হিটলারনির ভালবাসা

হিটলারনির ভালবাসা

: এই! তোর কান ধরা হচ্ছে না। ভাল করে ধর
: এই পোলা মোহনা কী বলল কানে যাচ্ছে না?
: হুম এইবার ঠিক আছে। প্রেম করবা চাদু
: না, আপু! আমাকে ক্ষমা করে দেন
: আইচ্ছা, যা দৌড়ে পালা এখান থেকে।

দুর থেকেই ওনাদের র্যাগিং করা দেখলাম। যিনি রাগিং করছেন তাকে দেখে তো ” কুছ কুছ হোতা হে ” গানটা মনের মধ্যে বেজে উঠল। তিনি সেই লেভেলের সুন্দরী। প্রথম দেখায় ক্রাশ নামক অখাদ্যটা ঠিকই খেয়ে ফেললাম। যাই ক্লাসে যায় না হলে আমাকে তাকিয়ে থাকলে দেখলে আবার রাগিং না করে। যেতে আমার পরিচয়টা বলি। আমি Shoyel Hosen। ঢাবি তে অনার্স প্রথম বর্ষে নতুন ভর্তি হয়েছি। নতুন তো তাই কিছু চিনি না। একজন ভাইয়ের কাছ থেকে আমাদের ক্লাসের রাস্তাটা শুনে নিলাম। ক্লাসে যেয়ে দেখি সেই ছেলেটা যাকে আমি রাগিং হতে দেখছিলাম। ওকে দেখছি আর মিটিমিটি করে হাসছি। ও অবশ্য আমি যে ওকে দেখে হাসতেছি তা ও টের পেয়েছে। ক্লাস শেষ হলো। ছেলেটা আমার কাছে আসলো-

: তুমি আমাকে দেখে হাসতেছিলে কেন
: না মানে, মাঠের ঘটনার জন্য
: আর বইলো না, ওনাকে দেখে তো আমি পাগল হয়ে গিয়েছিলাম। তাই কোনো কিছু না ভেবে প্রপোজ করেছিলাম। আফসুস, পরের টুকু তো তুমি দেখলে।
: যাইহোক, আমি সোহেল
: আমি সোহাগ। আমরা কী বন্ধু হতে পারি?
: কেন না।

বন্ধুদের সাথে আড্ডা খুনশুটিতে অনেকদিন চলে গেল পেলাম । জুবায়ের, স্বচ্ছ, সারাফাত, রিজভি, ফাদ্দিন নামক কিছু বাশঁ দেওয়ায় পটু মানে বন্ধু জোগাড় হলো।

ভার্সিটিতে সমাবর্তন উপলক্ষে উনষ্ঠানে আমি গান গেলাম একটা। মাঝে মাঝে গান গায় আমি। দেখি সবাই হাত তালি দিল। দেখি সেই আপুটাও করতালি দিচ্ছে সবার সাথে। নিজেকে এখন সেলিব্রেটি মনে হচ্ছে কারণ ওই আপুকে আমি ইয়ে করি ।

একদিন ক্যাম্পাসে বসে আড্ডা দিচ্ছিলাম আমরা। আমাদের মধ্যে রিজভি একটু মোটা ছিল। ওকে মটু বললেই খেপে যেত। তো আমি ওকে মটু বললাম। রীতিমতো ও আমাকে মারার জন্য তাড়া করল। আমি ওর হাত থেকে বাচতে দৌড় দিলাম। কিছুক্ষণ পর কিসের সাথে একটা ধাক্কা খেলাম। দেখি সেই রাগি আপু। আপু বলছি কারণ তিনি আমাদের এক ব্যাচ সিনিয়র। কারো সাথে প্রেম-ট্রেম করে না। ওনার নাম ” মেঘনা “। আহ কী সুন্দর নাম কিন্তু কী হিটলারি স্বভাব।

: সরি, হিটলার আপু ( দেখছেন আপনাদের সাথে কথা বলতে বলতে কী বলে ফেললাম। কপালে আজ শনি ভর করছে মনে হয়)
: কি বললি!!
: কই, আমি তো আপনাকে সরি বললাম
: তার আগে কী বললি, আমি হিটলার। তোর আজকে খবর আছে। তোরা ওকে নিয়ে চল।
: ঠিক আছে ( আপুর বান্ধবি)

লজ্জার কথা কী আর বলব , আমাকে সবার সামনে দিয়ে চ্যাংদোলা করে নিয়ে চলল। থামল একটা ফাকা ক্লাসে।
: ওই, তোরা যা
: আচ্ছা ( আমি)
: তুমি কোথায় যাবে চাঁদ
: আপনি তো চলে যেতে বললেন
: তোমাকে না সোনা, ওদেরকে।

সোনা বলছে, এত ভাল ভাবে যখন কথা বলছে তখন আমার কপালে মনে হয় আজকে হিটলার ভর করবে।
: আমাকে ধাক্কা দিলে কেন? ( ব্যাপার কী তুমি করে বলছে। ‘ ডাল মে জরুর কুছ কালা হে ‘)
: আমি ইচ্ছা করে দেইনি আপু
: তাহলে?
: আসলে আপু হয়েছিলো কী (১০ মিনিট ফ্লাসব্যাকে মাকে অতিতে আসলাম। ওনাকে সব বললাম)
: তুমি নিশ্বয় আমাকে ছোয়ার জন্য এই প্লানটা করেছো. ( কী বলছে এইসব ওনি)
: না, আমি ইচ্ছা ধাক্কা দিইনি আপু

: কী আপু আপু বলছো
: তাহলে কী বলব?
: নাম ধরে ডাকবা
: নাহহহহ! আমি এটা করতে পারবো না
: কেন?
: কারণ আপনি হিটলারনি ( এইরে মুখ ফসকে আবার বলে ফেললাম)
: কী! আবার বললি আমাকে। তোর আজকে খবর আছে। ওই তোরা দরজা টা লাগিয়ে দে
: দরজা দিতে বলছেন কেন? আমি একটা মাসুম বাচ্ছা। আমাকে মারবেন না
: মাসুম বাচ্চা! আজকে বের করবো।
: না, আমাকে মারবেন না হিটলারনি আপু ( আজকে মুখের যে কী হলো)
: আবার বললি!!!

ওনি আমার দিকে এগুচ্ছে আমি পিছুচ্ছি। এইভাবে এগুতে পিছুতে যেয়ে দেওয়ালে আমার পিঠ ঠেকে গেল। ও আমার খুব কাছে চলে আসল। ওর সুন্দর মাতাল করা চুলের ঘ্রাণ আমাকে মাতাল করে দিচ্ছে। আমার মাথের দুই পাশে হাত রাখল মোহনা।
: এইভাবে কী করবেন
: তোর ইজ্জত আজকে আমি লুঠব
: নানননননা! এ কাজ আপনি করবেন না। সমাজে আমি মুখ দেখাতে পারবো না

: করবোই করব। তাহলে দেখ…..

হঠাৎ করেই আমার ঠোট আটকে গেল। মনে হয় ১ থেকে ২ মিনিট এইভাবেই ছিলাম। ঠোট ছাড়ার পর দুইজনেই হাফাচ্ছি কেন না এত সময় শ্বাস ধরে রাখা অনেক কষ্টের। যদিও অনেক মজা লাগছে।
: আরেকবার হবে ( আমি বললাম যদিও ঠাট্টা করে)
: না, আজকে এই পর্যন্ত।
: আচ্ছা।
: তোমাকে যে আমি ভালবাসি সেটা তুমি বুঝ না। ( বলে রাখা ভাল আগো যতবারই মোহনার সাথে দেখা হয়েছে ততবারই একটা মন ভোলানো হাসি আমাকে উপহার দিয়েছে)
: কই! না তো ( আসলে আমিও মোহনাকে ভালবাসি প্রথম দেখা হতে। এখন একটু পার্ট নিচ্ছি)
: কী বললি, তুই আমাকে ভালবাসিস না
: হ্যা, হ্যা, বাসি তো। অনেক ভালবাসি
: তাহলে প্রপোজ করো এখন
: প্রেম তো হয়ে গেছে তাহলে আবার প্রপোজ কীসের?
: যেটা বলছি সেটা করো।

প্রপোজ টা করেই ফেলি। না করলে কপালে হিটলার আছে। হাতের কাছে একটা কলম ছিল তাই দিয়েই শুরু করলাম।
” ওগো আমার হিটলারনি! তুমি কী আমাকে তোমার হাত ধরার সুযোগ দেবে, দেবে কী পাশে বসে চন্দ্রবিলাস করার অধিকার “।

: এই উঠো ( কলমটা নিয়ে। মনে হয় প্রপোজ পছন্দ কয় নাই)

উঠে দাড়ানোর সাথে সাথে আমার বুকে ঝাপিয়ে পড়ল। আমিও আজ থেকে তাকে আগলে রাখার জন্য প্রতিশ্রুতি বদ্ধ হলাম নিজের কাছে।

গল্পের বিষয়:
রোমান্টিক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত