নীল আকাশের প্রেম

নীল আকাশের প্রেম

বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে চিৎকার করে বললাম রিয়া আমি তোমাকে ভালবাসি ।
.
.
আচ্ছা কোনদিন এক আকাশের নিচে বৃষ্টিতে ভিজে আপনার মনের মানুষটাকে বলেছেন যে আমি তোমাকে ভালবাসি ?।চিৎকার

করে বলেছেন যে তুমি শুধু আমার ?।বৃষ্টিতে হাতে হাত রেখে হেঁটেছেন ?আমি করেছি।
.
.
আমার নামটা বাবা মা ভালবেসে রেখেছিল খালিদ।কিন্তু কেও একজন আমার নামটা পরিবর্তন করে রেখেছে মি:ব্যস্ততা ।একটু

অন্যরকম লাগছে তাইনা ?কিন্তু এই নামটা দেবার পেছনে অনেক ঘটনা রয়েছে।বেকারত্বের যুগে যখন সকল যুবক রা একটি

চাকরির জন্য ব্যাস্ত তখন ঠিক ঐ সময়ে আমার চাকরিটা হয়ে যাওয়া মানে সোনার একটা হরিন পাবার মতন।আরে কি আজাইরা

কথা বলে যাচ্ছি ।বিরক্ত হয়ে যাচ্ছেন বুঝতে পারছি।আচ্ছা আসেন আমরা আগের সময়ে ফিরে যাই আর আমার এই নামটা

দেবার রহস্য বলি।সেদিন ও ছিল বৃষ্টি ভেজা এক বিকেল। নিকোষ কালো আকাশটা যেন একটা অন্ধকার ক্যানভাসে পরিনত

হয়েছে।মনে হচ্ছে যেন আকাশমনি একটু পরেই তার গভীর কান্নার জলে আমাদের ভিজিয়ে দিয়ে যাবে।এই বৃষ্টিস্নাত বিকেলের

উত্তরের ঠান্ডা বাতাস আর হাল্কা বৃষ্টি যেন আগে থেকেই কিছু বলে দিতে চাইছে। অফিস থেকে বের হয়ে ছাতাটা মেলে ধরলাম

আকাশের দিকে।কিন্তু তবুও ভিজে যাচ্ছিলাম।অতিরিক্ত বৃষ্টি হবার কারনে রাস্তায় তেমন কোন গাড়ি ও মানুষ নেই।তাই

ছাতাটাকে আটকে রেখে হেঁটে যাচ্ছিলাম।হটাৎ একটা ছবি এসে আমার মুখে এসে ধাক্কা খেল।কিছুটা বিব্রত হয়ে আমি ছবিটা

দেখলাম।আর কিচ্ছু বলতে পারছিলাম না।এত সুন্দর একটা মেয়ের ছবি ।শ্যামলা বরনি মেয়ে টা যেন ছবিতেই আমার মনের

ভেতর একটা অবয়ব তৈরি করে নিয়েছে।কাজল দেওয়া চেহারাটি মধ্যে কি যেন আছে একটা।ছবিটা দেখেই আমি রিতীমত

মনের মধ্যে একটা ধাক্কা খেলাম।আশেপাশে তাকিয়ে দেখলাম।কেও নেই ।ছবিটা আমি আমার পকেটে ডুকিয়ে কোনরকমে

বাসায় চলে আসলাম।ছবিটা পকেটেই ছিল।ডুকতেই মা ডাক দিল।
.
-কখন আসছিস ?(মা)

– এইতএকটু আগে।(আমি)

-শোন তর সাথে কিছু কথা আছে আমার

-হ্যাঁ মা বল।

-তোর বাবাকে তো জানিস।যা বলে তা করেই ছাড়বে।এইবার তোর বাবা তোকে বিয়ে করাবে ঠিক করছে।

-মা এখন কিসের বিয়ে ? আমি মাএ চাকরি পাইছি।আমি বিয়ে টিয়ে করতে পারবনা।

-সেটা তোর বাবাকে কে বোঝাবে ?

-মা আর জাই হোকনা কেন আমি বিয়ে করতে পারবনা।
.
.
মার সাথে কথা বলে রুমে চলে আসলাম।ফ্রেশ হয়ে খেয়ে

খেতে বসলাম ভাইনিঙ টেবিলে ।অপর পাশে বাবা বসেছিল।বাবা আমাকে বলতে শুরু করল।
.
-শোন আমাদের বয়স হইছে।তোমার মারও বয়স হইছে।তাই তোমাকে বিয়ে করিয়ে একজন নিয়ে এসে তারপর আমরা আরাম

করব।

-কিন্তু বাবা আমি এখন বিয়ে করতে পারবনা।সবে মাত্র চাকরি পেয়েছি।

-তাতে কিছু হবেনা ।সামনের সপ্তাহ থেকে মেয়ে দেখা শুরু করব।তৈরি হয়ে থেক।
.
.
বাবাকে আর কিছু বল্লামনা ।কারন বাবাকে আর কিছু বলে লাভ হবেনা। খাবারটা শেষ করে একরাশ বিরক্তি নিয়ে চলে আসলাম

আমার রুমে।ফেসবুকটা লগিন করলাম।আগে প্রচুর গল্প লেখালেখি করতাম।কিন্তু চাকরি হবার পর কেন জানি আর লিখতে

ইচ্ছা হয়না।তাই খুব কম লিখি।আজকের কেন জানি খুব লিখতে ইচ্ছে করছে।কিন্তু কি নিয়ে লেখা শুরু করব?।ভেবে পাচ্ছিলাম

না।হঠাৎ করেই ছবির কথাটা মনে হল।ওটা নিয়ে লেখা যায় ।ছবিটা বের করে সামনে রেখে লিখতে শুরু করলাম ।কিছুক্ষণ

লেখলাম।হঠাৎ করে একটা টুং করে শব্দ হল দেখলাম একটা মেয়ে রিকুয়েষ্ট পাঠিয়েছে ।রিকুয়েষ্ট বক্সে 1100+ পরে আছে।ঐ

গুলোর মধ্যে কিছু কিছু এক্সেপ্ট করেছি ।কি মনে করে আইডি তে ডুকলাম।দেখলাম একটা পুতুলের ছবি দেয়া।কি আবার মনে

করে এক্সেপ্ট করে ফেলছি।তখন কিছু সময় ফেসবুকে ব্যয় করে বেরিয়ে পরলাম।বিকেল বেলা হঠাৎ করে মেসেনজার এ টুং

করে শব্দ হল।দেখলাম সেই সকালের মেয়েটির আইডি।মেয়েটি মেসেজ করেছে ।আমিও উত্তর দিলাম।
.
-tnx (মেয়েটি)

-tnx কেনো ? (আমি)

-এইজে আপনি আমার rqst accept করছেন তাই।

-তাহলে আমাকেও তো ধন্যবাদ বলতে হয়।

-আপনি কেন বলবেন ?

-কারন এক্সেপ্ট করেছি বলে রিপ্লায় দিয়েছেন।

-আচ্ছা আপনি কেমন আছেন ?

-জী ভাল ।আপনি ?

-আমিত ভীষন ভাল।

-এত ভাল থাকার কারন ?

-কারন আজকে পড়ালেখা নাই। sir কে বলেছি যে পরবনা তাই sir চলে গেছে।তাই ।

-ওও।আচ্ছা ।
.
.
সেদিন ঐরকম আরো কথা হল।রাতে খাবার শেষ করে আমি আমার প্রিয় কাছটা করতে শুরু করলাম।হাটা।আমি রাতে হাঁটতে

পছন্দ করি ।বৃষ্টিভেজা গভীর রাতে জনমানবহীন রাস্তায় খালিপায়ে হালকা ঠান্ডা বাতাসের মধ্যে আমি হাঁটতে ভীষন ভালবাসি।

তাই সেদিন ও হাটলাম।গভীর রাত পর্যন্ত ।আমার এই ভালবাসার জন্য আমাকে কম বকা শুনতে হইনি।বাবা বলেছিল ।এমন

কোন মেয়েকে বিয়ে করাবে যে আমার এই অভ্যাস টি নাকি বদলিয়ে দিবে।কিন্তু আমি মনে মনে বললাম ।বিয়ে এমন মেয়েকেই

করব যে আমার ভালবাসাগুলোকে ভালবাসবে।যে আমার মতই বৃষ্টির রাতে হাঁটতে পছন্দ করবে।আমাকে আটকে নয় বরং

