সাইলেন্ট গালফ্রেন্ড

সাইলেন্ট গালফ্রেন্ড

:-ইশি দেখছো ক্লাসে একটা নতুন মেয়ে এসেছে..
:-হুম..ওর দিকে একদম তাকাবানা!
:-সরি..তোমার এই কথাটা রাখতে পারলাম না..এত সুন্দর মেয়ের দিকে না তাকিয়ে থাকা যায়?
:-তুই একবার ওর কাছে যা দেখ তোর কি করি..
:-আচ্ছা যাচ্ছি তাহলে..
:-যা..আমার কাছে আর আসবিনা।ওর সাথেই তোকে ভালো মানাবে..আমার মত প্রতিবন্ধিকে কি ভালো লাগে নাকি?
:-আহা!!এমন বলছো কেনো?আমিতো মজা করে কথাগুলো বলেছি..
:-তুই জানিসনা আমি তোকে কতটা ভালোবাসি।তোর মুখে অন্য মেয়েদের প্রসংসা ভালো লাগেনা।তারপরও অন্য মেয়েদের কথা বলিস কেনো?
:-ভুল হয়েছে আমার..কিন্তু তুমি ওই কথা আবার বললে কেনো?
:-রাগে মুখ ফসকে বেরিয়ে গেছে..
:-আর যেনো না শুনি!
:-ঠিক আছে..
:-আচ্ছা মা তোমাকে যেতে বলেছে..চলো।
:-আমাকে যেতে বলেছে কেনো?
:-জানিনা..তুমি যেয়ে শুনে দেখো।
:-ঠিক আছে..চলো।
:-ওকে..
অতঃপর কলেজ থেকে বাড়ির উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়লাম..
এবার পরিচিত হই..আমার পরিচয় আপনার জানেন আগে থেকেই..আর যার সাথে কথা বলছিলাম..ও হলো ইশি..ও কথা বলতে পারেনা..আমরা চিরকুট আর ফেবুতে কথা বলি..আমরা অনার্স শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী..আমরা একে অপরকে ভালোবাসি….
প্রথমে বন্ধু ছিলাম..পরে বন্ধুত্ব ভালোবাসাতে রুপ নিয়েছে..আমাদের দুজনের পরিবার থেকে আমাদের সম্পর্কের কথা জানে..
বকবক করতে করতে বাড়িতে চলে এসেছি..আমি আর ইশি ভিতরে গেলাম।
:-মা ও মা..মাগো(মা)
:-কি হইছে?
:-এই যে ইশিকে নিয়ে এসেছি..
:-দাড়া আসছি আমি
:-হুম তাড়াতাড়ি..
অতঃপর ইশিকে মা নিয়ে রান্না ঘরে গেলো..আমি ফ্রেশ হয়ে রুমে এসে বিছানাতে গা এলিয়ে দিলাম..
কেবল চোখটা বন্ধ করেছি..তখনই ধপাস করে পেটের পরে কি একটা এসে পড়লো..চোখ খুলে দেখি ইশি
:-ওমাগো..আহ(আমি)
:-উউ..উ..উ(ইশি)
:-কি?ফেসবুকে যাবো কথা বলবা?
:-হুহুহু
:-হুম..আ..উ না করে চিরকুট দিলেইতো বুঝতাম..যদি আমার সমস্যা হতো?
:-চিরকুট শেষ..ফুরিয়ে গেছে।আচ্ছা মা কি বলেছে জানো?
:-উহু..কি?
:-বলেছে..খুব শীঘ্রই আমাদের বিয়েটা দিবে।
:-ওহ..এইজন্য পেটের পরে ঝাপ দিছো?খুব খুশি তাইনা?
:-হুম খুব..
:-কেনো?
:-সবসময় তোমার সাথে থাকতে পারবো..তোমার সাথে ঘুরবো,গল্প করবো..আরো অনেক কিছু
:-বুঝলাম..খেয়েছো?
:-না..চলো।একসাথে খাবো।
:-চলো..
অতঃপর ইশি আর আমি ডাইনিং টেবিলে খেতে আসলাম..আপনাদের বলাই হয়নি..ইশির কোনো রকম শব্দ করা বারন..আগে একবার জোর করে কথা বলার চেষ্টা করেছিলো..তখন মুখ থেকে প্রচুর রক্ত পড়েছিলো…
বেচারি কি করবে?আশ পাশের সবাইকে কথা বলতে দেখলে..ওর হয়ত কথা বলতে ইচ্ছে হয়..তাই একটু চেষ্টা করে।কিন্তু যা সম্ভনা তা চেষ্টা করেও লাভ নেই..
অতঃপর খাওয়া দাওয়া শেষ করে ইশিকে নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম..ইশির বাড়িতে পৌছে দেওয়ার জন্য..দুজনে রিকশাতে করে যাচ্ছি
:-উ..উ..উ(ইশি)
:-হুম বলো..
:-সানগ্লাস খুলো..
:-কেনো?চোখে রোদ লাগছে..
:-আমারও লাগছে..তাহলে তুমি একা পরেছো কেনো?হবু বৌকে কষ্ট দিতে ভালো লাগছে?
:-একদম না..কিন্তু সানগ্লাসে তোমাকে একদম মানাবেনা..তাই আমিই পরে থাকি..
:-পরলে দুজনেই পরবো..না হলে কেউ পরবোনা..তুমি খুলো।
:-পারবোনা..
:-তা পারবে কেনো?সানগ্লাস পরে মেয়েদের দেখতে সুবিধা..যাতে আমি বুঝতে না পরি..
:-তোমার ধারনা একদম সঠিক..
:-তবে রে শয়তান…
:-ইশি লাগছে..
:-লাগুগ..
:-হবু বর কষ্ট পাচ্ছেতো
:-হবু বউ রোদে কষ্ট পাচ্ছিল
:-বিয়ের পরে কষ্ট পুষিয়ে দিবো
:-যাহ..ফাজিল
খুনশুটি করতে করতে ইশিদের বাড়িতে পৌছে গেলাম..তারপর ইশিকে রেখে চলে এলাম।
এভাবে কিছুদিন যাওয়ার পর বিয়ের ডেট ঠিক করা হল..তাও খুব শীঘ্রই..যেহেতু আমাদের পড়া প্রায় শেষ তাই আর আপত্তি করলাম না…
অবশেযে আমাদের বিয়ের দিন আসলো..বরবেশে ইশিদের বাড়িতে হাজির হলাম..
ঠিকমত বিয়েটা সম্পন্ন হলো…
আসার সময় ঈশিকে দেখে মনে হলো ওর মনটা খারাপ..বিয়ের পর বাবার বাড়ি ছেড়ে আসার পর সবারই এমন হয়…
বাড়ি এসে ফ্রেশ হয়ে বাসার ঘরে ঢুকলাম..ইশি খাটে বসে কাদছে..একটু খটকা লাগলো..কিছু একটা হয়েছে হয়ন।তাই ম্যাসেজ দিলাম
:-এই ইশি কাদছো কেনো?
:-নো রিপ্লাই
:-এই বাড়ির জন্য মন খারাপ?
:-নো রিপ্লাই..কেদেই যাচ্ছে
:-এই উত্তর দাও..না হলে চলে যাচ্ছি।
:-তুমি আমার মত বোবাকে না বিয়ে করলেই ভালো হতো
:-আবার একি কথা?কতবার বার করেছি এই কথা বলতে?তারপরো কেনো বলো?
:-সবাইতো ঠিকই বলেছে..তোমার সাথে আমার মতো বোবাকে মানায় না।
বুঝতে পাললাম কেউ ওকে এইসব কথা বলেছে..
:-আরে সমলোচকদের কাজ সমলোচনা করা..তাই বলে কাদতে হবে?
:-ওদের কথায়তো যুক্তি আছে!!
:-এতো যুক্তি দিয়ে তোমার কাজ কি?বিয়েতো তোমাকে আমি করেছি..নিজের ইচ্ছাতেই করেছি..আর জীবনসঙ্গি বেছে নেওয়ার মতো ক্ষমতা আমার আছে..আর আমি মনে করি আমি আমার জন্য সঠিক জীবনসঙ্গীই পেয়েছি..
:- Love You Chayon……
ম্যাসেজ সেন্ড করেই আমাকে জড়িয়ে ধরে..কান্না শুরু করলো..
কিছুক্ষন পর ওকে ছাড়িয়ে..ম্যাসেজ দিলাম
:-এই পাগলি কেদে রাত পার করবা?নাকি আমার দেওয়া কথা পুরন করতে দিবা?
:-তোমার দেওয়া কথা মানে?
:-মনে নাই?বলেছিলাম বিয়ের পর সব…
কষ্ট পুষিয়ে দিবো?
:-হুম…তো?
:-তো কি?এখন আদর করবো তাহলে আর কষ্ট থাকবেনা…
:-যাহ দুষ্টু..কাছে আসবা না..লজ্জা করবে..
আর কথা না বলে মোবাইলটা ইশির হাত থেকে নিয়ে নিলাম..ইশি উ..উ..উ করতে থাকবলো…অবশেষে ইশির মুখে হাসি দেখতে পেলাম….
আপনারা এখন আসতে পারনে..এখন আমরা পরবর্তী প্রজন্মের জন্য ইতিহাস তৈরি করবো…হি হি হি…

গল্পের বিষয়:
রোমান্টিক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত