বউ সোহাগী

বউ সোহাগী

– এই ঘুম থেকে ওঠ(রিমা)

– হুম। আর একটু ঘুমাই না(আমি)

– না

– প্লিজ

– আজান দিছে, ফ্রেশ হয়ে নামাজ পড়তে যাও

– সকালে পড়বনি

– না। এখনই

– আচ্ছা। তবে একটা শর্তে।

– কি শর্ত?

– একটা দিলেই হবে

– না। অনেক দুষ্টমি করছ কয়েকদিন থেকে।

– শুধু একটা।

– আচ্ছা। তবে সাথে সাথে কিন্তু ওঠতে হবে

– আচ্ছা দাও

তারপর একটা চুমা আমাকে দিয়ে দিল। কি যে ভাল লাগল। এখন আমি মনের আনন্দে নামাজ পড়তে গেলাম।

অপ্পস, আপনাদের তো পরিচয় দেওয়া হয় নি। আমি সিয়াম বাবার ব্যবসা দেখাশুনা করি। আর ও হচ্ছে রিমা। ও হচ্ছে আমার

ইয়ে। যা আপ্নারা ভালভাবেই বুঝেন। নামাজ পড়ে এসে বাড়ি এসে দেখি ও রান্না ঘরে যাচ্ছে। আমি পিছন থেকে ওকে জরিয়ে

ধরলাম।

– এই কি করছ, ছেড়ে দাও( রিমা)

– আমি তো ছেড়ে দেওয়ার জন্য ধরি নি

– আব্বু আম্মু এখন ওঠবে ছেড়ে

– এখন তোমাকে কে কাজ করতে বলেছি

– ইসস। এখন থেকে যদি কাজ শুরু না করি তাহলে সকালের নাস্তা তৈরি করতে অনেক সময় লেগে যাবে

– আজ না হয় নাস্তা করলাম না

– সখ কত।

– চল না ঘরে।

– সর তো। ভালভাবে কাজ করতে দাও।

– ( ও আমাকে যতই বলুক তবুও ওকে আমি ছাড়ছি না)

এমন সময় আম্মু পিছন থেজে গলা হাসর দিল। সাথে সাথে আমি ওকে ছেড়ে দিলাম। তারপর আম্মু ওকে বলল,

– এত সকাল থেকে কাজ করা লাগবে না। যাও কিছুক্ষন রেস্ট নাও। আর আজ ছুটির দিন। কেউ বাইরে যাবে

রিমা কিছুই বলল না। তবে ও খুব লজ্জা পেয়েছে। লজ্জা পাওয়াটা আমি বুঝে গেলাম ওর গালটা লাল রঙের হয়েছে।

তারপর আমরা ঘরে এলাম। ঘরে এসে ও দরজা লাগিয়ে দিয়ে বলল,

– আচ্ছা তোমার জ্ঞান কতদিনে হবে শুনি(রিমা)

– কেন কি হইছে

– তুমি যে আমাকে জরিয়ে ধরে ছিলে, সেটা যে আম্মু দেখছে

– দেখল তো কি হল

– কি হল মানে? আমার বুঝি লজ্জা করে না

– ও বাবা। তা আমার বউয়ের কোথায় লজ্জা করে দেখি তো

– যাহ দুষ্টু কোথাকার

– আমি দুষ্ট?

– হুম খুব বড় মাপের দুষ্ট হয়ে যাচ্ছ দিন। কোথায় বয়স বাড়লে মানুষ শান্ত হয়, উল্টো তুমি দিন দিন ছেলে মানুষগিরি বেশি

করতিছ

– এই ভাবে তুমি বলতে পারলে(মুখ ভার করে)

– ওলি বাবা লে, আমার সোনা দেখছি অভিমানও করতে পারে।

– সর, তোমার সাথে কথা নাই

– আস তোমার অভিমানটা আমি ভেঙে দেয়

এই বলে ও আমাকে জরিয়ে ধরল। খুব ভাল লাগছে আমার। আর মনে হচ্ছে সব চেয়ে সুখি মানুষই আমি। এ দিকে ও আমাকে

জরিয়ে ধরে আছে, আর আমি আপনাদের আমাদের অতিত সম্পর্ক এ কিছু বলি।

আমি পড়াশুনা করে বাবার ব্যবসা দেখাশুনা করছি। আর অবসর সময়ে ফেসবুকে টুকিটাকি গল্প পোস্ট করি। কেন জানি না গল্প

লেখতে ও পড়তে খুব ভাল লাগে আমার। যদি মন খারাপ থাকে তাহলে গল্প পড়লে মন ভাল হয়ে যায়।

একদিন রাতে ঘুম ভেঙে গেল। ঘুমানোর চেষ্টা করছি, তবে চোখে ঘুম আসার কোন কারনই নাই। তাই ফেসবুকে লগ ইন করলাম।

তবে মজার ব্যাপার দেখতে পেলাম আমার চ্যাট লিস্টে শুধু একটা মেয়ে অ্যাক্টিভ আছে। আগে যখন রাতে ঢুকতাম তখন কেউ

অ্যাক্টিভ থাকে না। তাই একটু তার সাথে পরিচয় হতে মিন চাইল। তবে মন সাই দিল না। হয়ত কারো সাথে কথা বলছে। মেবি

বিএফের সাথে। তাই বিরক্ত না করাটাই বেটার।

আমি গল্প পড়তে পড়তে হঠাৎ টুনটুন করে ওঠল।

দেখি সেই মেয়েটা আমাকে আমা কে মেসেজ করেছে। তবে মেয়েটির নাম অরপা। প্রোফাইল ঘুরে এসে দেখলাম মেয়েটি

সনাতন ধর্মাম্বলী।

– ঘুমান নি(মেয়েটি)

– না। আপ্নিও তো ঘুমান নি

– কেন ঘুমান নি

– ঘুম ভেঙে গেল। এখন আর ঘুমা ধরতেছে না। আপনি ঘুমান নি কেন

– আপনার মতই আমারো অবস্থা।

এইভাবে কথা চলতে থাকে আমাদের। আস্তে আস্তে আমরা ভাল বন্ধু হয়ে ওঠি। আগে তেমন ফেসবুকে সময় দিতাম না, তবে ওর

সাথে যখন থেকে পরিচয় হয় তখন থেকে শুধু ফেসবুকেই থাকতাম।

এই ভাবে কথা বলতে বলতে কখন যে ওকে ভাললাগার কাজ করেছে, আমি নিজেও জানি না। তবে মন কেন জানি না সায় দেয়

না। তার কারন হচ্ছে আমরা দুইজন দুই ধর্মের মানুষ। ওর মনেও ভাললাগা কাজ করতেছিল।( পরে ওর থেকে জানতে পারি)

কেন জানি না ওর সাথে কথা বলতে ভালই লাগে। যখন কথা বলি মনে ভাল থাকা, ভাল লাগা কাজ করে। এমন করে আমি আর

চলতে পারতেছিনা। তাই আমি আমাদের এখানকার একটা হুজুরের সাথে আমার এই কথা বললাম। আর এও বললাম আমি কি

ওকে বিয়ে করতে পারব? তিনি বললে, হ্যা বিয়ে করা যাবে, তবে মেয়েটিকে প্রথমে মুসলিম হতে হবে। তারপরেই বিয়ে করা যাবে।

এই কথা শুনে আমার মন খুব ভাল লাগল। তার মানে ও যদি আমাকে পছন্দ করে তাহলে আমি ওকে বিয়ে করতে পারব। তবে এ

দিকে আমাদের বন্ধুত্ব এর ৬ মাস হয়েছে। আমি ওকে বিভিন্ন ভাবে বোঝানোর চেষ্টা করেছি, তবে ও বুঝেও না বোঝার ভান করে

থাকে। তাই হুজুরের কথা শুনে আমি সিদ্ধান্ত নিলাম আমি ওকে প্রপোজ করব। এদিকে কথাটা মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে আর আমি

এদিকে কাজটা বাস্তবায়ন করার ধাপ নিচ্ছি।

তারপর ওকে ফোন করে বললাম,

– কেমন আছ(আমি)

– ভাল।তুমি(অরপা)

– ভালই। কি কর

– বসে আছি তুমি

– আমিও

– ওহ

– তোমাকে একটা কথা বলতাম

– হুম বল

– জানি না তুমি কি ধরনের রিয়াক্ট করবে।

– না কিছুই রিয়াক্ট করব না, তুমি বল

– তোমার সাথে কথা বলতে বলতে কখন যে তোমাকে ভালবেসে ফেলেছি জানি না।

– তো

– আমি তোমাকে খুব ভালবাসি

– তুনি কি জান তুমি কি বলতেছ

– হুম, আমি সব কিছুই ভেবে শুনেই বলছি

– এটা কখনো সম্ভব নয়

– কেন

– কারন আমরা দুইজন দুই জাতির লোক।

– শুধু এই একটায় সমস্যা?

– না আরো আছে। তবে এতটুকু বলতে পারি তোমাকে আমি ভালবাসতে পারব না। আর শোন আমার সাথে আর কথা বলবে না

এই সব বলে অরপা ফোন কেটে দেয়। আমি কি করব বুঝতে পারতেছি না। কিছুক্ষন পর আবার রিং দিলাম। দেখি ফোন বন্ধ।

ফেসবুকে ঢুকে দেখি ও আমাকে ব্লক করেছে।

সেদিন আমি খুব কষ্ট পেয়েছিলাম। জিবনে ২বার আবার ভালবাসার সপ্ন দেখেছিলাম। অবশেষে সেটাই হল না। আসলে আমার

ভাগ্যটাই খারাপ। যাকেই আপন ভাবি, সেই আমাকে দূরে ঠেলে দেয়। তাই মন খারাপ হল আমার। তবে আমি জানি ও আমাকে

ভালবেসেছিল। আমি ওর কথা বুঝতে পেরেছি। কিন্তু ও অনেক বাস্তববাদী মেয়ে। সমাজ মেনে নিবে দেখে ও আমাকে এসব

বলেছে।

তাই আমি ঠিক করলাম আমি ওদের ওখানে যাব। আর ওর সাথে দেখা করব। তবে মজার ব্যাপার হল,আমাদের এখান থেকে

ওদের বাড়ি প্রায় ৩০০ কি.মি. দূরে। তাই আমি বাড়ি থেকে কাপড় নিয়ে বের হলাম। বাড়ি থেকে কেউ কিছুই বলল না। তারাও

হয়ত কিছুটা আচ পেয়েছিল।

অবশেষে ওদের ওখানে যেতে ১ দিন লাগল। তবে ওদের বাড়ি আমি চিনি না। ওর ফোনে আমি ফোন দিলাম তবে ওর ফোন বন্ধ।

আর ফেসবুকেও তো ও আমাকে ব্লক করেছে। তাহলে আমি ওর সাথে যোগাযোগ করব কেমন করে?

তবে ওর একটা বান্ধবির সাথে আমাকে পরিচয় করে দিয়েছিল। তাই তার ফেসবুকে আমি মেসেজ করলাম। ভাগ্য মত সে

অ্যাক্টিভ ছিল। তাই সব ঘটনা তাকে আমি খুলে বলি। পরে তার সাথে আমি দেখা করি। তিনি আমাকে অরপাদের বাড়ির সাম্নের

একটা পার্ক এ বসে রেখে ওকে ডাকতে গেল।

কিছুক্ষন পর অরপাকে দেখতে পেলাম। ও এসেই আমাকে জরিয়ে ধরে কান্না শুরু করল। ওকে দেখেই বুঝতে পারলাম এই ২

দিনে ও শুধু কান্নাই করেছে।

– এই কান্না এখন থামাও, লোকরা তাকিয়ে আছে(আমি)

– এতটা ভালবাস আমাকে(অরপা)

– হুম অনেক

– বিয়ে করতে পারবে আমাকে

– হুম। তুমি রাজি আছ

– হুম

– তাহলে তোমার পরিবারকে এই কথা বলি

– না। তারা এই ভালবাসা কখনো মেনে নিবে না।

– তাহলে বিয়ে করব কেমন করে

– পালিয়ে নিয়ে যেতে পারবা?

– তুমি যাবে

– হুম

– আব্বু আম্মুকে ছাড়া থাকতে পারবে?

– তুমি পাশে থাকবে?

– হুম সবসময়

– তাহলেই হবে

এই বলেই ও আমার হাত ধরে চলে আসে। বাড়িতে এসে আমি সব কিছু পরিবারকে বললাম। তারা মেনে নিল। আর মেনে নিবেই

না কেন, তারস জানে আমি কখনো খারাপ কাজ করব না।

অরপা ইসলাম ধর্ম গ্রহন করে ওর নাম দেওয়া হল রিমা। রিমা নামটা আমার খুব প্রিয়। আমি ওকে কথা দিয়েছিলাম কখনো ওকে

ছেড়ে যাব না। আজও ওকে ছেড়ে যায় নি।

আপনাদের সাথে কথা বলতে বলতে কখন যে রিমা আমাকে জরিয়ে ধরে ঘুমাইছে জানি না। আমি ওর কপালে চুমু খেয়ে ঘুমিয়ে

পড়লাম।

…………………………………………( সমাপ্ত)………………………………..

গল্পের বিষয়:
রোমান্টিক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত