কারণ?
:-না,আরও একটা কারণ আছে।
:-তাই নাকি?বলুনতো কি কারণ?
:-তাহলে শুনুন,আজকে সকালে যখন আপনি রিক্সা করে আপনার অফিসের দিকে রওয়ানা দেন,পথিমধ্য আপনার রিক্সার সামনে একজন বৃদ্ধ লোক পড়ে।আর আপনি রিক্সা থেকে নেমে গিয়ে ঐ লোকটাকে তুলে রাস্তা পার করিয়ে দেন।
আর এতে করে আমি নিঃসন্দেহে আপনাকে বিস্বাস করি।আর তাই আপনার কাছে আশ্রয় চাই।
:-………….(আমি চুপ থাকলাম)
:-আচ্চা,আপনি হঠাৎ আমার কাছে এমন কথা জানতে চাইলেন কেন?
:-আসলে আমি জানতে চাইছিলাম,আমার ব্যাপারে আপনার অনুভূতিটা কি?আপনি কোন চিন্তা করবেন না,আমি আপনার কোন ক্ষতি করবো না।কথা দিলাম।
:-হুমম,
অতঃপর কিছুক্ষন নিরবতা।
আর এ ফাঁকে আমারও চা পান করা শেষ।
:-আপনি কোথায় যাবেন?(আমি)
:-মানে?
:-মানে আগামীদিন আপনি কোথায় যাবেন?
:-যে দিকে দুচোখ যায়।
:-মানে?
:-মানে আর কি?দেখি কোথাও ঠাই পাই কিনা?
:-আপনি কোথাও যাবেন না।আপনি এখানেই থাকবেন।
:-মানে?
:-মানেটা আপনি পরে জানতে পারবেন।
আরো কিছুক্ষন নিরবতা।
:-আপনার সাথে আমার আম্মু কথা বলতে চায়।(আমি)
:-আপনি কি আপনার মাকে আমার ব্যাপারে বলে দিয়েছেন,নাকি?(নিধি)
:-হুমম।কেন?
:-কেন বলেছেন?উনি এবার কি থেকে কি মনে করবেন?
:-আপনি আমার মাকে হয়তো বা চিনেন নাই।আপনি উনার সাথে আগে কথা বলে দেখুন।তারপর বুঝবেন আমার মা কেমন?
এই বলে আমি মোবাইল হাতে নিয়ে আম্মুকে ফোন দিলাম।
কিছু্ক্ষন রিং হওয়ার পর,ফোন রিসিব হলো।
:-হ্যালো,আম্মু(আমি)
:-কিরে,কেন ফোন দিয়েছিস?(আম্মু)
:-তুমি বলেছ না ওর সাথে কথা বলবে।
:-হুমম,দে।
অতঃপর আমি নিধির দিকে মোবাইলটা বাড়িয়ে দিলাম।
নিধিও আমার কাছ থেকে মোবাইল নিয়ে রুমের বাহিরে বের হয়ে গেলো।
আর আমি খাটে গিয়ে বসলাম।
নিধির কথা ভাবতেছি,
মেয়েটার সাথে আমার কিছু সময়ের কথা হলো।এর মধ্যেই মেয়েটাকে আমার কেমন আপন মনে হতেছে।যেন আমার কতদিনের চেনা।ও যখন বললো,ও চলে যাবে,তখন আমি আমার বুকের বামপাশে কেমন যেন চিনচিনে ব্যাথার অনুভব করি।
না,আমি ওকে হারাতে পারবো না।
প্রায় পনেরো-বিশ মিনিট পর নিধি রুমে প্রবেশ করলো।
আমি নিধির দিকে তাকালাম।
দেখি ওর চোখে পানি।
নিধি রুমে আসলে আমি ওর দিকে তাকালাম।
দেখি ওর চোখে পানি।
:-একি,আপনি কাঁদছেন কেন?(আমি)
:-হুমম,এই নিন(নিধি)
এই বলে আমার দিকে মোবাইলটা বাড়িয়ে দিয়ে,নিধি চোখ মুছতে লাগলো।
:-আসলে আপনার মায়ের সাথে কথা বলতে বলতে আমার মায়ের কথা খুব মনে পড়ছিলো।তাই(নিধি)
:-ওহহ,তা আমার মায়ের সাথে আপনার কি কথা হলো,জানতে পারি?(আমি)
:-কেন?
:-না মানে থাক।আপনাকে বলতে হবে না।
:-আসলে আপনার মায়ের সাথে কথা না বললে জানতে পারতাম না যে,আপনি আপনার মায়ের চোখে কেমন।উনার কথা-বার্তায় বোঝা যায়,উনি আপনাকে কতখানি ভালোবাসেন।
:-ওহহ,আচ্ছা আপনি কি সকালে চলে যাবেন নাকি?
:-হুমম।কেন?
:-না মানে আম্মু আপনাকে থাকার ব্যাপারে কিছু বলে নাই?
:-হুমম,বলেছে।
:-কি বলেছে?
:-বলেছে আমার যেহেতু যাওয়ার মত জায়গা এখানে নাই,সেহেতু আমি যেন আপনার নিকট থাকি।
:-ওহহ।তাহলে আপনি বললেন যে,আপনি সকালে চলে যাবেন।
:-যাবো তো।আমি এখানে আপনার বোঝা হয়ে থাকতে পারবো না।
:-কে বললো,আপনি এখানে আমার বোঝা হয়ে থাকবেন?আপনি এখানেই থাকবেন।কোন অসুবিধা নাই।
:-অসুবিধা তো আছে?
:-কি?
:-আমি আপনার সাথে এক রুমে একসাথে থাকলে,লোকে কি বলবে?আর কেউ যদি আমাকে জিগ্গেস করে আমি আপনার কি হই?তাহলে?
:-আপনি বলবেন,আপনি আমার স্ত্রী।তারপরেও আপনি এখানে থাকবেন।
:-সে নাহয় পরে দেখা যাবে।আপনি ঘুমাবেন না?
:-হুমম,তবে আরেকটু পরে,অফিসের কিছু কাজ করা বাকি আছে।আর সবেমাত্র রাত এগারোটাই তো বাজলো।
:-ওহহ,আসলে আমার খুব ঘুম পাচ্ছে।যদি?
:-আপনি খাটে বিছানা করে ঘুমিয়ে পড়েন।
:-সেকি,আপনি তাহলে কোথায় ঘুমাবেন?
:-আমি নিচে বিছানা করে ঘুমাবো।আর আমাকে নিয়ে আপনার চিন্তা করতে হবে না।
:-তারপরেও তো,
:-অসুবিধা নাই,আপনি ঘুমিয়ে পড়ুন।
অতঃপর নিধি বিছানা ঠিক করে,খাটেই শুয়ে পড়লো।
আর আমি টেবিলে গিয়ে ল্যাপটপটা ওন করলাম।
আসলে আজকে অফিসে আমার কিছু কাজ করা বাকি ছিলো।এখন ওগুলো শেষ করতে হবে।তা না হলে আগামীকাল আমার অফিসে কাজের চাপ বাড়বে।
কাজগুলো করা সম্পন্ন হলে আমি ঘড়ির দিকে তাকালাম।দেখি রাত সাড়ে বারোটা বেজে গেছে।
নিধির দিকে তাকালাম।
ও ঘুমিয়ে গেছে।
ওর মুখের উপর কিছু চুল এসে পড়ে রয়েছে।
এই অবস্থায় মেয়েটাকে যে কি সুন্দর লাগছে,তা আমি আপনাদের বলে বুঝাতে পারবো না।
ঘুমানো অবস্থায় মেয়েদের যে অধিক সুন্দর লাগে,তা আমি এতদিন বিভিন্ন গল্পে পড়ে এসেছি।
কিন্তু আজ বাস্তবে দেখতেছি।
আমি একপলকে নিধির দিকে তাকিয়ে আছি।
আমার মন চাইতেছে উঠে গিয়ে নিধির মুখের উপর আসা চুলগুলো সরিয়ে দিতে।
কিন্তু পারলাম না।
কারণ আমি যে তার সাথে কথা দিয়েছি।
যাইহোক আমি আর বসে না থেকে ল্যাপটপটা ওপ করে রেখে দিলাম।
তারপর ঘুমানোর জন্য নিছে বিছানা করে,শুয়ে পড়লাম।যদিও শুয়েছি,কিন্তু কোন মতেই আমার ঘুম আসছিলো না।কেন যে আমার ঘুম আসছে না,কিছুই বুঝতেছি না।
হয়তো বা,নিধির চলে যাওয়ার কথা ভেবে।
নিধির কথা ভাবতে ভাবতে,কখন যে আমি ঘুমিয়ে পড়েছি সেটা আমার মনেই নেই।
পরদিন সকালে আমার ঘুম ভাংলে আমি চোখ মেলে খাটের দিকে তাকালাম।
খাটের দিকে তাকিয়ে দেখি নিধি খাটে নেই।
তাই আমি তড়িঘড়ি করে উঠে রুমের বাহিরে আসলাম।
বাহিরে এসে আমি নিধিকে খুঁজতে লাগলাম।
কিন্তু নিধিকে বাহিরে পেলাম না।তাই আমি ওয়াশরুমের দিকে গেলাম।
নাহ,ওয়াসরুমেও নিধিকে পেলাম না।
তাহলে কি নিধি চলে গেলো?
এসব ভাবতেই বুকের বামপাশটা কেমন যেন ধুপধুপ শব্দে কেঁপে উঠতে লাগলো।
আর মনে কেমন যেন অজানা আশংকার সৃষ্টি হলো।
নাহ,
আমার মাথাটা কিছুতেই কাজ করতেছে না।
যাই,রান্নাঘরের দিকে গিয়ে দেখে আসি।
যেইভাবা সেই কাজ।
রান্নাঘরের দিকে দৌড় দিলাম।
নাহ,
রান্নাঘরেও পেলাম না তাকে।
তাহলে কি ও আমাকে ছেড়ে চলে গেলো?
নাহ,এটা কি করে হয়?
নিধি যদি চলেই যায়,তাহলে তো ও নিশ্চয় আমাকে বলে যেত।
এসব ভাবতে ভাবতে আমি বারান্দার ফ্লোরে বসে পড়লাম।
আর অনুভব করলাম,আমার চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ার।
:-কাকে খুঁজতেছেন?
হঠাৎ,পেছন থেকে এমন প্রশ্ন শুনে,আমি চোখ মুছে পেছনে তাকালাম।
আমি পেছনে তাকালাম।
দেখি নিধি দাড়িয়ে।
আমি ফ্লোর থেকে উঠে তার নিকট গেলাম।
:-এই রকম ভাবে কাকে খুৃঁজছিলেন?(নিধি)
:-আপনাকে খুঁজছিলাম।(আমি)
:-ওহহ,
:-আপনি কোথায় গিয়েছিলেন?
:-আমি একটু ছাদে গিয়েছিলাম।
:-ও।আচ্ছা আপনি কি চলে যাবেন নাকি?
:-আপনি যদি চলে যেতে বলেন,তাহলে চলে যাবো।
:-না,আপনি কোথাও যাবেন না।আপনি এখানেই থাকবেন।আর শুনেন,আপনার তো এখানে কোন কিছু চেনা-জানা নেই।সুতরাং আপনি এখান থেকে কোথাও যাবেন না।আর যদি কোথাও যেতে হয়,তাহলে অবশ্যই আমাকে বলে যাবেন।ঠিক আছে?
:-……..(নিধি)
নিধি কিছু না বলে মাথা নাড়িয়ে সায় দিলো।
এরপর কিছুক্ষন নিরবতা।তারপর,
:-আচ্ছা,আপনি ঐরকম ফ্লোরে বসেছিলেন কেন?আর আমার মনে হয়,আপনি কিছুক্ষন আগে কেঁদেছিলেন।কেন?(নিধি)
:-সে আপনি বুঝবেন না।(আমি)
:-কেন বুঝবো না?
:-বুঝবেন।তবে তা বোঝার সময় হলে।
:-ও
:-হুমম।
:-আচ্ছা,আপনাকে অফিসে যেতে হবে তাই না?
:-হুমম,যাবোতো।
:-তাহলে,যান।গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আসেন।আমি নাস্তা তৈরি করছি।
:-হুমম।
এই বলে আমি ফ্রেশ হতে চলে আসলাম,ওয়াসরুমে।
মনে মনে আল্লাহকে অনেক ধন্যবাদ দিলাম।
নিধিকে না পেয়ে,আমার মনের অবস্থা যে কেমন হয়েছিলো,তা আমি আপনাদের বলে বুঝাতে পারবো না।আর তাকে দেখে আমার মনের অবস্থা কেমন হয়েছে সেটাও আমি আপনাদের বোঝাতে পারবো না।
অন্যদিনের তুলনায়,আজকে আমি খুব সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে গেলাম।তাই আমি হাত-মুখ না ধুয়ে একেবারে স্নান করে নিলাম।
স্নান সেরে আমি রুমে এসে অফিসের যাওয়ার জন্য রেডি হতে লাগলাম।
রেডি হয়ে আমি টেবিলের দিকে গেলাম।
:-আপনি বসুন,আমি নাস্তা নিয়ে আসি।
আমি টেবিলে গিয়ে চেয়ারটা নিয়ে বসা মাত্রই নিধি এসে আমাকে কথাটা বলে,আবারও রান্নাঘরের দিকে চলে গেলো।
কিছুক্ষন পর,নিধি নাস্তা নিয়ে টেবিলের দিকে আসলো।
:-আপনিও বসে পড়ুন।
নিধির উর্দেশ্য কথাটা বললাম,আমি।
:-হুমম।
এই বলে নিধি একপাশে চেয়ার টেনে নিয়ে বসে পড়লো।
:-নাস্তা কি তৈরি করলেন?(আমি)
:-বেশী কিছুনা,কয়েকটি পরটা,ডিম ভাজি আর চা।(নিধি)
:-এটাই তো বেশী।আপনি না থাকলে তো আমাকে বাহির থেকে নাস্তা সেরে নিতে হতো।
:-তাই নাকি?
এই বলে নিধি আমার দিকে নাস্তার প্লেট বাড়িয়ে দিলো।
:-হুমম।
:-কেন,আপনি বুঝি নাস্তা তৈরি করতে পারেন না?
:-কে বললো পারি না?
:-তাহলে বাহিরে নাস্তা করেন কেন?
:-আসলে প্রত্যকদিন তো আমার পক্ষে নাস্তা তৈরি করা সম্ভব না।তাই আর কি?
:-ও।আচ্ছা,নাস্তা নেন।
:-হুমম,আপনিও নেন।
অতঃপর নাস্তা করা শেষ হলে,আমি অফিসের উর্দেশ্য বাহির হওয়ার প্রস্তুতি নিতে লাগলাম।
:-আপনাকে আবারও বলে রাখছি,আপনি বাসা থেকে কোথাও যাবেন না।(আমি)
:-…………(নিধি)
:-আমি আগেও বলেছি এখনও বলছি,আমি আপনার কোন ক্ষতি করবোনা।আচ্ছা,বলুন তো এই পর্যন্ত আমার দ্বারা আপনার কোন ক্ষতি হয়েছে?
:-আচ্ছা,আপনি এমন করে কথা বলছেন কেন?
:-আপনাকে হারানোর ভয়ে।
:-মানে?
:-না মানে কিছুনা।আমি তাহলে আসি।আপনি রুমের দরজা লাগিয়ে দিন।
:-হুমম।
অতঃপর আমি বাসা থেকে বাহির হয়ে আসলাম।
একটা রিক্সা ডেকে নিয়ে তাতে উঠে রওয়ানা দিলাম অফিসের উর্দেশ্য।
রিক্সা চলতেছে আমার অফিসের উর্দেশ্যে।
আমি পকেট থেকে মোবাইলটা বের করে দিলাম আম্মুকে ফোন।
কিছুক্ষন রিং হওয়ার পর ফোন রিসিব হলো।
তারপর আম্মুর সাথে কথা বলতে বলতে রিক্সা অফিসের সামনে এসে দাড়ালো।
:-আম্মু,আমি অফিসের সামনে চলে এসেছি।(রিক্সা থেকে নামতে নামতে বললাম, আমি)
:-তাহলে আর কি?ঐ কথাই রইলো।(আম্মু)
:-হুমম।এখন রাখি।
:-আচ্ছা রাখ।
অতঃপর ফোন কেটে,রিক্সা ভাড়া মিঠিয়ে আমি অফিসে প্রবেশ করলাম।
নিজের কেবিনে গিয়ে কাজে মনোযোগ দেওয়ার চেষ্টা করলাম।কিন্তু কিছুতেই কাজে মনোযোগ দিতে পারছি।
কেন পারছি না?
হয়তোবা নিধির চলে যাবার ভয়ের আশংকায়।
এখন আমি দাড়িয়ে আছি অফিস প্রধানের কেবিনে।
:-তা রাজু সাহেব,আপনি তো কোনদিন নিজ থেকে অফিসে ছুটি চান নি।আজ হঠাৎ ছুটি চাইলেন যে?(অফিস প্রধান)
:-আসলে স্যার,আমাকে জরুরি ভিত্তিতে গ্রামের বাড়িতে যেতে হবে।তাই(আমি)
:-ও।আচ্ছা,আপনাকে ছুটি দেওয়া হলো।তবে বিশদিনের নয়।পনেরো দিনের।
:-জ্বী স্যার।এখন তাহলে আসি।
:-হুমম।তবে কাজগুলো শেষ করে যাবেন।
:-হুমম।
এই বলে আমি স্যারের কেবিন থেকে বাহির হয়ে আসলাম।
আমি কখনো নিজ থেকে অফিসে ছুটি চাইনি।
আজকেই প্রথম ছুটি চাইলাম।
তাই আমাকে কোন দ্বিধা ছাড়াই স্যার ছুটি দিয়ে দিলো।
যাইহোক,আমি নিজের কেবিনে এসে কাজগুলো গুছিয়ে নিয়ে অফিস থেকে বাহির হয়ে আসলাম।
রওয়ানা দিলাম বাসার উর্দেশ্যে।
বিভিন্ন চিন্তা-ভাবনা করার মাধ্যমে আমি বাসায় পৌঁছালাম।
কলিংবেল চাপার কয়েক মুহুর্ত পর দরজা খুললো।
সামনে তাকিয়ে দেখি নিধি দাড়িয়ে।
:-আপনি আছেন তাহলে।(আমি)
:-দেখতেই তো পারছেন।(নিধি)
:-হুমম।
এই বলে আমি রুমে প্রবেশ করলাম।
:-রান্না করেছেন?(আমি)
:-হুমম।আপনি ফ্রেশ হয়ে আসেন,আমি আপনার জন্য খাবার রেডি করতেছি।
:-ওকে।
অতঃপর নিধি খাবার রেডি করতে রান্নাঘরের দিকে গেলো।
আর আমি এই ফাঁকে ড্রেস চেন্জ করে ফ্রেশ হতে ওয়াসরুমে চলে গেলাম।
ফ্রেশ হয়ে আমি খাবার টেবিলে গেলাম।
:-আপনি বসুন।আমি খাবার নিয়ে আসতেছি।
নিধি এইবলে খাবার আনতে গেলো।
আর আমি চেয়ার টেনে নিয়ে বসলাম।
কিছুসময় পর নিধি আমার জন্য খাবার নিয়ে আসলো।
:-নিন,খাওয়া শুরু করুন।(নিধি)
:-হুমম।আপনিও বসুন।(আমি)
:-আমি খেয়েছি।
:-খেয়েছেন তাতে কি?এমনি বসা যায় না?
:-…………(নিধি)
নিধি কিছু না বলে সামনে থাকা একটি চেয়ার টেনে নিয়ে তাতে বসলো।
আমিও আর কিছু না বলে খাওয়া শুরু করলাম।
:-এখনও তো সন্ধ্যা হওয়ার অনেক বাকি।আপনি আজ এত তাড়াতাড়ি অফিস থেকে চলে আসলেন যে?
আমার খাওয়ার মাঝখানে কথাটা বললো,নিধি।
:-বলবো।আগে খাওয়া শেষ হোক।(আমি)
এরপর আরও কিছুসময় নিরবতা।
:-আচ্ছা,আমার চলে যাওয়া,না যাওয়া নিয়ে আপনি এত ভাবেন কেন?(নিধি)
:-তা ও বলবো।আগে খাওয়া শেষ করি।(আমি)
:-……..(নিধি)
:-আপনি কোন আমার কথায় মনে কষ্ট নিচ্ছেন?
:-আরেহ না।
:-ও
অবশেষে খাওয়া শেষ করলাম।
:-আজ অনেকদিন পরে পেটপুরে খেলাম।(আমি)
:-তাই বুঝি?(নিধি)
:-হুমম।আসলে আপনার রান্নার হাত খুবই ভালো।
:-তাই নাকি?একদিনের রান্নায় আপনি তা বুঝে গেলেন?
:-হুমম।কেন,একদিনের রান্নায় কি বুঝা যায় না,কে ভালো রান্না করে?
:-হুমম,তা যায়।
অতঃপর নিধি আর আমি কিছুক্ষন চুপ থাকলাম।
:-আচ্ছা,আপনিতো আমায় কারণগুলো এখনও বললেন না।(নিধি)
:-কিসের কারণ?(আমি)
:-কিসের আবার,ওই যে আপনি এত তাড়াতাড়ি আসলেন যে আর আমার চলে যাওয়া না যাওয়া নিয়ে আপনার চিন্তা করার কারণ।
:-ওহহ।আচ্ছা,আমি আপনাকে কিছুই বলবো না।আপনার যা জানার,তা আপনি আমার মায়ের সাথে কথা বললেই বুঝতে পারবেন।
:-…….(নিধি)
অতঃপর আমি মোবাইল হাতে নিয়ে আম্মুর নাম্বারে ফোন দিলাম।
কিছুক্ষন রিং হয়ে আবার কেটে গেলো।
তাই আমি আবার ফোন দিলাম।
এবার রিং হতেই ফোন রিসিব হলো।
:-হ্যালো আম্মু(আমি)
:-হুমম বল(আম্মু)
:-ওর সাথে কথা বলো।
:-দে ওকে ফোনটা।
অতঃপর আমি নিধির দিকে ফোনটা বাড়িয়ে দিয়ে,
:-নিন,আম্মুর সাথে কথা বলুন।(আমি)
:-…..(নিধি)
নিধি কিছু না বলে আমার হাত থেকে মোবাইলটা নিয়ে রুমের বাহিরে বের হয়ে গেলো।
আমি আর দাড়িয়ে না থেকে আমার জামা-কাপড় গুলো গুছাতে লাগলাম।
কারণ,আমি আর নিধি আজ রাতের বাসে করে আমার গ্রামের বাড়িতে যাবো।
আমার মনে হয়,আপনারা আমার এসব কথার কোন মানেই বুঝতেছেন না।
আপনারা এসব বুঝবেন পরিস্থিতির আলোকে।
আমার সবকিছু গোছানো শেষ হলে,আমি রুমের বাহিরে গেলাম।
গিয়ে দেখি নিধি এখনো আম্মুর সাথে কথা বলছে।
আমি গিয়ে নিধির পাশে দাড়ালাম।
আমার উপস্থিতি টের পেয়ে,নিধি আমার দিকে ঘুরে তাকালো।
:-তাহলে আম্মু,আমি এখন রাখি?(নিধি)
:-হুমম,রাখো।(আম্মু)
অতঃপর নিধি ফোন রেখে আমার দিকে তাকিয়ে,আমার চোখে চোখ রাখলো।
আর ওর চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়তে লাগলো।
:-একি,আপনি…
আমি কিছু বলতে যাবো,তার আগেই নিধি আমাকে জড়িয়ে ধরলো।
আমিও ওকে দুহাতে জড়িয়ে ধরলাম।
সন্ধ্যা নেমে আসতেছে,সুর্যের আলো বিস্পোরিত হয়ে লাল আভা ছড়ানোর মাধ্যমে।আর সেই লাল আভাটা এসে নিধির মুখে পড়ার মাধ্যমে তার সৌন্দর্যতা বাড়িয়ে দিলো।
কিছুক্ষন নিধিকে জড়িয়ে ধরে থাকার পর,
:-আচ্ছা,আপনি আমার আম্মুর সাথে কথা বলার পর কি বুঝলেন?(আমি)
:-………….(নিধি)
:-কি হলো?কাঁদছেন কেন?
:-………….(নিধি)
:-কথা বলবেন না?আচ্চা ঠিক আছে,আপনার সাথে আমিও আর কোন কথাই বলবো না।
এই কথা বলে আমি নিধিকে জড়িয়ে ধরা অবস্থা থেকে ছাড়িয়ে নিলাম।
:-আপনি আমাকে ভালোবাসেন,তাই না?(নিধি)
:-হুমম।খুব ভালোবাসি।(আমি)
:-আমিও আপনাকে খুব ভালোবাসি।
এই বলে নিধি আমাকে আবার শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।
:-ছাড়বেন না তো কখনো,আমায়?(নিধি)
:-কি করে ছাড়বো বলোতো,যেখানে আমার হৃদয়টা আপনার হার্টের সাথে আটকা পড়েছে।(আমি)
:-খুবই ভালোবাসি।
:-আমিও আপনাকে খুব ভালোবাসি।এখন আপনি চাইলে,আমি আপনাকে বিয়ে করতে চাই।যদি আপনি আমার স্ত্রী হতে চান।
:-……….(নিধি)
:-কি,হবেন না আমার আগামী দিনের পথ চলার সাথী?
:-হুমম,যদি আপনি আমায় গ্রহন করেন।
:-আমি আপনাকে গ্রহন করতে প্রস্তুত।
:-আমিও।
:-তাহলে আমাকে এভাবে জড়িয়ে ধরে না থেকে,যান কাপড়-ছোপড় গুছিয়ে রেডি হয়ে নেন।আমার গুলো গুছানো শেষ,এবং আমি রেডি আছি।
:-হুমম।
এইবলে নিধি আমাকে ছেড়ে দিয়ে রুমে প্রবেশ করলো।
আমিও আর দাড়িয়ে না থেকে রুমে প্রবেশ করলাম।
:-আপনি একটু বাহিরে যানতো।(নিধি)
:-কেন?(অবাক হয়ে)
:-কেন আবার,আমি এখন ড্রেস চেন্জ করবো।
:-ও,আচ্ছা
এই বলে আমি আবারও বাহিরে চলে আসলাম।
কিছুক্ষন পর ধরেন,প্রায় দশমিনিট পর,
:-আপনার হয়েছে?(আমি)
:-হুমম,এবার আসতে পারেন।
অতঃপর আমি রুমে প্রবেশ করলাম।
:-আমরা কখন রওয়ানা দিবো?(নিধি)
:-রাতের বাসে করে রওয়ানা দিবো।(আমি)
:-তাতো বুঝলাম।কিন্তু কয়টার দিকে রওয়ানা দিবো।
:-রাত আটটার বাসে করে।
:-ওহহ।
:-হুমম,আপনি আপনার কাপড়-ছোপড় গুলো গুছিয়ে নিন।
:-আমার গুলো গুছানো আছে।
:-তাহলে আর কি?আমিও রেডি আছি।আর কিছুক্ষন পর আমরা কাউন্টাটারে উর্দেশ্য রওয়ানা দিবো।কি বলেন?
:-হুমম।আপনি বসুন,আমি চা তৈরি করে নিয়ে আসি।কি বলেন?
:-হুমম।
অতঃপর নিধি চা তৈরি করতে গেলো।
আর আমি খাটে বাসে মোবাইল টিপতে ব্যস্ত থাকলাম।
কিছুক্ষন পর নিধি চায়ের কাপ নিয়ে আসলো।
আমি তার দিকে মাথা তুলে তাকালাম।
:-নিন(নিধি)
চায়ের কাপ বাড়িয়ে দিয়ে।
:-হুমম।দেন,
অতঃপর চায়ের কাপ হাতে নিয়ে,তাতে চুমুক দিলাম।
:-আপনি কয়দিনের জন্য অফিস থেকে ছুটি নিয়েছেন?(নিধি)
:-পনেরো দিনের।(আমি)
:-ওহহ,
:-হুমম।
এরপর কিছুক্ষন নিরব থেকে,চা টা শেষ করলাম।
:-তাহলে আর বসে থেকে লাভ নেই।রওয়ানা দিই,কি বলেন?(আমি)
:-হুমম।তার আগে আমি বাসার সবকিছু গুছিয়ে নিই।
:-গুছানোর মত কিছুতো বাসায় নাই।
:-যা ই আছে।
:-…….(আমি)
আমি আর কিছু বললাম না।
এর কিছুক্ষন পর নিধি আমার সামনে আসলো।
:-আপনার সবকিছু গুছানো হয়েছে?(আমি)
:-হুমম।
:-তাহলে আর কি?চলুন আমরা রওয়ানা দিই।
:-হুমম,চলুন।
অতঃপর আমরা রওয়ানা দিলাম,বাস কাউন্টারের উর্দেশ্যে।
এখন আমরা বাসে বসে আছি।
কিছুক্ষন আগে বাস রওয়ানা দিলো তার গন্তব্যের
উর্দেশ্যে।
:-কি সুন্দর দৃশ্য,তাই না?
আমার পাশ থেকে কথাটা বললো,নিধি।
:-কিসের দৃশ্য?(আমি)
:-এই যে,বাহিরের চাঁদের আলোকিত রাতের প্রকৃতির দৃশ্য।
ওর কথা শুনে আমিও বাহিরে তাকালাম।
সত্যি বলতে কি?দৃশ্যটা খুবই সুন্দর ছিলো।
জানালার পাশে থাকলে হয়তো আমি ভালো করে তা উপভোগ করতে পারতাম না।কিন্তু নিধি জানালার পাশে থাকায়,তা সম্ভব হচ্ছে না।
:-কি হলো,কিছুই তো বলছেন না?(আমায় ঝাঁকুনি দিয়ে বললো,নিধি)
:-হুমম,খুবই সুন্দর।
:-কি?
:-বাহিরের দৃশ্যটা।
:-এতক্ষন পর বললেন যে?
:-আসলে,আমি এতক্ষন প্রকৃতির দৃশ্যে বিভোর ছিলাম।তাই।
:-ও
এভাবে ওর সাথে কথা বলতে বলতে আমি যে কখন ঘুমিয়ে পড়েছি,তা খেয়ালই নেই।
ঘুম ভাংলো মোবাইলে রিং হওয়ার শব্দে।
ঘুম ঘুম চোখে ফোন রিসিব করলাম,
:-হ্যালো(আমি)
:-কিরে কতটুকুন আসলি?(আম্মু)
:-আম্মু,আমরা এখন গাড়িতে।বলতে পারতেছি না কতটুকু এসেছি।
এই বলে আমি মোবাইলের দিকে তাকালাম।
দেখি রাত প্রায় তিনটা বাজতে চললো।
:-ওহহ,আচ্চা এখন তাহলে রাখি।
:-আচ্চা,আম্মু তোমরা এখনও ঘুমাওনি?
:-সিয়াম ঘুমিয়েছে।আমি এখনো ঘুমাইনি।
:-কি?তোমাকে এতরাত পর্যন্ত জেগে থাকতে কে বলেছে,হুমম?
:-তোরা গাড়িতে,আমি কি করে ঘুমাই?বল।
:-আম্মু,তুমি চিন্তা করো না।আমার মনে হয় আর বেশী দূরে নই আমরা।শীঘ্রই পৌঁছে যাবো।তুমি এখন কোন চিন্তা না করে ঘুমিয়ে পড়ো।
:-সেই নিয়ে তুই চিন্তা করিস না।এখন তাহলে রাখি।
:-হুমমম।
:-আচ্ছা,দাড়াতো,
:-হুম,বল কি বলবে?
:-নিধির কাছে ফোনটা দে তো।
নিধির দিকে তাকালাম।দেখি ও গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন।
:-আম্মু,ও তো এখন ঘুমে।
:-ও,আচ্চা,তাহলে রাখি।
:-হুমম।
অতঃপর আম্মু ফোন রাখলো।
দেখলেন,আমার মা এখনো ঘুমোয়নি,আমার জন্য।
সত্যি বলতে কি,সন্তান যদি কোথাও যায়,মায়ের মনটাও সাথে নিয়ে যায়।
যেমনটা আমার ক্ষেত্রে।
আমার মা এখন বাড়িতে,কিন্তু মনটা পড়ে আছে আমার কাছে।
এসব ভাবছিলাম,তখনই আমার চোখ গেলো নিধির দিকে।
নিধির দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থাকলাম।
মেয়েটা কি সুন্দরভাবে ঘুমাচ্ছে,ওর দিক থেকে আর চোখ ফেরাইতে পারছি না।
বাইরের থেকে আসা চাঁদের আলোয় মেয়েটাকে আরও অপরুপ লাগছে।
আমি ওর দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে আবার কখন যে ঘুমিয়ে গেলাম তা টেরই পেলাম না।
:-ভাই,আপনাদের গন্তব্য এসে গেছে?
আমাকে ঝাঁকুনি দিয়ে কথাটা বললো বাস কন্টাক্টর।
:-হুমম।(আমি)
:-আপনাদের গন্তব্য এসে গেছে।
:-ওহহ,
অতঃপর বাস কন্টাক্টর পেছনের দিকে গেলো।
:-এইই,উঠুন।আমরা গন্তব্য এসে গেছি।
নিধির উর্দেশ্য বললাম আমি।
:-………(নিধি)
নিধি কিছু না বলে চোখ খুললো।
:-উঠুন।
:-হুমম।
অতঃপর আমরা বাস থেকে নামলাম।
মোবাইলটা পকেট থেকে বাহির করে,সময় দেখলাম।
সকাল প্রায় ছয়টা বাজতে চললো।
:-আপনাদের বাড়ি আর কতদুর?(নিধি)
:-আর বেশী দূর না।সিএনজি তে করে যেতে প্রায় পনেরো মিনিট লাগবে।(আমি)
:-ও,কিন্তু এই সময়ে সিএনজি পাবেন কই।
নিধি কথাটা বলতে দেরী একটা সিএনজি আসতে দেরী নাই।
আমরা সিএনজিতে উঠে বসলাম।
অতঃপর রওয়ানা দিলাম আমাদের বাড়ির উর্দেশ্য।
এখন আমরা আমাদের বাড়ির সামনে।
বাড়ির উঠোনে দাড়াতেই,আমার ছোট ভাই এসে হাজির।
:-ভাইয়া,তোরা এসে গেছিস?(সিয়াম)
:-দেখতেই তো পাচ্ছিস।(আমি)
:-উনি আমার ভাবি তাই না?(সিয়াম)
:-হুমম।
এই কথা শুনে নিধি লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেললো।আর অমনি ছোটভাইটা দৌড়ে গিয়ে নিধিকে জড়িয়ে ধরলো।
:-এই হচ্ছে,(আমি)
:-সিয়াম।তাই না?(নিধি)
আমাকে থামিয়ে কথাটা বললো নিধি।
:-হুমম।সিয়াম আম্মু কোথায়?(আমি)
এই কথা শুনে সিয়াম নিধিকে ছেড়ে দিয়ে দৌড়ে ঘরে গেলো।
:-আচ্ছা,সিয়াম কোন ক্লাসে পড়ে?(নিধি)
:-ও এবার ক্লাস ফোরে পড়ে(আমি)
:-ওহহ।দেখতে খুবই কিউট।
:-তাই নাকি?দেখবেন ও আপনাকে শান্তিতে থাকতে দেয় কিনা।
তখনই আম্মু ঘর থেকে বাহির হয়ে এলো,সাথে সিয়ামও।
আমি আর নিধি গিয়ে আম্মুকে সালাম করলাম।সিয়াম আমার হাত ধরে টেনে আড়ালে নিয়ে গেলো।
:-ভাইয়া(সিয়াম)
:-হুমম,বল।
নিধি আর আম্মুর দিকে তাকানো অবস্থায়,বললাম।
:-ভাবিটা কিন্তু হেব্বি কিউট।
:-তাই নাকি?
:-হুমম।কিন্তু তোর সাথে মানাবে না।
এই বলেই দৌড়।
আর আমি ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে দাড়িয়ে থাকলাম।নিধি আর আম্মুর দিকে তাকালাম।দেখি ওরা কথা বলছে।
:-রাজু(আম্মু)
:-জ্বী আম্মু।(আমি)
:-আয়,ভেতরে।
এই বলে আম্মু নিধিকে নিয়ে ঘরে ডুকল।
আর আমিও বাইরে না দাড়িয়ে থেকে ভেতরে ডুকলাম।
আমি আমার রুমে গিয়ে ড্রেস চেন্জ করে গেলাম ওয়াসরুমে,ফ্রেস হতে।
ফ্রেশ হয়ে রুমে এসে শরীরটা বিছানার সাথে এলিয়ে দিলাম।
:-ভাইয়া?(সিয়াম)
:-…………(আমি)
:-ওই ভাইয়া?
:-কিরে কি হয়েছে?
:-কি হয়েছে মানে?তোর জন্য আমি ভাবিকে নিয়ে শফিংয়ে যেতে পারছি না।তাড়াতাড়ি উঠে পড়।
:-মানে?
:-মানে তুই বুঝতে হবে না।তোর বোঝার বয়স এখনও হয় নাই।তাড়াতাড়ি উঠে পড়।
এই বলে সিয়াম আমার রুম থেকে বাহির হয়ে গেলো।
কখন ঘুমিয়ে গেছি তা আর আমার খেয়াল নাই।
এখন সিয়াম কি বলে গেলো,তার কোন কিছুই আমি বুঝি নাই।
তাই আর বিছানায় শুয়ে না থেকে উঠে রুমের বাহিরে বের হয়ে আসলাম।
বাহিরে এসেই তো আমি অবাক।
ইতিমধ্য সব আত্মীয়-স্বজন এসে হাজির।
তাই আমি আর কিছু না ভেবে,আম্মুর নিকট গেলাম।
:-কিরে উঠেছিস?(আম্মু)
:-দেখতেই তো পাচ্ছ।আচ্চা,আম্মু এসব কি?(আমি)
:-কি সব?
:-সারা বাড়ি ভর্তি মানুষ কেন?
:-কাল যে তোর আর নিধির বিয়ে,সে জন্য তাদের অগ্রীম আসতে বলা হয়েছে।এখন তুই ফ্রেশ হয়ে নাস্তার টেবিলে গিয়ে বস।আমি নাস্তা নিয়ে আসতেছি।
:-হুমমম।
অতঃপর আমি ফ্রেশ হতে চলে আসলাম।
এতক্ষনে বুঝলাম,আসল ব্যাপারটা।
ফ্রেশ হয়ে আমি নাস্তা করার জন্য টেবিলে গিয়ে বসলাম।
:-কিই,আপনার ঘুম কেমন হলো?
এমন প্রশ্ন শুনে,আমি পেছনে তাকালাম।
দেখি নিধি দাড়িয়ে।
নিধি এসে আমার পাশে দাড়ালো।
:-ঘুম আর কই হলো?সিয়াম গিয়ে আমাকে উঠিয়ে দিলো।(আমি)
:-দশটা বাজতে চললো,আর আপনি কিনা বলছেন আপনার ঘুম হলো না।(নিধি)
:-আচ্ছা ওসব কথা বাদ।নাস্তা করেছেন?
:-না।
:-কেন?(অবাক হয়ে)
:-আপনার সাথে বসে একসাথে করবো বলে।
:-তাই বুঝি?
:-হুমম।
:-তাহলে দাড়িয়ে কেন?বসে পড়ুন।
অতঃপর নিধি আমার পাশে একটা চেয়ার টেনে নিয়ে বসলো।
তখনই আম্মু নাস্তা নিয়ে টেবিলের সামনে আসলো।
:-নিধি মা,নাও নাস্তা নাও।আর রাজু তুই ও নে।(আম্মু)
:-আম্মু তুমি নাস্তা করেছো?(আমি)
:-হুমম।আমরা নাস্তা করেছি,শুধু তুই আর নিধি মা বাদে।(আম্মু)
:-আম্মু,আপনিও বসুন না।(নিধি)
:-আরে কি যে বলো,আমি রান্না ঘরে যাচ্ছি।
এই বলে আম্মু চলে গেল রান্নাঘরের উর্দেশ্য।
এখন আমি আর নিধি বসে নাস্তা করতেছি।
:-আরে রাজু,তোরা এসে গেছিস?
পেছন থেকে কথাটা ভেসে আসলো।
আমি আর নিধি পেছনে তাকালাম।
তাকিয়ে দেখি আমার একমাত্র খালা দাড়িয়ে।
:-আরে খালা,তুমি?
এই বলে আমি চেয়ার ছেড়ে উঠছিলাম।
:-থাক,উঠা লাগবে না।বস।
এই বলে খালা আমাদের নিকটে আসলো।
:-খালা বসো।নাস্তা নাও।(আমি)
:-আরে আমি নাস্তা করে এসেছি।আচ্ছা,নিধি কই?(খালা)
:-এই তো নিধি।
নিধিকে দেখিয়ে বললাম,আমি।
:-আসসালামু আলাইকুম।(নিধি)
সালামের জবাব দিয়ে,
:-ওহহ,তুমিই নিধি।(খালা)
:-হুমম,খালা।আর ইনি হলেন আমার একমাত্র খালা।(নিধিকে উর্দেশ্য করে, আমি)
:-দুজনকে খুব মানিয়েছে।
এই বলে খালা নিধির মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন।
:-খালা,বসুন না।নাস্তা করুন।(নিধি)
:-আরে মা,বললাম তো আমি নাস্তা করে এসেছি।আচ্ছা,রাজু তোরা নাস্তা কর।আমি তোর মায়ের কাছে যাচ্ছি।আর নিধি মা,তুমি নাস্তা করে আসো।
:-জ্বী খালা।
অতঃপর খালা চলে গেলো আম্মুর কাছে।
এরপর আমি আর নিধি নাস্তা করে,নিধি গেলো রান্নাঘরের দিকে,আর আমি আমার রুমের দিকে চলে আসলাম।
আমি রুমে বসে বসে নিধির কথা ভাবতেছি।
এটুকু সময়ের মাঝে মেয়েটা কেমন সকলকে আপন করে নিয়েছে।
:-আসতে পারি?
এই কথা শুনে আমি দরজার দিকে তাকালাম।
দরজার দিকে তাকিয়েই তো আমি অবাক।
একজন নয়,দুইজন নয়,প্রায় চারজন মেয়ে আমার রুমের দরজার সামনে দাড়িয়ে।
আর এই চারজনের মধ্য তিনজন হলো আমার খালাতো ও মামাতো ভাইয়ের বউ মানে আমার ভাবি।আর একজন হলো নিধি।
:-আমার রুমে আসবেন,এতে করে অনুমতি নেওয়া লাগে নাকি?আসুন।(আমি)
:-তা,আমাদের দেবর সাহেবের কি খবর?(ভাবিগুলো রুমে প্রবেশ করতে করতে বললো)
:-খবর আর কি?রুমে বসে বসে,আপনাদের হবু ভাবির কথা ভাবতেছি।(আমি)
আমার কথাশুনে সবাই একসাথে হেসে উঠলো।
আর এতে করে নিধি লজ্জায় মাথা নিছু করে ফেলল।
সবাই এসে আমার পাশে বসলো।
মনে মনে বললাম,ভাবিগুলোর লজ্জা-শরম বলতে কিছু নাই নাকি?তা না হলে,আমার হবু বউয়ের সামনে আমার পাশে এসে বসলো কেন।
ঠিক তখনই আমার ছোটভাই সিয়াম আমার রুমে এসে হাজির।
:-ভাবি,আপনারা জানেন,আপনাদের দেবর ছোটটা আমার বিয়ের কারণে,কতটুকু ব্যস্ত সময় পার করছে?(আমি)
এই কথা বলে আমি সিয়ামের দিকে তাকালাম।
:-আমাদের ছোট দেবর কি রকম ব্যস্ত সময় পার করছে,শুনিতো।
ভাবিদের মধ্যে একজন,কথাটা বলে উঠলো।
:-আপনারা আমার ছোট ভাইয়ের ব্যস্ততার খবর শুনলে অবাক হয়ে যাবেন।(আমি)
:-তাই নাকি?(ভাবিরা)
:-দেখ ভাইয়া।তুই ভাবিদের সামনে আমার ফেস্টিজ নষ্ট করবি না।তোকে আমি জানাতে আসলাম,তোরে আম্মু ডাকছে।(সিয়াম)
:-দেখলেন তো আপনাদের দেবর কিভাবে ব্যস্ত সময় পার করছে।ওর কাজ হচ্ছে আমার জন্য,বিভিন্ন ধরনের দুঃসংবাদ আর সাথে বাঁশ নিয়ে আসা।(আমি)
:-তাতো দেখতেই পাচ্ছি।
এই বলে সকলে একসংগে হেঁসে উঠলো।
আমি ছোট ভাইয়ের দিকে তাকালাম।
দেখি,বেচারা লজ্জায় লাল হয়ে আছে।
:-আচ্ছা সিয়াম,আম্মু আমায় কেন ডাকছে?(আমি)
:-আমি কি করে জানবো।গিয়ে জেনে আয়।(সিয়াম)
:-আচ্ছা,আপনারা বসুন।আমি আসতেছি।
এই বলে রুম থেকে বাহির হয়ে,আম্মুর নিকট রওয়ানা দিলাম।
:-আম্মু?(আমি)
:-কিরে এসেছিস?(আম্মু)
:-হুমম,কেন ডেকেছো?
:-কেন আবার,তোদের বিয়ের জন্য শফিং করতে হবে না?শফিং এ যাওয়ার জন্য ডেকেছি।তুই নিধিকে নিয়ে শফিং এ যা।
:-ওহহ,আচ্ছা।
এই বলে আমি রান্নাঘর থেকে বাহির হয়ে আসলাম।
মনে মনে একটা জিনিস ভাবতে লাগলাম।
“এখন আমি যদি রুমে গিয়ে বলি,আমি আর নিধি শফিং এ যাবো,তাহলে তো সবাই আমাকে ঘিরে ধরবে,সবাইকে নিয়ে শফিং এ যাওয়ার জন্য।
কি করা যায়?
কিছুক্ষন ভাবলাম।
তারপর একটা সিদ্ধান্তে উপনীত হলাম।
সেই সিদ্ধান্তটা হলো,আমি নিধিকে ডেকে রুমের বাহিরে নিয়ে আসবো।সকলের অজান্তে রাখবো,আমি আর নিধির শফিং যাওয়ার কথাটা।বলবো,নিধিকে নিয়ে একটু বাহিরে ঘুরতে যাবো,এই বলে নিধিকে নিয়ে শফিং এ চলে যাবো।
এসব ভেবে নিয়ে আমি চলে এলাম রুমের সামনে।
রুমের ভেতরে ডুকলাম।
রুমে ডুকেই তো,আমার চোখ দুটো চড়ক গাছ।
এ আমি কি দেখলাম?
রুমে ডুকে দেখি সবাই প্রস্তুত হয়ে বসে আছে,যেন এখন কোথাও বেরুবে।
:-কি হলো দেবর সাহেব,এভাবে দাড়িয়ে আছেন কেন?
ভাবিদের মধ্য একজন কথাটা বললো।
:-না মানে আপনারা যেভাবে প্রস্তুত হয়ে বসে আছেন,মনে হচ্ছে আপনারা এখন কোথাও বেরুবেন।(আমি)
:-কোথাও বেরুবো মানে?আমরা তো এখন শফিং করতে যাবো।(ভাবি)
:-ও।তাহলে বসে আছেন কেন?আপনারা।(আমি)
:-সেকি,আপনি শফিং এ যাবেন না?(ভাবি)
:-হুমম।আমি আর নিধি একসাথে যাবো।(আমি)
:-আর আমরা?(সবাই একসাথে বললো)
:-মানে?(আমি)
:-মানে সিয়াম যে বলে গেলো,আমরা যেন শফিং এ যাওয়ার জন্য রেডি থাকি।(ভাবিরা)
:-ওহ,তাহলে আর কি?এখানে বসে না থেকে একটু বাহিরে যান।(আমি)
:-কেন?
ভাবিরা মুখ চেপে ধরে হাসতে হাসতে বললো।
:-কেন আবার,আমাকে রেডি হতে হবে না?(আমি)
:-রেডি হবেন,তাতে আমরা বসে থাকতে সমস্যা কি?
এই বলে ভাবিরা খিলখিল করে হাসতে হাসতে রুম থেকে বাহির হয়ে যেতে লাগলো।
:-সমস্যা তো নাই।আপনারা বসে থাকেন,তাহলে।
যাইহোক,আমি আর ওইদিকে মনোযোগ না দিয়ে রেডি হতে লাগলাম।
“তাহলে হারামী,না আস্ত হারামী,সিয়ামই এই কাজটা করলো।মন চাইতেছে গিয়ে কয়েকটা ওর পিঠে বসিয়ে দিই।এদেরকে শফিং এ যাওয়ার কথাটা না বললে কি ওর হতো না?
এখন এদের যে,যাওয়ার জন্য বারণ করবো,তার ওতো কোন উপায় নেই।
না থাক,বারণ করে লাভ নেই।উনারা তো আশা করে রয়েছে একসাথে শফিং এ যাওয়ার জন্য।ভেবেছিলাম,নিধিকে নিয়ে মনের সুখে শফিং করবো।কিন্তু তা আর হলো কই?”
এসব কথা মনে মনে ভাবছিলাম।
:-ভাইয়া,আমি আর ভাবিও রেডি।
পেছন থেকে কথাটা বললো,সিয়াম।
আমি পিছনে ঘুরলাম।
দেখি সিয়াম আর সাথে নিধি।
নিধি শাড়ি পড়েছে।তা ও আবার আমার প্রিয় নীল রংয়ের।
কি যে সুন্দর ওকে লাগছে,তা আপনাদের বলে বোঝাতে আমি পারবো,না।
বেশিক্ষন আর ওর দিকে তাকিয়ে থাকতে পারলাম না।
কারণ,আমার ছোট ভাই সাথে আছে।
:-সিয়াম,তুই গিয়ে ভাবিদের বল,আমরা রেডি।(আমি)
:-আচ্ছা,
এই বলে সিয়াম আমার রুম থেকে বাহির হচ্ছিলো,সাথে নিধিও।
:-আপনি কোথায় যাচ্ছেন?আপনি দাড়ান,সিয়াম উনাদের ডেকে আসুক।(আমি)
:-হুমম।(নিধি)
অতঃপর সিমায় রুম থেকে বাহির হলে,আমি নিধির কাছে গেলাম।
:-আপনাকে না,নীল শাড়িতে খুব সুন্দর লাগছে।
এই বলে আমি নিধিকে জড়িয়ে ধরে ওর গালে একটা চুমু খেয়ে,সাথে সাথে ছেড়ে দিলাম।
নিধি অবাক চোখে আমার দিকে তাকিয়ে,
:-এটা কি হলো?(নিধি)
:-যা হয়ে গেছে,তাই হলো।(আমি)
:-এটা কিন্তু,
:-ওই তো উনারা এসে গেছেন।
নিধিকে থামিয়ে আমি কথাটা বললাম।
আর অমনি নিধি পেছনে তাকালো।
ঠিক তখনই ভাবিরা আর সিয়াম এসে হাজির হলো।
:-তাহলে আর কি,দাড়িয়ে না থেকে আমরা রওয়ানা দিই।কি বলেন?(নিধির দিকে আড় চোখে তাকিয়ে বললাম,আমি)
:-হুমম।(ভাবি)
অতঃপর আম্মুকে বলে আমরা রওয়ানা দিলাম।উর্দেশ্য,শফিংমল।
দীর্ঘক্ষন গাড়ি যার্নি করার পর আমরা শফিংমলে পৌঁছালাম।
যে যার মত শফিংমলে প্রবেশ করলো।
শফিংমলে প্রবেশ করার পর সবাই প্রথমে নিধির জন্য শাড়ি পছন্দ করতে লাগলো।
প্রায় আধঘন্টা হয়ে গেলো।
কেউই নিধির জন্য স্থায়ী ভাবে শাড়ী পছন্দ করতে পারলো না।
বুঝলাম,মেয়েদের দ্বারা শাড়ী পছন্দ করা সম্ভব না।
তাই আমি গিয়ে দোকানদারকে একটি শাড়ী দেখাতে বললাম।
দোকানদার শাড়িটা বাহির করে আনলো।
সবাই শাড়িটার দিকে তাকিয়ে হা হয়ে গেলো।
:-ওয়াও,কি সুন্দর শাড়ি।নিধিকে খুব ভালই মানাবে।তাই না।
একভাবি আরেক ভাবিকে উর্দেশ করে বললো।
:-হুমম।খুব ভালো মানাবে।
এই বলে ভাবিরা নিধির গায়ে শাড়িটা জড়িয়ে ধরলো।
:-কেমন লাগছে?দেবর সাহেব।(ভাবি)
:-যেমন দেখছেন।তেমন।(আমি)
:-তা আবার কেমন?(ভাবিরা)
:-বুঝেন নাই তাহলে।বলেছি আপনাদের চোখে যেমন সুন্দর লাগছে তেমনই সুন্দর আমার চোখেও লাগছে।
আমার কথা শুনে নিধি লজ্জায় মাথানিছু করে ফেললো।
:-তবে দেবর সাহেব,আপনার কিন্তু পছন্দ আছে,বলতে হয়।(ভাবিরা)
:-কচুর পছন্দ আছে।শাড়িটা আমার মোটেই পছন্দ হয় নি।(সিয়াম)
:-কেন রে হারামী?
এই বলে আমি সিয়ামের কানটা টেনে ধরলাম।
:-ওওও,ভাইয়া ব্যথা লাগছে তো।ছাড় না।(সিয়াম)
:-ছাড়ুন না,বাচ্চা ছেলে কেঁদে দিবে।(নিধি)
:-হুমম।
এই বলে আমি সিয়ামের কানটা ছেড়ে দিলাম।
অতঃপর এক এক করে সকলের জন্য শফিং করলাম।
শফিং করার পর তার বিল মিটিয়ে,সকল ধরনের ঝামেলা শেষ করে,আমরা বাড়ির উর্দেশ্য রওয়ানা দিলাম।
আমরা বাড়িতে পৌঁছাতে পৌঁছাতে প্রায় দুপুর তিনটা বেজে গেলো।
বাড়িতে এসে যে যার মত ছড়িয়ে ছিঠিয়ে গেলো।
আমি আমার রুমে এসে ড্রেসআপ চেন্জ করে,ওয়াশরুমে ফ্রেশ হতে গেলাম।
ফ্রেশ হয়ে আমি রুমে এসে খাটে বসলাম।
:-কি হলো,খেতে না গিয়ে আপনি এখানে বসে আছেন কেন?চলুন।
রুমে ডুকতে ডুকতে কথাটা বললো,নিধি।
:-হুমম,চলুন।
এই বলে আমি আর নিধি খাবার টেবিলে গেলাম।
গিয়ে দেখি সবাই খাবার টেবিলে বসে আমার আর নিধির জন্য অপেক্ষা করছে।
আমি আর নিধি খাবার টেবিলে চেয়ার টেনে নিয়ে বসলাম।
:-কি হলো,আপনারা আমার জন্য বসে আছেন বুঝি?(আমি)
:-আমাদের বয়েই গেছে,আপনার জন্য এভাবে বসে থাকার।(ভাবিরা)
:-তাই বুঝি?(আমি)
:-হুমম।(ভাবি)
:-তাহলে কার জন্য এভাবে বসে ছিলেন?(আমি)
:-কার জন্য আবার?নিধির জন্য আমরা এতক্ষন অপেক্ষা করছিলাম।(ভাবি)
:-এই,সবাই থাম।খাবার টেবিলে এসে কেউ এত কথা বলে নাকি?(খালা)
:-নে,সবাই খাওয়া শুরু কর।(আম্মু)
অতঃপর কেউ আর কোন কথা না বলে খাওয়া শুরু করলাম।
আম্মু সকলের খাওয়া পরিবেশন করছে।
আবশ্যক,নিধি আম্মুকে বলেছিলো ও খাবার পরিবেশন করার জন্য।কিন্তু আম্মু তাকে করতে না দিয়ে নিজেই করছে।
:-আম্মু,সিয়াম কোথায়?(আমি)
:-সিয়াম বাহিরে ছেলেমেয়েদের সাথে খেলা করছে।(নিধি)
:-ওহ,আম্মু,তুমিও আমাদের সাথে খেয়ে নাও।(আমি)
:-আমি খেতে পারবো।তোরা আগে খেয়ে নে।
আমি আর কিছু না বলে,খাওয়ায় মনোযোগ দিলাম।
যাইহোক,বিভিন্ন কথা-বার্তা বলার মাঝে আমার খাওয়া শেষ হলে আমি আমার রুমে এসে বিছানায় শরীরটা এলিয়ে দিলাম।
এমনিতে আজকে সারাটাদিন যার্নির উপর যার্নি করলাম,তার উপর শরীরটা বড়ই ক্লান্ত।তাই সবকিছুর অবসান ঘটিয়ে কখন যে আমি ঘুমিয়ে গেলাম তা টেরই পেলাম না।
বাহির থেকে আসা হৈ-হুল্লোড়ের শব্দে আমার ঘুম ভেংগে গেলো।
ঘুম ভেংগে গেলে আমি আর শুয়ে না থেকে উঠে পড়লাম বিছানা থেকে।
জানালা দিয়ে বাহিরের দিকে তাকালাম।
দেখি প্রায় সন্ধ্যা নেমে এসেছে।
আমি আর রুমে না থেকে,রুম থেকে বাহির হলাম।
ওয়াশরুমের দিকে গিয়ে আমি ফ্রেশ হয়ে আবার আমি রুমে গেলাম।
রুমে প্রবেশ করে দেখি,আমার মামা,খালু খাটে বসে আছে।
আমি সালাম দিয়ে বললাম,
:-কেমন আছেন,আপনারা?(আমি)
:-ভালো।তোমার খবর কি?(সালামের জবাব দিয়ে,মামা)
:-জ্বী ভালো।তা কখন এসেছেন,আপনারা?(আমি)
:-আমরা এসেছি প্রায় ঘন্টাখানেক হবে।তোমার তালাশ করেছিলাম।কিন্তু রুমে এসে দেখি তুমি ঘুমাচ্ছ।তাই তোমাকে আর ডাকলাম না।(খালু)
:-ও,আচ্ছা,ভাইয়েরা(মামাতো-খালাতো)এসেছে?(আমি)
:-না,ওরা সকালে আসবে।(মামা)
:-আচ্ছা,তুমি রেডি হয়ে নাও।আমরা একটু বাজারে যাবো।(খালু)
:-কেন?(আমি)
:-কেন আবার,তোমার বিয়ের বাজার করতে?(মামা)
:-ওহহ,
মুখে যদিও বলেছি,মনে মনে বললাম শান্তি বোধহয় আমার কপালে নাই।
:-আচ্ছা,আপনারা বাহিরে গিয়ে দাড়ান।আমি রেডি হয়ে আসছি।(আমি)
:-হুমম।
এই বলে উনারা রুম থেকে বাহির হয়ে গেলো।
আর আমি হতভাগা রেডি হতে লাগলাম।
যাইহোক,আমার রেডি হওয়া শেষ হলে,আমি রুম থেকে বাহির হলাম।
ঠিক তখনই হন্তদন্ত হয়ে দৌঁড়ে এসে আমার সামনে দাড়ালো,আমার প্রানপ্রিয় ও শ্রদ্ধাভাজন ছোটভাই সিয়াম।
:-কি হলো সিয়াম?(আমি)
:-না,কিছুনা।(সিয়াম)
:-তাহলে এভাবে দৌঁড়ে আমার সামনে আসলি কেন?
:-এই নে,ধর।
এই বলে সিয়াম,আমার দিকে একটা কাগজ বাড়িয়ে দিলো।
আমি ওর কাছ থেকে কাগজটা নেওয়া মাত্রই,ও দৌঁড় দিয়ে আমার সামনে থেকে চলে গেলো।
মনে মনে ভাবলাম,সিয়াম আমার জন্য কোন বাঁশ নিয়ে আসলো নাতো?
এই ভাবনার উপর ভিত্তি করে আমি কাগজটার ভাঁজ খুলতে লাগলাম।
কাগজের ভাঁজ খুলেই তো আমি অবাক।
কাগজে একটা লম্বা লিস্ট করা মেয়েদের খাবারের তালিকা।যেমন ধরেন আচার,চকলেট,এই রকম প্রায় পনেরো প্রকারের খাবারের নাম।নিশ্চয় ভাবিরা পাঠিয়েছে।
যাইহোক আমি লিস্ট-পেপারটা পকেটে ডুকিয়ে মামা-খালুর খোঁজে ঘরের বাহিরে গেলাম।
বাহিরে গিয়ে দেখি,ডেকোরেটরের সব আয়োজন চলছে ধুম-ধারাক্কা।
মামা আর খালুকে পেয়ে গেলাম উঠোনে।
:-মামা,চলুন।(আমি)
:-হুমম,চল।(মামা)
অতঃপর আমরা তিনজন রওয়ানা দিলাম।
উর্দেশ্য বাজারের।
:-তো খালু,বাজার তো করা শেষ।(আমি)
:-হুমম।(খালু)
:-তাহলে আর কি?বাজারগুলো একটি গাড়িতে উঠিয়ে দিয়ে,আমরা বাড়ির দিকে রওয়ানা দিই।(মামা)
:-হুমম।(আমি)
অতঃপর বাজারগুলো একটি গাড়িতে উঠিয়ে দিয়ে,
:-মামা আপনারা গাড়িতে করে চলে যান।আমি একটু পর আসছি।(আমি)
:-কেন?বাজারে কোন কাজ আছে নাকি?(মামা)
:-তেমন কিছু না।আপনারা যান।আমি আসতেছি।(আমি)
:-আচ্ছা,তাড়াতাড়ি চলে এসো।তোমার আবার হলুদ হবে না।(মামা)
:-হুমম।
অতঃপর মামারা বাড়ির দিকে রওয়ানা দিলে,আমি পকেট থেকে সিয়ামের দেওয়া লিস্টটা নিয়ে,লিস্টে লেখা সবকিছু নিলাম।
:-কিরে ভাইয়া,এনেছিস?
বাড়ির উঠোনে এসে দাড়ানো মাত্র কথাটা বললো,সিয়াম।
:-কি?(না জানার ভান করে,আমি)
:-কি আবার?তোকে যে আমি একটা কাগজ দিয়েছি?(সিয়াম)
:-কাগজই তো দিলি।আমাকে তো কিছু আনতে বলিস নাই।(আমি)
:-ভাইয়া,তুই আমার সাথে ভাব করিস না।হাতদুটো সামনে আন।
এই বলে সিয়াম আমার পিছনে গেলো।
:-এই তো এনেছিস।দে।
:-দিবো।তার আগে বল এসব আনতে কে বলেছে?
:-কে আবার?নিধি ভাবি।
:-তাই নাকি?তাহলে আমি গিয়ে তাকে দিবো।তোকে দিবো না।
:-সত্যি বলতে কি,ভাইয়া,ভাবিরা মিলে এই লিস্টটা তৈরি করে আমার হাতে দিয়ে বললো,আমি যেন তোমার হাতে দিই।
:-ওহ,
:-এবারতো দে।
:-হুমম,নে।
এই বলে আমি সিয়ামকে পুঁটলিটা দিয়ে দিলাম।
আমি আর বাহিরে দাড়িয়ে না থেকে ঘরে ডুকলাম।যেহেতু কিছুক্ষন পর আমার আর নিধির গায়ে হলুদের অনুষ্টান শুরু হবে।
যাইহোক,আমি ঘরে ডুকা মাত্রই ভাবিরা সবগুলো আমার সামনে এসে উপস্থিত।
:-কি হলো,আপনারা কিছু বলবেন?(আমি)
:-হুমম। (ভাবিরা)
:-তাহলে বলুন।
:-কিছুক্ষন পর আপনার গায়ে হলুদ।আপনাকে প্রস্তুতি হয়ে নিতে বলতে আসলাম।
:-ওহ,আচ্চা নিধি কোথায়?
:-কেন?তর সইছে না বুঝি?
:-আসলে তা না।
:-সে আপনাকে বলতে হবে না দেবর সাহেব।আমরা বুঝি তো।(ভাবি)
:-বুঝলেই ভালো।(আমি)
এই বলে আমি আমার রুমের দিকে হাঁটা দিলাম।
:-নিধিকে কিন্তু সাজানো হয়ে গিয়েছে,দেবর সাহেব।
এই বলে ভাবিরা একসাথে হাসা শুরু করলো।
আমি আর পেছনে তাকালাম না।
সকল ধরনের নিয়ম-কানুন,হাসি-আনন্দ,দুষ্টমি করার মাধ্যমে আমার আর নিধির গায়ে হলুদের পর্ব শেষ হলো।
এখন প্রায় রাত বারোটা বাজতে চললো।
যে যার মত ঘুমানোর প্রস্ততি নিতে লাগলো।
আমিও আর দাড়িয়ে না থেকে ফ্রেশ হতে গেলাম।
ফ্রেশ হয়ে রুমে আসলাম।
দেখি সিয়াম ইতিমধ্য আমার বিছানা দখল করে ঘুমিয়ে আছে।
আমি ওকে একপাশে শুইয়ে দিয়ে আমিও শুয়ে পড়লাম।
সকালে আমার ঘুম ভাংলো আম্মুর ডাকে।
ঘুম ভাংলে আমি বিছানায় শুয়ে না থেকে উঠে পড়লাম।
পাশে তাকিয়ে দেখি সিয়াম এখনো ঘুমাচ্ছে।
ওকে না জাগিয়ে আমি ফ্রেশ হওয়ার জন্য রুম থেকে বাহির হলাম।
অমনি কোথায় থেকে ভাবিরা আমার সামনে এসে হাজির।
:-কি হলো?আপনারা এখানে যে?(আমি)
:-আপনার আম্মু আমাদের পাঠিয়েছে।(ভাবিদের মধ্য একজন কথাটা বলল)
:-কেন?(অবাক হয়ে)
:-আপনাকে গোসল করাতে নিয়ে যাওয়ার জন্য।
:-কিইই?
:-হুমম।
:-আপনারা এখান থেকে যানতো।আমি নিজেও গোসল করতে পারবো।
:-তো আপনাকে গোসল করাবে কে?আপনি নিজেই তো গোসল করবেন।শুধু আপনাকে কিছু নিয়ম মেনে গোসল করতে হবে।
এই বলে সবাই হিহিহি করে হাসা শুরু করলো।
:-ওহহ,আচ্চা আপনারা যান আমি আসছি।
অতঃপর অনেকগুলো নিয়ম-কানুন পালনের মাধ্যমে আমি গোসল সেরে নিলাম।
এভাবে একের পর এক,নিয়ম-কানুন পালন করার মাধ্যমে,বিয়ের কার্যক্রম এবং আনুষ্টানিকতা দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলেছে।
অবশেষে আর কি?
আমি নিধিকে বিয়ে করতে সক্ষম হয়েছি।
কিছুক্ষন আগে তিন কবুল বলার মাধ্যমে আমি নিধিকে বিয়ে করলাম।
সবাই এখন নিধিকে ঘরে তুলার জন্য ব্যস্ত।
এখানেও নাকি অনেকগুলো নিয়ম-কানুন পালন করতে হবে।তাই আর কি।
সবধরনের ঝামেলা প্রায় শেষ।
ঘড়ির দিকে তাকালাম।
দেখি রাত এগারোটা বাজতে চললো।
আমার মনে হয়,আমাকে এখন বাসরঘরে যাওয়া উচিত।
কারণ গতকাল থেকে এই পর্যন্ত আমি নিধিকে একবারো দেখার সুযোগ পাইনি।
আবশ্যক আরেকটু আগে আমি রুমের সামনে থেকে ঘুরে এসেছিলাম।
তখন পুরো রুম ভর্তি মানুষ ছিলো।
এখন আর কোন ঝামেলাই নাই।
:-ওরে মা রে,
এই বলে আমি ফ্লোরে পড়ে গেলাম।
অমনি পেছন থেকে অনেকের হাসি একসাথে আমার কানে ভেসে এলো।
পেছনে তাকালাম।
দেখি ভাবিরা সবাই দাড়িয়ে খিলখিল করে হাসছে।
:-এটা কি হলো?
ফ্লোর থেকে দাড়াতে দাড়াতে কথাটা বললাম,আমি।
:-কি আবার হলো?আপনি পড়ে গেলেন।(ভাবিরা)
:-কিন্তু আপনারা আমায় ধাক্কা দিলেন কেন?(আমি)
:-আপনি ভেতরে না ডুকে,এখানে দাড়িয়ে আছেন কেন?তাই ধাক্কা দিলাম।
:-কি করবো বলেন?ভেতরে ডুকার সাহস পাচ্ছি না যে।
:-হি হি হি,সব ছেলেরাই দেখছি একরকম।(ভাবিরা)
:-মানে?
:-মানে,তোমার ভাইয়েরাও আমাদের বাসর রাতের সময় এমনটা করেছিলো।
:-তাই বুঝি?
:-হুমম।
:-কিন্তু আমার ক্ষেত্রে আলাদা।দেখুন আমি কি ভাবে রুমে প্রবেশ করি।
এই বলে আমি দরজার সামনে গিয়ে দাড়ালাম।
:-সেটা এখনই দেখা যাবে।
এই বলে উনারা এক সংগে হাসা শুরু করলো।
“না,ভাবিদের সামনে মান-সম্মান হারানো যাবে না।”
এই বলে দিলাম দরজায় ধাক্কা।
সাথে সাথে দরজা খুলে গেলো।
:-ও,মা রে,গেলাম,
এই বলেই,আমি যেই পড়ে যাচ্ছিলাম,অমনি কেউ আমায় জড়িয়ে ধরল।
:-হ্যাপি বাসররাত,দেবর-ভাবি।
এই বলে হাসতে হাসতে দরজা বাহির থেকে লাগিয়ে দিলো,ভাবিরা।
:-কি হলো,এভাবে পড়ে যাচ্ছিলেন কেন?
জড়িয়ে ধরা অবস্থায় কথাটা বলল,নিধি।
হ্যা,নিধিই আমাকে জড়িয়ে ধরলো।
:-আসলে,ভাবিরা ধাক্কা মেরেছিলো তো তাই।
এই বলে আমি সোজা হয়ে দাড়ালাম।
:-ওহহহ,
:-হুমম।
:-চলুন খাটে গিয়ে বসি।
:-হুমম।
অতঃপর আমি আর নিধি খাটে গিয়ে বসলাম।
:-আচ্চা,নিধি।এখন থেকে আমরা স্বামী-স্ত্রী,তাই না?(আমি)
:-হুমম(নিধি)
:-তাহলে আমরা আপনি শব্দটা বাদ দিয়ে,তুমি করে বলি?
:-হুমম।
এরপর কিছুক্ষন নিরবতা।
কি বলবো কিছুই ভেবে পাচ্ছি না।
:-দেখলে নিধি,কি থেকে কি হয়ে গেলো?(আমি)
:-মানে?(নিধি)
:-মানে হলো,তুমি হঠাৎ করে আমার জীবনে আসলে।আর আজ থেকে তুমি আমার স্ত্রী।মাঝখানে হাতে গোনা কয়েকটা দিন।যেখানে আমি তোমাকে কখনো দেখিই নাই।অথচ,আজ কি থেকে কি?
এই বলে আমি নিধির হাতের উপর হাত রাখলাম।ওর দিকে তাকালাম।
:-একি তুমি কাঁদছো কেন?(আমি)
:-আপনার মত একজন কে আমার জীবনসংগী এবং স্বামী হিসেবে পেয়ে সত্যিই আমি ধন্য।আপনি যদি আমায় আশ্রয়,,,
ওর মুখে হাত দিয়ে,
:-এভাবে আর কখনো বলবে না।ঠিক আছে?
এই বলে আমি নিধিকে জড়িয়ে ধরলাম।আর নিধিও আমাকে।
এভাবে বেশকিছুক্ষন জড়িয়ে থাকার পর,
:-নিধি
:-হুমম,
:-তুমি আমাকে স্বামী হিসেবে মেনেছ তো?
:-আপনি এসব কি যে বলেন?
:-তা না হলে তুমি এখনো আমায় আপনি করে বলছো কেন?
:-আর এমন হবে না।
:-মনে থাকে যেন।
এই বলে আমি নিধির কপালে একটা চুমু খেলাম।
অতঃপর,বাকিটা………….।
…………………………………….((সমাপ্ত))……………………………………