অবন্তী

অবন্তী

:ভাইয়া দুইটা টেহা দেন।(পিছন থেকে টান দিয়ে)
আমার মেজাজটা এমনিতেই অনেক খারাপ হয়ে আছে তারপর পিছন এভাবে টান দেওয়াই আরো বেশি খারাপ হয়ে গেলো।পিছনে ঘুরে এক থাপ্পর দিতে গেলাম।হাতটা অর্ধেক নিয়ে থেমে গেলাম।আমার সব রাগ নিমেষেই হারিয়ে গেলো।আমার সামনে একটা মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে।বয়স ৭ বছরের বেশি হবেনা মনে হয়।পড়নে ছেড়া পোশাক।চুলগুলো এলোমেলো।গায়ে ময়লা।আমি মেয়েটিকে দেখে ওর মায়ায় পড়ে গেলাম।একটু আগে অবন্তীর সাথে ব্রেকআপ হয়ে গেছে তাই মেজাজটা খুব খারাপ ছিলো।অবন্তীর সাথে রিলেশন ব্রেকআপ হওয়ার কারণ আছে অনেকগুলো।কারণগুলো আমি বলিনি অবন্তীই বলেছে।বলতে পারেন অভিযোগ।
১.আমি নাকি একঘুটে রোগা মানুষ।
২.আমি অবন্তীকে কোন স্বাধীনত দিইনা।
৩.আমার জন্য ওঠিকমত পড়ালেখা করতে পারেনা।
৪.আমি খারাপ বাজে ছেলে।তাই আমার চিন্ত ভাবনাগুলোও বাজে।
৫.আমি একটা পাগলের মত ব্যবহার করি।
আরো অনেকগুলো অভিযোগ করেছিলো অবন্তী কিন্তু এখন আর মনে পরছেনা।আমি হুসাইন।অনার্স ২য় বর্ষের ছাএ।আর অবন্তী অনার্স প্রথম বর্ষের ছাএী।আমাদের রিলেশন মাএ ২ বছরের।
:-ভাইয়া দুইটা টেহা দেন ভাত খামু। (মেয়েটি)
আমি মেয়েটির হাত ধরে কাছে টেনে নিয়ে বললাম
:-দুই টাকাতে তোকে কে ভাত দিবে?(আমি)
:-আম্মা বলেছে দুই টেহা দিলে আমাকে ভাত দিবো।
:-সকাল থেকে কিছু খেয়েছিস?
:-না।কাল রাত থেকে কিছু খাওন দেই নাই।
:-আমার সাথে চল আমি খাওন দিবো তোরে।
:-আমি যাইবার পারুম না।মাই বকা দিবো।আপনি টেহা দেন।নিয়া গিয়া মার কাছে দিমু।তারপর পেট ভইরা ভাত খামু।
:-আগে আমার সাথে চল তারপর টাকা দিবো।
আমি এক প্রকার জোর করে মেয়েটিকে নিয়ে একটা রেষ্টুরেন্টে গেলাম।ওয়েটারকে ডেকে বললাম এক প্লেট বিরিয়ানি দিতে।
ওয়েটার বিরিয়ানি দিয়ে গেলো।
:-নে খাওয়া শুরু কর।(আমি)
আমি ওর দিকে তাকিয়ে দেখলাম অনেক দিন না খাওয়ার ক্ষুদা ওর মধ্যে বিরাজ করছে।মনে হচ্ছে একবারেই সব খেয়ে ফেলবে।
:-ভাইয়া আমি ভাত বাড়িতে লয়া যাই?(মেয়েটি)
:-তোকে দিলাম খেতে।তুই কার জন্য নিয়া যাবি?(আমি)
:-আমার ছোট বোনডা অনেকদিন হইলো ভালো কিছু খাইনা।ওর জন্য লয়া যামু।
মেয়েটার কথা শুনে অনেক বেশি অবাক হলাম।এতটুকু মেয়ে কীনা নিজের খাবারের কথা না ভেবে ছোট বোনের কথা ভাবছে।একজন পুর্ণ বয়স্ক লোক পেটে ক্ষুদা থাকলে মনে হয়না অন্যের কথা ভাবে সেখানে ওতো ছোট বাচ্চা মানুষ।
:-তোর বোনের বয়স কত?
:-৪ বছর।
:-এগুলো তুই খা।তোর বোনের জন্য যাওয়ার সময় নিয়া যাস।
:-আচ্ছা।
এবার ও খেতে শুরু করলো।কতদিন এভাবে তৃপ্তি সহকারে খাইনা সেটা ও আর আল্লাই জানে।ওর খাওয়া দেখে আমারো খুব তৃপ্তি লাগছে।এক ধরণের ভালোলাগা কাজ করছে মনের মধ্যে।এই শাম্তি হাজার কোটি টাকা দিয়েও কেনা সম্ভব না।

খাওয়া শেষ হলে আমি বিল দিয়ে দিলাম।আর মেয়েটির ছোট বোনের জন্য আরেক প্যাকেট বিরিয়ানি কিনে দিলাম।সাথে ১০০টাকা হাতে ধরিয়ে দিলাম।প্রথমে নিতে চাচ্ছিলোনা জোর করে দিলাম।যাওয়ার সময় আমার কপালে ছোট্র করে একটা পাপ্পি দিলো।আমিও বিদায় নিয়ে চলে এলাম।

পকেট থেকে মানিব্যাগ করে দেখি মাএ ৫টাকার দুইটা নোট পড়ে আছে।মাস শেষ হতে এখনো ৬দিন বাকি।এই ৬দিন ৫টাকা দিয়েই চলবে হবে।মধ্যবিও পরিবারের ছেলে আমি। খুব হিসেব করে চলতে হয় আমাকে।অবন্তীর সাথে দেখা করার জন্য ৩০০ টাকার মত গুছিয়েছিলাম কিন্তু আজ সেগুলো অবন্তীর জন্য খরচ করা হলোনা।দেখা করলে সবসময় সব খরচ অবন্তীই করে।হয়তো আমি গরিব বলে দয়া দেখাতো যার প্রমাণ আজ পেলাম।মানুষ এমনি।নিজের প্রয়োজনে যে কাউকে কাছে টেনে নেয়। আর প্রয়োজন ফুরালে কুকুরের মত লাথি দিয়ে দুরে সরিয়ে দেয়।
যাইহোক এত ভেবে কাজ নেই।প্রায় ৩কিলোমিটার রাস্তা হাঁটতে হবে।এর আগে যতবার দেখা করতে আসতাম অবন্তী আমাকে রিক্সায় তুলে দিবো।আজ অবন্তী নেই।পকেটে টাকাও নেই তাই হেঁটেই যেতে হবে।চারপাশটা কেমন জানি লাগছে।অনেক বিরক্ত লাগছে সবকিছু।তাড়াতাড়ি মেসে পৌঁছাতে হবে।সন্ধার পরে আবার টিউশনিতে যেতে হবে।এখনকার ছাএ/ছাএীদের মায়েরা খুব কড়া।একদিন পড়াতে না গেলে অনেকগুলো কথা শুনায়।সাথে টিউশনি থেকে বাদ দেওয়ারও হুমকি আসে।আমার টিউশনি গেলে চলবেনা।কেননা টিউশনির টাকা দিয়েই আমার সব খরচ চালাতে হয়।
মেসে এসে ফ্রেশ হয়ে নিলাম।বড্ড ক্লান্ত লাগছে। সন্ধার আযান দিতে এখনো অনেকটা দেরী আছে।একটু ঘুমিয়ে নেওয়া দরকার।এখন না ঘুমালে টিউশনিতে গিয়ে ঢুলতে হবে ঘুমের জন্য।

