ভালোবাসি মৌমিতা

ভালোবাসি মৌমিতা

বাবা আমার বিয়ের জন্য মেয়ে ঠিক করেছে, তার বন্ধুর মেয়ের সাথে। দিন ক্ষন সব ঠিক, অল্প বিস্তর আত্মীয়কেও নিমন্তন্ন করা শেষ । এদিকে মৌমিতা’র হঠাৎ বিয়ে হওয়ায় শোকে কাতর হয়ে আছি। বার কয়েক ভেবেছিলাম আত্মহত্যা করি, কিন্তু আত্মহত্যা করলে তো আমার এ কূল ও কূল দুকূলই শেষ! তাই ওটা ভাবনা বাদ । মৌমিতাকে হারিয়ে এমনিতেই দিন কাল খারাপ যাচ্ছে আমার – এখন বিয়ে করে অপরিচিত মেয়ে ঘরে এনে আগুনে ঝাপ দেই আর কি! বাবা অবশ্য জানে না যে আমি প্রেমিকা হারোনোর বিরহ আগুনে পুড়ছি! বাবা বলতেই, জবাব দিয়েছিলাম “এখন বিয়ে করবো না বাবা”।
এরপর কি? আমি যতই না বলি, বাবা তত চেপে ধরে। বাধ্য হয়েই হ্যা বলতে হলো। রাজি হতেই বাবা’র আদেশ এলো –
– কাল মেয়ে দেখতে যাবি। মেয়ে তোর পছন্দ হয় কিনা দেখবি না!
– বিয়ে’র দিন ক্ষন ঠিক করে, আত্মীয় স্বজনকে দাওয়াত দিয়ে এসে এখন বলছো মেয়ে পছন্দ হয় কি না দেখে আসতে! এখন আমি যদি এসে বলি মেয়ে পছন্দ হয় নি , তাহলে কি হবে?
– বিয়ে হবে।
– কার সাথে?
– ঐ মেয়ের সাথেই।
– পছন্দ হলেও বিয়ে, না হলেও বিয়ে! তাহলে কি দরকার যাওয়ার।
– তবু যেতে হবে।
– যাবো না।
– আমি বলছি যাবি।
বাবার সাথে তর্কে যাওয়াটা আমার কাজ নয়! তর্কে হেরে যাবো শু নিশ্চিৎ। তার চেয়ে মেনে নেই। দেখেই আসি গিয়ে কেমন মেয়ে? ছোট বোন পল্লবী অবশ্য দেখে এসেছে মায়ের সাথে গিয়ে । ও আমার ঘড়ে এসে বিটিভির সংবাদ পাঠকের মতো ঐ মেয়ের সম্পর্কে যা কিছু জানে সব আমাকে বলে গেছে। শুধু নামটাই বলে নি, ওটা না কি টপ সিক্রেট, আমাকেই জেনে নিতে হবে! ধারনা পেয়েছি মেয়েটি গাঁয়ের রঙ উজ্জল শ্যামা, লম্বা – সুন্দরী।
শ্যামা মেয়েরা বরাবরই আমার পছন্দের।
– আরে তুই?
হবু স্ত্রীকে দেখার জন্য বাবার বন্ধুর বাড়িতে মানে হবু শ্বশুড় বাড়িতে এসে একটা ঘরে একা বসে আছি, মানে শ্বশুড় মশাই আর শ্বাশুড়ি আম্মা আমাকে বসিয়ে রেখে গেছে। শ্বশুড় মশাই কাকে যেন ডাকতে গেছে , শ্বাশুড়ি বোধহয় রান্নাঘড়ে! যাকে দেখতে এসেছি তাকেও দেখি নি। কিন্তু তার কথাই ভাবছি । হঠাৎ কেউ একজন এসে এভাবেই আমাকে সম্বোধন করলো । ভাবলাম পরিচিত কেউ হবে! আমি বিপুল আগ্রহে বিষ্মিত হয়ে তাকিয়ে দেখলাম এক মাঝ বয়সী মহিলা! কিন্তু চিনতে পারলাম না ।
– কেমন আছিস? কি করছিস এখন? তোদের বাড়িতে সবাই ভালো আছে তো? তোর অমন ঢ্যাংগা গুলোর মতো চেহারা হয়েছে ক্যান? কিছু বলছিস না যে?
মেয়ে দেখতে এসে কি ফাপরে পড়লাম রে বাপ! ইচ্ছে হচ্ছে চিৎকার করে গালি দিয়ে বাপের চৌদ্দগুষ্ঠিকে উদ্ধার করি! কিন্তু পারছি না, ভদ্রতা রক্ষার্থে। এতক্ষনে ঘড়ে এসে বসেছে একজন বৃদ্ধ, দুজন মাঝ বয়সি মহিলা । একটা আট ন বছরের ছেলে । এতগুলো মানুষের সামনে বাপের চৌদ্দগুষ্ঠিকে গালি দেয়া শোভন হবে না ভেবেই চুপ করে থাকলাম। তাছাড়া এটা বাপের বন্ধুর বাড়ি সেই সাথে তার হবু বিয়াইয়ের বাড়িও বটে!
মহিলা যেভাবে আমাকে দেখার পর হতে তুই তোরাকি শুরু করছে, তাতে আমি ওনার ন্যাংটা কালের বন্ধু! ছোট বেলায় বুঝি এক সাথে জামাই-বউ খেলতাম! তবু আমি শুধু ভালো, হুম বলেই জবাব দিচ্ছিলাম।
– বলেছিলি বিয়ে করেছিস ! তোর বউয়ের ফটোও দেখিয়েছিলি! সে বউটাকে তালাক দিয়েছিস না মারা গেছে? ঘটনা কি?
চিনি না, জানি না এমন একজন মহিলা যদি জবাব না পাওয়ার পরেও তুই তোরাকি করে প্রশ্নের পর প্রশ্ন করতেই থাকে, আর সে প্রশ্নে যদি মিথ্যা অভিযোগ তোলে তখন আর চুপ থাকা যায় না। কি ভেবেছে মহিলা? রেগে গেলাম এবার, প্রচন্ড রাগ।
– শোনেন খালাম্মা, আমি শুধু বিয়েই করিনি , নাতি নাতনীকেও বিয়ে দিয়ে দিয়েছি! আর সে বউটা মারা গেছে গেল শীতে। ঝড়ে আকাশ হতে চাঁদ তার মাথার উপর পড়েছিল, তার পর শ্যাষ। এখন আপনাকে শ্রাদ্ধের দাওয়াত দিতে এসেছি। আমাদের বাড়িতে গিয়ে মাথা ন্যাড়া করে শ্রাদ্ধ খেয়ে আসবেন। শ্রাদ্ধের দিন পর্যন্ত বেঁচে থাকুন এই দোয়াই করি। তাহলে আজকে উঠি।
কথাগুলো বলা শেষ করেই আর দেরি করলাম। যে জন্য আসা তা তো হলোই না, বরং রাগ করে ঘর হতে বের হয়ে বাড়ির পথ ধরলাম । এছাড়া আর উপায় কি? পেছনে বেশ কয়েকজন চেষ্টা করেছিল থামাতে – আমি রেগে গেলে বাপের কথাও মানি না ওরা তা জানে না! ওদের কথা শুনবো কোন দু:খে?
এ বাড়িতে যদি বিয়ে করি, তাহলে আমার নাম …! বেশ বড় একটা শপথ নিলাম। কিন্তু ঘটনা কি? মহিলা বিয়ের কথা বলছিল কেন? আমি আবার কবে বিয়ে করলাম? হয় মহিলা পাগল, নয়তো আমাকে অন্য কেউ ভেবেছে, নয়তো আমি সত্যিই বিয়ে করেছিলাম। কিন্তু তা কি করে সম্ভব?

মেয়ে দেখতে গিয়ে, মেয়ে না দেখেই রাগ করে ফিরে আসাতে বাবা যে কি রিয়েক্ট করবে ভাবতেই শিহরিত হলাম। অবশ্য আমি ছোট নই এখন, যে বাবা আমাকে লাঠিপেঠা করবে। তবে বাবা তার যুবক ছেলেকে লাঠিপেঠা না করলেও মুখের বিষ বর্ষন করে শায়েস্তা করবেন আমি নিশ্চিৎ। পিঠে লাঠির বারি পড়লে পড়ুক, সহ্য হবে। কিন্তু কথারচোট অসহ্য আমার।
বাড়ির আঙ্গিনায় পা দিতেই ছোট বোন পল্লবী এক প্রকার দৌড়ে সামনে এলো। সে হয়তো অপেক্ষায় ছিল কতক্ষণে আমি বাড়ি ফিরি!
– ভাইয়া আব্বু খুব রেগে আছে তোর উপর।
– কেন আমি আবার কি করলাম?
– কিছু করিস নি? তুই নাকি বিয়ে করেছিস- আব্বুর বন্ধু ফোন দিয়ে আব্বুকে বলেছে সে কথা। তার ছেলের বউ না কি তোর বান্ধবী। সে তোকে তোর সেই বউ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করায় তুই না কি রাগ করে চলে এসেছিস!
– একটা মাঝ বয়সী মহিলা আমার বান্ধবী! আর বাবা বিশ্বাস করেছে যে সত্যিই আমি বিয়ে করেছি?
ঐ মহিলা মাঝ বয়সী! জন্মে বোধ হয় প্রথম দেখলাম আজই , আবার সে না কি আমার বান্ধবী! ইচ্ছে হলো নিজের গলা নিজে টিপে ধরে নরক পর্যন্ত অগ্রসর হই! মৌমিতা’র বিরহে মরতে চেয়েও মরি নি যখন, তাই এখনো পারলাম না!
– করতেও তো পারিস! তুই গোপনে বিয়ে করে থাকলে তা আমরা কেমন করে জানবো! অনেক দিন বাইরে থেকে লেখাপড়া করেছিস ! তোকে বিশ্বাস করতে হবে কেন?
এ্যা বলে কি? বাড়ির বাইরে থেকে পড়ালেখা করেছি বলে কি আমাকে বিশ্বাস করা যাবে না! ইচ্ছে হলো সজোড়ে ওর দুগালে দুটো থাপ্পর লাগিয়ে দি। আজকাল আমার ইচ্ছেশক্তি বৃদ্ধি পাচ্ছে দেখছি- কিন্তু কি করার, ইচ্ছে হলেও তা পূরনের সামর্থ্য নাই। নিজেকে সংযত রাখলাম, একটা অপরাধ করে ফিরেছি, এখন যদি বাবার আদরের মেয়ের গালে দু দশটা আঙুলের ছাপ দিয়ে দেই তাহলে বাড়িতে আমার জন্য ভাতই বন্ধ করে দিবেন বাড়ির মহাজন শ্রাদ্ধেয় বাবা। প্রত্যেক বাবাই তার মেয়েকে তার ছেলের চেয়ে একটু বেশিই ভালোবাসে। আমাদের বাড়িতে আমি হাড়ে হাড়ে বুঝতে পারি সেটা।
– পাবনা যাবো, তোর কাছে টাকা হবে?
– পাবনা কেন? ভাবির বাসা?
– হ, তোর ভাবি পাগলদের নার্স, ওখানে তার সাথে পিরিত করবো – আর কি করবো জানিস? গলার সাথে দড়ি প্যাঁচিয়ে গাছের ডালে বেধে দোলনায় যেভাবে দোলে, অমন করে দুলবো! তুই খুশি হবি তো?
– পাগলের মতো কি বলছিস আবোল তাবোল? বাদ দে এসব, ভাইয়া বলতো, তুই সত্যিই বিয়ে করেছিস?
– হুম, দশ বারোটা ছেলে মেয়েও আছে! সব বড় মেয়েটার বিয়ে দিয়েছি সেদিন, সে কি কান্না- বিয়ে হয়ে গেল অথচ সে তার ফুফু কেই দেখলো না আজো! যাস তো মেয়েটার বাড়ি! তোকে দেখলে খুব খুশি হবে!
না এর সাথে আঙিনায় দাড়িয়ে প্যাচালের কোন মানে হয় না। ঘরে গিয়ে পোশাক বদল করে, ফ্রেস হয়ে নি। বাবা’র ঘরে যে কোন মহুর্তে ডাক পরবে আমার। যথা সময়ে উপস্থিত না হলে তার জন্যেও কথার বিষ ছড়াবে!
ঘরে চলে এসেছি, ঠিক তখনই বাবার ডাক শুনতে পেলাম।
– সিদ্দিক, আমার ঘরে আয়।
রংপুর চিড়িখানায় জলহস্তী দেখেছিলাম, এখন ঠিক জলহস্তির সামনে বসে আছি। এত্ত মোটা মানুষ হয় আমার জীবনে প্রথম দেখছি! ব্যাটা খায় কি? একটা আস্ত গরুর রোষ্ট এক বসাতেই সাবাড় করে নিশ্চই! তা না হলে অমন চেহারা হবে কেন? লোকটা মৌমিতার মামা।
মৌমিতা! এ মেয়ের নামও মৌমিতা! প্রথম শুনে প্রচন্ড অবাক হয়েছিলাম। এক মৌমিতার সাথে দু বছর প্রেম করেও তাকে পেলাম না, অন্য একজন বিয়ে করে নিয়ে গেছে! এ মৌমিতা’র সাথে আমার বিয়ে’র দিন তারিখ সব ঠিক করার পরেও তা ভেঙ্গে গেল। বিয়ে হচ্ছে না আর। বিবাহিত ছেলের সাথে মেয়ে বিয়ে দিবে না তারা।
না দিক, তাতে সমস্যা নাই। কিন্তু আমি যে বিবাহিত সেটা যখন বিয়ে ভাঙার কারন হিসেবে দেখিয়েছে, তখন তাদের কাছ হতে জেনে নিতেই হবে কবে কোথায় কাকে বিয়ে করলাম? কারন আমি বিয়ে করি নি। মিথ্যে অভিযোগ আনলে তা মানবো কেন? কপাল খারাপ যে তাদের সে অভিযোগ যে সত্য নয় শতবার চেষ্টা করেও বাবাকে বোঝাতে পারি নি । বাবা’র এক কথা তার বন্ধু মিথ্যে বলে না না কখনো। তাই আজ এসেছি আবার, আমার প্রশ্নের জবাব পেতে। ঐ আমার কথিত বান্ধবী মহিলার কাছ হতে জেনে নিবো বিয়ে করলাম কবে? আর কাকে বিয়ে করেছি!
এসেই জলহস্তির সাথে দেখা। দেখেই বুঝলাম এ বাড়িতে তাকে খুব মান্য করা হয়। আশে পাশে অবশ্য বাড়ির অন্য সদস্যরাও আছে, মৌমিতার বাবা, ওর মা, সেই আমার কথিত বান্ধবী নাম্নী মহিলা যে মৌমিতার ভাবী ! মৌমিতাও আছে, তার ভাবীর পাশেই বসে আছে আড়ষ্ট হয়ে। হয়তো যে ছেলের সাথে তার বিয়ে হবার কথা ছিল তার সামনে বসে থাকতে তার লজ্জা হচ্ছে, তবে আমি তার দিকে না তাকালেও বুঝতে পারছি তার চোখ আমাকে দেখছে।
– বিয়ের ব্যাপারে কথা বলতে আসো নি তাহলে কি জন্য এসেছো ?
জলহস্তী তার বিকট স্বরে জিজ্ঞেস করলো। আমি শান্ত স্বরে- মৌমিতা’র ভাবির দিকে দির্দেশ করে বললাম,
– ওনার কাছে জানতে এসেছি ।
– কি জানতে এসেছো ?
না প্রায় ত্রিশ মিনিট হতে ওনার নানান প্রশ্নের জবাব দিচ্ছি, কাজের কাজ কিচ্ছু হচ্ছে না। ক্রমেই রেগে যাচ্ছি। এত প্রশ্নের কোন মানে হয়?
– মাফ করেন, আপনার সাথে অনেক কথাই হলো, এখন ওনার সাথে কথা বলে কয়েকটা প্রশ্নের জবাব পেলেই চলে যাবো। তো আশা করি বুঝতে পেরেছেন। আপনার সাথে কথা বলার জন্য আসি নি এখানে। গতকাল বাবা জোড় করে পাঠালো এ বাড়িতে মেয়ে দেখতে। উনি এসে হঠাৎ নানান প্রশ্নের মাঝে জানতে চাইলেন, আমার আগের বউ তালাক দিয়েছি না মারা গেছে! আমি বিয়ে না করতেই বউ আসে কোথা হতে? তালাক বা মরার খবর পরে? চিনি না জানি না – এখানে আসার পর হতে ওনার তুই তোরাকি মিথ্যাচার সহ্য হয়নি, রাগ করে চলে গেছি। বাড়ি গিয়ে শুনলাম এখান হতে ফোন দিয়ে বলা হয়েছে আমার সাথে মেয়ে বিয়ে দিবেন না! ভালো কথা। কিন্তু কারন কি, কারন না কি আমি বিবাহিত। আর আমাদের বাড়িতে সবাই এই কথাটাই বিশ্বাস করে বসে আছে! তো এখন ওনার সাথে কথা বলবো না আপনার ঘন্টার পর ঘন্টা প্রশ্নের জবাব দিয়ে যাবো?
আমার কন্ঠস্বরে স্পষ্ট রাগ ছিল, জলহস্তি তার আসনে নড়েচড়ে উঠলো। কাঠের আসন, তার নড়াচড়াতে শব্দ করে প্রতিবাদ করে উঠলো।
– ভাইজান আপনাকে কিছু জিজ্ঞেস করার দরকার নাই। বাবা তুমি তোমার যা জানার জেনে নাও।
মৌমিতার বাবা বললে, এতক্ষন প্রশ্নোত্তর পর্বের সমাপ্তি ঘটিয়ে। জলহস্তির মুখে শোকের ছায়া পড়লো।
– আপনি বলেছেন, আমি না কি আপনার বন্ধু! অথচ আমি তো আপনাকে চিনতেই পারছি না! আপনি কে?
এবার মৌমিতার ভাবির কাছে জানতে চাইলাম।
– আমাকে চিনিস নি! আমি মায়া !
– কোন মায়া ?
প্রথমে মহিলা বিষ্মিত হয়েছিল। কিন্তু নাম বলার পরেও চিনতে না পারায় এবার যেন আকাশ হতে জমিনে টুপ করে পড়লো! হতভম্ব মুখ নিয়ে কিছুক্ষন আমার দিকে তাকিয়ে রইলো। তার পর নরম স্বরে জানতে চাইলো,
– আপনি কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজের ছাত্র ছিলেন না?
– হ্যা ছিলাম।
– ১২ সালের এইচ.এস.সি পরীক্ষার্থী?
– হ্যা।
– আমিও । আমি মায়া, ভুলে গেছিস?
মায়! সেই মায়া ? পাট খড়ির মতো চেহারার একটা মেয়ে, সে হেটে আসতেছে – তা দেখে আমরা মন্তব্য করতাম একটু জোড়ে বাতাস হলেই তো বাতাসের সাথে উড়ে যাবি রে ! সেই মায়ার সাথে এ মায়ার মিল কোথায়? আকাশ জমিন তফাৎ! বেশ মুটি হয়ে গেছে! আগের মুখ – শরীরের সাথে বর্তমানের কোন মিল নেই! থাকলেও পাঁচ বছরের ব্যবধানে ভুলে গেছি। আমি প্রথম হতেই ভেবে বসে আছি মাঝ বয়সি মহিলা! মনে মনে নিজেকে বললুম স্রষ্টা মহিলাদের বয়স বোঝার ক্ষমতা আমাকে দেন নি।
– কিন্তু ওর তো এমন চেহারা ছিল না? পাট খড়ি….
– সারা জীবন কি চেহারা মানুষের একই রকম থাকে? তাছাড়া বিয়ে পর সব মেয়েদেরই চেহারায় পরিবর্ত আসে। তুই কিন্তু আগের মতোই আছিস। নো পরিবর্তন।
যে রাগ ছিল মহুর্তেই তা হারিয়ে গেল। ইন্টারমিডিয়েট লাইফে বলা চলে ভালো বন্ধুই ছিলাম আমারা! অনেক দিন পর দেখা, হোক না তা ভিন্নভাবে, ভিন্ন পরিবেশে, তবু কি বান্ধবীর উপর রেগে থাকা যায়?
– সব ঠিক আছে! কিন্তু আমি বিয়ে করলাম কবে?
-এইচ.এস.সি পরীক্ষা পর তোর সাথে একবার দেখা হলো। জানতে চাইলাম কি করেছিস। বললি বিয়ে করেছিস। বললাম বিশ্বাস করি না। তুই একসাথে দুটো মেয়ের ছবি দেখিয়ে – একটার দিকে ইশারা করে বলেছিলি সে তোর বউ! অবশ্য বিশ্বাস করি নি তখন!
– আর এত বছর পর আমাকে দেখে বিশ্বাস হলো বিয়ে করেছি? হারুনকে চিনিস?
– তোর খালা’ত ভাই?
– হুম। ঐ ছবির একজন ছিল পল্লবী, অন্যজন যাকে দেখিয়েছিলাম সে ছিল হারুনের স্ত্রী। সেই পাঁচ বছর আগের মজা করার জন্য একটা মিথ্যে যে এত বছর পর এসে এভাবে আমাকে প্যাচে ফেলবে জানলে কখনোই মিথ্যা বলতাম না। কখনোই না।
না কিছুই বললো না সে। সবাই শুনছিল এতক্ষন। জলহস্তী কেশে উঠলো। বুঝলাম কিছু বলতে চায়।
– তাহলে এই ব্যাপার?
– হুম। কি, অনেক বিরক্ত করলাম আপনাদের। ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। তাহলে আসি।
– আসি মানে? খেয়ে তবেই যাবেন।
আমি আসি বলে দাড়িয়েছি, কেউ কাছু বলার আগেই মৌমিতা বললো। ওর দিকে তাকিয়ে দেখলাম ততোক্ষনে লজ্জায় মুখ নিচু করে ফেলছে। এখান হতে উঠে পালায়ে যেতে পারলেই বাঁচে! আর সকলেও ওর দিকে তাকিয়েছে। অবাক হয়েছে তারা, অবশ্য অবাক হবারই কথা, বিয়ে হওয়ার কথা ছিল তা ভেঙে গেছে, এখন তাদের মেয়েই কি না সেই ছেলেকে খেয়ে যেতে বলছে!
– ঠিকই বলছে, না খেয়ে কোথাও যাওয়া হচ্ছে না বাপু! যা হয়েছে ভুলে যাও। তোমার বাবা আমার সবচেয়ে প্রিয় বন্ধু বুঝেছো?
কি আর, খেয়েই যাবো। অবশ্য মৌমিতার প্রেমে পড়ে গেছি এতক্ষনে। এ সে মৌমিতা নয়, যে তার প্রেমিককে ফেলে অন্য ছেলেকে বিয়ে করে। এ সেই মৌমিতা যে এত কিছু শেষেও বলে কি না, ” খেয়ে তবেই জানেন”!
তবে হ্যা বুঝতে পারছি বিয়ে হবেই হবে । তবে বাড়ি যাওয়ার আগে একবার সুযোগ বুঝে মৌমিতাকে বলবো, ” ভালোবাসি মৌমিতা। আমি তোমার প্রেমে পড়ে গেছি। “

গল্পের বিষয়:
রোমান্টিক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত