:-আপনি নিশ্চয়,আমার বাবার সম্পত্তির জন্য আমাকে বিয়ে করেছেন,তাই না?
রুমে ডুকতেই কথাটা বললো,নাদিয়া।
:-………..(আমি)
:-তা না হলে,আমাকে এই অবস্থায় কেউই বিয়েই করতো না।
:-………..(আমি)
এবারও আমি কোন কথা না বলে,রুম থেকে বাহির হয়ে আসলাম।
কিছুসময় পর,
:-আমার খুদা নেই।
খাবারের প্লেট হাতে করে রুমে ডুকতেই কথাটা বললো,নাদিয়া।
:-আপনার জন্য আমি খাবার আনি নাই।আপনি চুপচাপ খাটে গিয়ে বসুন।
নাদিয়া জবাবে কিছু না বলে খাটে গিয়ে চুপচাপ বসে থাকলো।
:-খাইয়ে দিবো না নিজে খেয়ে নিবেন?(আমি)
:-মানে?
অবাক চোখে আমার দিকে তাকিয়ে কথাটা বললো,নাদিয়া।
:-মানে হলো,আপনি নিজের জন্য খাওয়ার দরকার নাই।আপনি আপনার পেটের ঐ সন্তানের জন্য খাবেন।
:-আপনাকে আমার সন্তানের জন্য চিন্তা করতে হবে না।
:-সেটা আপনার না বললেও চলবে।
এই বলে আমি হাত-ধুয়ে খাবারের প্লেট হাতে নিয়ে নাদিয়ার পাশে গিয়ে বসলাম।
:-নিন,হা করুন।
খাবারের লোকমা নাদিয়ার মুখের সামনে নিয়ে গিয়ে বললাম,আমি।
:-বললাম তো আমি খাবো না।(নাদিয়া)
:-বলছি হা করুন।
ধমকের সুরে বললাম।অমনি নাদিয়া ভয় পেয়ে হা করলো।
এরপর আমি নাদিয়াকে খাইয়ে দিতে লাগলাম।
আর নাদিয়া ও অবাক চোখে আমার দিকে তাকিয়ে থেকে খেতে লাগলো।
:-আপনি বসুন,আমি আপনার বিশ্রামের ব্যবস্থা করে দিতেছি।
ওকে খাওয়ার খাওয়ানো শেষ হলে,একথা বললাম আমি।
:-………..(নাদিয়া)
নাদিয়া কিছু না বলে চুপ থেকে আমার দিকে তাকিয়ে থাকলো।
:-নিন,এবার শুয়ে বিশ্রাম নিন।আর শুনুন,আপনার যদি কোন কিছুর দরকার হয় তাহলে আমাকে ডাকবেন।ঠিক আছে?
বিশ্রামের ব্যবস্থা করে দিয়ে বললাম,আমি।
জবাবে নাদিয়া মাথা নেড়ে সায় দিলো।
আমি আর রুমে না থেকে রুমের বাহিরে চলে এসে বেলকনিতে এসে দাড়ালাম।
বেলকনির পাশে থাকা টুলটা নিয়ে আমি তাতে বসে রাতের আকাশটা দেখতেছি।
ভাবনার চাদরে এসে গেলো আমার পুরোনো সেই অতীত।যেই অতীত কখনো ভুলার নয়।
যতই সেই অতীতের কথা ভাবতেছি,ততই চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়তে লাগলো।
:-নিধি,ওই নিধি,কোথায় তুমি?
অফিস থেকে বাসায় এসে ওকে কোথায়ও না দেখে,আমি ওকে ডাকতে লাগলাম।
কিন্তু ওর কোন সাড়াই পেলাম না।
তাই আমি রান্নাঘরের দিকে গেলাম।
রান্নাঘরে গিয়েই তো আমার মাথায় যেন আকাশ ভেংগে পড়লো।
দেখি নিধি অচেতন হয়ে ফ্লোরে পড়ে আছে।
আমি দিশেহারা হয়ে পড়ি ওর এই অবস্থা দেখে।
:-কি হয়েছে,নিধি?তুমি এভাবে পড়ে আছো কেন?
নিধির চোখে মুখে পানির ছিটা দিতেই ও চোখ খুললে,আমি একথা বলি।
:-না মানে,আসলে হঠাৎ করে মাথাটা ঘুরে উঠলে আমি পড়ে যাই।এরপর আর কিছু মনে নাই।
সোজা হয়ে উঠতে উঠতে বললো,নিধি।
:-ওহহ,আচ্ছা এখন উঠো।খাওয়া-দাওয়া করে আমরা ডাক্তারের কাছে যাবো।ঠিক আছে?
:-হুমম।
:-উঠো,
:-ওহহ,উঠতে পারছি না যে?
উঠে দাড়াতে চেষ্টা করে কথাটা বললো,সে।
:-আচ্ছা,ঠিক আছে আমিই তোমাকে নিয়ে যাচ্ছি।
এই বলে আমি নিধিকে কোলে নিলাম।
নিধি আমার গলা জড়িয়ে ধরে আমার গালে,,,,
:-উম্মাহ,
:-আরেকটা দাও।
:-না দেবো না।তুমি আমাকে দাও,,,
:-তাহলে এই নাও।
এই বলে আমি নিধির কপালে একটা চুমু খেলাম।
অতঃপর নিধিকে রুমে নিয়ে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে আমি খাবার আনতে রান্না ঘরে চলে আসলাম।
:-জানো,আমার বোধহয় আমাদের ঘরে নতুন মেহমানের আগমনের বার্তা আমরা পেয়ে গেছি।তোমার কি মনে হয়?
খাবার খেতে খেতে বললো,নিধি।
:-হুমম,আমার ও তাই মনে হয়।এখন নাও,হা করো।
খাবারের লোকমা নিধির মুখের সামনে নিয়ে বললাম।
:-হুমম।এবার তুমি নাও।
আমি খাবারের লোকমা মুখে নিলাম।
:-জানো,তখন না আমি খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম।(আমি)
:-কেন?(নিধি)
:-বারে,তুমি যেভাবে পড়ে ছিলে,আমি তো ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম।
:-…….(নিধি)
অতঃপর খাওয়া-দাওয়া শেষ করে আমি,নিধিকে নিয়ে বাহির হলাম।উর্দেশ্য,হাসপাতাল।
:-একি,আপনি এখানে?
নাদিয়ার আসার উপস্থিতি টের পেয়ে চোখের পানি মুছে ওর দিকে ফিরে কথাটা বললাম আমি।
:-না মানে,রুমের দরজা খোলা দেখে উঠে আসলাম।(নাদিয়া)
:-ও,আচ্চা এখানে কিছুক্ষন বসবেন?
:-হুমম,শুয়ে থাকতে আর ভালো লাগতেছে না।
:-হুমম,বসুন।
অতঃপর নাদিয়া আমার পাশে বসলো।
:-কি করছিলেন?এখানে বসে?(নাদিয়া)
:-এখানে বসে,রাতের আকাশ এবং প্রকৃতিটা দেখছিলাম।কি সুন্দর লাগছে পরিবেশটা,তাই না?
:-হুমম।
এরপর কিছুসময় নিরবতা।
:-আচ্ছা,আপনি তো আমাকে এখনও বলেন নাই যে,আপনি আমাকে কেন বিয়ে করেছেন?
নিরবতা ভেংগে বললো,নাদিয়া।
:-সেটা জানা কি,এতটা জরুরি?
:-হুমম।
:-আমি আপনাকে বিয়ে করেছি আপনার চিন্তা করে।
:-মানে?
অবাক হয়ে।
:-আপনার বাবা চাই ছিলো আমি আপনাকে যেন বিয়ে করি।তার বিনিময়ে আমি নাকি উনার সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হবো।
:-তো?
:-আমি আপনার সম্পর্কে জানতে চাইলাম।তো উনি বললেন আপনি নাকি প্রেগন্যান্ট।কিছুদিন আগে আপনার স্বামী নাকি রোড অ্যাক্সিডেন্টে মারা গেছেন।এখন আপনার দেখা-শুনা করার মত কেউই নাই।উনার একার পক্ষে আপনাকে দেখা-শুনা করা সম্ভব হচ্ছে না।তাই উনি আমার সাথে আপনার বিয়ে দিতে চাইছিলেন।আর…
:-আর তাই আপনি রাজি হয়ে গেলেন?
:-না।
:-তাহলে?
:-আপনার বাবা চাইছিলেন,আমি যেন আপনাকে বিয়ে করে,আপনার বাবার বাসায় থেকে যাই।কিন্তু আমি ওটা মোটেই চাইছিলাম না।আমি শুধু চাইছিলাম,,,
:-আপনি চাইছিলেন কিভাবে আমার বাবার সম্পত্তি আপনার ভাগে আনবেন,তাই আমাকে নিয়ে আসলেন আপনার বাসায়,তাইতো?
:-আপনি আমাকে যেটা ভাবার ভেবে নেন।এতে করে আমার কিছুই করার নাই।আচ্ছা,আপনি বলুনতো,আমি আপনার বাবার টাকা-পয়সা,সহায়-সম্পত্তি দিয়ে কি করবো?
:-সেটা আমি কি করে বলবো?আচ্ছা তা না হলে আপনি কি চাইছিলেন?
:-আমি আপনার বাবাকে সরাসরি বলে দিয়েছি,উনার কোন সম্পত্তি আমার দরকার নাই।আমি শুধু আপনাকে চেয়েছিলাম।আর আপনাকে যেহেতু আমি পেয়েই গিয়েছি,সেহেতু আমার আর ওখানে থাকার মানেই হয় না।আর তাই আপনাকে নিয়ে আমি সোজা এখানে চলে আসি।
:-ও,তাই বুঝি?
:-হুমম।
:-আচ্ছা,তাহলে আপনি কেন আমার মত একজন প্রেগন্যান্ট মেয়েকে বিয়ে করলেন।
:-বিয়ে করলাম কেন?তাইতো?
:-হুমম।
:-সেটা আপনি সময় মতো জানবেন।এখন চলুন ঘুমাতে হবে না?রাত তো কম হলো না।
:-……..(নাদিয়া)
নাদিয়া কিছু না বলে চুপচাপ উঠে দাড়ালো।
:-জানো,আজকে আমি ভীষন খুশি।
ডাক্তারের কাছ থেকে বাসায় এসেই,রুমে ডুকতে কথাটা বললো নিধি।
:-আমিও খুব খুশি।
এই বলে আমি নিধিকে জড়িয়ে ধরে ওর কপালে
একটা চুমু খেলাম।
:-আচ্ছা নিধি,তুমি বসো,আমি নাস্তা তৈরি করে আনি।(আমি)
:-না,আমি বসে থাকতে পারবো না।চলো,দুজনে একসাথে নাস্তা তৈরি করি।(নিধি)
:-ডাক্তার কি বলেছে,শুন নাই?তোমার এখন বিশ্রামে থাকা দরকার।তা না হলে,আমাদের বাচ্ছার এবং তোমার ক্ষতি হতে পারে।
:-তুমি আমাকে জ্ঞান দিতে হবে না।আর ডাক্তারেরা এমনিতেই এসব বলে।এখন চলোতো।
এই বলে নিধি হাঁটা দিলো,রান্নাঘরের দিকে।
আর আমিও কিছু না বলে ওর পিছন পিছন গেলাম।
:-আচ্চা নিধি,বলোতো আমাদের ছেলে হলে ভাল হবে না মেয়ে হলে?
নিধি আমার বুকের উপর শুয়ে আছে।আমি ওর চুলে বিলি কেটে দিতে দিতে বললাম।
:-অবশ্যই ছেলে।
:-না,মেয়ে।
:-না না ছেলে।
:-বলছি মেয়ে হবে,আর ও দেখতে ঠিক তোমার মত হবে।
:-না,ছেলে হবে।আর ও দেখতে ঠিক তোমার মত হবে।
:-আচ্ছা,দেখা যাবে কার কথা ঠিক হয়।
:-হুমম,সে দেখা যাবে।
:-ওকে,এখন তুমি আমাকে জড়িয়ে ধরতো।
নিধিও কিছু না বলে আমাকে জড়িয়ে ধরলো।
:-আচ্চা নিধি,কিছুদিনের জন্য একটা কাজের বুয়া রাখলে কেমন হয়?
:-কাজের বুয়া?
:-হুমম।
:-কেন?
:-কেন আবার?তোমার দেখাশুনা করার জন্য।
:-আশ্চর্য,আমার দেখা-শুনা করার জন্য তুমি আছো না?
:-হুমম,আমি তো আছি।কিন্তু আমি যখন অফিসে থাকবো,তখন তোমার দেখা-শুনা করবে কে?
:-সে নিয়ে তুমি চিন্তা করতে হবে না।তুমি দরকার হয় কিছুদিনের জন্য অফিস থেকে ছুটি নিয়ে নিবে।
:-অফিস থেকে তো আমাকে এতদিনের ছুটি দিবে না।
:-তাহলে তুমি হাফ-টাইম অফিস করবে।কি তাও তোমার অফিস দিবে না?
:-হুমম,তা দিবে।কিন্তু,
:-আর কোন কিন্তু নয়।
আমার মুখে হাত দিয়ে বললো,নিধি।
:-রাত তো অনেক হলো,এবার শুয়ে পরা যাক।কি বলো?
:-হুমম।
পরদিন সকালে আমি ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে নিয়ে রুমে এসে দেখি নাদিয়া এখনও ঘুমাচ্ছে।
আমি ওকে না জাগিয়ে নাস্তা তৈরি করতে চলে আসলাম।
নাস্তা তৈরি করা শেষ হলে,আমি রুমে গেলাম।
:-এই যে,উঠুন।(আমি)
আমার ডাক শুনে নাদিয়া চোখ মেলে তাকালো।
:-ফ্রেশ হয়ে নেন।
:-হুমম।
নাদিয়া ফ্রেশ হতে ওয়াসরুমের দিকে গেলে,আমি নাস্তার প্লেট সাজিয়ে নিয়ে রুমে আসলাম।
:-হাত-মুখ মুছে,বসুন।
নাদিয়া ফ্রেশ হয়ে আসলে,একথা বলি আমি।
:-…………(নাদিয়া)
নাদিয়া কিছু না বলে হাত-মুখ মুছে,খাটে গিয়ে বসলো।
:-নিন,নাস্তা নিন।
নাস্তার প্লেট ওর দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বললাম আমি।
:-আপনি খাবেন না?(নাদিয়া)
:-হুমম,খাবো তো।
:-তাহলে নাস্তার প্লেট কোথায়?
:-কেন?এক প্লেটে করে কি দুজন খাওয়া যায় না?
:-হুমম,তা যায়।
:-তাহলে আর কি?
এ বলে আমি গিয়ে নাদিয়ার পাশে বসলাম।
:-আমি যদি আপনাকে খাইয়ে দিই,তাহলে আপনার কোন আপত্তি থাকবে?(আমি)
:-…….(নাদিয়া)
জবাবে নাদিয়া কিছু না বলে আমার দিকে তাকিয়ে থাকলো।
আমিও আর কিছু না বলে ওকে খাইয়ে দিতে লাগলাম আর নিজেও খেতে লাগলাম।
:-আমাকে তো অফিসে যেতে হবে?
অফিসে যাওয়ার জন্য রেডি হতে হতে বললাম।
:-যেতে হলে যাবেন।
:-আপনাকে যে একলা একলা বাসায় থাকতে হবে।
:-থাকতে হলে থাকবো।আর একলা একলা থাকতে আমি অভ্যস্থ।
:-……….(আমি)
এরপর কিছুসময় নিরবতা।
:-আপনার কোন সমস্যা বা প্রয়োজন পড়লে আমাকে ফোন করে জানাবেন।আর দুপুরে আমি এসে রান্না করবো।আপনার জন্য আমি খাবারের ব্যবস্থা করে রেখেছি।খুদা লাগলে খেয়ে নিবেন।
:-আচ্ছা।
:-হুমম,আমি তাহলে এখন আসি।
এই বলে আমি রুম থেকে বাহির হয়ে আসলাম।
:-একটু দাড়াবেন?(নাদিয়া)
:-হুমম,কেন?(আমি)
:-না মানে আপনার ফোন,
:-নাম্বার আমি আপনার মোবাইলে সেইভ করে দিয়েছি।
:-ওহহ,
:-হুমম।এখন তাহলে আসি।
এই বলে আমি অফিসের উর্দেশ্য বাসা থেকে বাহির হয়ে আসলাম।
:-আমার না খুব ভয় হচ্ছে।
আমার হাতের আংগুলের ফাঁকের ভিতর নিধি তার হাতের আংগুল ডুকিয়ে শক্ত করে হাত চেপে ধরে বললো সে।
:-তোমার কিছুই হবে না,আমি আছি তো।
উৎকন্ঠা নিয়ে বললাম আমি।
ঠিক তখনই দুজন নার্স এসে নিধি সমেত বেডটিকে ঠেলে নিয়ে যেতে লাগলো অপারেশন থিয়েটারের দিকে।
শেষবারের মতো ওর দিকে তাকালাম আমি।দেখি ও পানি ভরা চোখ নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
আমিও দারিয়ে না থেকে দৌড়ে বেডটির কাছে গেলাম।
:-আপনি ভেতরে ডুকতে পারবেন না।
এই বলে নিধিকে ভেতরে ডুকিয়ে রুমের দরজা লাগিয়ে দিলো,নার্স দুজন।
আমিও আর দাড়িয়ে না থেকে অপরেশন থিয়েটর রুমের বাহিরে থাকা বেঞ্চে গিয়ে বসলাম।
চোখ দিয়ে পানির দ্বারা বইতে থাকলো।
মেয়েটির ভয়ার্ত অবস্থা দেখে,নিজেকে আর ঠিক রাখতে পারছি না।
উঠে আবারও গেলাম অপারেশ থিয়েটর রুমের সামনে।
কিন্তু ডুকতে পারলাম না।
ভেতর থেকে যে লক করা।
মন চাইতেছে দৌড়ে ভেতরে ডুকে নিধির কাছে গিয়ে দাড়াই।কিন্তু তা যে সম্ভব না।
সন্ধ্যার দিকে হঠাৎ করে নিধির গুরুতর ভাবে পেটে ব্যাথা উঠলো।
ওর অবস্থা দেখে আমি দিশেহারা হয়ে পড়ি।
তাই যতদ্রুত সম্ভব ওকে হাসপাতালে নিয়ে আসি।
ডাক্তার বলে,ওর অবস্থা নাকি গুরুতর।ওর এখনই অপারেশন করার প্রয়োজন।
আর তাই আমি ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে,সকল ঝামেলা মিটিয়ে নিধিকে অপারেশন করার ব্যবস্থা করি।
আবার গিয়ে বেঞ্চটায় বসলাম।
কোন ফাঁকে যে দশটা মাস শেষ হয়ে গেলো,বুঝতেই পারি নাই।
নিধির জন্য খুব চিন্তা হচ্ছে।
বার বার নিধির ভয়ার্ত চেহারাটা চোখের সামনে ভেসে আসছে।
ওইতো অপারেশন থিয়েটর রুমের দরজা খুললো।
আমি দৌড়ে গেলাম।
:-কি হয়েছে ডাক্তার?(আমি)
:-আপনার স্ত্রীর অবস্থা সিরিয়াস।ওর বড় অপরেশন করতে হবে।এখন আপনি কি বলেন?(ডাক্তার)
:-স্যার,আপনার যেটা ভালো মনে হয় সেটা করেন।তারপরও যেন নিধির কিছু নাহয়।যত টাকা লাগে আমি দিবো।
:-দেখুন,আমরা আমাদের চেষ্টা চালিয়ে যাবো।বাকিটা আল্লাহর হাতে।
এই বলে ডাক্তার ভেতরে ডুকে দরজা লাগিয়ে দিলো।
আমিও আর দাড়িয়ে না থেকে বেঞ্চটায় গিয়ে বসলাম।
প্রায় আধঘন্টা পর অপারেশন থিয়েটর রুমের দরজা খুললো।
দৌড়ে গেলাম।
:-কি হয়েছে,ডাক্তার কিছুতো বলেন?
:-দেখুন,আপনার স্ত্রীর গর্ভে জমজ সন্তান ছিলো।একটা আগেই মারা গিয়েছিলো।আর একটা প্রসব করার সময় মারা যায়।
:-ওসব বাদ,এটা বলুন নিধি কেমন আছে?
:-…………
:-কি হয়েছে ডাক্তার?কিছুতো বলেন।
:-কি বলবো?আপনার স্ত্রী প্রসব ব্যধনা সহ্য করতে না পেরে..
এক মুহূর্তের জন্য আমার পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে যায়।
লাশ সমেত বেডটি বের করে আনলে আমি দৌড়ে গেলাম,বেডটির কাছে।
গিয়ে দেখি নিধি চোখ বুজে আছে।
অনেক ডাকলাম।
কিন্তু কোন সাড়াই পেলাম না।
.
.
.
কেটে যায় কয়েক বছর।
বাসায় ফিরতে ফিরতে প্রায় সন্ধ্যা হয়ে গেলো।
রুমে ডুকলাম।
রুমে ডুকে দেখি নাদিয়া বিছানায় ঘুমিয়ে আছে।আর তার পাশে একটা ডায়েরী পড়ে আছে।
ডায়েরীটাকে আমার চেনা চেনা লাগছিল।
তাই ওটাকে হাতে নিলাম।
হুমম,যেটা ভাবছিলাম সেটাই।
ডায়েরীটা আমারই।যেটাতে লিখা আছে আমার অতীত জীবনে ঘটে যাওয়া কাহিনীগুলো।
“কিন্তু নাদিয়া এটা পেল কি করে?”
ধুরর,ওসব কথা এখন না ভাবাই ভালো।
যাই ফ্রেশ হয়ে নিই।
যেই ভাবা সেই কাজ।
ডায়েরীটা টেবিলের উপর রেখে আমি ফ্রেশ হতে চলে আসলাম।
ফ্রেশ হয়ে এসে আমি একটু বসে জিরিয়ে নিলাম।
নাদিয়াকে না জাগিয়ে,রান্না করার জন্য,রান্নাঘরের দিকে গেলাম।
রান্না-বান্নার কাজ,সম্পন্ন হলে,আমি রুমের দিকে গেলাম।
:-এই যে,উঠুন।
নাদিয়াকে উর্দেশ করে বললাম,আমি।
:-হুমম,
ঘুম জড়ানো কন্ঠে বলল,সে।
:-উঠে ফ্রেশ হয়ে আসুন।
:-……….(নাদিয়া)
নাদিয়া কিছু না বলে,উঠে বসলো।
:-আপনি কখন এসেছেন?(নাদিয়া)
:-সন্ধ্যার দিকে।(আমি)
:-আপনি না দুপুরে চলে আসার কথা ছিলো?
:-হুমম,তা ছিলো।
:-তাহলে?
:-আসলে অফিস থেকে কয়েকদিনের জন্য ছুটি নিয়েছি।তাই কাজগুলো গুছিয়ে নিতে নিতে দেরী হয়ে গেলো।
:-ওহ,
:-হুমম,এখন ফ্রেশ হয়ে আসুন।
:-………..(নাদিয়া)
নাদিয়া কিছু না বলে ফ্রেশ হতে চলে গেলো।
আমি খাটে গিয়ে বসলাম।
কিছুসময় পর নাদিয়া আসলো।
:-চলুন,খেতে চলুন।
এই বলে আমি উঠে দাড়ালাম।
:-না,আমি খাবো না।(নাদিয়া)
:-কেন?
:-আপনি খাবার নিয়ে এখানে আসেন।
:-কেন?
:-কেন আবার?আপনি আমাকে খাইয়ে দিবেন।তাহলে আমি খাবো।
:-ওহহ,আচ্ছা।আপনি তাহলে বসুন।
এই বলে আমি রুম থেকে বাহির হয়ে আসলাম।
এরপর খাবারের প্লেট নিয়ে রুমে গেলাম।
:-নিন,হা করুন।
খাবারের লোকমা নাদিয়ার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বললাম,আমি।
নাদিয়াও কিছু না বলে হা করলো।
:-আমি আপনাকে যেমনটা ভেবেছিলাম,আপনি তেমনটা নন।
খাওয়া-দাওয়া শেষ হলে,আমি সবকিছু গুছিয়ে রুমে আসলে কথাটা বলে নাদিয়া।
:-মানে?
:-মানে হলো,আমি ভেবেছিলাম আপনি আমাকে হয়তো বা আমার বাবার সম্পত্তির ভিত্তিতে বিয়ে করেছেন।কিন্তু তেমনটা আপনি নন।আপনি আমার ধারনার সম্পুর্ণ বিপরীত।
:-………….(আমি)
:-আচ্চা,নিধি কি আপনার স্ত্রী ছিলো?
:-হুমম।
:-আচ্চা ডায়েরির লেখা অনুযায়ী,নিধি মারা গেছে যে আজ তিনবছর চলতেছে।আপনি এতদিন যাবৎ বিয়ে করেননি কেন?
:-বিয়ে করার মন-মানসিকতা ছিলো না।তাই।
:-ওহহ,আচ্চা,তাহলে আপনার আমাকে বিয়ে করার মন-মানসিকতা হলো কেন?আপনি চাইলে তো আমার চেয়েও ভালো একটা মেয়েকে বিয়ে করতে পারতেন।
:-তা পারতাম।
:-তাহলে?
:-সত্যি বলতে কি?আমি আপনার মাঝে আমার নিধির অস্তিত্ব খুঁজে পেয়েছি।নিধিকে আমি আপনার মাঝেই দেখতে চাই।আর তাই আমি আপনাকে বিয়ে করেছি।
:-……….(নাদিয়া)
নাদিয়া কিছু না বলে চুপ থাকলো।
এরপর কিছুসময় নিরবতা।
:-পারবেন তো,আপনি আমাকে ঐরকম ভাবে ভালোবাসতে,যেরকম ভাবে আপনি নিধিকে ভালোবাসতেন?
:-জানি না।
:-চেষ্টা তো করতে পারেন।
:-হুমম,তা পারি।তবে আমি বোধহয় নিধির চাইতে আপনাকে বেশী ভালোবাসতে পারবো না।
:-কেন?
:-আপনি তো আমার ডায়েরিটা সম্পুর্ন পড়েছেন।তাই না?
:-হুমম।
:-এরপরে আপনিই বলেন,আমি কি করে নিধির চাইতে আপনাকে বেশী ভালোবাসবো?
:-…………(নাদিয়া)
নাদিয়া কিছু না বলে চুপচাপ খাটে গিয়ে বসলো।
বুঝলাম,মেয়েটা কষ্ট পেয়েছে।
তাই আমি কিছু না বলে,খাটের দিকে গিয়ে নাদিয়ার পাশে বসলাম।
তারপর ওর হাতের উপর আমার হাত রাখলাম।
:-কি,কষ্ট পেয়েছেন বুঝি?
ওর মাথাটা আমার দিকে ঘুরিয়ে বললাম।
:-এই রকম আপনি আপনি করবেন না তো?(নাদিয়া)
:-কি করে বলবো,তাহলে?
:-তুমি করে।
:-আচ্চা ঠিক আছে।তাহলে তুমিও আমাকে তুমি করে বলবে ঠিক আছে?
:-হুমম।
:-এবার বলতো,তুমি আমার কথায় কি কষ্ট পেয়েছ?
:-তার আগে আপনি না মানে তুমি বলতো,তুমি এখন থেকে কাকে বেশী ভালোবাসবে?নিধিকে না আমাকে?
:-বোধহয় নিধিকেই।
:-মানে?
:-আচ্ছা,তোমাকে আমি কেন আমি বিয়ে করেছি?
:-কেন আবার?তুমি তো বললে তুমি আমার মাঝে নিধিকে খুঁজে পেয়েছো।সেই,,
:-আর আমি সেই নিধিকে ভালোবাসবো।এবার বুঝেছো?
:-হুমম।
এই বলে নাদিয়া আমার কাঁধে মাথা রাখলো।
আমিও নাদিয়ার কপালে আলতো করে একটা চুমু খেলাম।
…………………………………………..সমাপ্ত…………………………………….