টেলিভিশনে ‘হঠাত্ বৃষ্টি’ চলছিল। হয়তো এজন্যই কিনা বাইরেও বৃষ্টি পড়তে আরম্ভ করলো। আকাশে এতটুকু মেঘ ছিলনা, আক্ষরিক অর্থেই হঠাত্ বৃষ্টি! সেই যে শুরু হয়েছে, থামার কোন লহ্মণই দেখা যাচ্ছে না। কিন্তু আজ এমন একটা দিন যেদিন বৃষ্টি চলতে থাকলে সুজিতের ভালো লাগবে না। আজ একটা বিশেষ দিন। আজ সুজিতের একটা সিনেমা মুক্তি পাবে। এমন না যে এটা ওর প্রথম সিনেমা। এটা ওর তৃতীয় সিনেমা। কিন্তু সুবর্ণা আজই প্রথমবারের মত ওর সিনেমা দেখবে। সবই ঠিক করা আছে। সবকাজ থেকে ছুটি নিয়েছে আজ সুজিত। বন্ধুদেরও কিছু বলে নি। সকাল দশটার মধ্যে ও ‘বলাকা’য় পৌঁছাবে, সুবর্ণা বলাকার সামনেই দাঁড়িয়ে থাকবে। তারপর দু’জনে গিয়ে সিনেমা দেখতে বসবে। এমনি চিন্তা করা ছিলো সবকিছু। নতুন কেনা শার্টটাও সুন্দর গন্ধ ছড়াচ্ছিল। কিন্তু বেরসিক বৃষ্টি যেন বাগড়া দেওয়ার পরিকল্পনা করেই এসেছে। সকাল সাতটা থেকে শুরু হয়েছে, এখন বাজে নয়টা।বৃষ্টি থামার কোন চিহ্নই দেখা যাচ্ছে না। সুজিত মনে মনে বৃষ্টির জ্ঞাতি-গোষ্ঠী উদ্ধার করছিল, এমন সময়ে মোবাইল বেজে উঠলো। সুবর্ণাই কল করেছে।
– হ্যাঁ, বলো। সুজিত বললো।
– কোথায় তুমি?
– বাসায় বসে আছি।
– তোমার না এখন বের হওয়ার কথা?
– বৃষ্টি যেতে দিচ্ছে না।
– বৃষ্টি কে?!
– বর্ষার বৃষ্টি।
– ঠাট্টা করা হচ্ছে?
– আরে না, তুমি বের হও, আমি আসছি।
– ওকে, পৌঁছে কল দিও।
সুজিত বৃষ্টি মাথায় নিয়েই বের হলো। বাইরে কাউকেই দেখা যাচ্ছে না। এই শহরে এমনটা হয় না। বৃষ্টির দিনে একসময় প্রকৃতিই ক্লান্ত হয়ে যায়, কিন্তু প্রকৃতির সন্তানেরা ক্লান্ত হয় না। এই তো, দেখা যাচ্ছে দুইজন রিকশাওয়ালাকে। তার পাশেই দুইটা সিএনজি। সুজিত পারতপক্ষে রিকশা এড়িয়েই চলে। মানুষের ওজন যন্ত্রই বহন করুক, মানুষ করবে কেন?
সিএনজিওয়ালার সাথে দরদাম ঠিক করে উঠলো সুজিত। সুবর্ণার কথা ভাবতে লাগলো ও। সুজিতকে আজ প্রথম সিনেমার পর্দায় দেখবে সুবর্ণা। কেমন হবে সুবর্ণার অনুভূতি? ওকে দেখে কি সুবর্ণা তাচ্ছিল্যভরে হেসে উঠবে নাকি নাক সিটকাবে? পর্দায় কি ওকে খুব বাজে দেখাবে? নাকি সুবর্ণা বলবে এই খুব সুন্দর লাগছে তোমাকে। অবশ্য সুবর্ণা কোনদিনই ওর চেহারা নিয়ে কোন মন্তব্য করেনি। সুজিত জিজ্ঞাসা করেও কোন সদুত্তর পায়নি। বারবার একটাই কথা শুনেছে – ‘তোমাকে ভালবাসি, তারপরও এই উত্তর খোঁজো।’
– সিনেমা হল আইসা পড়ছি, নামেন।
সিএনজিচালকের কথায় সুজিতের চিন্তায় ছেদ পড়লো। ভাড়া মিটিয়ে ঘড়ির দিকে তাকাল ও, পৌনে দশটা বাজে। ও জানে সুবর্ণা এসেছে। সুবর্ণা কখনো দেরি করে না। সুবর্ণাকে খুঁজতে শুরু করলো ও। সুবর্ণাই ওকে খুঁজে নিলো।
– কাকে খুঁজছো তুমি?
সুজিত পিছনে ফিরে দেখে সুবর্ণা।
– আপনাকেই খুঁজছি মহিয়সী নারী।
– হয়েছে, আর খুঁজতে হবে না, চল এবার ঢুকে পড়ি।
– টিকেট?
– এই তো। হাত দেখালো সুবর্ণা।
– বাহ! বাহ! ধন্যবাদ দিয়ে তোমাকে আর ছোট করবো না। তুমি এমনিতেই আমার থেকে খাটো!
– ফাজলামি হচ্ছে না? চল এখন।
পাশাপাশি বসে আছে ওরা। সুবর্ণা চিপস্ খাচ্ছে, দৃষ্টি পর্দায় নিবদ্ধ। সুজিত অপেক্ষা করছে কখন ওর দৃশ্যটা আসবে। কখন সেই চার মিনিটের গানটা দেখানো হবে। যে গানে ও নায়কের পিছনের সারিতে নেচেছে। হ্যাঁ, সুজিত একজন এক্সট্রা। প্রথম দু’টি সিনেমায় পর্দায় ওর উপস্থিতি নেই। এই সিনেমাতে ভাগ্যচক্রে ও নায়কের ঠিক পিছনের সারিতে ছিল। ও জানে ওকে দেখা যাবে।সুবর্ণা ওকে ঠিকই খুঁজে নেবে।
শেষকথা – সিনেমাটা সেদিন একটু আগে শেষ হয়েছিলো। বলা ভালো ওরা দু’জন শেষ করেছিল। সুবর্ণা সুজিতকে পর্দায় দেখে একটা মাত্র কথাই বলেছিল – “তোমাকে সুন্দর দেখাচ্ছে সুজিত”॥