আমার হাতে হাত রেখে সারারাত আমার সাথে হাটবে।হাটতে হাটতে ক্লান্ত হয়ে গেলে আমার কাঁধে মাথা রেখে হাটবে …গভির

রাতে আইসক্রিম খাবার বায়না ধরবে …আমার ভালবাসা গুলোকে ভালবাসবে আর ছোট ছোট অদ্ভুত বায়না ধরবে.. আদৌ কি

এরকম মেয়ে পাওয়া যাবে যে আমার মত এরকম অদ্ভুত কাজগুলোকে ভালবাসবে ?আমার জানা নেই।সেদিন রাতে আবারো

মেয়েটার মেসেজ।
.
-ঐ আপনার কি খবর?

-এইতো ভাল আপনার ?

-হ্যাঁ ভাল।disturb করতিছি নাত?

-জি না ।একদম নয়।

-ও তাহলে কি করছেন এখন ?

-হাটছি।

-এত রাতে আর বৃষ্টির মধ্যে?

-জি।

-কেন ?

-আমার ভাললাগে তাই।

-ইশশ।আমি যদি আপনার সাথে হাতটে পারতাম ।

-তো হাঁটেন ।কিন্তু মানুষতো আপনাকে পাগল বলবে।

-বলুক।আমার ভীষন ভাল লাগে ।আপনি আমাকে নিবেন?

-হাহাহাহা

-এভাবে হাসছেন কেন ?

-আপনার কথা শুনে।

-নাহ সত্যি আমি যাব আর হাঁটব আপনার সাথে।শুধু আজকে না মিঃ ।হতে পারে আজীবনের জন্য

-কিহহহ?আজিবন মানে ঠিক বুঝলামনা।

-হিহিহি বুঝতে হবেনাহ।আর আপনি বুঝবেন ও না ।মিঃ গাধা

-এই এই কি বললেন আপনি ??

-আচ্ছা আপনি হাঁটেন ।আমি ঘুমাই ..

-এইযেএএ আপনার নামটা বলে যান।

-হিহিহিহিহিই

-হাসছেন কেন ?

-আচ্ছা কল্পনায় বলব আপনাকে।টাটা
.
আর কিছু বলেনি ।অফলাইন হয়ে গেছে ।আজব একটা মেয়ে ।নামটা বললে এমন কি হত ?ফোনটা রেখে হাঁটতে লাগলাম।

এতক্ষণ গুরি গুরি বৃষ্টি পরছিল কিন্তু এখন বাড়ছে।কতক্ষণ হেঁটেছি মনে নেই ।সকালে নিজেকে ঘুমের মধ্যে আবিষ্কার করলাম।

অবশ্য রাতে হেঁটে এসেই ঘুমিয়ে পরেছিলাম।সকাল বেলা উঠে অফিসে যাবার জন্য ফ্রেশ হয়ে নিচে যেতেই এক অদ্ভুত জিনিস

দেখলাম……
.
অনেক মানুষ বিশেষ করে আমার আমার কিছু আত্মীয় আর কিছু অচেনা মানুষ যদিও আমার কাছে মনে হচ্ছে তারা আমার

কোন কাজে আসবেনা তবুউ একটা অজানা কৌতুহল যেন জেগে উঠল মনে ।নিচে নামতেই সবাই যেন অদ্ভুদ দৃষ্টিতে তাকাল

আমার দিকে ।আমি অবশ্য অতটা গুরুত্ব দেইনি কিন্তু মনে হচ্ছে কিছু একটা রহস্য ঠিকি আছে তাদের মধ্যে ।সবাই যেন একটা

উৎসবে এসেছে।আমি নিচে নেমেই রান্না ঘরের দিকে গেলাম যেখানে মা আছে ।আমার প্রচন্ড ক্ষিদে পেয়ে গেছে ।মাকে বললাম

-আমার খুদা লেগেছে…

-পরে খেয়ে নিস আগে মেহমান যাক তারপর ।আর শোন যা একটু ভাল কাপর চোপর পরে আয় যা।

-আমাকে আবার ভাল কাপর চোপর পরতে হবে কেন?

-সেটা একটু পরে আসলেই বুঝতে পারবি ।এখন যা।

মার কথার অবাধ্য আমি কখনওই হইনি।কিন্তু হঠাৎ এমন করার কারনো বুঝতে পারছিনা।যাই হোক আমি রুমে গিয়ে একটু চেন্জ

হয়ে নিচে এসে সালাম দিয়ে বসেছি।পাশে বাবা আর আমার চাচা ভাইরা বসে আছে।আর অপরদিকে একটা মধ্যেবয়স্কলোক আর

একজন মহিলা বসে আছে।তাদের সাথে আরো দুজন লোক।আমি বসতেই তারা নানান কথা জিগ্যেস করল আমাকে।কি করি

কতটুকু পরাশোনা করেছি এগুলু।আমি সবকিছুর উত্তর দিলাম সুন্দর করে কিন্তু বুঝতে পারছিলামনা হঠাৎ করে এইসব কেন।

আমি মার দিকে তাকালাম…তবে মার দিকে তাকিয়ে যা বুঝলাম আপাদত চুপ থাকতে হবে ।একটু পর আব্বু বলল চলে যেতে।

আমি কিছু বলিনি মাকে যাবার সময় বললাম আমার রুমে একটু আসতে।আসার সময় তারা যেন কিসের একটা দিনের কথা

বলছিল ।মা কিছুক্ষণ পরে আসল ….

-মা ওনারা কারা ছিল?

-বস তোর সাথে কথা আছে…

-বসলাম এবার বল।

-ওরা পাত্রীপক্ষ তোকে একবার দেখতে এসেছিল.

-কিহ পাত্রীপক্ষ মানে কি

-মানে কিছুনা আগামি মাসের 12 তারিখ তোর বিয়ে ।

-মা আমাকে না জানিয়ে এসব কি বলছ তুমি ।এখন বিয়ে ?জানিনা চিনিনা এমন একটা মেয়েকে বিয়ে করব?আমার স্বপ্ন গুলোর

কি হবে?

-মেয়েটা খুবই ভাল।আর তোর ঐ পাগলামি গুলাকে সামলাতেই ঐ মেয়েকে বেছে নিয়েছি আমরা..মেয়েটা খুব সেনসিটিভ।তবে

খুব ভদ্র ।সবাইকে ভালবাসে …সবকিছুতেই এগিয়ে এই যুগের মেয়ে হয়েও।ঘর সংসার সব..

-মা একটা কথা বলত

-বল

-বিয়েটা করছে কে?

-কেনো তুই

-তাহলে তুমি অন্যদের কথা চিন্তা করছ..সবাইকে আগলিয়ে রাখবে সংসারি খুব ভাল কিন্তু যেখানে তোমার ছেলেই খুশি হবেনা

সেখানে অন্য কিছু কেন আনছ?আমার কথা চিন্তা করছনা কেন?

-দেখ তোর ঐ পাগলামি স্বভাবটাকে আটকাতেই আমি ঐ মেয়ে কে পছন্দ করেছি।

-মা তুমি জান আমি আমার স্বভাবগুলু বদলাতে পারবনা ।আর শোন আমি ওরকম মেয়েকেই বিয়ে করব যে আমার পাগলামি

গুলোকে ভালবাসবে…

-অতকিছু জানিনা ।আগামি মাসে তোর বিয়ে।এটাই ফাইনাল।আর মেয়েকে যদি দেখতে চাস তাহলে পরশুদিন দেখে আসিছ ।

রেস্টুরেন্টে গিয়ে ।

মা চলে গেল।বুজতিছিনা কি করব ।হঠাৎ করে এমন একপাশে ডিসিশন ?আর এমন একটা কারন আমার পাগলামি গুলু

কে কমাতে নাকি বিয়ে …হাসতে ইচ্ছে হচ্ছে ।
.
যাক সেই দিনটা আসল ।খুব ইচ্ছে ছিল সেই বালিকাকে দেখার যার সাথে আমার বিয়েটা ঠিক হয়েছিল।আজকে সোমবার।একটা

রেষ্টুরেন্টে বসে আছি আমি ।কিছুক্ষণ পর দেখলাম রাস্তায় গাড়ি থেকে একটা মেয়ে নামল ।গায়ে তার আধুনিকতার ছোয়া।জিন্স

শার্ট চোখে সানগ্লাস।আমি শুধু তাকিয়ে ছিলাম তার দিকে।শুধু যে আমি তা না আশেপাশে বসে অনেক ছেলেরাই দেখি তাকিয়ে

আছে বালিকার দিকে ।আর তাকাবেইনা কেন আজকাল যা অবস্থা ।থাক ঐদিকে আর যেতে চাইনা।দেখলাম বালিকা রেষ্টুরেন্টে

ডুকে আমার দিকে এগিয়ে আসছে।এসেই ধুপ কর বসে পরল ।চোখ থেকে চশমাটা নামিয়ে আমার দিকে তাকাল।আমি রিতিমত

উৎসুক নিয়ে তাকিয়ে আছি।মনে মনে ভাবছি জীবনের প্রথম ধাক্কাটা খেলাম মেয়েটাকে দেখে ।যেটা জীবনে কখনোই চাইতামনা

সেটাই যেন আমার সামনে হাজির।

-হাই আমি তিন্নি(হাত বারিয়ে)

-হাই।আমাকে চিনলেন কি করে?

-আব্বু ছবি দেখিয়েছিল।

-ওহ আচ্ছা।

-হুম তো বলুন কি বলবেন।

-আসলে কি এই বিয়েটা হুট করেই হও যাচ্ছে ।

-তো ?

-নাহ আসলে কথাটা হচ্ছে আমাদের একটু সময় প্রয়োজন।

-এইযে মিঃ আমাদের এখনো হয়নি ওকে?আর হ্যাঁ টাইম আপনার লাগলে দেখা যাবে পরে

-আচ্ছা আপনি কি এই বিয়েতে রাজি?

-নাহ

-তাহলে বিয়েটা করছেন কেন?

-আব্বুর কথায় ।

-আব্বুর কথাইকি সব আপনার জন্য? আপনার নিজের কোন লাইফ নেই?

-আছে ।তবে আব্বু যেটা বলে সেটাই

-ওহ আর যার সাথে বিয়ে হবে তার কথা ভাববেন না

-দেখুন আপনার সাথে বিয়ে হবে বলে আমি আমার বয়ফ্রেন্ড এর সাথে ব্রেকআপ করেছি।এমনে এমনে ?

-সেটা আপনার বিষয় ।আর হ্যাঁ আম্মু আপনাকে কিছু বলেছে?

-বেশি কিছু বলেনি শুধু বলেছে আমার ছেলের পাগলামি যাতে কমে যায় বিয়ের পর তা খেয়াল রাখতে…

-আপনি কি বলেছেন?

-কিছু বলিনি ।বলব আপনার পাগলামি শুনবার পর।

-দেখুন আমার বেশ কিছুপাগলামি আছে।আমি বলতে শুরু করলাম।রোজ সকালে আমার আগে উঠতে হবে আর শাড়ি পরে

এসে আমাকে ডাকতে হবে।তারপর আমরা দুজনে ভোরবেলা হাঁটতে বের হব।তারপর দুপুরে এসে একসাথে খাব।বিকেল বেলাটা

হয়ত

ঘুরাঘুরি নাহয় এককাপে বসে চা খাওয়া কিংবা বারান্দায় দাঁড়িয়ে বিকেলটাকে উপভোগ করা।নয়ত ছাদে বসে গল্পের বই পরা

আমি পরব আপনি শুনবেন।প্রচন্ড গল্প পাগল হতে হবে আমি যাকে ভালবাসব।সন্ধ্যে বেলা গল্প তারপর খেয়ে রাতে গুম।আবার

রাত তিনটের দিকে আমার হাঁটা অভ্যাস আছে ।বিয়ের পর আপনি আমার সাথে হাটবেন।তারপর যখন বলব তখন হলুদ শাড়ি

পরে হাল্কা সাজতে হবে।বৃষ্টির দিনে দুজনে একসাথে ভিজব।হুট করেই কাওকে না বলে দুজনে হারিয়ে যাব।ছোট ছোট বায়না

ধরবেন।

-ও হ্যাঁলো থামুন ।আপনার একটা পাগলামিও আমি করতে দেবনা।এগুলু আমার পছন্দ নয়।এগুলো আপনাকে ছেড়ে দিতে হবে।

-তাহলে সরি আমি ছাড়তে পারবনা।

-দেখুন আমার পক্ষে এগুলু পছন্দ নয় ।পার্টি বন্ধুদের নিয়ে ঘোরা এগুলা থাকবে ।শাড়ি টারি আমি পরতে পারবনা।বৃষ্টিতে ভিজলে

আমার ঠান্ডা লাগবে ।আর ঐ কি বললেন গল্পের প্রতি ভালবাসা ?খুব বোরিং লাগে এগুলু আমার কাছে ।আর কি রাত জেগে হাটা?

গাড়ি থাকতে হাটত যাব কেন? আর রাতে আমি ঘুমব।ঐসব হাঁটতে পারবেনা আমি। আচ্ছা আপনি কোন যুগে পরে আছেন

বলুনতো?এখনকার যুগে এইসব কেও পছন্দ করে নাকি।যত্তসব ফাউল

-মাফ করবেন।আপনার সাথে আমার কোনভাবেই মিল অসম্ভব ।আপনি সমপুর্ন আলাদা ।হ্যাঁ পারলে বিয়েটা ভেঙে দিবেন।আর

না ভাঘতে পারলেও কিছু করার নেই এই বিয়েটা আমি করছিনা ।

টেবির থেকে উঠে চলে আসলাম বাইরে।এতক্ষণ কেমন যেন একটা দমবন্ধকর অবস্থাতেই ছিলাম।আসার সময় একবারো পিছন

ফিরিনি ।খুব সুন্দর করে অপমান করল মেয়ে টি আমাকে।মার উপর রাগ উঠতেছে ।শেষ পর্যন্ত এমন একটা মেয়ে পছন্দ করল

যেকিনা গল্প পছন্দ করেনা ?
.
সেদিন বাসায় এসে কাওকে কিছু বলিনি ।রাতে খাবার সময় বাবা রেগে বলে উঠল তোর আজকে থেকে খাবার বন্ধ ।আমি নাকি

মেয়ে টাকে অপমান করেছি।যতদিন না মেয়েরা কাছে মাফ চাইব ততদিন নাকি ঘরে ভাত খেতে দেবেনা আমাকে ।আমি কিছুই

বলিনি।বলতেও চাইনা ।যাদের কাছে আমার কোন দাম নেই ..আমার পছন্দ অপছন্দ কোনকিছুর দাম নেই সেখানে আমি কিছু

বলতে চাইনা।রুমে এসে মাকে সব বললাম।মার কথায় সবচেয়ে বেশি কষ্ট পেয়েছিলাম।মা বলেছিল বিয়ে করলে নাকি ঐ মেয়ে

কেই করতে হবে ।কিছু বলিনি।এরকম একটি মেয়ে কে বিয়ে করতে হবে ভেবে সবকিছু যেন অগছালোহয়ে যাচ্ছিল ।রাত

তিনটার আশেপাশে।ডাইরিটা নিয়ে বেরিয়ে পরলাম…..
.
আজ প্রায় এক সপ্তাহের পর কেমন যেন অদ্ভুত লাগছিল নিজেকেই।নিজের প্রতি খেয়ালটা যে রাখব সে খায়ালটাও ছিলনা।

সেদিন বেরিয়ে পেরেছিলাম রাতে ।আজ সকালে ফিরেছি কিছুটা রাগ আর কিছুনা অভিমান।সবাই রেগে থাকলেও জিগ্যেস

করতে ব্যাস্ত কোথায় ছিলাম আমি ।হয়ত কোন একজায়গায় ।বাবা রাগে থরথর করে কাঁপছে আর মা কান্নাকাটি করছে ।সবাই

বুঝতে পেরেছিল যে আমি বিয়েটা করবেনা বলেই চলে গিয়েছিলাম।রুমে ডুকে ডাইরিটা বিছানায় রাখলাম।ডাইরিটা গল্পে পুর্ন

হয়ে গেছে।হুট করেই ফোনটা দেখলাম।ফোনটা নিয়ে লগিন করলাম ফেসবুকে ।অনেখ মেসেজ।রীতিমত বন্ধুরা আত্মীয়সজন

গল্প পাঠক/পাঠিকারা মেসেজ ট্যাগ।এমন হয়েছে যে আমার প্রফাইল দেখে মনে হচ্ছে আমি মারা গেছি ।ভীষন ভাবে কিছুক্ষণ

হাসলাম আমি ম।একটা মেসেজ দেখে আমি হতভম্ব ।
.
সেদিন ছিল হাল্কা মেঘের সাজ নেওয়া একটি দিন।টেবিলে রাখা চার কাপটা নিয়ে বারান্দায় বসলাম আমি মেঘটা বোধহয় এবার

পরেই যাবে।ভাবতে লাগলাম কিছু একটা….নাহ বিয়েটা আমার হয়নি ।সবথেকে বেশি খুশি আজকে আমি ।একটা অন্যরকম

ভাললাগা কাজকরা শুরু করেছিল মনে তবে সবাই এই বেপারটার পর কেমন যেন দুরে দুরে মনোভাব বজায় চলত।আমি বেশ

বুঝতে পারতাম।কিন্তু কিছু করতে পারতামনা আর বলারো কিছু ছিলনা।শুধু একটাই ভাবনা ছিল মনে…স্বপ্নের বালিকার কাছে

কোনদিন পৌছাব আমি ।সেদিনকার মেসেজটা দেখে আমার জীবন পাল্টে যাবার উপক্রম ছিল…ভীষন আনন্দে কেঁদেই

ফেলেছিলাম…জানতে চান কে দিয়েছিল মেসেজটা?আর কি লিখেছিল তাতে?….বলছি
.
শোন আমি জানি তুমি আমাকে ভালবাসো..অনেক ভালবাস।জান আমি তোমাকে ভালবেসেছি..কিন্তু কিভাবে?তোমার পাগলামি

গুলু দেখে।হুম আমারো ভাললাগতো তোমার পাগলামি গুলু।প্রতিদিন তোমাকে নিয়ে ভাবতাম।তোমার কথাগুলু তোমার

পাগলামি গুলু ।তোমার গল্পগুলু প্রতিদিন পরতাম।ভাবলাম লেখক সাহেবকে একদিন মেসেজ দিয়েই দেখি।আমি দিয়েছিলাম

আমার পরিচয় গোপন করে ।অনেক্ষন কথা বলেছিলাম।তোমার অদ্ভুত কিছু চাওয়া আমার ভালবাসার কারন হয়ে গিয়েছিল ।

হুম সত্যি বলতে আমিওনা তোমার মতই এরকম পাগলামি করতে চাই করিও।হিহি।তবে অনেক সময় পেরে উঠতে পারতামনা ।

কিন্তু আপনি মিঃ যেদিন আমার দিকে হা হয়ে রাস্তায় তাকিয়েছিলেন ঐদিনি বুঝেছিলাম আমার মনেও কিছু একটা আছে।

তারপর তুমি প্রতিদিন আমার কলেজের পর আমাকে দেখতে আর আমি তোমাকে যদিও তুমি বুঝতে পারতেনা সেটা।আস্তে

আস্তে তোমার বেপারে জেনে আমিও ভালবেসে ফেলেছি ও হ্য তোমাকে কম তোমার পাগলামি গুলুকে বেশি।প্রতিদিন ভাবতাম

এই বুজি তুমি রাতে এসে আমাকে টেনে তুলে রাস্তায় হাঁটতে বের হবে …দুজনে হাতে হাত রেখে হাঁটব সারারাত।কিন্তু কি যান

সেদিন হুট করেই আমার স্বপ্ন গুলো যেন আমার বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল ।আমার ভালবাসা যেন আঙ্গুল তুলে আমাকে প্রশ্ন করা

শুরু করেছিল সত্যিইকি আমি তোমাকে ভালবাসি কিনা…তুমি নাকি বিয়ে করছ।সত্যি সেদিন রাতে খুব কান্না করেছিলাম।পরে

জানলাম তুমি কোথাও চলে ।অনেক চিন্তা হয়েছিল অনেক কেদেছিলাম।সত্যি তোমাকে ভালবাসি….ফিরে এস তুমি প্লিজ ….

ইতি তোমার গল্পের নায়িকা
.
লেখাটা পরে আমি ছিলাম কিছুটা সময় নিস্তব্ধ ।শুধু তাকিয়েছিলাম আমি অনেক্ষন।চোখগুলি ভারী হয়ে এসেছিল আমার

অশ্রুজলে।কষ্ট না আনন্দের।আমার পাগলামি গুলোকে ভালবাসে?সেদিনের পর থেকে আজ চারদিন।আকাশের অবস্থা

মোটামুটি।

কিছু বলতে ভুলে যাচ্ছি বলছেন?হুম বলছি মেয়েটির নাম রিয়া।মেয়েটিকে দেখেছিলাম অফিস থেকে আসতে এক রৌদ্রচ্ছল

দিনে।শ্যামলা গরনীর বালিকাকে দেখেছিলাম আমি মুগ্ধ দৃষ্টিতে আকাশ হতে পরা একঝাঁক সোনালি আলো এসে পরেছিল

মেয়েটির মুখের উপরে।কিছু বলতে ইচ্ছে হয়নি।শুধু তাকিয়ে ছিলাম।পরে একটু হেসেছিলামো বটে ।বাম হাতে এক ঝাঁক বই ।

সব গল্পের ।বুঝলাম মেয়ে টি বই পোকা।প্রতিদিন মেয়েটির জন্য আগেই এসে পরতাম আর তাকিয়ে থাকতাম।হাতের উল্টো পিঠ

দিয়ে চোখটা মুছে একটু রেডি হলাম।কিন্তু একটু ভয় করছে বাইরে এক পশলা বৃষ্টির সাথে এক বিন্দু আলো জলে উঠছিল।তবুও

আমাকে যেতে হবে।আমি একটি পান্জাবি গায়ে বেরিইপরলাম।বৃষ্টির ফোঁটাগুলি যেন আমাকে ভিজিয়ে দিতে ব্যাস্ত।

.
একজোড়া লাল গোলাপ নিলাম।আমি হাঁটতে হাঁটতে পৌছেগেলাম সেই রাস্তাটায় যেখানে রিয়াকে রোজ দেখত।অবাক করা

বিষয় হল।আমার আগেই রিয়া দাঁড়িয়ে আছে সেখানে।কাছে গেলাম।বৃষ্টিতে ভিজে একদম একাকার সে।বৃষ্টির জল মাথা থেকে

বেয়ে নিচে পরছিল।পথিমধ্যে অতেক্রম করছিল তার শুভ্র ঠোটগুলি…

কাছে গেলাম…

-এখানে দাঁড়িয়ে ভিজছ কেন?

-তুমি আসবে তাই

-তুমি জানতে আমি আসব?

-নাহ তবে জানতাম কোননা কোনদিন আসবে ।প্রতিদিন দাঁড়িয়ে থাকি এখানে..

আমার চোখ দিয়ে অনবরত বৃষ্টির জল জরিয়ে পারছে বেশ বুঝতে পারছিলাম।আমি ওর হাতদুটি ধরলাম।কিন্তু ও ছাড়িয়ে নিল

বলল আগে শাস্তি ..আমাকে কষ্ট দেওয়ার জন্য তারপর কিছু…বলেই ঘুরে চলে যাচ্ছিল

-আমার শাস্তিটাত বল ।

-তুমিই জান তোমাকে কি করতে হবে

হুট করে মাথায় কিছু আসছিলনা ।দৌড়ে গিয়ে রিয়ার হাতধরে উকে ঘুরিয়ে দিলাম।হাঁটু গেড়ে বসে পরলাম ।গোলাপ টা ওর

সামনে বারিয়ে বললাম

-আজ রাতে হলুদ একটা শাড়ি পরে হাতধরে হাঁটবে কি আমার সাথে ?

-হুমমমম (কেঁদে দিয়ে )

আমি জরিয়ে ধরলাম রিয়াকে ।আকাশটা তখনো কেঁদে চলেছে।আর তার সাথে পাল্লা দিয়ে কাঁদছে রিয়া।আর আকাশের কোনা

থেকে সূর্যের এক চিলতে আলো আমাকে চোখটিপ দিল ।আমি হাসলামআমি

.
ব্যাস তারপর শুরু হল নতুন এক জীবন ।নতুন পথচলা নতুন করে পাগলামি ।হুম আমার সাথে রিয়ার পাগলামিগুলাও বেরেছে….
.
………………………………………………………….সমাপ্ত……………………………………………………

গল্পের বিষয়:
রোমান্টিক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত