-হ্যালো কে বলছেন প্লিজ।
-কে বলছেন মানে?? নিজের বউকে চিনতে পারছোনা?? ঢং মারো তুমি?? এবার বাড়ি আসো বুঝাবো তোমায় কেমন মজা?
– কিসে মজাগো??
– তোমার মাথায় মজা।
-সেকি আমার মাথায় কি করে মজা গো??
-ভালো হবেনা বলে দিচ্ছি।
-কেন কি নষ্ট হয়েছেযে ভালো হবেনা বলছো??
– তোমার মাথা।
-সেতো তোমায় দেখার পরই গেছে সুন্দরী।
-মজা নাও??
-কেমন মজাগো??
-বেশী ফালাফালি করলে ফোন রেখে দেব বলে দিলাম।
-এই না না।তুমি ফোন রেখনা প্রিয়া।তবেযে আমার মনের মহাভারত অশুদ্ধ হযে যাবেগো সোনাপাখি।
-ফাজলামো মারো।
-হুম।
-কি??
গেল পার্থর বউয়ের ফোনটা কেটে। পার্থ একটা অট্টহাসি দেয়।এভাবে জালাতে ভালোবাসে পার্থ তার বউকে। মেয়েটা যখন রেগে যায় খুব ভালো লাগে ওর। গাল ফুলিয়ে বসে থাকে। পার্থ নানারকম প্রেমের ইস্তুতি করে বউয়ের মান ভাঙায়। বউ আবার স্বাভাবিক। সেটা বাড়ি থাকলে দ্রুত সম্ভব। কিন্তু আজ বেশ কয়েকটি দিন পার্থ তার কর্মক্ষেত্রে ফিরেছে। ভালো একটা বাসা ভাড়া নিতে ঢাকা শহরে অনেক টাকার প্রয়োজন। সাধারণ মাপের বাসা ভাড়াই তাই ২০০০০ টাকা।মনের দুঃখে মনে চেপে বউটাকে তাই বাড়ি রেখে আসতে হলো। এত কম ইনকামে ঢাকাশহরে বউ নিয়ে থাকা যায়না। বউটাও বড্ড লক্ষ্মী। সেও কখনও পার্থকে জোর করেনা। পার্থর লক্ষ্মী বউটার নাম পৃথা। পৃথা ও পার্থ যেন এক বৃন্তে ফুটে ওঠা প্রেমের ফুল। না বউাকে রাগিয়ে দেয়া মোটেও ঠিক হয়নি। সারাটাদিন মেয়েটি পার্থর ফোনের অপেক্ষারত থাকে তাকে রাগিয়ে দেওয়া আজ ঠিক হয়নি।সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতে ফোনটা নিয়ে ডায়াল করলো।
-হ্যালো কে বলছেন প্লিজ।
-কে মানে?? আমি তোমার বর পার্থ।
-Sorry, wrong number.
-রাগ করেনা ময়না পাখি।
-কে রাগ করেছে??
-আচ্ছা কেউ রাগ করেনি। এবার বলতো তোমার টেস্টের রিপোর্ট পজেটিভ নাকি নেগেটিভ??
-কিসের রিপোট??
-আরে সোনা তোমার প্রেগনেন্সি টেস্ট রিপোর্ট।
-সেটা জেনে কি লাভ??
– পৃথা, আমি জানি তুমি অভিমান করেছ।আরে পাগলী আমি তোমায় রাগিয়ে দেই তা তুমি বোঝনা??
ও পাশ থেকে কান্নার শব্দ ভেসে আসে।
– কাঁদছ কেন পাখি?? Ok Sorry. আর দুষ্টমি করবনা।এই কান ধরছি।
-আমি ও জন্য কাঁদছিনা।
-তবে কি জন্য কাঁদছ শুনি??
-কত বড় পোড়া কপাল আমার। তোমার বুকে মাথা রেখে খবরটা দিতে পারছিনা। ফোনে ফোনেই দিতে হচ্ছে। হ্যাঁ পার্থ তোমার পৃথা তোমার সন্তানের মা হবে। আজ ভোর বেলায় আমি নিজে তোমার এনে দিয়ে যাওয়া স্টিপটা দিয়ে টেস্ট করেছি।
এবার পার্থ নিজের চোখের জল আটকে রাখতে পারলনা। তার গলাটা ভারি হয়ে আসে। যে পুরুষ এমন খবর শোনার সময় বউয়ের লজ্জাবনত খুশি মুখখানা দেখতে পারেনা তার মত অভাগা এই সময়ের সংসারে আর কে আছে??সব পুরুষের মত এখন হয়ত পার্থর প্রাণেও চাইছে পৃথাকে জড়িয়ে ধরে তার কপালে একটি শুভকামনার চুমু এঁকে দিতে।চাইলেই কি সব আশা পূর্ণ হয়?? অন্তত যদি পদ্মা সেতুটাও হয়ে যেত তবে একটিবার বাড়ি যাওয়া যেত। কাল ছুটি আছে।চাইলেই যাওয়া যায়। তবে সেক্ষেত্রেও ২০০০ টাকা খালি ভাড়াবাবদ দরকার। এছাড়া দীর্ঘদিন বাড়ি যায়না সবার জন্য কিছু কিছু নিতেই হবে। পৃথারও এখন বাড়তি খাবারের দরকার। এখন সিজারে ছাড়া নরমালে বেবী হয় খুব রেয়ার।সুতরাং বাড়ি যাওয়া হবেনা।টাকা গোছাতে হবে। ছোট বোনটারও সামনে পরীক্ষা।
পৃথার অনবরত কান্নার শব্দে ভাবনায় ছেদ আসে পার্থর।
-কি হলো পার্থ তুমি খুশি হওনি??
-আমার চেয়ে কে সুখি আছে এই মুহুর্তে পৃথা??
না নিজেকে আর আটকে রাখা গেলনা।পার্থর ক্রন্দরত কথাগুলো কিছু বুঝলো পৃথা আর কিছু বুঝে নিলো।
-কেঁদনা পার্থ। আমাদের এমন দিন একদিন থাকবেনা। বিশ্বাস করো তোমার প্রতি আমার কোন অভিযোগ নেই। তোমায় ভালোবেসে যদি তোমায় আমি না বুঝি তবে কে বুঝবে বলো??
আজকের এই দুই নরনারীর বুকে জমানো পাহাড় থেকে নামা গাল বেয়ে ঝর্ণাধারার খোঁজ কেউ জানলোনা।এই একটি সুখ সুখ কষ্টের মুহুর্তের স্বাক্ষী হয়ে রইল খুলনার একটি গ্রামের কাঁচা দেওয়াল ও মুক্ত বিশুদ্ধ বাতাস। অন্যদিকে স্বাক্ষী রইল ঢাকার কোলাহল ও কংক্রিটের দেয়াল। তবু এরা সুখি। ভালোবাসা পেয়ে নয় ভালোবাসা দিয়েই এরা সুখি। পার্থ পৃথা দম্পতি বিশ্বাস করে একদিন এদের দুঃখের দিন থাকবেনা। সেদিন যেখানেই থাকুক দুজনে একই যায়গায় থাকবে। সুখের একটা ছোট্ট নীড় হবে এদের। দুই রুমের একটি ছোট বাসা। সাথে একটা ব্যালকনি। যেখানে এদের সন্তান খেলবে। সব ছেড়ে ছুড়ে পার্থরও গ্রামে চলে আসতে মন চায়। তার মন চায় বাংলার সবুজ পথে স্ত্রী সন্তান নিয়ে হেটে যেতে। দারিদ্রতা পার্থর স্বপ্নকে স্বপ্ন রেখে দিতে বাধ্য করে।
পৃথার এখন সপ্তম মাস চলছে।সাদের অনুষ্ঠান করবেন পৃথার শাশুড়ি। (হিন্দু মেয়েদের গর্ভকালীন সপ্তম মাসে সাতরকম মিষ্টি ও সাত রকম তরকারি তথা সাত রকম খাবার দিয়ে,পন্ঞ্জিকার উল্লেখিত তিথি অনুসারে এই সাদ ভক্ষণ করানো হয়।)এই খুশিতেই আজ ছয় মাস পরে পার্থ বাড়ি ফিরবে।
-হ্যালো জানপাখি। কি আনবো তোমার জন্য?? আমার জন্য কিছুই আনতে হবেনা। তবে তোমার মেয়েকে ওর ঠাকুরমা যখন কোলে নিচ্ছে তখন ঘাড় খাচ্ছে।মনে হয় ওর খেয়ে পেট ভরছেনা।
-এই কি বলছো তুমি?? হা হা হা হা। এখনও যে ভূমিষ্ঠ হয়নি সে তার ঠাকুরমার ঘাড় খাচ্ছে?? হা হা হা।
-হ্যাঁ মশাই। এখন ওর মায়ের জন্য একটা মাদার হরলিক্স এনো।
-হা হা হা। খাবারে পেট ভরছেনা বেবীর।আর হরলিক্স খাবে মা?? কেন??
-হ্যাঁ। কারণ বাচ্চা প্রাথমিক অবস্থায় খাবার পায় তার মায়ের কাছ থেকে।
-হা হা হা।শোনো মেয়েকে বলে দিও।ওর বাবা ওর নাম রেখেছে খুশি।
ফোনটা কেটে দিয়ে পার্থ স্বপ্নে বিভোর হয়ে গাড়িতে উঠে বসে। আর মাত্র কয়েক ঘন্টা পরই পার্থ তার হবু সন্তানের মায়ের মুখ দেখতে পারবে।ওর স্ত্রীর পেটে কান রেখে তার মেয়ে খুশিকে জিজ্ঞেস করবে,
– হ্যালো জুনিয়ার। ঠাকুরমার ঘাড় চুষে চুষে খাও কেন??
গল্পের বিষয়:
রোমান্টিক