ফোনের টিংটিং শব্দে ঘুম ভাঙ্গলো।ফোনের স্কিনে ভেসে ওঠা নামটা দেখে অনেকটা না, খুব বেশিই অবাক হলাম।অবন্তী।
:-হঠাৎ ফোন দিলে যে?(আমি)
:-কেনো আমি কী ফোন দিতে পারিনা?(অবন্তী)
জানিনা কী উওর দেওয়া উচিত আমার।তবে চোখ দিয়ে দুফোটা নোনা জল গড়িয়ে পড়লো।
:-আমি ফোন দিয়েছি একটা কথা বলার জন্য।তোমাকে আমি যতগুলো জিনিস গিফট করেছি সবকিছু আমার বাসার সামনে এসে দিয়ে দাও। আমি চাইনা আমার কোন জিনিস কারো কাছে থাক।(অবন্তী)
:-আচ্ছা পেয়ে যাবেন আপনার জিনিসগুলো।(আমি)
:-আমি বাসার সামনে অপেক্ষা করছি তুমি নিয়ে আসো
:-ঠিক আছে।
ফোনটা রেখে দিলাম।বুক ফেটে কান্না আসছে।কিন্তু আমাকে ভেঙ্গে পড়লে চলবেনা।শক্ত হতে হবে।আমার দিকে চেয়ে বেঁচে আছে অনেকগুলো মুখ।আমি শক্ত হতে চাইলেও আমার চোখ সেটা হতে দিচ্ছেনা।একফোটা একফোটা করে জল গড়িয়ে পড়ছে।

অবন্তীর দেওয়া সবকিছু জিনিস একএক করে গুছিয়ে নিলাম।অবন্তী আমাকে অনেক কিছু গিফট করেছে।একটা হলুদ পান্জাবি,একটা ঘড়ি,শার্ট,প্যান্ট।সবগুলো প্যাকেট করার আগে একবার হাত বুলিয়ে দেখে নিলাম।পান্জাবির এককোণে একটা দাগ আছে সেটা দেখে কিছু স্মৃতি ভেষে ওঠলো মনের কোণে।একদিন দেরী করে দেখা করে গিয়েছিলাম বলে অবন্তী অনেক অভিমান করেছিলো।সেই অভিমানগুলো চোখের জল আর কাজল এক হয়ে আমার পান্জাবিতে পড়েছিলো।সেই চোখের কাজল থেকেই দাগ হয়ে গেছে।

অবন্তী আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছে।আমি মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছি।অবন্তীর চোখের দিকে তাকানোর সাহস কেনো জানি আমার হচ্ছেনা।আমার হাতে থাকা প্যাকেট অবন্তীর দিকে বাড়িয়ে দিলাম।অবন্তী সেগুলো হাতে নিলো।আমি আবার মাথা নিচু করে ফেললাম
:-সবকিছু ঠিকমত এনেছেনতো?(অবন্তী)
:-আপনি খুলে মিলিয়ে নিন।(আমি)
:-থাক মেলাতে হবেনা।আরেকটা কথা আজ থেকে মাহিনকে আর পড়াতে আসতে হবেনা।
:-কেনো?
:-আমি বলেছি তাই।
:-ঠিক আছে।
আমি অবন্তীদের বাসার বাইরে চলে এলাম।হয়তো আজ রাতেই এই শহর ত্যাগ করতে হবে।কারণ আমার টিউশনি নেই।অবন্তীর ছোট ভাইকে পড়াতাম।সেই টাকা দিয়েই নিজের খরচ চলতো।শহরে এলাকায় টিউশনি মানে এখন অনেকটা সোনারহরিণ বলা যেতে পারে। সহজে মেলে না।

:-নিলয় ভাইয়া আমি মেস ছেড়ে দিবো।(আমি)
:-হঠাৎ একথা কেনো বলছিস?(নিলয় ভাইয়া)
:-আমার টিউশনি আজ চলে গেছে।টিউশনি বাদে এখানে থাকা আমার পক্ষে সম্ভব না।
:-অবন্তীর সাথে কোন ঝামেলা হয়েছে?
:-হ্যাঁ। অবন্তী আমাকে ছেড়ে চলে গেছে।
:-অবন্তী হঠাৎ তোকে ছেড়ে চলে গেলো কেনো???
:-আমি ওর মনের মত না তাই।
:-তোর মেস ছাড়তে হবেনা।আমি দুইটা টিউশনি করাই একটা তোকে দিয়ে দিবো।।
আমি কী বলবো ভেবে পাচ্ছিনা।যেখানে মানুষ মাসের পর মাস থেকেও টিউশনি পাইনা সেখানে একটা যেতেই আরেকটা পেলাম।আমি নিজের বিছানা ছেড়ে ওঠে নিলয় ভাইকে জরিয়ে ধরলাম।
:-অনেক অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া।(আমি)
:-ধুর পাগল এত ধন্যবাদ দেওয়ার কী আছে।তুই আমার ছোট ভাইয়ের মত তোকে দেখার দায়িত্ব আমারো আছে।এখন ছাড়। তুই হাত মুখ ধুয়ে পড়তে বস।(নিলয় ভাইয়া)

আমি নিলয় ভাইয়াকে ছেড়ে দিয়ে ওয়াশরুমে চলে এলাম।ফ্রেশ হয়ে এসে পড়তে বসলাম।বইয়ের প্রথম পাতা উল্টাতেই অবন্তী নামটা চোখে পড়লো।আমার আবার একটা বাজে অভ্যস আছে পড়তে পড়তে বইয়ের মাঝে অবন্তীর নাম লিখে ফেলি।এই বাজে অভ্যসটার জন্য বন্ধুমহলে অনেক কথাও শুনেছি।অবন্তীর কথা মনে হতেই পড়ার সব ইচ্ছা নিমেষেই কোথায় যেনো মিলিয়ে গেলো।তার বদলে মনের মধ্যে ভর করলো একরাশ যন্ত্রনা।
পড়া বাদ দিয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দিলাম।ফোনটা হাতে নিয়ে মেসেজ অপশনে গিয়ে অবন্তীর দেওয়া মেসেজগুলো দেখছি।সত্যিই পৃথিবীটা খুব অদ্ভুদ।কাল রাতেও যেই মেয়ে আমাকে নিয়ে সংসার সাঁজানোর স্বপ্ন দেখেছে আজ সে আমার থেকে পর হয়ে গিয়েছে।

একটু আগে এসে অবন্তীর ছোট ভাই এসে আমার হাতে একটা কার্ড দিয়ে গেছে।মাহিনের কাছ থেকেই জানতে পারলাম অবন্তীর বিয়ে ঠিক হয়েছে।-অবন্তীর যেই ছেলের সাথে বিয়ে হতে চলেছে সে বড় চাকরী করে।বাবার অনেক সম্পদ আছে।তবে অবন্তী নাকি আমাকে বিয়েতে যেতেই বলেছে।হয়তো আমার চোখের সামনে বিয়ে করে আমাকে আরো কষ্ট দিতে চাই।আমি কার্ডটা খুলে দেখিনি।ইচ্ছা নেই খুলে দেখার।অনেকেই বলে কাউকে সত্যিকারের ভালোবাসলে নাকি সে একদিন না একদিন ঠিক ফিরে আসে কিন্তু আমার বেলায় সেটা ভিন্ন।অবন্তীর সাথে আমার সবকিছু শেষ হবার পরেইতো ও আরেকজনকে বিয়ে করে নিচ্ছে।
১০
আজ অবন্তীর বিয়ে।সকাল থেকে মাথার মধ্যে একটা কথাই ঘুরপাক খাচ্ছে আমি কী যাবো অবন্তীর বিয়েতে?কখনো অবন্তীর কথার অবাধ্য হয়নি আমি।অবন্তী যখন যা বলেছে তাই শুনেছি।অবশেষে সিদ্ধান্ত নিলাম আমি যাবো বিয়েতে।শেষ বারের মত দুচোখ ভরে অবন্তীকে দেখবো।কখনো অবন্তীকে বিয়ের সাঁজে দেখিনি।ধুর কী ভাবছি এসব।অবন্তীর এর আগে বিয়ে হয়েছে নাকি যে ওকে দেখবো বিয়ের সাঁজে।অবন্তীকে বিয়ের সাঁজে কেমন লাগে সেটা দেখার ইচ্ছে করছে খুব।তাই আমাকে যেতেই হবে যত কষ্টই হোক।
১১
দুপুর ১২টা বেজে ২০ মিনিট।
আমি অবন্তীদের বাসার মধ্যে দাঁড়িয়ে আছি।চারদিকে অনেক মানুষের ভির।বাড়িটা খুব সুন্দর করে সাঁজানো হয়েছে।আর সাঁজাবেইতো একমাএ মেয়ের বিয়ে বলে কথা।
:-হুসাইন তুমি কখন এলে?(অবন্তীর আম্মু)
আমি অবন্তীর আম্মুকে অনেক আগে থেকেই চিনি।কারণ অবন্তীর ছোট ভাই মাহিনকে ৭মাস প্রাইভেট পড়িয়েছি।
:-জ্বি আন্টি মাএই আসলাম।আপনি কেমন আছেন?(আমি)
:-আমিতো ভালোই আছি।অবন্তী বললো তোমার নাকি শরীল খারাপ?
:-কই নাতো আন্টি।
:-কিন্তু অবন্তীতো বললো।সে যাইহোক অবন্তীকে দেখেছো কোথাও?
:-আমি এসে দেখিনি।
:-মেয়েটাকে নিয়ে আর পারিনা।সেই কখন বলেছি কণে সাঁজাতে হবে এখনো ওর কোন খোঁজখবরই নাই।বড় পক্ষ চলে আসার সময় হয়ে গেলো।তুমি বসো বাবা আমি দেখি অবন্তী কোথায় গেলো।
:-জ্বি আন্টি।
অবন্তীর আম্মুর চলে গেলো।আমার মাথার মধ্যে ঘুরছে।অবন্তী কণে সাঁজাবে তাহলে বিয়ে কার?মাহিনতো বললো অবন্তীর বিয়ে?সবকিছু গুলিয়ে ফেলছি।
১২
পকেট থেকে ফোন বের করে অবন্তীকে ফোন দিলাম।প্রথমবার রিং হতেই ফোন রিচিভ হলো।
:-অবন্তী আমার সাথে একটু দেখা করতে পারবে?(আমি)
:-তুমি আমাদের বাসার পিছন দিকটায় চলে আসো।আমি সেখানেই আছি(অবন্তী)
আমি ফোন কেটে দিয়ে অবন্তীদের বাসার পিছন দিকটায় গেলাম।এই বাসার সবকিছুই আমার চেনা।
পিছন দিকটায় গিয়ে দেখি অবন্তী আর কয়েকটা মেয়ে বসে আছি।ওদের মধ্যে দুইটা মেয়েকে আমি চিনি।একজনের নাম রুনী আরেকজনের নাম শিমু।অবন্তীর বান্ধবী এর।বাকিদের চিনিনা।আমাকে দেখে অবন্তী বাদে বাকি মেয়েগুলো চলে গেলো।
:-কিছু বলবে?(অবন্তী)
:-এসবের মানে কী?(আমি)
:-কোন সব?
:-সেটা তোমার অজানা নয়।
:-ও বুঝেছি।বাসা থেকে আব্বু বিয়ে ঠিক করেছে। ছেলে অনেক ভালো।তাই না করতে পারলাম না।
:-তুমি ওঠে দাঁড়াও।
:-কেনো?
:-আমি বলেছি তাই দাঁড়াও।
আমার কথা শুনে অবন্তী বসা থেকে ওঠে দাঁড়ালো।আমি অবন্তীর একদম কাছে গিয়ে ঠাস করে দুগালে দুই চড় বসিয়ে দিলাম।
:-কী পেয়েছো আমাকে?আমাকে তোমার জোকার মনে হয় যে সবসময় আমার সাথে ইয়ারর্কী করো?তুমি বলেছিলে তোমার বিয়ে কিন্তু তোমার আম্মু বললো অন্যকথা।মানে কী এসবের?ভালো করে বললেই হতো আমার সাথে রিলেশন রাখতে চাওনা এত অভিনয়ের দরকার ছিলোনা।তোমরা মেয়েরা এমনি।একজনকে ভালোবাসো আর যখন আগের জনের থেকে ভালো কাউকে পাও তখন আগের জনের কথা ভুলে যাও।(আমি)
অবন্তী আমার কথার কোন প্রতিবাদ করছ না।চুপ করে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে।থাপ্পরের কারণে গাল দুটো লাল হয়ে আছে।
:-আমি চলে যাচ্ছি।আর কখনো তোমাকে বিরক্ত করবোনা।ভালো থেকো।
কথাগুলো বলে ফিরে আসার জন্য পা বাড়ালাম।দুই পা সামনে আসতেই পিছন থেকে কেউ একজন আমাকে খুব শক্ত করে জরিয়ে ধরলো।আমি জানি কে ধরেছে।তবে অবন্তী কেনো আমাকে জরিয়ে ধরলো সেটা মাথায় ঢুকছেনা।
আমি অবন্তীর কাছে থেকে নিজকে ছাড়িয়ে নিলাম।কিন্তু না এবার অবন্তী আমাকে সামনে থেকে জরিয়ে ধরলো।ও কাঁদছে খুব।
:-প্লিজ আমাকে ছেড়ে যেওনা।আমি তোমাকে সত্যি খুব ভালোবাসি।এতদিন এসব করেছি আমার বান্ধবীদের কথায়।ওরা বলেছিলো তোমাকে পরীক্ষা করতে।কিন্তু বিশ্বাস করো এই কয়দিন আমার খুব কষ্ট হয়েছে।আমি এই কয়দিন ঠিকমত কোনকিছু করিনি।তুমি যদি সেদিন আমার দেওয়া গিফটগুলো ফেরত দিয়ে যাওয়ার সময় আমার চোখের দিকে একবার তাকাতে তাহলে দেখতে পেতে আমি কাঁদতে ছিলাম।(অবন্তী)
অবন্তীর কথা শুনে অনেকটা স্বপ্নের মত লাগছে সবকিছু।সব রাগ অভিমানে পরিণত হলো আমার
:-আমি অনেক কষ্ট পেয়েছি।(আমি)
:-আমাকে ক্ষমা করে দাও।আর কখনো এমন করবোনা।প্রমিস।(অবন্তী)
:-হু।
:-করবেনা ক্ষমা?
:-করতে পারি এক শর্তে!
:-কী শর্ত বলো।তোমার জন্য আমি সবকিছু করতে পারি।
:-প্রতিদিন আমাকে এভাবে একবার করে জরিয়ে ধরতে হবে।
:-আচ্ছা।
:-আচ্ছা তোমার সাথে ব্রেকআপ হবার পর আমি যদি দুরে কোথাও হারিয়ে যেতাম?
:-আমি জানতাম তুমি দুরে যাবেনা।
:-কে বলেছে যেতাম না?চলেই যেতে চেয়েছিলাম কিন্তু নিলয় ভাইয়ের কাছ থেকে একটা টিউশনি পাওয়ার পর আর যায়নি।
:-টিউশনিটা আমিই জোগার করে দিয়েছিলাম।
:-মানে?
:-থাক এসব না বুঝলেও চলবে।আমার অনেক কাজ আছে।যেতে হবে।
:-না আগে বলো।
:-পরে বলবোনে।এখন না গেলে আম্মু বকা দিবে।
:-আচ্ছা যাও।
অবন্তী আমাকে ছেড়ে দিয়ে চলে গেলো।আবার ঠিক ৩০ থেকে ৩৫ সেকেন্ডের মাথায় ফিরে আসলো।এসে আমাকে আবার জরিয়ে ধরলো।এবার আগের চাইতেও শক্ত করে জরিয়ে ধরলো।আমিও জরিয়ে নিলাম।
:-অবন্তী?(আমি)
:-হু।
:-একটা কথা বলি?
:-হু।
:-রাগ করবে নাতো?
:-না।
:-তোমাকে একটা কিস করি?
:-ওই একদম না।বিয়ের আগে এটা পাবেনা।
:-করিনা একটা?
:-বললামতো না।আরেকবার এই কথা বললে আমি এখনি চলে যাবো।
:-এইনা যেতে হবেনা।আমি আর বলবোনা।
:-হু।

………………………………..সমাপ্ত………………………………….

গল্পের বিষয়:
রোমান্টিক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত