-আবির তোমার সাথে কিছু কথা ছিলো
-জ্বী বলো খালামনি
-না মানে বাবা….
-আরে বলো কি হইছে!
-নিহীন এর ব্যাপারে তোমার সাথে একটু কথা ছিলো
-কি কথা
একটু মৃদুস্বরে খালামনি বললো
-‘নিহীনকে তোর কেমন লাগে’
-ভালোই
-তোর মা চাচ্ছিল যে নিহীনকে তাদের পূত্রবধু করার
কিছুটা চমকে যায় আবির,এ কথার উত্তরে এখন কি বলবে সে চুপ করেই রইলো
-গতকাল এক বনেদি পরিবার থেকে আসে এতো বোঝানোর পরও সে রাজি হয়নি,তুই একটু আমার মেয়েটাকে বোঝা।
-আচ্ছা আমি দেখতেছি
-আর আমার কথাটা একটু ভেবে দেখিস।
‘আচ্ছা’ বলে নিজের রুমে এস পরলো আবির।নিজের অজান্তেই নিহীনকে নিয়ে তাে মাঝে অজানা এক ভাবণা কাজ করতে লাগলো।
-কি ভাবছো ভাইয়া
ভাবনায় ছেদ পড়তেই একটু বিরক্ত হলো আবির।কিন্তু মুখে তা প্রকাশ করলোনা।ঘার ঘুরিয়ে দেখলো নিহীন তার পাশে।
‘কই না তো,কিছু ভাবছি না’
‘মিথ্যে বলছো কেনো,আমি দিব্যি দেখতে পাচ্ছি তুমি কিছু ভাবছো’
‘কোনো অসুবিধা আছে’
‘নাহ,তবে ভাবনার কারনটা জানলে ভালো লাগতো’
‘সবকিছু জানতে হয় না’
মন খারাপ করে নিহীন রুম থেকে বের হয়ে গেলো।কিন্তু আবির তেমন পাত্তা দিলোনা।ইদানিং নিহীন এর মাঝে অনেক পরিবর্তন দেখা দেয়।কিরকম এক অজানা দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে আবিরের দিবে।এই ভঙ্গীতে তাকানোর বিশেষ একটা কারণ আছে হয়তো তবে আবির তাকে খালাত বোনের চোখেই দেখে।তারর চেয়ে একক্লাস নিচে পড়া মেয়েটাকে নিতান্তই সে বাচ্চাভাবে।নিহীন এটা ওটা বলে সম্পর্কে বুঝিয়ে দেয়,মাঝে মাঝে মিষ্টি শাষনও করে।মাঝে মাঝে চেহারায় নিতান্তই গম্ভীর একটা ভাব আনে এবং নিজেকে সুন্দর প্রমান করার পরিবেশ সবার মাঝেই জাগিয়ে তোলে।
আবির যখন মাধ্যমিক পাশ করে যেদিন শহরে তার খালার বাসায় আসলো,তখন নিহীন যেরকম ছিলো তার চোখে আজও সে একইরকম আছে।মোটামোটি স্বচ্ছল তার খালার পরিবার।
আবিরও বাবা মায়ের একমাত্র ছেলে,বড় একটি বোন ছিলো কিছুদিন আগে তার বিয়ে হয়ে গেছে।এখন তার বাসায় বাবা-মা একাই থাকে তবে তার বোনও বেশিরভাগ সময়ই বাবা-মার সাথেই কাটায়।
সুখেই কাটতে লাগলো দিনকাল কিন্তু ইদানিং নিহীনের পরিবর্তন মাঝে মাঝে আবিরকে ভাবনায় ফেলে দেয়।
এভাবেই কেটে যেতে লাগলো সময়
.
কেউ কেউ নক্ষত্রের হাত ধরে পথ চলে।কাছাকাছি বসে গল্প করে।হেসে সেই নক্ষত্রের গায়ে লুটিয়ে পড়ে।মাঠের ঘাস মাড়িয়ে বাদাম চিবোয়।ভাবে তারাই শুধু পৃথিবীতে বেঁচে আছে।আর সবাই যেনো মৃত।
নিহীনের কথাগুলো কেনো বুকে তীক্ষ্ণ শিহরনের সৃষ্টি করলো আবিরের মনে।
পাল্টা উত্তর না দিয়ে নিশ্চুপই রইলো সে।
-বাব্বাহ বোবার মুখে কথা ফুটেছে দেখছি
নিহীন একটু গম্ভীর ও মিষ্টি রাগে বললো,’কথা কম বলি বলে ভেবোনা যে আমি বোবা।
-খালাকে কষ্ট না দিলেও পারতি
আবিরের দিকে না তাকিয়েই একটু দৃঢ় কন্ঠে নিহীন বললো,আমার কষ্টও নেহায়াত কম নয়।
-এখন বোধহয় নেই তাই না
-কে বললো নেই! বেচে থাকাই তো কষ্টের।যদি সে বেচে থাকায় চাওয়া আর পাওয়াতে মিল না হয়।
-না পাওয়াতেও মানুষ অনেক সময় সুখী হয়
-হ্যাঁ,যদি সে না পাওয়াতে চাহিদারর পরিমান শেষ হয়ে যায়।আমার চাহিদার পরিমাণও শেষ হবেনা,আর আমিও সুখী হবো না।
-ছেলেটাতো বেশ ছিলো
-সার্টিফিকেট দিচ্ছো!
-না,মন্তব্য করলাম
-সেটা তোমার ইচ্ছা,তবে আমার এতো ভালোরর দরকার নেই।যাকে নিয়ে সুখী হওয়া যায় আমার শুধু তাকেই দরকার।
-ওকে বিয়ে করলে তুই সুখী হতিস না,কে বললো
-‘তুমি নিশ্চিতভাবে বলতে পারো আমি সুখী হতাম!আসলে তুমি কিসে সুখী হও সেটা তুমি যতোটা জানো আর কেউ ততোটা জানেনা ।
হঠাৎ আবির চমকে উঠলো।সত্যিইতো সবারই একটা নিজস্ব চাওয়া আছে।সেই চাওয়াতে আর পাওয়াতেই সুখের সূত্রতা।তাই প্রত্যেক মানুষ তার চাওয়ার পাওয়াকে খুজে।তাতে সুখ পেতে চায়। সুখী হতে চায়।
আবির একটু নিচুকন্ঠে বললো
-অন্যকে সুখী করেও কিন্তু নিজে সুখী হওয়া যায়
-যদি তোমাকেই এই কথাটি বলি?
হঠাৎ পরাজিত মানুষের দৃষ্টি নিয়ে আবির নিহীনের দিকে তাকালো।নিহীন গম্ভীরভাবে মুখটি ঘুরিয়ে নেয়।বেশ কিছুক্ষন কারো মুখেই কোনো কথা ফুটলনা।’হঠাৎ নিহীন আবিরকে চমকে দিয়ে বলে ওঠে’
-আমি আমার চাওয়াকে চাই,নয়তো….!
-নয়তো কি?
-সময় হলেই বলবো
-খুবই সাহসী হয়েছিস মনে হয়
-ভালোবেসে মেয়েরা সাহসীই হয়,শোনো নি।
আশ্চর্য দৃষ্টিতে আবির নিহীনের দিকে তাকালো।সত্যিই মেয়েদের জানা খুবই কঠিন।ওরা কখন সাহসী,কখন ভীতু,কখন সময় এবং পরিবেশই বলে দেয়।
হঠাৎ নিহীনের ডাকে বাস্তবে ফিরল আবির।
-কোনো সমস্যা ভাইয়া?
-নাহ তো
নিহীন উঠে তার রুমের দিকে নিশ্চুপভাবে পা বাড়ালো।আর আবির আস্তে নিজের রুমের বিছানায় নিজের গাঁ হেলিয়ে দিলো।কখন যে চোখ দুটো এক হয়ে গেলো বুঝতেই পারলো না।
পরেরদিন কলেজ আসলো দুজনেই।
আবির তার বান্ধবীর সাথে দেখা করে বের হতেই দেখলো নিহীন লাইব্রেরীর সামনে দাড়ানো
-কি রে এখানে দাড়িয়ে কেন ভেতরে গেলেই পারতিস?
-তোমার অসুবিধা হতো তাহলে।
-পাগলী তোর কি মন খারাপ?
-সেটা তোমার জেনে কাজ নেই, চলো বাসায় যাই
রিক্সায় নিহীনের সাথে বাসায় যেতে অন্নরকম এক অনুভূতি কাজ করতে লাগলো আবিরের।একটা যুবতী মেয়ের পাশে বসায় যে নতুন অনুভূতি জাগে, সেটা আবির প্রথম বুঝলো।অনুভূতির চরম প্রয়াসে বুকটা কেঁপে ওঠে,মাধুর্য ছড়ায় ধমনীতে,শরীরে ছড়িয়ে পড়ে অন্তহীন অস্থীরতা।আবির ভাবছে,এ জীবন,ভূবন,সভ্যতা সুগভীরবোধ,আর অতল প্রশান্তি নিয়েই জেগে ওঠে হৃদয়ের ভালোবাসা।অন্তহীন এ ভালোবাসা মানুষকে নিয়ে যায় নির্দিষ্ট গন্তব্যে।
নিহীনের কাছে নিজেকে সরিয়ে নিয়ে বললো, ‘এখন কেমন লাগছে রে?’
-ভালো
-খোলা জায়গায়, খোলা বাতাসে রিক্সায় চড়ার মজাই আলাদা,তাই না?
গুমোট পরিবেশটাকে স্বাভাবিক করতেই আবির প্রসজ্ঞ পরিবর্তনের চেষ্টা করলো।
নিহীনের সোজাসাপ্টা উত্তর
-হু
-হু হু করছিস কেন কথা বলতে পারিস না?
-শুধু খোলা জায়গায়, খোলা বাতাসে রিক্সায় চড়তে মজা আছে বটে,তবে আরো কিছু হলে ভালো হয়
-সেই আরো কিছুটা কি?
নিহীন মৃদুস্বরে বললো
-প্রিয়জনের হাত হাত রাখা
নিহীনের কথা শুনে আবির অনেকটা হেসেই ফেলে।বললো
-তোর কি এখন আমার হাতে হাত রাখতে ইচ্ছা করছে নাকি?
-তুমি কি আমার প্রিয়জন নাকি?
আবির থমকে গেলো,এই প্রশ্নের জবার নিয়ে আবির কনফিউসড হয়ে গেলো।মানুষের জীবনে মাঝে মাঝে এরকম কিছু প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয় তখন প্রশ্নগুলো উত্তর হাজারো খুজলেও নাগাল পাওয়া যায় না।শুধু প্রশ্নটা শোনা যায়,অনুভব করা যায় কিন্তু অনুভূতি প্রকাশ করা হয় না।
-কি হলো ভাইয়া, কোনো অসুবিধায় ফেললাম নাকি?
নিহীনের কন্ঠে ব্যাঙ্গার্থক সুর।
-তুই আসলে অনেক বুদ্ধিমতী।আমার এতোটুকু জানা ছিলো না।
নিহীনের এই ব্যাঙ্গ আবির একটুও মনে ছোয়া না লাগলেও গায়ে মাখলো না।
কিছুটা জোর করেই আবির হেসে উঠলো।
বিদ্রুপের ভঙ্গীতে নিহীন বলে উঠলো
-‘কৃত্রিমতা অনেকসময় ভালো লাগলেও তার কোনো সুদৃঢ় ভিত্তি নেই।শত সৌন্দর্যের ও আড়ালে যখন কৃত্রিমতার নগ্ন রূপটা মানুষ দেখতে পায় তখন সৌন্দর্যের ভাবাবেশের বদলে মানুষের মনে বিরক্তি ছায়ায় জড়িয়ে পড়ে’
-এখানে কৃত্রিমতার কি দেখলি?
-তোমার হাসি
আবির হঠাৎ যেনো ফাটা বেলুনের মতো চুপসে গেলো।এই একটা মেয়ের কাছে নিজেকে অনেক ছোট লাগছে,অর্থহীন মনে হচ্ছে নিজেকে।মনে হচ্ছে ব্যাথা আর ব্যার্থতার হতাশায় সকল কিছু দূরে সরে যাচ্ছে।
-‘ভাইয়া হাসি দিয়ে ভালোবাসা পাওয়া যায়,যদি সে হাসিতে আন্তরিকতা থাকে।আর ভালোবাসা দিয়ে বিশ্ব জয় করা যায়, যদি সেই ভালোবাসায় প্রগাঢ়তা থাকে।তবে জানো আমার ভালোবাসা দিয়ে বিশ্ব জয় করার বিন্দুমাত্রও ইচ্ছে নেই।একটা হৃদয় জয় করতে পারলেই ধন্য হবো।
নিথর নিশ্তব্দ হয়ে কথাগুলো শুনছে আবির।সব কথাই তার হৃদয়ে সুঁইয়েরর মতো গাঁথছে।হঠাৎ ক্লান্ত অনুভব করলো।একটা অবসাধ এসে ছড়িয়ে পড়লো নিজস্ব সত্তায়।
-তোমার কি খারাপ লাগছে?
-নারে,তবে তেমন ভালোও লাগছে না।
-কেন,তোমাকে কি বেশী কষ্ট দিলাম।ভাইয়া শোন তোকে বিন্দুমাত্র কষ্ট দেওয়ার ইচ্ছা আমার নাই।কষ্ট দেওয়ার বিনিময়ে যদি সেটা শতগুনে আপনা-আপনি নিজ হৃদয়ে ফেরত আসে তবে কেউ কি কষ্ট দিতে পারে?
-‘আমি আসলে কিছু বুঝিনারে। বুঝতে পারি না সত্যি।আমার এ অক্ষমতা নিয়মিত আমাকে কুঁরে কুঁরে খায়।’
আবির নিজের অজান্তেই ডান হাত দিয়ে বাম হাতের তালুতে ঘুষি মারলো।
-‘পৃথিবীতে সবকিছুই বোঝা যায়,যদি কেউ বুঝতে চেষ্টা করে।
গোপনে একটা দীর্ঘস্বাস ছেড়ে নিহীনের দিকে তাকালো আবির। এ’কি নিহীন কাদছে।
-এই পাগলী কাদছিস কেন রে?
-কান্না আসে যে
আবির ফিসফিসিয়ে বললো
-কেউ দেখে ফেলবে যে
-কাউকে দেখাবার জন্য কাদিনি
-‘কান্নার মধ্যেও যে একটা সুখ ও আনন্দ আছে সেটে কি জানিস?’
-হয়তো।তবে একটা নিশ্চিন্ত জীবনের প্রতিশ্রুতি পেলে মৃত্যুকে বেছে নিতাম।যেন পূনজম্মে এ জীবনের ব্যার্থতাগুলো দূর করতে পারি।
-‘পূণজম্মে যে তুই ব্যার্থতা দূর করতে পারবি এরকম কোনো গ্যারান্টি আছে।আচ্ছা তুই কি নিজেকে ব্যার্থ ভাবিস?
-ব্যার্থইতো
কিছুটা অভিমানের সুরে বললো নিহীন।
– ‘কিভাবে?’
-চাওয়ার সঙ্গে যদি পাওয়ার সামঞ্জস্যতা না থাকে,তবে তো ব্যার্থতাই তার প্রমাণ।
-‘কেনো থাকবেনা সামঞ্জস্যতা? চাইলেই পাওয়া যায়,যদি সে চাওয়ার মাঝে আন্তরিকতা থাকে।’
-ভূল বললে,প্রিয় কিছু চাওয়ার সময় মানুষ খুবই আন্তরিকতার সঙ্গেই চায়।
-এটাও ঠিক তবে পাওয়াতে চাওয়া আনন্দ শেষ হবার ভয়ে ও অনেকে পেতে চায় না।সারাজীবন তারা না পাওয়া নিয়েই আনন্দে কাটিয়ে দেয়।
-তারা মহৎ,তারা মহান।
-তোর মহৎ হতে ইচ্ছা করে না?
-না।না পাওয়ার বেদনা সবকিছুকে ডুবিয়ে দেয়।
-হয়তো
– ভাইয়া, মেয়েদের কাছে তার ভালোবাসা তার প্রান তার হৃদয় তার অস্তিত্ব। যদি সেই ভালোবাসাই তাদের জীবনে না থাকে তাহলে তো সে মৃত।
নিহীন মাথা নিচু করে ফেললো।ওড়না চাপা দিয়ে মুখ ডাকলো।আবির আর এবার ওর দিকে তাকালো না।ব্যাথার একটা ভাব হৃদয়ে আসন পেতে বসেছে,সিক্ত হওয়ার প্রয়োজন নেই।
আবির একটু ইতস্ততবোধ করে বললো,
-‘তুই আমার কাছে যা চাইবি তার কতোটুকু যে আমি দিতে পারবো,তা বুঝিনে।
-‘মরুভূমিতে প্রানকে তৃষীত করতে একফোটা পানিই যথেষ্ট।’
‘-নিহীন আমি তোর কাছে বারবার হেরে যাচ্ছি তাই না।সবকিছু কেন জানি আমার কাছে ধূসর মনে হয়।’
-‘তুমি আসলে খুব ভালো।তোমার মনেতে যা লালন করেছো,সেটা থেকে একটু বেরিয়ে এসো দেখবে সব ভালো লাগবে।কিঞ্চিত ভালো লাগাকে একটু বৃহৎ করো দেখবে সবকিছুই ভালো লাগঝে।’
-‘আর যে মানুষ সুন্দর দেখার পরও স্থির থাকে? ‘
নিহীন কিছু না বলে আবিরের দিকে তাকায়। একটা কিছু বলতে গিয়েও নিজেকে সামলে নিলো নিহীন।
আবির একটু গম্ভীরভাবে বললো,
-‘তোর সৌন্দর্যের মাধুর্য আমি দেখতে পাই,অনুভব করি।কিন্তু সে সৌন্দর্য স্পর্শ করতে পারিনা।সৌন্দর্যের ভাবাবেশে আমি মাঝেমাঝে অবাক হয়ে যাই।তবুও!’
হঠাৎ নিহীনের মনে সুখের মৃদু বাতাস বয়ে গেলো।তার এখন আবিরের হাতটা ধরতে বড্ড ইচ্ছে করছে কিন্তু নিজেকে সামলে নিলো সে।ভাবল এখনো সময় হয়নি।বাসায় এসে বিছানায় গা হেলিয় দিলো।
.
হঠাৎ খুব ভোরে ঘুম ভাঙে আবিরের।বিছানা থেকে উঠে ড্রয়িংরুমে পা বাড়ালো,হঠাৎ কি মনে করে নিহীনের রুমে উঁকি দিল।নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছিলোনা,একটা মানুষ এতো সুন্দর হতে পারে।আবির পূর্ণ দৃষ্টিতে নিহীনের দিকে তাকিয়ে রইল।অপূর্ব সুন্দর লাগছে নিহীনকে আজ।নারীকে ভেজা চুলেই সবচেয়ে সুন্দর দেখায়,ছেলেদের মন কেড়ে নিতে পারে একমুহূর্তে।
আবির কিছুক্ষন বিস্মিত চোখে তাকিয়ে রইল নিহীনের দিকে।তীব্র একটা আনন্দের অনুভূতি তার সমস্ত সত্তাকে অবশ করে দিতে চাইলো।এতোদিন সে এই প্রকৃত সুন্দরকে বুঝতে পারেনি,মেয়েটাকে অনেকভাবে অবহেলা ও কষ্ট দিয়েছে।এ মূহুর্তে সে কি করবে ভেবে পাচ্ছিলো না।হঠাৎ নিহীনের দিকে এগিয়ে তাকে দুই বাহুডোরে জড়িয়ে নিলো।নিহীন অনেকটা অবাক, নিস্পলক দৃষ্টিতে তাকায় আবির দিকে।পাথরের মতো শক্ত সে,মনে হয় প্রাণহীন।
আবির আস্তে আস্তে মুখখানা নিহীনের কানের কাছে নিয়ে বললো,’তুমি তোমাকে শুধু আমাকে দাও,আমি তোমাকে আমার সমস্ত পৃথিবী দেবো।
রহস্যভরা এক হাসি দিয়ে আবিরের কাছে থেকে ছুটে পালায় সে।তখনই দুজনের মনেই সুখের বাতাস বইতে শুরু করলো।
চকচকে সোনালী রোদগুলো হানা দিলো নিহীনের ঘরে।সবকিছুই পরিস্কার ঝলমলে হয়ে উঠলো।হঠাৎ একগুচ্ছ বাতাস এসে দুজনের শরীরের উপর দিয়ে প্রভাহিত হয়।প্রেমার অবাধ্য চুলগুলো ছড়িয়ে পড়লো আবিরের মুখে,অন্যসময় বিরক্ত লাগতো তবে আজ কেনো জানি খুব লাগছে।চুলের ঘ্রানে নিজেকে বড় উম্মাদ ভাবতে লাগলো আবির।প্রিয়তমার সব সুন্দর ও অনেক প্রিয় হয়।
নিহীন আবিরের কানের কাছে মুখ নিয়ে একটু আস্তে বলে উঠে,’আমি আমার চাওয়াকে পাওয়াতে পূর্ন করেছি’।
আবির শুধু ভালোবাসি বলেই থেমে গেলো,এবার নিহীন তাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে ভালোবাসি বলে চিৎকার দিয়ে উঠলো।খালাখালু ব্যাপরটা আন্দাজ করতে পেরেছিলেন তবে কাবাব-মে হাড্ডি হতে তাদের রুমে পা বাড়াননি।