এডওয়ার্ড ইউনিভার্সিটির গণিত বিভাগের ব্রিলিয়ান্ট ছেলে আসিফ আহমেদ অভ্র
তবে সে সবার চাইতে আলাদা
কথায় আছেনা,,, তেল আর জল কখনো এক হয়না অভ্রর ক্ষেত্রেও ঠিক তাই
মধ্যবিত্ত বলে নিজেকে যতটা পারে সবার থেকে আড়াল করেই রাখে আর এজন্যই হয়ত সবাই ওকে ভাবিস্ট বলে, অহংকারী বলে
তবে এতে সে কিছু মনে করেনা
অভ্রর ক্লাসের ছেলেদের ধারণা ভালো ছাত্র তাই ভাব নেয় আর মেয়েদের ধারণা নিজেকে হিরো ভাবে তবে অভ্র সে নিজেকে সবার মত সাধারণই ভাবে
ক্লাস করে আবার চুপচাপ চলে যায় এটাই ওর রুটিন
ঠিক তেমনই আজকেও ক্যাম্পাসের রাস্তা দিয়ে ভার্সিটিতে ঢুকছে,,,,,,, প্রতিদিনের মতোই মাথাটা নিচু
হঠাৎ ওর পাশের ছেলেদের মধ্য থেকে কেউ অভ্রর সামনের মেয়েদের কাউকে লক্ষ্য করে বলল,
–ওয়াও কি মাল দেখছিস তো! পুরাই *******
হেই বেবি একটা বার তাকাও না
কথাটা বলেই ছেলেগুলা চলে গেল
ওমনি সামনের মেয়েটা ঘুড়েই ঠাসসসস্ করে অভ্রর গালে কষে চড় বসিয়ে দেয়
অভ্র অবাক হয়ে গালে হাত দিয়ে মেয়েটার দিকে চেয়ে আছে
–কি যেন বলছিলি?
আমি মাল না!
ঐ মাল কি রে?
আর আমাকে বেবি কেন বললি!!!!
ক্লাসে তো স্যারদের সামনে খুব ভদ্র থাকিস আর এটাই বুঝি তোর আসল রূপ? (নিধি)
–দেখুন আপনি ভুল বুঝছেন কথাটা আমি বলিনি পাশের ছেলেটা বলেছে (অভ্র)
— হেহেহে আমরা কি দিনকানা!
তোর পাশে তো একটা পোকাও নেই এখন হাতেনাতে ধরা খেয়ে এই কথা বলতেছিস (সিমু নিধির ফ্রেন্ড)
আসলেই পাশে তো এখন কেউ নেই তাই বিনা দোষেই দোষি হতে হবে
তবুও অভ্র বলল
–সত্যিইই আমি বলিনি
–থাক থাক তোকে আমার চেনা হয়ে গেছে
বলেই নিধি ওর ফ্রেন্ডদের সাথে চলে গেল
আর গালে হাত দিয়ে অভ্রও ক্লাসের দিকে চলে যাচ্ছে আর যে ছেলেগুলা এই কথাগুলো বলেছে ওরা অভ্ররই ক্লাসমেট
তবে অভ্রকে সবার চোখে খারাপ করতেই এই প্ল্যান
আর যে মেয়েটা ঝাড়ি দিল ওর নাম নিধি অভ্রর সাথে একই ডিপার্টমেন্টে পড়ে
অপরদিকে কাকতালীয় ভাবে অভ্র আবার মনে মনে নিধিকে পছন্দ করে কারণ,
নিধি খুব হাসিখুশি আর চঞ্চল একটা মেয়ে
প্রতিদিনের মতোই চুপচাপ ক্লাসে বসে মেম এর লেকচার শুনছিল অভ্র
হঠাৎ মেম এর গায়ে একটা কাগজের টুকরো কে যেন মারে
ম্যাম রেগে গিয়ে বলেন,
–কে এই কাজ টা করল!!!
–মেম অভ্র (কিছু ছেলে একসাথে)
–অভ্র তুমি এমন বেয়াদবি করলে! ( অবাক হয়ে মেম)
–কিন্তু মেম আমিতো এটা করিনি (অভ্র)
— মেম আমরা দেখেছি অভ্রই ছিল (কিছু ছেলে)
— ওকে,,ওকে
এমন বেয়াদবি তোমার কাছে আশা করিনি অভ্র (মেম)
কিছুক্ষণ পর মেম চলে গেলেন
আর অভ্রও ক্লাস করে বাসায় চলে আসে,,,, রাতে শুয়ে শুয়ে ভাবছে অভ্র
আমার সাথে এমনটা কেন হচ্ছে?
আমিতো কিছুই বুঝছি না!
হঠাৎ কি হলো আমার?
এসব আবোল তাবল ভাবতে ভাবতেই ঘুমিয়ে যায় অভ্র
এরপর স্বাভাবিক ভাবেই কেটে যায় কয়েকটা দিন
ক্লাস একটা হলোনা তাই অভ্র এসে ক্যাম্পাসের মাঠে বসে আছে ঠিক তখনই
–অভ্র তোমার সাথে কি কিছু কথা বলতে পারি?
অভ্র মাথা তুলে তাকিয়ে দেখে ওর ক্লাসমেট নিরব
–হ্যা নিরব বলো? (অভ্র)
— অভ্র,,,,, তোমার হাতের লেখা তো অনেক ভালো আমাকে একটা হেল্প করে দিবা? (নিরব)
— হ্যা হ্যা অবশ্যই কি হেল্প বলো? (অভ্র)
— আমাকে একটা লাভ লেটার লিখে দিবা কি? (নিরব)
–হিহিহি এটা তো তুমিই লিখতে পারো (অভ্র)
— হ্যা পারি তবে তোমার লেখাটা খুব ভালো,,,, তাই যদি লিখে দিতা তো*****(নিরব)
— আচ্ছা ঠিক আছে লিখে দিচ্ছি
তা তোমার ভালোবাসার মানুষটার নাম কি? ( অভ্র)
— ওকে তুমি চিনো
ওর নাম নিধি আমাদের সাথেই পড়ে (নিরব)
নিধি নামটা শুনেই অভ্রর কেমন যেন বুকের ভিতর করে ওঠে হয়ত এতো দিনের জমানো ভালোবাসায় কেউ ভাগ বসালো তাই
তবে অভ্র তো আর বলতে পারবে না তাই ভাবল,
আমি নাইবা বলতে পারলাম তবে আমার মনের জমানো সব কথা তো নিধিকে জানাতে পারবো এটাইবা কম কি
তাই অভ্র নিজের মনের মতো করে চিঠিটা লিখে দিল
অভ্র যেই না শেষে লিখতে যাবে
ইতি, তোমার নিরব
তার আগেই নিরব বলল
–অভ্র থাক থাক আমার নামটা আমিই লিখে দেব আমার লেটার সব যদি তোমারই লেখা হয় তাইনা? (নিরব)
অভ্র মুচকি হেসে নিরবের হাতে চিঠিটা দিয়ে বলে
–ঠিকই বলছো
নিরব অভ্রর থেকে বিদায় নিয়ে চলে যায় আর অভ্রর ও মনটা খারাপ হয়ে যাওয়ায় বাসায় চলে আসে
পরদিন সকালে নিধি ক্লাসে বসে আছে ঠিক তখন
— নিধি একটা কথা ছিল (নিরব)
–হ্যা বলো কি কথা? (নিধি)
নিরব নিধির হাতে চিঠিটা দিয়ে দেয়
–এটা কি? !! (নিধি)
— জানিনা
কালকে অভ্র আমাকে বলল এটা তোমাকে দিতে তাই দিলাম (নিরব)
–অভ্র দিলো,,,,,,,!
বলেই অবাক হয়ে নিধি চিঠিটা খোলে
আর প্রতিটা লাইন পড়ে রাগের পরিমান দ্বিগুণ হতে থাকে
একটু পর অভ্র ক্লাসে আসতেই নিধি গিয়েই ঠাসস ঠাসস করে অভ্রকে চড় বসিয়ে দেয়
–তুই যে এমন লুইচ্চা সেটা তো জানতাম না! (নিধি)
অভ্র গালে হাত দিয়ে নিধির দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে
কিছু বলার আগেই মেম ক্লাসে ঢুকে
তারপর
–মেম আমার একটা বিচার আছে (নিধি)
— কেন কি হয়েছে? (মেম)
নিধি মেমের হাতে লেটারটা দেয়
মেম লেটারটা পড়ে অনেক রেগে গিয়ে অভ্রকে খুব জোড়েই একটা চড় মারে
–কি রে তুই না ভালো ছেলে? এই তার পরিচয়! (মেম রেগে)
অভ্র গালে হাত দিয়ে অবাক হয়ে বলে
–মেম আমি তো কিছুই বুঝছিনা
কি করেছি আমি?
–কিছু করিসনি নাহ্!
নিধিকে প্রেম পত্র দিছিস সেখানে কত আবেগী কথা লিখছিস আর বলতেছিস আমি কি করেছি!? (মেম)
–মেম আমি তো নিধিকে কোন লেটার দিইনি ( অভ্র)
— চুপ থাক একদম চুপ থাক এটা কি? বল এটা কি ৃ
নিধি রেগে অভ্রর হাতে স্যার লেটার টা দেয়
অভ্র দেখেই তো বোবা হয়ে যায়,,,, এটা সেই লেটারটা যেটা অভ্র কালকে নিরবকে লিখে দেয়
এখন অভ্র বুঝতে পারছে কেন নিরব কালকে ওর নামটা লিখতে দেয়নি
–কি এটা কি তোমার লেখা চিঠি না? (মেম)
— অভ্র মাথাটা হ্যা সুচক নাড়ায়
মেমরেগে ঠাসসস করে কষে আবার থাপ্পর মারে অভ্রকে
আর এতেই অভ্রর চোখ দিয়ে টুপটুপ করে অশ্রু গড়িয়ে পড়তে থাকে
–তোমাকে অনেক ভালো ছাত্র মনে করতাম
কিন্তু তুমি!!!!! এটাই কি তোমার আসল রুপ?
ছিঁ অভ্র ছিঁ
এখানে কি তোমার বাবা মা এই শিখাতে পাঠিয়েছেন? (মেম)
অভ্র কিছুই বলতে পারেনা
কিইবা বলার আছে এখানে তার
তাই মাথাটা নিচু করে দাড়িয়ে শুধু নিরবে চোখের জল ফেলছে
এমন অপমান সহ্য করতে না পেরে অভ্র কান্না করতে করতে বাসায় চলে আসে আর রাতে ঘরে শুয়ে শুয়ে নিরবে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কান্না করে আর ভাবে
যেখানে কেউ ওকে দেখতে পারেনা সেখানে আর পড়বোই না
আমার জন্য যদি সবার সমস্যা হয় তো চাইনা কারো পথের বাধা হতে
আর এই ভার্সিটিতে পড়বোই না
আর থাকবো না এই নিষ্ঠুর শহরে
খুব তারাতারি চলে যাবো মুক্ত করে দিয়ে যাবো সবাইকে
সারাটা রাত এইসব ভেবে কান্না করে অভ্র
পরের দুইটা দিন আর ঘর থেকেই বের হয়নি
অভ্রর মায়ের একটা কাজে তারপরের দিন শহরে এসেছে অভ্র
কাজটা করে চলে যাবে ঠিক তখনই অভ্রর চোখে পড়ে ওর সামনে দিয়ে চলে যাওয়া রিক্সাতে মেয়েটার ওড়না ভুলবশত রিক্সার চাকার সাথে ঝুলে আছে
অভ্র একটু জোড়েই বলল
–আপু আপনার ওড়নাটা ঠিক করুন
রিক্সার মেয়েটা হয়ত শুনেনি
তবে ওড়নাটা ঠিক না করলে কিছু ঘটে যেতে পারে ভেবেই অভ্র দৌড় দিয়ে রিক্সাটার কাছে চলে যায়
আর তখনই ওড়নাটা চাকার সাথে পেচে যায় অভ্র তারাতারি টান দিয়ে ওড়নাটা ধরতেই ওর হাতের ভিতর ওড়নাটা চলে আসে
রিক্সাটাও কিছুটা সামনে গিয়ে থেমে যায়
রিক্সা থেকে নিধি রাগে টগবগ করতে করতে নেমে দেখে অভ্রর হাতে ওড়না
আর অভ্রও নিধিকে ভাবে
–যাক প্রিয় জনকে বাঁচাতে পেরেছি
—ঠাসসসসসসস্
চড়টা নিধি অভ্রকে এতোটা জোরেই দেয় যে অভ্র ছিটকে রাস্তায় পরে যায়
কুত্তা, ছ্যাচড়া ছেলে
তুই এত্ত লুচ্চা!!!! ছিঁ
তোর কি একটুও লজ্জা নাই
আমাকে ভালোবাসিস!? আমি বাসিনা
তাই বলে রাস্তা ঘাটে এভাবে খারাপ কাজ করবি
তোর মনটা যে এত নোংরা ছিঁ
তোর মত ছেলের মরে যাওয়াটাই ভালো
বলেই নিধি ওড়নাটা নিয়ে চলে যায়
আর অভ্রও চোখের জলটা মুছে মুচকি হেসে বাড়ির পথে চলে যায়
নিধি রাগে গজগজ করতেছে ঠিক তখনই
–মামনি একখান কতা কই? (এক রিক্সা চালক)
— হ্যা বলেন (নিধি বিরক্তি নিয়ে)
–মামনি আমি তো তুমার রিক্সার পিছেই ছিলাম তাই দেকছি
তুমার ওড়না ডা চাক্কার সাথে পেইচ্চা গেছিল ছেলেটা অনেকবার তুমারে ডাকছে শুনো নাই
তাই নিজেই দৌড়ে এসে ওড়না ডা ঠিক করতেই তুমি মারলা
ছেলেডার কিন্তু কুনো দোষ নাই
–আপনি যান তো যত্ত সব
বলেই রাগের মাথাতেই নিধি বাসাতে চলে আসে
রাতে নিধি শুয়ে শুয়ে ভাবছে
—-আসলেই যদি আমার ভুল বশতই ওড়নাটা পড়ে থাকে তো খুব খারাপ কিছু তো হতে পারতো
আর অভ্র তো আমার ভালোর জন্যই কাজটা করছে তবে আমার ঠিক হয়নি ওভাবে এত্ত লোকের সামনে ওকে থাপ্পরটা দেয়া আবার অপমান করার
নাহ্ দেখা হলে ওকে স্যরি বলে দেব
আর অভ্র
সে আজ দশদিন ভার্সিটিতে যায়না
তবে আজ যাচ্ছে একটা দরকারে
টিসি টার ব্যাপারে প্রিন্সিপালের সাথে কথা বলতে ভার্সিটিতে গিয়ে স্যারের সাথে টিসির ব্যাপারে কথা বলার পর
–স্যার একটা কথা বলব? (অভ্র)
— হ্যা বলো (স্যার)
— আর তো কখনো এই ভার্সিটিতে ক্লাস করার সুযোগ পাবোনা আজকে যাই?
শেষবারের মত (কান্না করে দিয়ে)
— ঠিক আছে যাও (স্যার)
অভ্র ক্লাসের দরজার কাছে এসে দেখে সেই মেমটাই ক্লাস নিচ্ছেন যিনি সেদিন অনেক অপমান করছেন
–মেম আসবো? (অভ্র)
— তুমি এখানে!
তোমাকে না বলেছি আমার ক্লাসে না আসতে
আমি কোন বাজে ছেলেকে ক্লাসে দেখতে চাইনা (মেম রেগে)
— আমি ক্লাস করতে আসিনি মেম
যাস্ট কিছু কথা বলব তারপরই চলে যাবো (অভ্র)
— ঠিক আছে আসো
অভ্র ভিতরে চলে এলো তারপর
–নিধি,,,,,,,
বিশ্বাস করো আমি সেদিন তোমাকে খারাপ ভাষায় টিজ করেছিলাম না
করেছিল ঐ ভাইগুলো আর ভাই তোমাদের সাথে তো আমি কখনোই খারাপ ব্যবহার করিনি করেছি কি বলো?
তবে কেন আমাকে সবার চোখে খারাপ বানালে বলো?
আর ভাই নিরব,,,,এটা না করলেও পারতে ,,
চিঠিটা তো তুমি আমাকে দিয়ে তোমার নিজের জন্যই লিখিয়ে নিয়েছিলে
তবে কেন আমাকে মিথ্যা ভাবে সবার কাছে খারাপ বানালে?
আমি তো তোমার কখনোই খারাপ চাইনি
তবে হ্যা এর ভিতর একটা সত্যি কথা আছে তা কি জানো তো নিধি?
আমি সত্যিই তোমাকে মনে মনে ভালোবাসতাম তবে আমাদের মত ছেলেদের ভালোবাসাটা তো পাপ তাই বলতে চাইনি
জানেন তো মেম আপনি ঠিক ই বলছেন আমি খুব খারাপ তাইতো আমার পরিবারের দেখা স্বপ্নটা আর এখানে থেকে পূরণ করা হলোনা
তাদের স্বপ্নটা আমি ভেঙে দিলাম,,,,, ,ভেঙে দিলাম
চোখটা মুছে আবার বলতে শুরু করে অভ্র
নিধি জানো তো আমি সত্যি সেদিন তোমার ওড়নাটা ইচ্ছে করে টেনে ধরিনি
তোমার ওড়নাটা রিক্সার চাকার সাথে পেঁচে গেছিল তাই বাঁচাতে গেছিলাম
আমিতো জানতাম না সেটা তুমি ছিলে
তবে সত্যি বলছি নিধি আমি কখনোই তোমার খারাপ চাইনি
আর নিরব,,,,,,তোমরা বললেই পারতে যে অভ্র তোকে আমাদের সাথে মানায় না
তোকে দেখলে আমাদের রাগ লাগে
একটা বার বললেই পারতা আমি নিরবে তোমাদের থেকে আড়ালে কোথাও চলে যেতাম
এভাবে কেন আমাকে সবার কাছে ছোট করে দিলে বলো? কেন আমার পরিবারের দেখা স্বপ্নটা পূরণ করতে দিলে না?
আমি তো তোমাদের একটুও ক্ষতি করিনি
আর মেম আমার পরিবার আমাকে কখনোই খারাপ শিক্ষা দেয়নি তবে ভুলটা আমারই পরিবারের না
আর হ্যা,
মেম আপনাকে অনেক ধন্যবাদ আমাকে আপনার মূল্যবান সময়ের কিছুটা দেয়ার জন্য
আর বন্ধুরা,,,,,,,,,,, নিধি আর কখনোই তোমাদের কাউকেই জ্বালাতে আসবো না পারলে এই খারাপ ছেলেটাকে সবাই মাফ করে দিও,,,,,, কেমন
আর ম্যাম আপনিও মাফ কইরেন আর কোনদিনও এই বাজে ছেলেটা আপনার ক্লাসে আসবে না
দোয়া করি সবাই অনেক অনেক ভালো থেকো
বলেই চোখটা মুছে ক্লাস থেকে বের হয়ে চলে যায় অভ্র
ক্লাস কেমন যেন চুপচাপ হয়ে যায়
মেম,,,, সাথে সবাই অভ্রর কথায় বোবা হয়ে যায় হঠাৎ একটা ছেলে উঠে বলে
— নিধি একটা কথা ছিল?
–কি কথা বলো? (নিধি)
— আমি দুঃখিত নিধি সেদিন তোমাকে টিজ আমি করেছিলাম শুধু অভ্রকে তোমার কাছে খারাপ বানাতে আমাকে মাফ করো (ছেলেটি)
তারপর কিছু ছেলে উঠে বলে
— ম্যাম আমাদের মাফ করবেন সেদিন কাগজ আমরা ছুঁড়ে মেরে অভ্রর দোষ দিয়েছিলাম
এরপর নিরব বলে
— নিধি আমাকে মাফ করো
আসলে সেদিন আমিই অভ্রর থেকে চিঠিটা লিখে এনেছিলাম ওকে শায়েস্তা করার জন্য
অভ্রর কোন দোষ নেই নিধি( নিরব)
সবার কথা শুনে হু হু করে কেঁদে দেয় নিধি
সাথে মেম সহ সবার চোখেই পানি
–তোমরা কি মানুষ!?
একটা ছেলেকে এভাবে কষ্ট দিলে?
কেন করলে মেম
–স্যরি মেম (সবাই একসাথে)
— আমাকে কেন স্যরি বলতেছ যার সাথে এমনটা করছো তাকে বলো যাও মেম
এদিকে নিধি ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কান্না করছে এই ভেবে যে যে ছেলেটা নিরবে শুধু ভালোবেসে গেল আর তাকেই কিনা আমি এতটা অপমান করেছি
বারবার থাপ্পর দিয়েছি
কান্না করতে করতেই বাড়িতে চলে যায় নিধি
অপরদিকে অভ্র ও তো বাজে ছেলে তাই শতো কষ্ট অপমানের মাঝেও হাসিমুখে আছে
তিনটা দিন চলে গেল এই তিনটা দিনে অভ্রর জন্য ভাবতে ভাবতে নিধি পাগল প্রায়
খাওয়া দাওয়া করেনা চোখের নিচে কালি জমে গেছে নিজেকে বড্ড খারাপ মনে হচ্ছে নিধির
অনুশোচনা হচ্ছে খুব
অভ্রকে বড্ড মিস করছে সে,,,,, বড্ড ভালোবেসে ফেলেছে অভ্রকে
তিনটা দিন ভার্সিটিতে এসে পাগলের মতো খুঁজেছে তবে পায়নি
পরদিন সকাল বেলা থেকেই খুব বৃষ্টি হচ্ছে প্রিন্সিপালের কাছ থেকে টিসি নিতে বৃষ্টির মাঝেই অভ্র ভার্সিটিতে চলে আসে আর নিধিও অভ্রকে খুজতে চলে আসে
প্রিন্সিপাল অভ্রকে ওর ক্লাসে নিয়ে আসে সেই ম্যাডামটা ক্লাস করাতে এসেছেন
অভ্রকে দেখে হাসির রেখা ফুটে ওঠে নিধির মুখে
–আরে স্যার আসুন আসুন (মেম)
— ধন্যবাদ,,,,,
জানিনা অভ্র কি কারণে ভার্সিটি বদলাবে তবে ও খুব ভালো ছাত্র ছিল আমার কাছে (প্রিন্সিপাল)
— অভ্র আমার ভুল হয়ে গেছে প্লিইইইজ মাফ করো (মেম)
— আরে না না কি বলেন
গুরুজনরা ঠিকই বলে (অভ্র)
–অভ্র আমরা সবাই তোমার কাছে মাফ চাইছি প্লিইইইজ তুমি চলে যেওনা (সবাই একসাথে)
–হাহাহা
আরে নাহ
আমি চাইনা একটা ছেলের জন্য তোমাদের সবার কিছু হোক
আমিই চলে যাচ্ছি তোমাদের মাঝ থেকে
হয়ত এটাই শেষ দেখা,,,,
ভালো থেকো সবাই কেমন (অভ্র)
তারপর ক্লাস থেকে বাইরে বেরিয়ে আসে
অভ্রর পিছু পিছু পুরো ক্লাসের সবাই চলে আসে
সবাই অভ্রকে চলে যেতে মানা করছে আর অভ্র চোখটা মুছে বৃষ্টির ভিতরই ভিজতে ভিজতে চলে যাচ্ছে
— নিধি অভ্র তোমাকে ভালোবাসে
প্লিইইইজ নিধি তুমিই শেষ ভরসা অভ্রকে আটকাও (মেম)
নিধি খুব কান্না করছে আর ঝাপসা চোখে অভ্রর চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে
মনে হচ্ছে বুকটা চিড়ে কেউ মনটা নিয়ে চলে যাচ্ছে
সবাই বলে ওঠে
-নিধি অভ্রকে আটকাও প্লিইইজ আটকাও
নিধি বৃষ্টির ভিতরই ভিজতে ভিজতে দৌড় শুরু করে
অভ্র মাঠের মাঝে চলে গেছে
নিধি ভিজতে ভিজতে অভ্রর হাতটা পিছন থেকে ধরে কান্না করতে করতে বলে
–অভ্র আমার,,,,,,,, আমাদের সবার ভুল হয়ে গেছে
অভ্র আমরা সবাই অনেক বড় ভুল করে ফেলেছি
আর এই কয়টা দিনে তোমাকে আমিও অনেক অনেক ভালোবেসে ফেলেছি অভ্র
প্লিইইইইইজ আমাদের আমাকে একা করে চলে যেওনা অভ্র প্লিইইইজ
–হা হা হা
এতো অবহেলা আর অপমানের পর একটা পাগলই হয়ত তোমাকে ভালোবাসবে নিধি
অভ্র কথাটা শুনে নিধির বুকের ভিতর কেমন যেন ব্যাথা করে ওঠে
এক বুক কষ্ট নিয়ে পিছু ফিরে হাটা শুরু করতেই অভ্র নিধির হাতটা ধরে টান দিয়ে বুকে জড়িয়ে নিয়ে বলে
–আর সেই পাগলটা হয়ত আমিই
অভ্রর বুকে নিধিকে দেখে সবাই আনন্দে করতালি দিয়ে ওঠে
সবার মুখেই হাসির রেখা ফুটে ওঠে
অপরদিকে অভ্রর বুকে ঠাই পেয়ে হু হু করে কান্না শুরু করে দেয় নিধি আর বলে
–এই পাগলটাকে আর কখনোই কষ্ট দেবোনা একটুও অবহেলা করবো না এই পাগলটা শুধুই আমার শুধুই আমার
অভ্রও পরম ভালোবাসায় নিধিকে জড়িয়ে ধরে বলে আমিও এই পাগলিটার
শুধুই এই পাগলিটার
……………………………….#########…………………………………..